হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২২০) হুসনুল খুলক বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

সংখ্যা: ২৬১তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত (৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী মুবারক করলেন- “হে আমার জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম! পৃথিবীর সমস্ত আশ্রয় ত্যাগ করে যে ব্যক্তি আমার আশ্রয় গ্রহণ করে, আসমান যমীনের সকলেই যদি তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তবুও তাঁর কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। কেননা আমিই তার অভিভাবক। আমিই তার সমস্ত বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ! (কিমিয়ায়ে সায়াদাত-৪/৩৪৫)

‘বুখারী শরীফ’ ও ‘মুসলিম শরীফ’ উনার মধ্যে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। উনাদের অন্যতম গুণ হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার উপর পরিপূর্ণরূপে তাওয়াক্কুল (ভরসা)কারী।” (তাফসীরে মাযহারী শরীফ)

মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি হযরত হাবীব আজমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাওয়াক্কুল:

সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন, মাহবূবে ইলাহী হযরত হাবীব আজমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন উচ্চ তবকার (স্তরের) ওলীআল্লাহ। ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা।

তিনি পূর্বজীবনের সমস্ত অন্যায়-অনাচার, গোনাহখতা থেকে তওবা করলেন। তিনি ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার পর সমস্ত ধন-সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিলেন। সম্পদ বলতে কোনো কিছুই রাখলেন না। এমনকি নিজের একটি মাত্র জামা এবং আহলিয়ার একখানা শীতের চাদরও একজন ভিক্ষুককে দান করে শীতের কষ্টবরণ করে নিলেন।

ফোরাত নদীর তীরে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, মোরাকাবা-মুশাহাদার উদ্দেশ্যে একটি ছোট কুটির তৈরি করলেন। দিনের বেলায় স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দরবার শরীফে গিয়ে উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতেন, ইলমে শরীয়ত এবং ইলমে মা’রিফাত শিক্ষা করতেন। আর রাতে সেই কুটিরে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, মুরাকাবা-মুশাহাদায় লিপ্ত থাকতেন। আর উনার পরহেযগার আহলিয়া তিনিও স্বামীর মতো নিজ গৃহে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন।

একদিন সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত হাবীব আজমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার আহলিয়া বললেন, কিছু জরুরী জিনিসপত্রের প্রয়োজন। তাছাড়া কয়েকদিন ধরে আমরা অনাহারে। ঘরে কোনো খাবার নেই। কাজেই, কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুন।

তিনি বললেন, দেখো! আমি যে মুনিবের কাজ করি তিনি খুবই বড় মহাজন। কাজ শুরু  করেই উনার কাছে মজুরী চাওয়া আমার জন্য খুবই লজ্জার বিষয়। অন্তত দশটি দিন অতিবাহিত না হলে উনার কাছে কিছু চাওয়া উচিত নয়। তুমি আর একটু ধৈর্যধারণ করো। অবশ্যই এর বিনিময় খুবই উত্তম হবে।

উনার আহলিয়া জাওয়াবে কিছু না বলে চুপ থাকলেন। এভাবে নয়দিন অতিবাহিত হলো। দশম দিনে উনার আহলিয়া একটি ব্যাগ হাতে দিয়ে বললেন, আজ তো আপনি মজুরী পাবেন। আসার সময় জরুরী বাজার-সদায় নিয়ে আসবেন।

তিনি কিছুই বললেন না, সহসাই ব্যাগটি হাতে তুলে নিলেন।

প্রতিদিনের ন্যায় আজও একই কাজ করলেন। স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করলেন। উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিলেন। ঘরে ফিরার সময় কিছু ধুলা-বালি দ্বারা ব্যাগটি পূর্ণ করলেন। চিন্তা করলেন, ব্যাগ ভর্তি দেখে তাৎক্ষণিক আশ্বস্ত হবেন। পরে মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান তাই হবে।

এদিকে মহান আল্লাহ পাক উনার চারজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যুবকের ছূরতে এক বস্তা আটা, একটি বিরাট পাত্র ভর্তি গোশত, একপাত্র মধু, এক ডিব্বা ঘি, একটি থলি ভর্তি তিনশত দিরহাম নিয়ে সন্ধ্যার পূর্বে উনার আহলিয়ার খিদমতে উপস্থিত হলেন।

উনারা বললেন, আপনার আহালকে (স্বামী) উনার মুনিব উনার কাজের মজুরী পাঠিয়ে দিয়েছেন। আপনার আহাল (স্বামী) বাড়িতে আসলে উনাকে বলবেন, উনার কাজ যত বেশি ভালো হবে, তত বেশি মজুরী পাবে। একথা বলে উনারা বিদায় হয়ে গেলেন। (চলবে)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৬)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৭)

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৮)