হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৫) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।  আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৫৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

শোকরগোজারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোজার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وضرب الله مثلا قرية كانت امنة مطمئنة ياتيها رزقها رغدا من كل مكان فكفرت بانعم الله فاذاقها الله لباس الجوع والخوف بـما كانوا يصنعون.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি একটি জনপদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, যা ছিল নিরাপদ, শান্তিদায়ক। সেখানে প্রত্যেক স্থান থেকে প্রচুর রিযিক তথা জীবনোপকরন আসত। অত:পর সেখানকার অধিবাসীগণ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত সমূহের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে ক্ষুধা ও ভীতির পোষাক পরিধান করালেন তথা কঠিন ক্ষুধা ও ভীতির স্বাদ আস্বাদন করালেন।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১২)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ان النعمة اوبد فقيدوها بالشكر.

অর্থ: “নিয়ামত হচ্ছে বন্য পশুর মত লাগামহীন। কাজেই, সেটাকে শোকর তথা কৃতজ্ঞতার রশি দ্বারা বেঁধে রাখ।”

জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময়ের একটি ঘটনা। একদিন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সাক্ষাত হল একজন অভাবী মহিলার সাথে। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে উক্ত মহিলা তার অভাবগ্রস্ততার অভিযোগ করতঃ বললো, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন মহিলার অভাব- অনটন দূর করে দেন।

জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সামনে অগ্রসর হলেন। কিছুদুর যাওয়ার পর অপর একজন মহিলার সাক্ষাত হলো। সেই মহিলা বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার জলীলুল ক্বদর রসূল, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমার ধন-সম্পদ অনেক হয়ে গেছে। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দয়া করে জানবেন কি করলে ধন-সম্পদ কমে যাবে। আমার এতো সম্পদের কারণে ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটে থাকে। কাজেই, আমার সম্পদ কমলে আমি বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী করতে পারবো।

হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তাকে অভয় দান করলেন।

হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আবারো সামনে অগ্রসর হলেন। কিছুদূর গিয়ে দেখতে পেলেন হাত-পা বিহীন, একটি গোস্তের টুকরার মতো এক ব্যক্তি। সে ব্যক্তি হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে উনার মুবারক খিদমতে আরয করলেন, হে কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি তো কোন কিছুই অযথা সৃষ্টি করেননি। তিনি আমাকে কোন কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন? আমার তো হাত পা কিছুই নেই। আমি কিছুই করতে পারি না। মেহেরবানী করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জানবেন।

হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা-বার্তা মুবারক বলার প্রাক্কালে উনার নিকট আবেদন করলেন, হে বারে ইলাহী! অমুক ব্যক্তিকে কোন কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন? তা ঐ ব্যক্তি জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি ঐ দুই মহিলার আবেদনও নিবেদন করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কালাম (কথা-বার্তা) শেষ করে ফিরে আসতেছিলেন। পথিমধ্যে ঐ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত হলো। হযরত কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়েছেন যে, জাহান্নামের একটি ছিদ্র আছে। সেই ছিদ্র তোমাকে দিয়ে পূর্ণ করা হবে। একথা বলার সাথে সাথে সে ব্যক্তি বললো- আলহামদুলিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি আমাকে একটি কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন। অযথা সৃষ্টি করেননি। প্রশংসা করার সাথে সাথে তার চার হাত পা হলো। সে পরিপূর্ণ ও সুস্থ-সবল মানুষে পরিণত হলো। সুবহানাল্লাহ!

তখন লোকটি আরজ করলো, হে হযরত  কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! জাহান্নামের যে ছিদ্র বন্ধ করার জন্য আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেই ছিদ্রখানা এখন কিভাবে বন্ধ করা হবে? তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে আবেদন করলেন হে বারে ইলাহী! তাহলে জাহান্নামের ঐ ছিদ্রটি কি দ্বারা পূর্ণ করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- আমি কুদরতীভাবে তা পূর্ণ করবো।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)