মুহম্মদ আমজাদ আলী, বাইতুল মোর্কারম মার্কেট
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মিরপুর, ঢাকা।
ডাঃ মুহম্মদ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ সদর।
সুওয়ালঃ ২০০৭ ঈসায়ী সনে দেশে আসন্ন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছে খিলাফত মজলিস দলের একাংশের চেয়ারম্যান তথা কথিত শাইখুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক ছাহেব। শর্তারোপ করেছে পাঁচ দফা দাবি পূরণের। দাবিগুলো হচ্ছে-
(১) কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী কোনও আইন প্রণয়ন করা হবে না
(২) কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে।
আইন করা হবে-
(৩) হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী।
(৪) নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করা
দণ্ডনীয় অপরাধ।
(৫) সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলিমরা ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন।
সনদবিহীন কোনও ব্যক্তি ফতওয়া দিতে পারবেন না। (সমূহ জাতীয়
দৈনিক)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কথিত শাইখুল হাদীছ ছাহেবের উল্লিখিত পাঁচ দফা দাবি পূরনের শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়াটা কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত হয়েছে? দয়া করে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ ‘আবূ জাহিলকে’ চিনেনা পৃথিবীতে এরূপ মুসলমান খুজে পাওয়া দুস্কর হবে। ‘আবূ জাহিল’ তার নাম কখনোই ছিলনা, তার নাম ছিল ‘আবুল হিকাম’ অর্থাৎ জ্ঞানীর পিতা বা মহা পণ্ডিত হিসেবেই সে কাফিরদের নিকট অধিক মশহুর ছিল সে এতটাই পণ্ডিত ছিল যে আরব দেশে কোন বিচার হতো না ‘আবুল হিকাম’ কে ছাড়া।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘দ্বীনে হক্ব’ প্রচার শুরু করলেন, ‘মহা পণ্ডিত’ নিজ স্বর্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে এবং স্বার্থ হাছিরের লক্ষ্যে ইসলামকে হক্ব বা সত্য জানা ও বুঝার পরও দ্বীনে হক্বের বিরোধিতা করলো এবং বাতিল মতবাদ বা কুফরী শিরকীর মধ্যে দৃঢ় রইল।
রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গত কারণেই মহা পণ্ডিত ‘আবুল হিকামের’ নাম পরিবর্তন করে ‘আবূ জাহিল’ তথা মুর্খের পিতা বা ‘মহা মুর্খ’ রাখলেন। সে থেকে অদ্যবধি সাড়া বিশ্ববাসী তাকে ‘আবূ জাহিল’ বলেই সম্বোধন করে আসছে।
উপরোক্ত ঘটনা থেকে প্রমাণিত হলো, জেনে শুনে হক্বের বিরোধতিা করলে হক্বের সাথে নাহক্বকে মিশ্রিত করলে, নিজ স্বার্থ রক্ষায় নাহক্ব মত-পথ অনুসরণ করলে তার নাম পরিবর্তন করে যথপোযুক্ত নামে সম্বোধন করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
সাড়া বিশ্বে সুন্নত যিন্দাকারী মাসিক আল বাইয়্যিনাত আল্লাহ পাক-এর রহমতে বহু পূর্বেই অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ সুন্নত আদায় করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- সুওয়ালে উল্লেখিত তথাকথিত ‘শাইখুল হাদীছ’।
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাকে সম্বোধন করা হয় ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তাকে ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে সম্বোধন করা হলো?
অবশ্য এর জবাবও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মতামত বিভাগে বহুবার দেয়া হয়েছে। আমরা মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে পুনরায় উক্ত বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করবো তাতে সুওয়ালে উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝতে আমাদের সহজ হবে।
তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হককে
শাইখুল হদছ’ বলার কারণ
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال خط لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم خطا ثم قال هذا سبيل الله ثم خط خطوطا عن يمينه وعن شماله وقال هذه سبل على كل سبيل منها شيطان يد عو اليه.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, “একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি সরল রেখা টানলেন। এবং বললেন, এটি আল্লাহ পাক-এর রাস্তা। এরপর এর ডানে-বাঁয়ে অনেকগুলো রেখা টানলেন এবং সরল রেখা ব্যতীত বাকী রেখাগুলো সর্ম্পকে বললেন, এগুলোও রাস্তা তবে এগুলোর প্রত্যেকটির মাথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এক একটি শয়তান। অর্থাৎ এ রাস্তাগুলো হচ্ছে গোমরাীর রাস্তা। উক্ত শয়তান গোমরাহীর পথে আহবান করে।” (আহমদ, নাসায়ী, দারিমী, মিশকাত)
কথিত শাইখুল হদছ সরল পথ পরিহার করে ইসলামের নামে গোমরাহীর পথগুলিতেই মানুষকে পরিচালিত করছে। হারাম লংমার্চ, হরতাল, ব্লাসফেমী আইন, মৌলবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ, নির্বাচন তথা গণতন্ত্র প্রত্যেকটিই শয়তানের পথ, গোমরাহীর পথ। সাম্প্রতিক কালে হারাম গণতন্ত্রের পথে চলতে গিয়ে সে যোগ করেছে নারী নেতৃত্বের অধীনে চলার মত নতুন শত্রু যা কিনা শাইখুল হদছ হিসেবে তার যোগ্যতাকে আরো ঘনীভূত করেছে।
আর এভাবে বিজাতীয় বিধর্মী তথা বিদয়াতী পথে মানুষকে ইসলামের নামে ডাকার ফলে তার অন্তর থেকে ইল্মের নূর উঠে গেছে। দ্বীনি সমঝ তথা ফিকহুন উবে গেছে। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن معاوية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من يرد الله به خيرا يفقهه فى الدين.
অর্থঃ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ্ পাক যার ভালাই চান তাঁঁকে দ্বীনের সহীহ্ বুঝ দান করেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
অর্থাৎ ‘আল্লাহ্ যার ভালাই চান তাকে দ্বীনি সমঝ দেন।’ মূলতঃ এই দ্বীনি সমঝ তার পূর্বে যতটা না ছিল এখন তার চেয়ে অনেক বেশী নেই। যে কারণেই দেখা যাচ্ছে যে এখন তার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত পত্রিকাগুলোতে সাধারণ দ্বীনি মাসয়ালাগুলো নিয়ে পর্যন্ত চরম ভূল ও গোমরাহীমূলক জবাব দেয়া হয়।
অথচ হাদীছ শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال سمعبت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كلكم راع وكلكم مسئول عن رعيته.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক, তাকে তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (বুখারী শরীফ) তথা অধীনস্থদের সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হবে।
এ প্রেক্ষিতে উক্ত তথাকথিত শাইখুল হাদীছের পত্রিকায় যখন ওযুর মাসায়েল সম্পর্কে ভুল লেখা হয় (ঠক পয়গাম, মে-৯৫ঈং), নামাযের মাসায়েল সম্পর্কে ভুল লেখা হয় (ঠক পঁয়গাম, জুলাই- ৯৬ঈং), রোজার মাসয়ালার ক্ষেত্রে ভুল শিক্ষা দেয়া হয়, অর্থাৎ রোযা অবস্থায় ইন্জেকশন নিলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা (ঠক পয়গাম, জুলাই- ৯৭ঈং), লেবাস সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়া হয় (ঠক পয়গাম, মে-৯৩ঈং), টুপি সম্পর্কে ভুল মাসয়ালা দেয়া হয় (ঠক পয়গাম, জানুয়ারী- ৯৭ঈং), ছবি সম্পর্কে ভুল মাসয়ালা শিক্ষা দেয়া হয় (ঠক পয়গাম সেপ্টেম্বর-৯৪ঈং), পর্দা সম্পর্কেও বেঠিক কথা বলা হয়, (ঠক পয়গাম, মার্চ-৯৩ঈং), বিদ্য়াত সম্পর্কে ভূল ধারণা ব্যক্ত করা হয়, (ঠক পয়গাম, আগষ্ট-৯৪ঈং) এমনকি শিশুর বেহেশতে গমন সম্পর্কেও ভূল তথ্য পরিবেশন করা হয়, (ঠক পয়গাম, নভেম্বর-৯৫ঈং)
তখন কি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে প্রতিভাত হয়না যে এতসব শিক্ষা তথা হারাম বা নাপাক শিক্ষা দেবার জন্য উক্ত হদছ গং-দের মুরব্বী তথাকথিত উস্তাজুল আসাতিজা শাইখুল হদছই দায়ী।
অর্থাৎ কিনা বলতে হয় যে, উক্ত শাইখুল হদছ গং মুসলমানদের প্রথম প্রয়োজন ওজু থেকে আরম্ভ করে শেষ গন্তব্য স্থান বেহেশতে গমন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, গোমরাহীর পথে পরিচালিত করছে। নাপাক পথে চালিত করছে।
অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من افتى بغير علم كان اثمه على من افتاه.
অর্থঃ হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যাকে ইল্ম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদনুযায়ী আমল করেছে, তার গুনাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে তার উপরই পড়বে।” (আবূ দাউদ, মিশকাত)
মূলতঃ এভাবে মুসলমানদের সঠিক জীবনে ভূল মাসয়ালা দেয়ার প্রেক্ষিতে তাদের আমলকে বিকৃত করার মানসে বিদ্য়াতী মতবাদে দ্বীক্ষিত করার কারণে মানুষের ঈমান আমলকে ক্ষতিগ্রস্থ করার ফলশ্রুতিতে এ কথা বলতে কি বাধা থাকে সে আসলেই শাইখুল হদছ!
এক সময় তার উপাধি ‘হদছ’ শুনে যারা চু-চেরা কিল-কাল করত, তার পক্ষ হয়ে বাইয়্যিনাত-এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করত, আজকে সেই চু-চেরা কিল-কাল উচ্চারণের কাফ্ফারা আদায় তার স্ব-গোত্রীয়রাই করছে চরম ঘৃণাভরে। হাদীছে কুদসী শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله تعالى قال من عادى لى وليا اذنته بالحرب.
অর্থঃ “আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলীর বিরোধিতা করে আমি তার বিরুদ্ধে জ্বিহাদ ঘোষণা করি।” (বুখারী, মিশকাত)
ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, আওলাদুর রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর বিরোধিতার কারণেই আজকে তার এ পদঙ্খলন। এটা আজ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে বা অনুসরন করে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
এ হাদীছ শরীফের আলোকে নিম্নে শাইখুল হদসের আমলের ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো এবং কি কারণে তাকে শাইখুল হদছ বলা হয় তার বর্ণনা দেয়া হলো-
১. লংমার্চ
যে বা যিনি যখনই লংমার্চ করুন না কেন সে বা তাকে অবশ্যই অবশ্যই তৎক্ষনাত কট্টর কমুনিষ্ট মাওসেতুং এর অনুরাগী ও অনুসারী হতে হয়। প্রসঙ্গতঃ লংমার্চ সম্পর্কে মাওসেতুং এর উদ্ধতিতেও তার প্রমাণ ব্যক্ত রয়েছে।
“ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে লংমার্চ এ ধরণের প্রথম ঘটনা। একটি ইস্তেহার, একটি প্রচার বাহিনী, একটি বীজ বপনকারী যন্ত্র।
পানগু যখন স্বর্গ থেকে মর্ত আলাদা করে দেয় এবং তিন রাজা ও পাঁচ সম্রাট রাজত্ব করত সেই থেকে ইতিহাস কি কখনো আমাদের মত একটি লংমার্চ প্রত্যক্ষ করেছে? দীর্ঘ বারো মাস বেশ কিছু বিমান আকাশ থেকে আমাদের ওপর নজর রেখেছে এবং বোমা ফেলেছে। মাটিতে কয়েক শত-সহস্র মানুষের এক বিশাল বাহিনী আমাদের ঘেরাও, অনুসরণ, গতিরোধ করেছে এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, পথে আমরা অবর্ণনীয় কষ্ট এবং বিপদের মোকাবেলা করেছি; তথাপি দু’পা ব্যবহার করে আমরা এগারটি প্রদেশের দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বিশ হাজার লী’র বেশী দূরত্ব অতিক্রম করেছি। জিজ্ঞেস করতে চাই ইতিহাসে কি কখনো এ ধরণের লংমার্চের ঘটনা ঘটেছে? না, কখনোই নয়। (Selected works of Mao Ise tung vol, 1, page 161-162)
মূলতঃ আল্লামা লক্বব ব্যবহার করলেও ফুলতলী সাহেব আসলে মোটেও আল্লামা বা জ্ঞানী নন। আসলে লংমার্চের ইতিহাস ও প্রকৃতি সম্পর্কে তার কোন জ্ঞানই নেই। তাই তার এবং তার মূর্খ অনুসারীদের জ্ঞাতার্থে লংমার্চের ইতিহাস ব্যক্ত করা হল-
লংমার্চের প্রাক ইতিহাস
১৯২৭ সালটা চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির জন্যে এক দুর্যোগপূর্ণ সময় বলে ধরা হয়। পার্টির নির্দেশে মাওসেতুং তার কর্মক্ষেত্র হুনান প্রদেশে শরৎকালীন ফসল তোলার পূর্বে এক কৃষক বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। হুনানের পার্শ্ববর্তী প্রদেশ কিয়াংসির প্রধান শহর নানচাঙ-এ আরেক কমিউনিষ্ট নেতা আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মোটামুটি সফল হয়। এ বাহিনী সদম্ভে ক্যান্টনের দিকে অভিযান চালাতে গিয়ে চীনের তৎকালীন কমিউনিষ্ট বিরোধী প্রেসিডেন্ট চিয়াঙ কাইশেকের বাহিনীর নিকট পরাজয় বরণ করে। নানচাঙ কয়েক দিনের জন্যে কমিউনিষ্ট পার্টির ফৌজের অধীনে থাকলেও ক্যান্টেনের অভিযানে পরাজিত হয়ে একেকজন একেক দিকে পালিয়ে যায়। হোলাঙ সাংহাইতে, চৌ-এন লাই হংকং-এ, মাওসেতুং তার অবশিষ্ট সৈন্য বাহিনী নিয়ে হুনান আর কিয়াংশি প্রদেশের সীমান্তবর্তী পার্বত্য অরণাঞ্চল চিঙ্খানশান এ পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। কিছুদিন পর চু-তে এখানে এসে মিলিত হয় মাওসেতুং এর সাথে।
এদিকে এ বৎসরটি শেষ হওয়ার পূর্বেই কমিন্টার্ণ চীনের এখানে ওখানে কয়েকটি সোভিয়েত প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সোভিয়েত বলতে কমিউনিষ্টদের ভাষায় একটি ভুখন্ড, যেখানে কমিউনিষ্টরা তাদের কথিত সাম্যবাদের নীতিতে দেশটাকে শাসন করে অর্থাৎ সেখানে উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা হবে জমিদার বা কারখানা মালিক ও কৃষক-মজদুরের তথাকথিত যৌথ স্বার্থে। জমিদার বা কারখানা মালিকরা এ ব্যবস্থা মেনে না নিলে পুলিশ ও মিলিটারী দিয়ে তাদের বাধ্য করা হবে। কারণে কমিউনিষ্টরা সোভিয়েত প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিজস্ব ফৌজ বা গণফৌজ তৈরী করতে সচেষ্ট হয়।
প্রথম সোভিয়েত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কোয়াংতুং প্রদেশের হাই-লু-ফেং সোভিয়েত। এর নেতা ছিল পেং পাই। প্রায় সাত-আট লক্ষ কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ সোভিয়েত কিন্তু এক বছর না যেতেই ১৯২৮ সালের মার্চে তাকে নির্মূল করে ফেলা হয়।
সেক্রেটারী জেনারেলের পদ- ত্যাগ করে চু-চিউ পাই মস্কো চলে যায়। দলের নেতৃত্বভার গ্রহণ করে লি-লি সান। তার প্রধান সহকারী নিযুক্ত হয় চৌ এন লাই। তিন বছর এর মধ্যেই ব্যাপক আকারের বিপ্লব কর্মসূচী হাতে নেয় লিলি সান। তার আশা ছিল এ বিপ্লব শুধু চীনেই নয় বরং তা হবে সমগ্র বিশ্বে এবং এটাই হবে চুড়ান্ত বিপ্লব এবং বিশ্বের শেষ এবং চুড়ান্ত শ্রেণী সংগ্রাম। ১৯৩০ সালের জুনে লি- মাওসেতুং আর চু-তের অধীনস্ত গণফৌজ নিয়ে পার্শ্ববর্তী কারখানা আছে এমন শহরগুলো বিশেষ করে উহান আর হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশা দখল করে নেয়ার জন্যে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে হুকুমনামা জারী করে।
কিন্তু গণফৌজ সে যুদ্ধে পরাজিত হয়। পেং তে হুয়ির পঞ্চম বাহিনী চাংশা দখল করেও স্থায়িত্ব পায়নি। ফলে পরাজিত বাহিনীর অবশিষ্ট ফৌজ নিয়ে মাওসেতুং এবং চুতে পুনরায় পর্বত কন্দরে পালিয়ে যায়।
১৯৩১ সালের গোড়ার দিকে লিলিসানকে সরে দাঁড়াতে হল নেতৃৃত্বের পদ থেকে। পার্টির নতুন নেতৃত্ব গ্রহণ করে মস্কো ফেরৎ ছাত্রদল, যারা ‘অষ্টবিংশতিবলশেভিক’ নামে পরিচিত। এ দলের তিন জন ছিল চীনা বিপ্লবী। এদের ছদ্ম নাম যথাক্রমে- ওয়াং মিং, পে-কু এবং লো ফু। দলের নেতা ছিল ওয়াং ফু। কিন্তু তার নীতিতে কার্যকর হলনা কিছুই। পার্টির ভিতর হতাশা নেমে এল। শহরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে হতাশা নেমে এলেও চিঙ্খানশান পার্বত্য ভূখন্ডের গভীরে তিন বন্ধু মাওসেতুং, চুতে আর পেনতে হুয়ি অন্যভাবে কাজ করে যাচ্ছিল।
চিঙ্খানশানের কিয়াংশি সোভিয়েতঃ
হুনান আর কিয়াংশি প্রদেশের সীমান্তে চিঙ্খানশান একটা অরণ্য পর্বত পরিধিতে প্রায় দেড়শ মাইল বিস্তৃত। পাইন আর বাঁশ ঝাড়ের জঙ্গল, নেকড়ে, বুনো শুয়োর আর চিতা বাঘের আড্ডা। চম্বল অরণ্যের মতো এখানেও যুগে যুগে আশ্রয় নিয়েছে ডাকাতের দল। ১৯২৭ সালের শেষদিকে পরাজিত ভগ্নহৃদয় সৈন্যদলের ভগ্নাংশ নিয়ে মাওসেতুং ঐ জঙ্গলে এসে আশ্রয় নেয়। তখন তার সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজার। হুনান এর কৃষক বিদ্রোহের ব্যর্থতা, নানচাঙ এর পতন, ক্যান্টেনের চুড়ান্ত পরাজয় আর পার্টি থেকে মাওসেতুং এর বহিস্কার ইত্যাদি সব মিলিয়ে মাও এর অবস্থা শোচনীয়। তবুও হতাশ না হয়ে অদম্য স্পৃহা আর মনোবল নিয়ে ডাকাত দলের সাথে সমঝোতা করে ঐ অরণ্যেই একটা সোভিয়েত গড়ে তুলবার চিন্তায় বিভোর হল মাও। কেন্দ্রীয় কমিটির ভৎসনাকে উপেক্ষা করেই মাও ভাব জমিয়ে তুলল ছয়’শ জন সদস্য বিশিষ্ট ডাকাত দলের সর্দারের সাথে। ছয় মাস পরে ১৯২৮ এর বসন্তকালে মাও এর সাথে নয় শত সৈন্য আর চেনয়ি ও লিন পিয়াও নামের দু’জন সহকারী সহ হাজির হয় চুতে। একই বছরে হুনান এর কৃষক নেতা পেনতেহুয়ি হাজারখানিক নিজস্ব সৈন্য নিয়ে এসে মিলিত হয় তাদের সাথে। তিন বন্ধুর মিলিত বাহিনীর সাথে ডাকাত দল আর স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে মোটামুটি একটা সৈন্যদল গঠিত হল। সেই সাথে মাও তার নয়া যুদ্ধনীতি প্রবর্তন করে। কিয়াংশি জঙ্গলে যখন এসব ঘটনা ঘটছে, বহিঃচীন তখন জাপানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। জাপান চীনের মাঞ্চুরিয়া দখল করে নেয়ায় চীনের জনগণ জাপান বিরোধী মনোভাব ব্যক্ত করলে চিয়াঙ জাপানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং উল্টোভাবে জাপান বিরোধী আন্দোলন দমনে সক্রিয় হয়ে উঠে।
চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চিয়াঙ কাইশেক এরপর ঐ কিয়াংশি সোভিয়েতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে পর পর কয়েকটি অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। অভিযান পরিচালিত হয় ১৯৩০ সালের ডিসেম্বরে, দ্বিতীয়বার ১৯৩১ এর বসন্তকালে। এ অভিযানকালে গণফৌজ চিয়াঙ-এর বিশ হাজার সৈন্যকে বন্দী করে তাদের সব আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেয়। জেনারালেসিমো চিয়াঙ কাইশেক তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করতে নিজেই এসে আস্তানা গাড়ে, গণফৌজের দশগুণ সৈন্য সমাবেশ করে এবারও ব্যর্থ হয়। মাও এবং চু-র গেরিলা যুদ্ধনীতিতে চিয়াঙ এর দুটি বিগ্রেড আত্মসমর্পন করে। বন্দী হয় বিশ হাজার সৈন্য। সেই সাথে তাদের বিশ হাজার রাইফেল এবং কয়েকশ মেশিনগান। গণফৌজের সৈন্য সংখ্যা তখন দুই লক্ষ। তাদের আছে প্রায় দেড় লাখ রাইফেল। জাপানের সাথে যুদ্ধ বাঁধার ফলে ১৯৩২ সালে চিয়াঙ চতুর্থবার অভিযান পরিচালনা করেও মাও বাহিনীকে পর্যদুস্ত করতে ব্যর্থ হয়। এরই মধ্যে ১৯৩২ সালে ওয়াং মিং অবসর নিয়ে ফিরে যায় রাশিয়ায়। সেক্রেটারী জেনারেল পো-কু তার সহকারী চৌ-এন লাই এবং একজন জার্মান অটোব্রন, যার ছদ্মনাম লি তে, চিয়াঙ এর চতুর্থ বারের ব্যর্থতায় সাহস বেড়ে গেল ওদের। এক লক্ষ গণফৌজ নিয়ে আশ-পাশের শহরাঞ্চলগুলো দখলের হুকুম জারী করল। মাওসেতুং এ নীতির ঘোর বিরোধী থাকার ফলে তার দলের অনেক অনুচরকেই তখন বহিস্কার করা হয়। কিন্তু পো কু আর লি তের আশা সফল হলনা। ঘটনা প্রবাহিত হল ভিন্ন দিকে। চিয়াঙ জাপানের সঙ্গে আতাত করবে না কমিউনিষ্টের সঙ্গে আতাত করে বহিঃশত্রু জাপানকে তাড়াবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। অবশেষে জাপানের সাথে মামুলী ধরণের একটা সন্ধি করে গৃহশত্রুকে সবংশে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পঞ্চম এবং শেষ অভিযান পরিচালনা করতে গণফৌজকে নির্মূলীকরণে পশ্চিমা শক্তির দেয়া পাঁচ কোটি ডলার মূল্যের গম, আগ্নেয়াস্ত্র এবং চারশ বিমান আর দশ লক্ষ সৈন্যের বিরাট বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয় কিয়াংশি সোভিয়েতের বহিঃদ্বারে। রণনীতি বদলে চিয়াঙ এবার চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলল লাল এলাকা।
চিয়াঙ সম্মুখ যুদ্ধ না করে সমস্ত এলাকা ঘিরে রাতারাতি পাকা সড়ক নির্মাণ করে রাস্তার উপর সাজোয়া গাড়ী সাজিয়ে মেশিনগান দিয়ে সৈন্যদের বসিয়ে রাখে। ছেলে-মেয়ে, বাচ্চা-বুড়ো যে কেউ ঐ জঙ্গল ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে দেখা মাত্রই গুলি করার নির্দেশ জারী হলো। অতঃপর পরিখা খনন করে কাঁটা তারের বেড়া দিল চার পাশে। যাতে কেউ জঙ্গল ছেড়ে এপারে আসতে না পারে। ঐ ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত পার্বত্য অরণ্যে এক গ্রেন কুইনিন প্রবেশের ক্ষেত্রেও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
অবস্থা পর্যবেক্ষণ পূর্বক এ বিপদ থেকে বাঁচার জন্যে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বুহ্য ভেদ করে বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে মাও এবং চু পরামর্শ দিয়েছিল সেনাপতিকে। কিন্তু জার্মান সেনাপতি লি তে-তা অগ্রাহ্য ১৯৩৪ সালের এপ্রিলে লি তে মাও এর যুদ্ধনীতি অগ্রাহ্য করে ফুকিয়েন-কিয়াংশি সীমান্তে কোয়াংচাঙ এর রণক্ষেত্রে সম্মূখ যুদ্ধে মর্মান্তিকভাবে পরাজিত হয়। এতে গণফৌজের চার হাজার সৈন্য নিহত এবং বিশ হাজার সৈন্য আহত হয়। অবশেষে বাধ্য হয়ে তাদের ফিরে আসতে হল অবরুদ্ধ জঙ্গলে।
এতদিনে পলিটব্যুরো মাওয়ের মত মেনে নিলো। সোভিয়েত ছেড়ে সদলবলে পালানোর জন্যে প্রস্তুত হলো। আর মাওসেতুং এর কথানুযায়ী কমিউনিষ্ট তথা লাল ফৌজ বা গণ ফৌজ বাহিনীর এই পলায়ণের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে অভিহিত। ১৬ই অক্টোবর ১৯৩৪ সালে শুরু হলো এই কথিত মহাযাত্রা লংমার্চ। পালানোর কৌশল হিসেবে তারা চীনের দক্ষিণ-পূর্ব কিয়াংশি থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে ঘুরে প্রায় (৬-৮) হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে চীনের উত্তর পশ্চিম সেনসি প্রদেশে পৌঁছে। পথে তাদের ১৮টি পাহাড়ের সারি ও ২৪টি নদী অতিক্রম করতে হয়। মাওসেতুং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টদের এই দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ পলায়নের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে অভিহিত বা মশহুর।
১৯৩৪ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রায় ১লাখ ৩৫জন লোক নিয়ে মাওসেতুং এই পলায়ন অভিযান আরম্ভ করে। এদের মধ্যে ৮৫ হাজার ছিল কমুনিস্ট সৈন্য, ১৫ হাজার বেসামরিক ব্যক্তি ও ৩৫ জন মেয়েলোক। পলায়নের সময় একদিকে নতুন সৈন্য অন্তর্ভূক্তির ব্যর্থতা অপরদিকে সমরাস্ত্র, খাদ্য, চিকিৎসা ইত্যাদির অভাবে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ে। যার ফলে তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং প্রায় ৮ হাজার লোক জীবিত অবস্থায় ১৯৩৫ সালের অক্টোবরে সেনসি প্রদেশে পৌঁছে।
উল্লেখ্য এর মধ্যে অবশ্য অনেককে ইচ্ছে করেই বিভিন্ন গ্রামে রেখে আসা হয়, সে অঞ্চলে বিপ্লবের বীজ বপন করতে।
অবশেষে তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট চিয়াং কাইশেকের কাছেও খবরটা পৌঁছল। মাওসেতুং-এর নেতৃত্বে কমিউনিষ্টরা উত্তর-পশ্চিম চীনের সেনসিতে মিলিত হয়েছে। ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে চিয়াং কাইশেক স্বয়ং এল সেনসিতে। সব সেনাপতিকে ডেকে কমিউনিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের কথা বললো চিয়াং কাইশেক। কিন্তু এদিকে তখন চীনের বহিঃশক্র জাপানের আক্রমণ তুঙ্গে। তাই মার্শাল চ্যান্ড সহ কতিপয় সেনাপতি কমিউনিষ্টদের সাথে সন্ধি করে বহিঃশত্রু জাপানের বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণের পরামর্শ দেয়। কিন্তু চিয়াং কাইশেক তাতে রাজী না হলেও ছাত্র জনতার চাপ এমনকি মার্শাল চ্যান্ড এর মত কতিপয় সেনাপতির কৌশলে চিয়াং কাইশেক এক পর্যায়ে বন্দী হয়ে অবশেষে মাওসেতুং এর কমিউনিষ্ট পার্টির বিরুদ্ধে আক্রমণ বাদ দিয়ে বরং তার সাথে মিলিত হয়ে জাপানের বিরুদ্ধে লড়তে সম্মত হয়।
আর এদিকে চিয়াং কাইশেকের সাথে মিলিত হওয়ার পেছনে মাও-এর দর্শন ছিল যে, জাপানীদের থেকে রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীনতা লাভের জন্য তখন চিয়াং কাইশেকের সাথে মিলিত হয়ে যুক্তফ্রন্ট করা দরকার। কিন্তু মাওসেতুং বিশ্বাস করত যে এ যুক্তফ্রন্ট বেশী দিন চলবেনা। কিন্তু ঐভাবে মাওসেতুং চিয়াং কাইশেকের সৈন্যদলের ভিতর ঢুকে পড়তে চেয়েছিলো। তার সে চেষ্টা সফল হয়েছিল। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালে আরেক বিরোধে মাওসেতুং জয় লাভ করে, চিয়াং কাইশেক পদত্যাগ করে এবং ১৯৫০ সালে চিয়াং কাইশেক সপরিবারে ফরমোসায় পলায়ন করলে পুরো চীনে মাওসেতুং এর কমিউনিষ্ট পার্টি কমিউনিষ্ট শাসন জারী করে।
কারণ মাওসেতুং এর কথানুযায়ী তার লংমার্চ যদি না করা হত তাহলে কিয়াংশি প্রদেশেই সমস্ত কমুনিষ্টদের চিয়াং কাইশেকের সেনাবাহিনীর হাতে মৃত্যুবরণ করতে হত।
কিন্তু মাওসেতুং-এর লংমার্চের কারণেই তারা প্রাণে বেচেঁছে এবং পরিণামে কমিউনিষ্ট মতবাদও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
অতএব, সে লংমার্চ করে ফুলতলী সাহেব শুধু তার উস্তাদ মাওসেতুংকেই উদ্ভাসিত করেন নাই পাশাপাশি তিনি এই কথাও বিশেষভাবে প্রতিধ্বনিও করেছেন যে, ইসলাম নয়, লালফৌজ তথা কমুনিষ্টদের পথই এক মাত্র মুক্তির পথ। (নাঊযুবিল্লাহ)
মাওসেতুংয়ের ভাষায়- লংমার্চ একটি ইস্তেহার। লংমার্চ গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে লাল ফৌজ বীরদের কাহিনী, সাম্রাজ্যবাদীরা এবং তাদের পা চাটা কুকুর জিয়াং জিয়েশি (চিয়াং কাই-শেক) ও তার দোসররা নপুংসক, আমাদের ঘেরাও, অনুসরণ, প্রতিরোধ এবং গতিরোধে তাদের চরম ব্যর্থতার কথাও লংমার্চ জানিয়ে দিয়েছে। লংমার্চ একটি প্রচারণী শক্তিও। এগারোটি প্রদেশের প্রায় ২০ কোটি জনগণকে লংমার্চ দেখিয়েছে লাল ফৌজের পথই তাদের মুক্তির একমাত্র পথ। লংমার্চ ছাড়া ব্যাপক জনগণ স্বল্প সময়ে কিভাবে লাল ফৌজের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পারতেন? লংমার্চ বীজ বপনকারী যন্ত্রও। এগারোটি প্রদেশে লংমার্চ যে অসংখ্য বীজ বুনেছে, তা মুঞ্জরিত হবে, পাতা গজাবে, বিকশিত হবে, ফল ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতেও ফসল দেবে। (Selecte works of Mao Ise tung vol. 1, page 161-162)
মাওসেতুং এর কথা সত্য হয়েছে। তার শিষ্য শাইখুল হদছ মাওসেতুং এর সার্থক ও খাটি ভাবশিষ্য বনেছে।
হদছকে লংমার্চের পূর্বে তার মাদ্রাসার সম্মুখস্থ বাসষ্ট্যান্ডের মাহ্ফিলে “লংমার্চ করা জায়েয নেই” বললেও লংমার্চ সে ঠিকই করে বিদেশী প্রভূদের মদদপুষ্ট হয়ে (বিদেশী টাকা খেয়ে) এবং তাতে সাতটি প্রাণ ঝরে যায়। আর কট্টর কমিউনিষ্ট মাওসেতুং-এর এ লংমার্চকে সে “জ্বিহাদ” নামে চালিয়ে দিতে চায়। তাহলে যারা মারা গেছে তারা “শহীদ।” কিন্তু হাদীছ শরীফের আলোকে যখন বলা হয়, জ্বিহাদের ময়দান থেকে বিপরীত পক্ষের সাথে কোন প্রকার সন্ধি বা শর্ত-শারায়েত ব্যতীত ফিরে আসলে “তওবা” কবুল হবেনা। তখন সে বাঁচার জন্য এটাকে জ্বিহাদ বলতে নারাজ, তাহলে যারা মারা গেছে তারা শহীদ হয় কিভাবে? তাই যদি হয়, তাহলে সাতটি মায়ের বুক খালি করার দায়-দায়িত্ব কার ? এ ধরণের প্রকাশ্য হারাম কাজে কি প্রমাণ হয়না যে, সে “শাইখুল হাদীছ ” নয় বরং “শায়খুল হদছ।”
(চলবে)
মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন
মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি।
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
(ধারাবাহিক)
জাওয়াব: “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরাও তাদের কিতাবে “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরাসহ সমস্ত দেওবন্দী মৌলভীরা যাকে হক্কানী আলিম, উস্তাজুল আসাতিযা, মুহাদ্দিছগণের মাথার তাজ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে মুখে ফেনা তুলে তাদের সেই কথিত শায়খুল হাদীছ আযীযুল হক্ব তার লিখিত “মোসলেম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছের ছয় কিতাব” নামক গ্রন্থের ২৭১-২৯০ পৃষ্ঠায় ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যে খাছ সুন্নত ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তা ছাবিত করেছেন। যার প্রমাণ আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর গত কয়েক সংখ্যায় পেয়েছেন।
স্মর্তব্য, শুধু তাই নয়, ফরয নামাযের পর মুনাজাতের প্রমাণ সরাসরি কুরআন শরীফের অসংখ্য আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যায়ও রয়েছে।
(দ্বিতীয় অংশ)
তাফসীরুল কুরতুবী ১০ জিঃ ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قوله تعالى: (فاذا فرغت) قال ابن عباس رضى الله عنه وقتادة فاذا فرغت من صلاتك (فانصب) اى بالغ فى الد عاء وسله حا جتك.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, (فاذا فرغت যখন আপনি অবসর হন) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ক্বতাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন আপনি আপনার নামায থেকে ফারেগ হবেন (فا نسب কোশেশ করুন) অর্থাৎ দোয়ার দিকে আত্ম নিয়োগ করুন এবং তাঁর কাছে আপনার প্রয়োজনীয় বিষয় প্রার্থনা করুন।”
তাফসীরে ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ৬ষ্ঠ জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فرغت فانصب) کہ جس وقت فرض نماز سے فاغ موں تو خوب کوشش سے دعا کیا کریں اور تمام حاجنوں مبں اپنے رب ھی سے امید ر کھے.
অর্থঃ- “فاذا فرغت فا نصب) ‘যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন) যখনই ফরয নামায থেকে ফারেগ হবেন, তখনই খুব কোশেশের মাধ্যমে দোয়া করুন। আর সমস্ত প্রকার হাজতের জন্য আপনার রবের কাছে প্রার্থনা করুন।”
তাফসীরে ইবনে কাছীর ৪র্থ জিঃ ৮৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فر غت فانصب والى ربك فارغب) …… وقال على بن ا بى طلحة عن ابن عباس رضى الله عنه فاذا فر غت فانصب يعنى فى الد عاء.
অর্থঃ- “(যখন অবসর পান কোশেশ করুন এবং আপনার রবের দিকে মনোনিবেশ করুন) …….. হযরত আলী ইবনে আবু ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করে বলেন, যখন (নামায থেকে) ফারেগ হবেন, তখন কোশেশ করুন অর্থাৎ দোয়া করুন।”
তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১৫ জিঃ ১৯৮ পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে,
(فاذا فرغت فانصب والى ربك فارغب واخرج ابن جرير وغيره من طرق عن ابن عباس رضى الله عنهما انه قال اى اذا فر غت من الصلاة فا نصب فى الد عاء وروى نحوه عن الضحاك وقتادة.
অর্থঃ- “(যখন অবসর হবেন পরিশ্রম করুন এবং আপনার রবের দিকে মনোনিবেশ করুন) হযরত ইবনে জারীর তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, যখন নামায পড়ে ফেলবেন তখন দোয়ার মধ্যে মনোনিবেশ করুন। অনুরূপ যাহ্হাক ও ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিমা থেকে বর্ণিত আছে।”
তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১০ জিঃ ৪৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فر غت فانصب) وقال قتادة والضحاك فاذا فرغت من الصلوة فانصب فى الدعاء.
অর্থঃ- “(যখন অবসর পান কোশেশ করুন) হযরত ক্বতাদা ও যাহ্হাক রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বলেন, যখন নামায থেকে ফারেগ হবেন তখন দোয়া করার জন্য কোশেশ করুন।”
তাফসীরুত্ ত্বাবারী ৩০ জিঃ ১৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قوله (فاذا فر غت فا نصب) اختلاف اهل التاويل فى تأ ويل ذلك فقال بعضهم معناه فاذا فر غت من صلاتك فانصب الى ربك فى الد عاء وسلم حاجاتك ذكر من قال ذلك حد ثنى على قال حد ثنا ابو صالح قال حدثنى معا وية عن على عن ابن عباس رضى الله عنه فى قوله فاذا فرغت فانصب يقول الد عاء، ………… عن ابن عباس رضى الله عنه فاذا فرغت فا نصب يقول فاذا فر غت مما فرض عليك من الصلاة فسل الله وار غب اليه وانصب له.
অর্থঃ- “(فا ذا فرغت فا نصب যখন অবসর পান, কোশেশ করুন) ব্যাখ্যা কারগণ এর ব্যাখ্যা নিয়ে ইখতিলাফ করেছেন। কেউ কেউ এর অর্থ করে বলেছেন যে, যখন আপনি নামায পড়ে ফেলেন তখন আপনার রবের নিকট ইয়াক্বীনের সাথে দোয়া করুন। আর তাঁর কাছে আপনার যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য প্রার্থনা করুন। যিনি উক্ত ব্যাখ্যা করেন তিনি উল্লেখ করেন যে, “আমার কাছে হাদীছ বর্ণনা করেন হযরত আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আবূ ছলিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে আল্লাহ্ পাক-এর কথা فاذا فر غت فا نصب “যখন অবসর পান কোশেশ করুন” এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘দোয়া করুন। ……… হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু فاذا فرغت فانصب এর ব্যাখ্যায় বলেন, যখন আপনি আপনার উপর ফরযকৃত নামায আদায় করে ফেলবেন তখন আল্লাহ্ পাক-এর কাছে দোয়া করুন, তাঁর দিকে মনোনিবেশ করুন এবং তাঁকে পাওয়ার কোশেশে লিপ্ত হন।”
তফসীরুত্ ত্বাবারী ৩০জিঃ ১৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابن ابى نجيح عن مجا هد قوله فاذا فر غت فا نصب قال اذا قمت الى الصلاة فا نصب فى حاجتك الى ربك …….. عن قتادة قوله فاذا فر غت فانصب والى ربك فار غب قال أ مره اذا فرغ من صلا تك ان يبا لغ فى دعائه …. عن قتادة فى قوله فاذا فر غت من صلاتك فا نصب فى الد عاء.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে আবূ নাজীহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করে فاذا فرغت فا نصب এর ব্যাখ্যায় বলেন, যখন নামায আদায় করবেন তখন আপনার যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য আপনার রবের কাছে দোয়া করুন। ………… হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি
فاذا فرغت فا نصب والى ربك فارغب
এর ব্যাখ্যায় বলেন; আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ, যখন আপনি আপনার নামায থেকে ফারেগ হবেন, তখন যেন তার কাছে ইখলাছের সাথে পূর্ণভাবে দোয়ায় লিপ্ত হন। ………. হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন আপনি আপনার নামায পড়ে ফেলবেন, তখন দোয়ায় মশগুল হয়ে যান।” তাফসীরুল হাসানিল্ বছরী ৫ম জিঃ ৩০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا. قر غت فاتصب) وقيل: اذا فر غت من صلاتك فا نصب وبالغ فى الد عاء.
অর্থঃ- “(فاذا فر غت فا نصب) কেউ বলেছেনঃ যখন নামায থেকে ফারেগ হবেন, তখন পূর্ণভাবে ইখলাছের সাথে দোয়া করুন।”
তাফসীরুল খাযিন ৪র্থ জিঃ ৩৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فر غت فانصب) قال ابن عباس رضى الله عنه اذا فرغت من الصلاة المكتوبت فا نصب الى ربك فى الد عاء وار غب اليه فى المسئلة.
অর্থঃ- “(فاذا فرغت فا نصب) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যখন ফরয নামায থেকে ফারেগ হবেন, তখন আপনার রবের কাছে দোয়ার জন্য পরিশ্রম করুন। আর তার কাছে সুওয়ালের ব্যাপারে আত্মনিয়োগ করুন।”
তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৪র্থ জিঃ ৩৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فرغت فانصب) وعن ابن عباس رضى الله عنهما فاذا فر غت من صلاتك فاجتهد فى الد عاء.
অর্থঃ- “(فاذا فرغت فانصب) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যখন নামায থেকে ফারেগ হবেন, তখন দোয়ার জন্য কোশেশ করুন।”
তাফসীরে ফতহুল্ আযীয আম্মা পারা, ৩৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فرغت فانصب والی ریک فار غب) بعضے مفسر ون نے اس کے معنے یہ ھیں کہ جب فرض نماز سے فارغ ھو تودعأکےواسطے ھاتہ اٹھا.
অর্থঃ- “(যখন অবসর পাবেন তখন কোশেশ করুন এবং আপনার রবের দিকে মনোনিবেশ করুন) কিছু মুফাসরিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, যখন ফরয নামায শেষ হবে, তখন দোয়া করার জন্য হাত উঠাবে। অর্থাৎ হাত উঠিয়ে দোয়া করবে।” (চলবে)
মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮০)
এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। আর তাদের এ ফতওয়া গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়নি। বরং আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য التنحنح (গলা খাকড়ানো), الصلاة الصلاة (নামায! নামায!) ও قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা উত্তম।
(ধারাবাহিক)
যেমন, “ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫১৭-৫১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والتمثويب فى الفجر حى على الصلاة و حى على الفلاح بين الاذان والاقامة حسن….. ومشا يخنا اليوم لم يروا بالتثويب بأ سا فى سائر الصلو ات فى جميع الناس لأنه حدث بالناس بكاسل فى الأمورالد ينية ويعتبر فى ذلك ما يتعارفه كل قوم حكى عن محمد بن سلمة أنه كان يتنحنح وكان عادة أهل سمر قند قبل هذا هكذا، واختار مشأ يخ بخارا الصلاة الصلاة، بانگ نماز، بانگ نماز، قامت، قامت.
অর্থঃ- “আযান ও ইক্বামতের মাঝে حى على الصلاة وحى على الفلاح (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে ফজর নামাযে তাছবীব করা উত্তম। ….. আমাদের মাশায়িখ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, অর্থাৎ “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন, সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের অলসতা তথা গাফলতী প্রকাশের কারণেই এই তাছবীবের প্রবর্তন। আর তাছবীব ঐ সকল পরিচিত শব্দ দিয়ে করতে হবে যে শব্দগুলো দ্বারা সকল মানুষ তাছবীবের কথা বুঝতে পারে। তবে হযরত মুহম্মদ ইবনে সালমা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত আছে, তিনি تنحنح (তানাহ্নুহ্) করে অর্থাৎ গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে তাছবীব করতেন। আর تنحنح (তানাহ্নুহ্) বা গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে তাছবীব করাই হচ্ছে সমরকন্দ বাসীর অভ্যাসগত আমল। আর বুখারার মাশায়িখ রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ الصلاة الصلاة (নামায! নামায!) بانگ نماز بانگ نماز (বাঙ্গে নামায,বাঙ্গে নামায) (নামাযের জন্য আসুন, নামাযের জন্য আসুন) ও قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) (নামায আসন্ন, নামায আসন্ন,) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করাকে পছন্দ করেছেন বা গ্রহন করেছেন।”
“শরহুত ত্বায়ী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ويثوب فى جميع الصلاة والتثويب العود الى الاعلام بعد الاعلام
অর্থঃ- “সমস্ত নামাযেই তাছবীব করবে। আর আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়াকেই তাছবীব বলা হয়।”
“বাদায়িউস্ সানায়ে” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان مشا يخنا قالوا لا بأس بالتثويب المحدث فى سائر الصلوات لفرط غلبة الغفلة على الناس فى زماننا وشدة ر كو نهم الى الد نيا وتها ونهم بامور الد ين فصار سائر الصلوات فى زماننا مثل الفجر فى زما نهم فكان زيادة الاعلام من باب التعا ون على البر والتقوى فكان مستحسنا.
অর্থঃ- “আমাদের মাশায়িখে কিরাম (অর্থাৎ উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ) বলেছেন, আমাদের যমানায় মানুষ দ্বীনী কাজে অবহেলা করায় ও দ্বীনী কাজে মানুষের গাফলতীর প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মানুষ দুনিয়ার প্রতি চরমভাবে আসক্ত হওয়ায় সমস্ত নামাযেই প্রচলিত তাছবীব করাতে কোন অসুবিধা নেই। অতঃপর তাদের যমানায় অর্থাৎ উলামায়ে মুতাক্বাদ্দিমীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের যমানায় গাফলতীর কারণে যেমন ফজরের নামাযে তাছবীব করা হতো অনুরূপভাবে আমাদের যমানাতেও অর্থাৎ উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের যমানাতেও ঐ একইভাবে দ্বীনী কাজে বিশেষ করে নামাযে মানুষের গাফলতী চরমভাবে প্রকাশের কারণেই সমস্ত নামাযেই তাছবীবের প্রচলন করা হয়েছে। সুতরাং গাফলতীর কারণেই আমাদের যমানায় সমস্ত নামাযেই তাছবীবের প্রচলন সংঘটিত হলো যেমন গাফলতীর কারণেই তাদের যমানায় অর্থাৎ উলামায়ে মুতাক্বাদ্দিমীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের যমানায় ফজর নামাযে তাছবীবের প্রচলন ছিল। কাজেই বেশী বেশী করে মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া অর্থাৎ বেশী বেশী তাছবীব করা
من باب التعاون على البروا لتقوى
অর্থাৎ নেকী ও পরহেজগারীতে সহযোগিতা করার শামিল।
সুতরাং আযানের পর পুনরায় সমস্ত নামাযেই মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া বা তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।”
“ফতওয়ায়ে কাজীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ولا بأس بالتثويب فى سائر الصلوات الخمس فى زمانناوتثويب كل بلدة ما تعار فه أهل تلك البلدة ويجوز تخصيص كل من كان مشغولا بمصالح المسلمين بزيادة الاعلام
অর্থঃ- “আমাদের যমানায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সকল ওয়াক্তেই আযানের পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করাতে কোন অসুবিধা নেই। সুতরাং এই তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। অর্থাৎ যে ধরণের শব্দ দিয়ে তাছবীব করলে শহর বাসী বুঝতে পারে, সে ধরণের শব্দ দিয়েই তাছবীব করতে হবে। আর প্রত্যেক বিশেষ ব্যক্তি যারা মুসলমানের ইছলাহী কাজে মশগুল আছেন (যেমন আমীর-উমরা, কাজী, মুফতী) তাদেরকেও বেশী বেশী করে জানিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তাছবীব করা জায়িয আছে।
“শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় আরো উল্লেখ আছে,
التثويب عند المتأخرين مستحسن
অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।” (চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান
টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের আক্বীদা-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।
আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করব ইন্শাআল্লাহ্।
(ধারাবাহিক)
আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এবং
এটা যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত তার আরো প্রমাণ
যেমন,“বাদায়িউস্ সানায়ে” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فالوا جب عليهم الاجا بة ….. والا جا بة ان يقول مثل ما قال المؤذن …. ولا ينبغى ان يتكلم السا مع فى حال الاذان والاقا مة ولا يشتغل بقرائة القران ولا بشئ من الا عمال سوى الا جا بة ولو كان فى القراءة ينبغى أن يقطع ويشتغل بالا ستماع والاجابة.
অর্থঃ- “আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। … আর আযান শ্রবণকারী সকলেই আযানের জবাব অনুরূপভাবে বলবে, যেরূপভাবে মুয়াজ্জিন বলে।” …. “সুতরাং আযান ও ইক্বামতের সময় শ্রবণকারীর সকলের জন্যই কথা বলা উচিত হবেনা, কুরআন শরীফ পাঠে মশগুল হবেনা, এমনকি আযান ও ইক্বামতের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজ করা যাবেনা। আর যদি কুরআন শরীফ পাঠ করা অবস্থায় আযান শুনতে পায়, তাহলে উচিত হবে কুরআন শরীফ পাঠ বন্ধ করে দিয়ে আযান শ্রবণে মশগুল হওয়া এবং আযানের জবাব দেয়া। ”
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খন্ডের ২১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والسامع للاذان يجيب فيقول مثل مايقول المؤذن ….. اما الا جابة فظاهر الخلا صة والفتاوى والتحفة وجوبها …. لكن ظا هر الامر فى قوله صلى الله عليه وسلم اذ سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول الوجوب اذ لا تظهر قرينة تصر فه عنه.
অর্থঃ- “আযান শ্রবণকারী সকলেই মৌখিক আযানের জবাব দিবে। অতঃপর শ্রবণকারী সকলেই তদ্রুপ বলবে যেরূপ মুয়াজ্জিন বলে।”……আর মৌখিক আযানের জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এ সম্পর্কে “খুলাছা” “ফাতাওয়া” এবং “তুহ্ফা” ইত্যদি কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ……….. মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা হুযূর পাক ছল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে সুস্পষ্টভাবে আদেশ করেছেন যে, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে; তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে, তদ্রুপ তোমরাও বল।”
হাদীছ শরীফে فقولوا শব্দটি امر(আমর) যা (وجوب) ওয়াজিব অর্থ প্রদান করে। আর (وجوب) ওয়াজিব-এর মধ্যে সুস্পষ্টভাবে করীনা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত ওয়াজিব থেকে বিরত থাকা যাবে না।”
“ফতওয়ায়ে বায্যাযিয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
سمع الأذان فعليه الاجا بة … والا جا بة بالقول لابالقدم.
অর্থঃ- “আযান শ্রোতার উপর আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব … আর আযানের জবাব মৌখিক ভাবেই দিবে, আগমনের মাধ্যমে নয়। সুতরাং আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব।”
“তুহ্ফাতুল ফুক্বাহা” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
يجب عليهم اللإجا بة، على ما روى عن النبى صلى الله عليه وسلم ، أنه قال ” أربع من الجفاء” وذكر من جملتها “ومن سمع الأذان … ولم يجب” والإجا بة أن يقول مثل ما قال المؤذن، إلا فى قوله “حى على الصلاة! حى على الفلاح! فأنه يقول مكان ذلك “لا حول ولاقوة إلا بالله العلى العظيم” … وكذا إذا قال المؤذن” الصلاة خير من النوم” … يقول صدقت وبررت
অর্থঃ- ‘‘আযানের সময় আযান শ্রোতাদের জন্য মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “চার ব্যক্তি নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত। উক্ত চারজন নাফরমানের থেকে একজন নাফরমান হলো যে আযান শ্রোতা আযানের মৌখিক জবাব দেয় না”
আর আযানের মৌখিক জবাব ঐভাবেই বলবে যেভাবে মুয়াজ্জিন আযানের শব্দগুলো বলে।
তবে মুয়াজ্জিন যখন حى على الصلاة وحى على الفلاح (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) বলবে, তখন শ্রোতাগণ এর জবাবে
لا حول ولاقوة إلا بالله العلى العظيم
(লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম) বলবে। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন الصلاة خيرمن النوم বলবে, তখন শ্রোতাগণ এর জবাবে صدقت وبررت (ছদাক্বতা ও বার্রতা) বলবে।”
“খোলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومن سمع الاذان فعليه ان يجيب وان كان جنبا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আযান শুনবে, তার উপর ওয়াজিব হলো, মৌখিক আযানের জবাব দেয়া যদিও সে নাপাকী অবস্থায় থাকে।” (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী।
কারণ তাদের বক্তব্যের প্রথম অংশে তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয।”
তাদের উক্ত বক্তব্যের প্রথম অংশের জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভী সাহেবরা পরিশেষে উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম জায়িয। অথচ এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, ক্বিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।
হাটহাজারী মৌলভী সাহেবরা উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণের হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ গুলো সঠিকই রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই ক্বিয়াম করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতাসূচক ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণও পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না ইন্শাআল্লাহ।
মুলতঃ মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম করা হয় তা মূলত আদব, শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত। হাটহাজারীর মৌলভীরা ক্বিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারনেই ক্বিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে। তাই নিম্নে ক্বিয়ামের প্রকারভেদ সহ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
ক্বিয়ামের প্রকারভেদ ও আহকাম
ক্বিয়াম القيام শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- قيام كر نا. کھڑا ھونا অর্থাৎ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামূস আল মুহীত, তাজুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিদ)
আর ক্বিয়াম শব্দের ইস্তেলাহী বা পরিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি “সালাম” পাঠকালে তা’যীমার্থে বা মুহব্বতে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই ক্বিয়াম করতে হয়। তাই ইসলামী শরীয়ত ক্বিয়ামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে। যেমন (১) ফরয ক্বিয়াম (২) সুন্নত ক্বিয়াম (৩) মুস্তাহাব ক্বিয়াম (৪) হারাম ক্বিয়াম (৫) মাকরূহ ক্বিয়াম।
সুন্নত ক্বিয়াম
শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ‘ক্বিয়াম করা’ বা দাঁড়ানো সুন্নত। যেমন-
(১) পবিত্র “যমযম” কুপের পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত।
(২) অজু করার পর অজুর অবশিষ্ট পানি থেকে কিছু পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত।
(৩) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “রওযা মুবারক” যিয়ারত করতঃ ‘সালাম’ পেশ করার সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নত। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
روى ابى حنيفة رضى الله تعالى عبنه فى مسنده عن ابن عمر رضى الله تعالى عنهما قال من السنة ان تاتى قبر النبى صلى الله عليه وسلم من قبل القبلة وتجعل ظهرك الى القبلة وتستقبل القبر (من قبل القبلة وتجعل ظهر ك الى القبلة وتستقبل القبر) بو جهك ثم تقول السلام عليك ايها النبى ور حمة وبر كا ته.
অর্থঃ- ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে তাঁর “মুসনাদে” বর্ণিত আছে যে, “রওযা শরীফ” যিয়ারত করার সুন্নত তরীক্বা হলো- তুমি ক্বিবলার দিক থেকে রওযা শরীফের দিকে আসবে এবং তোমার পিঠকে ক্বিবলার দিকে ও চেহারাকে “রওযা শরীফের” দিকে করে দাঁড়াবে। অতঃপর বলবে আছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা আয়্যূহান নাবিয়্যূ ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। (ফতহুল ক্বাদীর ৩য় খণ্ড ১৬৮-১৬৯ পৃষ্ঠা)
তাই এখনও মদীনা শরীফে গিয়ে রওযা শরীফ যিয়ারতকালে বসে বসে “সালাম” পেশ করলে তাকে বেত মারা হয়। এর উপর ভিত্তি করেই বড় কাটারা ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ছাহেব ক্বিয়াম সম্পর্কে তাঁর “তাসাউফ তত্ত্ব” কিতাবে লিখেন যে, “মীলাদ শরীফের মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।”
(৪) সাধারণ মুসলমানের কবর যিয়ারতকালেও দাঁড়ানো সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী”-এর ৫ম খণ্ড, ৩৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فاذا بلغ المقبرة يخلع نعليه ثم يقف مستد بر القبلة مستقبلا لو جه الميت ويقول السلام عليكم يا اهل القبور.
অর্থঃ (কবর যিয়ারতকারী) যখন কবরস্থানে পৌঁছবে তখন জুতা-সেন্ডেল খুলে ক্বিবলাকে পিছনে রেখে ও মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে দাঁড়াবে এবং বলবে আস্ সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর।”
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা ছাবিত হলো যে, সর্বাবস্থায়ই দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া সুন্নত। অর্থাৎ সালাম পেশ করার সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নত। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ
বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২৩
মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের “মাল্ফূযাত”সহ আরো কিছু কিতাবে লেখা আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা। (হযরতজীর মলফুজাত-২৯ পৃষ্ঠা-২২, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৫, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন পৃষ্ঠা-৪৯ লেখক- ওবায়দুল হক, তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত ১ম খন্ড পৃষ্ঠা-৫৬, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা-২৯ লেখক- মৌলবী মুঃ ইব্রাহীম)
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত কথা সম্পূর্ণই মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর, যা পূর্ববর্তী আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আরো উল্লেখ্য যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে যে দ্বীনী তা’লিম দেয়া হয়, তা পরিপূর্ণ দ্বীনী তা’লিম হতে নিতান্তই কম এবং সেটাকেই তারা পরিপূর্ণ ও যথেষ্ট মনে করে থাকে। অথচ দ্বীন ইসলাম ও তার শিক্ষা অত্যন্ত ব্যাপক ও পূর্ণাঙ্গ। যেমন পরিপূর্ণ দ্বীনী শিক্ষার বিষয় উল্লেখপূর্বক আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান,
لقد من الله على المؤ منين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم ايته ويز كيهم ويعلمهم الكتب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.
অর্থঃ- “মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর ইহ্সান, তাদের মধ্য থেকে তাদের জন্য একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের নিকট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধ করবেন অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েত প্রাপ্ত ছিলনা।” (সূরা আলে ইমরান/১৬৪)
(তাফসীরে জালালাইন, কামালাইন, বায়যাবী, কুরতুবী, তাবারী, রুহুল মায়ানী, রহুল বয়ান, ইবনে কাছীর, আবী সউদ, মাযহারী, মাআরেফুল কোরআন, দুররে মানছুর )
এ আয়াত শরীফে, আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনানো কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ইল্মে জাহের বা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও হুনরের অন্তর্ভূক্ত। যা দ্বীনের যাবতীয় হুকুম-আহ্কাম পালন করার জন্য ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন। আর (তায্কিয়া) পরিশুদ্ধ ও সংশোধন করার দ্বারা ইল্মে বাতেন বা ইল্মে তাসাউফ উদ্দেশ্য। যার মাধ্যমে মানুষের ক্বাল্ব বা আভ্যন্তরীণ দিক শুদ্ধ হয়। অনুরূপ সূরা বাক্বারার ২৯ ও ১৫১নং আয়াত শরীফে এবং সূরা জুমুয়ার ২নং আয়াত শরীফে উপরোক্ত আয়াত শরীফের সমার্থবোধক আরো তিনখানা আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে। (তাফসীরে মায্হারী, রুহুল বয়ান, কবীর, খাযেন, বাগবী, কুরতুবী, ইবনে কাছীর, দুররে মানছূর, আবী সউদ, রুহুল মায়ানী, তাবারী, মায়ারেফুল কোরআন ইত্যাদি)
মূলতঃ এ ক্বাল্ব বা অন্তর পরিশুদ্ধ করার শিক্ষাই হচ্ছে মূল শিক্ষা। কেননা ক্বাল্ব শুদ্ধ না হলে মানুষের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক, ছীরত-ছূরত ইত্যাদি কিছুই পরিশুদ্ধ হয় না এবং হাক্বীক্বী ইখলাছ অর্জিত হয়না, তাই তাদের নামায-রোযা, হজ্জ-যাকাত, দান-ছদক্বা, তা’লীম-তালক্বীন, জিহাদ ও তাবলীগ ইত্যাদি সকল ইবাদত-বন্দেগীই আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য না হয়ে গাইরুল্লাহ জন্যে হয়। ফলে তাদের কোন ইবাদতই আল্লাহ পাক-এর দরবারে কবুল হয়না এবং পরকালে উক্ত ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা তারা কোন ফায়দাই হাছিল করতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
يوم لا ينفع مال ولا بنون الا من اتى الله بقلب سليم.
অর্থঃ- “ক্বিয়ামতের দিন কেউ তার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা উপকার বা ফায়দা হাছিল করতে পারবেনা। একমাত্র ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে প্রশান্ত বা পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে উপস্থিত হবে।” (সূরা শুয়ারা-৮৮-৮৯)
আর অন্তর বা ক্বাল্ব প্রশান্ত ও পরিশুদ্ধ হয় একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরের মাধ্যমে। আল্লাহ্ পাক বলেন,
الا بذ كر الله تطمئن القلوب.
অর্থঃ- “সাবধান! আল্লাহ্ তায়ালার যিকিরের দ্বারাই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা রা’দ-২৮)
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
ان فى الجسد مضغة فاذا صلحت صلح الجسد كله واذا فسدت فسد الجسد كله الا وهى القلب.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই (মানুষের) শরীরে এক টুকরা গোশ্ত রয়েছে। সেটা যদি পরিশুদ্ধ হয়, তবে গোটা শরীরই পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। আর সেটা যদি বরবাদ হয়ে যায়, তবে গোটা শরীরই বরবাদ হয়ে যায়। সাবধান! সেই গোশ্তের টুকরাটির নাম হচ্ছে ক্বাল্ব বা অন্তর।” (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ ক্বাল্ব শুদ্ধ হলে মানুষের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব, সীরত-ছূরত সবকিছু শুদ্ধ হয়ে যায়। আর ক্বাল্ব অশুদ্ধ বা বরবাদ হলে সবকিছুই বরবাদ হয়ে যায়। মূলতঃ তখন বান্দার কোন কিছুই আল্লাহ্ পাক কবুল করেননা।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, অনন্য, শ্রেষ্ঠ, সম্মানিত ও প্রকৃত কামিয়াব তারাই, যাঁরা ইল্মে ফিক্বাহের সাথে সাথে ইল্মে তাসাউফ চর্চা করার মাধ্যমে নিজেদের ক্বাল্ব বা অন্তর ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধ করেছেন।
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে ক্বাল্ব শুদ্ধকরণ ইল্ম বা ইল্মে তাসাউফ ব্যতীত শুধুমাত্র যৎসামান্য ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করে কিভাবে দাবী করতে পারে যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মাণিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা।” মূলতঃ তাদের উপরোক্ত দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পনা প্রসূত ও কোরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ।
অপরপক্ষে শুদ্ধ ও সঠিক দাবী হলো তাদের, যারা উপরোল্লিখিত দু’প্রকার ইল্ম তথা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফের যথার্থ ও পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন পূর্বক দ্বীনের তা’লীম-তাল্ক্বীন ও তাবলীগের কাজে নিয়োজিত। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن الحسن رحمة الله عليه قال العلم علمان فعلم فى القلب فذاك العلم النا فع وعلم على اللسان فذا لك حجة الله عزو جل على ابن ادم.
অর্থঃ- “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, ইল্ম দু’প্রকার, একটি হচ্ছে- ক্বাল্বী ইল্ম (ইল্মে তাসাউফ) -যা উপকারী ইল্ম। অপরটি হচ্ছে- জবানী ইল্ম (ইল্মে ফিক্বাহ) -যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত আশায়াতুল লুময়াত, লুমায়াত)
এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মালেকী মায্হাবের ইমাম, ইমামুদ্ দাহ্র, ফখরুদ্দ্দীন, শায়খুল মাশায়েখ, রাহ্নুমায়ে শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত, ইমামুল আইম্মা, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ব্যক্তি ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত। আর যে তাসাউফ করে অর্থাৎ মা’রিফাত চর্চা করে অথচ ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করেনা অর্থাৎ শরীয়ত মানেনা বা অস্বীকার করে, সে কাফেরের অন্তর্ভুক্ত। আর যে উভয়টাই শিক্ষা করলো, সেই মুহাক্কিক অর্থাৎ সেই নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ বা হাক্বীক্বী আলেম।
সুতরাং প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সম্পূর্ণ তাসাউফ শুন্য হয়ে শুধুমাত্র যৎসামান্য ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করে কি করে দাবী করতে পারে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই শ্রেষ্ঠ, সম্মাণিত ও অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা? মূলতঃ তাদের এ দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর ও কল্পনা প্রসূত।
প্রকৃতপক্ষে ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফ সমন্বিত শিক্ষাই হচ্ছে- অনন্য, শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ শিক্ষা, যা হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
কাজেই একমাত্র হক্কানী-রাব্বানী পীরানে তরীক্বত, আওলিয়া-ই-কিরামগণ-এর দরবারেই পূর্ণ ইসলাম বা ইসলামী শিক্ষা হাছিল করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে অবিস্মরণীয় আলিম, মহা দার্শনিক ও প্রখ্যাত ইমাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাঁর ইল্মের তীব্রতা এত বেশী ছিল যে, সে তেজোচ্ছাটায় সবাই তটস্থ থাকতো। যাঁর সমঝের ব্যাপকতা ও ক্ষুরধার যুক্তি উপস্থাপনার এত দক্ষতা ছিল, যে কারণে সারা জীবনে সকলেই তাঁর কাছে বাহাসে পরাজিত হয়েছে। অপরদিকে যিনি এত অল্প সময়ে তৎকালীন বিশ্ববিখ্যাত ও সমাদৃত বাগদাদের ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদ অলংকৃত করেছিলেন। তার পূর্বে ও পরে কেউ এত অল্প বয়সে উক্ত পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি এবং এক কথায় এতসব গুণের অধিকারী হওয়ার উছিলায় যাঁর দ্বারা তৎকালে ইসলাম ছেড়ে প্রায় সর্বোতভাবে গ্রীক দর্শণের দিকে ঝুঁকে পড়া মুসলমানদেরকে যিনি সারগর্ভ হিদায়েতের বাণী শুনিয়ে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়ে “হুজ্জাতুল ইসলাম” লক্বব দ্বারা অদ্যাবধি সমগ্র বিশ্বে বিশেষভাবে সম্মাণিত। সে মহান পুরুষের ইল্মে তাসাউফের তাৎপর্য উপলব্ধি ও তার গুরুত্ব অনুধাবনের ঘটনাটি বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য। যা তিনি নিজেই যথার্থভাবে প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রখ্যাত “আল মুনকেযু মিনাদ্দালাল” বা “ভ্রান্তির অপনোদন” কিতাবে।
উক্ত কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, তিনি এক সময় হাজির হন- তাঁর ভাই হযরত আহ্মদ গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এক মাহ্ফিলে এবং সেখানে হযরত আহমদ গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি পরিবেশিত একটি কাছীদা শুনে তাঁর ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। কাছীদাটির ভাবার্থ ছিল নিম্নরূপ –
“আর কতকাল জাহেরী ইল্মের ফখর ধরে রাখবে? অন্তরের কলুষতা হিংসা, রিয়া, ফখর থেকে কবে আর মুক্ত হবে।” তাই তিনি প্রথমে ইল্মে কালাম বা মুতাকাল্লিমদের বিষয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সে বিষয়ে ব্যাপক পর্যালোচনার দ্বারা তার গুঢ়মর্ম উপলব্ধিতে সক্ষম হন এবং তাকে তিনি অপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেন।
অতঃপর তিনি দর্শণের দিকে মনযোগী হন এবং অল্প সময়েই (দু’বছরে) পরিপূর্ণভাবে দর্শণ শাস্ত্র আয়ত্ত করেন। আর এরপরেও এক বছর ধরে তিনি অর্জিত জ্ঞানের বিশেষ উপলব্ধি দ্বারা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে, দর্শণের অনেকটাই প্রবঞ্চনাপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর। তাই দর্শণও তাকে আশ্বস্ত করলোনা।
আর এরপরে তিনি তা’লিমী শিয়া সম্প্রদায়ের বাতেনী মতবাদ নিয়ে গবেষণা করেন। কিন্তু এ সম্প্রদায়ের স্থানে অস্থানে বাতেনী ইমামের বরাত তাঁকে এ সম্প্রদায়ের প্রতি বিরূপ করে তোলে।
অন্তরের অস্থিরতার এ সময়ে ইমাম সাহেবের মানসপটে ভেসে উঠে দু’টি স্মৃতি, যা সংঘটিত হতো বাদশাহর দরবারে। একটি হলো- যখন ইমামুল হারামাইন, যিনি বিশ্ববিখ্যাত আলেম এবং তৎকালীন সকল ওলামাদের শ্রদ্ধেয় ইমাম, যিনি হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওস্তাদ, তিনি যখন বাদশাহর দরবারে যেতেন তখনকার স্ম্রতি। অপরটি হলো- বাদশাহর দরবারে অপর একজন সূফী ও শায়খ, হযরত আবূ আলী ফরমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ছিলেন তৎকালে আল্লাহ্ পাক-এর লক্ষ্যস্থল, তিনি যখন হাজির হতেন তখনকার স্মৃতি। প্রথম ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাঁর ওস্তাদের সাথে বাদশাহর দরবারে তাশ্রীফ রাখতেন, তখন বাদশাহ্ ইমামুল হারামাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তা’যীম করে স্বীয় সিংহাসনের পাশে অন্য আসনে বসাতেন। অন্যদিকে যখন শায়খ হযরত আবূ আলী ফরমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ছিলেন বিশিষ্ট সূফী, বুজুর্গ তিনি যখন বাদশাহ্র দরবারে তাশ্রীফ রাখতেন, তখন বাদশাহ্ তাঁকে অধিকতর তা’যীম-তাক্রীম করে নিজ সিংহাসনে বসাতেন এবং বাদশাহ্ স্বয়ং নীচে বসতেন।
এ ঘটনার স্মৃতি ইমাম সাহেবের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে এবং তাঁকে সূফী সম্প্রদায়ের প্রতি অনুপ্রাণিত করে তোলে। সূফী তত্ত্ব বা ইল্মে তাসাউফের দিকে মনযোগ দিয়েই তিনি বুঝতে পারেন যে, পূর্ণাঙ্গ সূফী তরীক্বার মধ্যেই রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তির (ইল্মী আক্বীদা) এবং ব্যবহারিক কার্যক্রম (আমল ও রিয়াযত)-এর সমন্বয়। তিনি বলেন, “আমলের চেয়ে বুুদ্ধিবৃত্তির আক্বীদা ও বিশ্বাস আমার কাছে অনেক সহজ মনে হয়েছে।” তবে তিনি উল্লেখ করেন, “সূফীবাদের যে দিকটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা কেবল পড়াশোনা বা অন্যকিছু দ্বারা সম্ভব নয় বরং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা (জওক বা স্বাদ) তন্ময় সাধনা এবং নৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই তা অর্জন করা সম্ভব।” তিনি উদাহরণ পেশ করেন, “স্বাস্থ্য ও স্বস্তির সংজ্ঞা জানা এবং এগুলোর কারণ ও শর্তাবলী নির্ধারণ করা, আর স্বাস্থ্য ও স্বস্তিলাভের মধ্যে বড় প্রভেদ।”
তিনি উল্লেখ করেন, “আমি পরিস্কারভাবে বুঝতে পারলাম, সূফীগণ কথায় মানুষ নন, তাঁদের প্রকৃত অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং পড়াশোনার মাধ্যমে যতটা অগ্রসর হওয়া সম্ভব তা আমি করেছি। এখন আমার বাকী রয়েছে, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা আস্বাদন এবং তাসাউফ সাধনার পথ প্রত্যক্ষভাবে অতিক্রমের দ্বারাই তা লাভ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, এরপরে তাসাউফ শিক্ষার পেছনে বা সূফী হওয়ার বাসনায় তিনি দীর্ঘ দশ বছর কাটিয়ে দেন। এবং ইল্মে তাসাউফ বা সূফীদের সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেন, সে সম্পর্কে বলেন, “আমি নিশ্চতভাবে বুঝতে পেরেছি যে, কেবল সূফীরাই আল্লাহ্র পথের যথার্থ পথিক। তাঁদের জীবনই হলো সর্বোত্তম জীবন, তাঁদের তরীক্বাই নিখুঁত তরীক্বা, তাঁদের চরিত্রই সুন্দরতম চরিত্র।
বুদ্ধিজীবিদের সকল বুদ্ধি, জ্ঞানীদের সকল জ্ঞান এবং পন্ডিতদের সকল পান্ডিত্য, যাঁরা খোদায়ী সত্যের প্রগাঢ়তা সম্পর্কে দক্ষ, তাদের সকলের জ্ঞান-বুদ্ধি একত্র করলেও তা দিয়ে সূফীদের জীবন এবং চরিত্র উন্নততর করা যাবেনা বা সম্ভব নয়।
সূফীদের অন্তরের বা বাইরের সকল গতি এবং স্থৈর্য নুবুওওয়তের (প্রত্যাদেশ) নূরের জ্যোতি দ্বারা উদ্ভাসিত, নুবুওওয়তের জ্যোতি ছাড়া ধরার বুকে অন্য কোন আলো নেই, যা থেকে জ্যোতির ধারা পাওয়া যেতে পারে।”
তিনি লিখেন, “সূফী তরীক্বার প্রথম স্তর থেকেই শুরু হয় এল্হাম ও দীদার (দর্শন)। সূফীগণ এ সময়ে জাগ্রত অবস্থায় ফেরেস্তা এবং নবী (আঃ)গণের রূহের দর্শন লাভ করেন। শুনতে পান তাঁদের বাণী এবং নির্দেশ। অতঃপর তাঁরা আরো উচ্চ স্তরে উপনীত হন। আকার ও প্রতীকের উর্দ্ধে এমন এক স্তরে তাঁরা পৌঁছে যান, ভাষায় যার বর্ণনা দান সম্ভব নয়।”
তিনি লিখেন, “যারা সূফীদের মাহ্ফিলে বসে, তারা তাঁদের নিকট থেকে বিশেষ ধরণের রূহানিয়াত হাছিল করে।”
তিনি সূফীদের এই বিশেষ মর্তবা সম্পর্কে কোরআন শরীফের আয়াত শরীফ পেশ করেন,
ير فع الله الذ ين امنوا منكم والذ ين اوتوا العلم در جت.
অর্থঃ- “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইল্ম (ইল্মে তাসাউফ) দেয়া হয়েছে, আল্লাহ্ পাক তাদের সম্মান ও মর্যাদাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিবেন।” (সূরা মুজাদালাহ্-১১)
আর যারা সূফীদের বিরোধিতা করে অথবা তা থেকে গাফেল থাকে, তাদেরকে তিনি নেহায়েত অজ্ঞ বলে মন্তব্য করেন এবং তাদের প্রতি কুরআন শরীফের নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ প্রযোজ্য বলে মন্তব্য করেন,
ومنهم من يستمع اليك حتى اذا خرجوا من عند ك قالوا للذ ين اوتوا العلم ماذا قال انفا اولئك الذين طبع الله على قلو بهم واتبعوا اهوا ءهم.
অর্থঃ “তাদের মধ্যে কেউ কেউ আপনার কথা শুনতে আসে, অতঃপর আপনার নিকট থেকে বের হবার পর যারা জ্ঞান লাভে সমর্থ হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করে এই ব্যক্তি এখন কি বললো? ওরা ঐসব লোক, যাদের হৃদয়ে আল্লাহ্ তায়ালা সীলমোহর মেরে দিয়েছেন। এরা তাদের প্রবৃত্তির দাসত্ব করে যাচ্ছে। অর্থাৎ তারা মুক, বধির এবং অন্ধ হয়ে গেছে।” (সূরা মুহম্মদ-১৬)
হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই মন্তব্য করেন যে, “দ্বীনের সকল পথের পথিকদের মধ্যে একমাত্র সূফী ছাহেবরাই পরিপূর্ণ।”
তিনি উদাহরণ দেন, “জাহেরী ইল্ম হলো- খোসা মাত্র। আর সূফীতত্ত্ব অথবা ইল্মে তাসাউফ হলো তার অভ্যন্তরীস্থিত শাস বা মূল বস্তুর ন্যায়।” তাই তিনি আরো মন্তব্য করেন যে, “যদি কিছু থেকে থাকে, তবে সূফী সাহেবগণের কাছেই তা রয়েছে।”
উল্লেখ্য, তাই তিনি সূফী সাহেবগণের ছোহ্বত এখতিয়ার করা বা তাঁদের কাছে বাইয়াত হওয়া ফরজের অন্তর্ভূক্ত বলে তাঁর রচিত কিমিয়ায়ে সায়াদাত কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং নিজেও হযরত আবূ আলী ফরমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত হয়ে তাক্মীলে পৌঁছেন।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ইল্মে তাসাউফের পথই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত পথ এবং এর মধ্যেই পূর্ণতা রয়েছে।
আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের মাধ্যমে কস্মিনকালেও ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা হাছিল করে তাক্মিলে পৌঁছা সম্ভব নয়। ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া প্রসঙ্গে কোরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,
يا يها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও।” (সূরা বাক্বারা-২০৮)
অর্থাৎ প্রত্যেক বান্দাকে ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে হবে তথা ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে।
তাহলে যারা প্রচলিত তাবলীগ করবে, তাদের পক্ষে কি করে সম্ভব ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া বা পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে অনুসরণ করা?
আর এ প্রচলিত তাবলীগই কিভাবে সবচেয়ে উত্তম, শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত আন্দোলন এবং একমাত্র পথ হতে পারে?
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া, বানোয়াট ও কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খেলাফ। আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কখনো সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আন্দোলন বা উত্তম তরীক্বা হতে পারেনা। যেহেতু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের মাধ্যমে ইসলামের পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়। (যা আমরা সামনে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইন্শাআল্লাহ্)
মুহম্মদ আহমাদুর রহমান,
পটিয়া, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ মাসউদুল হক (ফাহিম)
সোনাইমুরি, নোয়াখালী।
সুওয়াল: পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে নিন্মোক্ত সমস্যা ও তার সমাধান ছাপা হয়।
সমস্যা: (১) গেল ৩ জুলাই ২০০৫ ঈসায়ী দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম কওমী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছে, এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ এবং কি তার হুকুম? ‘চোখ দু’টি যিনা করে’ এর অর্থ কি?
সমাধান: (১) স্মরণ রাখা উচিত যে, মহিলাদের চেহারা মূলত সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। যার ইঙ্গিত পবিত্র কুরআন শরীফের মধ্যে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে। সেই জন্য নামাযের মধ্যে হজ্বের মধ্যে এবং হাকীমের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সময় চেহারা খোলা রাখা জায়েয ও বৈধ। কিন্তু যেহেতু মহিলাদের চেহারা ফিৎনা-ফাসাদের মূল, সেই জন্য ওলামায়ে কেরাম বিশেষ জরুরত ব্যতিত বেগানা পুরুষদের সামনে চেহারা খোলা রাখা বা তা দেখা নাজায়েয বলেছেন। সুতরাং সমস্যায় উল্লেখিত ঘটনায় যেই সমস্ত শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছে তা যেহেতু দ্বীনি ও জাতীয় জরুরতের জন্যই করেছে এবং তার মধ্যে যেহেতু কোন ফিৎনার আশংকা ছিলনা সেহেতু ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে তাতে কোন অসুবিধা হয়নি।। আর হাদীছ শরীফের মধ্যে যে ‘চোখ দু’টি যিনা করে’ বলা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি কামভাবের সাথে দৃষ্টি করা হয় বা ফিৎনার আশংকা থাকে।
তাদের উল্লিখিত সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো-
১. মহান আল্লাহ পাক কি সত্যিই বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন?
২. কোন সূরার কত নং আয়াত শরীফে বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়িয হওয়ার অনুমতি রয়েছে?
৩. নামায, হজ্জ সাক্ষ্যদান ইত্যাদি সময়ে চেহারা খোলা রাখা বৈধ এটা কতটুকু সঠিক? এর কি কোন ব্যাখ্যা রয়েছে?
৪. “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” তাদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
৫. খারেজী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি আছে কি?
৬. যদি ফিৎনার কোন আশংকা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে?
৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতের সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: পটিয়া জমিরিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের উল্লিখিত বক্তব্যে বিচলিত বা আশ্চার্যান্বিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ শেষ যামানায় এরূপ একটি সম্প্রদায় বের হবে যারা নিজ স্বার্থ রক্ষা ও হাছিলের লক্ষ্যে কুরআন-সুন্নাহর অপ বা মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে হারামকে হালাল, হালালকে হারাম করবে তা তো ১৪০০ বৎসর পূর্বে হাদীছ শরীফেই সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذا بون يأ تو نكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فا يا كم واياهم لايضلو نكم ولا يفتنو نكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত)
স্মর্তব্য, যুগে যুগে আবির্ভূত উলামায়ে ‘ছূ’রাই হলো উক্ত হাদীছ শরীফে বর্ণিত “দাজ্জালের চেলা।” তাই স্বয়ং আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই উলামায়ে ‘ছূ’দের প্রতি লা’নত তথা অভিসম্পাত করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذ ون هذا العلم تجارة يبيعو نها من امراء زما نهم ربحا لانفسهم لااربح الله تجار تهم.
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের উলামায়ে ছূ’দের প্রতি লা’নত অর্থাৎ উলামায়ে ছূ’দের জন্য জাহান্নাম। কারণ তারা ইল্মকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালাবে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সকল উলামায়ে ছূ’দের বিরুদ্ধে এই বলে বদ্দোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইল্ম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল)
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবীরা মুলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জারের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’এর অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা নিজেদের কথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
১. মহান আল্লাহ পাক কি সত্যিই বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন?
এর জবাবে বলতে হয় যে, কস্মিনকালেও নয়। এটা মহান আল্লাহ পাক-এর প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কারণ কুরআন শরীফের কোথাও বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়িয হওয়ার ইঙ্গিত নেই। যদি তারা তাদের ফতওয়ায় সত্যবাদী হয়ে থাকে তাহলে তারা যেন কুরআন শরীফ থেকে দলীল পেশ করে। কারণ আল্লাহ পাক বলেন,
هاتوا برها نكم ان كنتم صدقين.
অর্থঃ “তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে তোমাদের দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা-১১১)
কাজেই কেউ যদি বলে মহান আল্লাহ পাক বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন তবে তা হবে মহান আল্লাহ পাক-এর প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফের অসংখ্য স্থানে আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যে বলতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন, যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
فمن اظلم ممن افترى على الله كذ با ليضل الناس بغير علم ان الله لا يهدى القوم الظلمين.
অর্থঃ- “অতএব, সে ব্যক্তি অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হবে, যে ব্যক্তি বিনা প্রমাণে আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, মানুষদেরকে বিভ্রান্ত বা পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা আনয়াম-১৪৪)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তারা যালিম, তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। সেজন্য তারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে মানুষদেরকে বিনা দলীলে গোমরাহ করতে চায়।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
ومن اظلم ممن افترى على الله الكذب وهو يدعى الى الاسلام والله لايهدى القوم الظلمين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলামের প্রতি আহুত হয়েও আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? আর আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা ছফ-৭)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলা হচ্ছে সবচাইতে বড় যুলূম। কাজেই, যে বা যারা মুসলমান হওয়ার পরও আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে সে বা তারা চরম ও বড় যালিম এবং যালিম হওয়ার কারণে তারা হিদায়েত থেকে মাহরূম হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা চরম গোমরাহ। তাই এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ করেন,
ولاتقولوا لما تصف السنتكم الكذب هذا حلل وهذا حرام لتفتروا على الله الكذب ان الذين يفترون على الله الكذب لايفلحون.
অর্থঃ- “তোমাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে, তেমনি করে তোমরা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে বলোনা যে, (আল্লাহ পাক) এটা হালাল এবং ওটা হারাম (করেছেন), নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের জন্য কামিয়াবী নেই।” (সূরা নহল-১১৬) অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তাদের জন্য কামিয়াবী তো নেই। শুধু তাই নয়, বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রয়েছে।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
لو تقول علينا بعض الاقاويل. لاخذ نا منه باليمين. ثم لقطعنا منه الو تين. فما منكم من احد عنه حجزين.
অর্থঃ- তোমরা যদি অর্থাৎ কেউ যদি আমার আল্লাহ পাক-এর নামে বানিয়ে কোন কথা বলে, তবে আমি তাঁর দক্ষিণ হস্ত ধরে তার গ্রীবা বা প্রাণ রগ কেটে দিব, তোমাদের কেউই এতে বাধা দিতে পারবে না।” (সূরা হাক্কা- ৪৪, ৪৫, ৪৬)
উপরোক্ত আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, কাফির, মুশরিকরা বলতো, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলেন। (নাউযুবিল্লাহ) এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলেন না। শুধু এতটুকুই নয় আরো জানিয়ে দিলেন, যারা আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলবে তাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।
কারণ আল্লাহ পাক সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যে সমস্ত মুসলমান কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।
অতএব, “যারা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর কালাম কুরআন শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক যা বলেননি তা বলেছেন বলে এবং কুরআন শরীফে যা উল্লেখ নেই তা আছে বলে”- তারা চরম যালিম, মুরতাদ ও কাফির।
কাজেই, “মহান আল্লাহ পাক বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন” পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার তথাকথিত মৌলভীদের এ বক্তব্য আল্লাহ পাক ও কুরআন শরীফের নামে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ ও কাট্টা কুফরী। কারণ, কুরআন শরীফের কোথাও আল্লাহ পাক অনুরূপ কথা বলেননি। (চলবে)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।
(১) হানাফী মাযহাবে নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে ইনশাআল্লাহ।
এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।
(দ্বিতীয় অংশ)
পূর্বোল্লিখিত বুখারী শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অভিমত হলো, মানুষের আমলসমূহ দু’প্রকার। যথাঃ
اعمال مقصودة ও اعمال غير مقصودة
সুতরাং اعمال مقصودة তথা নামায, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি আমলের ক্ষেত্রে নিয়ত শর্ত। আর اعمال غير مقصودة ওযূ, গোসল, পানাহার করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিয়ত শর্ত নয়। তবে আমলের পূর্ণতার জন্য নিয়ত করা উত্তম।
অতএব, নামায পড়ার পূর্বে অবশ্যই নামাযের নিয়ত করতে হবে। অন্যথায় নামায শুদ্ধ হবেনা। নামায যদি নফলের নিয়ত করে তবে নফল হবে, ফরযের নিয়ত করলে ফরয হবে। সুতরাং যে নামায আদায় করা হবে সে নামাযেরই নিয়ত করে তাকবীরে উলা দিতে হবে।
উল্লেখ্য, নিয়ত অন্তরের কাজ। যেমন নিয়তের আভিধানিক অর্থ হলো,
القصد والارادة.
“সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা।”
আর পারিভাষিক অর্থ সম্পর্কে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
النية هو القلب الى الفعل.
“নিয়ত হলো মানুষের অন্তরের এমন ইচ্ছা যার মাধ্যমে কোন কাজ সম্পাদন করা হয়ে থাকে।”
ফতহুর রব্বানী গ্রন্থকার বলেন,
النية توجه القلب جهة الفعل ابتغاء وجه الله تعالى وامتثالا لامره.
“আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভ ও তাঁর আদেশ পালনার্থে কোন কাজের দিকে মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ও ইচ্ছাকে প্রয়োগ করাকে নিয়ত বলে।”
তবে মনের ভাব আরবী বা নিজের ভাষায় করা আফযল বা উত্তম। নিজের ভাষাষ না বললেও কোন ক্ষতি নেই।
উল্লেখ্য, দ্বীন ইসলামের বহু বিষয় এমন আছে, যা মনের বা অন্তরের সাথে সম্পর্ক, অথচ তা মুখে বলতে হয়। যেমন, ঈমান অন্তরের বিশ্বাসকে বলে কিন্তু মুখে তা স্বীকার করাকে জরুরী বলা হয়েছে। এমনিভাবে আরো অনেক বিষয় আছে যা অন্তরের কাজ। অথচ তা মুখে বলার ব্যাপারে তাকীদ দেয়া করা হয়েছে। (চলবে)