সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক-এর জন্য। যিনি পরম করুণাময়। বেশুমার ছলাত ও সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। যার উপর নাযিল হয়েছে বরকতময় কুরআন শরীফ। আল্লাহ পাক বলেন, “এ এমন একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি। যেন তারা আয়াত সমূহকে গভীরভাবে ফিকির করে। এবং সমঝদারগণ যেন তা অনুধাবন করে।” (সূরা ছোয়াদ- ২৯) সমঝদারের বিপরীত কাফিরদের অন্তরে কুরআন শরীফ পাঠে কি প্রতিক্রিয়া হয় সে সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “আর কাফিররা বলে, তোমরা এই কুরআন শ্রবণ করোনা এবং এর তিলাওয়াতে ফাসাদ, হট্টগোল সৃষ্টি কর যাতে তোমরা জয়ী হও। (সূরা হামীম সিজদা- ২৬) কিন্তু এসব কাজের পরিনাম সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয় তাদেরকে আযাবে গ্রেফতার করা হবে।” (সূরা সাবা-৩৮)
প্রসঙ্গতঃ কিউবার গুয়ানতানামো ঘাঁটিতে মার্কিন সেনারা টয়লেটে কুরআন শরীফ রেখে যে কুপ্রয়াস চালিয়েছে তাতে উল্লাসিত হওয়ার কিছু নেই। যদিও ইতিমধ্যে খবর পরিবশেনকারী নিউজউইক খবরটি সত্য নয় বলে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছে। অপরদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছে, এ ধরনের ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। (রয়টার্স, ইন্টারনেট) উল্লেখ্য, খোদ মুসলমানদের জন্যই কুরআন শরীফ ওজুসহ তথা পবিত্র হওয়া ব্যতীত স্পর্শ করা নিষেধ। সেক্ষেত্রে কাফিররা যখন কুরআন শরীফ টয়লেটে রেখে অবমাননা করতে চায় তখন তা মুসলমানের হৃদয়ে কিরূপ অন্তঃপীরণ ও গভীর ক্ষোভ সঞ্চার করতে পারে তা ভাষায় অব্যক্ত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মার্কিনীদের দ্বারা কুরআন শরীফ অবমাননার এই খবরে গোটা মুসলিম বিশ্বে যে তোলপাড় হওয়ার কথা ছিল আসলে সেরকম কিছুই হয়নি। ঈমানী জজবার পরিবর্তে বরং এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব প্রতিবাদ ইন্দোনেশিয়া, ফিলিস্তিন প্রভৃতি দেশে রাস্তায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সউদি আরব উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ও বিচার দাবী করেছে। পাকিস্তানে পার্লামেন্ট নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এদিকে ও আইসিও লোক দেখানো একটা নিন্দা প্রস্তাব জানিয়েছে বটে। তবে তাতে করে যে মার্কিনীরা চরম ভরকে গেছে অথবা শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে নছীহত হাছিল করেছে তা নয়। বরং গভীরভাবে ফিকির করলে মালুম হয় যে এটি মার্কিনীদের একটা টেষ্ট কেস মাত্র। উল্লেখ্য, ইসলাম বিদ্বেষী ইহুদী-খৃষ্টান তথা মার্কিনীরা ততক্ষন পর্যন্ত ইসলাম বিরোধী বা অবমাননাকর কাজ প্রকাশ্যে করেনা যতক্ষন পর্যন্ত না তাদের পাতা ফাঁদে পড়ে মুসলামনগণ নিজেরাই সেরূপ ইসলামী বৈরীতার কাছাকাছি না পৌছে। এক্ষেত্রে এরূপ রৈরী পরিবেশ তৈরীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ধর্মব্যবসায়ী নামধারী উলামাগন। উদাহরনত বলা যায় যে, মসজিদে মহিলাদের জন্য যাওয়া মাকরূহ তাহরীমি হওয়া সত্ত্বেও মার্কিনীদের চর ধর্মব্যবসায়ীরা মসজিদে মহিলা জামায়াতের জন্য আদা পানি খেয়ে লেগেছিল। আর এই মানসিকতা যখন বিস্তার লাভ করেছে কুরআন-সুন্নাহর বর্ণিত শ্বাশ্বত পর্দার চিন্তা মুসলমান হারিয়ে ফেলেছে, তখনই মসজিদে মহিলা মুক্তাদী থেকে মাত্র এক ধাপ বাড়িয়ে মার্কিনীরা মহিলা ইমামতির প্রচলন করেছে। সত্য স্বীকারে বলতে হয় যে, শুধু মার্কিনীরা কেন? আজ কুরআন শরীফের অবমাননা প্রকাশ্যে করছে নামধারী, ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারাও। গত ৮ইমে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মিলিত হয়েছিলেন ২১টি দেশের ৪০জনেরও বেশী তথাকথিত আলিম। তারা জন্মনিয়ন্ত্রের পক্ষে এক যৌথ ঘোষণা দেন। অথচ ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ হারাম। ওদিকে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের আলিম নামধারী ও অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ‘ল’ বোর্ডের সহ সভাপতি মৌলানা কালিবে সাদিক মসজিদে মহিলাদের নামায পড়তে বিশেষ আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য মুসলিম দেশে এমন অনেক তথাকথিত বিজ্ঞ আলিম হয়ে যারা শুধু ছবি, বেপর্দা, আর খেলাকেই নয় এমনকি সুদকেও তারা জায়িয করছেন। ইনকাম ট্যাক্সকেই তারা যাকাত বলে ফতওয়া দিচ্ছেন। তার পরেও তারা গ্র্যান্ড মুফতি, শাইখুল ইসলাম, শাইখুত তাফসীর, শাইখুল হাদীছ ইত্যাদি পরিচয় ধারণ করে আছেন। মূলতঃ এরূপ পরিচয়ধারীরা আমাদের বাংলাদেশেও বহু রয়েছে। যারা ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, হরতাল করা, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, গণতন্ত্র নির্বাচন জায়িয করে কুরআন শরীফ অবমাননা করছেন। উল্লেখ্য সময়ের প্রেক্ষিতে কুরআন-সুন্নাহ্র সমন্বিত ইলম বিতরনই ইসলামী পত্র-পত্রিকার কাজ। কিন্তু সে কাজটি সঠিকভাবে না হয়ে যখন তা ভুল পথে পরিচালিত হয় তখন তা মূলতঃ কুরআন শরীফ অবমাননার পর্যায়েই পড়ে। বিগত চৌদ্দ বছরের খতিয়ানে দেখা যায় মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় কেবল মাত্র মাসিক মদীনার ক্ষেত্রে ১৬৩টি, হাটহাজারী পত্রিকার ৯৭টি, রাহমানী পয়গামের ৭০টি এবং অন্যান্য পত্রিকার ভুলসহ মোট প্রায় পাঁচশত ভুলের ছহীহ জাওয়াব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ উক্ত পত্রিকাগুলো অব্যাহতভাবে ভুল জাওয়াব দিয়ে মূলতঃ কুরআন শরীফেরই অবমাননা করছে। আর মাসিক আল বাইয়্যিনাত সে ভুলগুলোর বহু দলীল দ্বারা খ-ন করে তার তাজদীদী ভূমিকা যথাযোগ্যভাবে পালন করে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। অপরদিকে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৪১তম সংখ্যার অবকাশে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ফতওয়া দেয়া হয়েছে ২৪টি এবং তাতে দলীল দেয়া হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। সুওয়াল দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে সতেরশ’র মত। আর তাতে দলীল দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে বিশ হাজার। উল্লেখ্য, এটিই হক্ব ও সত্য হওয়ার প্রমাণ। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তবে দলীল সমূহ পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১) এ ধারাবাহিকতায় মহান আল্লাহ পাক-এর রহমতে যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যমের তাজদীদী মূখপত্র মাসিক আল বাইয্যিনাত আরেকটি নতুন বছর তথা পনের তম বছরের মুবারক সূচনা হওয়ায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে আমরা জানাই অগণিত শোকরিয়া।