ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৬

সংখ্যা: ২১৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

বাহাছ বা তর্কযুদ্ধে ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

তিনি একবার উনার পুত্র হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাহাছ বা বাকযুদ্ধে রত দেখে তা থেকে বারণ করেছিলেন। তখন উনার পুত্র বলেছিলেন, “আপনি বাহাছ করে থাকেন, অথচ আমাকে বারণ করছেন এর হিকমত কি?” তিনি বললেন, আমি বাহাছকালে গভীরভাবে এ বিষয়টির উপর দৃষ্টি রাখি যে, বিরোধী পক্ষ যেন এসব থেকে বিরত থাকে। আর তোমাদের এ বিষয়ে উদ্দেশ্যে থাকে তোমাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা ও লজ্জিত করা। যারা নিজের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল কিংবা লজ্জিত করার ইচ্ছা রাখে, মূলত তারা যেন তাদের প্রতিপক্ষকে কাফির হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপক্ষকে কাফির বানাতে চায়, সে প্রতিপক্ষকে কাফির সাব্যস্ত করার পূর্বেই নিজে কাফির হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!

ব্যবসায়িক বৈশিষ্ট্য

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দ্বীনের ধারক ও বাহক। কাজেই, তিনি যে শুধু একজন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আলিমে দ্বীনই ছিলেন তা নয়, বরং সর্বক্ষেত্রে তিনি ছিলেন  সকলের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও একজন ব্যবসায়ীর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ইমাম।

তিনি একজন সহৃদয়বান ধনী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। লোভ-লালসা কখনও উনার উপর প্রবল হতে পারেনি। তিনি ধনাঢ্য ঘরের সন্তান ছিলেন। দারিদ্র্যতার কষাঘাত থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।

তিনি শুধু পরম বিশ্বস্ত ও আমানতদারই ছিলেন না। বরং তিনি সর্বকালের সর্বযুগের সকল আমানতদারের আদর্শ। কখনও তিনি আমানতদারীর মর্যাদা থেকে একটুকুও সরে যাননি।

তিনি ছিলেন উচ্চমানের দানশীল ও দাতা। কৃপণতার মতো জঘন্য ব্যাধি থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণরূপে পূতপবিত্র।

তিনি ছিলেন উঁচুমানের দ্বীনদার, আবিদ, রাত্রি জাগরণকারী। দিনের বেলায় রোযাদার ও রাতে ছলাতে দন্ডায়মান ব্যক্তিত্ব এবং কামিল ওলীআল্লাহ। তিনি মহান আল্লাহ তিনি উনাকে মেছালী সূরতে ১০০ বার দেখেছেন।

উল্লেখ্য যে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা-বিশ্বাস হচ্ছে দুনিয়াতে আল্লাহ পাক উনাকে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারক-এ কখনও দেখা যাবেনা। কাজেই যারা হাক্বীক্বী ছূরত (প্রকৃত অবস্থা) মুবারক-এ দেখার দাবি করে তারা ঈমানদার থাকতে পারবে না। পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের প্রতি উনার ছিল গভীর অনুরাগ। প্রতি রমাদ্বান শরীফএ ৬১ বার পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতেন।

তিনি একজন অসাধারণ ব্যবসায়ী ছিলেন। অধিকাংশ লোক উনাকে খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছিদ্দীক্বে  আকবর, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার মতো ব্যবসায়ী মনে করতেন। উনাকে দেখলে মনে হতো তিনি যেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম অর্থাৎ উনার হুবহু নকশা। উনার অনুসৃত ব্যবসায়িক রীতি-নীতিই তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ব্যবসায়িক মালামাল কেনার ক্ষেত্রেও আমানতদারীর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন।

একবার জনৈক মহিলা একখানা রেশমী কাপড় বিক্রি করতে এলো। তিনি মূল্য জিজ্ঞেস করলেন। মহিলা বললো, একশত মুদ্রা। তিনি বললেন, কাপড়টির মূল্য আরও অধিক। মহিলাটি কাপড়ের মূল্য বাড়াতে বাড়াতে চারশ-তে পৌঁছলে তিনি বললেন, এখনও মূল্য কম। তখন মহিলা বললো, আপনি আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন। তিনি বললেন, দরদাম করার জন্য কাউকে ডেকে আনুন। মহিলা একজন লোক ডেকে আনলো। তারপর তিনি উক্ত কাপড়খানা পাঁচশত স্থানীয় মুদ্রায় খরিদ করলেন। (আল খাইরাতুল হিসান- পৃষ্ঠা ৪৪)

লক্ষণীয়, তিনি ক্রেতা হওয়া সত্ত্বেও বিক্রেতার লাভের দিকে কিভাবে দৃষ্টি রেখেছেন। মহিলার অজ্ঞতা থেকে তিনি অবৈধ কোন ফায়দা না উঠিয়ে বরং তাকে সঠিক পথ-নির্দেশনা দিয়েছেন; যা ইতিহাসে বিরল।

তিনি এমন দরদি বিক্রেতা ছিলেন যে, যখন ক্রেতা দুর্বল হতো, তখন তিনি তার সাথে বন্ধুসুলভ ব্যবহার করতেন এবং পণ্যের সঠিক মূল্য পেলেই নিজের লভ্যাংশ ছেড়ে দিতেন। একবার এক মহিলা এসে বলতে লাগলেন, আমি অতি সাধারণ ও দুর্বল ব্যক্তি। আমার নিকট এ পরিমাণ মুদ্রা আছে, আপনি আমাকে এ কাপড়খানা প্রকৃত দামে দিয়ে দিন এবং লাভ মোটেই নিবেন না। তিনি বললেন, চার দিরহামে নিয়ে নিন। মহিলা বললো, বৃদ্ধা মহিলাকে নিয়ে ঠাট্টা করবেন না। তিনি বললেন, ঠাট্টা নয়। বাস্তবতা হলো এই যে, আমি এ ধরনের দু’খানা কাপড় কিনেছিলাম। একখানা বিক্রি করে প্রকৃত খরিদ মূল্য পেয়ে গেছি, বর্তমানে মাত্র চার দিরহাম বাকী আছে। এখন এ কাপড়ের ক্রয় মূল্য হবে মাত্র চার দিরহাম।

একদিন ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন বন্ধু এলো এবং একটা বিশেষ ধরনের রেশমী কাপড় তালাশ করলো। সে ব্যক্তি সে কাপড়ের রঙ ও গুণাগুণও বললো। তিনি বললেন, অপেক্ষা কর, আমি সংগ্রহ করে দিচ্ছি। একটু পরেই তিনি সে কাপড়খানা পেয়ে গেলেন। তার সে বন্ধু একটু পরে এলে তিনি বললেন, তোমার চাহিদা পূর্ণ হয়েছে। তিনি কাপড়খানা বের করে তাকে দিলেন। বন্ধু বললো, মূল্য কত দিতে হবে? তিনি বললেন, এক দিরহাম। লোকটি বললো, আমার বুঝতে কষ্ট হচ্ছে যে, আপনি আমার সাথে তামাশা করছেন কিনা? তিনি বললেন, তামাশা নয়। বাস্তবতা হলো এই যে, আমি দু’খানা কাপড় বিশ দিনার ও এক দিরহামে কিনেছিলাম। একখানা বিক্রি করে বিশ দিনার পেয়ে গেছি। আর অপর কাপড়খানা মাত্র এক দিরহামে রয়ে গেছে। (তারীখে বাগদাদ : ১৩ খ-, পৃষ্ঠা- ৩৬২)

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩১

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩৫

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩৬

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-২৮

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-১৫ (বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)