ইহুদী এবং তাদের সমর্থকদের তৈরি পণ্য বর্জন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য আবশ্যক

সংখ্যা: ২৯৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

হামাস মুক্তিকামী যোদ্ধাদের উপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলায় আমরা মুসলমান হিসেবে কস্ট পাচ্ছি। কিন্তু এই মুহুর্তে হামাসের পক্ষে কিছু করতে না পারায় কস্ট আরও দিগুণ-বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই অনেক কিছু মনে করেন তবে এই মুহুর্তে ইসরাইলের বিরুদ্ধে  করণীয় কার্যক্রমের মধ্যে প্রথম কাজ ছিলো তাদের সাথে জেহাদ করা অথবা জেহাদে সার্বিক সহযোগীতা করা তা অস্ত্র দিয়ে হোক অথবা আর্থিক সহযোগীতার মাধ্যমে হোক। দ্বিতীয় কাজ হলো কাফেরের অর্থাৎ ইহুদীদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করা আর হামাস ও মুসলমানদের পক্ষে দোয়া করা। যা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ মুতাবেক মুসলমানদের সাধারণভাবে সুন্নাত আর খাছভাবে ফরজ। এছাড়া ইহুদীদের সমস্ত পণ্যদ্রব্য পরিহার করা। তাই অনেকে ইসরাইলী পণ্য বয়কটের আহ্বান করেছেন। এরকম সকল সিদ্ধান্তই সঠিক। কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা কি কেবল ইসরাইলী পণ্য বয়কট করবো? নাকি সকল দেশের  ইহুদীদের পণ্য বয়কট করবো?? আবার ইহুদীদের মালিকানাধীন কোম্পানীর কোন পণ্য জনগণের  বয়কটে কি হবে যেখানে অনেক মুসলিম দেশ নিজেই ইসরাইল থেকে পণ্য ইম্পোর্ট করছে এবং ইসরাইলে এক্সপোর্ট করছে? সেখানে আপনার -আমার পণ্য বর্জনে আসলে কি হবে? এই সব মিলিয়েই আজকের আলোচনা।

পণ্য বয়কটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইহুদীদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা যাতে তারা তাদের উপার্জিত অর্থ দ্বারা মুসলমান উনাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে। তবে এক্ষেত্রে পরিকল্পনার শুরু আসলে হতে হবে সম্মানিত হাদীছ শরীফ অনুসরণের লক্ষ্যে। আর তা হচ্ছে যদি কোথাও কোন অন্যায় সংঘটিত হয় তবে কমপক্ষে হাতে বাঁধা দিতে হবে, নতুবা মুখে প্রতিবাদ করতে হবে আর না হয় ঘৃণা করে সেখান থেকে সরে যেতে হবে। পণ্য বয়কট মানে হচ্ছে ঘৃনাভরে ইসরাইলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং মুসলমান উনাদের পক্ষে থাকা।  একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, অনেক কোম্পানী আছে যাদের পণ্য আমরা ব্যবহার করছি তাদের প্রতিষ্ঠা ইহুদী ছিল না কিন্তু বর্তমান মালিকানা ইহুদীদের হাতে আবার অনেক কোম্পানীর মালিক এককভাবে কোন ইহুদী মালিকের হাতে না থাকলেও তাদের শেয়ারের পরিমাণ বেশী। আবার অনেক পণ্য আমরা ব্যবহার করছি যেগুলো ইসরাইলী কোম্পানীর নয় কিন্তু তৈরি হচ্ছে অন্য কোন দেশে যার মালিক ইহুদী। আমাদের দেখতে হবে কোন প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি ইসরাইলকে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে। আমাদের সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য পরিহার করা আবশ্যক।

প্রথমে দেখা যাক আসলে কিভাবে ইহুদীরা সহযোগীতা পাচ্ছে।

১। ইসরাইলে বানানো পণ্য মুসলিম দেশে সরকারী-বেসরকারীভাবে আমদানী করে আর মুসলিম দেশের বানানো পণ্য তাদের দেশে রপ্তানী করে।

যেমন বাংলাদেশ কেবল ২০২২ সালে ইসরাইল থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানী করেছে আর ইসরাইলে রপ্তানী করেছে ১ লাখ  ৩৪ হাজার ৩১৭ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। অন্যান্য অনেক মুসলিম দেশের ইসরাইল থেকে অস্ত্রসহ অন্যান্য পণ্য কেনার কথা না হয় বাদই দিলাম। আমদানী-রপ্তানী উভয় দিক থেকেই ইসরাইল উপকৃত হয়।

২। ইসরাইল ছাড়া অন্যান্য দেশে ইহুদী মালিকানাধীন কোম্পানীর পণ্য ব্যবহার করে।

যেমন পেপসির জন্ম ১৮৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তাই অনেকেই এটাকে ইহুদীদের পণ্য বলতে দ্বিধান্বিত হয়, কিন্তু একটা বিষয় আমরা ভুলেই যাই, এই ইজরাইলের জন্ম ফিলিস্তিনে হওয়ার অনেক আগেই আমেরিকায় একটা মিনি ইজরাইলের জন্ম হয়েছিলো, যার জনগণেরাই আমেরিকার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো। সুতরাং, আমেরিকায় জন্ম হওয়া কোন কোম্পানি ইজরাইলের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করলে তাতে এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। বরং এটাই স্বাভাবিক।

কিছু ইহুদী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আর কয়েকটি ইসরাইল সমর্থক আন্তর্জাতিক কোম্পানি রয়েছে যাদের পণ্য বাংলাদেশেও পাওয়া যায়। এদের সকল পণ্য আমাদের বর্জন করা আবশ্যক। যেমন-

১। Loreal: ফরাসী এই প্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকেই জায়োনিজমের কট্টর সমর্থক। এরা ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক কার্যক্রমকে সরাসরি সমর্থন করে এবং ইসরায়েল এর সামরিক বিশেষজ্ঞদের নানা সময় পুরস্কৃত করে আসছে।

২। Victorias secret: যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এই Lingerie রিটেইলারটি সেই শুরু থেকেই ইসরায়েলের সমস্ত কার্যক্রমকে সমর্থন করে আসছে এবং নানা ধরণের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনকে তারা তাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে!

৩। CEMEX: এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশেও তাদের কার্যক্রম চালায়-নারায়ণগঞ্জের কদম রসূলে এদের সিমেন্ট ফ্যাক্টরী। নীতিগত কারণে মেক্সিকান এই প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলীদের সমস্ত কাজকে সমর্থন করে! Coalition of women for Peaceএর দেয়া তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমতীরে উচু উচু দেয়ালগুলো বানাতে সবধরণের ভর্তুকী দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েল কে সহায়তা করে আসছে! নতুন অবৈধ বসতি স্থাপনের সময়েও তারা নানা ভাবে সহায়তা করে আসছে! এদের উৎপাদিত সিমেন্ট বর্জন করুন!!!

৪। DELL: অনেক দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ কম্পিউটার ব্রান্ডটি প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার ভর্তুকি দিয়ে ইসরায়েলের সেনাবিহিনীকে কম্পিউটার সামগ্রী সরবরাহ করে আসছে। কয়েক বছর আগে তারা বাজার মূল্যের চেয়েও ২০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৮০ কোটি টাকা) কমে ইসরায়েল এর সেনাবাহিনীকে ৫০,০০০ বিশেষায়িত কম্পিউটার দেয় যা কিনা তারা কখনো মার্কিন সেনা বাহিনীকেও দেয়নি! তাই DELL এর ল্যাপটপ এবং অন্যান্য সামগ্রী পরিহার করুন-তা যত ভালই হোক না কেন!

৫। GENERAL ELECTRIC CORPORATION: গাজায় এপাচি হেলকপ্টারগুলো থেকে ফিলিস্তিনীদের উপর হামলা চালাতে যে বিশেষ PROPULSION সিস্টেম ব্যবহার করে ইসরায়েলী সেনাবাহিনী তা GE বানিয়ে দিয়েছে বিশেষভাবে! ইসরায়েলী সেনাবাহিনী নানা ধরনের সামরিক বিমানের ইঞ্জিনের মূল সরবরাহক ও এরা! GE এর তৈরী সব ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বর্জন করুন!

৬। HEWLETT PACKARD COMPANY: ইসরায়েলী নেভির সমস্ত আইটি কার্যক্রম দেখাশুনা করে এই প্রতিষ্ঠানটি! গাজায় যখন মানবিক সাহায্য নিয়ে কোন জাহাজ যায় তখন এদের উপর যে হামলা চালান হয় তার সমস্ত ব্লপ্ল্যান ইসরায়েলী নেভিকে সহায়তা করে HP এর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠান MATRIX.  তাই ত্রাণ জাহাজে হামলাকারীদের দ্বারা উৎপাদিত সমস্ত পণ্য বর্জন করুন!

৭। MOTOROLA:: লজ্জাজনক হলেও সত্য যে পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদীদের জন্য MOTOROLA: বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে। আর অবৈধ ইহুদী স্থাপনায় তাদের কমপক্ষে ৭০ টি টাওয়ার আছে! গাজায় হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলী সামরিক বাহিনীকে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বানিয়ে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৯ সালের দিকে MOTOROLA এর নিয়ন্ত্রণের থাকা একটি কোম্পানি ইসরায়েলী সেনাবিহিনীর বোমা বানাতে সহায়তা করত। MOTOROLAএর উৎপাদিত সমস্ত পণ্য বর্জন করুন!

৮। VOLVO: এই গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটিও নানা সময়ে ইসরায়েলী সেনাবাহিনী কে নানাভাবে সহায়তা করে আসছে গাজার আগ্রাসনে! তারা বিশেষ ছাড়ে ইসরায়েলী সেনাবাহিনীকে বুলডোজার সরবরাহ করে যা কিনা এত কমে আর কোন প্রতিষ্ঠান দেয়নি! গাজায় অধিকৃত অঞ্চলে নির্মাণ সামগ্রীর সবচেয়ে বড় সবরাহকারীও এরা! VOLVO এর পণ্য বর্জন করুন!!!

৯। KIMBERLY-CLARK: (Huggies, Kotex, Kleenex) ১৯৯৮ সালে এই কোম্পানিটি ইসরাইলের পক্ষে থেকে তাদের দেয়া সর্বোচ্চ পুরস্কার জুবলী এওয়ার্ড পায়। আর এই পুরস্কার তাদেরকেই দেয়া হয় যারা ইসরাইলের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ভূমিকা রাখে।

১০। NOKIA: নকিয়া কোম্পানী ইসরাইলে অনেক বড় অংকের টাকা  বিনিয়োগ করেছে।

১১। TIMBERLAND: (clothing, shoes, boots, jackets, etc.) জায়োনিজমের সমর্থক।

১২। CATERPILLAR: সবচেয়ে নিন্দিত এই প্রতিষ্ঠানটি! হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনী নাগরিকদের উপর ইসরায়েলী সেনারা হামলা করছে এই কোম্পানীর বানানো সাজোয়া যানগুলো দিয়ে। শুধুমাত্র ফিলিস্তিনীদের উপর যাতে সহজে অত্যাচার করতে পারে-এজন্য তারা তাদেরকে বিশেষভাবে তৈরি বুলডোজার, সাজোয়া যান ইত্যাদি সরবরাহ করে আসছে! বাংলাদেশে এই কোম্পনীর নির্মাণ সামগ্রী (ট্রাক, বুল্ডোজার, ক্রেন) পাওয়া যায়। অতএব, এগুলো বর্জন করুন।

১৩। Nestle, Kit Kat & Maggi: নেসলের জন্ম ১৮৬৬ সালে। ম্যাগি, কিটক্যাট নেসলেরই একটি অংশ। কোম্পানিটি সুইজারল্যান্ডের! নেসলে ইসরাইলে সর্ব বৃহৎ ফুড কোম্পানীতে তার বড় শেয়ার থাকার কারণে ইসরাইলের পক্ষে থেকে জুবলি এওয়ার্ড সম্মাননা দেয়া হয়।

ইহুদী পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরও কিছু কোম্পানির নাম হলো-

১৪। ম্যাকডোনাল্ডস ও স্টারবাকস্ ফাস্টফুড/কফি শপ।

১৫। আইবিএম।

১৬। জনসন অ্যান্ড জনসন।

১৭।  সিমেন্স,

১৮।  রেভলন।

১৯। ইউনি লিভার কোম্পানী। লাইফ বয় ও ডাভ সাবান, ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম, পেপসোডেন্ট ও ক্লোজ আপ টুথপেস্ট, সান সিল্ক ও ক্লিয়ার শ্যাম্পু ইত্যাদি তাদের পণ্য।

মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম উম্মাহকে এমন তাওফীক, ঈমানী কুওওয়ত ও গাইবী মদদ দান করুন যেন সন্ত্রাসী ইসরাইলকে ইতিহাস হতে মুছে দেয়া সম্ভব হয়। আমীন।

-আল হিলাল

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।