‘উগ্রবাদ’ কী শুধু মুসলমানদের প্রতিই প্রয়োগ করতে প্রগতিবাদীরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ? ‘নারীবৈষম্য’ কী শুধু মুসলমান নারীদের মাঝেই তথাকথিত নারীবাদীরা দেখতে পান? ‘মোহামেডান ল’র পরিবর্তন কী একেবারেই পানি-ভাত। আর ‘হিন্দু আইন সংস্কার’ করতে গেলেই প্রতিবাদ এবং পশ্চাৎপদ। সরকার কী শুধু মুসলমান নামধারী মৌলবাদী-জঙ্গিদের প্রতিই পদক্ষেপ নিবে? না, হিন্দু মৌলবাদী-জঙ্গিদের দমনের ক্ষেত্রেও সজাগ থাকা প্রয়োজন মনে করবে? মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের কোন ধর্ম নেই। তাই মুসলমান নামধারী মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের পাশাপাশি হিন্দু মৌলবাদী- জঙ্গিবাদীদের – প্রতিও সরকারের সজাগ দৃষ্টি ও সতর্ক সচেতনতা এবং সক্রিয় পদক্ষেপ সময়ের প্রয়োজন

সংখ্যা: ১৯২তম সংখ্যা | বিভাগ:

রাজধানীর বিভিন্ন দেয়াল এখনও ‘বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট’-এর প্রকাশিত পোস্টারে ছেয়ে আছে।

গত ১৩ই নভেম্বর/২০০৯ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন আহ্বান করে ঐ পোস্টারে ৭ দফা দাবি উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো:

* হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তন প্রচেষ্টার প্রতিবাদ।

* জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃবাস্তবায়ন।

* উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত রাখা।

* সরকারি চাকরিতে ২০% কোঠার ব্যবস্থা করা।

* দুর্গাপূজায় ৩ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা।

* সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি।

* হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেল গঠনের দাবি।

পোস্টারটিতে আরো বলা হয়েছে- বক্তব্য রাখবেন, জাতীয় হিন্দু নেতৃবৃন্দ।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা দেয়া হয়েছে, রামসীতা কমপ্লেক্স (২য় তলা) ১৯, খয়কালি মন্দির রোড, ঢাকা-১০০০।”

তথ্য ও যোগাযোগের জন্য নিম্নলিখিত ৭টি মোবাইল ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে।

পোস্টারটির চতুর্দিকে বক্স করে যথাক্রমে চিত্র ও হেডিং দেয়া হয়- æ*বাবা মহেশ্বর, * সোমনাথ মন্দির, * ভগবান রাম চন্দ্র, * পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, * শ্রীশ্রী মা দুর্গা, * শ্রীশ্রী জগৎ মাতা, * শ্রী চৈতন্য দেব, * লন্ডনে বিষ্ণু মন্দির, * জলমগ্ন শ্রীকৃষ্ণের দারকা নগরী, * স্বর্ণ মন্দির, * শ্রীশ্রী রক্ষা কালি, * কান্তজীর মন্দির, * গুরু গোবিন্দ সিং, * আরব সাগরে জলমগ্ন নারায়ণ মন্দির, * ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ, * স্বামী বিবেকানান্দ, * স্বামী নারায়ণ মন্দির, * গুরুজী, * পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মন্দির কম্বোডিয়া।”

এবং বিশেষ একটি বক্সে ‘হিন্দুদের বর্তমান অবস্থা’ শিরোনাম দিয়ে চিত্রে বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে তাতে একজন হিন্দুর ছবি দিয়ে তাকে মাথা থেকে পায়ের তালু এবং ডান-বাম সর্বদিক থেকে তীরে আক্রান্ত দেখিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে হিন্দুরা এরকম চতুর্মুখী আক্রমণে আক্রান্ত। (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)

উল্লেখ্য, ‘অসূর্যস্পর্শা’ শব্দটি হিন্দুদের থেকে এসেছে।

‘অন্তঃপুরী’ শব্দটিও হিন্দুদের থেকেই এসেছে।

অর্থাৎ এমনভাবে অন্তঃপুরীতে আবদ্ধ থাকা যাতে করে সূর্যের স্পর্শ যেন না লাগে।

এসব প্রথা ও তত্ত্ব কিন্তু হিন্দুদের মধ্যেই ছিলো।

বিপরীত দিকে ‘মহিলারা যে প্রয়োজনে ঘর হতে বের হতে পারবে’ সে মর্মে খোদ কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন, তবে পর্দা করতে বলেছেন।

কিন্তু সে পর্দা পালনের কথা বললে, ইসলাম পুরোপুরি পালন

করতে বললে- এ ধরনের তথাকথিত সংস্কৃতিবাদীরা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উগ্রবাদী বলে শোরগোল তুলেন। এর মধ্যে আবার বিশেষ উৎসাহ যুগিয়ে থাকেন কথিত সংস্কৃতমনা হিন্দুরা।

ভাবখানা এই যে, মুসলমান যতই ইসলাম পরিত্যাগ করতে পারবে ততই তারা সংস্কৃতিবান হতে পারবে। তাদের দৃষ্টিতে ইসলাম মানেই উগ্রবাদ। (নাঊযুবিল্লাহ)

কিন্তু রূঢ় বাস্তব হলো, স্বধর্ম এবং স্বসম্প্রদায়ের ঘোর সাম্প্রদায়িক তৎপরতার ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারেও এরা দোষের কিছু দেখে না, উগ্রবাদের গন্ধ পায় না। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের ছোঁয়া পায় না।

তাই উল্লিখিত ‘জাগোরে হিন্দু জাগো’ শিরোনামে প্রকাশিত পোস্টারের পরও আজ পর্যন্ত  কোনো

পত্রিকায়

মিডিয়ায়

বা কোনো

কথিত বুদ্ধিজীবী

প্রগতিবাদী

সংস্কৃতিবাদী

অসাম্প্রদায়িক দাবিদার

কারো থেকে কোনো ধরনের

বিপরীত মন্তব্য

লিখনী

বিবৃতি

হ্যারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া গেলো না।

এবং বলতে গেলে, এই ডিজিটাল যুগে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।

অথচ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প বোপিত এই পোস্টারটি যে কত তীব্র উগ্রবাদের বহিঃপ্রকাশ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

‘জাগোরে হিন্দু জাগো’- তার অর্থ কী? হিন্দুদের প্রতি কী এখানে ভারতের মুসলিম নিধন অথবা বৈষম্যর ছিটে-ফোঁটাও হয়েছে।

বলাবাহুল্য, তা না হলেও ভাবখানা এই যে, এদেশে হিন্দুদের প্রতি অদ্যাবধি বিরামহীন ভাবে অত্যাচার-শোষণ চলে আসছে।

অথচ এদেশে হিন্দুরা বহাল তবিয়তে রয়েছে এবং হিন্দু নাম ব্যবহার করে প্রশাসনে, সরকারে আলাদা সুবিধা নিচ্ছে। তা বোধ করি বিবেক সম্পন্ন কোন হিন্দুও অস্বীকার করতে পারবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিজি হাসপাতালের এক ডাক্তার লেখককে জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে পিজি হাসপাতালে এক আলোচনায় এক হিন্দু ডাক্তার প্রকাশ্যে আস্ফালন করে বলেছে, æআমার এই হাত দিয়ে আমি কত মুসলমানকে পিটিয়ে তারপর আজকের এই অবস্থানে এসেছি।” (নাউযুবিল্লাহ)

বলাবাহুল্য, আওয়ামী লীগ সরকার আসলেই ছাত্রলীগ,

যুবলীগের টেন্ডারবাজ কিছু নেতার মতই গুটিকয়েক হিন্দুরাও এভাবে এদেশে মুসলমানদের উপর অত্যাচার শুরু করে। এজন্য অতীতে আওয়ামী লীগকে মাশুলও কম দিতে হয়নি।

তবে বর্তমান দিন বদলের সরকার সে ভুল চেতনা অথবা পরিম-ল থেকে সরে আসছে বা সরে আসবে বলে মানুষ বিশ্বাস করেছে, আশা করছে।

বলাবাহুল্য, এদেশের প্রেক্ষাপটে ‘উগ্রবাদ’ শব্দটি জঙ্গিবাদের চেয়ে কম ঘৃণিত নয়।

কিন্তু তারপরেও ৯৫ ভাগ মুসলমানের এদেশে মুসলমান জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ তথা ধর্মব্যবসায়ী বিরোধী মনোভাব সম্পন্ন হওয়ার পরও; সত্যিকার শান্তির ‘ইসলাম’ ব্যক্তিগত জীবনে একশতভাগ পালন করতে গেলেই তাকে বিভিন্ন বলয় ও মহল থেকে মন্তব্য হজম করতে হয়- এরা ‘উগ্রবাদী’।

কিন্তু সে শান্তিপ্রিয় সূফী মুসলমানের বিপরীতে মৌলবাদী চেতনায় ভাস্বর হিন্দুদের নিবেদিত ও প্রণোদন মূলক এবং আরোপিত আন্দোলমুখী কর্মকা-ের পরও তাদের প্রতি কখনো কেউ মন্তব্যের ঢিল ছুঁড়ে না যে, তারা উগ্রবাদী।

প্রকৃত পক্ষে যারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও ধর্মব্যবসায়ী বিরোধী শান্তিপ্রিয় মুসলমানকেও উগ্রবাদী গালি দিতে আগ্রহী তারা আসলে অতি উৎসাহী আগাছা ।

তাদের ন্যায়ের ভিত্তি নেই।

চোখের দৃষ্টি নেই।

অন্তরের বিবেক নেই।

এরা বরং আদর্শ, ঈমান, ঐতিহ্য বিক্রিকারী স্বার্থান্বেষী মহল।

স্বার্থের জন্য যেহেতু এরা মুসলমানদের প্রতি অন্যায় করতে পারে সেহেতু সমাজেও এরা

সব ধরনের দুর্নীতি করতে পারে।

বৈষম্য তৈরি করতে পারে।

এমনকি বন্ধু থেকে প্রভু সবারই ক্ষতি করতে পারে।

এমনকি দৃশ্যত হিন্দু-বান্ধব সাজলেও স্বার্থগত কারণে এরাই ভয়ঙ্কর হতে পারে। কারণ, এদের আদর্শ নেই, আত্মা নেই। এরা আত্মবিক্রিত। (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)

***

‘উগ্রবাদ’ শব্দটি যেমন তথাকথিত প্রগতিবাদীরা শুধু ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতিই প্রয়োগ করতেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ-

পাশাপাশি হিন্দুদের মাঝে পাহাড়সম নারীবৈষম্য, নারী-নির্যাতন থাকলেও

তা চোখে দেখেন না

তা তুলে ধরেন না

আমাদের তথাকথিত নারীবাদীরা।

হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে হিন্দু নারীদের নেই সম্পত্তির অধিকার। বাবা বা স্বামী কারো সম্পত্তিই তারা পান না। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই বৈষম্য। ইসলাম বিদ্বেষী নারীনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা দেশের আইনপ্রণেতা ও নীতিনির্ধারকদের নজরে হিন্দু নারী বৈষম্যের বিষয়টি আদৌ তুলে ধরছেন না।

অথচ তারা প্রায়ই বরাত দিয়ে থাকেন, সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, æসব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী, পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র কোনো বৈষম্য করবে না। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করবেন।”

সংবিধানের এ অনুচ্ছেদের ভাষ্যানুযায়ী সমান অধিকার দূরের কথা, দেশের প্রচলিত হিন্দু আইনে বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের কোনো অধিকার নেই। যদিও ছেলে না থাকলে মেয়ে তার বাবার সম্পত্তি ভোগদখল করতে পারবে; কিন্তু নিরঙ্কুশ মালিকানার অধিকার পাবে না। বিক্রি, দান বা হস্তান্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মেয়েদের কোনো অধিকার নেই।

সম্পত্তির প্রকৃত অধিকার চলে যায় বাবার বংশের কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারের হাতে। শুধু বাবাই নয়, হিন্দু আইনে স্ত্রীও স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নন।

এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোন নারীবাদীরা কোনো আন্দোলনও করেনি আর বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের অবস্থার কোনো উন্নতিই হয়নি। এ সংক্রান্ত কোনো আইনও প্রণয়ন হয়নি। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর ভারত এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে বাবা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত প্রথা, আচার-আচরণ ও রীতিনীতি অনুযায়ীই চলছে হিন্দু সমাজ। সুস্পষ্ট ও নারীবান্ধব আইনের অভাবে হিন্দু নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন মৌলিক অধিকার থেকে। সম্পত্তির অধিকার বঞ্চিত থাকায় পরিবারেও তাদের উপর চলছে নানা নির্যাতন। বাড়ছে নারী নির্যাতন। যৌতুকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না হিন্দু নারীরা বরং দিন দিন যৌতুকের কারণে সহিংসতা আরো তীব্র আকার ধারণ করছে।

নারীনেত্রী ও সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেও কোন আন্দোলনের নাম নেয়নি। তারা রক্ষণশীল হিন্দুদের উগ্র মনোভাবকেই ঠিকই ভয় পেয়ে নিষ্ক্রিয় থেকে যাচ্ছে।

হিন্দু পারিবারিক আইনের সংস্কার ও নতুন আইন প্রণয়ন করে বাবা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন বলে মনে করতে পারেনি নারীনেত্রী ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন কর্মীরা। অথচ সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ী বাবার সন্তান হিসেবে সবাই তার উত্তরাধিকারী। কিন্তু হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীরা যেন বাবার সন্তান নয়। এ ব্যাপারে আজও নারীবাদীরা কোন জোরদার আন্দোলন করছে না এবং এখনো এ সংক্রান্ত কোনো আইনের খসড়া পর্যন্ত তৈরি হয়নি।

সম্পত্তিতে নারীর কোনো অধিকার না থাকায় অনেক সময় স্বামী, শ্বশুরবাড়ির শত অত্যাচার সহ্য করেও হিন্দু নারীকে সংসার করতে হয়। মৃত্যু পর্যন্ত তাকে স্বামীর ঘরেই থাকতে হয়। বিষয়টিকে অত্যন্ত অমানবিক বলে প্রচার করছেন না কথিত নারীনেত্রীরা। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে নারী-পুরুষ সবাই সমান। এ বিধানের তোয়াক্কা না করে হিন্দুধর্মের নিয়মনীতি অনুযায়ীই চলছে হিন্দু আইন-কানুন। আর এর শিকার হচ্ছেন নারীরা। যৌতুকের কারণে নির্যাতন বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার আইন ও নারীর সম্পত্তির অধিকার থাকলে যৌতুকের মতো জঘন্যতম কুপ্রথা বন্ধ হয়ে যেতো।

উল্লেখ্য, হিন্দু আইন কোনো কঠোর ধর্মীয় বিধি নয়। এই আইন কেবল আঞ্চলিক ও সামাজিক প্রথার ওপর প্রতিষ্ঠিত। যুগ যুগ ধরে চলে আসা হিন্দু সমাজের এসব বিধানের অধিকাংশই সংবিধিবদ্ধ করা হয়নি। ফলে অধিকাংশ প্রথা ও আইনে রয়েছে নানাবিধ জটিলতা। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পত্তিতে নারীদের উত্তরাধিকার বিষয়ে আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু নেতাদের ঐক্যের অভাবে তা সফল হয়নি।

উল্লেখ্য ধর্মের অজুহাত ও বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে কিছু হিন্দু সমাজপতি এ আইন হোক, হিন্দু নারীরা অধিকার পাক এ বিষয়ে সব সময় বিরোধিতা করে আসছেন। তারপরেও তথাকথিত নারীবাদীরা তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে না।

‘হিন্দু পারিবারিক আইন ৭ হাজার বছর আগের একটি সনাতন ধর্মীয় আইন। কোনো অবস্থায়ই এই আইনের পরিবর্তন মেনে নেয়া যাবে না’- উল্লেখ করে বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক অশোক তরু বলেন যে, হিন্দু আইন ধর্মের অঙ্গ। নতুন করে আইন প্রণয়ন বা সংস্কার ধর্মীয় অনুশাসনেরই বিরোধিতা করা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা আইনে হিন্দু ধর্ম পরিচালিত হয়ে আসছে।

আশ্চর্য হলেও সত্য যে, একদিকে তথাকথিত নারীবাদী এবং সেই সঙ্গে সরকারও তাদের উপরোক্ত সূত্র অনুযায়ী চলছে। হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুদের ক্ষেত্রে নারীবাদীরা বড়ই নির্বিকার ও নিষ্ক্রিয়।

কিন্তু নারীবাদ ও নারী অধিকারের নামে মুসলমান নারী ও ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে তারা কাট-ছাঁট ও পরিবর্তন করতে ঠিকই সরব ও সক্রিয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আজকে সময় এসেছে নারী বৈষম্য দূরীকরণের দাবিদার এসব নারীবাদীরা নিজেরাই যে মুসলমান ও হিন্দুর বিষয়ে বৈষম্য রচনা করে চলেছে তা চিহ্নিত করার।

***

‘কাফির’ আর ‘মুসলমান’-এর দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যে কত পার্থক্য তা শরীয়তী বিধিবিধানে প্রমাণ করে।

এ পার্থক্যের পিছনে মূলতঃ উভয় ধর্মের মান ও মর্যাদার বিষয়টিই যুক্ত।

কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক ইসলামকে পরিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। তাই মুসলমানের দৃষ্টিভঙ্গিই স্বচ্ছ। ইসলামী শরীয়তই পরিপূর্ণ।

কিন্তু নাকেছ কাফিররা যখন ইসলাম নিয়ে নাড়াচাড়া করে তখন তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

ব্রিটিশ সরকার আইন করেছিলো ওয়াকফ আল-আওলাদ কোনো ওয়াকফ নয়। তাদের ভাষায়- দাতার বংশধররাই যেখানে বেনিফিসিয়ারী হয় তাকে তো দান বলা যায় না।

কিন্তু এরপর মুসলিম আলিমরা যখন কুরআন-সুন্নাহর দলীল দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, æইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানকে দেয়াটাও  দানের অন্তর্ভুক্ত হয়”- তখন ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিল তা মেনে নেয় এবং ১৯১৩ সালে তারা তাদের আগের আইন সংশোধন করে মোহামেডান ল’ জারি করে।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশরা এরপরে আর মোহামেডান ল’তে হাত দেয়নি। কিন্তু মোহামেডান ল’র যারা অনুসারী সে মুসলমানরাই বার বার মোহামেডান ল’তে

আঘাত করেছে

কাটছাট করেছে

পরিবর্তন করেছে।

এমনকি ইসলামের লেবেলধারী খোদ আইয়ুব খানও এ বিষয়ে বিশেষ আঘাত করেছে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন জারী করে।

আইয়ুব খান কুরআন-সুন্নাহর সম্পূর্ণ বিপরীত বিধান ‘তালাক ও ফারায়েজ’-এর ক্ষেত্রে সংযুক্ত করেছে। কুরআন-সুন্নাহয় ঘোষিত ‘স্বামী তালাক দিলেই তালাক হয়ে যায়’- এই বিধানকে রহিত করে সে ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা সংযুক্ত করে এবং ৯০ দিনের নিচে তালাক কার্যকর হবে না বলে আইন করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

পাশাপাশি কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত না থাকা সত্ত্বেও সে দাদার সম্পত্তিতে নাতিকে ওয়ারিস ঘোষণা করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

উল্লেখ্য, স্বৈরশাসক আইয়ুব খান তার প্রভু আমেরিকাকে খুশী করার জন্যই ইসলামের উপর এরূপ প্রকাশ্য আঘাত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

কিন্তু এরপর বাংলাদেশ হওয়ার পরও মোহামেডান ল’র উপর একের পর এক আঘাত থেমে থাকেনি।

১৯৭৪ সালেই পাস হয়েছে মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন।

এ আইনে বলা হয়েছে, ১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম এবং প্রয়োগ: (১) অত্র আইন ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ এবং তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন নামে অভিহিত হইবে।

(২) অত্র আইন যে কোন স্থানে বসবাসরত বাংলাদেশের সকল মুসলিম নাগরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে।

৩। বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণ: অন্য যে কোন আইন রেওয়াজ বা প্রথায় যাহাই থাকুক না কেন, মুসলিম আইন অনুযায়ী সম্পন্ন প্রতিটি বিবাহ এই আইনের বিধান অনুসারে রেজিস্ট্রি করিতে হইবে।

(২) উপধারা: (১) এর বিধান যে কোন ব্যক্তি লঙ্ঘন করিবে, সে তিন মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- বা পাঁচ শত টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় প্রকারে দ-নীয় হইবে।

অথচ বর্ণিত ধারা বা শাস্তি আদৌ কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত নয়। বরং কুরআন-সুন্নাহর প্রতি সরাসরি আঘাত।

কিন্তু সে শক্ত আঘাতটা স্বাধীনতার মাত্র ৪ বছর পরই মুসলিম সরকারই করেছেন। যেক্ষেত্রে মুসলিম প্রধান এদেশে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ৯৫ ভাগেরও বেশি।

পক্ষান্তরে হিন্দুদের সংখ্যা শতকরা ৩ ভাগেরও কম হওয়ার পরও স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর মাত্র কয়েকদিন আগে আমাদের আইনমন্ত্রী খুব ভয়ে ভয়ে উচ্চারণ করলেন যে, æহিন্দুদের ধর্মে যদি কোন বাধা না থাকে তবে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হবে।”

বলাবাহুল্য, বিয়ে রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ধর্মের বাধা যতটা না হিন্দু ধর্মে আছে তার চেয়ে অনেক বেশি আছে ইসলাম ধর্মে।

কই! সে বাধা তো কোন মুসলমান সরকার দেখলেন না।

স্বাধীনতা উত্তর এ যাবত সব মুসলমান আইনমন্ত্রীও মানলেন না।

অর্থাৎ কীনা শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের এই দেশে মুসলিম আইন পরিবর্তন করাকে তারা একেবারে পানি ভাত মনে করেন।

পক্ষান্তরে শতকরা মাত্র ৩ ভাগ হিন্দুদের সামান্য প্রতিবাদকেও তারা

আমলে নেন।

পশ্চাৎপদ হন।

হিন্দুদের আন্দোলনের সুযোগ দেন।

আইনমন্ত্রী মাত্র একবার হিন্দু বিয়ে রেজিস্ট্রি করার কথা বলেছেন। তার প্রতিবাদেই জাতীয় হিন্দু মহাজোট ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মহা লম্ফ-ঝম্প প্রদর্শন করে গেলো।

বলাবাহুল্য, আমাদের সংবিধানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোন বৈষম্য সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হলেও কার্যত দেখা যায় এখানে সংখ্যালঘুদের পরিবর্তে বরং সংখ্যাগরিষ্ঠরাই মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

বিষয়টি সত্যিই ভীষণ স্পর্শকাতর এবং মর্মপীড়াদায়ক।

এদিকে ‘জাগোরে হিন্দু জাগো’  শিরোনামে জাতীয় হিন্দু মহাজোট যেভাবে কল্পিত হিন্দু নির্যাতনের চিত্র ছাপিয়ে তার বিপরীতে কট্টর হিন্দু নিদর্শনের সমাহার ঘটিয়ে হিন্দু জাগরণের ডাক দিয়েছে তা কেবল কট্টর হিন্দু মৌলবাদী ও হিন্দু জঙ্গিবাদী চেতনা ও কর্মকা-েরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

বলাবাহুল্য, কিছুদিন আগে নিষিদ্ধ হওয়া জঙ্গি সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর’ও এরূপ পোস্টার ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সভাভিত্তিক কার্যক্রম দিয়েই বিস্তার লাভ করেছিলো।

এদিকে জঙ্গিবিষয়ক সরকারি বৈঠকগুলোত সম্প্রতি জঙ্গিদের সংজ্ঞা সম্পর্কে বলা হচ্ছে, যেসব সংগঠন দেশের প্রচলিত সংবিধানের বিরুদ্ধে বলছে তারাই জঙ্গি।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহোজোট বাংলাদেশের প্রচলিত সংবিধানই শুধু নয় বরং খোদ সরকার তথা গোটা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বলেছে, ভগবান ছাড়া কাউকে ভয় করে না, তাঁবেদারী করে না এবং অধিকার আদায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”

পাশাপাশি দেশে প্রচলিত সংবিধান অস্বীকার করে আরো যেসব দাবী তুলেছে তা হলো-

* উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত রাখতে।

* সরকারি চাকরিতে ২০% কোঠার ব্যবস্থা করতে।

* দুর্গাপূজায় ৩ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা।

বলাবাহুল্য, দেশের শতকরা ৩ ভাগেরও কম জনগোষ্ঠীর দাবীতে যদি কথিত জাতীয় হিন্দু মহাজোট তাদের মাত্র একটি অনুষ্ঠানেই তিনদিন ছুটি চায় তাহলে তারা যে চেতনায় কত ভয়ঙ্কর জঙ্গি হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

উল্লেখ্য, ‘সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বললে জঙ্গি হিসেবে গণ্য হবে’-  এ প্রচারের প্রেক্ষিতে গোটা সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ এবং সংবিধানকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞায় অটল নব্য গজিয়ে উঠা কথিত জাতীয় হিন্দু মহাজোটের প্রতি সরকার অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ আশা করে। কারণ, মৌলবাদ-জঙ্গিবাদীদের কোন ধর্ম নেই।

তাই মুসলমান নামধারী মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের পাশাপাশি- হিন্দু মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের প্রতিও সরকারের সজাগ দৃষ্টি ও সতর্ক সচেতনতা এবং সক্রিয় পদক্ষেপ সময়ের প্রয়োজন।

-মুহম্মদ ওলিউর রহমান

খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির “ইসলামী শরীয়তের হুকুম মুতাবিক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় যেমন-  কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩ দিন এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬২

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১১

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩০

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২০ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল