ঢাকায় প্রতি বছর পাঁচ লাখ করে লোকে বাড়ছে। বিকেন্দ্রীকরণ এখন সময়ের চূড়ান্ত দাবি। যা পূরণ না হলে ঘটবে মহা বিস্ফোরণ।

সংখ্যা: ২৫৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

১৯৭১ সালে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ৯ লাখ। যে ঢাকাকে আমরা ১৯৭১ সালে চিনতাম, সেটুকু জায়গায় এখন লোকসংখ্যা ৯০ লাখ। অর্থাৎ ১০গুণ বেড়ে গেছে। আর বৃহত্তর ঢাকা কিংবা রাজধানী বা রাজউকের ঢাকা আমরা যাকে বলি, সেই ঢাকার লোকসংখ্যা এখন প্রায় ২ কোটি। লোকসংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি ভৌগোলিক বিস্তারও হয়েছে ঢাকার। আগে ঢাকা ছিল বুড়িগঙ্গা থেকে টঙ্গি খাল, হাজারীবাগ থেকে গে-ারিয়া পর্যন্ত। আয়তন ছিল ৭০ বর্গমাইল বা ১৩৫ বর্গকিলোমিটার। নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কদমরসুল, টঙ্গী ও গাজীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে ঢাকা। রাজউকের এই ঢাকার আয়তন ১৫০০ বর্গকিলোমিটার। ভবিষ্যতে এই ঢাকা উত্তরে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

ঢাকায় প্রতি বছর যে জনসংখ্যা বাড়ছে, তা দিয়ে মালদ্বীপের মতো একটি নতুন দেশ হয়। তেমনি প্রতি ১০ বছর পর সিঙ্গাপুরের মতোও একটি দেশ করা যায়। রাজধানী ঢাকার বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জনসংখ্যা গড়ে প্রতি বছর বাড়ছে ৪.৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে। আর বস্তির জনসংখ্যা বাড়ছে গড়ে ১০ শতাংশ হারে।

স্বাধীনতার পর ঢাকার অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে গার্মেন্টস শিল্প। বিগত বিংশ শতাব্দীর ৮০-এর দশকে ঢাকায় গার্মেন্টস শিল্প পত্তনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গত ৩০ বছরে দেশে পাঁচ হাজার গার্মেন্টস শিল্প গড়ে উঠে। এর মধ্যে চার হাজারই ঢাকায়। এই শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। গার্মেন্টস শিল্পকে কেন্দ্র করে অন্যান্য পরিপূরক শিল্প গড়ে উঠে। সমাবেশ ঘটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের। একই সঙ্গে ঢাকায় বিকাশ লাভ করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার। এখন প্রায় এক হাজার রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসা করছে। এই শিল্পে নিয়োজিত আছে দুই থেকে চার লাখ লোক। গত ২৫ বছরে ঢাকার জমির দামও দ্রুত বেড়েছে। বাংলাদেশের কারখানাগুলোয় যত লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে, তার সিংহভাগই ঢাকায়। কারখানার কাজের প্রায় ৭৫ শতাংশ লোক ঢাকাকেন্দ্রিক। এই নগরীতে চার-পাঁচ লাখ হকার আছে। ছয় লাখ ড্রাইভার আছে। চার লাখ আছে কাজের মেয়ে। রিকশাওয়ালা-ঠেলাওয়ালাসহ শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা কয়েক লাখ। ঢাকায় অবস্থানকারীদের ব্যক্তিউন্নতি যথেষ্ট হয়েছে। যারা বহুদিন ধরে শহরে, তাদের উন্নতি হয়েছে। একেবারে যারা নতুন এসেছে শহরে, তাদের কর্মসংস্থান কম হয়েছে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি বাড়লেও ঢাকার ফিজিক্যাল গ্রোথ বা সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক নেটওয়ার্ক থাকতে হয়। ঢাকায় আছে মাত্র ৮ শতাংশ সড়ক। ঢাকায় পরিবেশের হুমকি ভয়াবহ। নদী-খাল-বিল-নীরাশয় ভরাট হয়ে গেছে। ঢাকা চারটি নদীবেষ্টিত ছিল। এখন এগুলো ড্রেনে পরিণত হয়েছে। নীরাভূমিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ঢাকায় গণপরিবহনের ঘাটতিও অন্যতম সমস্যা। ঢাকা নগরীর মতো মিশ্র পরিবহন ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্য কোনো নগরীতে নেই। ঢাকায় আছে রকমারী পরিবহন। এজন্য ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অবশ্য ঢাকায় ৩০ শতাংশ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাফেরা করে। ঢাকায় ১৯৯২ সালের পর ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ। তাছাড়া ৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

ঢাকার প্রথম ৩০০ বছর ছিল প্রাক-শিল্প যুগ। তখন শিল্প ছিল না। ঢাকায় প্রথম আধুনিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয় ১৮৭৪ সালে। বিদ্যুৎ আসে ১৮৭৮ সালে। প্রথম রেললাইন স্থাপিত হয় ১৮৮৫ সালে। মোটরযান শুরু হয় বিগত বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে। কুটির ও হস্তশিল্পে সমৃদ্ধ ঢাকায় প্রথম শিল্পের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। তবে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ৩ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা আধুনিক শিল্পশহর হিসেবে গড়ে উঠেনি। ১৯৫০-এর দশকে ঢাকায় শিল্পায়ন গতি লাভ করে এবং ১৯৮০-এর দশকে তা ব্যাপক প্রবৃদ্ধি লাভ করে। তখন আন্তঃনগর বাস যোগাযোগ গড়ে উঠে। ১৯৮০-এর দশকে টেলিফোন সহজলভ্য হয়। তবে বর্তমানে বিশেষ করে মোবাইলফোনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগে এক ধরনের বিল্পব ঘটেছে বলা যায়। ইন্টারনেট সুবিধাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভবন নির্মাণে ঢাকায় লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। স্থানীয় ডেভেলপাররা সুউচ্চ ভবন এবং ব্রিজ তৈরি করছে। তবে ঢাকায় প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা আজো অর্জিত হয়নি, বিশেষ করে যোগাযোগ ও পরিবেশ রক্ষায়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সামরিক শাসন ও গণতন্ত্রের পাকে ঘুরপাক খেয়েছে। কথিত গণতন্ত্রে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিনিয়োগকে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করে বিকেন্দ্রীকরণ করা না হলে এখানে জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

প্রথমে বন্যামুক্ত এলাকায় গড়ে উঠে ঢাকা মহানগরী। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ভৌত বিস্তৃতির প্রয়োজনে এর আশপাশের নিম্নাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকা ভরাট করে নগর উন্নয়ন করা হয়। তবে এক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা ছিল না। কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা না হলে আগামী দিনে ঢাকার বিস্তৃতি ঘটবে সম্ভবত অবশিষ্ট নিম্নাঞ্চল, নীরাভূমি এবং স্থায়ী অথবা মৌসুমি নীরাধার ভরাট করে, কৃষিজমি এবং উত্তরাংশের বনাঞ্চল উজাড় করে।

উল্লেখ্য, শহর ছোট হোক কিংবা বড় হোক নগর পরিকল্পনা অবশ্যই থাকতে হবে। ঢাকা এখন গ্লোবাল কানেকটেড সিটি। এই নগরী বিশ্বনগরী হতে যাচ্ছে। তাই নগরীর জন্য যেমন মহাপরিকল্পনা দরকার, তেমনি এই নগরীকে যারা নেতৃত্ব দেবে অর্থাৎ মেয়র-কাউন্সিলররা- তাদেরও দূরদর্শী এবং দক্ষ হতে হবে। নগর ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ঢাকা নগরীর যারা মেয়র-কাউন্সিলর হবেন, তাদের এই নগরীর ডাইনামিক্স বুঝতে হবে, নগরীর অর্থনৈতিক ভিত্তিটা বুঝতে হবে। সব উন্নয়ন তাদের করতে হবে মহাপরিকল্পনার আওতায়।

স্বাধীনতার পর এক বছরের মধ্যে সংবিধান হয়ে গেছে, দুই বছরের মধ্যে পাঁচসালা পরিকল্পনা হয়ে গেছে। কিন্তু রাজধানীর পরিকল্পনা হয়নি। ১৯৭৪ সালের মধ্যেই রাজধানীর পরিকল্পনা হওয়া উচিত ছিল। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের সময় ১৯৫৮-৫৯ সালে তৎকালীন ডিআইটি যে নগর মহাপরিকল্পনা নেয় সেটাই ভিত্তি। এই মহাপরিকল্পনার মাধ্যমেই ঢাকা নগরী একটি কাঠামো পেয়েছিল। এ পরিকল্পনার আওতায়ই গড়ে উঠেছে মিরপুর রোড, ভিআইপি রোড, তেজগাঁও রোড, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, বনানী, গুলশান, উত্তরা ও শেরেবাংলা নগর। এটা না হলে নগরে বসবাস করা যেত না। এখন সমস্যা বাড়ছে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ না হওয়ার কারণেই। ১৯৯৫ সালে যে পরিকল্পনা নেয়া হয় সেটি ১৯৯৬ সালে অনুমোদিত হয়। ২০১০ সালে ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান নামের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেটা যে আরো সমৃদ্ধ গবেষণার দ্বারা অর্জনের প্ল্যান করতে হবে।

-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।