তাফসীরুল কুরআন: মিথ্যার কুফল ও ভয়াবহ পরিণতি

সংখ্যা: ২০৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া উভয়টিই হারাম ও কবীরা গুনাহ। স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব্বুল আলামীন আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি স্বীয় কালাম পাক-এর একাধিক আয়াত শরীফ-এ মিথ্যার কুফল ও শাস্তি সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি কুল-কায়িনাতের যিনি নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও বহু হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।

যেমন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

واجتنبوا قول الزور

অর্থ: “তোমরা মিথ্যা হতে বিরত থাক।” (সূরা হজ্জ-৩০)

لعنت الله على الكاذبين

অর্থ: “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ ৬১)

ولا تقف ما ليس لك به علم ان السمع والبصر والفؤاد كل اولئك كان عنه مسئولا.

অর্থ: “আর নিশ্চয়ই যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই অর্থাৎ যে বিষয় সম্পর্কে তুমি জাননা সে বিষয়ের অনুসরণ কর না অর্থাৎ সে বিষয় সম্পর্কে বলতে যেওনা। নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু ও অন্তরের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কেই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা বনী ইসরাইল: আয়াত শরীফ ৩৬)

ছহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা সত্য বলাকে অপরিহার্য করে নাও, কেননা সত্য বলা নেক কাজের পথ প্রদর্শন করে আর নেক কাজ জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলার চেষ্টা করে, আল্লাহ পাক উনার নিকট সে ব্যক্তি ‘ছিদ্দীক্ব’ (পরম সত্যবাদী) বলে লিখিত হয়। আর তোমরা মিথ্যা বলা থেকে নিজেকে দূরে রাখো, কেননা মিথ্যা কথা গুনাহর দিকে পথ প্রদর্শন করে এবং গুনাহ দোযখের দিকে ধাবিত করে। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টা করে, সে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার নিকট মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়।”

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, বান্দা যখন মিথ্যা বলে তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উক্ত মিথ্যার দুর্গন্ধের জন্য তার নিকট থেকে এক মাইল দূরে চলে যান। (তিরমিযী শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-

انما الكذب لكل الذنوب ام

অর্থ: নিশ্চয়ই মিথ্যা সকল গুনাহর মূল।

ছহীহ মুয়াত্তা মালিক ও বায়হাক্বী শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মিন-মুসলমান ব্যক্তি কি ভীরু হতে পারে? তিন বললেন, হ্যাঁ, হতে পারে। উনাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মিন-মুসলমান ব্যক্তি কি কৃপণ হতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হতে পারে। পুনরায় উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মিন-মুসলমান ব্যক্তি কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? এবার তিনি বললেন না, মিথ্যাবাদী হতে পারে না।

ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কছম করে, কোন মুসলমানের হক্ব (স্বত্ব) আত্মসাৎ করে নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ওই ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। এটা শুনে এক ছাহাবী বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেই বস্তু যদি সামান্য পরিমাণ হয়? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যদিও এরাকি বৃক্ষের একটি শাখাও হোক না কেন।

ছহীহ বুখারী শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহগুলির সংবাদ প্রদান করবো না? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা উনার সাথে শরীক করা, পিতা-মাতা উনাদেরকে কষ্ট দেয়া। তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।

মূল কথা হলো: মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা উভয়টি আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীসমূহের মধ্যে এক বড় নাফরমানী। মিথ্যা মু’মিন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য নয় বরং মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য।

কাজেই, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ মহিলা জিন ইনসানের জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো সর্বপ্রকার মিথ্যা থেকে বিরত থাকা।

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী