পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহূর্তের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯তম পর্ব)

সংখ্যা: ২৬৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৪তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

 

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমান উনাদের বিশেষ বিশেষ ফযীলতযুক্ত আমলের রাত ও দিনসমূহ পালন করাকে বিদয়াত, নাজায়িয ও শিরক বলে ফতওয়া দিয়ে মুসলমান উনাদেরকে অশেষ খায়ের, বরকত, নিয়ামত, নাজাত অর্থাৎ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক থেকে মাহরূম করছে। যেমন তারা বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত, শিরক। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয়কেই তারা বিনা দলীলে মনগড়াভাবে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

অপরদিকে বেদ্বীনী-বদদ্বীনী অর্থাৎ কাফির মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের যত পর্ব বা দিবস রয়েছে সেগুলোকে শুধু জায়িযই নয় বরং নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক্ব প্রকৃতপক্ষে উবাই বলেছিল, “পহেলা বৈশাখ আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত শিরক এবং পহেলা বৈশাখ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাউযুল্লিাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-

اِسْتِحْلَالُ الْـمَعْصِيَةُ كُفْرٌ.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা থেকে বিরত থাকবে এবং হারাম পহেলা বৈশাখ পালন করবে” তারা অশেষ খায়ের, বরকত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে কঠিন গুনাহগার অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি”  প্রকাশ করা হলো।

 

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়ের গুরুত্ব, ফযীলত ও আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফাতাওয়া-

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস

উনার ফাযায়িল-ফযীলত ও গুরুত্ব

 

হিজরী বছর উনার মাসের সংখ্যা ১২টি। তন্মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস হচ্ছেন সমস্ত মাস উনাদের সাইয়্যিদ এবং মহান। এজন্য এই মহাসম্মানিত মাস উনাকে বলা হয়, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউওয়াল শরীফ। সুবহানাল্লাহ! কেননা এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাস হচ্ছেন স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি এই মহাসম্মানিত মাসে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, এই মহাসম্মানিত মাসে সর্বপ্রথম সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল হয়েছেন, এই মহাসম্মানিত মাসে তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক করেছেন এবং এই মহাসম্মানিত মাসেই তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাস উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তূর পাহাড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার সত্তর হাজার ভাগের এক ভাগ নূর মুবারক বর্ষিত হওয়ার কারণে জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সেখানে যেতে হয়েছিলো, উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শকৃত সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক পাওয়ার জন্য বেকারর ছিলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত মূল আরশে আযীম মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শকৃত সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক উনাদের পবিত্রতা, মর্যাদা মূল আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ কোটি গুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে সম্মানিত মূল আরশে আযীম মুবারক আরো পবিত্রতা হাছিল করেছেন, মর্যাদাবন হয়েছেন এবং অন্য সকলের উপর ফখর করেছেন। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শকৃত সম্মানিত ও পবিত্র ধূলি-বালি মুবারক উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক যদি এতো বেমেছাল হয়ে থাকে, তাহলে সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউওয়াল শরীফ মাস উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! যা কস্মিনকালেও ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ!

পূর্ব প্রকাশিতের পর

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার কতিপয় বরকতময় ঐতিহাসিক বিশেষ সম্মানিত রাত ও দিন মুবারক

(২৪)

মহাপবিত্র ১৪ই রবীউল আউওয়াল শরীফ

যা উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। সুবহানাল্লাহ!

নি¤েœ সংক্ষিপ্তাকারে উনার সম্মানিত সাওয়ানেহ ‘উমরী মুবারক আলোচনা করা হলো।

দ্বিতীয় নিসবতে আযীম শরীফ:

আর দ্বিতীয় নিসবতে আযীম শরীফ হয়েছিলো আতীক্ব ইবনে আবিদ উনার সাথে। তিনি হচ্ছেন-

عَتِيْقُ بْنُ عَابِدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ الْـمَخْزُوْمِىُّ.

অর্থ: “আতীক্ব ইবনে ‘আবিদ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে ‘উমর মাখযূমী।”

উনার একজন আবনা ছেলে আলাইহিস সালাম এবং একজন বানাত (মেয়ে) আলাইহাস সালাম দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনেন। ছেলে যিনি ছিলেন, উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ছিলেন আব্দুল্লাহ। তিনি অল্প বয়স মুবারকেই সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর যিনি মেয়ে ছিলেন উনার নাম মুবারক ছিলেন হিন্দাহ রদ্বিয়াল্লাহ তা‘য়ালা আনহা। তিনি ছাহাবীয়াতের মাক্বাম মুবারক অর্জন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা উনার সাথেই ছিলেন। পরবর্তীতে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অবস্থান মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ব্যবসা মুবারক

উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি অনেক বড় সম্পদশালিনী ছিলেন। কুরাইশ গোত্র অনেক বড় গোত্র। সমস্ত কুরাইশ গোত্রের একত্রে যত সম্পদ ছিলো, উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার এককভাবে তার চেয়ে বেশি সম্পদ মুবারক ছিলো। সুবহানাল্লাহ! উনার অনেক বড় ব্যবসা ছিলো। সুবহানাল্লাহ! ব্যবসার বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। উনার বিশিষ্ট গোলাম, খাদিম ছিলেন হযরত মাইসারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। লোক দিয়ে ব্যবসা করানো হতো। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ব্যবসার জন্য একজন বিশ্বস্ত ব্যবসা পরিচালক খুঁজছিলেন, যিনি উনার ব্যবসার আনজাম দিবেন। সুবহানাল্লাহ! যেহেতু আত্মীয়তার সম্পর্কে এবং অন্যান্য দিক থেকে খাজা আবূ ত্বালিব উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্ক ছিলো।

উনার সম্মানিত পিতা ইন্তেকালের পর উনার চাচা আমর বিন আসাদ তিনি উনাকে মোটামোটি দেখাশোনা করতেন। আর উনার সাথে খাজা আবূ ত্বালিব উনার সম্পর্ক ছিলো। ফলে তিনি বিষয়টি নিয়ে উনার সাথে আলোচনা করেছিলেন। তখন খাজা আবূ ত্বালিব তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ব্যবসা করার জন্য বলেছিলেন। উনারা রাজী হলেন।

যেহেতু তিনি ‘আল আমীন’ হিসেবে মশহূর ছিলেন। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তখনো উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়নি। কিভাবে ব্যবসা হবে। মুদারাবা অনুযায়ী।

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাল-সম্পদ মুবারক দিয়ে ব্যবসা করবেন।

অতঃপর ব্যবসা শেষে যেটা লাভ হবে তার একটা অংশ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গ্রহণ করবেন এবং আরেকটা অংশ উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি গ্রহণ করবেন। সুবহানাল্লাহ!

ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় সম্মানিত তাশরীফ মুবারক

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়াতে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিলেন। উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য উনার সাথে হযরত মাইসারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেয়া হলো। যাওয়ার পথে ব্যতিক্রম অনেক কিছু সংঘটিত হলো এবং আসার সময়ও অনুরূপ অনেক কিছু সংঘটিত হলো। তবে সেখানে ব্যবসা করতে যেয়ে, একটা গির্জার পাশে একটা গাছের নিচে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রেখেছিলেন। সেখানে একজন পাদ্রী ছিলো। তার নাম ছিলো নশতুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি সেখানে অনেক বছর যাবৎ অপেক্ষমান ছিলেন। সেখানে একটি গাছ ছিলো, এমন একটি গাছ, যেখানে একমাত্র নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ব্যতীত আর কেউ বসতে পারেন না। কোনো মতে বসার সুযোগ হয় না। সেই নশতুরা পাদ্রী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জানা ছিলো, যিনি আখেরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক সময় এখানে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক আনবেন এবং এই গাছের নিচে বসবেন। সুবহানাল্লাহ! সে এই জন্য অনেক বছর যাবৎ অপেক্ষমান ছিলো। সে গির্জায় বসে বসে লক্ষ্য করতো, গাছের কাছে কেউ যায় কিনা।

একদিন সেই পাদ্রী তিনি দেখতে পেলেন যে, সেই গাছের নিচে একজন মহাসম্মানিত বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! সেটা দেখে সেই পাদ্রী বের হয়ে আসলেন এবং উনার যে খাদিম হযরত মাইসারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, উনি কে? হযরত মাইসারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি স্বাভাবিকভাবে পরিচয় দিলেন, তিনি কুরাইশ বংশের, হাশিমী গোত্রের। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক বলে পরিচয় দেয়া হলো। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ। পাদ্রী এতে সন্তুষ্ট হলেন না। বললেন যে, আরো কিছু রয়েছে, এর মধ্যে। অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করলেন এবং পাদ্রী বললেন, হে হযরত মাইসারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি, আপনারা উনাকে চিনতে পারেননি। আমি কিন্তু উনাকে চিনতে পেরেছি। উনি হচ্ছেন হাক্বীক্বীভাবেই যিনি আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

পরবর্তীতে সেই পাদ্রী সরাসরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ যেয়ে উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ বুছা দিয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আমাদের আসমানী কিতাবে আপনার বর্ণনা মুবারক রয়েছে। আপনি হচ্ছেন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! তবে আর কিছু দিন পর আপনার সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও সম্মানিত রিসালাত মুবারক প্রকাশ পাবে। আমি কিন্তু আপনার প্রতি সম্মানিত ঈমান আনলাম। সুবহানাল্লাহ! এরপর সেই পাদ্রী নশতুরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মাইসারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার কাছে অনেক কিছু বলে, তিনি বললেন, আপনি লক্ষণ দেখবেন। আপনি বুঝতে পারবেন। সেটাই হযরত মাইসারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেছেন, যেকোনো জায়গায় ব্যবসা করতে গেলে, মাল মনে হচ্ছে সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে এবং বেশি দামে বিক্রি করা সহজ হচ্ছে। অনেক লাভ হচ্ছে এবং তিনি লক্ষ্য করলেন, খাদ্য খেতে গেলে অনেক বরকত। অল্প খাদ্য দিয়েই মনে হচ্ছে পেট ভরে যাচ্ছে। হযরত মাইসারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আরো লক্ষ্য করলেন, যত প্রখর রৌদ্রই হোক না কেন, এই রৌদ্রের আলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিসম মুবারক-এ পড়ে না। সুবহানাল্লাহ!

তিনি লক্ষ্য করলেন, আকাশে মনে হচ্ছে দুই জন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! এরূপ অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হলো। ব্যবসা করে অনেক লাভ হলো। সুবহানাল্লাহ!

অসমাপ্ত

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭