পরাধীন আমলের চেয়েও স্বাধীন দেশে হাজারগুণ বেশি শোষণ ও বৈষম্য কি কাম্য?

সংখ্যা: ২০৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

পরাধীন আমলের চেয়েও স্বাধীন দেশে হাজারগুণ বেশি শোষণ ও বৈষম্য কি কাম্য?

২২ কোটিপতি পরিবার থেকে এখন কোটিপতির সংখ্যা ২৮ হাজারের ঊর্ধ্বে অথচ হারিয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত, হচ্ছে দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র স্বাধীনতার সুফল বণ্টনে সরকারের দায়বদ্ধতা কোথায়?

 

 

সবারই জানা আছে স্বাধীনতার আগে ২২ পরিবার ছিল কোটিপতি, যার মধ্যে ৭ জন ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের। ১৯৭৫ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে যাদের হিসাব বা একাউন্ট ছিল তাদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন মাত্র ৪৭ জন। ২০০৯ সালের শেষে ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৩০ জনে। সূত্র মতে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

এর মধ্যে গত তিন বছরে বাংলাদেশে নতুন প্রায় ১০ হাজার কোটিপতি আমানতকারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এ তালিকায় শুধু ব্যবসায়ী নন, সামরিক-বেসামরিক আমলা, রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, জমির মালিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও তাদের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, ২০১০ সালে আমানতকারী কোটিপতির সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ হাজার, যা ২০০৯ সালের চেয়ে প্রায় ৪ হাজার বেশি। ২০০১ সালে এ সংখ্যাটি ছিল ৫ হাজার ৭৯৯ জন। অর্থাৎ গত ১০ বছরে দেশে কোটিপতি বেড়েছে ২২ হাজারেরও বেশি।

বলার অপেক্ষা রাখেনা দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ার কারণে ধনী-গরিবের আয় বৈষম্য যেমন বাড়ছে, তেমনি ঋণখেলাপির সংখ্যাও বাড়ছে। আর ঋণখেলাপির তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন কোটিপতিরাই।

তবে কেউ অবৈধভাবে বেনামে একাধিক হিসাবে টাকা রাখলে তাদের শনাক্ত করা কঠিন। কাজেই কোটিপতিদের প্রকৃত সংখ্যা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া দেশে এমন অনেক কোটিপতি রয়েছেন যাদের ব্যাংকে কোটি টাকা নেই, কিন্তু কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তালিকায় স্থান পায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিভিন্ন ব্যাংকে ২৩ হাজার ১৩০ জন কোটিপতির মোট আমানতের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানতকারী কোটিপতির সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬০১ জন।

এদিকে কোটিপতি আমানতকারীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোটিপতি ঋণগ্রহীতার সংখ্যাও। পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যার চেয়ে কোটিপতি ঋণগ্রহীতার সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণপ্রবাহের ৬৫ শতাংশেরও বেশি ঋণ কোটিপতিদের দখলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে কোটিপতি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৪০০ জন। ২০০৯ সালে ১ কোটি টাকার ওপর ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৪৫৮। তাদের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণ আমানতকারীদের অধিকাংশই ব্যাংকে টাকা রাখেন সঞ্চয়ের জন্য, অন্যদিকে কোটিপতি গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের চেয়ে ঋণ নেয়ার প্রবণতাই বেশি। তবে দেশে আমানতকারী কোটিপতির সংখ্যা বাড়লেও সরকারের রাজস্ব আয়ে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং দেশে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্যও প্রকট করছেন তারা।

বলাবাহুল্য, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণেই কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। আবার কোটিপতি বাড়লে বৈষম্যও বাড়ে। কারণ সেবা খাত, জমি ও নির্মাণ খাতের উন্নতি হলেও উৎপাদনশীল খাতে টাকার প্রবাহ সে তুলনায় কম। জিডিপির প্রবৃদ্ধিতেও সেটা স্পষ্ট।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ অর্থাৎ ১২৮ জনই কোটিপতি। সংসদ সদস্যদের ঘোষণা অনুযায়ী ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে ২১ জনের।

বলাবাহুল্য, কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতদরিদ্রের সংখ্যা। দারিদ্র্যবিমোচন কৌশলপত্র, সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, এনজিও কার্যক্রম, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ বহুবিধ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য কমেনি।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক সামাজিক অবস্থা ২০১০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে দৈনিক এক ডলার ২৫ সেন্ট অর্থাৎ ৪৪ টাকার নিচে আয় করে এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থাৎ ১১ কোটি জনসংখ্যার ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার লোকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এক গবেষণায়ও দেখা গেছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে গত এক বছরে ৬২ লাখ লোক নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এ সময় এই সংখ্যা সাড়ে চার শতাংশ বেড়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছেছে। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০০৭-০৮ এই দুই বছরে ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে দরিদ্রের সংখ্যা আরও বাড়বে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রমতে, ২০১১ সালে বাংলাদেশের দারিদ্রসীমা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। আয় বৈষম্যের কারণে কোনো কোনো এলাকায় হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও সম্পদের সুষম বণ্টন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে।’ সরকার একদিকে বলছে বৈষম্য, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, দ্রব্যমূল্য, অপুষ্টি, আয়, ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, অন্যদিকে দাবি করছে দারিদ্র্য কমেছে, যা স্ববিরোধী। বাস্তবতা বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ও বৈষম্য অনেক বাড়ছে।

আবার আয় বৈষম্য বেড়ে যাবার কারণে সামাজিক বৈষম্যও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। একদিকে কিছু লোক ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে অনেক মানুষ নতুন করে দরিদ্র হচ্ছে। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অবস্থানকারী মধ্যবিত্তদের একটি জাতির উন্নতির সূচক ভাবা হয় তাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে, ভেঙে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের সমাজ কাঠামো। এখন তারা হয় নিম্নমধ্যবিত্ত, নয়তো দরিদ্র। মধ্যবিত্তের অবস্থানও সম্মানজনক পর্যায়ে নেই এখন আর। সংসারের ঘানি টানার পাশাপাশি লাগামহীন ব্যয়ভার তাদের অর্থের পিছে ছুটতে বাধ্য করছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে জোট নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে মানুষ জমানো টাকা ভেঙ্গে সর্বস্বান্ত হয়ে বেঁচেছে।

বলাবাহুল্য, সে অবস্থার উত্তরণ আজও হয়নি। কিন্তু বিরোদীদলীয় নেত্রীর মুখে এ ধরনের কথা আর শোনা যায়নি।

প্রসঙ্গত বর্তমান সরকার প্রধান বলেছেন যে, জোট সরকার চরম লুটপাট করেছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিস্থিতি থেকে তারা ভালো অবস্থা অর্জন করেছেন। কিন্তু তুলনামূলক এ আপাত ভালো অবস্থা আদৌ কাম্য নয়। তুষ্ট থাকার বিষয় নয়।

কাজেই বর্তমান সরকারকে কমপক্ষে জোট সরকারের লুটপাটপূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। জনগণের নাভিশ্বাস বুঝতে হবে। তাদের অন্তরে তুষের আগুনের মতো ধিকি ধিকি করে জ্বলা উত্তাপের আঁচ অনুভব করতে হবে। তাতে দ্রব্যমূল্যের শীতল পরশ দিতে হবে।

-মুহম্মদ মাহবুবে ইলাহী

 

 

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।