পর্নোর আসক্তি সর্বনাশা মাদকের চেয়েও ভয়াবহ । দেশের শিশু-কিশোরও এখন কঠিন ভয়াবহরূপে পর্নোতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ভারত, চীনসহ অনেক বিধর্মী রাষ্ট্রেও পর্নো নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলামের দেশ, বাংলাদেশে পর্নো নিষিদ্ধে এখনো উদ্যোগ নেই কেন?

সংখ্যা: ২৫১তম সংখ্যা | বিভাগ:

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন হাত বাড়ালেই মিলছে পর্নোগ্রাফি। বিশেষ করে কিশোর থেকে উঠতি বয়সের তরুণেরা এর গ্রাহকে সহজে পরিণত হচ্ছে। দেশে যৌন নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি বাড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সালমা আলী। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য উপস্থাপন করেন। ‘২০১৫ সালে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার তথ্য উপস্থাপন ও করণীয়’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি।

ইন্টারনেটের সুবাদে ভালো-মন্দ সববিষয়েই জানা, দেখা ও শোনা এখন হাতের মুঠোয়। আর মোবাইলফোনে ইন্টারনেটে এখন খবর থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র, ভিডিও ক্লিপ সবই দেখছে মানুষ। এর সুবাদে অবাধ পর্নোগ্রাফি চলে আসছে মানুষের নজরে। ফলে এধরনের মন্দ অভ্যাসে অনেকে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্করাও আসক্ত হচ্ছে এধরনের বিভিন্ন ক্ষতিকর অভ্যাসে; যার একটি হচ্ছে পর্নোগ্রাফি। পর্নোগ্রাফির ছোবলে নৈতিকতার অবক্ষয় যেমন হচ্ছে, নারী নির্যাতন বাড়ছে, দম্পতিদের মধ্যে বিশ্বাস ভঙ্গের কারণসহ নানা ধরনের সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

ঊনিশ শতকের শেষ দিকে বাণিজ্যিকভাবে বিস্তার লাভ করে ‘পর্নো’। পুঁথি, লিপি কিংবা ভাস্কর্যে যৌনতা আবদ্ধ থাকলেও ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে আজকের এই ‘পর্নো’ শিল্পের আবির্ভাব ঘটে। ১৮৯৫ সালে প্রথমবার চলমান পর্নোগ্রাফির উদ্ভব ঘটে। উইজেন পিরো এবং আলবার্ট কার্চনারের পরিচালনায় পর্নোনির্ভর প্রথম ছায়াছবির নাম ‘লিয়ার’। পর্নোনির্ভর এই ছবিটি করার পরই নির্মাতা ভাবে যে, এসব করেও অন্যান্য ছবির মতোই আয় করা সম্ভব। এবং যথাসম্ভব দেখা যায় যে, পর্নোনির্ভর এসব ছবি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এবং তা থেকে মুনাফাও করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে পর্নো ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত ইউরোপ থেকে চারদিকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। যদিও প্রথমদিকে ফ্রান্স ও আমেরিকায় ব্যাপকতা লাভ করে।

বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে পর্নো এতটাই ব্যাপকতা লাভ করে যে, সার্চ ইঞ্জিনে প্রায় প্রতিদিন ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ শুধু ‘পর্নো’-ই খোঁজে। অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিনের মোট অনুসন্ধানকারীদের ২৫ শতাংশই পর্নো খোঁজার মানুষ।

ফলে প্রতিবছর পর্নোগ্রাফি তৈরি করে ৫৭ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে এধরনের নীলছবির নির্মাতারা। খ্রিস্টিয়া নেট সার্ভেতে দেখা গেছে- ৫০ ভাগ খ্রিস্টান পুরুষ ও ২০ ভাগ নারী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। বাংলাদেশেও শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ কুঅভ্যাস। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকাডেমি অব মেটরিমনিয়াল ল’ইয়ারস-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, ৬৮ ভাগ নারী কিংবা পুরুষ যারা ইন্টারনেটে নতুন সঙ্গী খোঁজে তাদের ৫৬ ভাগ নেটে এক পর্যায়ে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ে।

ইন্টারনেট ফিল্টার রিভিউয়ের আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন নারী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর দ্যা প্রটেকশন অব চিলড্রেন অ্যান্ড ফ্যামিলিস-এর এক হিসেবে দেখা গেছে- ৩৫ বছরের কম বয়সী যারা যৌনতায় অত্যধিক আসক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে, তাদের মধ্যে ৪০ ভাগ হচ্ছে নারী। এরা এক সময় পর্নোগ্রাফিতে মারাত্মকভাবে আসক্ত ছিলো।

ইন্টারনেট ফিল্টার রিভিউ ডটকম বলছে, পর্নোগ্রাফি দেখছে এমন দর্শকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে; যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছর। এমনকি ১১ বছরের শিশুরাও পর্নোগ্রাফির ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে। এধরনের পরিস্থিতিকে মহাভীতিকর বললেও কম হয়।

পর্নোগ্রাফি এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে, যা কার্যতঃ মহাঅশ্লীল। একটি পর্যায়ে তা অপমান ও লজ্জা বয়ে আনে। কারণ পর্নোগ্রাফি যৌনাচরণে বিকৃত পরিবর্তন এনে দেয়। অনেক চরিত্রহীন লোক অন্যকে প্রলুব্ধ করে পর্নো ছবি দেখতে। তাদের যুক্তি- পর্নো ছবি দেখলে হতাশা ও ভয় দূর হয়। নাউযুবিল্লাহ! আদতে তা মহা বদঅভ্যাস গড়ে তোলে। কারণ স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন পর্নোগ্রাফি দেখার মাধ্যমে দূর হয়ে যায়। তখন এমন সব কুআচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠে, যা সহসা টের না পেলেও যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন আর করার কিছুই থাকে না। নাঊযুবিল্লাহ! পর্নো একধরনের আসক্তি, যা দর্শককে কখনো তৃপ্ত করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে- পর্নো মস্তিষ্কে তাৎক্ষণিক উন্মাদনা তৈরি করে বলে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পাওয়া যায়, যা কোকেনের চেয়েও বেশি আসক্ত করে তোলে। পর্নোর আসক্তি মাদকের চেয়েও শক্তিশালী।

পর্নো সবসময় যৌন চাহিদাকে অসন্তুষ্ট করে রাখে। উস্কে রাখে। এতে মন হয়ে পড়ে অশান্ত ও অতৃপ্ত। মন নিত্যনতুন বিকৃতি খুঁজতে থাকে পর্নোগ্রাফি থেকে আরেক পর্নোগ্রাফিতে। নেশা যেমন মানুষকে পূর্ণতৃপ্তি দিতে পারে না। পর্নোর নেশাও তেমন এক ভিন্নধর্মী কুৎসিত আবেশ সৃষ্টি করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক অধ্যাপক বলেছে, পর্নোগ্রাফিতে আসক্তরা মানসিকভাবে চূড়ান্ত বিকারগ্রস্ত। এদের অধিকাংশই বিদ্যালয়-কলেজগামী। ফলে পাঠে মনোযোগী হওয়া এদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে এ আসক্তিই তাদের ব্যক্তিত্বে অসুস্থতার সৃষ্টি করে।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২-এর ৮/৩ ধারা অনুসারে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইলফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে সে অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদ- এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ে দ-িত হবে। এ অবস্থায় পর্নোগ্রাফি আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এবং সে সাথে কম্পিউটার ও মোবাইলফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানের নামে যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেমোরি কার্ডে পর্নোগ্রাফি লোড দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রযুক্তিগত সামগ্রীর সহজলভ্যতা তথা মোবাইল, ইন্টারনেটের কারণে সমাজের এই অবস্থা। পাশাপাশি একক পরিবার প্রথার প্রচলন ও রুমে রুমে ডিস, টিভি এসব নানা সমস্যার জন্য দায়ী বলে মনে করে অনেকেই। শুধু তাই নয়, এসমস্ত প্রযুক্তির বাইপ্রডাক্ট পর্নোগ্রাফিও এখন তরুণ-তরুণীদের হাতের মুঠোয়। ফলে ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে নীতি-নৈতিকতার বাঁধন। উঠে যাচ্ছে চক্ষু লজ্জা বা লজ্জাবোধ। ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে অবাধ মেলামেশার পরিবেশ। বিয়ে বহির্ভূত যৌনতা বিষয়ে ধর্মীয়, পারিবারিক এবং সামাজিক সংস্কার ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের কথিক ভালোবাসার সম্পর্ক মূলত দৈহিক সম্পর্কে গড়াচ্ছে। অবাধ মেলামেশা থেকে সৃষ্ট নানামুখী জটিলতার কারণে সংঘটিত হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ এবং অনেক সময় তা গড়াচ্ছে মারামারি ও খুনের মতো ঘটনায়।

সমাজ বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদসহ বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের সমাজে নিত্যনতুন মাত্রায় যেসব অনাচার এবং অনাকাঙ্কিত ঘটনা বিশেষ করে যৌনতাকেন্দ্রিক ঘটনা ঘটছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের প্রসার এবং এসবের অপব্যবহারের প্রভাব রয়েছে সামাজিক এসব অবক্ষয়ের পেছনে। চীনের পর সম্প্রতি ভারতে ইন্টারনেটে ‘পর্নোগ্রাফি’ দেখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ‘অন্তর্জালে (ইন্টারনেট) পর্নো দেখে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। মানসিক বিকারগ্রস্ততাও তৈরি হচ্ছে পর্নো’র কারণে- এমন কারণ দর্শিয়ে সম্প্রতি ভারত সরকার প্রাথমিকভাবে অন্তত ৮৫৭টি পর্নো ওয়েবসাইট চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করে। ভারত ছাড়াও বিশ্বের বহু দেশ রয়েছে, যেখানে কঠোরভাবে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পর্নোসাইটে প্রবেশ করা সেসব দেশে অনেকটা অসম্ভব। এটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য একটা বিষয়।

উল্লেখ্য, তারা কাফির ও বিধর্মী হয়েও পর্নোগ্রাফী নিষিদ্ধ করতে পারে, তবে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলামের দেশে পর্নোগ্রাফি চলে কীভাবে? কিন্তু আমাদের দেশে বিন্দু পরিমাণ কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে মানবচরিত্র এবং জাতিবিনাশী এসব বিষয়। এর ফলে উচ্ছন্নে যাচ্ছে কোমলমতি শিশু, কিশোর থেকে সব বয়সের লোকজন।

-আল্লামা মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।