মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৯৭)
হুসনুল খুল্ক বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

সংখ্যা: ২৩৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম


 

انابة(ইনাবত) উনার মাক্বাম অর্জনকারী বা হাছিলকারী ব্যক্তির ফযীলত-সম্মান

انابة (ইনাবত) গইরুল্লাহ-এর আকর্ষণ মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে খালিছভাবে রুুজ হওয়া বা মনোনিবেশ করাকে ‘ইনাবত’ বলা হয়। যিনি ইনাবতের মাক্বাম হাছিল করেন উনাকে মুনীব বলা হয়।

ইনাবত উনার মাক্বাম হাছিলকারী তথা মুনীব ব্যক্তিত্বের পরিচয় ও সুসংবাদ দান করেছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই। তিনি বলেন-

والذين اجتنبوا الطاغوت ان يعبدوها وانابوا الى الله لهم البشرى فبشر عباد.

অর্থ: যারা তাগুত তথা গইরুল্লাহর আনুগত্য হতে বিরত থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে খাছিলভাবে রুজু হয় তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে। কাজেই আমার হাক্বীক্বী বা প্রকৃত বান্দা উনাদেরকে সুসংবাদ দান করুন। (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের পরিচয় সম্পর্কে আরো বলেন-

الذين يستمعون القول فيتبعون احسنه اولئك الذين هداهم الله واولئك هم اولو الالباب.

অর্থ: “যারা গভীর মনোযোগ সহকারে কথা (মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ-নিষেধ, হুকুম-আহকাম) শুনেন এবং অতি উত্তম বিষয়টির অনুসরণ করেন মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকেই হিদায়েত তথা সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। আর উনারাই হচ্ছেন প্রকৃত বুদ্ধিমান তথা জ্ঞানী ব্যক্তি। (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

ইনাবতের মাক্বাম হাছিলকারী ব্যক্তিত্বকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা খাছভাবে তা’লীম তরবিয়ত দান করে থাকেন। উনারা ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্ত হন। আর উনারাই হচ্ছেন প্রকৃত বুদ্ধিমান তথা জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব।

সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে নিজের বান্দা বলে সর্বাধিক স্নেহমাখা খিতাব বা সম্বোধন করেছেন।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “আমি আমার নেককার বান্দাগণের জন্য এমন সব নিয়ামতরাজী রেখেছি যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি, কোন মানুষ তা অন্তরে চিন্তাও করেনি।” সুবহানাল্লাহ!

সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وازلفت الجنة للمتقين غير بعيد هذا ما توعدون لكل اواب حفيظ من خشى الرحمن بالغيب وجاء بقلب منيب ادخلوها بسلام ذلك يوم الخلود. لـهم ما يشائون فيها ولدينا مزيد.

অর্থ: সেদিন সম্মানিত জান্নাত উনাকে মুত্তাক্বী বান্দাগণের নিকটবর্তী করা হবে। বলা হবে, ইহা সেই জান্নাত যা সকল আওয়াবে হাফিজ তথা সবকিছু পরিত্যাগ করত: মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু এবং উনার আদেশ নিষেধের প্রতি সজাগ দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বগণকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। যাঁরা না দেখে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করতো এবং ক্বলবে মুনীব তথা সার্বক্ষণিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী অন্তর নিয়ে এসেছে। আর উনাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে আপনারা ছহীহ সালামতে শান্তিময় চিরস্থায়ী সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করুন।

আর এটাই অনন্তকাল বসবাসের জন্য প্রবেশ করার দিন। সেখানে অন্তর যা কিছু আকাঙ্খা করবে তাই পাবে। আর আমার কাছে রয়েছে এর চেয়েও আরো অধিক নিয়ামত। (পবিত্র সুরা ক্বাফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১-৩৫)

ইনাবতের মাক্বাম হাছিলকারী “ক্বলবে মুনীব” তথা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সার্বক্ষণিক অন্তরের সম্পর্ক রক্ষাকারী মুত্তাক্বীগণ সম্মানিত জান্নাত লাভ করার পরও যে অতিরিক্ত পুরষ্কার লাভ করবে পবিত্র আয়াত শরীফে উহাকে ‘মাযীদ’ বলা হয়েছে।

বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু এবং হযরত জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেছেন এই মাযীদ বা বাড়তি নিয়ামত হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার তথা সাক্ষাত মুবারক। যা জান্নাতীগণ লাভ করবে।

বিশেষ দ্রষ্ঠব্য: গত সংখ্যায় প্রকাশিত আলোচ্য আর্টিকেলটির ১ কলাম শেষ প্যারার ৫ম লাইনে “তাতে তৃপ্ত হওয়া উচিত” এর পরিবর্তে “তাতে তৃপ্ত না হওয়া উচিত” পড়তে হবে।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)