মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৬৮)

সংখ্যা: ২০৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

প্রসঙ্গ : ফানা ও বাক্বা

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সুলত্বানুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় মুরীদ সুলত্বানুল আওলিয়া হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইছলাহ বা আত্মশুদ্ধিতার বিষয়টি পরখ করতে চাইলেন। সে লক্ষ্যে একদিন একজন মুরীদকে বললেন, “আজ তার কাঠের বোঝাটি কিছুটা হালকা করে বেঁধে দিও। আর কাঠগুলো বাঁধন খুলে পড়ে গেলে লাঠি দিয়ে আঘাত করতঃ বলবে, বেয়াদব! শায়েখের কাঠ কিভাবে বহন করতে হয় তা জান না?

উক্ত মুরীদ সেটাই করলেন। পরবর্তীতে শায়েখ মুরীদকে জিজ্ঞাসা করলেন- কি! কাঠের বোঝা হালকা করে বেঁধে দিয়েছিলে? মুরীদ সবিনয়ে ইতিবাচক জাওয়াব দিলেন। তিনি কি কোন কিছু বলেছেন? সেই মুরীদ বললেন, জি-না। তেমন কিছু বলেনি, শুধু বলেছেন, হায় বল্খ। অর্থাৎ বাদশাহীর কথা স্মরণ করে আফসোস করেছেন। সুলত্বানুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত ফুযাইল ইবনে আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আগামী কাল থেকে উনাকে খিদমতে ধারা পরিবর্তন করে দাও। উনার তা’লীম তরবিয়তের আরো প্রয়োজন রয়েছে। আগামীকাল থেকে বাথরুমের ময়লা পরিষ্কার করতে বলো।

পরের দিন থেকে উনার খিদমতের ধারা পরিবর্তন হলো- বাথরুমের ময়লা পরিষ্কারকরণ।”

স্মরণীয় যে, আগেকার দিনে এতো সুন্দর ও সহজ ব্যবস্থা ছিল না। তখনকার দিনে বাথরুমে প্যানের স্থলে মাটির পাত্র রাখা হতো। সেখানে ময়লা জমা হতো। পরে সেগুলো অন্যত্র ফেলে দেয়া হতো। সুলত্বানুল আওলিয়া হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যথাযথভাবে সেই খিদমতের আঞ্জাম দিতে থাকেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সুলত্বানুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত ফুযাইল ইবনে আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি আত্মশুদ্ধির বিষয়টি যাহিরীভাবে আবারো যাচাই-বাছাই করার জন্য জনৈক মুরীদকে বললেন, “ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন ময়লার সেই পাত্র মাথায় নিয়ে যেতে থাকবেন তখন তুমি পিছন দিক থেকে লাঠি দিয়ে জোড়ে আঘাত করবে যাতে পাত্রটি ভেঙ্গে যায়। সাথে সাথে উনাকে বেত্রাঘাত করবে এবং বলবে যে, বেয়াদব! শায়খ উনার খিদমত কিভাবে করতে হয় তা জান না!

মুরীদ শায়খ উনার নির্দেশ মতো কাজ করলেন। তাতে উনার পাত্র ভেঙ্গে ময়লা দিয়ে সমস্ত শরীর একাকার হয়ে গেল। পরে যখন শায়খ বিষয়টি জানতে চাইলেন তখন সেই মুরীদ বিস্তারিত ঘটনা জানালেন। বললেন, আমার আচরণে তিনি নিজেকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছেন এবং বলছেন, ভাই! ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করুন। ওয়াদা দিচ্ছি আর কোনদিন এরূপ বেয়াদবি করবো না।

একথা শুনে সুলত্বানুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন। সুলত্বানুল আওলিয়া হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খিলাফত দিয়ে হিদায়েতের কাজে মনোনিবেশ করার নির্দেশ দিলেন।

উল্লেখ্য যে, সুলত্বানুল আওলিয়া, হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম রহমতুল্লাহি তিনি শায়খ বা মুর্শিদ উনার খিদমতে ফানা হয়েছিলেন এবং শায়খ উনার ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতঃ পরিশেষে বাক্বাও লাভ করেছিলেন যা সকল সালিকের জন্য অমূল্য নছীহত।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)