মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৬৭)

সংখ্যা: ২০৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

প্রসঙ্গ: ফানা ও বাক্বা

পূর্ব প্রকাশিতের পর

আফযালুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, নফসে আম্মারা স্বভাবই সম্মান ও কর্তৃত্বের প্রত্যাশী এবং নিজের সাথীগণ হতে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার আশা পোষণকারী। সে চায় যে, কুল-কায়িনাতের সকলই যেন তার মুখাপেক্ষী ও অনুগত হয়। আর সে কারো অধীন না হয়। এটা যে, খোদায়ী দাবি এবং আল্লাহ পাক উনারই সাথে সমকক্ষতা, সে নাদান তা বুঝে না। এমনকি ওই নাদান (মূর্খ) সেই সমকক্ষ হয়েও যেন সন্তুষ্ট নয়। সে আল্লাহ পাক উনার উপরেও কর্তৃত্ব করতে চায় যেন আল্লাহ পাক তিনিও তার আদেশ পালন করে চলেন। নাঊযুবিল্লাহ!

হাদীছে কুদসী শরীফ-এ বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তোমার নফসের সাথে তুমি শত্রুতা কর, যেহেতু সে আমার সাথে শত্রুতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।” কাজেই, মান-সম্মান, কর্তৃত্ব, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং তাকাব্বুর (বড়ত্ব) ইত্যাদি আশা পূর্ণ করতঃ তাকে প্রতিপালন করা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শত্রুকে সাহায্য করারই নামান্তর।

হাদীছে কুদসী শরীফ-এ আরো আছে, আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “অহঙ্কার আমার চাদর এবং বড়ত্ব আমার ইযার (সেলাইবিহীন লুঙ্গি) স্বরূপ। যদি কেউ এর কোন একটি নিয়ে বিবাদ করে আমি তাকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আমি কাউকে পরওয়া করি না।”

দুনিয়া হাছিলে লিপ্ত ব্যক্তি নফসের আকাঙ্খা পূরণের সহায়তাকারী বলে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টির রোষানলে পড়ে অভিশাপগ্রস্ত। যে ব্যক্তি শত্রুকে সাহায্য করে সে অভিশাপের উপযোগী। এ কারণে আল্লাহ পাক উনার মুহতাজীকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গৌরবের কারণ বলেছেন। যেহেতু আল্লাহ পাক উনার মুহতাজীর মধ্যে নফসের কামনা পূর্ণ হয় না বরং সে কোণঠাসা হয়ে থাকে।

নফসে আম্মারাকে অক্ষম ও ধ্বংস করতঃ শরীয়তের হুকুম-আহকামসমূহ প্রতিপালনের দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ পাক তিনি নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পাঠিয়েছেন। নফসের অসৎ আকাঙ্খা দূর করণার্থে রয়েছে শরীয়ত। কাজেই, যে পরিমাণ শরীয়ত প্রতিপালিত হবে সে পরিমাণ নফসের আকাঙ্খা দূর হবে। এ কারণেই শত-সহ¯্র বছরের কাল্পনিক বা মনগড়া রিয়াজত-মাশাক্কাত করা হতে শরীয়তের একটি হুকুম পালন করাই শ্রেষ্ঠতর। শরীয়তের হুকুম পালন না করলে তার নফসের আকাঙ্খা আরো শক্তিশালী হয়। হিন্দুযোগী সন্ন্যাসীরা কঠোর ব্রত পালন করতে অবহেলা করে না, অথচ তা দ্বারা নফসকে শক্তিশালী করা ব্যতীত তাদের কোনই ফল লাভ হয় না। নফসকে সংশোধন করণার্থে শরীয়তের আদেশ অনুযায়ী যাকাতের নিয়তে এক দিরহাম খরচ করা স্বেচ্ছায় হাজার মুদ্রা দান করা হতে উত্তম। আর শরীয়তের আদেশ অনুযায়ী ঈদের দিন পানাহার করা সারা বছর রোযা রাখা হতে শ্রেষ্ঠ। একইভাবে কাইলুলা তথা দুপুরের খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া হাজার বছর নফল ইবাদত হতে উত্তম।

কাজেই, যতক্ষণ পর্যন্ত নফস পবিত্র না হবে এবং নিজের নেতৃত্বের মোহ হতে মুক্তি না পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত কামিয়াবী লাভ করা সম্ভব হবে না। অতএব, নফসের এই ব্যাধিমুক্তির চেষ্টা করা একান্ত কর্তব্য। (মাকতুবাত শরীফ- ১/১০৭)

উল্লেখ্য যে, ওলীআল্লাহ তথা মুর্শিদ ক্বিবলা বা শায়খেগণ যুগে যুগে সেই তা’লীম-তরবিয়তই স্বীয় মুরীদ-মু’তাকিদ, মুহিব্বীনগণকে দিয়ে থাকেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ইছলাহ বা আত্মশুদ্ধিতা পূর্ণতায় না পৌঁছে ততদিন নিজের ছোহবতে রাখেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সুলত্বানুল আওলিয়া হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন বল্খের বাদশাহ। ওয়ারিশ সূত্রেই তিনি এ বাদশাহী পেয়েছিলেন। তিনি একদিন শিকার করার জন্য জঙ্গলে গেলেন। একটি হরিণ দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি সেটি শিকার করতে উদ্যত হলেন। হরিণটি বলে উঠলো, ইবরাহীম! আপনি আমাকে শিকার করতে পারবেন না। বরং আমিই আপনাকে শিকার করার জন্য প্রেরিত হয়েছি। হে ইবরাহীম! আপনি এত গাফিল? এসবের জন্য কি আপনি দুনিয়াতে এসেছে? হরিণের একথা শুনে তিনি দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ হলেন যে, আর কোন দিন লোকালয়ে ফিরে যাবেন না। বাদশাহী মায়াজালে আর আবদ্ধ হবেন না। তিনি দীর্ঘ নয় বছর একটি গুহাতে আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে কাটিয়ে দিলেন। অতঃপর সুলত্বানুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত ইখতিয়ারের লক্ষ্যে উনার দরবার শরীফ-এ হাযির হলেন। উনার খিদমতের দায়িত্ব পড়লো বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করা। একাজে অনেক দিন অতিবাহিত হলো।

(অসমাপ্ত)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)