সারাবিশ্ব যখন মরণফাঁদ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্জন করছে তখন পরিবেশ ও অর্থনীতিকে চরম হুমকির মুখে রেখে বাংলাদেশে তৈরী হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১ লক্ষ ১ হাজার কোটি টাকার ঋণে সুদ দিতে হবে ৭৮ হাজার কোটি টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে- দেশের কাঁধে বিশাল ব্যয়ের বোঝা চাপানো যাবে না। দেশবাসীকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া যাবে না।

সংখ্যা: ২৬৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

গত ১৪ জুলাই ২০১৮ ইয়াওমুস সাবত বা শনিবার ঈশ্বরদীর রূপপুরে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে’র দ্বিতীয় ইউনিটে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। আশা করি ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এ কেন্দ্র উৎপাদিত বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। ২০১৭ সালের ৩০ শে নভেম্বর আমি এই প্রকল্পের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করেছিলাম। সাত মাসে প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আজকে কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে শুরু হলো দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ।”

উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে। এই ব্যয়ের ১০ শতাংশের অর্থায়ন করছে সরকার আর বাকি ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসেবে দিচ্ছে। রূপপুুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার ঋণ নিচ্ছে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। তবে এ জন্য সুদে-আসলে রাশিয়াকে ফেরত দিতে হবে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় রাশিয়ার কাছ থেকে নেয়া ৯১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার শুধু সুদ বাবদই সরকারকে ফেরত দিতে হবে ৬৯ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঋণের টাকা প্রদানের ১০ বছর পর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে। ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে ঋণের কিস্তি দেয়া শুরু করতে হবে। প্রতিবছরের ১৫ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সমপরিমাণ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

রাশিয়ার ঋণ, প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ সহায়তার উপর নির্ভর করে বিপুল ব্যয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে সচেতন মহলে বহুদিন ধরেই উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে যে, এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইতিহাস সাক্ষী, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে প্রলয়ঙ্করী ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয় মানুষ ও পরিবেশের। চেরনোবিল, থ্রি মাইল আইল্যান্ড কিংবা সাম্প্রতিক ফুকুশিমা-এর মতো বড় বড় দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রযুক্তির দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোতে, যারা নিজস্ব দক্ষতাকে কেন্দ্র করে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছিল। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজষ্ক্রিয় দূষণের ঝুঁকি থাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কাঁচামাল ইউরেনিয়াম থেকে উৎপন্ন তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য ১০ হাজার বছর পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। বলা হচ্ছে- রাশিয়া এই বর্জ্য বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এই ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি এখনো স্বাক্ষর হয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে সুদূর রাশিয়ায় নিরাপদে এই বর্জ্য কিভাবে নিয়মিত পরিবহন করা হবে সে বিষয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

প্রসঙ্গত ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিলে ঘটে পারমানবিক দূর্ঘটনা। চেরনোবিল দূর্ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে চেরনোবিল এইডস, চেরনোবিল পা, চেরনোবিল হৃদপিন্ড, চেরনোবিল থাইরয়েড, চেরনোবিল স্মৃতিবিভ্রাট নামের নানা রোগের জন্ম দিয়েছে। এ দূর্ঘটনার কারণে ১৯৯০-২০০৪ সাল পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা জনিত কারণে রাশিয়ায়, বেলারুশে, ইউক্রেনে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে, ২০৫৬ সাল পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তাজনিত ক্যান্সারে বেলারুশ, ইউক্রেন, রাশিয়া, জার্মানী, রোমানিয়া, অষ্ট্রিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালীতে আরো লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। এছাড়া তেজস্ক্রিয়তার কারণে বেলারুশে ২৬৫,০০০ হেক্টর, ইউক্রেনে ১৩০,০০০ হেক্টর এবং রাশিয়ায় ১৭,০০০ হেক্টর কৃষিজমি ইতোমধ্যে চাষাবাদের অনুপযুক্ত বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

চেরোনবিলের পাশাপাশি ২০১১ সালে সুনামির আঘাতে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এবং এর তেজষ্ক্রিয়তা থেকে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে এ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলো এখন চিন্তা করছে কীভাবে পারমাণবিক বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার থ্রি মাইল আইল্যান্ডে ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ একটি পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনার পর এখন পর্যন্ত নতুন আর কোনো পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৮০ সালে থ্রি মাইল আইল্যান্ড ঘটনার পরপরই সুইডেন রেফারেন্ডামে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর সবাই ধরে নিয়েছিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিন বুঝি এবার ফুরাচ্ছে। জার্মানি কেবল নতুন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধই করেনি, সেই সঙ্গে একে একে বন্ধ করে দিচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রগুলো। বেলজিয়াম, তাইওয়ান, জাপানও ক্রমে সরে আসছে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে। এমনকি নিজস্ব বিদ্যুতের শতকরা ৭৭ ভাগ পরমাণু শক্তি থেকে পাওয়া ফ্রান্সের জনগণ সেদেশের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারকে ব্যাপকভাবে চাপ দিচ্ছে।

যেকোনো পারমানবিক প্রকল্পে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করলেও যেকোনো সময় সামান্য ভুলে ঘটে যেতে পারে বড় রকম দূর্ঘটনা। পারমানবিক প্রকল্পে সবচেয়ে হুমকি ধরা হয় ভূমিকম্পকে। বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্প প্রবণ এবং বন্যা পীড়িত দেশ। রূপপুর প্রকল্প এলাকাটি একটি ভূচ্যুতির উপর অবস্থিত। এ ধরনের ভূচ্যুতি ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু বা উৎসস্থল হয়ে থাকে। বলা হচ্ছে এ পারমানবিক প্রকল্পটি ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। কিন্তু আমরা দেখেছি প্রযুক্তিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দেশ জাপান নিজস্ব পারমানবিক প্রকল্পকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়নি এবং জাপান এখন তার সবগুলো পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। আর রাশিয়ার ভিভিইআর-১০০০ মডেলের প্রকল্পে নিম্নমানের যন্ত্রাদি সরবরাহের খবর নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে দেশের যে ভয়াবহ ক্ষতি হবে সে বিষয়টি সাধারণ জনগণ বুঝতে পারলেও দেশের সরকার তা ইচ্ছাকৃতভাবে বুঝতে চাইছেনা বা বুঝেও না বোঝার ভান করছে। অথচ রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হবে। তাই মানুষও প্রকৃতি বিনাশী এই সর্বনাশা প্রকল্প নির্মাণকাজ এক্ষুনি বন্ধ করা উচিত।

-মুহম্মদ আরিফুল্লাহ, ঢাকা

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।