সুওয়াল জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৩৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুরা।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবঞ্জ।

সুওয়াল: মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : (পূর্ব প্রকাশিতের পর ৮)

খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদাহ হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অবশ্যই অবশ্যই  সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা তথা ১১তম খলীফা হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম। (সুবহানাল্লাহ) ঃ

ধারাবাহিকতার দিক থেকে যেহেতু ছিদ্দীক্বে আকবর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ১ম খলীফা, ফারূক্বে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্ত্বাব আলাইহিস সালাম তিনি ২য় খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম তিনি ৩য় খলীফা, আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ৪র্থ খলীফা, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি ৫ম খলীফা, ছাহিবুস সির সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৬ষ্ঠ খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৭ম খলীফা, হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৮ম খলীফা, আমীরুল মু’মিনীন, শহীদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৯ম খলীফা, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ১০ম খলীফা এবং হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি ১২তম খলীফা। সুতরাং সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল উমাম হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মুবারক ধারাবাহিকতার দিক থেকে অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা তথা ১১তম খলীফা হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম। এখানে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। (সুবহানাল্লাহ)

কেননা উনার সম্মানিত শান মুবারক-এ মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘আমার যত লক্বব মুবারক রয়েছে সমস্ত লক্বব মুবারক উনার অধিকারী হচ্ছেন আমার সুযোগ্য আওলাদ খলীফাতুল উমাম হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম তিনি। (সুবহানাল্লাহ) উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার হুবহু ক্বায়িম মাক্বাম করেছেন।’ (সুবহানাল্লাহ)

খলীফাতুল উমাম আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যে, সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাছ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা তথা ১১তম খলীফা হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম, তার আরো একটি অতি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের মাঝে, সমস্ত কায়িনাতের মাঝে উনার সুযোগ্য আওলাদ ১১তম খলীফা হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম উনার একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর সেই সম্মানিত বিশেষ লক্বব মুবারকখানা হচ্ছে, ‘খলীফাতুল উমাম’। (সুবহানাল্লাহ) এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছে, সমস্ত উম্মত তথা সমস্ত কায়িনাতের খলীফা। (সুবহানাল্লাহ) অর্থাৎ ১১তম খলীফা, খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার পক্ষ থেকে সমস্ত উম্মতের জন্য, তামাম বিশ্ববাসীর জন্য, সমস্ত কায়িনাতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ খলীফা। (সুবহানাল্লাহ) তিনি সারা পৃথিবীব্যাপী, সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। তাই উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক হচ্ছে, ‘খলীফাতুল উমাম’। (সুবহানাল্লাহ)

সুতরাং এই কথা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, অবশ্যই অবশ্যই আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন বিশেষ খলীফা তথা ১১তম খলীফা হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম । (সুবহানাল্লাহ)

এটাই হচ্ছে সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ সম্মত সর্বোত্তম বিশুদ্ধ ফায়সালা। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আওলাদে রসূল মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুবারক অনুযায়ী নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার  সম্মানার্থে, উনার হুবহু ক্বায়িম মাক্বাম হয়ে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি সীমাহীন প্রতাপ ও ব্যাপকতার সাথে শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ব্যতীত সারা কায়িনাত বলতে যা বুঝায়, সেই সারা কায়িনাতব্যাপী সুদীর্ঘ ৩০-৪০ বৎসর যাবত সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। (সুবহানাল্লাহ) আর উনার পর উনার হুবহু নক্বশা মুবারক হয়ে, কায়িম মাক্বাম হয়ে উনার অনুকরণে উনার সুমহান আওলাদ, খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহি সালাম তিনিও সারা পৃথিবীব্যাপী, সারা কায়িনাতব্যাপী সুদীর্ঘ ৩০-৪০ বৎসর যাবত সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। (সুবহানাল্লাহ) উনার আযীমুশ শান এই মহাসম্মানিত খিলাফত ‘আলা মিনহাজিন নুবুওওওয়াহ মুবারক উনাকে’ কেউ বিনষ্ট করতে পারবে না। কেননা তিনি হচ্ছেন সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে ১১ তম খলীফা তথা মহান খলীফা আওলাদে রসূল হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম। (সুবহানাল্লাহ) উনার মুবারক শানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,

وَاَمَّا الْـمَنْصُوْرُ فَلَا تُرَدُّ لَهٗ رَايَةٌ

“আর যিনি মহান খলীফা হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম হবেন, উনার সম্মানিত খিলাফতী নিশান মুবারক উনাকে কেউ অবনত করতে পারবে না। অর্থাৎ উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনাকে কেউ বিনষ্ট করতে পারবে না।” (সুবহানাল্লাহ) (জামিউল আহাদীছ ৭/৪২০, ১৭/২৫৭, বাইহাক্বী ও আবূ নাঈম উনাদের বরাতে সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১০/৯২)

অন্যদিকে তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেই সম্মানিত আখাছ্ছুল খাছ খুছূছিয়াত মুবারক উনার অধিকারী, যেটা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শান মুবারক-এ বলা হয়েছে,

تَوَجَّهْ حَيْثُ شِئْتَ فَاِنَّكَ الْـمَنْصُوْرُ

“(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম!) আপনি যে দিকে ইচ্ছা ভ্রমণ করুন। (আপনার শত্রুরা আপনার কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।) কেননা আপনি হচ্ছেন, আল মানছূর তথা চরম গইবী মদদপ্রাপ্ত।” (সুবহানাল্লাহ) (আবূ নাঈম শরীফ, খছাইছুল কুবরা শরীফ লিস সুয়ূত্বী ১/৩৮ ও ১০৫, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১/১৬৭, জামউ ওয়াসায়িল ফী শরহে শামাইল, তুহফাতুল আহওয়ায ৯/৫৪)

কাজেই এই আখাছ্ছুল খাছ খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক উনার অধিকারী মহান খলীফা, খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহাযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে যারা শত্রুতা পোষণ করবে, উনার যারা বিরোধীতা করবে, তারা কস্মিনকালেও উনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না এবং উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনারও কোন ক্ষতি করতে পারবে না; বরং তারা নিজেরাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে, তাদের অস্থিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। (সুবহানাল্লাহ)

মুহম্মদ শাফায়াত হুসাইন

দিনাজপুর

সুওয়াল: আপনারা বলে থাকেন, ‘লাইলাতুর রগায়িব’ অন্যান্য দিন ও রাত্রি থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? অথচ অধিকাংশ মুসলমান বিশ্বাস করে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ অন্য রাতের তুলনায় বেশি ফযীলতপূর্ণ। কোনটি সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: প্রথমত: সমস্ত ইজ্জত-হুরমত, ফযীলত, ছানা-ছিফত ও প্রশংসার মালিক স্বয়ং খালিক, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা  তিনি।

যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان العزة لله جميعا وهو السميع العليم

অর্থ: নিশ্চয়ই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। (পবিত্র সূরা ইউনুস: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

এরপর মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। অত:পর যারা মু’মিন-মুসলমান উনারা ইজ্জত-সম্মানের মালিক বা অধিকারী যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ولله العزة ولرسوله وللمؤمنين ولكن الـمنافقين لا يعلمون

অর্থ: আর মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং মু’মিন মুসলমানদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা এ সম্পর্কে আদৌ অবগত বা অবহিত নয়। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)

মূলত: সৃষ্টিরাজির ভিতরে সবচাইতে ইজ্জত-সম্মানের অধিকারী হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। এরপর সৃষ্টিরাজির মধ্যে ব্যক্তি হোক, বস্তু হোক, স্থান হোক, সময় হোক যার যতবেশি তায়াল্লুক-নিসবত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তার ততবেশি ফযীলত বা সম্মান। সুবহানাল্লাহ!

উদাহরণস্বরূপ, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরেই হচ্ছে উনাদের মর্যাদা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কায়িনাতের সকলেই ও সবকিছুই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। আর সমস্তু উম্মতের অর্থাৎ কায়িনাতের মা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা পবিত্রা আহলিয়া- আযওয়াজ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, ‘লাইলাতুল ক্বদর’ ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইজ্জত-সম্মান, ফযীলতের কারণেই। অতীতের কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের জন্য ‘লাইলাতুল ক্বদর’ ছিল না।

তদ্রƒপ ‘লাইলাতুর রগায়িব’ এ ফযীলতপূর্ণ রাতটি অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন ও রাতের চেয়ে বেশি ফযীলতের অধিকারী হয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই। সুবহানাল্লাহ!

এ রাতটি অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতের চাইতে বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত এই কারণে যে, এই রাতের সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্ক-তায়াল্লুক, নিসবত রয়েছে। এ রাতটিই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে দুনিয়ার যমীনে আগমন করবেন তার আগাম শুভ লক্ষণ প্রকাশ করেছিল। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, এ রাতটি না হলে অন্যান্য রাত ও দিনের ফযীলত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেতো না। তাহলে এ রাতটি কেন অন্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও ফযীলতপূর্ণ হবে না? অবশ্যই হবে।

স্মরণীয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্যতম রজব মাসের পহেলা তারিখ এবং পহেলা জুমুআর রাতটিই হচ্ছে লাইলাতুর রগায়িব। এই মহিমান্বিত ও অতীব সম্মানিত রাতটিতে কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, ত্বাহিরাহ, তইয়িবাহ, রদ্বিয়াহ, মারদ্বিইয়াহ, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুস সাইয়্যিদাত হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম উনার পাক-পবিত্রতম খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেন। সুবহানাল্লাহিল আকবার! অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম সৃষ্টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওজূদ মুবারক- নূর মুবারক সম্পূর্ণ কুদরতীভাবে সাইয়্যিদুল বাশার সাইয়্যিদুস সাদাহ হযরত খাজা আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট থেকে উনার পুত-পবিত্রা আহলিয়া সাইয়্যিদাতুস সাইয়্যিদাত হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট স্থানান্তরিত হন। সুবহানাল্লাহ!

মূলত ‘লাইলাতুর রগায়িব’ এ ফযীলতপূর্ণ মর্যাদাম-িত রাতটির নিসবত বা সম্পর্ক যেহেতু সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে মুবারক তাশরীফ আনার সাথে তাই এ রাতের মর্যাদা ‘লাইলাতুল ক্বদরের চাইতেও লক্ষ কোটিগুণ বেশি।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انا اعطيناك الكوثر

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার হাদিয়া করেছি। (পবিত্র সূরাতুল কাওছার: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন ও লিখেছেন। তবে যিনি মুফাসসিরকুল শিরমণী রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ‘কাওছার’ শব্দের ব্যাখ্যায় দুটি অর্থ বর্ণনা করেছেন। একটি হলো ‘হাউযে কাওছার’ যার পানি স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাকে পান করার অনুমতি দিবেন কেবল তিনিই পান করবেন এবং সেই পানি পান করার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর পিপাসা লাগবে না। আর কাওছার-এর আরেকটি অর্থ বর্ণনা করেছেন ‘খইরে কাছীর’ তথা অধিক উত্তম বা ভালাই বা কল্যাণ। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রহমতপূর্ণ ছোহবতে, নিসবতে, স্পর্শে যা কিছু এসেছে সবকিছুই সবচেয়ে উত্তম, সর্বোৎকৃষ্ট হয়েছে এবং সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

আর এ কারণেই লাইলাতুর রাগায়িব অন্য সকল ফযীলতপূর্ণ দিন ও রাতের চেয়ে সবচেয়ে বেশী ফযীলতপূর্ণ রাত হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, লাইলাতুল ক্বদরের ফযীলত সম্পর্কে সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে সত্যিই। আর লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার বর্ণনা যদিও সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ নেই; তবে এ কথা অবশ্যই সত্য যে, লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার মাধ্যমে যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে মুবারক তাশরীফ গ্রহন করার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়েছে তাই এ রাতটির মর্যাদা লাইলাতুল ক্বদর অপেক্ষা লক্ষ-কোটি গুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি যমীনে মুবারক তাশরীফ গ্রহন না করতেন তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, লাইলাতুল ক্বদরসহ কোন ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতেরও আগমন ঘটতো না। তাই, অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অনেকেই ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাইলাতুর রগায়িব হচ্ছে সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতের চাইতেও শ্রেষ্ঠ এবং ফযীলতপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ!

যেমন বিশেষ করে এ বিষয়ে ফতওয়া প্রদান করেছেন হিজরী তৃতীয় শতকের মহান মুজাদ্দিদ, হাম্বলী মাযহাবের যিনি ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, “লাইলাতুর রগায়িব শরীফ-উনার ফযীলত শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলত পূর্ণ দিন-রাতের চেয়েও বেশি।” তিনি যখন এ বক্তব্য পেশ করলেন, তখন সমসাময়িক আলিম-উলামা, ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা উনার নিকট এসে বললেন,  হুযূর! শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির ফযীলত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু লাইলাতুর রগায়িব শরীফ বা শবে রগায়িব শরীফ উনার বর্ণনা তো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই, তাহলে কিভাবে এ রাত্রির ফযীলত উল্লিখিত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়ে বেশি হতে পারে? তখন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা কি জানেন, লাইলাতুর রগায়িব শরীফ কোন রাত্রিকে বলে? উনারা জানেন না বলে স্বীকার করলেন। তখন তিনি লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার পরিচয় তুলে ধরে বললেন যে, লাইলাতুর রগায়িব শরীফ হচ্ছে ঐ রাত্রি যে রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক এ কুদরতীভাবে তাশরীফ মুবারক নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এ রাত্রির ফযীলত অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়ে অনেক বেশি এই জন্য যে, যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র খিদমত মুবারক এ তাশরীফ মুবারক না নিতেন এবং অতঃপর যমীনে তাশরীফ মুবারক না আনতেন তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত কোনটিই আসতোনা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের ওসীলাতেই শবে ক্বদর, শবে বরাতসহ সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রি এসেছে। কাজেই লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার ফযীলত সবচেয়ে বেশি। সুবহানাল্লাহ! যখন তিনি লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার পরিচয় ও ফযীলত তুলে ধরলেন, তখন সকল আলিম-উলামা, ইমাম-মুজতাহিদগণ নির্দিধায় মেনে নিলেন।

অতঃপর একই ফতওয়া প্রদান করেন হিজরী ষষ্ঠ শতকের মহান মুজাদ্দিদ, যিনি সুপ্রসিদ্ধ ক্বাদিরিয়া তরীক্বার ইমাম- গওছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

অতঃপর এ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম যিনি হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের প্রচার প্রসার করেছেন, যিনি ক্বাদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযুর্গ, ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও অনুরূপ ফওতয়া প্রদান করেন।

অতঃপর যিনি বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর  মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদ আ’যম, আওলাদে রসুল ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। তিনি উনার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ এবং দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনাদের মধ্যে লাইলাতুর রগায়িব শরীফ সবচাইতে বেশি ফযীলতপূর্ণ রাত সে সম্পর্কে মুবারক লিখনী প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, অনুসরণীয় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের মতের বিপরীতে সাধারণ মু’মিন মুসলমানের বিশ্বাস ও মতামত আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

(দলীলসমূহ: গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, রযীন, মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, আল বাইয়্যিনাত শরীফ, আল ইহসান শরীফ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইল, ফাদ্বায়িলূশ শুহূরি ওয়াল আইইয়াম ইত্যাদি)

মুহম্মদ আবু মূসা

নওগাঁ

সুওয়াল: মাসিক মদীনা মার্চ ২০১৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব…. ওয়াজিব নয়।”

জওয়াব: “আযানের জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।

যেমন- হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আলাদ দুররিল মুখতার কিতাবের ১ম খ-ের ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وعلى الـمعتمد يجيب باللسان

অর্থ : وعلى الـمعتمد নির্ভরযোগ্য মতে মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

يجيب عل السامعين عند الاذان الاجابة وهى ان يقول مثل ما قال الـمؤذن … وهو الصحيح.

অর্থ: “আযানের সময় আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের জাওয়াব এভাবে দিবে যে, আযানে মুয়াযযিন যা বলে আযানের শ্রোতা তাই বলবে। … ইহাই صحيح বা বিশুদ্ধ মত।”

“নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ظاہر یہ ہے کہ زبان سے جواب دینا بھی واجب ہے تاکہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کے ظاہر حکم کی اطاعت ہو کیونکہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا ہے کہ جب تم موذن کی اذان سنو تو جس طرح وہ کہے تم بھی کہو اور اس ظاہر حکم سے اعتراض کرنے کا کوئی قرینہ ںہیں.

অর্থ: “প্রকাশ্য বর্ণনা অনুযায়ী মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। তাহলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রকাশ্য হুকুমের ইত্বায়াত হবে। কেননা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যখন তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুন, তখন মুয়াযযিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বল। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রকাশ্য হুকুম উনার বিরোধিতা করার কোন সুযোগ বা আবকাশ নেই।”

“ফতহুল বারী” কিতাবের ২য় খ-ের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

استدل به على وجوب اجابة الـمؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف وبه  قال الحنفية.

অর্থ: “পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইবারতে উল্লেখিত فقولوا আদেশসূচক শব্দ মুবারক উনার ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়াযযিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এটা ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইবারতে উল্লেখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করে আমাদের হানাফীগণ উনারা বলেন, মৌখিকভাবে মুয়াযযিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”

এছাড়া “তিরমিযী শরীফ” উনার ১ম খন্ড ২৯ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ায়, “আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় ৬নং হাশিয়ায়,  “ইবনে মাজাহ্ শরীফ উনার” ৫৩ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

قال الشيخ فى اللمعات اجابة الـمؤذن واجبة ويكره التكلم عند الاذان.

অর্থ: “হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি “লুময়াত” কিতাবে বলেছেন, “মুয়ায্যিনের আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং  আযানের সময় কথা বলা মাকরূহ্ তাহরীমী।”

আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ কিতাবে ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وينبغى لسامع الاذان لا يتكلم فى حال الاذان او الاقامة ولا يشتغل بشىء سوى الاجابة.

অর্থঃ “আযান শ্রোতাদের উচিত যে আযান ও ইক্বামতের সময় কোন কথা বলবে না। এবং আযানের জাওয়াব দেয়া ব্যতীত কোন কাজেই মশগুল হবে না।”

“মুয়াত্তা ইমাম মালিক” কিতাবের ২৩ পৃষ্ঠায় ৪ নম্বর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

قوله فقولوا مثل ما يقول اى وجوبا عند ابى حنيفة وندبا عند الشافعى.

অর্থ “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াযযিন যেরূপ বলে তোমরাও অনুরূপ বল।” অর্থাৎ এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে আমাদের হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব আর শাফিয়ী মাযহাবে মুস্তাহাব।

অতএব, উপরোক্ত দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এটাইترجيح  তারজীহ বা ফতওয়াগ্রাহ্য মাসয়ালা। আর ফতওয়াগ্রাহ্য মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম। সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন এবং তার সমজাতীয়রা আযানের জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে  নাজায়িয ও হারাম কাজ করে শক্ত গুনাহর কাজ করেছে।

সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন এবং তার সমজাতীয়রা যে আযানের জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলেছে তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও দলীলবিহীন বলেই প্রমাণিত হলো।

{বি: দ্র: আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ৫৩, ৮১, ৮৫, ৯৬, ১৩৮, ১৩৯ ও ১৫৬-১৮৬তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম, মাসিক তরজুমান ও অখ্যাত মাসিক মুঈনুল ইসলামের ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।}

{দলীলসমূহ : (১) মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি (২) মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩) মুসনাদুল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪) শরহু মা’য়ানিল আছার (৫) বুখারী শরীফ (৬) মুসলিম শরীফ (৭) তিরমিযী শরীফ (৮) আবূ দাঊদ শরীফ (৯) নাসাঈ শরীফ (১০) ইবনে মাজাহ শরীফ (১১) মিশকাত শরীফ (১২) লুময়াত (১৩) আশয়াতুল লুময়াত (১৪) কুনিয়া (১৫) শরহে মুনিয়া (১৬) নেহায়া (১৭) মুহিত (১৮) জখীরা (১৯) শরহুছ ছগীর (২০) শরহুল কবীর (২১) আল কাওয়ানী নুল ফিক্বহিয়্যাহ (২২) আল মাজমু (২৩) মুগনিউল মুহতাজ (২৪) আল মাযহাব (২৫) কাশশাফুল কিনা (২৬) আল মুগনী (২৭) বাহরুর রায়েক (২৮) নাহরুল ফায়েক (২৯) আল ফাওয়ায়েদ (৩০) বাদায়েয়ুছ ছানায়ে (৩১) বেনায়া (৩২) তোহফা (৩৩) ফাতাওয়া (৩৪) খোলাছাতুল ফতওয়া (৩৫) আলমগীরী (৩৬) ফতহুল ক্বাদীর (৩৭) মুহীতে সারাখসী (৩৮) গারায়েব (৩৯) আইনুল হিদায়া (৪০) গায়াতুল আওতার (৪১) তানবীরুল আবছার (৪২) দুররুল মুখতার (৪৩) রদ্দুল মুহতার (৪৪) হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলাদ দুররিল মুখতার (৪৫) মারাকিউল ফালাহ (৪৬) ফতওয়ায়ে কাজীখান (৪৭) মাযমাউল আনহুর (৪৮) জাওহারাতুন নাইয়ারাহ (৪৯) শরহে ইলিয়াস (৫০) জামিউর রুমুজ (৫১) শামী (৫২) কাশফুল গোম্মা (৫৩) আরকানে আরবায়া (৫৪) কবীরী (৫৫) হাশিয়ায়ে তাবিনুল হাকায়েক্ব (৫৬) ফিক্বাহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাহ (৫৭) জাওয়াহের ইত্যাদি}

মুহম্মদ আতাউর রহমান

খুলনা

সুওয়াল: কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যাকাত প্রদানের ৮টি খাতের সবগুলির মধ্যেই যাকাত দিতে হবে? না যে কোন ১টি খাতে দিলেও আদায় হবে? যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগন্য কে বা কাদেরকে দেয়া উত্তম?

জাওয়াব: পবিত্র যাকাত কাদেরকে দিতে হবে, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

انما الصدقات للفقراء والـمسكين والعملين عليها والـمؤلفة قلوبهم وفى الرقاب والغرمين وفى سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم.

অর্থ: “নিশ্চয়ই ছদকা তথা পবিত্র যাকাত ফকির, মিসকীন, পবিত্র যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, নও মুসলিম, গোলামদের আযাদকার্যে, ঋণগ্রস্ত, জিহাদে লিপ্ত ব্যক্তি এবং মুসাফিরের জন্য। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর মহান আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬০)

মূলতঃ এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারাই পবিত্র পবিত্র যাকাত প্রদানের ৮টি খাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

তবে ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়া হলো উল্লেখিত ৮টি খাতের যে কোন একটি খাতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কারণ উল্লেখিত ৮টি খাত একসাথে পাওয়া স্বাভাবিকভাবে সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে যেহেতু দেশে খিলাফত কায়িম নেই ফলে পবিত্র যাকাত বায়তুল মালেও জমা দেয়া হচ্ছে না এবং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত সর্বপ্রকার খাতও পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেক পবিত্র যাকাতদাতার গরীব আত্মীয়-স্বজন ও গরীব প্রতিবেশী রয়েছে এবং অনেক মাদরাসা রয়েছে যেখানে ইয়াতীমখানাও আছে। তাই পবিত্র যাকাত দেয়ার সহজ ও উত্তম পদ্ধতি হলো- যাকাতের মালকে তিনভাগ করে একভাগ গরীব আত্মীয়-স্বজন, একভাগ গরীব প্রতিবেশী ও একভাগ মাদরাসার ইয়াতীমখানায় প্রদান করা।

আর যদি গরীব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী না থাকে, তবে সবটাই মাদরাসার ইয়াতীমখানায় দেয়া আফযল ও উত্তম। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে, উলামায়ে ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী আলিম দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না।

স্মরণীয়, আফদ্বালুল আওলিয়া, ক্বইয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র যাকাত, ফিৎরা ইত্যাদি সর্বপ্রকার দান-ছদকা অন্যান্য খাতে না দিয়ে কোন মাদরাসার ইয়াতীম, গরীব ছাত্রদেরকে দান করলে অন্যান্য খাতের চেয়ে লক্ষ্যগুণ ছওয়াব বেশী হবে। সুবহানাল্লাহ! কারণ এতে তাদের ইলমে দ্বীন অর্জনের সহায়তা করা হয়।

হ্যাঁ, এ তিন প্রকার ব্যতীত যদি পবিত্র কুরআন শরীফ এ উল্লেখিত যাকাতের হক্বদারদের মধ্যে আরো কাউকে পাওয়া যায়, তবে তাদেরকেও পবিত্র যাকাত দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উপর আমল করা উত্তম। (সমূহ ফিক্বহ্রে কিতাব)

মুসাম্মত উম্মু মা’রূফা

কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: সূরা তওবা ৬০নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত “ওয়াল মুয়াল্লাফাতি ক্বুলূবুহুম” আয়াতাংশের বরাত দিয়ে কেউ কেউ বলে থাকে যে, যেসব অমুসলিম ইসলামের প্রতি আগ্রহী তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে। এ বক্তব্য কতটুকু শুদ্ধ?

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ হয়েছে। কেননা যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি ফরয ও ওয়াজিব ছদক্বা, কোন অমুসলিমকে দেয়া জায়িয নেই। আর সূরা তওবা শরীফ উনার উক্ত আয়াতাংশ মুবারক উনার অর্থ ‘মন জয় করার জন্য যাদেরকে ছদক্বা প্রদান করা হবে’ অর্থাৎ এর দ্বারা নও মুসলিম উদ্দেশ্য; যারা অন্য ধর্ম পরিত্যাগ করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। এ সমস্ত অভাবগ্রস্ত নওমুসলিম উনাদেরকে সাহায্য করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি সূদৃঢ় রাখার কাজে সাহায্য করা। মোট কথা, আয়াতে উল্লেখিত বিধানটি শুধুমাত্র মুসলমান মুওয়াল্লাফাতিল ক্বুলূব উনাদের সাথে সম্পৃক্ত। অমুসলিম মুওয়াল্লাফাতিল ক্বলূব উক্ত আয়াত শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো কোন অমুসলিমকে যাকাত প্রদান করেননি। বরং অমুসলিমদের মধ্যে যেসকল ব্যক্তি অচিরেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবেন বলে তিনি মনে করেছিলেন এমন ব্যক্তিদেরকে তিনি মালে গণীমতের খুমুস (এক পঞ্চমাংশ) অংশ থেকে কিছু প্রদান করেছিলেন। যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য নির্দিষ্ট ছিল। বায়হাকী, ইবনে সাইয়্যিদুন নাস এবং ইবনে কাছীরও ঐ কথা বলেছেন।

অতএব প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যে দান করেছিলেন তা সম্মানিত যাকাতের সম্পদ ছিল না বরং তা ছিল গণিমতের মালের অন্তর্ভুক্ত।

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই যখন যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি ফরয ওয়াজিব ছদকা থেকে কোন অমুসলিমকে দেয়া হয়নি তখন পরবর্তী সময়ে এবং বর্তমান সময়ে যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে বিজয়ী করেছেন তখন অমুসলিমদেরকে ছদকা দানের মাধ্যমে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি আকৃষ্ট করার প্রয়োজন মোটেও নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الحق من ربكم فمن شاء فليؤمن ومن شاء فليكفر

অর্থ: তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে সত্য (দ্বীন ইসলাম) এসেছে। এখন যার ইচ্ছা হয় সে গ্রহণ করবে আর যার ইচ্ছা হয় গ্রহণ করবে না।”

এ আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের সময় উনার কাছে হযরত উয়াইনিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আকরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা একটি জমি চেয়েছিলেন। হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনাদেরকে জমির দলীল লিখে দিলেন। কিন্তু হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত দলীলখানা হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরকম দান করতেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপরে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং মুসলমান উনাদেরকে করেছেন অমুখাপেক্ষী। এখন যদি আপনারা সম্মাতিন দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কায়িম থাকেন তবে উত্তম। অন্যথায় ফায়সালা হবে তলোয়ারের মাধ্যমে। হযরত উয়াইনিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আকরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা তখন বললেন, হে খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! খলীফা কে? আপনি না হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তিনি? হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তিনি যদি ইচ্ছা করেন তিনিই খলীফা। এ কথা বলে তিনি হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখেন। কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা এই সিদ্ধান্তটিকে অস্বীকার করেননি।

প্রতিভাত হলো, কোন অমুসলিমকে যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি কোন ফরয ওয়াজিব ছদকা তো দেয়া যাবেইনা এমনকি বর্তমানে কোন রকমেরই দান খয়রাত দেয়াই জায়িয নেই। (সমূহ ফিক্বাহ ও ফতওয়া শরীফের কিতাব দ্রষ্টব্য। এছাড়া তাফসীর শরীফেও বর্ণিত রয়েছে)

মুহম্মদ আনিছুর রহমান

সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ইবতেদায়ী পঞ্চম শ্রেণীর কুরআন মজীদ ও তাজভীদ শিক্ষা বইয়ের ১১ পৃষ্ঠার ১৩তম লাইনে লেখা হয়েছে- “কুরআন মাজীদের আয়াতসমূহ অর্থ না বুঝে শুধু তিলাওয়াত করার জন্য নাযিল করা হয়নি।” এ লেখাটি কতটুকু শুদ্ধ হয়েছে?

জাওয়াব: উক্ত লেখাটি সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ এবং অসম্পূর্ণ হয়েছে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযীলত আলাদাভাবেই বর্ণিত হয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে- “পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি অক্ষর তিলাওয়াতে দশটি করে নেকী লেখা হয়।” যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من قرأ القران حرفا من كتاب الله فله به حسنة والـحسنة بعشر امثالـها لا اقول الـم حرف بل الف حرف ولام حرف وميم حرف.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারাক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একটি অক্ষর পড়বে, সে ব্যক্তি দশটি নেকী পাবে। আমি বলি না যে, আলিফ- লাম- মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর ও মীম একটি অক্ষর।” (মিশকাত শরীফ)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

يقال لصاحب القران اقرأ وارتق ورتل كما كنت ترتل فى الدنيا فان منزلتك عند اخر اية تقرؤها.

অর্থ : “পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠকারী ও আমলকারীকে বেহেশতে বলা হবে, তুমি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত কর ও উচ্চ স্থানে আরোহন কর এবং দুনিয়ায় যেরূপ শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে এখানেও তদ্রƒপ তিলাওয়াত করো। নিশ্চয়ই তুমি যতটি আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করবে, সেই পরিমাণ তোমার মর্তবা হবে।” (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ)

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মেছালী ছূরত মুবারকে একশতবার দেখেছেন। শেষবার তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, বারে ইলাহী! আপনি কোন আমলে বেশি খুশি হন। মহান আল্লাহ পাক তিনি জানালেন, আমার কালামে পাক তিলাওয়াত করলে। তখন তিনি বললেন, তা কি অর্থ বুঝে তেলাওয়াত করতে হবে? জাওয়াবে মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, না। শুধু তিলাওয়াত করলেই আমি খুশি হয়ে থাকি। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الذين اتيناهم الكتاب يتلونه حق تلاوته

অর্থ: “আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তাদের উচিত তা সঠিকভাবে তিলাওয়াত করা।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২১)

অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াতের বিষয়টি সকলের জন্যেই ফরয তথা ফরযে আইন। আর অর্থ ও হাক্বীক্বত বোঝার বিষয়টি হচ্ছে ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক বা কতিপয় লোক পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করলে উক্ত ফরযে কিফায়া আদায় হয়ে যায়। আর পবিত্র কুরআন শরীফ বোঝার দ্বারা শুধু অর্থ বোঝাকে উদ্দেশ্যে নেয়া ঠিক হবে না। যদি তাই হয় তবে বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ প্রথম বঙ্গানুবাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত গ্রীস চন্দ্র সেন পাক্কা ঈমানদার হয়ে যেত; কিন্ত সে তা হয়নি। প্রতিভাত হলো, শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ বুঝলে বা জানলেই চলবে না, বরং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাক্বীক্বত সম্পর্কে জানতে হবে বা বুঝতে হবে। আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার সদয় ইচ্ছা মুবারক ও রহমত মুবারক উনার উপর নির্ভরশীল। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

من يرد الله به خيرا يفقهه فى الدين

 অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যার কল্যাণ চান কেবল তাকেই দ্বীন সম্পর্কে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পর্কে ছহীহ সমঝ বা বুঝ দান করেন।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

প্রতীয়মান হলো, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাক্বীক্বত সম্পর্কে সকলেই বুঝবেনা বা অনুধাবন করতে পারবে না। যেমন উলামায়ে ‘সূ’দের সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لهم قلوب لايفقهون بها ولهم اعين لايبصرون بها ولهم اذان لايسمعون بها اولئك كالانعام بل هم اضل

 অর্থ: “তাদের অন্তর থাকা সত্ত্বেও তারা বুঝবে না, চোখ থাকা সত্ত্বেও তারা দেখবে না, এবং কান থাকা সত্ত্বেও তারা শুনবে না। তারা চতুস্পদ জন্তুর মতো, বরং তার চেয়েও তারা নির্বোধ।” নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯)

সর্বোপরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হুকুম-আহকাম পালন করার বিষয়টি অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অর্থ বুঝলেও যদি পবিত্র কুরআন শরীফ অনুযায়ী আমল করা না হয় তাহলে হাক্বীক্বী ফায়দা লাভ করতে পারবে না।

পবিত্র কুরআন শরীফ অনুযায়ী আমলকারীগণই জান্নাত ও সন্তুষ্টি মুবারক  হাছিল করবেন। এখন উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াত অর্থ বুঝে করুন অথবা অর্থ না বুঝেই করুন তাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিল করার ব্যাপারে কোন ব্যাঘাত ঘটবে না।

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

ইউ এ ই

সুওয়াল: তাবলীগের জনৈক আমীর তার এক বয়ানে বলেছে যে, একমাত্র প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ করলেই ঈমান মজবুত হয়। আর যারা পীর ছাহিবের মুরীদ হয়, তারা অনেকেই যেই স্তরে পৌঁছলে ঈমান মজবুত হয় সেই স্তরে পৌঁছতে পারে না। ইহা কতটুকু সঠিক? দলীলসহ জানার আশা রাখি।

জাওয়াব: উক্ত তাবলীগের আমীরের কথা জিহালতপূর্ণ ও মূর্খতাসূচক এবং মনগড়া ও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরীমূলক হয়েছে। যা সমাজে ফিৎনা সৃষ্টির কারণও বটে।

কারণ প্রচলিত তাবলীগওয়ালারা তাদের উক্ত বক্তব্য সম্মানিত শরীয়ত উনার কোন দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা প্রমাণ করতে পারবে না। উক্ত তাবলীগের আমীর যে বলেছে, প্রচলিত ছয় উছূলভিত্তিক তাবলীগ করলেই ঈমান মজবুত হয়, তার এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ধোকাপূর্ণ ও কুফরীমূলক। কারণ একমাত্র পবিত্র ইলমে তাছাওউফ উনার দ্বারাই পবিত্র ঈমান মজবুত হয়। সেটাই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ দ্বারা সত্য বলে প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لايجدوا فى انفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما.

অর্থ : (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) “আপনার রব তায়ালা উনার কছম! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। অতঃপর আপনার ফায়সালা সম্পর্কে তাদের মনে কোন সঙ্কীর্ণতা থাকবেনা এবং তারা সন্তুষ্টচিত্তে তা গ্রহণ করবে।” (সূরা নিসা/৬৫)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণভাবে মুহব্বত করলে ও মেনে চললেই মু’মীনে কামিল হওয়া যাবে অর্থাৎ ঈমান মজবুত হবে। অন্যথায় নয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لا يؤمن احدكم حتى يكون الله ورسوله احب اليه من نفسه وماله ووالده وولده والناس اجمعين.

অর্থ : “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত (পরিপূর্ণ) মু’মিন হতে পারবেনা বা তোমাদের ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপক্ক হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হবেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহে নববী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী)

কিতাবে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন, তখন সেখানে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সবকিছু থেকে অধিক মুহব্বত করি কিন্তু আমার প্রাণের চেয়ে নয়। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! আপনি এখনও মু’মিনে কামিল হতে পারননি।” একথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বাচ্চা শিশুদের ন্যায় কাঁদতে লাগলেন। (কারণ তিনি মনে করলেন, যেজন্য তিনি পিতা-মাতা, ভাই-বোন, বাড়ী-ঘর, ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ইত্যাদি সব ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করলেন, সে ঈমানই যদি পরিপূর্ণ বা মজবুত না হয়, তাহলে এতকিছু ত্যাগ করার সার্থকতা কোথায় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরম সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার অবকাশ কোথায়?)

হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার এই আকুতি দেখে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! আপনি আমার নিকটবর্তী হন।” হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উনার নিকটবর্তী হলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হাত মুবারক উনার সিনা মুবারকের উপর রাখলেন (তাছাওউফের ভাষায়, ফয়েজে ইত্তিহাদী দিলেন)। সাথে সাথে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার এখন এরূপ অবস্থা হয়েছে যে, আমি একজন কেন আমার ন্যায় শত-সহস্র উমর আপনার জন্যে জান কুরবান করতে প্রস্তুত আছি। ইনশাআল্লাহ।

একথা শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! এতক্ষণে আপনি মু’মিনে কামিল হয়েছেন। সুব্হানাল্লাহ!

উল্লেখিত ঘটনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র ঈমান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ ছোহ্বত ও মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহর কারণেই পাকাপোক্ত বা মজবুত হয়েছে। অন্য কোন আমলের দ্বারা ঈমান পাকাপোক্ত বা মজবুত হয়নি। যদি হতো তবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে বলতেন, আপনি অমুক আমল বেশী-বেশী করুন। আপনার পবিত্র ঈমান পাকাপোক্ত বা মজবুত হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি একথা না বলে, উনাকে ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ্ দিয়ে উনার পবিত্র ঈমান পাকাপোক্ত করে দিলেন অর্থাৎ মু’মিনে কামিল বানিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহ্বত মুবারক লাভ করে ইলমে ফিক্বাহ ও ফয়েজ তায়াজ্জুহ উনার দ্বারা ইলমে তাছাওউফে পূর্ণতা লাভ করে পূর্ণ ইছলাহপ্রাপ্ত হয়ে নিজ ঈমানকে পাকাপোক্ত করেছেন ও মু’মিনে কামিল হয়েছেন।

সুতরাং, এই ফয়েজ তায়াজ্জুহই হচ্ছে ইলমে তাছাওউফের মূল বিষয়। যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মাকাম, নায়িবে নবী, ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া, পীরানে ত্বরীক্বত বা আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের মাধ্যমে হাছিল হয়। তাই যারা পীরানে ত্বরীক্বত বা আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের  ছোহবত ইখতিয়ার করে ইলমে তাছাওউফ চর্চা করবে তাদেরই ঈমান মজবুত হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, আলিমকুল শিরমণি হযরতুল আল্লামা মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

خود بخود کامل نشد مولائے روم+تاغلام شمس تبریجی نشد-

অর্থ : “রোমের সবচে বড় আলিম নিজে নিজে কামিল হতে পারেননি যতক্ষণ পর্যন্ত (মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী) হযরত শামসে তাবরিজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গোলাম না হয়েছেন।”

আরো উল্লেখ্য যে, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল মুজতাহিদীন, ইমামুল আইম্মাহ হযরত ইমামে আয’ম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

لولا سنتان لـهلك ابو نعمان.

অর্থ : “আমি (নু’মান বিন ছাবিত) যদি দু’বছর না পেতাম তাহলে ধ্বংস হয়ে যেতাম।” অর্থাৎ হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার দ্বিতীয় পীর ছাহিব হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম উনার ছোহবতে দু’বছর থেকে ইলমে তাছাওউফ চর্চা করে ইছলাহ হাছিল করেছেন।

স্মরণীয় যে, বিশ্ব বিখ্যাত আলিম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও বিখ্যাত আলিম মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি যারা হাফিযে কুরআন ছিলেন, সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে জানতেন, অনেক বছর পর্যন্ত মানুষকে নছীহত করেছেন, তা’লীম দিয়েছেন, দর্স-তাদরীস করেছেন অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন এরপরও উনারা বলেছেন, আমরা মু’মিনে কামিল হতে পারিনি, ঈমান মজবুত করতে পারিনি, ইছলাহ হাছিল করতে পারিনি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের শায়েখ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনার ছোহবত ইখতিয়ার করে ইলমে তাছাওউফ চর্চার মাধ্যমে ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ্ হাছিল না করেছি। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, কিতাব পড়লে, চিল্লা দিলে, প্রচলিত তাবলীগ করলে, ওয়াজ-নছীহত করলে, তা’লীম-তালকীন দিলে কস্মিনকালেও ঈমান মজবুত হবে না।

কাজেই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সে যেন কোন পীরানে তরীক্বত বা নায়িবে নবী উনার ছোহ্বত ইখতিয়ার করে ইলমে তাছাওউফ চর্চার মাধ্যমে ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ হাছিল করে নিজের ঈমানকে মজবুত করে নেয়।

উক্ত ফায়িজ-তাওয়াজ্জুহ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। অর্থাৎ প্রচলিত তাবলীগে ইলমে তাছাওউফ নেই। তাই হাজার বছর তাবলীগ করলেও বা চিল্লাকাশী করলেও উক্ত ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করা সম্ভব হবে না। আর ঈমানও মজবুত হবে না। তাই তাবলীগওয়ালারা যে বলে থাকে, ‘একমাত্র প্রচলিত তাবলীগ করলেই ঈমান মজবুত হবে’ ইহা  প্রথমত: সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ধোকাপূর্ণ কথা। দ্বিতীয়ত: ইলমে তাছাওউফ অস্বীকার করার কারণে কুফরী হয়েছে। কারণ ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করা ফরয।

মিথ্যাবাদী সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لعنة الله على الكاذبين.

অর্থ : “মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবার করেন-

انما الكذب لكل الذنوب ام.

অর্থ : “নিশ্চয়ই মিথ্যা সমস্ত গুণাহর মূল।”

আর ধোকা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

من غش فليس منا.

অর্থ : “যে ধোকা দেয় সে আমার উম্মত নয়।”

অতএব, প্রচলিত তাবলীগওয়ালারা যদি বলে, ‘একমাত্র প্রচলিত তাবলীগ করলেই ঈমান মজবুত হবে’ তাহলে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হয়ে তারা মাল’উন হবে এবং ধোঁকাবাজ হিসেবে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে খারিজ হবে। আর কুফরী করার কারণে ঈমান ও ইসলাম থেকেও খারিজ হবে।

তাবলীগের আমীর স্বীকার করেছে যে, পীরানে তরীক্বত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কাছে বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাওউফ চর্চা করে ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ্ হাছিলের মাধ্যমে ঐ স্তরে পৌঁছা যায় যেই স্তরে পৌঁছলে ঈমান মজবুত হয়।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পক্ষ হতে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কাছে যে ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ্ আমানত হিসেবে দেয়া হয়েছে যা ঈমান মজবুত করার একমাত্র মাধ্যম। এরপরও অনেকে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কাছে বাইয়াত হয়ে ঈমান মজবুতকরণের স্তরে পৌঁছতে পারে না। তাহলে প্রচলিত ছয় উছুলভিত্তিক তাবলীগ জামাত যা তাছাওউফ শুন্য যেখানে ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ্-এর নাম নিশানাও নেই সেখানে গিয়ে কি করে ঈমান মজবুত হবে? বাস্তবিকই তাদের এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ধোকাপূর্ণ এবং কুফরীমূলক হয়েছে।

কাজেই যারা বলে, পীর ছাহিবের মুরীদ হয়ে  যেই স্তরে পৌঁছলে ঈমান মজবুত হয় সেই স্তরে অনেকে পৌঁছতে পারে না, তাদের এ কথা বলার উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে, ইলমে তাছাওউফকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা তাহলে অবশ্যই সেটা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত হবে।

আর যদি উদ্দেশ্য হয় যে, মানুষ আউলিয়ায়ে কিরাম বা পীরানে তরীক্বত উনাদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ না করুক তাহলে এটাও নাজায়িয হবে। কারণ হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম বা পীরানে তরীক্বত উনার নিকট বাইয়াত হয়ে তরীক্বা মশক করে ফরজ পরিমাণ ইলমে তাছাওউফ হাছিল করা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। তাহলে এ কথার কারণে অনেকেই ফরয ইলম ইলমে তাছাওউফ অর্জন করা থেকে মাহরুম থাকবে বা ফিরে যাবে। যার ফলশ্রুতিতে সে কস্মিনকালেও ঈমান মজবুত করতে পারবে না বা মু’মিনে কামিল হতে পারবে না।

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

طلب العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة.

অর্থ : “প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা উনাদের জন্য (ইসলাম সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ) ইলম তলব বা অর্জন করা ফরয।” (বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মিরআতুল মানাজীহ্)

আর উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

العلم علمان علم فى القلب فذاك العلم النافع علم على اللسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم.

অর্থ : “(যে ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা উনাদের জন্য ফরয সে) ইলম দু’প্রকার- (১) ক্বলবী ইলম যা উপকারী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাওউফ, (২) যবানী ইলম যা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ।

আর উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মালেকি মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, শায়খুল উলামা, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق و من جمع بينهما فقد تحقق.

অর্থ : “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ (যবানী ইলম) অর্জন করলো, কিন্তু তাছাওউফ (ক্বলবী ইলম) অর্জন করলো না সে ব্যক্তি নিশ্চিত ফাসিক। আর যে ব্যক্তি তাছাওউফের দাবী করে, কিন্তু সম্মানিত শরীয়ত স্বীকার করে না, সে ব্যক্তি নিশ্চিত যিন্দিক। আর যে ব্যক্তি উভয়টিই অর্জন করলো সে ব্যক্তিই মুহাক্কিক অর্থাৎ মু’মিনে কামিল।”

অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ উভয়টি জরুরত আন্দাজ শিক্ষা করা ফরয। এ উভয় ইলম শিক্ষার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। যারা এই ইলম শিক্ষায় নিরুৎসাহিত করবে, তারা প্রকৃতপক্ষে শয়তানেরই দোসর হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে- শয়তান তার চেলাদের সমাবেশে হিসেব গ্রহণ করে যে, কোন চেলা কি কাজ করেছে। তখন বিভিন্ন চেলা বিভিন্ন প্রকার কাজের বর্ণনা দেয়। তার মধ্যে কোনটি চুরি, কোনটি ব্যভিচার, কোনটি খুন-খারাবী ইত্যাদি। শয়তান এসব শুনে মোটামুটি খুশী হয়। অতঃপর শয়তান দেখতে পায় এক ল্যাংড়া ও দুর্বল চেলা পিছনে বসে রয়েছে। সে তখন তাকে জিজ্ঞেস করে, কিরে, তুই কিছু করিসনি? ল্যাংড়া শয়তান জবাব দেয় যে, সে সামান্য একটা কাজ করেছে। মূল শয়তান তখন আগ্রহভরে জানতে চায় যে, সে কাজটি কি? উক্ত চেলা তখন জবাব দেয় যে, একজন তালিবে-ইলম বা মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র মাদ্রাসায় পড়তে যাচ্ছিল কিন্তু সে তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে মাদ্রাসা পড়া হতে ফিরিয়ে দিয়েছে। একথা শুনে ইবলিস তখন আসন থেকে উঠে এক লাফ দিয়ে সেই চেলাকে কোলে নিয়ে মহা খুশীতে আটখানা হয়ে নাচতে থাকে ও বলতে থাকে, তুই সবচেয়ে বড় কাজ করেছিস। কারণ এই তালিবে-ইলম বা ছাত্র যদি মাদ্রাসায় পড়ে বড় আলিম হতো, তবে সে সম্মানি দ্বীন উনার ছহীহ্ বুঝ পেত। ফলে তার দ্বারা লক্ষ লক্ষ লোক হিদায়েত পেতো। তার কারণে ওয়াসওয়াসা হতে মানুষ বেঁচে থাকতে পারতো ও ইলমের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটতো। কিন্তু সেসব কিছুই পন্ড হয়েছে তোর জন্য। যেহেতু তুই তাকে মাদ্রাসায় পড়া হতে ফিরিয়ে দিয়েছিস। কাজেই তুই ই সবচেয়ে বড় কাজ করেছিস। নাউযুবিল্লাহ!

প্রচলিত ছয় উসূল ভিত্তিক তাবলীগওয়ালারা যদি তাবলীগের মিথ্যা ফাযায়িল ফযীলত বর্ণনা করে (যা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৩৫-৪৬তম সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে) মানুষকে ইলমে তাসাউফ যা অর্জন করা ফরয তা হতে ফিরিয়ে রাখে তাহলে তা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম এবং কুফরী হবে।

মুহম্মদ আজহারুল ইসলাম

কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: আমরা আগে থেকেই জেনে আসছি যে, রজব মাসের ২৭ তারিখ সোমবার শরীফ রাতে মি’রাজ শরীফ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কেউ কেউ টিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে প্রচার করছে যে, মি’রাজ শরীফ-এর তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আরো প্রচার করছে যে, ২৭শে রজবের রাতেই মি’রাজ শরীফ হয়েছে এ কথা সঠিক নয়। নাউযুবিল্লাহ!

অতএব, এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য অনুরোধ করছি।

জাওয়াব: মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ সোমবার শরীফ রাতেই হয়েছে। এটাই মশহূর বা প্রসিদ্ধ, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত। এর বিপরীত মতগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে মশহূর, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। তাদের কোন কথাই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, মুসলমানগণের ঈমান-আমল ধ্বংস করার ক্ষেত্রে মুসলমানদের যারা চিহ্নিত শত্রু- ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী, মুশরিক ইত্যাদি তাবৎ কাফির-মুশরিক তারা পরোক্ষভাবে কাজ করে আর তাদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। এই উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরা কাফির-মুশরিকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলামনগণের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব ধ্বংস করার লক্ষ্যে হরাম টিভি চ্যানেলসহ নানা চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, জায়িযকে নাজায়িয,সুন্নতকে বিদয়াত,বিদয়াতকে সুন্নত বলে প্রচার করে থাকে। অনুরূপভাবে তারা মুসলমানদের ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিনসমূহের তারিখ নিয়েও সমাজে বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টি করছে; উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানগণ যেনো ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিনসমূহের ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-মুনাজাত করা থেকে বিরত থাকে এবং সেই রাত ও দিনসমূহের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়।

যেমন তারা রবীউল আউয়াল শরীফ মাস আসলেই প্রচার করে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। নাউযুবিল্লাহ!

তদ্রƒপ এখন তারা প্রচার করছে, মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। নাঊযুবিল্লাহ!

অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরা বোঝাতে চাচ্ছে যে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়। নাঊযুবিল্লাহ!

কিন্তু শরীয়তের ফায়ছালা হলো, যে কোন বিষয়ে মতভেদ হতে পারে বা থাকতে পারে। কারণ হক্বপন্থীগণ যে বিষয়টিকে হক হিসেবে গ্রহণ করেন, যারা নাহক্ব বা বাতিলপন্থী তারা কি সে বিষয়টিকে হক্ব হিসেবে গ্রহণ করবে? কখনই না। তাহলে তো এমনিতেই মতভেদ সৃষ্টি হয়ে গেল এবং তাই হচ্ছে।

এছাড়া হক্বের জন্য হক্বপন্থীগণও বিভিন্ন বিষয়ে ইখতিলাফ করেছেন, ইখতিলাফ করেছেন বলে সেসব বিষয় বাদ দিতে হবে তা নয়। বরং এক্ষেত্রে শরীয়তের সুস্পষ্ট সামাধান রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

يايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله والرسول ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر ذلك خير واحسن تأويلا

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছেন উনাদের আনুগত্য বা অনুসরণ করো। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে (উলিল আমর উনাদের মধ্যে) মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে ন্যাস্ত করো। অর্থাৎ যেই উলিল আমর মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বেশি অনুগত বা যার মতের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল-আদিল্লাহ বেশি রয়েছে উনাকে বা উনার মতকে অনুসরণ করবে। যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। এটাই কল্যাণকর এবং তা’বীল বা ব্যাখ্যার দিক দিয়ে উত্তম।” (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ ৫৯)

কাজেই, কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে তখন যে মতটি অত্যধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবে, সেটিই আমল করতে হবে। মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলদের উক্তি ব্যতীত কিছু নয়। যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ বিরোধী ও কুফরীর শামিল।

স্মরণীয় যে, মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ সোমবার শরীফ রাতে হয়েছে এটাই মশহূর, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে রুহুল বয়ান ৫ম জিলদ ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وهى ليلة سبع وعشرين من رجب ليلة الاثنين وعليه عمل الناس قالوا انه عليه السلام ولد يوم الاثنين بعث يوم الاثنين واسرى به ليلة الاثنين وخرج من مكة يوم الاثنين ودخل الـمدينة يوم الاثنين ومات يوم الاثنين

অর্থ: “রাতটি ছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ, সোমবার শরীফ।” এর উপরই বিশ্বের সকল ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের আমল। উনারা বলেন, “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছেন ইছনাইনিল আযীম (সোমবার শরীফ)-এ, আনুষ্ঠানিকভাবে উনার নুবুওওয়াত প্রকাশ পেয়েছে ইছনাইনিল আযীম (সোমবার শরীফ)-এ, ইসরা ও মি’রাজ শরীফ হয়েছে ইছনাইনিল আযীম (সোমবার শরীফ)-এ, হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ থেকে বের হয়েছেন ইছনাইনিল আযীম (সোমবার শরীফ)-এ, মদীনা শরীফ-এ প্রবেশ করেছেন ইছনাইনিল আযীম (সোমবার শরীফ)-এ এবং তিনি বিছাল শরীফও গ্রহণ করেছেন ইছনাইনিল আযীম (সোমবার শরীফ)-এ।”

পাক ভারত উপমহাদেশে হাদীছ শরীফ-এর প্রচার-প্রসারকারী হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ’ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-

اعلم انه قد اشتهر فيما بين الناس بديار العرب ان معراجه صلى الله عليه وسلم كان لسبع وعشرين من رجب

অর্থ: “জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই।” সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার’ কিতাবুছ ছলাত অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে-

وجزم الحافظ عبد الغنى الـمقدسى فى سيرته بانه ليلة السابع والعشرين من رجب وعليه عمل اهل الامصار.

অর্থ: হযরত ইমাম হাফিয আব্দুল গণী মাক্বদিসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সীরাতগ্রন্থে চূড়ান্ত মতামত প্রকাশ করেন যে, মি’রাজ শরীফ হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ এবং এর উপরই সমগ্র দেশবাসী উনাদের আমল।

এছাড়াও আরো নির্ভরযোগ্য অনেক কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে হয়েছে।

কাজেই, যারা টিভিসহ নানা চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায় ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। এদের সম্পর্কেই হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبيعونـها من امراء زمانـهم ربحا لانفسهم لا اربح الله تجارتـهم

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের উলামায়ে ‘সূ’দের জন্য জাহান্নাম; যারা ইলিমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করে তাদের যামানার আমীর-উমরা বা রাজা-বাদশাহদের কাছে অর্থ ও পদ লাভের জন্য তা বিক্রি করে থাকে। তাদের এ ধর্মব্যবসায় মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনো বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بـما لـم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم.

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীদের ওয়াজ শোনা, তাদের ফতওয়া মানা, তাদেরকে অনুসরণ করা হারাম আর তাদের ছোহবত থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সূরা কাহাফ’-এ ইরশাদ করেন-

ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هواه وكان امره فرطا

অর্থ: “তোমরা ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা যার ক্বল্ব্ আমার যিকির থেকে গাফিল। সে নফসের পায়রবী করে আর তার কাজগুলো সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।” অর্থাৎ যারা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ করে তথা টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

ان هذا العلم دين فانطروا عمن تأخذون دينكم

 অর্থ: “নিশ্চয়ই (পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের) ইলিমই হচ্ছে পবিত্র দ্বীন। সুতরাং, তোমরা কার নিকট থেকে পবিত্র দ্বীন গ্রহণ করছো অর্থাৎ ইলিম হাছিল করছো তা লক্ষ্য করো।” (মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ তথা যারা টিভিতে প্রোগ্রাম করে তাদের থেকে ইলিম হাছিল করা যাবে না, তাদের ওয়াজ শুনা যাবে না, তাদের ফতওয়া মানা যাবে না, তাদের পিছনে নামায পড়া যাবে না।

অতএব, যারা টিভি চ্যানেলসহ নানা চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায় ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। এদের কোনো কথাই সম্মানিত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

আর ২৭শে রজব তারিখ মি’রাজ শরীফ এটা সঠিক নয় বলে তারা যে বক্তব্য প্রচার করছে তাদের সে প্রচারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও দলীলবিহীন। ইসলামে দলীলবিহীন কোন বিষয় আদৌ গ্রহনযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين

অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে দলীল পেশ করো।

কাজেই, যেসব উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী পবিত্র মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ সংঘটিত হওয়ার বিশুদ্ধ ও মশহূর বর্ণনাকে সঠিক নয় বলে প্রচার করছে; তাদেরকে প্রমান দিতে হবে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের কোথায় বা কোন দলীলে উল্লেখ আছে যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ হয়েছে; তা সঠিক নয়।

এরূপ প্রমাণ তারা কখনই দিতে পারবে না, যদি দিতে পারতো তাহলে তাদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ দাজ্জালে কাযযাব অর্থাৎ চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বলে কখনই উল্লেখ করা হতো না।

অতএব, প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে যে সম্মানিত মি’রাজ শরীফ সম্মানিত রজব মাস উনার ২৭ তারিখে ইছনাইনিল আযীম অর্থাৎ সোমবার শরীফ হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

মুহম্মদ আবু ছালেহ

বেলতলী, চাঁদপুর

সুওয়াল: রাজারবাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসার লিল্লাহবোডিং ও ইয়াতীখানাই যাকাত প্রদানের শ্রেষ্ঠ স্থান। তা কিভাবে?

জাওয়াব: দান-ছদক্বা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ولكن البر من امن بالله واليوم الاخر والـملئكة والكتب والنبين واتى الـمال على حبه ذوى القربى واليتمى والـمسكين وابن السبيل والسائلين وفى الرقاب واقام الصلوة واتى الزكوة والـموفون بعهدهم اذا عهدوا والصبرين فى الباساء والضراء وحين الباس اولئك الذين صدقوا واولئك هم الـمتقون.

অর্থ: “বরং প্রকৃত নেক কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর এবং সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে উনারই মুহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী গোলামের জন্য। আর নামায কায়িম করবে, যাকাত দান করবে, কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, অভাবে রোগে-শোকে এবং যুদ্ধের সময় ধৈর্য্যধারণকারী হয়ে থাকবে। এরাই হলো সত্যাশ্রয়ী, আর এরাই পরহিযগার।” (সূরা বাক্বারা-১৭৭)

যাকাত ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে অন্যতম বুনিয়াদ। যা ফরয। কাজেই যাকাত দেয়ার সাথে সাথে তা কাকে বা কোথায় দিতে হবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কুরআন শরীফে সবস্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনি আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।

এক খোদা তায়ালা উনাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে মুসলমান ব্যতীত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।

স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মাওলানা, মুফতী, মুফাসসির, ইমাম, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।

উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। ইসলামের নামে ব্যবসা করা হারাম। ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। ইসলামের নামে নির্বাচন করা হারাম। ইসলামের নামে ভোট চাওয়া হারাম।

আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদ্রাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের। ইসলামের দোহাই দিয়ে, ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের পরিকল্পনা করে থাকে। ইসলামের নামে নির্বাচন করে থাকে ও ভোটের রাজনীতি করে থাকে যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

কাজেই, যাকাত-ফিতরা কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী ও মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে যাকাত-ফিতরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় হবে না।

জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদ্রাসায় যাকাত-ফিতরা দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। সন্ত্রাসী-জামাতী ও ধর্মব্যবসায়ী তৈরিতে সাহায্য করা হবে। তাতে কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।

মূলতঃ ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসায় যাকাত-ফিতরা না দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-

تعاونوا  على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থ: ‘তোমরা নেককাজে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। পাপ কাজে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা’ (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

 عن حضرت جرير رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها و وزر من عمل بـها من بعده.

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহ যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়। নাউযুবিল্লাহ!

আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির মতই একটি পয়সাও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অর্থাৎ এমন সব লোককে পবিত্র যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি ফরয ওয়াজিব ছদকা দেয়া যাবে না; যাদের আক্বীদা ও আমলের মধ্যে কুফরী রয়েছে অথবা যারা হারাম-নাজায়িয, বিদয়াত-বেশরা কাজে মশগুল অথবা যারা নামায-কালাম পড়ে না, পর্দা-পুশিদায় চলেনা, গান-বাজনা করে, টিভি-সিনেমা দেখে, খেলাধুলা করে ইত্যাদি; যা চরম ফাসিকী ও নাফরমানী কাজের অন্তর্ভুক্ত। অথবা এমন সব মাদরাসায় পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না; যেসব মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পর্দা নেই, হারাম খেলাধুলায় লিপ্ত, হারাম দল-মত ও আন্দোলনের সাথে জড়িত অর্থাৎ হক্কানী আলিম- আল্লাহওয়ালা হওয়ার পরিবর্তে যাদের উদ্দেশ্য থাকে গইরুল্লাহ অর্থাৎ দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করা। নাউযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, খিলাফতের যুগে যাকাতের মাল বাইতুল মালে জমা করা হতো এবং সেখান থেকে যিনি সম্মানিত খলীফা উনার পক্ষ থেকে যাকাতের হক্বদারদের মধ্যে তা সুষম বণ্টন করে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে উক্ত খিলাফত ব্যবস্থা না থাকায় পবিত্র যাকাতদাতাগণ নিজেই যাকাতের মাল হক্বদারদের মধ্যে বণ্টন করে থাকেন। এ কারণে পবিত্র যাকাতদাতার মধ্যে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় গইরুল্লাহ অর্থাৎ রিয়া বা লৌকিকতা এ ধ্বংসাত্মক বদ স্বভাবটির জন্ম নেয়। ফলে তার পবিত্র যাকাত প্রদানই জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

যেমন এ প্রসঙ্গে ছহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হাশরের ময়দানে বিচারের জন্য সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তারমধ্যে একজন হলো সম্পদশালী। যাকে অনেক সম্পদ দান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তাকে বলবেন, হে ব্যক্তি! আমি তোমাকে দুনিয়াতে অনেক সম্পদের মালিক করেছিলাম, তুমি তার কি হক্ব আদায় করেছো? সে ব্যক্তি বলবে, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার পছন্দনীয় এমন কোন পথ নেই যে পথে আমি দান খয়রাত করিনি। অর্থাৎ আপনি যতগুলো রাস্তা পছন্দ করতেন মসজিদ, মাদরাসা, লঙ্গরখানা, ইয়াতীমখানা, গরীব-মিসকীন, ফকীর-ফুক্বারা, ইয়াতীম-অনাথ, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজ, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি সব জায়গায় আমি কম-বেশি দান করেছি। কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনি। সবাইকে দান করেছি একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, মিথ্যা কথা। তুমি আমার জন্য করনি। বরং তুমি এজন্য করেছ যে, লোকেরা তোমাকে দানশীল বলবে। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের আদেশ করবেন, হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা এ দানশীল ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তৎক্ষনাত তাকে চুলে ধরে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। নাঊযুবিল্লাহ!

কাজেই, দান-ছদক্বা, যাকাত-ফিতরা সবকিছু করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে। গইরুল্লাহ’র জন্য কোন আমল করা যাবে না। মানুষ দানশীল বলবে, দানবীর বলবে, দাতা বলবে, মানুষ জানবে, চিনবে, সমাজে নামধাম হবে, প্রচার-প্রসার ঘটবে, পরিচিতি হবে, যশ-খ্যাতি অর্জিত হবে, সমাজের অধিপতি হওয়া যাবে, নেতা-নেত্রী হওয়া যাবে, মসজিদের সেক্রেটারী, সভাপতি হওয়া যাবে, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, মন্ত্রী-মিনিষ্টার হওয়া যাবে ইত্যাদি সবই হলো গইরুল্লাহ। গইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে দান-ছদকা করা হলে তা কখনই কবুল হবে না।

তাই গইরুল্লাহ মুক্ত হয়ে যাকাতদাতাগণ যেনো সঠিক স্থানে উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা দিয়ে পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে পারেন সেজন্যেই যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হাক্বীক্বী আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হওয়ার জন্য মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ সুন্নতী মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা সহ দেশ বিদেশের সবখানে উক্ত নামে প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ গ্রহন করেন। এবং ইতোমধ্যে দেশের অনেক জেলা ও উপজেলায় উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে।

‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’ উনার অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে, একমাত্র উক্ত প্রতিষ্ঠানেই ইলমে ফিক্বাহ উনার পাশাপাশি ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; যা শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা উনাদের জন্য ফরয। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ শরয়ী পর্দার সাথে বালক ও বালিকাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বালক শাখা উনার শিক্ষক, কর্মকর্তা ও আমিলগণ উনারা প্রত্যেকেই পুরুষ এবং বালিকা শাখা উনার শিক্ষিকা, কর্মকর্তা ও আমিলগণ উনারা প্রত্যেকেই মহিলা।

এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে অনৈসলামিক কর্মকা- যেমন, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বোমাবাজী, হরতাল, লংমার্চ, ইসলাম হেফাযতের নামে কুরআন শরীফ পোড়ানো, জান-মালের ক্ষতিসাধন, কুশপুত্তলিকা দাহ ইত্যাদি হারাম ও কুফরীমূলক কাজের সাথে এবং এ ধরনের কোন প্রকার অবাঞ্ছিত সংগঠন বা দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বরং এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন আমল এবং মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত সব কিছুই সুন্নত মুবারক দ্বারা অলঙ্কৃত। সর্বোপরি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা ভিত্তিক পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ এবং পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে ইলম শিক্ষা দেয়া হয়। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাস্তব জীবনে সুন্নতে নববী উনার আদর্শ প্রতিষ্ঠা তথা সঠিক পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে কায়িমের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি বা রেযামন্দী মুবারক হাছিল করা।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাজের বিত্তবানদের পাশাপাশি ‘গরিব এবং ইয়াতীমদের’ শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘ইয়াতীমখানা এবং লিল্লাহবোডিং’।

সুতরাং সকলের পবিত্র যাকাত, পবিত্র উশর, পবিত্র ফিতরা, পবিত্র কাফফারা, পবিত্র মান্নত, পবিত্র দান, পবিত্র ছদকা, পবিত্র কুরবানী উনার চামড়া বা তার মূল্য অত্র প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহবোডিংয়ে দান করাই হবে অধিক ফযীলতের কারণ।

বিশ্ববিখ্যাত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের অভিমত হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসাসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যেসব খাতে পবিত্র যাকাত, পবিত্র উশর, পবিত্র ফিতরা, পবিত্র কাফফারা, পবিত্র মান্নত, পবিত্র দান, পবিত্র ছদকা, পবিত্র কুরবানী উনার চামড়া ইত্যাদি প্রদানের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন তার মধ্যে যারা ইয়াতীম ও গরিব ত্বলিবে ইলম অর্থাৎ ইলমে দ্বীন শিক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদেরকে প্রদান করাই লক্ষ-কোটি গুণ বেশি ছওয়াব এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি বা রেযামন্দী মুবারক হাছিলের সর্বোত্তম উসীলা।

কাজেই, যে কোনো আর্থিক সহযোগিতা, পবিত্র যাকাত, পবিত্র উশর, পবিত্র ফিৎরা, পবিত্র কাফ্ফারা, পবিত্র মান্নত, পবিত্র দান, পবিত্র ছদকা, পবিত্র কুরবানী উনার চামড়া বা তার মূল্য অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রদান করে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা উচিত।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ