সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ:

সংখ্যা: ২৪০তম সংখ্যা | বিভাগ:

ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম, চাঁদপুর

সুওয়াল : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, যেসকল সম্মানিত পুরুষ ও সম্মানিতা মহিলা উনাদের বংশ পরস্পরায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে এসেছেন উনাদের কেউই কাফির বা মুশরিক ছিলেন না, যদি তাই হয় তবে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা কি করে আযর হতে পারে? কারণ আযর তো ছিল একজন প্রকাশ্য মূর্তিপূজক তথা মুশরিক। এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এরূপভাবে মনোনীত যে, উনাদের কারো পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা কেউই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। বরং উনাদের মধ্যে অনেকে নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন আর যাঁরা নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না উনারা ঈমানদার তো অবশ্যই উপরন্তু উনারা ছিলেন উনাদের যুগে মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষস্থল বান্দা ও ওলী উনাদের অন্তর্ভুক্ত। এটাই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের মত এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনাদের মত। এ মতের বিপরীত মত, অর্থ, ব্যাখ্যা, বক্তব্য, লিখনী সবই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

প্রকৃতপক্ষে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা ছিলেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম, যিনি পরিপূর্ণ দ্বীনদার, পরহেযগার, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মত ও পথের পরিপূর্ণ অনুসারী একজন খালিছ ঈমানদার। সর্বোপরি তিনি ছিলেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াত প্রকাশের মহানতম ওসীলা। কেননা সমগ্র মাখলূক্বাত বা কায়িনাত সৃষ্টির যিনি মূল উৎস সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ওজুদ ‘নূর’ মুবারক উনার একজন মহান ধারক-বাহক।

হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে যে সকল মনোনীত ও সম্মানিত পুরুষ-মহিলা আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ওজুদ ‘নূর’ মুবারক হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে উনারা সকলেই ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠতম পবিত্রতম সুমহান ব্যক্তিত্ব। সুবহানাল্লাহ! উনাদের মধ্যে কেউই কাফির, মুশরিক বা বেদ্বীন ইত্যাদি ছিলেননা। উনারা সকলেই ছিলেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত খাছ বান্দা-বান্দি উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

মূলত যারা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা বা পরিবারকে মূর্তিপূজক হিসেবে অভিহিত করে থাকে তারা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ ও জাহিল হওয়ার কারণেই করে থাকে। এছাড়া তারা মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহানতম ও পবিত্রতম শান, মান, মর্যাদা, মর্তবা সম্পর্কে এবং উনার সুমহান পরিচয় সম্পর্কে চরম অজ্ঞ ও গ- মূর্খ হওয়ার কারণে এবং পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত لابيه ازر উনার মূল ও সঠিক অর্থ যা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে তা গ্রহণ না করে তার বিপরীতে শুধুমাত্র আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থের উপর ভিত্তি করে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করার কারণেই করে থাকে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের অর্থ ও ব্যাখ্যা কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তির শান বা মর্যাদা অনুযায়ী করতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী যে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়েছে সে অনুযায়ী অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে অনুসরণীয় হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা যে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন, সে অনুযায়ী অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পবিত্র কালাম উনার শান বজায় রেখে শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ ও ব্যাখ্যাও গ্রহণ করতে হবে। তবে সবক্ষেত্রে শাব্দিক অর্থ ও ব্যাখ্যা আদৌ গ্রহণীয় ও অনুসরণীয় নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষ তা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণও বটে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ ৫৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত مكر শব্দ মুবারক উনার আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ ‘ধোকাবাজির’ পরিবর্তে ‘হিকমত’ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে।

অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে পবিত্র সুরা দ্বুহা শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত ضالا শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক অর্থ ‘বিভ্রান্ত’ গ্রহণ না করে বরং তার পরিবর্তে ‘কিতাববিহীন’ অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে।

একইভাবে পবিত্র সূরা হিজর শরীফ ৯৯নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اليقين শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ ‘বিশ্বাস’ গ্রহণ না করে ‘মৃত্যু’ অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে। এমনি ধরনের আরো বহু পবিত্র আয়াত শরীফ রয়েছে যাদের শুধুমাত্র আভিধানিক অর্থের উপর ভিত্তি করে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হলে অশুদ্ধ ও কুফরী হবে। যেরূপ কুফরী হয়েছে পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত اب (আবুন) শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

واذ قال ابرهيم لابيه ازر اتتخذ اصناما الـهة.

অর্থ : “আর যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় চাচা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ (মা’বুদ) হিসেবে গ্রহণ করছেন?” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৪)

এ আয়াত শরীফেابيه  উনার মধ্যে اب (আবুন) শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক একটি অর্থ ‘পিতা’ গ্রহন করে বলা হচ্ছে ‘আযর’ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা। কিন্তু হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের সর্বসম্মত মতে, এখানে ابيه শব্দ মুবারক উনার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ‘আযর’ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। অর্থাৎ উদ্ধৃত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اب (আবুন) শব্দ মুবারক উনার অর্থ পিতা না হয়ে উনার অর্থ হবে চাচা। কারণ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনেক স্থানেই اب (আবুন) শব্দটি পিতা ব্যতীত অন্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ام كنتم شهداء اذ حضر يعقوب الموت اذ قال لبنيه ما تعبدون من بعدى قالوا نعبد الـهك واله ابائك ابرهيم واسمعيل واسحق الـها واحدا.

অর্থ : “তোমরা কি উপস্থিত ছিলে? যখন হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ গ্রহণের সময় উপস্থিত হলো তখন তিনি উনার সন্তানগণ উনাদেরকে বললেন, ‘আপনারা আমার পর কার ইবাদত করবেন? উনারা উত্তরে বললেন, ‘আমরা আপনার রব তায়ালা উনার এবং আপনার পূর্ব পিতা (আপনার দাদা) হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার এবং (আপনার চাচা) হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনার এবং (আপনার পিতা) হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম উনার একক রব খালিক্ব মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করবো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৩)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اب (আবুন) দ্বারা দাদা, চাচা ও পিতা সকলকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, এ সম্পর্কে  বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী’ উনার ৩য় খ-ের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وكان ازر على الصحيح عما لابراهيم والعرب يطلقون الاب على العم كما فى قوله تعالى نعبد الـهك واله ابائك ابراهيم واسماعيل واسحاق الـها واحدا.

অর্থ : “বিশুদ্ধ মতে, আযর ছিলো হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। আর আরবরা চাচাকেও اب (আবুন) শব্দে অভিহিত করে থাকে।” যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমরা আপনার প্রতিপালক ও আপনার পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম উনাদের একক প্রতিপালক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করবো।”

“তাফসীরে মাযহারী” কিতাব উনার ৩য় খ-ের ২৫৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে-

والعرب يطلقون الاب على العم.

অর্থ : “আরববাসীরা الاب (আল আবু) শব্দটি চাচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।” তাফসীরে কবীর কিতাবের ১৩তম খ-ের ৩৮ পৃষ্ঠায়ও অনুরূপ উল্লেখ রয়েছে।

সুতরাং, পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪নং আয়াত শরীফে ابيه ازر এর অর্থ হলো আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। উনার পিতা নন।

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان ابا ابراهيم عليه السلام لم يكن اسمه ازر وانما كان اسمه تارح عليه السلام

অর্থ : “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম আযর নয়। বরং উনার পিতার নাম মুবারক হলো হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।” (ইবনে আবি হাতিম শরীফ, ইবনে কাছীর শরীফ- ৩/২৪৮)

এ সম্পর্কে তাফসীরে কবীর শরীফ ১৩/৩৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে-

ان والد ابراهيم عليه السلام كان تارح وازر كان عما له والعم قد يطلق عليه اسم الاب.

অর্থ : “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ছিলেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম। আর আযর ছিলো উনার চাচা। এবং আম্মুন (চাচা) শব্দটি কখনও ‘ইসমুল আব’ অর্থাৎ পিতা নামে ব্যবহৃত হয়।”

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে-

ان والد ابراهيم عليه السلام ما كان مشركا وثبت ان ازر كان مشركا فوجب القطع بان والد ابراهيم كان انسانا اخر غير ازر.

অর্থ : “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা (হযরত তারাহ বা তারাখ আলাইহিস সালাম) মুশরিক ছিলেননা। বরং আযর (উনার চাচা) মুশরিক ছিল। কেননা, অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার পিতা আযর নয়। বরং অন্য একজন অর্থাৎ হযরত তারাখ বা তারাহ আলাইহিস সালাম।” (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩/৩৯)

তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ليس ازر ابا لابراهيم انما هو ابراهيم بن تارح  عليه السلام

অর্থ : “আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা নয়। বরং নিশ্চয়ই তিনি (হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম) হলেন হযরত তারাখ বা তারাহ আলাইহিস সালাম উনার সুযোগ্য সন্তান।”

তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

وفى القاموس ازر اسم عم ابراهيم عليه السلام واما ابوه فانه تارح عليه السلام

অর্থ : “ক্বামূস অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচার নাম। আর নিশ্চয়ই উনার পিতার নাম হলো হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।”

মূলতঃ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনিসহ সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগ উনাদের পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষ ছিলেন পরিপূর্ণ ঈমানদার, খালিছ মু’মিন। কেউই কাফির ছিলেন না।

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

ان اباء الانبياء ماكانوا كفارا ويدل عليه وجوه منها قوله وتقلبك فى الساجدين.

অর্থ : “নিশ্চয়ই সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা বা পূর্বপুরুষ উনারা কেউই কাফির ছিলেননা। তার দলীল হচ্ছে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এ কালাম বা  পবিত্র আয়াত শরীফ-

وتقلبك فى السجدين.

অর্থাৎ : “তিনি আপনাকে (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) সিজদাকারীগণ উনাদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ ২১৯, তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)

প্রকাশ থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ملة ابيكم ابرهيم هو سمكم الـمسلمين.

অর্থাৎ- “তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র দ্বীন উনার উপর কায়িম থাক। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮)

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাঁদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ এনেছেন অর্থাৎ হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত উনারা সকলেই ছিলেন সিজদাকারী। অর্থাৎ সকলেই নামায-কালাম, যিকির-আযকার, ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন। উনারা সকলেই পূর্ণ পরহেযগার, মুত্তাক্বী ও ধার্মিক ছিলেন।

এ সম্পর্কে পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

فالاية دالة على ان جميع اباء محمد صلى الله عليه وسلم كانوا مسلمين وحينئذ يجب القطع بان والد ابراهيم عليه السلام كان مسلما.

অর্থ : “উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার দ্বারা এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ উনারা সকলেই পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন। এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত বা সাব্যস্ত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা মুসলমান ছিলেন।” (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩/৩৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

لـم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.

অর্থ : “আমি সর্বদা পূত-পবিত্র নারী ও পুরুষ উনাদের মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩/৩৯)

তিনি আরো বলেন-

لـم يلتق ابوى قط على سفاح.

অর্থ : “আমার পিতা-মাতা (পূর্বপুরুষ) কেউই কখনও কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িত হননি।” (কানযুল উম্মাল শরীফ, ইবনে আসাকীর, বারাহিনে  কাতিয়াহ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

بعثت من خير قرون بنى ادم قرنا فقرنا حتى بعثت من القرن الذى كنت فيه.

অর্থ : “আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানগণ উনাদের মধ্যে সর্বোত্তম সম্প্রদায়ের মধ্যেই সর্বদা প্রেরিত হয়েছি। এমনকি আমি যে (কুরাইশ) সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলাম সেটিই ছিলো সর্বোত্তম সম্প্রদায়।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৪র্থ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-

فلا يـمكن ان يكون كافرا فى سلسلة ابائه صلى الله عليه وسلم.

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা (পূর্ব পুরুষ) উনাদের সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির হওয়া সম্ভব নয়।” (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৪র্থ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা)

এ সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-

ان احدا من اجداده ما كان من الـمشركين.

অর্থ : “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাপ-দাদাগণ উনারা কেউই মুশরিক ছিলেননা।” (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩ খ- ৩৯ পৃষ্ঠা)

উল্লেখ্য, অনেকে “পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ” উনার ৪৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার ১১৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের বরাত দিয়ে বলে থাকে যে, “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি উনার পিতার জন্য ইস্তিগফার করেছেন। কাজেই উনার পিতা ঈমানদার ছিলেননা।” নাউযুবিল্লাহ!

মূলতঃ যারা একথা বলে থাকে, তারা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের অর্থই বুঝেনি। কারণ “পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ” উনার ৪৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قال سلم عليك ساستغفر لك ربى.

অর্থ : “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনার প্রতি (বিদায়কালীন) সালাম, অচিরেই আমি আমার প্রতিপালক উনার নিকট আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করবো।”

অনুরূপ “পবিত্র সূরা তওবা শরীফ” উনার ১১৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ما كان استغفار ابرهيم لابيه الا عن موعدة وعدها اياه.

অর্থ : “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে স্বীয় চাচার মাগফিরাত কামনা করা ছিলো কেবলমাত্র তার সাথে ওয়াদা করার কারণে।”  অর্থাৎ প্রথমত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় চাচার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি তার জন্য ইস্তিগফার করবেন যেন উনার চাচা তওবা করে, শিরক ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায় সেজন্য দোয়া করবেন।

আর তাই “পবিত্র সূরা তওবা শরীফ” উনার ১১৪নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সেই ওয়াদা পালনার্থে এবং মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি উনার চাচার জন্য দোয়া করেছিলেন।

যেমন, উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীর শরীফ-এ এসেছে-

ان ذلك كان قبل النهى عن الاستغفار للمشرك وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمه ابى طالب والله لاستغفرن لك.

অর্থ : “নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার ইস্তিগফার কামনা করাটা ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বের। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিষেধ হওয়ার পূর্বে) উনার চাচা আবূ তালিব উনাকে বলেছিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! অবশ্যই আমি আপনার তওবা নছীব হওয়ার জন্য দোয়া করবো।” (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৬/১০০)

এছাড়া হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি উনার চাচা আযরের জন্য এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চাচা আবূ তালিবের জন্য সরাসরি দোয়া করেননি; বরং তাদের ইস্তিগফার কামনা করেছেন। অর্থাৎ আযর ও আবু তালিব তাদের যেন তওবা নছীব হয়, তারা যেন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয় সেজন্য দোয়া করেছেন। আর তাও ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া নিষেধ সংক্রান্ত বিধান (আয়াত শরীফ) নাযিল হওয়ার পূর্বে।

আর চাচা হিসেবে আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার এবং আবূ তালিব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনেক খিদমত করেছে। তার বিনিময় স্বরূপ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা তাদের ইস্তিগফার (তওবা কবুল হওয়ার দোয়া) কামনা করেছেন।

এ সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে-

وما كان استغفار ابراهيم لابيه يعنى ازر وكان عما لابراهيم عليه السلام وكان ابراهيم بن تارح عليه السلام.

অর্থ : “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার জন্যে ইস্তিগফার করেন অর্থাৎ আযরের জন্যে ইস্তিগফার করেন। আযর ছিল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার  চাচা। আর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম উনার ছেলে।” (তাফসীর মাযহারী শরীফ ৪ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা)

এ কথা বিশেষভাবে  স্মরণীয় ও প্রণিধানযোগ্য যে, সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা এ বিষয়ে ইজমা বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শরীর মুবারকে বা পা মুবারকে যা কিছু স্পর্শ করেছে তা আরশে মুআল্লা উনার চাইতে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ!

তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র অজুদ ‘নূর’ মুবারক তা যাঁদের মাধ্যম হয়ে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরিত হয়ে তিনি যমীনে আগমন করেছেন সেই সকল ব্যক্তিগণ উনাদের মর্যাদা কত বেমেছাল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

বস্তুত সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহান শানে এরূপ কুফরীমূলক উক্তি করার অর্থ হলো খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে চরম ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন করা। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

আরো উল্লেখ্য, যেই পবিত্র নসব-নসল সূত্রে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনেন উনাদের পূর্ব-পুরুষ উনাদের নসব-নসলনামায় ‘কেউ কেউ ঈমানদার ছিলেননা’ এরূপ কল্পনা বা ধারণা করাও কাট্টা কুফরী।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা ছিলেন হাক্বীক্বী পরহেযগার, মুত্তাক্বী, পরিপূর্ণ ঈমানদার ও মুসলমান। উনার নাম মুবারক ছিল হযরত তারাহ মতান্তরে তারিহ বা তারাখ আলাইহিস সালাম। আর আযর নামক ব্যক্তি ছিল উনার চাচা। আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পূর্বপুরুষগণ এবং সর্বোপরি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত সকলেই ছিলেন পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী, পূর্ণ ধার্মিক ও পরিপূর্ণ মুসলমান।

অতএব, যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ও পরিবার সম্পর্কে কুফরীমূলক আক্বীদা রাখবে ও বক্তব্য-লিখনী প্রকাশ করবে পবিত্র ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী তার উপরে মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। অর্থাৎ সে ইসলাম বা মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। পবিত্র ইসলামী খিলাফত থাকলে তাকে তিনদিন সময় দেয়া হতো তওবা করার জন্য। তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তার শাস্তি হতো মৃত্যুদ-। সে মারা গেলে তার জানাযা পড়া জায়িয হবে না। তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না; বরং তাকে মৃত কুকুর-শৃগালের মত মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। তার জীবনের সমস্ত নেক আমল বাতিল হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে এবং সে হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। সে ওয়ারিছসত্ব থেকেও বঞ্চিত হবে।

{দলীলসমূহ : (১) তাফসীরে মাযহারী, (২) ইবনে কাছীর, (৩) ইবনে আবী হাতিম, (৪) কবীর, (৫) আহকামুল কুরআন, (৬) আহমদী, (৭) তাফসীরে বাইযাবী, (৮) বয়ানুল হক্ব, (৯) মাআলিমুত তানযীল, (১০) তাফসীরে জালালাইন, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) তিরমিযী, (১৪) বাইহাক্বী, (১৫) মিশকাত, (১৬) মুস্তাদরাকে হাকিম, (১৭) তবারানী, (১৮) কামূস, (১৯) ফতহুল বারী,(২০) উমদাতুল ক্বারী, (২১) মিরকাত, (২২) আশয়াতুল লুময়াত, (২৩) লুময়াত, (২৪) তা’লীকুছ ছবীহ, (২৫) শরহুত ত্বীবী, (২৬) মুযাহিরে হক্ব, (২৭) ফতহুল মুলহিম, (২৮) শরহে নববী, (২৯) আহমদ, (৩০) ইবনে আসাকির, (৩১) ইবনে মারদুবিয়া, (৩২) তাক্বদীসু আবায়িন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (৩৩) দুররুল মুখতার, (৩৪) ফিকহুল আকবর, (৩৫) শরহুশ শিফা, (৩৬) শুমুলুল ইসলাম লি উছূলির রসূলিল কিরাম, (৩৭) আকাইদে নিজামিয়া, (৩৮) কাছাছূল আম্বিয়া, (৩৯) কাছাছূল কুরআন, (৪০) কুরআন কাহিনী, (৪১) কিতাবুদ্ দারাযিল, (৪২) মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া, (৪৩) শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াহ, (৪৪) কিছাছে আম্বিয়া, (৪৫) মাতালিউন নূর, (৪৬) আল মুসতালিদ, (৪৭) বারাহিনে ক্বাতিয়া ইত্যাদি।}

আহমদ সাইয়্যিদা খালেদা বেগম, মীরগঞ্জ, রংপুর

 

সুওয়াল: জনৈক ওয়ায়িজকে বলতে শুনা যায় যে, কারো একাধিক আহলিয়া বা স্ত্রী থাকলে তারা পরষ্পর পরষ্পরের মধ্যে যেরূপ সতিন হিসেবে সতিনে সতিনে ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ করে থাকে তদ্রƒপ নাকি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস উনারা করতেন। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

এরূপ বক্তব্য ও আক্বীদা পোষণকারী ব্যক্তিদের ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনাদের সম্পর্কে উক্ত বক্তব্য ও আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

মনে রাখতে হবে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যমীনের অন্য কোন মহিলাদের মতো নন। বরং উনারা হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম¬¬ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতিত সকলেরই সম্মানিতা “মাতা”। সুবহানাল্লাহ! কাজেই অন্য কোন মহিলাদের অবস্থার সাথে উনাদের অবস্থার মেছাল বা উদাহরণ দেয়া যাবে না। উনাদের অবস্থার মেছাল দিতে হবে কেবলমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে। যেহেতু উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত-পবিত্রা ও সম্মানিতা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম এবং উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম।

উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত এবং মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে গ্রহণ করেছেন। কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানেই উনারা সম্মানিতা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমকক্ষ যেমন কেউ নেই তদ্রƒপ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সমকক্ষও কেউ নেই। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يا نساء النبى لستن كاحد من النساء

অর্থ: হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম অর্থাৎ সম্মানিতা উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা কোন মহিলাদের মতো নন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

উল্লেখ্য যে, উম্মু রূহিল্লাহ হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان الله اصطفك وطهرك واصطفك على نساء العالـمين

অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে মনোনীত ও পুত-পবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি জগতে নারীজাতীর মধ্যে আপনাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪২)

শুধু তাই নয়, তিনি উনার নাম রেখেছেন হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম এবং উনার সম্পর্কে তিনি আরো বলেন যে, তিনি এমন এক সম্মানিতা মহিলা কোন পুরুষও উনার সমকক্ষ নয়। সুবহানাল্লাহ!

যেমন উক্ত পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ৩৬ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ليس الذكر كالانثى وانى سميتها مريم

এখানে জানা আবশ্যক যে, হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত মর্যাদা-মর্তবা প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে যখন ঘোষণা করা হলো, তখন দেখা গেল যে, হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম তিনিসহ যমীনে কোন মহিলাই উনাদের সমকক্ষ নন। সুবহানাল্লাহ!

মোট কথা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন সমস্ত আলম বা সমস্ত সৃষ্টির জন্য নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তেমনি উনার সম্মানিতা আযওয়াজ-আহলিয়া হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হলেন সমস্ত সৃষ্টির জন্য উম্মুন বা মা।

অর্থাৎ সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত ইনসান ও জিন, সমস্ত প্রাণী এককথায় সৃষ্টিরাজির সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে সৃষ্টিরাজির সকলেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সন্তান স্বরূপ। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

النبى اولى بالـمؤمنين من انفسهم وازواجه امهاتـهم

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মু’মিনগণ উনাদের নিকট উনাদের জীবন অপেক্ষা প্রিয় আর উনার সম্মানিতা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা হচ্ছেন উনাদের মা স্বরূপ। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

প্রতিভাত হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন মনোনীত, শ্রেষ্ঠতম, মর্যাদা সম্পন্ন, পুত-পবিত্র তদ্রƒপ উনার সম্মানিতা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও মনোনীত, শ্রেষ্ঠতম, মর্যাদাসম্পন্ন, পুত-পবিত্র। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, উনাদেরকে অন্যান্য মহিলা বা পুরুষের ন্যায় মনে করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সুস্পষ্ট লংঘন অর্থাৎ কাট্টা কুফরী।

স্মরনীয় যে, পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অর্থ ও ব্যাখ্যা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান বা মর্যাদা অনুযায়ী করতে হবে। যদি কখনো দেখা যায় কোন শব্দের আভিধানিক অর্থ উনাদের মর্যাদার খিলাফ তখন উক্ত আভিধানিক অর্থ বাদ দিয়ে যে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহন করলে উনাদের মর্যাদার অনুকুল হয় সে অর্থই গ্রহণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনাদের ফায়ছালা।

যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ ৫৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত مكر শব্দ মুবারক উনার আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ ‘ধোকাবাজির’ পরিবর্তে ‘হিকমত’ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে।

অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে পবিত্র সুরা দ্বুহা শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত ضالا শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক অর্থ ‘বিভ্রান্ত’ গ্রহণ না করে বরং তার পরিবর্তে ‘কিতাববিহীন’ অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে।

একইভাবে পবিত্র সূরা হিজর শরীফ ৯৯নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اليقين শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ ‘বিশ্বাস’ গ্রহণ না করে ‘মৃত্যু’ অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুফরী হবে। এমনি ধরনের আরো বহু পবিত্র আয়াত শরীফ রয়েছে উনাদের শুধুমাত্র আভিধানিক অর্থের উপর ভিত্তি করে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হলে অশুদ্ধ ও কুফরী হবে।

হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের আরেক মর্যাদা মুবারক হচ্ছে উনারা আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত পবিত্র আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনাদের পবিত্রতার বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ঘোষনা করেছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

انما يريد الله ليذهب عنكم الرجز اهل البيت ويطهركم تطهيرا

অর্থ: হে আহলে  বাইত শরীফ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে অর্থাৎ আপনাদেরকে অপবিত্রতা মুক্ত করে পুত-পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অর্থ এটা নয় যে, হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের মধ্যে কোন অপবিত্রতা ছিল যা থেকে উনাদেরকে পবিত্র করা হয়েছে। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উনাদের পবিত্রতার  বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার পরও উনাকে ৪০ বৎসর বয়স মুবারকে আনুষ্ঠানিক নবী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি যে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে পুত-পবিত্র বলে ঘোষণা দিলেন তার অর্থ হচ্ছে, উনারা যাবতীয় বদ খাছলত বা মুহলিকাত যেমন অহঙ্কার, হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া-বিবাদ, মিথ্যা, গীবত, শত্রুতা, অসৎ, অশ্লীল-অশোভনীয় আচরণ ইত্যাদি থেকে পবিত্র। সুবহানাল্লাহ!

মূলত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ কায়িম মাক্বাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরেই উনাদের মাক্বাম বা মর্যাদা। এ কারণেই উনাদের লক্বব বা উপাধি মুবারক হচ্ছে-

افضل الناس بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم

অর্থ: নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে উনারাই হচ্ছেন শ্রেষ্ঠতম মানুষ। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহিমান্বিত গুণে গুণান্বিত হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেরূপ হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া-বিবাদ যাবতীয় বদ খাছলত বা বদ স্বভাব থেকে মুক্ত বা পবিত্র তেমনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও যাবতীয় বদস্বভাব থেকে মুক্ত ও পবিত্র। এ আক্বীদাই মু’মিন মুসলমান উনাদেরকে রাখতে হবে। এর বিপরীত আক্বীদা কোন মুসলমান রাখতে পারে না বা পোষণ করতে পারে না।

কোন মুসলমানের পক্ষে হযরত আহলে বাইত শরীফ তথা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্পর্কে সামান্যতম বিরূপ মন্তব্য, বক্তব্য বা আক্বীদা প্রকাশ করা জায়িয নেই। সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। কেননা উনাদের প্রতি সুধারণা পোষন করা, শুদ্ধ আক্বীদা রাখা, উনাদেরকে মুহব্বত করা উম্মতের জন্য ফরয এবং নাজাতের কারণ। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قل لا اسئلكم عليه اجرا الا الـمودة فى القربى

অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয হচ্ছে আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” [পবিত্র সূরা শূরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩]

জানা আবশ্যক, হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা।

কাজেই, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের প্রতি পরিপূর্ণ হুসনে জন বা সুধারণা পোষণ করা ফরয এবং নাজাতের কারণ।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

احبوا اهل بتى لـحبى

অর্থ: তোমরা আহলে বাইত শরীফ উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বত পাওয়ার জন্য। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি পেতে হলে অবশ্যই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করতে হবে, উনাদের প্রতি সুধারণা পোষন করতে হবে, উনাদেরকে অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে যা ফরয। তা না করে তার বিপরীত আক্বীদা পোষন করা কাট্টা কুফরী। যারা বিপরীত আক্বীদা পোষন করবে তারা কাট্টা কাফির হবে এবং চিরজাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

বিশেষভাবে স্মরণীয়, উনাদের শান মুবারকে যারা বিপরীত বক্তব্য দিবে ও আক্বীদা রাখবে তারা কখনই মুসলমান হতে পারে না বা মুসলমান থাকতে পারেনা নিঃসন্দেহে তারা কাট্টা কাফির, মুরতাদ ও জাহান্নামী হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আযওয়াজ বা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম, দ্বিতীয়ত: উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত-পবিত্রা আহলু বাইত শরীফ আলাইহিন্নাস এবং তৃতীয়ত: উনারা আবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা ছাহাবিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

স্মরণীয় যে, হযরত আযওয়াজুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং হযরত আহলু বাইতিন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিষয় তো অনেক উপরের বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-আনহুন্না উনাদেরই দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, উনাদের দোষারোপ করা, উনাদের সমালোচনা করাটাই কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة واعدلهم عذابا مهينا.

 অর্থ: “নিশ্চয় যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الله الله فى اصحابى لاتتخذوهم غرضا من بعدى فمن احبهم فبحبى احبهم ومن ابغضهم فببغضى ابغضهم ومن اذاهم فقد اذانى ومن اذانى فقد اذى الله ومن اذى الله يوشك ان يأخذه.

অর্থ: “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আমার বিছাল শরীফ উনার পরে উনাদেরকে তোমরা তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করোনা। যে ব্যক্তি উনাদেরকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করার কারণেই মুহব্বত করলো, আর যে ব্যক্তি উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো। যে ব্যক্তি উনাদেরকে কষ্ট দিল, সে মুলতঃ আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে আমাকে কষ্ট দিল, সে মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিল, আর যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিল, মহান আল্লাহ পাক তিনি শীঘ্রই তাকে পাকড়াও করবেন।” (তিরমিযী শরীফ)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ليغيظبهم الكفار.

অর্থ: “একমাত্র কাফিরেরাই উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায়  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.

অর্থ: “যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

حب الصحابة ايمان وبغضهم كفر

অর্থ: “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী। (কানযুল উম্মাল)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرة ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتسبوا اصحابى فلو ان احدكم انفق مثل احد ذهبا مابلغ مد احدهم ولا نصيفه.

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে গালি দিওনা। কেননা যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে, তবুও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের এক মূদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

অতএব, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রত্যেকের সম্পর্কেই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ মাত্রই সম্মান ও তা’যীম-তাকরীম এবং মুহব্বতের হক্বদার।

অথচ আজকাল অনেকেই হযরত উছমান যুননূরাইন আলাইহিস সালাম, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদেরকেসহ প্রায় সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সম্পর্কে এবং বিশেষ করে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে ব্যাপক সমালোচনা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! উনাদের সমালোচনা করতে গিয়ে যুক্তি পেশ করে থাকে যে, যদি উনারা হক্বের উপর থাকতেন, তবে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার জিহাদ হলো কেন? হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার জিহাদ হলো কেন? দু’দলের মধ্যে একদল নিশ্চয় হক্ব ও অপর দল নাহক্ব। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

মূলতঃ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের উক্ত যুক্তি মোটেও শুদ্ধ নয়। তার প্রমাণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قل كل يعمل على شاكلته فربكم اعلم بمن هو اهدى سبيلا

অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, প্রত্যেকেই উনার অভ্যাস বা আদত অনুযায়ী আমল করে থাকেন। তবে আপনাদের মহান রব তাআলা তিনি ভালো জানেন কে অধিক সুপথে রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা বণী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ হতে হযরত মুফাস্সিরীনে কিরাম দু’টি পথ নির্ধারণ করেছেন। একটি হলো সুপথ, অপরটি হলো অধিক সুপথ।

কাজেই, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে যে জিহাদ হয়েছে, ইখতিলাফ বা মতবিরোধ হয়েছে, তাতে কেউ সুপথে ছিলেন, আর কেউ অধিক সুপথে ছিলেন। অর্থাৎ প্রত্যেকেই হক্বের মধ্যে ছিলেন, কেউই নাহক্বের মধ্যে ছিলেন না।

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرة عمر بن الخطاب عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سألت ربى عن اختلاف اصحابى من بعدى فاوحى الى يا محمد ان اصحابك عندى بمنزلة النجوم فى السماء بعضها اقوى من بعض لكل نور فمن اخذ بشىء مماهم عليه من اختلافهم فهو عندى على هدى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم.

অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার বিছাল শরীফ উনার পরে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে জিজ্ঞাসা করেছি।” মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বললেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমার নিকট আকাশের তারকা সমতুল্য। কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশী, তবে প্রত্যেকেরই আলো রয়েছে। সুতরাং, উনাদের যেকোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়িয়ে ধরবে, তারা হিদায়েত পেয়ে যাবে। কারণ উনাদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য।” অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ (প্রত্যেকেই) তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)

প্রতিভাত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইখতিলাফও হিদায়েতের কারণ এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ উনাদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি সে বিষয়েই হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েতের উপর থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং, উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, উনাদেরকে দোষারোপ করা, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।

মূলতঃ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষীদের মধ্যে একটি চক্র রয়েছে যারা আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করার জন্য এবং উনাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করার লক্ষ্যে। কারন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অপূর্ণ বাতিল সাব্যস্ত করতে পারলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সত্য দ্বীন হিসেবে সাব্যস্ত হবে না। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই সম্মানিত ইসলাম বিদ্বেষীদের সম্পর্কে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পরে যে ছাহাবা বিদ্বেষী নামে দ্বীন ইসলাম ধ্বংসকারী একটি দল আত্মপ্রকাশ করবে, সে সম্পর্কে তিনি উম্মতকে সতর্ক করে ভবিষ্যদ্বাণীতে করেছেন-

عن حضرة انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سيأتى قوم يسبونهم ويستنقصونهم فلاتجالسوهم ولاتأكلوهم ولاتشاربوهم ولاتناكحوهم وفى رواية اخرى ولاتصلوا معهم ولاتدعولهم.

অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “অতি শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দোষারোপ করবে বা গালি দিবে, উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলবে। সাবধান! তোমরা তাদের মজলিসে বসবেনা, তাদের সাথে পানাহার করবেনা, তাদের সাথে বিবাহশাদীর ব্যবস্থা করবেনা। অন্য রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে, তাদের পেছনে নামায পড়বেনা এবং তাদের জন্য দোয়া করবেনা।”

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

عن حضرة ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رايتم الذين يسبون اصحابى فقولوا لعنة الله على شركم

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালি দিতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হোক।” (তিরমিযী শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে যে-

عن عويمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه وسلم قال ان الله اختارنى واختارلى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والملئكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منهم صرفا وعدلا.

অর্থ: “হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার, হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ উনাদের সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন না।” (তবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)

বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিয ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “ইসাবা” কিতাবের ১ম খ-ে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ হাফিয আবূ যারআ রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিম্নোক্ত বর্ণনা  উদ্ধৃত করেছেন-

اذا رايت الرجل ينقص احدا من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم فاعلم انه زنديق

অর্থ: “যখন কাউকে দেখবে যে, সে কোন একজন ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার অবমাননা করছে, তখন তুমি জানবে, সে ব্যক্তি নির্ঘাত যিন্দিক তথা কাফির।”

প্রসিদ্ধ সীরাত গ্রন্থ “শিফা” শরীফে বর্ণিত আছে-

ذكر اصحابى فامسكوا

 মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আলোচনাকালে তোমরা সংযত থেকো।”

সম্মানিত হানাফী মায্হাব উনার ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “ফিক্বহুল আকবর” কিতাবে উল্লেখ করেন-

لا نذكر احدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم الا بخير

 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ সম্পর্কেই আমরা সুধারণা পোষণ করি।”

অতএব, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে, উনাদেরকে মুহব্বত ও সম্মান করতে হবে। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবেনা, উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলা যাবে না, উনাদের কোনরূপ সমালোচনা ও দোষারোপ করা যাবেনা। কারণ সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা হচ্ছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি মুহব্বত রাখা, উনাদের যথাযথ তা’যীম-তাক্রীম করা “পবিত্র ঈমান” এবং উনাদের অনুসরণই হচ্ছে উম্মাহর হিদায়েত ও কামিয়াবী হাছিলের কারণ।

কেননা উনারা হলেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইমাম এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বোত্তম আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন। ফলে উনারা যেভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমলে যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, ঠিক সেভাবেই ঈমানের স্বীকৃতি দেয়া এবং আমলে নিয়োজিত হওয়া পরবর্তী উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,-

امنوا كما امن الناس

অর্থ: “তোমরা ঈমান আন যেভাবে মানুষগণ  অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনারা ঈমান এনেছেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فان امنوا بـمثل ما امنتم به

অর্থ: যদি তারা (মানুষেরা) আপনাদের মতো অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মতো ঈমান আনে তবেই তারা হিদায়েত লাভ করবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

رضى الله عنهم ورضوا عنه

“অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। অর্থাৎ উনারা পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করতে পেরেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

والسابقون الاولون من الـمهاجرين والانصار والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم رضوا عنه واعد لهم جنت تجرى من تحتها الانهار خلدين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم.

অর্থ: “হযরত মুহাজির ও হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, যাঁরা এ উম্মতের মধ্যে অগ্রগামী ও প্রথম উনাদের প্রতি এবং উনাদেরকে যাঁরা (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” উনাদের সকলের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ বেহেশ্ত নির্ধারিত রেখেছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে, উনারা সর্বদা সেই বেহেশ্তে অবস্থান করবেন, এটা উনাদের জন্য মহান সফলতা বা কামিয়াবী।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرة عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال من كان مستنا فليستن بمن قد مات فا الحى لا تؤمن عليه الفتنة اولئك اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم كانوا افضل هذه الامة ابرها قلوبا واعمقها علما واقلها تكلفا اختارهم الله لصحبة نبيه ولاقامة دينه فاعرفوا لهم فضلهم واتبعوا على اثرهم وتمسكوا بما استطتم من اخلاقهم وسيرهم فانهم كانوا على الهدى الـمستقيم.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। “যে ব্যক্তি সম্মানিত শরীয়ত উনার সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত যারা অতীত হয়েছেন, উনাদেরকে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের অনুসরণ করা। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম, আত্মার দিক দিয়ে অধিক পবিত্র, সম্মানিত ইলম উনার দিক দিয়ে সুগভীর। উনারা লোক দেখানো আমল করা হতে মুক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সম্মানিত দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথী বা ছাহাবী হিসেবে মনোনীত করেছেন। সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত, শান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং উনাদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথাসম্ভব উনাদের আখলাক্ব-চরিত্র মুবারককে গ্রহণ কর, কারণ উনারা হিদায়েত ও “ছিরাতুল মুস্তাক্বীম” উনার উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।” (মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩২)

অতএব, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কোন বিষয় সম্পর্কে বলতে হলে খুব সাবধানে বলতে হবে। অন্যথায় উনাদের শান বা মর্যাদা মুবারক উনার বিন্দু পরিমাণ খিলাফ হলে ঈমানহারা, মুরতাদ ও কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হবে।

 

আল্লামা মুহম্মদ আব্দুল হান্নান খান, মুসলিম নগরী, সুনামগঞ্জ

 

সুওয়াল: আমরা মক্তবে পবিত্র কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ এইভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকি-

اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وسلم

এতে কিছু জাহিল প্রকৃতির লোক সমালোচনা করে থাকে এবং এও বলে বেড়ায় যে, আমরা নাকি কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছি, অর্থাৎ

اشهد ان لا اله الا الله

উনার পরে وحده لا شريك له বাদ দিয়েছি।

এখন আমার সুওয়াল হলো- আমাদের শিক্ষা দেয়া সঠিক, নাকি তাদের বক্তব্য সঠিক? মেহেরবানী করে দলীল সহকারে জানাবেন।

জাওয়াব: আপনারা মক্তবে পবিত্র কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ যেভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকেন সেভাবেই সঠিক রয়েছে। কেননা আপনাদের শিক্ষা দেয়া কালিমায়ে শাহাদাত শরীফখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকেই প্রবর্তন করা হয়েছে।

যেমন মুত্তাফাকুন আলাইহি অর্থাৎ ছহীহ বুখারী শরীফ এবং ছহীহ মুসলিম শরীফ কিতাবদ্বয়ের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

بنى الاسلام على خمس شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله واقام الصلوة وايتاء الزكوة والحج وصوم رمضان.

অর্থ: সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। (১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ বা মা’বুদ নেই এবং নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম বান্দা ও শ্রেষ্ঠতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (২) নামায কায়িম করা বা আদায় করা (৩) যাকাত আদায় করা (৪) হজ্জ সম্পাদন করা এবং (৫) রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযা রাখা।

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারককৃত شهادة (শাহাদাত বা শাহাদাহ) শব্দ মুবারক এবং তৎপরবর্তী কালিমা থেকেই কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে-

اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

এছাড়া পবিত্র কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ উনার সমর্থনে আরো যেসমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে তন্মধ্যে কিছু হাদীছ শরীফ এখানে উল্লেখ করা হলো-

ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ কিতাবদ্বয়ে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে কিছুটা শাব্দিক পরিবর্তনে আরো বর্ণিত হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

امرت ان اقاتل الناس حتى يشهدوا ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله ويقيموا الصلوة ويؤتوا الزكوة الخ

অর্থ: আমাকে আদেশ মুবারক করা হয়েছে, যে পর্যন্ত মানুষেরা এই সাক্ষ্য প্রদান না করে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং নামায কায়িম না করে এবং যাকাত আদায় না করে, সে পর্যন্ত আমি যেন তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করি।

ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ কিতাবদ্বয়ে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে, রবীআ গোত্রের প্রতিনিধি দল যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হলেন তখন তিনি উনাদেরকে চারটি বিষয়ে আদেশ মুবারক করলেন, প্রথমে উনাদেরকে এক আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনতে আদেশ মুবারক করলেন এবং বললেন, আপনারা জানেন কি এক আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনা কি? উনারা উত্তর করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সমধিক জ্ঞাত। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-

شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله واقام الصلوة وايتاء الزكوة وصيام رمضان وان تعطوا من الـمغنم الـخمس.

অর্থ: এই সাক্ষ্য দেয়া যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নামায কায়িম করা, যাকাত আদায় করা ও রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযা রাখা, এছাড়া জিহাদলব্ধ মালের এক পঞ্চমাংশ জমা দেয়া।

ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ কিতাবদ্বয়ে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ما من احد يشهد ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله صدقا من قلبه الا حرمه الله على النار

অর্থ: যে ব্যক্তি অন্তরের সাথে সত্য জেনে এই সাক্ষ্য দিবে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

ছহীহ মুসলিম শরীফ কিতাবে হযরত উবাদাহ ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে আমি শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من شهد ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله حرم الله عليه النار

অর্থ: যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দিয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন।

বিশেষ করে আমরা নামাযে যে তাশাহহুদ পাঠ করি সেখানে পবিত্র কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ উনার প্রমাণই বহন করে।

যেমন সেখানে বর্ণিত রয়েছে-

اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অনুরূপ বর্ণনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকেও বর্ণিত রয়েছে।

উক্ত কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ সম্বলিত তাশাহহুদ শরীফখানা বর্ণিত হয়েছে ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। যা হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার একান্ত ও অনন্য ছাত্র যিনি হানাফী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত ধরে উনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, উক্ত তাশাহহুদ শরীফখানা ছিহাহ সিত্তাহসহ বহু হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।

উপরে উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের উপর ভিত্তি করেই আমরা যে পবিত্র কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ পাঠ করি তা প্রবর্তিত বা রচিত হয়েছে। যা ফিক্বাহ ও আক্বাঈদের কিতাবসমূহেও উল্লেখ রয়েছে।

অতএব, যারা উক্ত কালিমায়ে শাহাদাত শরীফ সম্পর্কে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করে, সমালোচনা করে বা বিরোধিতা করে তারা অজ্ঞ, জাহিল হওয়ার কারণেই সেটা করে থাকে। তাদের উচিত নিজেদের জিহালতি, অজ্ঞতা, মূর্খতা থেকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার করা। অন্যথায় হক্বের সমালোচনা ও বিরোধিতা করার কারণে তাদেরকে কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।

মুহম্মদ রুকনুদ্দীন, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: লা-মাযহাবীরা বলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাকি মাটির তৈরি মানুষ। নাউযুবিল্লাহ! তাদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে লা-মাযহাবীদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ  উনাদের খিলাফ এবং সর্বোপরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারক উনার খিলাফ ও মিথ্যা হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে।

কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন নূর মুবারকের সৃষ্টি। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুল-মাখলূক্বাত সৃষ্টির পূর্বে সর্বপ্রথম যেই নূর মুবারক সৃষ্টি করেন সেই নূর মুবারকই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র অজুদ পাক। এবং সেই পবিত্র অজুদ পাক হতে কুল-কায়িনাতের সৃষ্টি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

এ বিষয়ে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার একাধিক সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। বিশেষ করে এ বিষয়ে ৬০তম সংখ্যা থেকে ৮২তম সংখ্যা পর্যন্ত বিস্তারিত ফতওয়া প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত ফতওয়ার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে,্ একমাত্র হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস্ সালাম তিনি ব্যতীত আর কেউই মাটি হতে সৃষ্টি নন চাই তিনি নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম হোন কিংবা সাধারণ মানুষ হোন। মূলতঃ পবিত্র কুরআনুল কারীম উনার মধ্যে মানুষ মাটির তৈরি বলে যত পবিত্র আয়াত শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে তা দ্বারা শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। অন্য কেউ নন। যা সমস্ত তাফসীরের কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

واذ قال ربك للملئكة انى خالق بشرا من طين

অর্থ: “যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করবো মাটি দ্বারা।” (পবিত্র সূরা ছোয়াদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭১)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় জিঃ, ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

)انى خالق بشرا من طين) يعنى حضرت ادم عليه السلام.

অর্থ: “(নিশ্চয়ই আমি সৃষ্টি করবো বাশার মাটি থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে।”

আরো উল্লেখ্য, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত আর কেউই মাটির দ্বারা সৃষ্টি বা তৈরি নন সেটা স্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআনুল কারীম উনার মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।

ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وبدا خلق الانسان من طين ثم جعل نسله من سللة من ماء مهين.

অর্থ: এবং তিনি অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেন মাটি থেকে অতঃপর উনার বংশধর সৃষ্টি করেছেন স্বচ্ছ বা পবিত্র পানির নির্যাস থেকে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা সাজদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭, ৮)

এ আয়াতে কারীমা উনার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর উনার যারা আল আওলাদ অর্থাৎ বংশধর উনাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে বা হয়ে থাকে স্বচ্ছ বা পবিত্র পানির নির্যাস থেকে অর্থাৎ সেই স্বচ্ছ বা পবিত্র পানির নির্জাস থেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেক মানুষের দেহ বা আকৃতি কুদরতীভাবে মায়ের রেহেম শরীফে গঠন করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

هو الذى يصوركم فى الارحام كيف يشاء

অর্থ: তিনি মহান আল্লাহ পাক যিনি মায়ের রেহেমসমূহে তোমাদের আকৃতি গঠন করে থাকেন। যেরূপ ইচ্ছা করেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

কাজেই, প্রতিভাত হলো যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে মাটির সৃষ্টি বলাটাই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী বক্তব্য যা কুফরী। আর যিনি হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম তিনিসহ সমস্ত হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা, সমস্ত জিন-ইনসানের, সমস্ত সৃষ্টি-কায়িনাতের নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুদরতময় সৃষ্টি উনার রহস্য তো সম্পূর্ণই আলাদা। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনাকে মাটির সৃষ্টি বলাটা কত মারাত্মক কুফরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা দুশমন তারা ব্যতীত আর কেউই উক্ত কুফরী আক্বীদা পোষণ করতে পারে না।

মুহম্মদ আহসানুল্লাহ, শাহজাহানপুর, ঢাকা

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাত মাঝে হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের কি আক্বীদা?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ উনার ৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

انا ارسلناك شاهدا

 অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।’

জানা আবশ্যক, যিনি সাক্ষ্য দিবেন উনার জন্য যেরূপ হাযির বা উপস্থিত থাকা শর্ত, তদ্রƒপ নাযির বা দেখাও শর্ত।

কাজেই, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কুল-মাখলুক্বাতের সবকিছুই হাযির ও নাযির।

এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারীরা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ’ উনাদের বরাত দিয়ে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انما انا قاسم والله يعطى

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল-মাখলূক্বাতের যাকে যতটুকু ইচ্ছা তাকে ততটুকু নিয়ামত বণ্টন করেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, যিনি কুল-মাখলুক্বাতের জন্য নিয়ামত  বণ্টনকারী; তিনি যদি কুল-মাখলূক্বাতের কাছে হাযির বা উপস্থিত না থাকেন এবং তাদেরকে নাযির বা দেখে না থাকেন, তাহলে তিনি তাদের মাঝে কিভাবে নিয়ামত বণ্টন করবেন? কাজেই কায়িনাতের সমস্ত সৃষ্টির জন্য তিনি যেহেতু নিয়ামত বণ্টনকারী, সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখে না- তিনি হাযির-নাযির তো অবশ্যই বরং সবকিছুই উনার নিকট হাযির ও নাযির। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত নঈম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو كائن فيها الى يوم القيامة كانما انظر الى كفى هذه

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি, যেরূপ আমার হাত মুবারক উনার তালু মুবারক দেখে থাকি।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জিসিম ও ছূরত-এ দুটির কোনো একটি হিসেবে হাযির ও নাযির নন। বরং তিনি ছিফত অর্থাৎ ইলম ও কুদরত মুবারক উনার দ্বারা এবং ছিফত মিছালী ছূরত মুবারক হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত অর্থাৎ ইলম ও মু’জিযা শরীফ দ্বারা এবং ছিফত অর্থাৎ নূর ও রহমত মুবারক হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর উনার যেহেতু জিসিম ও ছূরত মুবারক রয়েছে, সেহেতু তিনি যে জিসিম মুবারকে পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করছেন উনার ইখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেই জিসিম মুবারক নিয়ে কোথাও হাযির হবেন না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ওই জিসিম মুবারক নিয়ে রওযা শরীফ থেকে উঠলে ক্বিয়ামত হয়ে যাবে। তাই তিনি উক্ত জিসিম মুবারক উনার অনুরূপ জিসিম মুবারক ও ছূরত মুবারক এবং মিছালী ছূরত মুবারক-এ কায়িনাত মাঝে হাযির ও নাযির থাকেন, যে কারণে উনার আশিকগণ উনাকে স্বপ্নে, মুরাক্বাবা-মুশাহাদার হালতে, এমনকি জাগ্রত অবস্থার মধ্যেও দেখে থাকেন এবং কথোপকথনও করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কুল-মাখলূক্বাতের সবকিছুই হাযির ও নাযির। এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারীরা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৯৪তম সংখ্যা পাঠ করুন।

 

মুহম্মদ এনামুল হুসাইন, পলাশ, নরসিংদী

 

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের ঈমানদার ও জান্নাতী হওয়ার বিষয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে থাকে। এ বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা কি?

জাওয়াব: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিতা মাতা হযরত আমিনাহ বাররাহ আলাইহাস সালাম উনারা হচ্ছেন ঈমানের মালিক এবং জান্নাতেরও মালিক। অর্থাৎ উনাদের প্রতি সুধারণা পোষন না করা পর্যন্ত কেউ ঈমানদার বলে গণ্য হবে না। আর উনারাই হচ্ছেন জান্নাতের মালিক অর্থাৎ উনাদের যিনি একমাত্র আদরের সন্তান উনার উসীলায় জান্নাত সৃষ্টি হয়েছে।

কাজেই যেই সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের প্রিয় সন্তান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় জান্নাত সৃষ্টি হয়েছে উনারই পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারাই যদি জান্নাতী না হন তাহলে আর কারো পক্ষেই জান্নাতী হওয়া সম্ভব নয়।

অতএব, উনাদের ঈমানদার ও জান্নাতী হওয়ার ব্যাপারে কোন মুসলমানের কোন সংশয় সন্দেহ থাকতে পারে না। যারা কাফির পথভ্রষ্ট কেবল তারাই উনাদের ঈমানদার ও জান্নাতী হওয়ার ব্যাপার সন্দেহ বা চু-চেরা করতে পারে।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৮২তম সংখ্যা পাঠ করুন।

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুরা।, ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ১৪)

সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :

তৃতীয় প্রমাণ:

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ ثَوْبَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَقْتَتِلُ عِنْدَ كَنْزِكُمْ ثَلاَثَةٌ  كُلُّهُمُ ابْنُ خَلِيْفَةٍ  وَفِىْ رِوَايَةٍ  اُخْرٰى وُلْدُ خَلِيْفَةٍ ثُـمَّ لاَ يَصِيْرُ اِلـٰى وَاحِدٍ مِنْهُمْ وَفِىْ رِوَايَةٍ  اُخْرٰى لاَ يَصِيْرُ الْاَمْرُ اِلـٰى وَاحِدٍ مِنْهُمْ ثُـمَّ تَطْلُعُ الرَّايَاتُ السُّوْدُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ فَيَقْتُلُوْنَكُمْ قَتْلاً لَـمْ يُقْتَلْهُ قَوْمٌ  ثُـمَّ ذَكَرَ شَيْئًا لاَ أَحْفَظُه فَقَالَ فَاِذَا رَاَيْتُمُوْهُ فَبَايِعُوْهُ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ فَاِنَّه خَلِيْفَةُ اللهِ الْمَهْدِيُّ.

অর্থ : “হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, )হযরত ইমাম  মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে) আপনাদের এই কেন্দ্রের নিকট তিনজন ব্যক্তি শহীদ হবেন। উনারা প্রত্যেকেই হবেন একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ বা সন্তান। অন্য বর্ণনায় এসেছে-  وُلْدُ خَلِيْفَةٍতথা উনারা প্রত্যেকেই হবেন একজন আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক বংশধর। অতঃপর তিনি উনাদের একজনের নিকটও পৌঁছবেন না। অন্য বর্ণনায় এসেছে, অতঃপর উনাদের একজনের নিকটও সম্মানিত খিলাফত মুবারক পৌঁছবেন না তথা উনাদের সম্মানিত খিলাফত মুবারক স্থায়ী হবে না। তারপর পূর্ব দেশ থেকে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। অতঃপর তারা তোমাদেরকে এমনভাবে শহীদ করবে, যেমনটি ইতঃপূর্বে কোনো জাতি করেনি। রাবী বলেন, এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো কিছু আলোচনা মুবারক করেছেন, যা আমার স্মরণে নেই। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তারপর তোমরা যখন (হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম) উনাকে  দেখতে পাবে, তখন উনার মুবারক হাতে  বাইয়াত গ্রহণ করবে, যদিও তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়। কেননা তিনিই হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম।” (বিদায়া-নিহায়া ৬/২৪৬, দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী ৬/৫১৫, জামিউল আহাদীছ ৯/৩৩৩, তারিখে দিমাশক্ব ৩২/২৮১, খছাইছুল কুবরা ২/২০২, ইযালাতুল খফা ১/৬০৭, নিহায়া ফিল ফিতান- ২৬, মুসনাদে বায্যার ২/১২০, মুুসনাদে রুইয়ানী ১/২০৯, মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৬৩, আস সুনানুল ওয়ারিদা ৫/১০৩২, ফাতহুল কাবীর ৩/৪০২, আহকামুশ শরীয়াহ, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক, ইবনে মাজাহ শরীফ ইত্যাদি)

এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমেও দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে, বর্তমান যামানায় অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং যারা বলে থাকে যে, ‘সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের কোথাও নেই যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে খিলাফত কায়িম হবে। বরং হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি এসে দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত মুবারক কায়িম করবেন। এর আগে কখনও দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত মুবারক কায়িম হবে না।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! তাদের এই বক্তব্য আবারও ভুল এবং সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বলে প্রমাণিত হলো। এরপরেও এই বিষয়ে যদি কেউ চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করে, তাহলে তা সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ হওয়ার কারণে সুস্পষ্ট কুফরী হবে। তাদেরকে খালিছ তাওবা-ইসতিগফার করতে হবে।

এখন কথা হলো যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে সম্মানিত খিলাফত মুবারক কায়িম যদি আর না-ই হয়, তাহলে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ অথবা একজন আখাচ্ছুল খাছ মহান খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার বংশধর মুবারক আসবেন কোথা থেকে? অথচ উপরোক্ত সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে-

يُقْتَلُ عِنْدَ كَنْزِكُمْ هذَا ثَلاَثَةٌ كُلُّهُمُ ابْنُ خَلِيْفَةٍ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اُخْرٰى وُلْدُ خَلِيْفَةٍ….

“আপনাদের এই কেন্দ্রের নিকট তিনজন ব্যক্তি শহীদ হবেন। উনারা প্রত্যেকেই হবেন একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ। অন্য বর্ণনায় এসেছে, উনারা প্রত্যেকেই হবেন একজন আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক বংশধর।” সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উনারাও খলীফা হবেন। তবে সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে যে খাছভাবে ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম  উনাদের কথা বলা হয়েছে উনারা সেই সুমহান ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত নন; কিন্তু উনারা সৎ ও ইনসাফগার খলীফা হবেন। উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক মনোনীত। অতঃপর হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হিসেবে প্রকাশ পাবেন। (সুবহানাল্লাহ)

সুতরাং এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার থেকে দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, একজন আখাচ্ছুল খাছ মহান খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ইমাম মাহদী আলাহিস সালাম উনার অনেক পূর্বেই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন। আর উনার প্রতিষ্ঠিত সেই মহাসম্মানিত খিলাফত মুবারকই উনার পরবর্তী মুবারক বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম দিয়ে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত যেয়ে পৌঁছবে। সুবহানাল্লাহ!

তাহলে এখন বলার বিষয় হচ্ছে, কে সেই আখাচ্ছুল খাছ মহান খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম যিনি হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার অনেক পূর্বে দুনিয়ার যমীনে, সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন এবং উনার প্রতিষ্ঠিত সেই মহাসম্মানিত খিলাফত মুবারকই উনার পরবর্তী মুবারক বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম দিয়ে সর্বশেষ ইমাম ও খলীফা, ১২তম খলীফা  হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত যেয়ে পৌঁছবে? কে সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক? আমরা জানি, সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে এই পর্যন্ত ৯ জন মহান খলীফা আলাইহমুস সালাম উনারা অতীত হয়েছেন। কিন্তু উনাদের কারো প্রতিষ্ঠিত সম্মানিত খিলাফত মুবারকই বর্তমানে স্থায়ী নেই। কেননা বর্তমানে সারা বিশ্বে চলছে গণতন্ত্র এবং চরম যালিম ও গোমরাহ শাসকদের শাসন ব্যবস্থা। পৃথিবীর কোথাও সম্মানিত ইনসাফ মুবারক ও ন্যায় বিচার উনাদের লেশমাত্র অবিশিষ্ট নেই; আর সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার তো প্রশ্নই উঠে না। হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১২তম খলীফা। আর ১০ম খলীফা হচ্ছেন, যিনি সমস্ত খলীফাগণ উনাদের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস্ সাফ্ফাহ আলাইহিস সালাম তিনি এবং ও ১১তম খলীফা হচ্ছেন উনারই সুমহান আওলাদ, খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস্ সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং এই বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মূলত সেই সুমহান আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন যিনি আমাদের প্রাণের আক্বা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। (সুবহানাল্লাহ) তিনি অতিশীঘ্রই দুনিয়ার যমীনে, সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনার প্রতিষ্ঠিত সেই মহাসম্মানিত খিলাফত মুবারকই উনার সুমহান আওলাদ, ১১তম খলীফা, খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদাহ হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার পরবর্তী মুবারক বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম দিয়ে ১২তম খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত যেয়ে পৌঁছবে। আর হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনিও হবেন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত। (সুবহানাল্লাহ) তাই মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক হচ্ছে, ‘আবুল খুলাফা তথা হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা। (সুবহানাল্লাহ)

 

মুহম্মদ তৈমুর রহমান, আটোয়ারী, পঞ্চগড়

 

সুওয়াল: কেউ কেউ পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ উনার ১১০ নং আয়াত শরীফ এবং পবিত্র সূরা হামীম সাজদাহ উনার ৬ নং আয়াত শরীফ-

قل انـما انا بشر مثلكم يوحى الى

দলীল হিসেবে গ্রহণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্যান্য মানুষের মতো বলতে চায়। তাদের বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা অন্যান্য মানুষের মতো বলতে চায় তারা মূলত আশাদ্দুদ দরজার জাহিল ও পথভ্রষ্ট। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্যান্য মানুষের মতো মনে করা সুস্পষ্ট কুফরীর শামিল। মূলতঃ যারা কাফির কেবল তারাই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তাদের মতো মানুষ বলে মনে করতো।

যেমন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওম এবং আদ ও ছামূদ গোত্রের লোকেরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে বে-আদবী করতে গিয়ে বলেছিলো-

ان انتم الا بشر مثلنا

অর্থাৎ আপনারা তো আমাদের মতোই বাশার (মানুষ)। (পবিত্র সূরা ইব্রাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)

একইভাবে ফিরআউনের লোকেরা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাদের ব্যাপারে বলেছিলো-

انؤمن لبشرين مثلنا

অর্থাৎ আমরা কি আমাদের মতোই দু’জন বাশার তথা মানুষ উনাদের উপর ঈমান আনবো। (পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৭)

কাফির সর্দাররা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনাকে বলেছিলো-

ما نراك الا بشرا مثلنا

অর্থাৎ আমরা তো আপনাকে আমাদের মতোই (বাশার) মানুষ দেখতে পাচ্ছি। (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)

হযরত ছালিহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাফিররা বলেছিলো-

ما انت الا بشر مثلنا

অর্থাৎ আপনি তো আমাদের মতোই মানুষ। (সূরা শুয়ারা: আয়াত শরীফ ১৫৪)

হযরত হূদ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে কাফিরেরা বলেছিলো-

ما هذا الا بشر مثلكم يأكل مما تأكلون منه ويشرب مما تشربون

অর্থাৎ এই লোকটি তিনি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা আহার করো, তিনিও তা আহার করেন এবং তোমরা যা পান করো তিনিও তা পান করেন। (পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

এমনকি যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কেও কাফিরেরা বলেছিলো-

هل هذا الا بشر مثلكم افتاتون السحر وانتم تبصرون.

অর্থ: “ইনি তো তোমাদের মতো ‘বাশার’ ব্যতীত কেউ নন। তা সত্ত্বেও কি তোমরা দেখে শুনে জাদুর শিকার হবে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে তারা আরো বলতো-

مال هذا الرسول ياكل الطعام ويمشى فى الاسواق

অর্থ: “ইনি কেমন রসূল যিনি খাদ্য খান এবং বাজারে যান।” (পবিত্র সূরা ফুরকান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

মক্কা শরীফ উনার কাফির ওলীদ বিন মুগীরা সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বলেছিলো-

ان هذا الا قول البشر

অর্থাৎ- ইহা তো মানুষের কথা ছাড়া আর কিছু নয়। (পবিত্র সূরা মুদ্দাছ্ছির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫)

কাজেই, উল্লিখিত আয়াতে কারীমাসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিজের মতো মানুষ বলা কাফিরদের অন্যতম একটি স্বভাব।

মূলত কাদিয়ানীরা যেমন  خاتم النبين এর মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করে থাকে তদ্রƒপ বাতিল আক্বীদা ও ফিরক্বার লোকেরা পবিত্র সূরা হামীম সাজদা শরীফ উনার আয়াত শরীফ-

قل انـما انا بشر مثلكم يوحى الى

উনার মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের মতো মানুষ বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ ও মর্ম হলো- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ওই মুশরিকদের বলে দিন যে, আমি তোমাদের মেছাল (ছূরতান) একজন মানুষ, (হাক্বীক্বতান আমি একজন রসূল) আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে। সুবহানাল্লাহ

পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য কারো মতো বলা হয়নি। মোটেও নয়। কারণ উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই

يوحى الى

অর্থাৎ ‘আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে’ এ বাক্যটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সকল মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। যেহেতু অন্য মানুষের নিকট ওহী মুবারক আসে না।

উদাহরণস্বরূপ حيوان ‘হাইওয়ান’ বা প্রাণী বলতে মানুষকেও বুঝায় এবং অন্যান্য জীব-জন্তুকেও বুঝায়। তবে কি তারা একথা বলবে যে, গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা ইত্যাদির মতো তারা ‘হাইওয়ান’। নাউযুবিল্লাহ!

মূলত মানুষ হাইওয়ান বটে কিন্তু গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা প্রভৃতি হাইওয়ানের মতো নয়। কেননা মানুষ হলো ‘হাইওয়ানে নাতিক্ব’ অর্থাৎ বাকশক্তিসম্পন্ন জীব। মানুষ বিবেক, জ্ঞান ও বাক শক্তির অধিকারী। যেরূপ এ নাতিক্ব বা ‘বাকশক্তি সম্পন্ন’ শব্দটি মানুষকে অন্যান্য জীব-জন্তু হতে পৃথক করে দিয়েছে তদ্রƒপ يوحى الى (আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে) এ বাক্য মুবারক দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাধারণ মানুষ থেকে পৃথক করে দিয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ينساء النبى لستن كاحد من النساء

অর্থ: হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম! অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আপনারা অন্য কোন মহিলাদের মতো নন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

এখানে বিশেষভাবে জানা অপরিহার্য্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া উনাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যদি অন্য কোন মহিলাদের মতো না হন তাহলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি করে অন্য পুরুষ তথা অন্য মানুষের মতো হবেন? প্রকৃতপক্ষে তিনি কারো মতোই নন। যেমন ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لست كاحد منكم

অর্থাৎ- “আমি তোমাদের কারো মতো নই।”

আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ايكم مثلى انى ابيت يطعمنى ربى ويسقينى

অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে কে আছো আমার মতো। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে রাত্রি যাপন করি, তিনিই আমাকে খাওয়ান এবং তিনিই আমাকে পান করান।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির পর থেকে যমীনে আগমনের পূর্ব পর্যন্ত শুধুমাত্র নূর মুবারক উনার ছূরত বা আকৃতি মুবারক-এ ছিলেন। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূর মুবারক উনার দ্বারা সৃষ্টি। তাই বলে কি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনও একথা বলেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের মতো? বললে কি সে কথা শুদ্ধ হতো? অবশ্যই না। তাহলে বাশারী ছূরত মুবারক উনার কারণে তিনি অন্য মানুষের মতো হন কি করে?

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের তেইশ বছর যিন্দিগী মুবারক-এ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি চব্বিশ হাজার বার সাক্ষাৎ মুবারক করেছেন। এরমধ্যে তিনি অনেক সময় ছাহাবী হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুবারক ছূরত বা আকৃতিতে সাক্ষাৎ মুবারক করেছেন। এছাড়া পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মানব আকৃতি ধারণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও ‘বাশার’ বা মানব শব্দটি উল্লেখ আছে। এখন বাশার ছিফত মুবারক উনার অধিকারী হওয়ার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা তাদের মতো সাধারণ মানুষ বলছে, তাহলে তারা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকেও তাদের মতো মানুষ বলুক। কিন্তু তারা তো তা বলছে না।

একইভাবে জিনেরাও মানুষের ছূরত ধারণ করে চলাফেরা করে, মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করে সেজন্য তাদেরকে কি মানুষ বলা শুদ্ধ হবে? কস্মিনকালেও নয়।

উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে কটূক্তি করে যারা বলছে যে, তিনি নাকি তাদের মতোই সাধারণ মানুষ। নাঊযুবিল্লাহ! যারা এরূপ জঘন্য উক্তি করছে তারা কি কখনও তাদের দলে আমীর, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতকে কুকুরের দাঁতের মতো বলবে? যদিও কুকুরের দাঁত তাদের আমীর, মুরুব্বী, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতের চেয়েও শক্ত।

আরো উল্লেখ্য, জগৎ কুখ্যাত নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাব এরাও তো মানুষ, তাহলে মাঝে মাঝে ওইসব কুলাঙ্গাররা নিজেদের বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য বলুক যে, সে এবং তাদের আমীর ও মুরুব্বী গং নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাবের মতোই।

এসব পথভ্রষ্ট জাহিলদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি যথার্থই ইরশাদ মুবারক করেছেন-

من اتخذ الهه هواه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوة

অর্থ: “যে ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিকে স্বীয় উপাস্য স্থির করে নেয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দেন এবং তার চোখের উপর আবরণ বা পর্দা রেখে দেন।” (পবিত্র সূরাতুল জাছিয়াহ:২৩)

ফলে, এদের পক্ষে হক্ব জানা, বুঝা, অনুধাবন করা এবং তা মানা ও গ্রহণ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

মুহম্মদ ইরফানুল হক, বানারীপাড়া, বরিশাল

সুওয়াল: দেওবন্দী ও ক্বওমীপন্থী অনেক মৌলভী বলে থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নাকি সর্বপ্রথম ক্বলম সৃষ্টি করেছেন। তাদের এ বক্তব্য কতটুকু শুদ্ধ?

জাওয়াব: তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার প্রকাশ্য বিরোধী। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اول شىء خلق الله القلم من نور واحد.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন একখানা নূর মুবারক (নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার থেকে।” (ইবনে আবি হাতিম ১-৯, আহমদ ৫-২১৭১, আত্ তয়ালিস ৫৭৭, তিরমিযী ২-২৩, দাইলামী-২)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকেই প্রতিভাত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক থেকেই ক্বলমের সৃষ্টি হয়েছে। যা হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ থেকেও প্রমাণিত রয়েছে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اول ما خلق الله نورى وخلق كل شىء من نورى

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।” (নূরে মুহম্মদী, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت اول النبى فى الخلق واخرهم فى البعث.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।” (তাফসীরে বাগবী ৫/২৩২, দুররে মানছূর ৫/১৮৪, শিফা ১/৪৬৬, মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬, কানযুল উম্মাল ৩১৯১৬, দাইলামী ৪৮৫০) মিরকাত ১১/৫৮)

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা দেওবন্দী ও ক্বওমী মৌলভীদের বক্তব্য ভুল ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বিরোধী বলে প্রমাণিত হলো। যা কাট্টা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ, লাখাই, হবিগঞ্জ

সুওয়াল: কেউ কেউ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা আ’রাফ উনার ১৮৮ নং আয়াত শরীফ উনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গইব সম্পর্কে জানতেন না। নাউযুবিল্লাহ!

এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব:

সুওয়ালে উল্লেখিত আয়াত শরীফখানা হলো:

قل لا املك لنفسى نفعا ولا ضرا الا ما شاء الله ولو كنت اعلم الغيب لاستكثرت من الخير وما مسنى السوء ان انا الا نذير وبشير لقوم يؤمنون

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার যাহিরী বা শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- “হে আমার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের উপকার কিংবা অপকার করার মালিক নই, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান। (অর্থাৎ আমি সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ফানা, তাই আমি নিজ থেকে কোনো কিছুই করিনা। তিনি যা চান আমিও তাই চাই) আর যদি আমি গইব সম্পর্কে জানতাম তাহলে অবশ্যই আমি বেশি পরিমাণে উত্তম কাজ করতাম এবং কোন মন্দ বা খারাবী আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না। (অর্থাৎ আমি ইলমে গইব জানার কারণে সর্বাবস্থায় ভাল কাজ করি আর তাই আমাকে কোনো মন্দ বিষয় স্পর্শও করতে পারেনা) আমি অবশ্যই সতর্ককারী এবং সুসংবাদ প্রদানকারী ওই সকল লোকদের জন্য যারা ঈমানদার।”

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারাও যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গইব সম্পর্কে জানেন সে কথাই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لاستكثرت من الخير وما مسنى السوء

অর্থ: অবশ্যই আমি বেশি বেশি উত্তম কাজই করতাম এবং কোন অনুত্তম বা মন্দা বিষয় আমাকে স্পর্শ করতো না।

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গইব সম্পর্কে জানতেন বলেই উনার সমস্ত কাজ বা বিষয়ই ছিল সর্বোত্তম তার বিপরীত কোন অনুত্তম বা মন্দ বিষয় উনাকে স্পর্শ করেনি। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, উছূলে তাফসীর কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-

لكل كلام ظاهر وباطن

 প্রতিটি কালামের একটি যাহির বা বাহ্যিক এবং আরেকটি বাতিন বা আভ্যন্তরীণ দিক তথা অর্থ রয়েছে।

কাজেই, সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ১৮৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বাতিনী বা আভ্যন্তরীণ অর্থাৎ একটা হাক্বীক্বী অর্থ হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গইব সম্পর্কে জানতেন। যার কারণে উনার সবকিছুই ছিল সর্বোত্তম এবং উনাকে কোনো খারাবী স্পর্শ করেনি। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, সুওয়ালে উল্লেখিত সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ১৮৮নং আয়াত শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গইব উনার অধিকারী।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১২৯তম সংখ্যা পাঠ করুন।

মুহম্মদ নাজমুল ইসলাম, জুড়ি, মৌলভীবাজার

সুওয়াল: অষ্টম শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ১১৮ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় আল কুরআনের সর্বজনীন গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করেন।… দেশ পরিচালনায় জনগণের মতামতের স্বীকৃতি দেন। যা গণতন্ত্রের মূল কথা।” নাউযুবিল্লাহ! এ লেখাটি কতটুকু শরীয়তসম্মত?

সুওয়ালে উল্লেখিত লেখা থেকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তা হচ্ছে-

১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? ২. তিনি কি রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন? ৩. তিনি কি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন? ৪. তিনি কি গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করেছিলেন? ৫. পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কি গণতান্ত্রিক নীতি সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে? ৬. তিনি কি জনগণের মতামতের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন? নাউযুবিল্লাহ!

জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লেখিত লেখাটি সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ হয়েছে। অর্থাৎ কাট্টা কুফরী হয়েছে। প্রথমত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ হয়েছে। কারণ তিনি কখনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি এবং রাজনীতি করেননি আর নেতৃত্বও দেননি।

আর সুওয়ালে উল্লেখিত লেখা থেকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তার জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে নিম্নে দেয়া হলো:

প্রশ্ন নং: ১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উক্ত ১নং প্রশ্নের জাওয়াবে বলতে হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি। বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আহকাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেন।

আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আর রাষ্ট্র একই বিষয় নয়। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী বা বিপরীতমুখী বিষয়। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সাথে রাষ্ট্রের কোনই সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্র পরিচালনা ও প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কেবলমাত্র মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তা পুরুষ-মহিলা, ফাসিক-ফুজ্জার, কাফির-মুশরিক, জাহিল-মূর্খ যে কেউ করতে পারে। কিন্তু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত সম্মানিত ওহী মুবারক উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। উনার সম্মানিত, মনোনীত ও শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং উনার মনোনীত খলীফা ও নায়িব হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং হযরত ইমাম মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম রাষ্ট্রকে সমর্থন বা স্বীকার করেনা। কেননা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পরিধি হচ্ছে সারা বা সমস্ত বিশ্বব্যাপী কিন্তু রাষ্ট্রের পরিধি সীমিত। রাষ্ট্রের সংজ্ঞা সম্পর্কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা বলে থাকে, রাষ্ট্রের কয়েকটি উপাদান থাকা আবশ্যক। (১) সার্বভৌমত্ব (২) জনসমষ্টি (৩) নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা (৪) সরকার ইত্যাদি।

অথচ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যধারী কোনো রাষ্ট্রকে সমর্থন করে না। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনা করলে তা হবে হয় রাজতন্ত্র, নয় গণতন্ত্র অথবা মানব রচিত অন্য কিছু যার সাথে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীকে প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপ্রধান ইত্যাদি বলে।

কাজেই, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মর্মে যে বক্তব্য লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা যা উনার পবিত্র শান মুবারক উনার চরম খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اتقوا الحديث عنى الا ما علمتم فمن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.

অর্থ: “তোমরা যা জান, তা ব্যতীত আমার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে ভয় করো। কেননা যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিলো।” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ১৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ان الدين عند الله الاسلام

 অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত পবিত্র দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।”

আবার একই পবিত্র সূরা শরীফ উনার ৮৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الـخاسرين

অর্থ: “যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদের নিয়ম-নীতি গ্রহণ করবে সেটা তার থেকে কবুল করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ জাহান্নামী হবে।” নাউযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

هو الذى ارسل رسوله بالـهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য দ্বীন এবং হিদায়েতসহ পাঠিয়েছেন অতীতের সমস্ত দ্বীনের উপর এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত মানব রচিত সমস্ত মতবাদের উপর প্রাধান্য দিয়ে, যার সাক্ষী স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই। (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য তর্জ-তরীক্বা, মতবাদ (যেমন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র) সম্পূর্ণরূপে হারাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

من تشبه بقوم فهو منهم

 “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখবে, তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ)

তাহলে এ কথা কি করে বলা সম্ভব যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অতিশীঘ্রই এই কুফরীমূলক বক্তব্য পাঠ্যবই থেকে অপসারণ করতে হবে।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ