সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৫০তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আফজালুল হক মিয়া,রাজারহাট

মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল বাক্বী, ধামইরহাট, নওগাঁ

 

সুওয়াল: তা’বীয লেখা ও ব্যবহার করা এবং ঝাড়-ফুঁক দেয়া ও গ্রহণ করা ইসলামী শরীয়াত উনার হুকুম বা বিধান অনুযায়ী জায়িয কি? দলীল সহ জানিয়ে ঈমান শুদ্ধ করতে সাহায্য করবেন।¬

জাওয়াব: পবিত্র ইসলামী শরীয়াহ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস উনার দৃষ্টিতে তামীমাহ বা তা’বীয লেখা ও ব্যবহার করা এবং ঝাড়-ফুঁক দেয়া ও গ্রহণ করা জায়িয ও সুন্নাত উনার অন্তর্ভুক্ত। যদি তামীমাহ বা তা’বীয এবং ঝাড়-ফুঁক পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইবারত, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক ও শরীয়াত সম্মত বাক্য দ্বারা হয়।

আর যদি তা শরীয়াত বহির্ভুত শব্দ ও বাক্য দ্বারা এবং কুফরী শব্দ ও বাক্য দ্বারা লেখা হয়, দেব-দেবীদের নাম উল্লেখ পূর্বক লেখা হয় তাহলে তা ব্যবহার করা ও গ্রহণ করা হারাম ও র্শিক।

আমরা নিম্নে তামীমাহ বা তা’বীয এবং ঝাড়-ফুঁক সম্পর্কে আলাদাভাবে আলোচনা করবো।

তামীমাহ বা তা’বীয ব্যবহার করার বিধান

পবিত্র ইসলামী শরীয়াহ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস উনার দৃষ্টিতে তামীমাহ বা তা’বীয লেখা ও ব্যবহার করা জায়িয ও সুন্নাত উনার অন্তর্ভুক্ত। যদি তামীমাহ বা তা’বীয পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইবারত, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক ও শরীয়াত সম্মত বাক্য দ্বারা হয়। কিন্তু যদি তা শরীয়াত বহির্ভুত শব্দ ও বাক্য দ্বারা এবং কুফরী শব্দ ও বাক্য দ্বারা লেখা হয়, দেব-দেবীদের নাম উল্লেখ পূর্বক লেখা হয় তাহলে তা ব্যবহার করা ও গ্রহণ করা হারাম ও র্শিক। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَنُنَزّلُ مِنَ الْقُرْانِ مَا هُوَ شِفَاءٌ ورَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ

অর্থ: আমি পবিত্র কুরআন মাজীদ নাযিল করেছি, যা মু’মিন উনাদের জন্য শিফা’ (আভ্যন্তরিন ও বাহ্যিক রোগমুক্তি) ও রহমত স্বরূপ। (পবিত্র সূরাতুল ইস্রা শরীফ অর্থাৎ পবিত্র সূরাহ বাণী ইসরাঈল শরীফ: ৮২)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরুল্ কুরতুবী’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে-

قال الخليل بن احمد رحمة الله عليه: التميمة قلادة فيها عوذ، والودعة خرز. وقال ابو عمر رحمة الله عليه: التميمة فى كلام العرب القلادة، ومعناه عند اهل العلم ما علق فى الاعناق من القلائد خشية العين او غيرها من انواع البلاء. … وما روى عن ابن مسعود رضى الله عنهما يجوز ان يريد بما كره تعليقه غير القران اشياء مأخوذة عن العراقيين والكهان، اذ الاستشفاء بالقران معلقا وغير معلق لا يكون شركا، وقوله عليه السلام: “من علق شيئا وكل اليه” فمن علق القران ينبغى ان يتولاه الله ولا يكله الى غيره، لانه تعالى هو المرغوب اليه والمتوكل عليه فى الاستشفاء بالقران. و سيل ابن المسيب رحمة الله عليه عن التعويذ ايعلق؟ قال: اذا كان فى قصبة او رقعة يحرز فلا بأس به. وهذا على ان المكتوب قران. وعن الضحاك رحمة الله عليه انه لم يكن يرى بأسا ان يعلق الرجل الشىء من كتاب الله اذا وضعه عند الجماع وعند الغائط. ورخص ابو جعفر محمد بن على عليه السلام فى التعويذ يعلق على الصبيان. وكان ابن سيرين رحمة الله عليه لا يرى بأسا بالشىء من القران يعلقه الانسان.

অর্থ: ‘হযরত খলীল ইবনে আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: তামীমাহ বা তা’বীয এমন গলার হারকে বলা হয়, যার দ্বারা অনিষ্ঠতা থেকে পরিত্রাণ চাওয়া হয়। হযরত আবূ আমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আরবদের পরিভাষায় কণ্ঠহারকে তামীমাহ বা তা’বীয বলা হয়। আহলুল ইল্ম অর্থাৎ হক্কানী-রব্বানী উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পরিভাষায়- বদ নয্র বা কুদৃষ্টি থেকে অথবা যে কোন রোগ-ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য গলায় যে কণ্ঠহার পরিধান করা হয় তাকেই তামীমাহ বা তা’বীয বলা হয়ে থাকে। … বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত যে, তিনি তা’বীয ব্যবহার করা জায়িয বলেন এই শর্তে যে, যদি তা ইরাকী গণকদের মত পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার বিপরীত অপছন্দনীয় কিছু দ্বারা না হয়। যদি পবিত্র কুরআন মাজীদ দ্বারা তা’বীয লটকিয়ে অথবা না লটকিয়ে বা ঝাড়-ফুঁক করে রোগ-মুক্তি চাওয়া হয়, তাহলে এমনটি র্শিক হবে না। সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন রহমাতুল্লিল আলামীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: ‘যে ব্যক্তি কিছু লটকায় তাকে তার প্রতি সোপর্দ করা হয়।’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ উনার দ্বারা তা’বীয বানিয়ে গলায় লটকায় এই বিশ্বাসে যে, যার নিয়ন্ত্রণকারী মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই এবং তার ভরসা মহান আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোন গাইরুল্লাহ-র দিকে থাকবে না, তাহলে তা জায়িয। কেননা, এখানে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রহমত পাওয়াই মুল কাম্য বিষয়। আর তাওয়াক্কুলকারী পবিত্র কুরআন মাজীদ দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কাছেই তাওয়াক্কুল কামনা করে থাকে। হযরত সাইল ইবনে মুসাইয়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, গলায় তা’বীয ব্যবহার করা কেমন? তিনি জাওয়াবে বললেন: যদিও তা বাঁশ বেত হাড় ছিদ্র করে হোক অথবা কাগজ বা কাপড়ের টুকরা দ্বারা ব্যবহার করা হোক, এমন তা’বীয ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ তা জায়িয। আর ইহা লেখা হবে পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকেই। হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: কোন ব্যক্তি যদি পবিত্র কিতাবুল্লাহ অর্থাৎ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকেই তা’বীয বানিয়ে ব্যবহার করে তাহলে ব্যবহার করাতে নাজায়িয হবে না। তবে শর্ত হলো ইহা জিমা’ বা আহলিয়ার সাথে একান্ত অবস্থানের সময় এবং ইস্তিন্জা করার সময় খুলে রাখতে হবে। হযরত আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ বিন আলী আলাইহিস সালাম তিনি শিশুদের গলায় তা’বীয ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। আর হযরত ইবনু সীরীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার থেকে তা’বীয তৈরি করে মানুষ কর্তৃক ব্যবহার করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা জারী করেননি।’

হযরত আবূ বকর আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আবী শায়বাহ ঈসা কূফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আল-মুছান্নিফ লিইবনি আবী শায়বাহ’ নামক হাদীছ শরীফ উনার প্রাচীন ও ছহীহ কিতাব উনার ‘কিতাবুত তিব্ব’ উনার মধ্যে তা’বীয জায়িয হওয়ার পক্ষে অনেকগুলো হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে। যা উল্লেখ করা হলো:

۲۱-  مَنْ رخَّصَ فِي تعلِيقِ التَّعَاوِيذِ: عَنْ ابِى عِصْمَةَ رحمة الله عليه قَالَ: سَالْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ رحمة الله عليه عَنِ التَّعْوِيذِ؟ فَقَالَ: لاَ بَأْسَ بِه اِذَا كَانَ فِى ادِيمٍ.

অর্থ: “২১ নং পরিচ্ছেদ- তা’বীয ঝুলানো বা ব্যবহার করতে যাঁরা অনুমতি দিয়েছেন প্রসঙ্গে:

(১) হযরত আবূ ইছমাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমি বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তা’বীযের বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জাওয়াবে বললেন: তা’বীয ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই, যদি তা চামড়ায় লেখা হয়।

ব্যাখ্যা: এখানে চামড়ার কথা বলা হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে লেখার যোগ্য দ্রব্যাদীতে লেখা। যেমন: কাগজ, গাছের পাতা, পাথর ইত্যাদী।

عَنْ عَطَاءٍ رحمة الله عليه فِى الْحَائِضِ يَكُونُ علَيْهَا التَّعْوِيذُ قَالَ: انْ كَانَ فِى ادِيمٍ فَلْتَنْزِعْهُ، وَ انْ كَانَ فِى قَصَبَةِ فِضَّةٍ فَإِنْ شَاءَتْ وَضَعَتْهُ وَانْ شَاءَتْ لَمْ تَضَعْهُ.

(২) হযরত আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহিলাদের হায়েয অবস্থায় তা’বীয ব্যবহার করা সম্পর্কে বলেন: যদি খোলা চামড়ায় লেখা হয় তাহলে উক্ত মাজুরতা অবস্থায় খুলে রাখতে হবে। কিন্তু যদি খোলের মধ্যে ভরানো থাকে, তাহলে ইচ্ছা হলে খুলে রাখতেও পারে অথবা ইচ্ছা হলে না খুলতেও পারে।

عَنْ ثُوَيْرٍ رحمة الله عليه قَالَ: كَانَ مُجَاهِدٌ رحمة الله عليه يَكْتُبُ للنَّاس التَّعْوِيذَ فَيُعَلِّقُه عَلَيْهِمْ.

(৩) হযরত ছুওয়াইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মানুষদের জন্য তা’বীয লেখতেন এবং তা তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।

عَنْ جَعْفَرٍ رحمة الله عليه عَنْ ابِيهِ اَنَّه كَانَ لاَ يَرٰى بَأْسًا اَنْ يَكْتُبَ الْقُرْانَ فِى اَدِيمٍ ثُمَّ يُعَلِّقُه.

(৪) হযরত জা’ফর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (উনার পিতা) পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ উনার দ্বারা চামড়ার উপর তা’বীয লেখতে অসুবিধা মনে করতেন না এবং তা ব্যবহার করতেন।

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رحمة الله عليه عَنْ اَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اِذَا فَزِعَ اَحَدُكُمْ فِى نَوْمِه فَلْيَقُلْ: اَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِه وَسُوءِ عِقَابِهِ وَمِنْ شَرِّ عِبَادِه وَمِنْ شَرِّ الشَّيَاطِينِ وَمَا يَحْضُرُونِ، فَكَانَ عَبْدُ اللهِ رضى الله عنه يُعَلِّمُهَا وَلَدَهُ مَنْ اَدْرَكَ مِنْهُمْ، وَمَنْ لَمْ يُدْرِكْ كَتَبَهَا وَعَلَّقَهَا عَلَيْهِ.

(৫) হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (উনার দাদা) বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঘুমে ভয় পাওয়ার অশঙ্কা করে তাহলে সে যেন পাঠ করে ‘আয় আল্লাহ তায়ালা! আমি পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা উনার গযব থেকে পানাহ চাই, খারাপ পরিনতি থেকে পানাহ চাই, অসৎ মানুষের অনিষ্টতা থেকে পানাহ চাই, শয়তানদের অনিষ্টতা থেকে পানাহ চাই যারা হাযির হয়।’ হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি উনার সন্তানকে এই দুয়া’ শিক্ষা দিতেন যাঁরা দুয়া’র মর্ম বুঝত, আর যাঁরা দুয়া’ উনার মর্ম বুঝত না তিনি উনাদের জন্য তা লিখে গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।

عَنِ ابْنِ سِيرِينَ رحمة الله عليه اَنَّه كَانَ لاَ يَرٰى بَأْسًا بِالشَّيْءِ مِنَ الْقُرْانِ.

(৬) হযরত ইবনু সীরীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ দ্বারা তা’বীয তৈরি করতে কোন অসুবিধা মনে করতেন না।

قَالَ: حدَّثَنَا اَيُّوبُ رحمة الله عليه اَنَّه رَاَى فِى عَضُدِ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رحمة الله عليه خَيْطًا.

(৭) রাবী বলেন, আমরা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছি হযরত আইয়্যূব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি একদা হযরত উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বাহুতে একটি সুতা বাঁধা দেখলেন।

عَنْ عَطَاءٍ رحمة الله عليه قَالَ لاَ بَأْسَ اَنْ يُعَلَّقَ الْقُرْانُ.

(৮) হযরত আত্বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: পবিত্র কুরআন মাজীদ (অথবা কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ) গলায় লটকানোতে কোন অসুবিধা নেই।

عَنْ يُونُسَ بْنِ خَبَّابٍ رحمة الله عليه قَالَ: سَاَلْتُ اَبَا جَعْفَرٍ رحمة الله عليه عَنِ التَّعْوِيذِ يُعَلَّقُ عَلَى الصِّبْيَانِ؟ فَرَخَّصَ فِيهِ.

(৯) হযরত ইঊনুস বিন খব্বাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমি হযরত আবূ জা’ফর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শিশুদের গলায় তা’বীয ঝুলানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম? তিনি ইহা ব্যবহারের অনুমতি দিলেন।

عَنِ الضَّحَّاكِ رحمة الله عليه اَنَّه لَمْ يَكُنْ يَرٰى بَأْسًا اَنْ يُعَلِّقَ الرَّجُلُ الشَّيْءَ مِنْ كِتَابِ اللهِ اِذَا وَضَعَه عِنْدَ الْغُسْلِ وَعِنْدَ الْغَائِطِ.

 (১০) হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোন ব্যক্তির পক্ষে পবিত্র কিতাবুল্লাহ থেকে আয়াত শরীফ দ্বারা তা’বীয ব্যবহার করতে নাজায়িয মনে করতেন না। যখন তা গোস্ল ও জরুরত সারার সময় খুলে রাখা হয়।”

ফিক্বহ ও ফাতাওয়া উনাদের কিতাবেও উল্লেখ আছে, হযরত মুহাম্মাদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ বিন আলী বিন আব্দুর রহমান হাছকাফী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আদ-দুররুল মুখতার আলা তানবীরিল আবছার’ নামক কিতাব উনার ‘কিতাবুল হাযার ওয়াল ইবাহাহ’ অধ্যায়ের ‘ফাছলুন ফিল্ লুব্স’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে-

فِى الْمُجْتَبَى التَّمِيمَةُ الْمَكْرُوهَةُ مَا كَانَ بِغَيْرِ الْعَرَبِيَّةِ

অর্থ: ‘আল-মুজতাবা’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, আরবী ভাষায় না হলে তামীমাহ বা তা’বীয ব্যবহার করা মাকরূহ হবে। আর যদি আরবী ভাষায় হয় তাহলে মাকরূহ হবে না।

হযরত ইবনু আবিদীন মুহাম্মাদ আমীন বিন উমর শামী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘রদ্দুল মুখতার আলাদ্ দুররিল মুখতার শরহি তানবীরিল আবছার অর্থাৎ ফাতাওয়াশ্ শামী’ নামক কিতাব উনার ‘কিতাবুল হাযার ওয়াল ইবাহাহ’ অধ্যায়ের ‘ফাছলুন ফিল্ লুব্স’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে,

)قَوْلُهُ التَّمِيمَةُ الْمَكْرُوهَةُ) اَقُولُ: الَّذِى رَاَيْته فِى الْمُجْتَبٰى اَلتَّمِيمَةُ الْمَكْرُوهَةُ مَا كَانَ بِغَيْرِ الْقُرْانِ، … وَلَا بَأْسَ بِالْمُعَاذَاتِ اذَا كُتِبَ فِيهَا الْقُرْانُ اوْ اسْمَاءُ اللهِ تَعَالٰى، وَيُقَالُ رَقَاهُ الرَّاقِى رَقْيًا وَرُقْيَةً اذَا عَوَّذَه وَنَفَثَ فِى عُوذَتِه قَالُوا: انَّمَا تُكْرَهُ الْعُوذَةُ اذَا كَانَتْ بِغَيْرِ لِسَانِ الْعَرَبِ، وَلَا يُدْرٰى مَا هُوَ وَلَعَلَّه يَدْخُلُه سِحْرٌ اوْ كُفْرٌ اوْ غَيْرُ ذلِكَ، وَامَّا مَا كَانَ مِنْ الْقُرْانِ اوْ شَيْءٍ مِنَ الدَّعَوَاتِ فَلَا بَأْسَ بِه. …. وَفِى الْمُجْتَبى: اُخْتُلِفَ فِى الِاسْتِشْفَاءِ بِالْقُرْانِ بِانْ يُقْرَا عَلَى الْمَرِيضِ اَوِ الْمَلْدُوغِ الْفَاتِحَةُ اَوْ يُكْتَبَ فِى وَرَقٍ وَيُعَلَّقَ عَلَيْهِ اَوْ فِى طَسْتٍ وَيُغَسَّلَ وَيُسْقٰى، وَعَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّه كَانَ يُعَوِّذُ نَفْسَه، قَالَ رحمة الله عليه: وَعَلَى الْجَوَازِ عَمَلُ النَّاسِ الْيَوْمَ، وَبِهِ وَرَدَتْ الْاٰثَارُ وَلَا بَأْسَ بِاَنْ يَشُدَّ الْجُنُبُ وَالْحَائِضُ التَّعَاوِيذَ عَلَى الْعَضُدِ اذَا كَانَتْ مَلْفُوفَةً.

অর্থ: “(আরবী ভাষায় না হলে তামীমাহ বা তা’বীয ব্যবহার করা মাকরূহ হবে) আমি বলি: যেমনটি আমি ‘আল-মুজতবা’ নামক কিতাবে দেখেছি- পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার বাইরে হলে সেই তা’বীয মাকরূহ। … পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ অথবা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক দ্বারা লেখা হলে সেই তা’বীয ব্যবহার করতে বাধা নেই। ঝাড়-ফুঁককারী তার কাছে অভিযোগকারীকে ঝাড়-ফুঁক দিল ঝাড়-ফুঁক দেয়ার মত। এবং তাকে ফুঁক দিল। ফক্বীহ উনারা বলেন: যদি আরবী ভাষা ছাড়া আওযাহ বা পরিত্রাণ চাওয়া হয় তাহলে তা মাকরূহ হবে। কারণ সে জানে না তার মর্মার্থ কি। হতে পারে তার মধ্যে যাদু আছে অথবা কুফরী কিছু আছে অথবা অনুরূপ অন্য কিছু আছে। কিন্তু যদি পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ দ্বারা অথবা শরীয়াত সম্মত দুয়া’ দ্বারা করা হয় তাহলে তা নাজায়িয হবে না। (উল্লেখ্য, আরবী ভাষায় নাহলেও মাকরূহ হবে না যদি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সম্মত হয়) … ‘আল-মুজতবা’ নামক কিতাবে আছে: কেউ কেউ পবিত্র কুরআন মাজীদ দ্বারা শিফা কামনা করা সম্পর্কে ইখতিলাফ করেছেন। সূরাহ ফাতিহাহ পাঠ করে যদি অসুস্থ ব্যক্তি অথবা দংশিত ব্যক্তিকে ঝাড়-ফুঁক দেয় অথবা পাতার উপর লেখে অথবা গলায় ঝুলায় অথবা পাত্রে লেখে এবং সেই পানি দিয়ে গোস্ল করে ও পান করে। (এগুলো জায়িয রয়েছে, কেননা) নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য) নিজেই তা’বীয ব্যবহার করেছেন। হযরত হাছকাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: যামানার মানুষদের এই আমল জায়িয ফাতাওয়ার উপর। এমনটি আছার বা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। কোমরে তা’বীয বাঁধা এবং হায়েযী মহিলাদের জন্য খোল বিশিষ্ট তা’বীয ব্যবহার করাতে কোন অসুবিধা নেই অর্থাৎ জায়িয।”

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن زينب رضى الله عنها امراة عبد الله بن مسعود رضى الله عنه ان عبد الله رضى الله عنه راى فى عنقى خيطا فقال: ما هذا ؟ فقلت: خيط رقى لى فيه قالت: فاخذه فقطعه ثم قال: انتم ال عبد الله رضى الله عنه لاغنياء عن الشرك سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ان الرقى والتمائم والتولة شرك فقلت: لم تقول هكذا ؟ لقد كانت عينى تقذف وكنت اختلف الى فلان اليهودى فاذا رقاها سكنت فقال عبد الله رضى الله عنه: انما ذلك عمل الشيطان كان ينخسها بيده فاذا رقى كف عنها انما كان يكفيك ان تقولى كما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: اذهب الباس رب الناس واشف انت الشافى لا شفاء الا شفاؤك شفاء لا يغادر سقما. (مشكوة المصابيح كتاب الطب والرقى الفصل الثانى الصفحة ۳۸۹، سنن ابى داود كتاب الطب باب فِى تَعْلِيقِ التَّمَائِمِ الصفحة ۱۸۶

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার আহলিয়া হযরত যায়নাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমার স্বামী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আমার গলায় একখানা তাগা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার গলায় এটা কি? আমি বললাম: এটা একটি তাগা। আমার জন্য তাতে মন্তর পড়া হয়েছে। হযরত যায়নাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন: এটা শুনে তিনি তাগাটি ধরে ছিড়ে ফেললেন, অতপর বললেন: আপনারা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র পরিবারবর্গ! আপনারা র্শিক-এর মুখাপেক্ষী নন। আমি সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: নিশ্চয়ই (জাহিলী রীতিতে) ঝাড়-ফুঁক, তা’বীয ও জাদুটোনা র্শিকী কাজ। হযরত যায়নাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন, আমি বললাম: আপনি কেন এরূপ কথা বলছেন? অথচ একবার আমার চোখে ব্যথা হচ্ছিল, যেন চোখটি বের হয়ে পড়বে। তখন আমি অমুক ইয়াহূদীর কাছে যাওয়া-আসা করতাম। যখন সে ইয়াহূদী তাতে মন্তর পড়ল, তখনই তার ব্যথা চলে গেল। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বললেন: এটা তো শয়তানেরই কাজ। সে নিজের হাতের দ্বারা তাতে আঘাত করছিল, আর যখন মন্তর পড়া হয়, তখন সে বিরত হয়ে যায়। মূলত: এ সমস্ত রোগের জন্য তোমাদের পক্ষে এরূপ বলাই যথেষ্ট ছিল, যেভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন: ‘হে মানুষের রব তায়ালা! আপনি বিপদ দূর করে দিন এবং রোগ হতে নিরাময় দান করুন, আপনিই নিরাময়কারী। আপনার নিরাময় প্রদান ব্যতীত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়। এমন নিরাময় দান করুন, যেন কোন রোগই অবশিষ্ট না থাকে। আমীন’। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী ৩৮৯ পৃষ্ঠা, সুনানু আবী দাঊদ কিতাবুত তিব্ব বাবুন ফী তা’লীক্বিত তামায়িম)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়

ما كان معهودا فى الجاهلية.

অর্থ: সেই (তা’বীয যা ছিড়ে ফেলা হয়েছে) তা ছিলো জাহিলিয়াতের প্রথাগত বা জাহিলিয়াত রীতিতে তৈরি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ, আউনুল মা’বূদ শরহে আবূ দাঊদ)

আল-ইমামুল কবীর শরফুদ্দীন হুসাঈন বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ত্বীবী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আল-কাশিফ আন হাক্বায়িক্বিস্ সুনান অর্থাৎ শরহুত ত্বীবী আলা মিশকাতিল মাছাবীহ’ নামক কিতাব উনার ৮ম খণ্ড ৩০০-৩০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

)والتمائم) جمع تميمة وهى التعويذ التى تعلق على الصبى.

অর্থ: (আত-তামায়িম) শব্দখানা তামীমাহ শব্দের বহুবচন। তা হলো যা সম্মানিত শরীয়তসম্মত তা’বীয যা শিশু বাচ্চাদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ)

আল-মুহাদ্দিছুশ শাহীর আবুত তইয়্যিব শামসুল হক্ব আযীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আউনুল মা’বূদ লিহাল্লি মুশকিলাতি সুনানি আবী দাঊদ’ নামক কিতাব উনার ৪র্থ খÐ ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

)والتمائم) جمع التميمة وهى التعويذة التى لايكون فيها اسماء الله تعالى واياته المتلوة والدعوات المأثورة تعلق على الصبى، قال فى النهاية التمائم جمع تميمة وهى خرزات كانت العرب تعلقها على اولادهم يتقون بها العين فى زعمهم فابطلها الاسلام.

অর্থ: (আত-তামায়িম) তামায়িম শব্দটি তামীমাহ শব্দের বহুবচন। শিরকমূলক তা’বীয উহাই যাতে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক থাকে না, পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ উল্লেখ থাকে না এবং গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত দুয়া’ থাকে না, অথচ শিশুর গলায় লটকানো হয়। ‘আন-নিহায়াহ’ গ্রন্থকার বলেন, তামায়িম শব্দটি তামীমাহ শব্দের বহুবচন। তা এমন (নিষিদ্ধ) কণ্ঠহার যা আরবরা বদনযর থেকে বাঁচার জন্য তাদের সন্তানদের গলায় পরিধান করিয়ে থাকে। পবিত্র সম্মানিত ইসলাম ইহা নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে।

উল্লেখিত হাদীছ শরীফ খানা এবং উনার ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, জাহিলিয়াত যুগের প্রথাগত জাহিলিয়াত রীতি-নীতিতে তৈরি তা’বীয নিষিদ্ধ বা হারাম ও শিরক। যে তা’বীযে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক থাকে না, পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ থাকে না এবং প্রমাণিত গ্রহণযোগ্য দুয়া’ থাকে না এমন তা’বীয নাজায়িয-হারাম ও শিরক। কিন্তু যদি তা’বীয পবিত্র ইসলামী শরীয়াত উনার ভিত্তিতে হয় এবং জাহিলিয়াত রীতিতে না হয় তাহলে তা জায়িয বা বৈধ।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن عبد الله بن عمر رضى الله عنهما قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ما ابالى ما اتيت ان انا شربت ترياقا او تعلقت تميمة او قلت الشعر من قبل نفسى. (مشكوة المصابيح كتاب الطب والرقى الفصل الثانى الصفحة ۳۸۹، سنن ابى داود كتاب الطب باب فِى التِّرْيَاقِ الصفحة ۱۸۴

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে আমি শ্রবণ করেছি যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: আমি যা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছি তৎসম্পর্কে অবহেলা করছি বলে প্রমাণিত হবে, যদি আমি বিষনাশক অমৃত পান করি অথবা তা’বীয ঝুলাই অথবা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করি। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী ৩৮৯ পৃষ্ঠা, সুনানু আবী দাঊদ কিতাবুত তিব্ব বাবুন ফিত্ তিরইয়াক্ব)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আল-ইমামুল কবীর শরফুদ্দীন হুসাঈন বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ত্বীবী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘আল-কাশিফ আন হাক্বায়িক্বিস্ সুনান অর্থাৎ শরহুত ত্বীবী আলা মিশকাতিল মাছাবীহ’ নামক কিতাব উনার ৮ম খÐ ৩০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

المراد من التميمة ما كان من تمائم الجاهلية ورقاها، فان القسم الذى يختص باسماء الله تعالى وكلماته غير داخل فى جملته بل هو مستحب مرجو البركة عرف ذلك من اصل السنة.

অর্থ: এখানে তামীমাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে জাহিলিয়াত রীতিতে তৈরি তা’বীয। কেননা, নিশ্চয়ই তা’বীযের একটি প্রকার মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক ও উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার সাথে সংশ্লিষ্ট, যা র্শিক-এর অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তা মুস্তাহাব বরকত অর্জনের মাধ্যম, যা সুন্নাহ শরীফ উনার মূল নির্জাস। সুবহানাল্লাহ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ)

খাতিমাতুল মুহাক্কিক্বীন, উমদাতুল মুদাক্কিক্বীন, আলিম, আমিল, ওয়ারি’, কামিল, শায়খ আবুল হাসান সিন্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘ফাতহুল ওয়াদূদ ফী শরহি সুনানি আবী দাঊদ’ নামক কিতাব উনার ৪র্থ খÐ ১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

)والتميمة) ما تعلق فى العنق من العين وغيرها من التعويذات والتمائم، (وتعلقت) اى علقت فهو من التعلق بمعنى التعليق، قيل المراد تمائم الجهالية مثل الخرزات اظفار السباع وعظامها، واما مايكون بالقران والاسماء الالهية فهو خارج عن هذا الحكم بل جائز لحديث عبد الله بن عمرو رضى الله عنه انه كان يعلق على الصغار بعض ذلك، وقيل القبح اذا علق شيئا معتمدا جلب نفع او دفع ضرر اما للتبرك فيجوز.

অর্থ: (তামীমাহ) বদনযর ও অন্য বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের জন্য গলায় যে কণ্ঠহার পড়া হয় তা-ই তা’বীয ও তামীমাহ।

(তায়াল্লাক্বতু ‘আমি যদি তা’বীয ঝুলাই’) অর্থাৎ এখানে শব্দখানা তা’লীক্ব বা লটকানো অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কেউ বলেন: ইহা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে জাহিলী যুগের নিষিদ্ধ তা’বীয, যেমন হি¯্র জন্তুর নখ ও হার ফুটা করা। কিন্তু যদি পবিত্র কুরআন মাজীদ ও মহান ইলাহ আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক দ্বারা তৈরি করা হয় তাহলে তা নিষিদ্ধ তা’বীযের হুকুমের আওতাভুক্ত হবে না, বরং তা জায়িয বলে বিবেচিত হবে ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে। নিশ্চয়ই তিনি শিশুদের গলায় তা’বীয ঝুলিয়েছিলেন। কারো মতে: যদি কেউ উপকার প্রাপ্তির আশায় এবং রোগ নিরাময়ক হিসেবে ইচ্ছাকৃত তা’বীয ঝুলায় তাহলে তা অপছন্দনীয় হবে, কিন্তু যদি বরকত লাভের আশায় ঝুলায় তাহলে তা জায়িয হবে। (আউনুল মা’বূদ শরহে সুনানু আবী দাঊদ লিস্ সাজিস্তানী)

হযরত আবূ ইবরাহীম খলীল আহমাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘বাযলুল মাজহূদ ফী হাল্লি আবী দাঊদ’ নামক কিতাব উনার ৬ষ্ঠ খÐ ৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال النووى رحمة الله عليه بالنهى ما كان بغير اللسان العربية مما لايدرى ما هو ولعله قد يكون سحرا ونحوه مما لايجوز.

অর্থ: হযরত ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় তা’বীয লেখা হলে তা নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। তা এমন তা’বীয যা বুঝা যায় না। কারণ তা হতে পারে যাদু অথবা অনুরূপ অন্যকিছু, যা শরীয়াতে জায়িয নেই।

উল্লেখিত হাদীছ শরীফ খানা এবং উনার ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, যে তা’বীয পবিত্র ইসলামী শরীয়াত উনার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়, যাতে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক থাকে, পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ থাকে, প্রমাণিত দুয়া’ থাকে সেই তা’বীয জায়িয। কিন্তু যদি জাহিলিয়াত রীতি-নীতিতে তৈরি করা হয় তাহলে সেই তা’বীয হবে নিষিদ্ধ তা’বীয।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن عيسى بن حمزة رحمة الله عليه قال دخلت على عبد الله بن عكيم رحمة الله عليه وبه حمرة فقلت: الا تعلق تميمة ؟ فقال نعوذ بالله من ذلك قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تعلق شيئا وكل اليه. (مشكوة المصابيح كتاب الطب والرقى الفصل الثانى الصفحة ۳۹۰(

অর্থ: হযরত ঈসা বিন হামযাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন উকাইম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গেলাম। উনার দেহে লাল ফোসকা পড়ে আছে। আমি বললাম: আপনি কি তা’বীয ব্যবহার করবেন না? উত্তরে তিনি বললেন, তা হতে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট পানাহ চাই। কেননা, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: যে ব্যক্তি এটার কোন কিছু লটকায় তাকে তার প্রতি সোপর্দ করে দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী ৩৯০ পৃষ্ঠা, সুনানু আবী দাঊদ)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আল-মুহাদ্দিছুশ শাহীর আল-ফক্বীহুন নাবীল আলী বিন সুলতান বিন মুহাম্মাদ আল-ক্বারী মাশহূর মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘মিরক্বাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ’ নামক কিতাব উনার ৮ম খÐ ৩৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اعتقد ان الشفاء منه لا من الله اعتقاد كفر.

অর্থ: যে ব্যক্তি আক্বীদাহ পোষণ করে যে- রোগমুক্তি তা’বীযের পক্ষ থেকে হয়, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে হয় না, তার এই আক্বীদাহ কুফরীমূলক।

উল্লেখিত হাদীছ শরীফ খানা এবং উনার ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, রোগমুক্তি হওয়ার বিষয়টি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে হয়, আর তা’বীয শুধু ওয়াসীলাহ মাত্র এই বলে বিশ্বাস করলে সেই তা’বীয জায়িয। অন্যথায় জায়িয নয়।

 

ঝাড়-ফুঁক দেয়া ও গ্রহণ করার বিধান

 

পবিত্র ইসলামী শরীয়াহ তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস উনার দৃষ্টিতে ঝাড়-ফুঁক দেয়া ও গ্রহণ করা জায়িয ও সুন্নাত উনার অন্তর্ভুক্ত। যদি ঝাড়-ফুঁক পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইবারত, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক ও শরীয়াত সম্মত বাক্য দ্বারা হয়। কিন্তু যদি তা শরীয়াত বহির্ভুত শব্দ ও বাক্য দ্বারা এবং কুফরী শব্দ ও বাক্য দ্বারা দেয়া হয়, দেব-দেবীদের নাম উল্লেখ পূর্বক দেয়া হয় তাহলে এমন ঝাড়-ফুঁক দেয়া ও গ্রহণ করা হারাম ও র্শিক। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বহ-ফাতাওয়া উনাদের কিতাব সমূহে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু আলোচনা করা হলো:

عن عروة بن الزبير رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه و سلم دخل بيت ام سلمة عليها السلام وفى البيت صبى يبكى فذكروا ان به العين فقال له رسول الله صلى الله عليه و سلم: افلا تسترقون له من العين؟ قال محمد رحمة الله عليه: وبه نأخذ. لا نرى بالرقية بأسا اذا كانت من ذكر الله تعالى. (الموطا للامام محمد رحمة الله عليه باب الرق)

অর্থ: হযরত উরওয়াহ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেন, তখন উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে একজন শিশু কাঁদছিল। উনাকে শিশুটির বদনযর লাগার কথা জানানো হলো। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: বদনযর থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে (শিশুটিকে) কি ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে? হযরত ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আমরা এই হাদীছ শরীফ উনাকে গ্রহণ করেছি। আমরা ঝাড়-ফুঁক করাকে অসুবিধা (অবৈধ) মনে করি না, যখন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার স্মরনে তা করা হয়। (আল-মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাবুর রুক্বা ৩৭৪ পৃষ্ঠা)

অত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘আওজাযুল মাসালিক আলাল মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ কিতাবের ‘বাবুর রুক্বা’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে,

قوله افلا تسترقون له من العين هذا وامثاله مصرح بجواز الرقية. (اوجز المسالك على الموطا للامام مالك رحمة الله عليه)

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইরশাদ মুবারক (বদনযর থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে কি ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে?) ঝাড়-ফুঁক জায়িয হওয়ার ব্যাপারে ইহা ও এই দৃষ্টান্ত স্পষ্ট। অর্থাৎ ঝাড়-ফুঁক করা ও গ্রহণ করা জায়িয। সুবহানাল্লাহ।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে,

عن حضرت انس رضى الله عنه قال رخص رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الرقية من العين والحمة والنملة. (مشكوة المصابيح كتاب الطب والرقى الفصل الاول، صحيح البخارى شريف، صحيح المسلم شريف(

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: কারো উপর বদনযর লাগলে, কোনো বিষাক্ত প্রাণী দংশন করলে এবং পাঁজরে খুজলি উঠলে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঝাড়ফুঁক করতে অনুমতি দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)

عن حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت امر النبى صلى الله عليه وسلم ان يسترقى من العين.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: কারো উপর বদনযর লাগলে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঝাড়ফুঁক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল বুখারী শরীফ, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)

عن حضرت ام سلمة عليها السلام ان النبى صلى الله عليه وسلم راى فى بيتها جارية فى وجهها سفعة يعنى صفرة فقال استرقوا لها فان بها النظرة.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার (উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার) হুজরা শরীফ উনার মধ্যে একটি মেয়ে দেখতে পেলেন, তার চেহারায় বদনযরের চিহ্ন ছিল। অর্থাৎ চেহারাটি হলুদ বর্ণ ধারণ করেছিল। ইহা দেখে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: তাকে ঝাড়ফুঁক করুন, কেননা তার উপর বদনযর লেগেছে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল বুখারী শরীফ, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)

عن حضرت جابر رضى الله عنه قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الرقى فجاء ال عمرو بن حزم فقالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انه كانت عندنا رقية نرقى بها من العقرب وانت نهيت عن الرقى فعرضوها عليه فقال ما ارى بها بأسا من استطاع منكم ان ينفع اخاه فلينفعه.

অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মন্তর বা ঝাড়ফুঁক করা হতে নিষেধ করেছেন। (এই নিষেধের পর) আমর বিন হাযম-এর বংশের কয়েকজন লোক এসে আরজ করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে এমন একটি মন্তর আছে, যার দ্বারা আমরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক করে থাকি। অথচ আপনি মন্তর পড়া হতে নিষেধ করেছেন। অতপর উনারা মন্তরটি নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পড়ে শুনালেন। ইহা শুনে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি তো এটার মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। অতএব তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)

عن حضرت عوف بن مالك الاشجعى رضى الله عنه قال كنا نرقى فى الجاهلية فقلنا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف ترى فى ذلك فقال اعرضوا على رقاكم لا بأس بالرقى ما لم يكن فيه شرك.

অর্থ: হযরত আওফ বিন মালিক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: জাহিলী যুগে আমরা মন্তর পড়ে ঝাড়ফুঁক করতাম। সুতরাং (পবিত্র দীন ইসলাম গ্রহণের পর) আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ সমস্ত মন্তর সম্পর্কে আপনার মুবারক ফায়সালা কি? তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: আচ্ছা, আপনাদের মন্তরগুলো আমাকে পড়ে শুনান। (তবে জেনে রাখুন) মন্তর দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে কোন আপত্তি নেই, যদি তার মধ্যে র্শিক কিছু না থাকে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুল আউওয়াল, ছহীহুল মুসলিম শরীফ)

عن حضرت عمران بن حصين رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا رقية الا من عين او حمة.

অর্থ: হযরত ইমরান ইবনে হুছাঈন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: বদনযর কিংবা কোনো বিষাক্ত প্রাণীর দংশনের বেলায়ই ঝাড়ফুঁক রয়েছে। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী, মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বাল, আল-জামিউ ওয়াস সুনানু লিত্ তিরমিযী শরীফ, সুনানু আবী দাঊদ শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ)

عن حضرت انس رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا رقية الا من عين او حمة او دم.

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: বদনযর লাগা, বিষাক্ত প্রাণীর দংশন করা এবং রক্ত ঝরার জন্যই রয়েছে ঝাড়ফুঁক। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী, সুনানু আবী দাঊদ শরীফ)

عن حضرت اسماء بنت عميس رضى الله عنها قالت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان ولد جعفر رضى الله تعالى عنه تسرع اليهم العين افاسترقى لهم قال نعم فانه لو كان شىء سابق القدر لسبقته العين.

 অর্থ: হযরত আসমা বিনতে উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত জা’ফর তইয়্যার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার সন্তান উনাদের উপর দ্রæত বদনযর লেগে থাকে। সুতরাং আমি কি উনাদের জন্য ঝাড়ফুঁক করাবো? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: হ্যাঁ। কেননা, যদি কোন জিনিস তাক্বদীরের অগ্রগামী হতে পারত, তবে বদনযরই তার অগ্রগামী হতো। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী, মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বাল, আল-জামিউ ওয়াস সুনানু লিত্ তিরমিযী শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ)

عن حضرت الشفاء بنت عبد الله رضى الله عنها قالت دخل رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا عند حضرت حفصة عليها السلام فقال الا تعلمين هذه رقية النملة كما علمتيها الكتابة.

 অর্থ: হযরত শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি একদা উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট বসা ছিলাম, এমন সময় নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে প্রবেশ করলেন এবং আমাকে লক্ষ করে ইরশাদ মুবারক করলেন: তুমি যেভাবে হযরত হাফছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে হস্তলিপি শিখিয়েছ, অনুরূপভাবে উনাকে নামলা রোগের (এক প্রকার চর্মরোগ) মন্তর শিখাও না কেন?। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুত তিব্ব ওয়ার রুক্বা আল-ফাছলুছ ছানী, সুনানু আবী দাঊদ শরীফ)

এ ছাড়াও আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ, ফিক্হ ও ফাতাওয়া উনাদের কিতাবে ঝাড়-ফুঁক জায়িয হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য দলীল আদিল্লাহ রয়েছে।

তামীমাহ বা তা’বীয এবং রুক্বা’ বা ঝাড়ফুঁক পবিত্র শরীয়াত উনার দৃষ্টিতে জায়িয ও সুন্নাত। যখন এগুলো পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক দ্বারা, পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এবং সম্মানিত শরীয়াত উনার সমর্থিত শব্দ ও বাক্য দ্বারা করা হয়। কিন্তু যদি জাহিলিয়াত যুগের মত যাদু-টোনা, র্শিকী শব্দ ও বাক্য দ্বারা এবং সম্মানিত শরীয়াত উনার খিলাফ শব্দ ও বাক্য দ্বারা ব্যবহার করা হয় তাহলে তাহবে হারাম ও র্শিক। এটাই পবিত্র শরীয়াত উনার চুড়ান্ত ফাতাওয়া ও ফায়সালা।

প্রয়োজনে আমরা তা’বীয ব্যবহার ও ঝাড়-ফুঁক গ্রহণ জায়িয হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য দলীল সম্বলিত বিস্তারিত ফাতাওয়া দিব। ইন্শাআল্লাহ।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ২৪)

‘সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :

পঞ্চম প্রমাণ:

অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার সম্মানিত উম্মতগণ উনারা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কায়িম মাক্বাম হয়ে সীমাহীন প্রতাপ ও ব্যাপকতার সাথে পৃথিবী, পাহাড়, পর্বত, সাগর-মহাসাগর, মরুভ‚মি, সাত আসমান, সাত যমীন, আরশ, কুর্সী, লৌহ, কলম, জিন, ফেরেশেত, সিদরাতুল মুনতাহা থেকে তাহতাছ ছারা এক কথায় স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ব্যতীত সারা কায়িনাত বলতে যা কিছু বুঝায়, সেই  সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত কর্তৃত্ব মুবারক করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। সুবহানাল্লাহ!

এখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এখানে যদি কেই সন্দেহ পোষণ করে তাহলে সে ঈমানদার থাকতে পারবে না; বরং কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে যাবে। (না‘ঊযুবিল্লাহ) কেননা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-

وَإِنَّ أُمَّتِىْ سَيَبْلُغُ مُلْكُهَا مَا زُوِىَ لِىْ مِنْهَا

“আর নিশ্চয়ই আমাকে যেই পর্যন্ত দেখানো হয়েছে অতিশীঘ্রই আমার সম্মানিত উম্মত উনাদের সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক সেখানে যেয়ে পৌঁছবে।” সুবহানাল্লাহ!

তাহলে এখন বলার বিষয় হচ্ছে, সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক কে? কে সেই সুমহান খলীফা আলাইহিস সালাম যিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কায়িম মাক্বাম হয়ে আরো সীমাহীন প্রতাপ ও ব্যাপকতার সাথে পৃথিবী, পাহাড়, পর্বত, সাগর-মহাসাগর, মরুভ‚মি, সাত আসমান, সাত যমীন, আরশ, কুর্সী, লৌহ, কলম, জিন, ফেরেশতা, সিদরাতুল মুনতাহা থেকে তাহতাছ ছারা এক কথায় স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ব্যতিত সারা কায়িনাত বলতে যা বুঝায়, সেই সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত কর্তৃত্ব মুবারক করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন? আমরা জানি এই পর্যন্ত যতজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম উনারা অতীত হয়েছেন, উনারা কেউ সারা পৃথিবীব্যাপী সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করেননি। তাহলে সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি কে?

এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ الله تَعَالـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَلَكَ الْاَرْضَ اَرْبَعَةٌ مُّؤْمِنَانِ وَكَافِرَانِ فَالْــمُؤْمِنَانِ حَضْـَرتْ ذُو الْقَرْنَيْنِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْـَرتْ سُلَيْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَالْكَافِرَانِ نَـمْرُوْدُ وَبـُخْتُ نَصَّرَ وَسَيَمْلِكُهَا خَامِسٌ مّـِنْ اَهْلِ بَيْتِـىْ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সারা পৃথিবী শাসন করেছেন চারজন। দুজন হচ্ছেন মু’মিন আর দুজন হচ্ছে কাফির। মু’মিন দুজন হচ্ছেন- হযরত সিকান্দার যুলক্বরনাঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম। আর কাফির দুজন হচ্ছে- নমরূদ এবং বখতে নছর। আর অতিশীঘ্রই পঞ্চম একজন মহান ব্যক্তিত্ব মুবারক, একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি সারা পৃথিবীব্যাপী, সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। তিনি হবেন আমার সম্মানিত পূত-পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।” (সুবহানাল্লাহ) (ইবনে জাওযী, মাকত‚বাত শরীফ, শরহু ছহীহ বুখারী শরীফ ৮/৮৬, ফাতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ শরীফ লিলহাইতামী ১/৮১, আল হাওই শরীফ লিসসুয়ূত্বী ২/৭৬ ইত্যাদী )

এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, যিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার সম্মানিত উম্মত উনাদের মধ্য থেকে উনার একজন আখাচ্ছুল খাছ খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ কায়িম মাক্বাম হয়ে সীমাহীন প্রতাপ ও ব্যাপকতার সাথে পৃথিবী, পাহাড়, পর্বত, সাগর-মহাসাগর, মরুভ‚মি, সাত আসমান, সাত যমীন, আরশ, কুর্সী, লৌহ, কলম, জিন, ফেরেশতা, সিদরাতুল মুনতাহা থেকে তাহতাছ ছারা এক কথায় স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ব্যতীত সারা কায়িনাত বলতে যা বুঝায়, সেই সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত কর্তৃত্ব মুবারক করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। আর তিনি হবেন, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তিনি হবেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাচ্ছুল খাছ সুমহান আওলাদ তথা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!

মুহম্মদ আবূ মাহমূদ হুসাইন

শান্তিবাগ, ঢাকা

সুওয়াল: বিগত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ঈসায়ী তারিখে প্রকাশিত ওহাবী ফিরক্বার একটি অখ্যাত বুলেটিনে “ঈদে মীলাদুন্নবী বা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মবার্ষিকী উৎসব ইসলামে নেই।” নামক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। যাতে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তাদের কথিত আলিমরা পবিত্র “ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যেসকল বক্তব্য প্রদান করে, নিম্নে তা হুবহু তুলে ধরা হলো। যেমন তারা বলেছে-

(১) “যে তারিখে মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন ওই তারিখেই তিনি আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন। সুতরাং জন্মবার্ষিকী উৎসব পালন করা মানি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায়ের দিনে আনন্দ উৎসব করা।”………….“অতএব যদি ওই দিনকে পালন করতেই হয়, তাহলে ওই দিনে বিদায় দিবস হিসেবে শোক পালন করা বিবেকের দাবি।”

(২) “কুরআন হাদিসের কোথাও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য জন্মবার্ষিকী পালনের কথা উল্লেখ নেই।”

(৩)  “মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতবিরোধ থাকলেও আমাদের মাঝ থেকে উনার বিদায় যে ১২ই রবিউল আউওয়াল হয়েছে  এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।”

(৪) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম সত্যিকার রসূল প্রেমিক ছিলেন। কিন্তু তারাতো কখনো রসূল প্রেমিক হওয়ার জন্যে জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন বলে প্রমাণ নেই।”

(৫) “বর্তমান  একশ্রেণীর মানুষ হালুয়া রুটির লোভে ইসলামে ঈদে মীলাদুন্নবী নামে আরেকটি ঈদ আবিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছে। অথচ প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামে দু’ঈদের কথা বলে গেছেন।”  অর্থাৎ ইসলামে দু’ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই।

এখন আমার সুওয়াল হলোঃ-  উক্ত অখ্যাত বুলেটিনের উল্লেখিত বক্তব্যগুলো কতটুকু কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ সম্মত? দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ওহাবী ফিরক্বার উক্ত অখ্যাত বুলেটিনে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ বিরোধী, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের উল্লেখিত কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো খÐন করে সঠিক ফায়ছালা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ!

যেমন, তারা প্রথমতঃ বলেছে, (১)“যে তারিখে মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন ওই তারিখেই তিনি আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন। সুতরাং জন্মবার্ষিকী উৎসব পালন করা মানি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায়ের দিনে আনন্দ উৎসব করা।”………….“অতএব যদি ওই দিনকে পালন করতেই হয়, তাহলে ওই দিনে বিদায় দিবস হিসেবে শোক পালন করা বিবেকের দাবি।” নাউযুবিল্লাহ্! নাউযুবিল্লাহ্! নাউযুবিল্লাহ্!

তাদের উক্ত বক্তব্যের জাওয়াবে বলতে হয় যে, ওহাবী গোষ্ঠীর উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ বিরোধী, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে। কারণ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন ও বিদায় যদি একই দিনে হয়, তাহলে ঐদিনটিকে ঈদের দিন হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। ঐ দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ না করে, যদি শোকের দিন হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী হবে।  কেননা এতে পবিত্র  কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধিতা করা হয়। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ উনাদের দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে,  হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন ও বিদায় উভয়টিই ঈদ বা খুশির দিন। অর্থাৎ রহমত, বরকত, সাকীনা ও শান্তি নাযিলের দিন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র  কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وسلام عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا.

অর্থ: “হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস্ সালাম উনার প্রতি সালাম (শান্তি) যেদিন তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ (জন্মগ্রহণ) করেছেন এবং যেদিন তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ (ইন্তিকাল) করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হয়ে হায়াতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

অনুরূপ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে উনার নিজের বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

والسلم على يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا.

অর্থ: “আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ (জন্মগ্রহণ) করেছি, এবং যেদিন আমি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ (ইন্তিকাল) করবো, এবং যেদিন আমি পুনরুত্থিত হয়ে হায়াতী শান মুবারক প্রকাশ করবো।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ  ৩৩)

উপরোক্ত পবিত্র দুখানা আয়াত শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পৃথিবীতে আগমন করা ও পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া উভয়টিই উম্মাহর জন্য রহমত, বরকত, সাকীনা ও সালাম বা শান্তির কারণ। অর্থাৎ ঈদ বা খুশির কারণ শোক বা দুঃখের কারণ নয়। নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাও বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

যেমন,  নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عن حضرت اوس بن اوس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم عليه السلام  وفيه قبض…

অর্থ: “হযরত আওস ইবনে আওস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে পবিত্র জুমুয়ার দিন, ঐ দিনে সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং ঐ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ (ইন্তিকাল) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ; পৃষ্ঠা ১২০)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্্ আলাইহিস্ সালাম উনার সৃষ্টি এবং যমীনে আগমন ও বিদায় একই দিনে হয়েছে। অর্থাৎ এই পবিত্র জুমুয়ার দিনে সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন, এবং এই পবিত্র  জুমুয়ার দিনেই সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ (ইন্তিকাল) করেছেন, বিদায় নিয়েছেন। যার কারণে জুমুয়ার দিনকে শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত রসূল সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্্ আলাইহিস্ সালাম উনার পৃথিবীতে আগমন ও পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার দিন পবিত্র জুমুয়ার দিনটিকে মুসলমান উনাদের সকলের জন্যেই পবিত্র ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন, এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبيد بن السباق رحمة الله عليه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال في جمعة من الجمع يا معاشر المسلمين إن هذا يوم جعله الله عيدا.

অর্থ: “হযরত উবাইদ ইবনে সাব্বাক্ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন,  নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুয়ার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, হে মুসলমানগণ!  নিশ্চয়ই এই দিন হচ্ছে এমন এক দিন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি যেই দিনকে ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!  (মুয়াত্তা শরীফ; ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহ্্ আলাইহি ,পৃষ্ঠা ২৩ , মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ; পৃষ্ঠা ১২৩)

عَنِ حضرت ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله تعالى عنه ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ : إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ ، جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই এই জুমুয়ার দিন হচ্ছে ঈদের দিন। যেদিনকে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ; পৃষ্ঠা ৭৮)

আরো উল্লেখ্য যে, এই  পবিত্র জুমুয়ার দিনে সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম উনার সৃষ্টি, আগমন ও বিদায় হওয়ার কারনেই,  অর্থাৎ এই পবিত্র  জুমুয়ার দিনে সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন, পৃথিবীতে আগমন করেছেন এবং এই পবিত্র  জুমুয়ার দিনেই সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম তিনি  পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন অর্থাৎ বিদায় নিয়েছেন। ইত্যাদি কারণে  পবিত্র জুমুয়ার দিনকে শুধু ঈদের দিন হিসেবেই উল্লেখ করা হয়নি। বরং পবিত্র জুমুয়ার দিনকে  ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহার দিন থেকেও অধিক শ্রেষ্ঠ ও অধিক সম্মানিত দিন বলা হয়েছে।

যেমন,  নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عن حضرت  ابى لبابة بن عبد المنذر رضى الله تعالى عنه  قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله فيه ادم الى الارض وفيه توفى الله ادم…….

অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, নিশ্চয়ই  জুমুয়ার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ বা শ্রেষ্ঠ এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক সম্মানিত। এই জুমুয়ার দিন ঈদুল আদ্বহার দিন ও ঈদুল ফিত্রের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এই পবিত্র দিনটিতে  পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ের মধ্যে তিনটি হচ্ছে (১) এই জুমুয়ার  দিনে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) ) এই জুমুয়ার  দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্্ আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এই জুমুয়ার  দিনে মহান আল্লাহ্ পাক  তিনি সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বিছাল শরীফ হাদিয়া করেছেন….।” (মিশকাত শরীফ; পৃষ্ঠা ১২০)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত  হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পৃথিবীতে আগমন করা ও পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার দিনটি অর্থাৎ আগমন ও বিদায় উভয়টিই ঈদ বা খুশির দিন, আনন্দ উৎসবের দিন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জুমুয়ার দিনটি মহান আল্লাহ্ পাক উনার নবী ও রসূল সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের (বিদায়ের) দিন হওয়া সত্বেও মহান আল্লাহ্ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই সেই দিনটিকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাহলে কি মহান আল্লাহ্ পাক তিনি অন্যায় করেছেন? বিবেক বিরোধী কাজ করেছেন? (নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!)

আর মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব, নুরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম উনার আগমন ও বিদায়ের দিন পবিত্র জুমুয়ার দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি এ ঘোষণা দিয়ে অন্যায় করেছেন? বিবেক বিরোধী কাজ করেছেন? (নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!  নাউযুবিল্লাহ!)

মুলত: ওহাবীদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের (বিদায়ের) দিন (জুমুয়ার দিনকে) ঈদ বা খুশির  দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে, আর আখিরী রসূল নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও  উক্ত দিনকে  ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিবেক বিরোধী কাজ ও অন্যায় করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!  নাউযুবিল্লাহ!)

এ ধরণের বক্তব্য যারা প্রদান করেছে ও করবে তারা মুসলমান থাকতে পারেনা। বরং তারা কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী।

এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ (জন্মগ্রহণ) পবিত্র বিছালী শান মুবারক (বিদায় গ্রহণের)  প্রকাশের দিন এক কথায় সবকিছুই যেখানে রহমত, বরকত, সাকীনার দ্বারা পরিপূর্ণ হয় এবং সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম উনার আগমন ও বিদায়ের দিনটি যদি ঈদের দিন হয়, এমনকি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা থেকেও শ্রেষ্ঠ ও মহান দিন হয়। তাহলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম,  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন ও বিদায় অর্থাৎ পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার দিনটি কত বড় ও কত মহান ঈদের দিন হবে তা ফিকির করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

حياتى خير لكم ومماتى خير لكم.

 অর্থঃ- “আমার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ (জন্মগ্রহণ) এবং আমার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ (বিদায়) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ ও খায়ের বরকতের কারণ।” সুবহানাল্লাহ! (কানযুল উম্মাল শরীফ)

অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ বিদায়ের দিন, উক্ত দুই দিনই হচ্ছে উম্মতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন তথা মহান খুশি প্রকাশের দিন ও মহান আনন্দ উৎসবের দিন।

কেননা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন হায়াতুন্ নবী। অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র পর্দার আড়ালে তাশরীফ নিয়েছেন। কাজেই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায়ের দিনে দুঃখ প্রকাশ করার প্রশ্নই আসতে পারেনা।

তবে শুধুমাত্র যারা বাতিল আক্বীদা বিশিষ্ট, বিদয়াতী, গোমরাহ ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত তারাই উক্ত দিনে দূঃখ প্রকাশ করতে পারে বা দুঃখের দিন, শোকের দিন হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।

স্মর্তব্য যে, ওহাবী গোষ্ঠী এতটাই আশাদ্দুদ দরজার জাহিল যে, সাধারণ শোকের  মাসয়ালাই তারা জানেনা। অথচ তারা বিরাট মুফতী, মুহাদ্দিছ দাবী করে থাকে। শোকের ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

امرنا ان لانحد على ميت فوق ثلاث الا لزوج.

অর্থ: “আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমরা কারো ওফাতে তিন দিনের পর আর শোক প্রকাশ না করি। তবে স্বামীর জন্য স্ত্রী (৪ মাস ১০ দিন) শোক পালন করতে পারবে।”

(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ, দারিমী শরীফ, মুয়াত্তা ইমাম মালিক শরীফ)

অতএব, সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সাধারণভাবে কোন ব্যক্তি মারা গেলে তিন দিনের বেশী শোক পালন  করা জায়িয নেই। আর অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের  শানে শোক পালনের প্রশ্নই আসে না। কেননা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন ও বিদায় উভয়টিই ঈদ বা খুশির দিন। অর্থাৎ রহমত, বরকত, সাকীনা ও শান্তি নাযিলের দিন। আর পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার কোন মেছাল নেই। সুতরাং পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে কোন মতেই শোকের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। কাজেই যেদিনটি শোকের দিন নয়, সেদিন শোক পালন করা বা করতে বলা সম্মানিত শরীয়ত উনাকে পরিবর্তন করার নামান্তর যা  কাট্টা কুফরী অর্থাৎ যারা পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে শোকের দিবস হিসেবে পালন করবে বা করতে বলবে তারা কাট্টা কাফির এবং চিরজাহান্নামী হবে।

কাজেই, ওহাবী গোষ্ঠীর উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ বিরোধী, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক হয়েছে।

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ  করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউ অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহহাতি শান মুবারক প্রকাশ করাবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে তদ্রুপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করাবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করাবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে নামায আদায় করেছেন সেটা লক্ষ্য করলেই তো হয়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে-

عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেছেন, তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” (বুখারী শরীফ,  মুসলিম শরীফ,  মিশকাত শরীফ)

তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করাবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন, “বুখারী শরীফ” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنْ حضرت إِبْرَاهِيمَ قَالَ الأَسْوَدُ : كُنَّا عِنْدَ ام الـمؤمنين حضرت عَائِشَةَ عليها السلام، فَذَكَرْنَا الْمُواظَبَةَ عَلَى الصَّلوَةِ وَالتَّعْظِيمَ لَهَا قَالَتْ لَمَّا مَرِضَ النبى صلى الله عليه وسلم مَرَضَهُ الَّذِي مَاتَ فِيهِ فَحَضَرَتِ الصَّلوَةُ فَأُذّنَ فَقَالَ مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلّ بِالنَّاسِ فَقِيلَ لَهُ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ أَسِيفٌ إِذَا قَامَ مَقَامكَ لَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يُصَلّيَ بِالنَّاسِ وَأَعَادَ فَأَعَادُوا لَهُ فَأَعَادَ الثَّالِثَةَ فَقَالَ إِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ مُرُوْا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلّ بِالنَّاسِ فَخَرَجَ أَبُو بَكْرٍ يصَلَّى فَوَجَدَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ نَفْسِهِ خِفَّةً فَخَرَجَ يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ كَأَنِّي أَنْظُرُ رِجْلَيْهِ تَخُطَّانِ الارضَ مِنَ الْوَجَعِ فَأَرَادَ أَبُو بَكْرٍ أَنْ يَتَأَخَّرَ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ مَكَانَكَ ثُمَّ أُتِيَ بِهِ حَتَّى جَلَسَ إِلَى جَنْبِهِ قِيلَ لِلأَعْمَشِ ،َفكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلّى، وَأَبُو بَكْرٍ يُصَلّى بِصَلوتِهِ وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلوة أَبِى بَكْرٍ فَقَالَ بِرَأْسِهِ نَعَمْ.رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ، عَنْ شُعْبَةَ ، عَنِ الأَعْمَشِ بَعْضَهُ.وَزَادَ أَبُو مُعَاوِيَةَ جَلَسَ عَنْ يَسَارِ أَبِي بَكْرٍ فَكَانَ ابُو بَكْرٍ يُصَلّى قَائِمًا

অর্থ: “হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে; তিনি বলেন, হযরত আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কাছে ছিলাম এবং নামাযের পাবন্দী ও উনার তা’যীম সম্মন্ধে আলোচনা করছিলাম। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন  মারীদ্বি  (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করলেন, যে মারীদ্বি  (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করার পর  তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন ছলাতের সময় হলে আযান দেয়া হলো। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতে বলুন। উনাকে বলা হলো যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক, তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করা উনার পক্ষে সম্ভব হবে না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবার সে কথা বললেন এবং উনারাও আবার তাই বললেন। তৃতীয়বারও তিনি সে কথা বললেন, এবং বললেন, আপনারা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার ছোহবতে আগমনকারী মহিলাদের মতো। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকেই বলুন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করেন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এগিয়ে গিয়ে নামায আদায় শুরু করলেন। এ দিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে একটু হালকা বোধ করলেন। অতঃপর দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলেন। (উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,) আমার চোখ মুবারকে এখনও স্পষ্ট ভাসছে। অসুস্থতার কারণে অর্থাৎ মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশের কারণে  উনার দু’পা মুবারক মাটিতে লেগে যাচ্ছিল। তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি পিছনে সরে আসতে চাইলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে স্বস্থানে থাকার জন্য ইঙ্গিত মুবারক করলেন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে একটু সামনে আনা হলো যে, তিনি হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার পাশে যমীনের উপর বসলেন। হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনের উপর বসে নামাযের ইমামতি করছিলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণে ছলাত আদায় করছিলেন এবং লোকেরা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার নামাযের অনুসরণ করছিলেন। হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মাথা মুবারকের ইশারায় বললেন হ্যাঁ। আবু দাউদ শরীফ হযরত শু’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহ উনার সূত্রে, হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহ উনার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কতকাংশ উল্লেখ করেছেন। হযরত আবু মু‘আবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরোও একটু যোগ করে বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনের উপর বসে নামাযের ইমামতি করছিলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি ডানপাশে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন।”

অতএব উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মারীদ্বি  (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করার পর বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন উক্ত মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করার পরও তিনি হযরত ছাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই পবিত্র নামায মুবারক আদায় করেছেন।

মুহম্মদ বয়তুল ইসলাম

নওগাঁ

সুওয়াল: আমি নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বায় অন্য এক পীর ছাহিব উনার মুরীদ। এখানে নতুনভাবে যদি আমি বাইয়াত গ্রহণ করি তাহলে কি ঐ ছবকই চালাতে হবে, নাকি নতুন করে ছবক নিতে হবে?

জাওয়াব: যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার মহান মুজাদ্দিদ ও  ইমাম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, ক্বইয়্যূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, জামিউল ইলিম ওয়াল মাক্বাম, নূরে মুকাররাম, সাইয়্যিদু আওলাদে রসূলিল্লাহ, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যথাক্রমে সারাবিশ্বে মশহূর ক্বাদিরিয়া, চীশতিয়া, নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া প্রভৃতি তরীক্বাসমূহের কামালতসম্পন্ন ও খিলাফতপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ। উক্ত প্রতিটি তরীক্বাসমূহের উপর তিনি বাইয়াত করিয়ে থাকেন এবং প্রতিটি তরীক্বার অসংখ্য মুরীদ বা সালিকও রয়েছেন এবং বহু সালিক উনার নিকট বাইয়াত গ্রহন করে তরীক্বার সবক্বসমূহ শেষও করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, কেউ কোন শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করার পর তাকমীল বা পূর্ণতায় পৌঁছার পূর্বে যদি উক্ত শায়েখ বা মুর্শিদ ইন্তিকাল করেন তখন পূর্ণতায় পৌঁছার জন্য আরেকজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহন করতে হবে।

অথবা শায়েখ যদি এমন দূর দেশে থাকেন, যাঁর সাথে কোনো প্রকার সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ করা সম্ভব না হয় এমনকি চিঠি-পত্রের মাধ্যমেও যোগাযোগ সম্ভব না হয়, তাহলে উনাকে পরিবর্তন করে আরেকজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে।

অথবা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন, কোনো ব্যক্তিকে কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ও হক্ব জেনেই উনার কাছে বাইয়াত হয়েছিল কিন্তু পরে তিনি বিদয়াত-বেশরা, বেদ্বীনি ও বদদ্বীনি নাজায়িয-হারাম, কুফরী-শিরকী কাজে মশগুল হয়ে গিয়েছেন। যেমন- ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, হরতাল করা, লংমার্চ করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবি করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ভোট, নির্বাচন ও গণতন্ত্র করা ইত্যাদি নাজায়িয, হারাম ও কুফরী কাজে মশগুল হয়ে গেলে তখন মুরীদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো উক্ত নামধারী মুর্শিদ বা শায়েখকে ছেড়ে দিয়ে অপর কোনো হক্কানী ওলী বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হতে হবে।

অথবা কোনো কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার পর যথাযথ সবক্ব আদায় করার পরও উনার দ্বারা যদি মুরীদের কোনো প্রকার রূহানী তরক্কী না হয় এবং আমলেরও কোনো প্রকার পরিবর্তন না হয়, তাহলে উনাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য আরেকজন হক্কানী ওলী বা কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হতে হবে।

উল্লেখ্য, কোন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে যদি কেউ কোন সবক্ব আদায় করে থাকে এবং উক্ত সবক্বের যিকির জারী হয়ে থাকে এবং সবকের হাল জাহির হয়ে থাকে এক্ষেত্রে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার খিদমত মুবারকে নিজের হাল ও অবস্থা সম্পর্কে জানালে তিনি যদি মনে করেন সালিকের পূর্বের সবক্বের যিকির ও হাল ঠিক রয়েছে তাহলে ঐ সবকই  সম্পন্ন করার জন্য বলেন। আর যদি দেখেন সবক্বের যিকির ও হাল ঠিক নেই বা অসম্পূর্ণতা রয়েছে সেক্ষেত্রে তিনি সবক্ব পরিবর্তন করে দেন এবং অনেক সময় নতুনভাবেও সবক্ব দিয়ে থাকেন। (আল ক্বওলুল জামীল, শিফাউল আলীল, তাছাওউফ তত্ত্ব ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ কাজী মনজুরুল আলম

সাতক্ষীরা

 

সুওয়াল: ক্বল্বব যিন্দা করতে উর্ধ ৪০ দিন সময় লাগে, এটা কি সত্য বা সম্ভব?

জাওয়াব: ক্বল্ব্ যিন্দা হওয়ার অর্থ হচ্ছে ক্বলব লতিফায় যিকির  জারী হওয়া। ক্বলব লতিফাকে তওবার মাক্বাম বলা হয়। যার ক্বলব লতিফায় যিকির জারী হবে, তওবার মাক্বামে গুণ হিসেবে তার দ্বারা কোন গুনাহর কাজ সংঘটিত হলে সাথে সাথে খাছ তওবা করার যোগ্যতা পয়দা হবে। এছাড়াও এ মাক্বামের আরো অনেক তাৎপর্য রয়েছে।

তরীক্বার কিতাবসমূহে উল্লেখ রয়েছে, ক্বল্ব্ লতিফাসহ যে কোন লতিফায় যিকির জারী হওয়ার জন্য নিয়ম হচ্ছে- কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে প্রতিদিন একঘণ্টা করে এক মাস নিয়মিত যিকির করা। অর্থাৎ সাধারণভাবে যে কোনো লতিফায় যিকির জারী হতে এক মাস সময় লাগে। তবে কোশেশ ও ইখলাছের তারতম্যের কারণে উক্ত সময় থেকে অনেক কম সময়ও লাগতে পারে। আবার অনেক বেশি সময়ও লাগতে পারে।

কাজেই, ক্বলব জিন্দা করতে উর্ধ ৪০ দিন সময় নির্দিষ্ট করার বিষয়টি সকলের জন্য প্রযোজ্য ও সঠিক নয়।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

নওগাঁ

 

সুওয়াল: যত তরীক্বা বাংলাদেশ ও ভারতে আছে সবগুলি যেখানে শেষ, খাছ মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা নাকি সেখান থেকে আরম্ভ। এটা কতটুকু সত্য?

জাওয়াব: এরকম বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কেননা এক তরীক্বা আরেক তরীক্বার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজেই উক্ত বক্তব্যের দ্বারা অন্যান্য হক্ব ও মশহূর তরীক্বার প্রতি ইহানত বা অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়।

মূল কথা হলো, ক্বাদিরিয়া, চীশতিয়া, নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া অথবা খাছ মুজাদ্দিদিয়া যে তরীক্বাই বলা হোক না কেন, তরক্কী লাভ করার জন্য তরীক্বার যিনি শায়েখ বা মুর্শিদ থাকবেন উনার কামালিয়াতের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ শায়েখ বা মুর্শিদ তিনি যত বেশি সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত উনার পাবন্দ হবেন তিনি ততবেশি কামালিয়াতের অধিকারী। আর উনার দ্বারাই সবচেয়ে বেশি তরক্কী হাছিল করা সহজ ও সম্ভব।

 

মুহম্মদ মোতাহার হুসাইন, নওগাঁ

 

সুওয়াল: খাছ মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা ব্যতীত অন্য তরীকায় ৩০-৪০ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর ক্বল্ব্ জিন্দা হয় এবং নূর পেয়ে থাকে। এটা কতদূর সত্য?

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ ও সত্য নয়।

 

মুহম্মদ জসীমুদ্দীন,নওগাঁ

 

সুওয়াল: খাছ মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বায় এক মুরিদের ক্বল্ব্ জিন্দা থাকলে এবং অন্য কোন মুরিদের ক্বল্ব্ জিন্দা হলে, উভয়ই উভয়কে বুঝতে পারেন। এটা কতটুকু সত্য?

জাওয়াব: বুঝতে পারা শর্ত নয়।

 

নূর মুহম্মদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 

সুওয়াল: চরমোনাই পীর সাহেবদের সিলসিলা ওহাবী আক্বীদা মিশ্রিত, কারণ রশিদ আহমদ গাংগুহীর কিছু আক্বীদা ওহাবী আক্বীদায় গঠিত। ইসলামী শাসনতন্ত্র পরিচালনার স্বার্থে খলীফা নিয়োগ করে তরীক্বার নামে চালিয়ে যাচ্ছে এবং রাজনীতি করছে। এটা কি সঠিক?

জাওয়াব: কেউ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বিরোধী ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী আক্বীদায় বিশ্বাসী হলে অথবা পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী আমল করলে সে পথভ্রষ্ট ও নাহক্ব। এটা যেই হোক না কেন।

আরো উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র করুক অথবা সাধারণভাবে গণতন্ত্র করুক না কেন প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র করা নাজায়িয ও হারাম। যে বা যারা দ্বীন ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র করে তারা পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত এবং না হক্ব। এদের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করা কাট্টা হারাম।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল মা’রূফ

নাটোর

সুওয়াল: খাছ মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বায় আঙ্গুল দিয়ে  নির্দিষ্টভাবে ক্বল্ব্ দেখিয়ে দেয়া হয় এবং ফয়েজ দেয়া হয়। অন্য তরীক্বার পীর ছাহিবগণ মুরিদদেরকে নির্দিষ্ট করে ক্বলব দেখিয়ে দিতে পারেন না বলে দুই চার আঙ্গুল নিচে বলে দেন। এটা কতদুর সত্য?

জাওয়াব: আঙ্গুল দিয়ে ক্বল্ব্ দেখিয়ে দেয়ার বিষয়টি শর্ত নয়। কেননা নাক, কান, চোখ, মুখ ও দাঁতের মতো ক্বলব প্রকাশ্য কোন অঙ্গ নয় যে তা আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে। তাই তরীক্বার কামিল শায়েখ ও মুর্শিদগণ ক্বলবের অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন যে, ক্বলবের মাক্বাম বা স্থান হচ্ছে বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নীচে অভ্যন্তরভাগে।

 

মুহম্মদ আসাদুজ্জামান

ভোলাহাট

 

সুওয়াল: বর্তমানে যে সমস্ত পীর ছাহেব আছেন তাদের কোন মুরীদের ক্বলব জিন্দা হয়নি এবং পীর ছাহেবগণও নিজেদের ক্বল্ব্ জিন্দা করতে পারেননি। বিভিন্ন ধরণের আমল দিয়ে সময় পার করে দেন। এটা কতটুকু সত্য বা কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য ও সঠিক নয়। বরং চরম মিথ্যা ও মনগড়া। মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لعنت الله على الكاذبين

অর্থ: মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।

 

মুহম্মদ রুহুল আমীন

গাজীপুর

 

সুওয়াল: ঈমানকে ক্বলবে প্রবেশ করাতে হয়। ঈমান ক্বলবে প্রবেশ করলে সালিকের অবস্থা কেমন হয়। বাস্তবে তিনি কি তা বুঝতে পারেন?

জাওয়াব: হ্যাঁ, ঈমান উনাকে ক্বলবে প্রবেশ করাতে হয়। অর্থাৎ অন্তরে বিশ্বাস করতে হয়। আর অন্তরের স্বীকৃতির নামই ঈমান। তবে মৌখিক স্বীকৃতি ও আমলের বিষয়টি বাহ্যিক আলামত বা পরিচয় বহনকারী। অন্তর বা ক্বলবে ঈমান প্রবেশ করলেই খালিছ ঈমানদার হয় এবং তা বাস্তবেও বুঝতে পারে।

 

মুহম্মদ শামছুল হুদা

কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: ক্বল্বব জিন্দা হলো কিনা, তার নমুনা কেমন?

জাওয়াব: হ্যাঁ, ক্বল্ব্ লতিফা হোক কিংবা অন্য লতিফা হোক যিকির জারী হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব অবস্থা হতে পারে তা হচ্ছে –

(১) লতিফায় স্পন্দন বা কম্পনের সৃষ্টি। নাড়ীর ন্যায় স্পন্দন বা ঘড়ির কাটার ন্যায় কম্পন অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় ক্বল্বের দ্বার সংকীর্ণ হলে ফয়েয বরদাশ্তে অক্ষমতাহেতু শরীরে কম্পন হতে পারে।

(২) লতিফার স্থানে গরম অনুভূত হতে পারে।

(৩) শরীরে পিপিলিকা চলার কারণে যেরূপ পিলপিল অনুভূত হয়, তদ্রুপ অনুভূত হতে পারে।

(৪) নিজ কানে পবিত্র যিকিরের শব্দ শুনা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, যিকির জারী হওয়া প্রসঙ্গে বলা হয় যে, প্রথমে পশমের গোড়ায় যিকির জারী হয়, দ্বিতীয় চামড়ার মধ্যে, তৃতীয় চামড়ার নীচে সাদা অংশের মধ্যে, চতুর্থ গোশ্তের মধ্যে, পঞ্চম হাড়ের মধ্যে, ষষ্ঠ হাড়ের ভিতরের মগজের মধ্যে, সপ্তম সমস্ত শরীরে।

আর ক্বল্ব্ সম্পর্কে বলা হয়, ক্বল্বের মধ্যে সাতটি স্তর রয়েছে। তা হলো- ছুদূর, নশ্র, শাম্স, নূরী, র্কুব্ মাকীন, নফ্সী।

যখন কেউ ক্বল্বের যিকির শুরু করে, তখন পবিত্র ক্বল্বের উপরের স্তর ছুদূরের মধ্যে যিকির জারী হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্তরে যিকির জারী হয়।

উপরোক্ত বর্ণনা সাপেক্ষে কোন লতিফার যিকির জারী হলে পরবর্তী সবক নেয়া যাবে।

শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশক্রমে বা অনুমোদন সাপেক্ষে সবক পাল্টানো যাবে।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ