সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৩৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুরা।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল : মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর ১১)

বিগত কিস্তিগুলোতে অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ মুবারক দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি হচ্ছেন সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে ১০ম খলীফা এবং উনার সুমহান আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আল মানছূর আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১১তম খলীফা। সুবহানাল্লাহ!

যেহেতু সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যে, সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাত ওয়াস সালাম এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব উনার অর্থ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্পর্কে ‘খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ কিতাব মুবারক-এ আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আলোচনা করার পূর্বে এখন আমরা আলোচনা করবো- ‘মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক উছীলায় বর্তমান যামানায় বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ (সুবহানাল্লাহ) ঃ

সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অসংখ্য-অগণিত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য সম্মানিত দলীল-আদিল্লাহ মুবারক দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও চির অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি অতিশীঘ্রই বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশআল্লাহ। (সুবহানাল্লাহ) মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মুজাদ্দিদে আ’যম, ছাহিবুল ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের বেমেছাল দয়া, দান, ফযল, করম ও ইহসান মুবারক উনাদের বদৌলতে এই সম্পর্কে নি¤েœ কতিপয় চির অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

প্রথম প্রমাণ :

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব ‘কালামুল্লাহ শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصّٰلِـحٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওয়াদা মুবারক দিচ্ছেন যে, যাঁরা ঈমান আনবেন এবং আমলে ছালিহ করবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হাদিয়া করবেন। যেমনিভাবে তিনি পূর্ববর্তী উনাদেরকে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুুওওয়াহ হাদিয়া করেছিলেন।” (সম্মানিত সূরা নূর শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ : ৫৫)

আলোচ্য সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, যাঁরা ঈমান আনবেন এবং আমলে ছালিহ করবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে অবশ্য অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হাদিয়া করবেন। যেমনিভাবে তিনি পূর্ববর্তী উনাদেরকে হাদিয়া করেছিলেন। এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক।

এখানে কিন্তু বলা হয়নি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হবে এবং হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হবে। এছাড়া আর অন্য কোনো সময় তথা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে অর্থাৎ উনার পূর্ববর্তী যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হবে না; বরং এখানে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছালিহ করলে যে কোনো সময় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হতে পারে। আর সে সময়টা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বেও হতে পারে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয় এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার থেকে এই বিষয়টিও অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছালিহ করলে বর্তমান যামানায়ও অবশ্য অবশ্যই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই দিবেন। এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা। আর মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক অবশ্যই সত্য। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ.

অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক সত্য।” (পবিত্র সূরা ইউনূস আলাইহিস সালাম, পবিত্র আয়াত শরীফ : ৫৫)

সুতরাং আলোচ্য সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছালিহ করলে বর্তমান যামানায়ও অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হবে। যেমন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম হয়েছিলো। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক। আর মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক অবশ্যই সত্য।

আর বর্তমান যামানায় যেহেতু সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ খলীফা তথা ১০ম খলীফা তথা সাইয়্যিদুল খুলাফা, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি তাশরীফ নিয়েছেন এবং তিনি উনার মুরীদান উনাদেরকে নিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ আমলে ছালেহ ‘সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ দায়িমীভাবে পালন করে যাচ্ছেন এবং তা অনন্তকালের জন্য জারী করেছেন। সুতরাং উনার মুবারক উছীলায় বর্তমান যামানায় বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। (সুবহানাল্লাহ)

মুহম্মদ তাজুল ইসলাম

ডিমলা, নিলফামারী

সুওয়াল: জনৈক মৌলভী সাহেবের বক্তব্য হচ্ছে মুর্দাকে মাটি দেয়ার সময় منها خلقناكم আয়াত শরীফ পড়া যাবেনা। ইহা কতটুকু শুদ্ধ?

জাওয়াব: উক্ত মৌলভী সাহেবের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ। শুদ্ধ হচ্ছে মাইয়্যিত বা মৃত ব্যক্তিকে দাফনকালে অর্থাৎ কবরে মাটি দেয়ার সময়

 منها خلقناكم وفيها نعيدكم ومنها نخرجكم تارة اخرى

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি এবং মাটির মধ্যেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করাবো এবং মাটি হতেই পুনরায় তোমাদেরকে উঠাবো। (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ পড়া জায়িয তো অবশ্যই উপরন্তু মুস্তাহাব আমলের অন্তর্ভুক্ত।

বর্ণিত রয়েছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর কবর ঢেকে দেয়ার জন্য বাঁশ ও চাটাই বিছিয়ে দেয়ার পর উপস্থিত লোকজন আপন হাতে মুষ্টি ভরে মাটি নিয়ে প্রত্যেকে প্রথমবার منها خلقناكم (মিনহা খলাক্বনা-কুম) অর্থাৎ “মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি মাটি হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি।” এটা বলে সেই মাটি লাশের মাথার দিক হতে ফেলবে। অনুরূপ দ্বিতীয়বার মাটি নিয়ে وفيها نعيدكم (ওয়া ফীহা নুঈদুকুম) অর্থাৎ “এবং মাটির মধ্যেই আমি তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করাবো।” এটা বলে ফেলবে। একইভাবে তৃতীয়বার মাটি নিয়েومنها نخرجكم تارة اخرى (ওয়া মিনহা নুখ্রিজুকুম তা-রতান উখরা) অর্থাৎ “এবং মাটি হতেই আমি পুনরায় তোমাদেরকে উঠাবো।” এটা বলে তা ফেলবে। তৃতীয়বারে লাশের পায়ের দিকে মাটি ফেলবে এবং সাথে সাথে দোয়াটি পড়াও শেষ করবে।

এরূপ নিয়মে মাটি দেয়া মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত। (দলীলসমূহ: আলমগীরী, শামী, আহকামে মাইয়্যিত)

 

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম

তেতুলিয়া, পঞ্চগড়

 

সুওয়াল: সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর যে আযান দিতে হয়, উক্ত আযান দেয়ার নিয়ম জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: ছেলে সন্তান হোক  অথবা মেয়ে সন্তান হোক জন্মগ্রহণ করলে আযান ও ইক্বামত দেয়া সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত; সংক্ষেপে যাকে তা’যীন বলা হয়। অর্থাৎ সন্তান জন্মগ্রহণ করলে শিশু সন্তানকে ধুয়ে পরিস্কার করে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে কোন বুযুর্গ ব্যক্তির নিকট এনে দিবে। তিনি শিশুর ডান কানে আযানের লফ্জ বা শব্দগুলি এবং বাম কানে ইক্বামতের লফ্জ বা শব্দগুলি বলবেন। উল্লেখ্য, আযান ও ইক্বামত দেয়ার সুন্নত হলো দাঁড়িয়ে আযান ও ইক্বামত দেয়া। কেননা বসে আযান-ইক্বামত দেয়া মাকরূহ। আরো উল্লেখ্য, সাধারণত আযান উচ্চ আওয়াজে দেয়ার নিয়ম। কিন্তু নবজাতকের কানে স্বাভাবিক আওয়াজে আযান দিতে হবে এবং আযানের আওয়াজ অপেক্ষা কম আওয়াজে ইক্বামত দিতে হবে যাতে আযান ও ইক্বামতের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ আজান উনার শব্দ মুবারকগুলি ধীরে ধীরে বলতে হবে। আর ইক্বামত দেয়ার সময় শব্দ মুবারকগুলি একটু দ্রুতগতিতে বলতে হবে। তবে ইক্বামতের মধ্যে যে “ক্বদ ক্বা-মাতিছ ছলাহ” শব্দ মুবারক বলতে হয়, সেটা এখানে বলতে হবে না। (দলীল: ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক ইত্যাদি)

মুহম্মদ মনছূর হায়দার

ফেনী

সুওয়াল: সম্প্রতি ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা সংঘটিত হওয়ার পর কেউ কেউ খেলাধুলাকে জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ উনার ১২নং পবিত্র আয়াত শরীফখানা এবং তবারানী শরীফ-এ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে। প্রকৃতপক্ষে উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ খেলাধুলা জায়িয হওয়ার ক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: হারাম খেলাধুলাকে জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে যারা পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ উনার ১২নং পবিত্র আয়াত শরীফখানা এবং তবারানী শরীফ-এ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে উল্লেখ করতে চায়; তারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে নেহায়েতই জাহিল ও অজ্ঞ।

কারণ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে যেখানে খেলাধুলা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার সপক্ষে বহু পবিত্র আয়াত শরীফ ও বহু হাদীছ শরীফ উল্লেখ রয়েছে, সেখানে খেলাধুলা জায়িয প্রমাণের ক্ষেত্রে অস্পষ্ট একখানা আয়াত শরীফ ও একখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে এবং তার মনগড়া অর্থ করে খেলাধুলাকে জায়িয প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা চরম মুর্খতারই শামিল।

জানা আবশ্যক, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কোন বিষয়ে ফায়সালা দিতে হলে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ এবং সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে। অন্যথায় দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয় এমন অস্পষ্ট একখানা আয়াত শরীফ কিংবা একখানা হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে ফায়সালা দিলে তা আদৌ শুদ্ধ হবে না। তা ভুল হবে এবং এজন্য তাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কেবল শাব্দিক অর্থের উপর নির্ভর করে ফায়সালা প্রদান করাও শুদ্ধ নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে শাব্দিক অর্থ সম্পূর্নরূপে পরিহারযোগ্য। উদাহরণ স্বরূপ مكر (মকর) শব্দ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার ক্ষেত্রে ধোকাবাজি অর্থ গ্রহন না করে ‘হিকমত বা কৌশল’ অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অনুরূপ عصى (আছা) শব্দ মুবারক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার শান মুবারকে নাফরমানী অর্থ গ্রহন না করে বরং ‘হুকুম বাস্তবায়ন করলেন’ অর্থ গ্রহন করতে হবে। অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষে কোন কোন শব্দের সরাসরি অর্থ গ্রহন না করে তা’বীলী অর্থ গ্রহন করতে হবে।

অনুরূপভাবে সূরা ইউসুফ শরীফ উনার ১২নং আয়াত শরীফ-

ارسله معنا غدا يرتع ويلعب وانا له لـحافظون

 তারা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অর্থ করেছে এভাবে, “আপনি আগামীকাল উনাকে আমাদের সাথে প্রেরণ করুন। তিনি তৃপ্তিসহ খাবেন এবং খেলাধুলা করবেন এবং আমরা অবশ্যই উনার রক্ষণাবেক্ষণ করবো।”

প্রথমত: তারা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত يلعب শব্দের যে অর্থ করেছে তা মোটেও শুদ্ধ নয়, এখানে يلعب শব্দের শুদ্ধ ও তা’বীলী অর্থ হচ্ছে “চলাচল করবেন” অর্থাৎ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার ভাইয়েরা বললো, তিনি আমাদের সাথে খাবেন ও চলাচল বা দৌড়াদৌড়ি করবেন।

দ্বিতীয়ত: খেলাধুলা জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দলীল হিসেবে উল্লেখ করা চরম জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়।  কেননা যদিও ধরে নেই যে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে يلعب দ্বারা খেলাধুলাকে বুঝানো হয়েছে তবে তা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার শরীয়তে; যা বর্তমান সম্মানিত শরীয়তে জায়িয নেই।

অতএব, পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ উনার ১২নং পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা কোনভাবেই খেলাধুলা জায়িয প্রমানিত হয় না। এরপরও যদি কেউ মিথ্যা ও মনগড়াভাবে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা খেলাধুলা জায়িয হওয়ার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে পেশ করে তবে সেটা হবে সুস্পষ্ট তাফসীর বির রায় অর্থাৎ মনগড়া ব্যাখ্যার শামিল যা প্রকাশ্য কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

এরপর তারা খেলাধুলা জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে তবারানী শরীফ উনার একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে তার মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করেছে। যেমন তাদের উল্লিখিত হাদীছ শরীফখানা উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال كنّا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فدعينا إلى طعام فإذا الـحسين عليه السلام يلعب فى الطريق مع صبيان فأسرع النبى صلى الله عليه وسلم أمام القوم ثمّ بسط يده فجعل يفرُّ ههنا وههنا فيضاحكه رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى أخذه فجعل إحدى يديه فى ذقنه والأخرى بين رأسه وأذنيه ثمّ اعتنقه وقبَّله.

তারা অর্থ করেছে এভাবে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছিলাম এবং আপ্যায়নের দাওয়াত পেয়ে সেদিকে রওয়ানা হলাম অতঃপর পথিমধ্যে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বালকদের সাথে খেলাধুলা করতে দেখলাম, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবার সামনে দিয়ে দ্রƒত উনার কাছে গিয়ে উনাকে আপন কোল মুবারকে তুলে নেন এবং এক হাত মুবারক থুতনি মুবারকের নিচে রেখে আরেক হাত মুবারক মাথা ও কান মুবারকের মধ্যভাগে রেখে উনাকে আলিঙ্গন করেন ও বুছা দেন।

এক্ষেত্রে প্রথমত বলতে হয় যে, উদ্ধৃত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত يلعب “ইয়াল্আবু” শব্দের সরাসরি অর্থ গ্রহণ করে খেলাধুলা জায়িয বলার অপচেষ্টা চালানো জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। কেননা এখানে ‘ইয়াল্আবু’ শব্দ মুবারকের অর্থ সম্পূর্ণভাবে অস্পষ্ট। তারা যে লিখলো হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি সমবয়সী বালক উনাদের সাথে খেলছিলেন, কি খেলছিলেন? ফুটবল, হকি, ক্রিকেট কোনটি? এসবের কোনটিই নয়। আর তখন উনার বয়স মুবারক কত ছিল? তিন, চার কিংবা পাঁচ।

মোট কথা, বর্ণিত ‘ইয়ালআবু’ শব্দের বিশুদ্ধ ও তা’বীলী অর্থ হলো- ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমবয়সী শিশু- বালক উনাদের সাথে অবস্থান, চলাচল বা দৌড়াদৌড়ি করছিলেন।

দ্বিতীয়ত বলতে হয় যে, উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত ঘটনাটির পূর্বেই খেলাধুলা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তাহলে তিনি কি করে খেলাধুলা করতে পারেন? এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قدم النبى صلى الله عليه وسلم الـمدينة ولـهم يومان يلعبون فيهما فقال ما هذان اليومان قالوا كنا نلعب فيهما فى الـجاهلية فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم قد ابدلكم الله بهما خيرا منهما يوم الاضحى ويوم الفطر

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফে তাশরীফ আনলেন আর তখন তাদের এমন দুটি দিন ছিল যাতে উনারা খেলাধুলা করতেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার এ দুটি দিনে কি করেন? উনারা বললেন, আমরা ইসলাম পূর্ব জাহিলিয়াত যুগে এ দিন দুটিতে খেলাধুলা করতাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দু’ দিনের পরিবর্তে উক্ত দু’ দিন অপেক্ষা উত্তম দুটি দিন আপনাদেরকে দিয়েছেন। একটি হচ্ছে ঈদুল আদ্বহার দিন। আরেকটি হচ্ছে ঈদুল ফিতরের দিন। (আবু দাউদ শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও প্রতিভাত হলো যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে খেলাধুলা জায়িয নেই। যদি জায়িয থাকতো তবে উক্ত দুটি দিনের পরিবর্তে নতুন দুটি দিন দেয়ার প্রয়োজন ছিল না।

কাজেই, উক্ত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা উল্লেখ করে খেলাধুলা জায়িয হওয়ার প্রমাণ পেশ করা চরম জিহালত বৈ কিছু নয়।

স্মর্তব্য যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের স্পষ্ট বর্ণনার দ্বারা খেলাধুলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وما خلقنا السماء والارض وما بينهما لعبين

অর্থ: আমি আসমান ও যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা ক্রীড়াচ্ছলে অর্থাৎ খেলাধুলার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬)

এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিখ্যাত ও বিশুদ্ধ কিতাব ‘মুস্তাদরাক লিল হাকিম শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

كل لعب حرام

অর্থ: সমস্ত প্রকার খেলাধুলা হারাম।

অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ক্বিতয়ী ও ক্বওলী দলীলের মুকাবিলায় অস্পষ্ট কোন প্রমাণ গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য নয়। উপরন্তু সুস্পষ্ট হারাম ও নাজায়িয খেলাধুলাকে জায়িয বলাটা সম্পূর্ণরূপে কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম

ডিমলা, নীলফামারী

সুওয়াল: জনৈক মৌলভী সাহেবের বক্তব্য হলো, বিতিরের নামায তিন রাকায়াত পড়লে মাঝখানে অর্থাৎ দু’ রাকায়াতের পর বৈঠক দেয়া যাবে না। তার আরো বক্তব্য হচ্ছে, বিতির নামায এক রাকায়াতও পড়া যায়। তার উক্ত বক্তব্য কতটুকু ঠিক?

জাওয়াব: উক্ত মৌলভী সাহেবের উল্লিখিত বক্তব্য মোটেও ঠিক নয়। সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ। কেননা ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

صلوة الليل مثنى و مثنى

অর্থ : রাতের নামায দুই রাকাআত দুই রাকাআত। অর্থাৎ রাতের প্রত্যেক নামাযে দুই-দুই রাকায়াতে বসতে হবে।

ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

كان يقول فى كل ركعتين التحية

অর্থ : নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  বলেন, প্রত্যেক দুই রাকায়াতে আত্তাহিয়্যাতু অর্থাৎ তাশাহ্হুদ পড়তে হবে।

অনুরূপ ছহীহ তিরমিযী শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

تشهد فى كل ركعتين

অর্থ : নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক দুই রাকায়াতে তাশাহ্হুদ পড়বে।

কাজেই, দু রাকায়াতের পর তাশাহ্হুদ পড়ার পর দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট এক রাকায়াত অর্থাৎ তৃতীয় রাকায়াত পূর্ণ করে নামায শেষ করতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া এবং আমল। এ আমলের বিপরীত আমল করা হচ্ছে সম্মানিত হানাফী মাযহাব বিরোধী এবং গোমরাহী।

এরপর উক্ত মৌলভী সাহেব যে বলেছে, বিতির নামায এক রাকায়াতও পড়া যায়। তার এ বক্তব্য শুদ্ধ নয়। মূলত দু’ রাকায়াতের কম কোন ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত বা নফল নামায নেই। যদি থাকতো তাহলে ফজর দু’ রাকায়াত ফরয নামাযের স্থলে এক রাকায়াত কছর করার হুকুম হতো।

সুতরাং, এক রাকায়াত বিতির পড়া কখনই জায়িয বা শরীয়ত সম্মত নয়।

যেমন এ প্রসঙ্গে মুয়াত্তায়ে ইমাম মুহম্মদ কিতাবের باب السلام فى الوتر অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال ما اجزاءت ركعة واحدة قط

অর্থ : ফক্বীহুল উম্মত হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এক রাকাআত বিতির পড়া কখনোই জায়িয হবে না।

তামহীদ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى سعيد رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن البتيراء ان يصلى الرجل واحدة يوتربها.

অর্থ : হযরত আবূ সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অপূর্ণ নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন, আর তা হচ্ছে এক রাকাআত দ্বারা বিতির আদায় করা।

মুয়াত্তায়ে মালিক ৪৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-

قال حضرت مالك رحمه الله تعالى ليس هذا العمل عندنا ولكن ادنى الوتر ثلث

অর্থ : মালিকী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের নিকট এক রাকাআত বিতির এ সম্পর্কিত আমলের কোন অস্তিত্ব নেই। বরং বিতির অতিকম তিন রাকাআত।

উল্লেখ্য, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা যে পবিত্র মদীনা শরীফ-এ জীবন মুবারক অতিবাহিত করেছেন সেখানকার অধিবাসীগণ উনারা এক রাকাআত বিতির পড়তেন না; বরং উনারা এক রাকাআত বিতির নাজায়িয মনে করতেন। এতেই প্রমাণিত হয় যে, এক রাকাআত বিতির পড়া জায়িয নেই।

উল্লেখ্য, শুধুমাত্র হানাফী মাযহাবে বর্ণিত তিন রাকাআত বিতির পড়ার হুকুমই বলবৎ রয়েছে। আর অন্য যেসব কম বা বেশি রাকাআত বিতির পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায় সেসব বর্ণনাসমূহের হুকুম মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে।

অতএব, তিন রাকাআত বিতির নামায দু’ বৈঠকে ও এক সালামে আদায় করতে হবে। বিশেষ করে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা তিন রাকাআত বিতিরের বিষয়টি স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে; সেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিন রাকাআত বিতির নামাযে প্রথম রাকায়াতে কোন সূরা, দ্বিতীয় রাকায়াতে কোন সূরা এবং তৃতীয় রাকায়াতে কোন সূরা পড়েছেন তা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি তিনি এক, পাঁচ বা সাত রাকাআত বিতির পড়তেন, তাহলে সে বর্ণনাও থাকতো; কিন্তু সে বর্ণনা কারো থেকে বর্ণিত নেই। কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিন রাকাআতই বিতির পড়তেন।

যেমন তিরমিযী শরীফ ও নাসায়ী শরীফ-এ বর্ণিত  রয়েছে-

عن حضرت ابى ابن كعب رضى اله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلث ركعات وكان يقرأ فى الاولى بسبح اسم ربك الاعلى وفى الثانية بقل يا ايها الكافرون وفى الثالثة بقل هو الله احد و عن حضرت عائشة ام الـمؤمنين عليها السلام مثله.

 অর্থ : হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতির নামায তিন রাকাআত পড়তেন। তিনি প্রথম রাকায়াতে (সূরা ফাতিহার পর) ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ সূরা পাঠ করতেন, দ্বিতীয় রাকায়াতে ‘কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন’ পাঠ করতেন এবং তৃতীয় রাকায়াতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করতেন।

মাআনিউল আছার ১৬৪ পৃষ্ঠা এবং মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ ১৪৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه الوتر ثلث كثلث الـمغرب

অর্থ : ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, বিতির নামায তিন রাকাআত যেমন মাগরিবের নামায তিন রাকআত অর্থাৎ বিতির নামায মাগরিব নামাযের ন্যায় তিন রাকাআত।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২২৫তম সংখ্যা পাঠ করুন।

মুহম্মদ আশরাফ আলী

নীলফামারী

সুওয়াল: জনৈক মৌলভী সাহেবের বক্তব্য হচ্ছে, কালিমাহ তইয়্যিবাহ

لا اله الا الله محمد رسول الله (صلى الله عليه وسلم)

এভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেও নেই এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও নেই। ইহা সত্য কি না? দলীল সহকারে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: উক্ত মৌলভী সাহেবের উক্ত বক্তব্য আদৌ সত্য নয়। বরং চরম মিথ্যার সামিল। যা প্রকাশ্য কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা পবিত্র কালিমা তইয়্যিবাহ উনার মধ্যে যে কালাম পাঠ করা হয় অর্থাৎ

 لا اله الا الله محمد رسول الله (صلى الله عليه وسلم)

তা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেও রয়েছে এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও রয়েছে। তবে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে দু’ভাগে। যেমন প্রথম ভাগ রয়েছে পবিত্র সূরা আছছফাত শরীফ উনার ৩৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে এবং পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ উনার ১৯নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لا اله الا الله  অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ বা মা’বুদ নেই।

আর দ্বিতীয় অংশখানা পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ উনার ২৯নং আয়াত শরীফ উনার শুরুভাগে উল্লেখ রয়েছে। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

محمد رسول الله

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার একাধিক কিতাবের মধ্যে, একাধিক হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে এবং একাধিক রাবী দ্বারা বর্ণিত রয়েছে, পবিত্র কালিমা তইয়্যিবাহ শরীফ উনার পুরা অংশ বা কালামই বর্ণিত রয়েছে। এখানে দুখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হলো। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قلت يا رسول الله بابى انت وامى اخبرنى عن اول شىء خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا حضربت جابر ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذالك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالى ولم يكن فى ذالك الوقت لوح ولا قلم ولا جنة ولا نار ولا ملك ولا سماء ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جنى ولا انسى فلما اراد الله تعالى ان يخلق قسم ذالك النور اربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول القلم ومن الثانى اللوح ومن الثالث العرش ثم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول حملت العرش ومن الثانى الكرسى ومن الثالث باقى الملئكة ثم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول السماوات ومن الثانى الارضين ومن الثالث الجنة والنار ثم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول نور ابصار المؤمنين ومن الثانى نور قلوبهم وهى الـمعرفة بالله تعالى ومن الثالث نور انسهم وهو التوحيد لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم الخ

অর্র্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? তিনি বললেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুর পূর্বে আপনার নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক উনাকে সৃষ্টি করেন।’ অর্র্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম সৃষ্টিই হচ্ছেন নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সেই নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে অবস্থান করছিলেন। আর সে সময় লওহো, কলম, বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জিন কিছুই ছিল না। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন মাখলূক্বাত সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি সেই নূর মুবারক উনাকে চার ভাগ করেন। উনার প্রথম ভাগ দ্বারা ক্বলম, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লাওহে মাহফূজ, তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশে মুআল্লা সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করেন। উনার প্রথম ভাগ দ্বারা আরশ বহনকারী হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা  কুরসী, তৃতীয় ভাগ দ্বারা অন্যান্য হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করেন। তার প্রথম ভাগ দ্বারা আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা যমীন, তৃতীয় ভাগ দ্বারা বেহেশত ও দোযখ সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করেন। তার প্রথম ভাগ দ্বারা মু’মিন বান্দাদের চোখের জ্যোতি, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা উনাদের ক্বলবের জ্যোতি, এটিই মূলতঃ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মা’রিফাত, তৃতীয় ভাগ দ্বারা মু’মিন বান্দাদের উনসের নূর, অর্র্থাৎ তাওহীদ বা কালিমা শরীফ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনার উনার নূর সৃষ্টি করেন। এমনিভাবে উক্ত নূরে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পর্যায়ক্রমে সমস্ত মাখলূক্বাত সৃষ্টি করেন। (মুসনাদে আব্দির রযযাক, শরহুয যুরকানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, আফজালুল কুরা, মাতালিউল মাসাররাত, তারীখুল খামীছ, নূরে মুহম্মদী, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ, নশরুত তীব  ইত্যাদি।)

অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ কিতাব আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت عمر بن الـخطاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لـما افترى ادم عليه السلام الـخطيئة قال يارب اسألك بحق محمد صلى الله عليه وسلم لـما غفرت لى فقال الله يا ادم عليه السلام كيف عرفت محمدا صلى الله عليه وسلم ولـم اخلقه قال يا رب لـما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى فرأيت على قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلمت أنك لـم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك فقال الله صدقت يا ادم عليه السلام انه لاحب الـخلق الى ادعنى بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد صلى الله عليه وسلم ما خلقتك. هذا حديث صحيح الاسناد.

অর্র্থ: “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া ক্ববূলের সময় হলো তখন তিনি দোয়া করলেন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম উনার ওসীলায় প্রার্থনা করছি। অতএব আমার দোয়া ক্ববূল করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনলেন, এখনো তো উনাকে যমীনে প্রেরণ করিনি। জাওয়াবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার রব! আপনি যখন আমাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারক-এ তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ ফুকে দেন তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করে আরশের খুঁটিসমূহে লিখিত দেখতে পাই- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ বা মাবূদ নেই, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল’ তখন আমি বুঝতে পারলাম, আপনার নাম মুবারক-এর সাথে যাঁর নাম মুবারক সংযুক্ত আছে, তিনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সবচেয়ে মুহব্বতের হবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি সত্য কথাই বলেছেন। কারণ তিনি সৃষ্টির মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মুহব্বতের। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! উনার ওসীলায় আমার প্রার্থনা ক্ববূল করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি আপনার দোয়া কবূল করলাম। যদি আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি না হতেন তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না। সুবহানাল্লাহ! এ হাদীছ শরীফখানা উনার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।

উপরের দলীলভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা উক্ত মৌলভী সাহেবের বক্তব্য চরমভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো। বস্তুত মুনাফিকদের স্বভাব হচ্ছে মিথ্যা বলা এবং মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হয়। নাউযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে এসকল মুনাফিক, দাজ্জালের কাযযাবদের থেকে ঈমান, আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব হিফাজত করুন।

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

ডোমার, নীলফামারী

জাওয়াব: জনৈক মৌলভী সাহেবের বক্তব্য হচ্ছে যে, হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম নামে কোন ফেরেশতা নেই। ইহা সত্য কিনা?

জাওয়াব: না, উক্ত মৌলভী সাহেবের উক্ত বক্তব্য সত্য নয়। বরং তা চরম মিথ্যার শামিল। কেননা, যেখানে পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং তার ব্যাখ্যাগ্রন্থসহ বহু কিতাবাদীতে হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম নামে ফেরেশতা থাকার বর্ণনা স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে অথচ সেখানে সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, মনগড়াভাবে এবং দলীল-প্রমাণ ছাড়াই সে বলে বেড়াচ্ছে যে, হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম নামে কোন ফেরেশতা নেই। নাউযুবিল্লাহ! এই সমস্ত মিথ্যাবাদীদের প্রসঙ্গেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لعنت الله على الكاذبين

অর্থ: মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বা অভিসম্পাত। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

والله يشهد ان الـمنافقين لكاذبون

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা হচ্ছে মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকুন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

অর্থাৎ মিথ্যা ও মনগড়া কথা বলা হচ্ছে মুনাফিকদের স্বভাব। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-

علمات الـمنافق ثلاثة اذا حدث كذب واذا وعد اخلف واذا اؤتمن خان

অর্থাৎ মুনাফিকদের লক্ষণ তিনটি। কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখলে খিয়ানত করে। (মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

انـما الكذب لكل الذنوب ام

অর্থ: নিশ্চয়ই মিথ্যা সমস্ত পাপের মূল।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে, আখিরী বা শেষ যামানায় বহু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শুননি এবং তোমাদের পূর্বপুরুষগণও শুনেনি। তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তবেই তারা তোমাদেরকে ফিতনায় ফেলতে পারবে না এবং তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারবেনা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মিছদাকই হচ্ছে সুওয়ালে উল্লেখিত মৌলভী সাহেব।

কেননা, যেখানে পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং তার ব্যাখ্যাগ্রন্থসহ বহু কিতাবাদীতে হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম নামে ফেরেশতা থাকার বর্ণনা স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে অথচ সেখানে সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, মনগড়াভাবে এবং দলীল-প্রমাণ ছাড়াই সে বলে বেড়াচ্ছে যে, হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম নামে কোন ফেরেশতা নেই। নাউযুবিল্লাহ! এই সমস্ত মিথ্যাবাদীদের প্রসঙ্গেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت عكرمة بن خالد ان رجلا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اى الـملائكة اكرم على الله فقال حضرت جبريل عليه السلام و حضرت ميكائيل عليه السلام و حضرت اسرافيل عليه السلام و حضرت عزرائيل عليه السلام فاما حضرت جبريل عليه السلام فصاحب الحرب وصاحب الـمرسلين وما حضرت ميكائيل عليه السلام فصاحب كل قطرة تسقط وكل ورقة تنبت واما ملك الـموت فهو موكل بقبض روح كل عبد فى بر و بحر و حضرت عزرائيل عليه السلام واما حضرت اسرافيل عليه السلام فامين الله بينه وبينهم. (شرح البخارى للصفيرى، العظمة)

অর্থ: হযরত ইকরামাহ বিন খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কাছে কোন কোন হযরত ফেরেশতা অধিক সম্মানিত? জাওয়াবে তিনি বলেন, উনারা হলেন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকায়ীল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম ও হযরত আযরায়ীল আলাইহিস সালাম। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মুসলমানদেরকে জিহাদে সাহায্যকারী ও হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সাক্ষাৎকারী। হযরত মীকায়ীল আলাইহিস সালাম তিনি আসমান থেকে বর্ষিত বা পতিত প্রতিটি বৃষ্টি ফোটার দায়িত্বে এবং প্রত্যেক বীজ থেকে অঙ্কুর বের করার দায়িত্বে রয়েছেন। হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম তিনি মাটিতে ও পানিতে যত প্রাণী রয়েছে তাদের প্রাণ কবজ করার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। উনাকেই হযরত আযরায়ীল আলাইহিস সালাম বলা হয়। আর হযরত   ইসরাফীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মধ্যে এবং জগতবাসীর মধ্যে একটি ফায়সালার আমানতদার অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে সিঙ্গায় ফুক দেয়ার কারণে এ জগত ধ্বংস হয়ে যাবে। (শরহুল বুখারী লিস সুফাইরী, আল আযমাহ)

কাজেই, এসব মিথ্যাবাদী উলামায়ে ‘সূ’দের থেকে দূরে থাকা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।

 

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মীলাদ হুসাইন

সিলেট

সুওয়াল:  পবিত্র কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাঁটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? পবিত্র কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন। জাওয়াব: হ্যাঁ, যারা পবিত্র কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ পবিত্র কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن ام الـمؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (পবিত্র কুরবানী না করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)

মূলত ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা পবিত্র কুরবানী করবে এবং যারা পবিত্র কুরবানী করবে না, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। আর এ ব্যাপারে দলীল হলো এ পবিত্র হাদীছ শরীফ-

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لـهذه الامة قال له رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بـها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি পবিত্র কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু পবিত্র কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। আপনি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেন না। বরং আপনি কুরবানীর দিনে আপনার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবেন। আপনার গোঁফ খাট করবেন এবং আপনার অন্যান্য অতিরিক্ত চুল কাটবেন, এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পূর্ণ ছওয়াব পাবেন।” (আবু দাউদ শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা সম্মানিত কুরবানী করবে না, তাদের জন্যও পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার চাঁদ দেখার পর থেকে সম্মানিত কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নিজ শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি পবিত্র কুরবানী উনার ছওয়াব পাবে। সুবহানাল্লাহ! {দলীলসমূহ: নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী শরীফ, বজলুল মাযহুদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, শরহুত ত্বীবী শরীফ, তা’লীকুছ ছবীহ শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ ইত্যাদি।}

মুহম্মদ ফাহিমুর রহমান

বরিশাল

সুওয়াল: তাকবীরে তাশরীক কাকে বলে? এবং তা কতবার বলতে হয়?

জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক” একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وقيل ثلاث مرات

অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।”  “গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-

اور واجب ہے تکبیر تشریق صحیح ترقول میں ایکبار بسبب اسکے مامور ہونے کے اور اگر زیادہ کہےایکبار سے تو ہوگا ثواب.

অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।”

উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব। {দলীলসমূহ: শামী, আইনী, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আবুল হায়াত

কক্সবাজার

সুওয়াল:   পবিত্র কুরবানী উনার নিছাব কি?

জাওয়াব:  পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে ছাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিছাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।}

 

মুসাম্মত উম্মু নেহলা

সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহার দিনের সুন্নতসমূহ জানতে চাই।

জাওয়াব:  পবিত্র ঈদের দিনের সুন্নত হলো- ১. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা ২. গোসল করা ৩. মিস্ওয়াক করা ৪. সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা ৫. আতর ব্যবহার করা ৬. মহল্লার মসজিদে গিয়ে জামায়াতে ফজরের নামায পড়া ৭. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ৮. ঈদুল আযহার দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া ৯. ঈদুল আযহার দিন পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করা ১০. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা ১১. সকাল সকাল পবিত্র ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া ১২. ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া, সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া। ১৩. নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া:

الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্্দ। ১৪. সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ঈজাহ ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ যুফার আলী

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।

ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত এবং এরপর পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পূর্বে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যুহরের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বের ১ ঘণ্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কুবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।

পবিত্র ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র ঈদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে গিয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর হলে বিজোড় সংখ্যক (৩, ৫, ৭) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর পবিত্র ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন এবং নছীহত মুবারক  করতেন।”

“হযরত আবুল হোয়ায়রেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নাজরানের গভর্নর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ মুবারক করেছেন, পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায খুব সকাল সকাল পড়বেন এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বেন এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবেন।

কাজেই, পবিত্র ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। পবিত্র ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং পবিত্র ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ। (সমূহ ফিক্বহের কিতাব দ্রষ্টব্য)

মুহম্মদ রবিউল ইসলাম

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো। জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর  পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কণ্ঠনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)

انى وجهت وجهى للذى فطر السموت والارض حنيفا وما انا من الـمشركين ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العلمين لا شريك له وبذلك امرت وانا من الـمسلمين. اللهم منك ولك.

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। এ দোয়া  পড়ে بسم الله الله اكبر ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে যবেহ করতে হবে।

যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-

اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وخليلك سيدنا حضرت ابراهيم عليه السلام

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খালীলিকা হযরত ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম।

যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি  অন্যের  কুরবানী হয়, তবে  من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে পবিত্র কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহ: আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহর শরীফ ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আনিছুর রহমান

সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে কুরবানী উনার পশু কুরবানী করার পূর্বে অথবা পবিত্র কুরবানী করার সময়ে হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদি যবেহ করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব: না জায়িয নেই। কারণ মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে যারা মজুসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবাহ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী হবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: “যে, যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (মিশকাত শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)

আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ তাহরীমী হবে, যেহেতু এটাও মুশাবাহ হয়ে যায়।

আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তানযিহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি পবিত্র কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগি ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন ছুবহি ছাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯, ১০৭তম সংখ্যাগুলি পাঠ করুন।) {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}

মুহম্মদ মাজেদুর রহমান

গাইবান্ধা

সুওয়াল: ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও  আক্বীকা এক সাথে করা জায়িয হবে কিনা? জাওয়াব:   হ্যাঁ, জায়িয হবে।  {দলীল: শামী, আলমগীরী ইত্যাদি।}

মুহম্মদ নূরুর রহমান (সিয়াম), কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল:  বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে দেয়, তবে উক্ত নাম মুবারক উনার গোশতের হুকুম কী? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশত অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুুক্ত হবে কি-না?

জাওয়াব:  হ্যাঁ, উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে বিশেষভাবে পবিত্র কুরবানী করার জন্য যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন এটা উনার জন্যই খাছ।

বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে পবিত্র কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করা ও তার পবিত্র কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা হবে।

কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলেই খেতে পারবে। {দলীলসমূহ : আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, শরহে তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিক ও মুজাহের শরীফ ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ মিজানুর রহমান

ষোল্লা, ফরিগঞ্জ, চাঁদপুর

সুওয়াল: কোন ব্যক্তির উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। সে তার নিজের নামে পবিত্র কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা-মাতার নামে পবিত্র কুরবানী দিলে তার নিজের পবিত্র কুরবানী আদায় হবে কিনা?

জাওয়াব: না, আদায় হবে না। আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালিকে নিছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই পবিত্র কুরবানী করতে হবে। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে পবিত্র কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে পবিত্র কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে। যদিও বাবা মা উনাদের নামে কুরবানী করে। যাদের প্রতি পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব নয়। (দলীলসমূহ: সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)

বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৫৩তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।

মুহম্মদ এনায়েত হুসাইন

সদর, চাঁদপুর

 সুওয়াল:  যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে এক নামে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বণ্টন করে নিতে পারবে কিনা? জাওয়াব:  হ্যাঁ, যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে পবিত্র কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ  বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।

গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশি দিলে পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশি নামে পবিত্র কুরবানী করলে কারো পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।

যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ৫০০ টাকা করে ২০,০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে।

তদ্রƒপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরিদ করে, যদি এক নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।

এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে পবিত্র কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে পবিত্র কুরবানী করবে?

এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ পবিত্র কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে, পবিত্র কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশি এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ  প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে পবিত্র কুরবানী করলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে পবিত্র কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে, যেমন- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ পবিত্র কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশি নামে পবিত্র কুরবানী দিলে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের নাম মুবারক-এও পবিত্র কুরবানী করা যেতে পারে। {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, কাজীখান ইত্যাদি।}

 

মুসাম্মত সালমা খাতুন,

মুসাম্মত পান্না আক্তার, রংপুর

সুওয়াল:  হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?

 

জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অ-কোষ, (৩) মূত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) গুহ্যদ্বার, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ তাহরীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযিহী বলেছেন। {দলীলসমূহ: শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি।

মুহম্মদ মুনীর হুসাইন

বানারীপাড়া, বরিশাল

সুওয়াল: অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না, এটা শরীয়তসম্মত কি না? জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব: যারা বলে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয় তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না তাদের সে কথা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা হলো, আক্বীকার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই সম্মানিত শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ ফারুকুর রহমান

কলাতলী, কক্সবাজার

সুওয়াল: মৃত ব্যক্তির নামে পবিত্র কুরবানী করা জায়িয কিনা?

জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এ করতে হবে।  যেমন- بسم الله الله اكبر

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে পবিত্র কুরবানী করতে হবে।

এখন যদি কেউ কোন ব্যক্তির নামে, হোক সে জীবিত অথবা মৃত-এর নামে পবিত্র কুরবানী করে, যেমন- “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” এর পরিবর্তে আব্দুর রহীম, আব্দুল করীম, বকর, যায়িদ, আমর ইত্যাদি নামে পবিত্র কুরবানী করে, তাহলে পবিত্র কুরবানী অশুদ্ধ হবে। উক্ত পশুর গোশত খাওয়াও হারাম হবে ও সাথে সাথে কুফরী ও কবীরা গুনাহ হবে। মূলত পবিত্র কুরবানী একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এই করতে হবে। তবে পশুতে সাত নাম ও এক নাম দেয়ার কথা যে উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলো- সাতজন অথবা একজন চাই তারা জীবিত হোক অথবা মৃত হোক তাদের তরফ থেকে বা পক্ষ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এ পবিত্র কুরবানী করা।

এ মাসয়ালাটি না বুঝার কারণে অনেকে সরাসরি বলে থাকে, পবিত্র কুরবানীর পশুতে মৃত পূর্ব পুরুষদের নাম দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ! (দলীলসমূহ: আলমগীরী, শামী, নুরুল হিদায়া, বাজ্জাজিয়া, কাযীখান ইত্যাদি)

মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল

ইকুরিয়া, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

সুওয়াল: লোক দেখানোর জন্য অথবা এলাকায় সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে বড় গরু পবিত্র কুরবানী দেয়া জায়িয হবে কি? পবিত্র কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ত রাখা উচিত?

জাওয়াব: কোন আমলই লোক দেখানোর জন্য কিংবা এলাকায় সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য করা জায়িয নেই।

কাজেই, পবিত্র কুরবানী হোক অথবা অন্য যে কোন নেক আমলই হোক তা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যেই করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين

অর্থ: বান্দাদের প্রতি নির্দেশ মুবারক হলো তারা যেনো খালিছভাবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যেই ইবাদত করে। (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان الله لا يقبل من العمل الا ماكان خالصا وابتغى به وجهه.

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার ওইসব আমল কবুল করেন না; যা খালিছভাবে করা হয় না এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে করা হয় না। (নাসায়ী শরীফ শরীফ, দায়লামী শরীফ)

অতএব, বান্দার জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে কুরবানীসহ প্রতিটি আমল মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে করা। মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্য ছাড়া বান্দা বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও নিয়তে যে আমল করে থাকে তা সবই গইরুল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে বান্দা যত বড় আমলই করুক না কেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কখনই কবুল করেন না। উপরন্তু গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে আমল করার কারণে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি লাভ করে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فويل للمصلين. الذين هم عن صلاتهم ساهون. الذين هم يرائون.

অর্থ: ওই সকল নামাযীদের জন্য ধ্বংস-জাহান্নাম যারা উদাসীন-অন্যমনস্ক হয়ে এবং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে। (পবিত্র সূরা মাউন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ  শরীফ ৪, ৫,৬)

প্রতিভাত হলো, কোন আমলই গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে করা যাবে না। সমস্ত আমলই করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে।

উল্লেখ্য, মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করার নাম হচ্ছে রিয়া। এই রিয়া সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الرياء شرك خفى

অর্থ: রিয়া হলো গুপ্ত শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان يسير الرياء شرك

অর্থাৎ, রিয়ার সামান্য অংশও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

কাজেই, রিয়াকে বান্দার অন্তর থেকে দূর করে দিতে হবে। কারণ বান্দার মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত রিয়া বা লৌকিকতা এই বদ খাছলতটি বিরাজ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কোন আমল করা সম্ভব হবে না।

একইভাবে সুনাম অর্জনের জন্য কোন আমল করাও জায়িয নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, কোন ব্যক্তি সম্মান-সুনাম হাছিলের জন্য যদি কোন আমল করে, তাহলে সে তার আমলনামা এতটুকু ক্ষতি করলো যেমন দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে একপাল মেষের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলে যতটুকু ক্ষতি করবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করলো। নাউযুবিল্লাহ!

আর বিশেষ করে পবিত্র কুরবানীর উদ্দেশ্য কি হবে সে বিষয়টা তো মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন-

لن ينال الله لحومها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم.

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশত, রক্ত কিছুই পৌঁছে না। বরং উনার নিকট পৌঁছে থাকে তোমাদের তাক্বওয়ার বিষয়টি।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)

কাজেই, বড় গরু কুরবানী দেয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বড় গরু কুরবানী করা উচিত। তবে উদ্দেশ্য ও নিয়ত বিশুদ্ধ রাখতে হবে।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

ঢাকা

সুওয়াল: কোন ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কার্পণ্য করে ছোট গরু কুরবানী করে সেক্ষেত্রে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা কী?

জাওয়াব: খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যা দান করা হবে বা উৎসর্গ করা হবে তা অবশ্যই পছন্দনীয়, উত্তম, উৎকৃষ্ট হওয়া উচিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون وما تنفقوا من شىء فان الله به عليم.

অর্থ: “তোমরা কখনই নেকী লাভ করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ব্যয় করবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لا يقبل الله عز وجل الا الطيب

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি পবিত্র বা উৎকৃষ্ট ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না।” (বুখারী শরীফ)

যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দু’ছেলেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরবানী করতে বললেন। এক ছেলে হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম তিনি দুম্বা চরাতেন। তিনি উনার দুম্বা থেকে সবচেয়ে উত্তম একটি দুম্বা মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। অপরদিকে আরেক ছেলে কাবীল যে ফসল চাষাবাদ করতো। সে তার ফসল থেকে নিম্নমানের কিছু শস্যাদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য পেশ করলো। অতঃপর দেখা গেল মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আগুন এসে কেবল হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার দুম্বাটি জ্বালিয়ে বা ভস্ম করে ফেললো। অর্থাৎ উত্তম ও ভালো জিনিস দেয়ায় হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার পত্রি কুরবানী কবুল হলো এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দা হিসেবে মনোনীত হলেন। সুবহানাল্লাহ!

পক্ষান্তরে নিম্নমানের জিনিস দেয়ায় কাবীলের কুরবানী কবুল হলো না এবং পরিণতিতে সে পৃথিবীর বুকে প্রথম হত্যাকারী ও জাহান্নামী হিসেবে পরিগণিত হলো। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী সবচেয়ে উত্তম, উন্নতমানের, উন্নত মূল্যের, হৃষ্টপুষ্ট পশু কুরবানী করা উচিত। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, “কুরবানীর পশু ক্বিয়ামতের দিন সাওয়ারী বা বাহন হবে এবং কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবে।” সুবহানাল্লাহ!

তাছাড়া কৃপণতা বা বখিলতী কঠিন কবীরা গুনাহ ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টির কারণ।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

البخيل عدو الله ولوكان عابدا

অর্থ: “বখীল বা কৃপণ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু। যদিও সে আবিদ (অধিক ইবাদতকারী) হোক না কেন।” (লুগাতুল হাদীছ)

তাই শুধু পবিত্র কুরবানীর ক্ষেত্রেই নয় বরং কোন ক্ষেত্রেই কৃপণতা বা বখিলতী করা জায়িয নয়।

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন

পাবনা

 সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সে দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)

মুহম্মদ আবু ছালেহ

বি-বাড়িয়া

 সুওয়াল:  পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে সে টাকা মসজিদ কিংবা ঈদগাহের ইমামকে দেয়া জায়িয হবে কিনা? জাওয়াব:  মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করা বাবদ উক্ত টাকা ইমাম ছাহেবকে দেয়া জায়িয হবেনা। অবশ্য ইমাম ছাহেব যদি ফিতরা ও পবিত্র কুরবানীর ছাহিবে নিছাব না হন, তাহলে দান হিসেবে উক্ত টাকা নিতে পারেন। কিন্তু ছাহিবে নিছাব হলে, তা নিতে পারবেন না। আর চামড়া বিক্রয় না করে পুরো চামড়াটিই যদি ইমাম ছাহেবকে হাদিয়া হিসেবে দেয়া হয়, তবে ইমাম ধনী হলেও তা নিতে পারবেন। তবে চামড়া বিক্রি করলে তার মূল্য গরীব-মিসকীনদেরকে দিয়ে দিতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

মুহম্মদ সোহাইল আহমদ

সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: ইসলামের নামে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলকারী ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানী উনার চামড়া দেয়া জায়িয হবে কি?

জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী ও ইসলামের নামে রাজনীতি তথা গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘রাজারবাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

পবিত্র কুরবানী প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فصل لربك وانحر

অর্থ: “আপনার মহান রব উনার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

لكل امة جعلنا منسكا هم ناسكوه فلا ينازعنك فى الامر

অর্থ: “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি যবেহের বিধান দিয়েছিলাম যা তারা অনুসরণ করে। সুতরাং আপনার সাথে এ ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া তাদের উচিত নয়।” (সূরা হজ্জ : আয়াত শরীফ ৬৭)

পবিত্র কুরবানী একটি ঐতিহ্যবাহী শরয়ী বিধান ও ইসলামী কাজ। যা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য ওয়াজিব। কাজেই পবিত্র কুরবানী দেয়ার সাথে সাথে পবিত্র কুরবানীর চামড়া সঠিক স্থানে দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সবস্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনি আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।

এক খোদা তায়ালা উনাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।

স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মালানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, ইমাম, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।

উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে ব্যবসা করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে ভোট চাওয়া হারাম।

আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদরাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সূতিকাগার। পবিত্র ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে, পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা পবিত্র ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

কাজেই, কুরবানীর চামড়া কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া কস্মিনকালেও জায়িয হবে না।

জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদরাসায় পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। সন্ত্রাসী-জামাতী ও ধর্মব্যবসায়ী তৈরিতে সাহায্য করা হবে। তাতে লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।

মূলত ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসায় কুরবানীর চামড়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা না দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ তথা সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কারণ।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-

تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থ: “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

عن حضرت جرير رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها و وزر من عمل بها من بعده.

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহই যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, পবিত্র কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলত তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।

অনুরূপভাবে এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না যারা তা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ পবিত্র কুরবানীর চামড়া গরিব মিসকীনদের হক্ব। তা গরিব মিসকিনদের মালিক করে দিতে হবে।

আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির মতোই পবিত্র কুরবানীর একটি চামড়াও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র কুরবানীর রক্ত ও গোশত কিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ পৌঁছায় না। পৌঁছায় তোমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত।” কাজেই বিশুদ্ধ নিয়তে পবিত্র কুরবানীর চামড়া ঠিক জায়গায় দিতে হবে। অনেকে পাড়ার মাস্তান, গু-া-পা-া, ছিনতাইকারী ও হিরোইনখোরদের হাতে রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কম দামে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়। এতে কিন্তু নিয়ত বিশুদ্ধ হবে না এবং পবিত্র কুরবানীও শুদ্ধভাবে আদায় হবে না।

তাই বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

কাজেই, পবিত্র যাকাত-ফিতরা বা পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় তাঁদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ ৫ নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

 

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ