সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৬৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ জাকির হুসাইন, ইসলামপুর, আমানবাড়িয়া

সুওয়াল: জনৈক মালানার বক্তব্য হলো, ইসলামের মধ্যে কোনো দিবস পালন করা জায়িয নেই। তার এ বক্তব্য কতটুকু ঠিক, দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: উক্ত মালানা নামধারী ব্যক্তির বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। মোটেও সঠিক নয়। সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য মিথ্যা, মনগড়া বক্তব্য দেয়া জায়িয নেই। সম্পূর্ণরূপে হারাম, লা’নত ও শাস্তির কারণ। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

لَعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ

অর্থ: মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّوْرِ

অর্থ: তোমরা মিথ্যা-মনগড়া কথা বলা থেকে বিরত থাক। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

কাজেই, সুওয়ালে উল্লেখিত মালানা নামধারী ব্যক্তির বক্তব্যের স্বপক্ষে তাকে দলীল পেশ করতে হবে যে, কোথায় বা কোন দলীলের ভিত্তিতে দিবস পালন করা নাজায়িয বলা হয়েছে। কারণ দলীল ব্যতীত কোন বক্তব্য সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে দলীল পেশ করো। (পবিত্র সূরা নমল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৪)

যেহেতু মালানা নামধারী ব্যক্তি তার বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীল পেশ করেনি তাই তার বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বরং গ্রহনযোগ্য ও সঠিক বক্তব্য ও ফতওয়া হচ্ছে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দিবসসমূহ পালন করা শুধু জায়িযই নয় বরং পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ মুবারক দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَذَكِّرْهُمْ بِاَيَّامِ الله ۚ اِنَّ فِى ذلِكَ لَايَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ

অর্থ: আপনি তাদেরকে (উম্মতদেরকে) মহান আল্লাহ পাক উনার দিবসসমূহের স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এই দিবসসমূহ উনাদের মধ্যে নিদর্শন মুবারক রয়েছেন প্রত্যেক ধৈর্য্যশীল ও শোকরগোযার বান্দা-বান্দীদের জন্য। (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫)

স্মরণীয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াতসমূহের নুযূল খাছ বা নির্দিষ্ট কিন্তু হুকুম হচ্ছে আম তথা ব্যাপক অর্থাৎ ক্বিয়ামত পর্যন্ত।

অতএব, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন, সুমহান বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং উনার বিশেষ বিশেষ শান মুবারক প্রকাশের দিন ও তারিখসমূহ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টিরাজির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও মূল। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি মহান আল্লাহ উনার সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয়। তাই উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত সবকিছুই শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম। তাই উনার যমীনে তাশরীফ গ্রহণ অর্থাৎ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিনটিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِىْ الصُّدُوْرِ. وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللّٰـهِ وَبِرَحْمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَجْمَعُوْنَ

অর্থ: “হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন মহান নছীহতকারী, অন্তরের মহান আরোগ্য দানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য মহান রহমত দানকারী। (অতএব, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ফদ্বল ও সম্মানিত রহমতস্বরূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের প্রতি কর্তব্য তথা ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের ইবাদত মুবারক হবে তাদের সমস্ত ইবাদত বা আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭, ৫৮)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার মাধ্যমে যমীনে মানুষদের নিকট তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। সে কারণে জ্বিন ও ইনসান তথা সমস্ত কায়িনাতবাসীকে খুশি প্রকাশ করার জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, এই খুশি মুবারক প্রকাশ করাই হচ্ছেন সমস্ত ইবাদত থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। সুবহানাল্লাহ!

আর এটা সুপ্রসিদ্ধ যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) সুমহান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তাই উক্ত মুবারক তারিখ ও মুবারক দিনে খুশি প্রকাশ করা কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরয।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت عبيد بن السباق رحمة الله عليه مرسلا وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنه متصلا قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى جمعة من الجمع يا معشر الـمسلمين ان هذا يوم جعله الله عيدا فاغسلوا ومن كان عنده طيب فلا يضره ان يمس منه وعليكم بالسواك .

অর্র্থ: “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুরসালসূত্রে এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুআর দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন, যে দিনটিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত)

অর্র্থাৎ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি জুমুআর দিনটিকে মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই জুমুআর দিনটি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মহান বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই জুমুআর দিনে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি যমীনে আগমন করেছেন এবং এই দিনে তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى ليلة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله فيه ادم الى الاوض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسأل العبد فيها شيأ الا اعطاه ما لايسأل حراما وفيه تقوم الساعة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا ارض  ولا رياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة .

অর্র্থ: “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আদ্বহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে। (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন। (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন। (৩) এ দিনে উনাকে বিছালী শান মুবারক দান করেছেন। (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

যার ফলশ্রুতিতে মু’মিন-মুসলমানগণ সারা বছরই জুমুআর দিবসকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করে যাচ্ছেন। কাজেই, উক্ত মালানার বক্তব্য থেকেই বুঝা যায়, সে কত বড় মূর্খ ও জাহিল। তার জিহালতপূর্ণ, অসার, অযৌক্তিক বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সরাসরি বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী বলেই প্রমাণিত। নাউযুবিল্লাহ!

বিশেষ করে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন তথা বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করাটা মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মতের জন্য ফরয করে দিয়েছেন।

মূলতঃ উম্মতের দায়িত্বই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করা। এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

وَاللهُ وَرَسُوْلُه اَحَقُّ اَنْ يُرْضُوْهُ اِنْ كَانُوا مُؤْمِنِيْنَ

অর্র্থ: ‘তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের কর্তব্য হচ্ছে তারা যেনো মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করে। উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সমধিক হক্বদার।’ (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)

অতএব, মুসলমান সারা বছরেই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবে, এটাই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَاَصِيْلًا

অর্র্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তোমরা খিদমত করো, উনাকে সম্মান করো এবং সকাল-সন্ধ্যা অর্র্থাৎ অনন্তকালব্যাপী উনার প্রশংসা, ছানা-ছিফত, মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করো।’ সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত নং ৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিলেন, সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন ইহুদী সম্প্রদায় আশূরার দিন রোযা রাখছে। তাদেরকে রোযা রাখতে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা এ দিনে কেন রোযা রাখছো?’ তারা বলল, “এই দিনে আমাদের যিনি নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি তাওরাত শরীফ নাযিল করেছিলেন এবং উনাকে উনার ক্বওমসহ লোহিত সাগর পার করিয়ে নিয়েছিলেন এবং উনার শত্রু ফিরআউন ও তার সঙ্গীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। সেজন্য হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি শোকরানাস্বরূপ এদিনে রোযা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এ দিনে খুশি প্রকাশ করে রোযা রেখে থাকি।” এটা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “আমি তোমাদের চেয়ে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বেশি হক্বদার।” এটা ইরশাদ মুবারক করে তিনিও রোযা রাখলেন এবং উনার উম্মতদেরকে রোযা রাখার আদেশ মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে এ আশূরার দিনটি শুধু হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ঘটনার জন্যেই যে খুশি প্রকাশের দিন তা নয় বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত প্রত্যেক নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা মুবারক সংঘটিত হয়েছে এই  সম্মানিত আশূরার দিনে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, আশূরার দিনে খুশি প্রকাশ করাটা আমভাবে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক উপলক্ষেই হচ্ছে। আর এই দিনকে পালন করা বা সম্মান করার জন্য শরীয়তে আদেশ মুবারক করা হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

اكرموا عاشوراء من الـمحرم من اكرم عاشوراء من الـمحرم اكرمه الله بالجنة ونجاه من النار.

অর্র্থ: “তোমরা আশূরা মিনাল মুহররমকে সম্মান করো। যে ব্যক্তি আশূরা মিনাল মুহররমকে সম্মান করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত দিয়ে সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন, বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা মুবারক সংঘটিত হওয়ার দিনসমূহ পালন করা বা তাতে খুশি প্রকাশ করাটা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনারই আদেশ। জায়িয তো অবশ্যই।

অতএব, যে নাজায়িয বলবে সে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ বক্তব্য প্রদান করার কারণে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদে পরিনত হবে।

আর মুরতাদের মাসয়ালা হচ্ছে- তার ঈমান নষ্ট হবে। সে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হবে। বিবাহিত হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হবে। হজ্জ করে থাকলে হজ্জ বাতিল হবে। ওয়ারিছ হলে ওয়ারিছসত্ত্ব বাতিল হবে। জীবনের সমস্ত নেকী বরবাদ হবে। মারা গেলে তার গোসল, কাফন, জানাযা দেয়া যাবে না। মুসলমানদের কোন কবরস্থানে দাফন করাও যাবে না। বরং তার লাশ কোন গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।

মুহম্মদ জাকির হুসাইন, সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: মহিলারা তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়তে পারবে কি না?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও  কাট্টা কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

মুহম্মদ আল হান্নান, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: পবিত্র তারাবীহ উনার নামায বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে সঠিক ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, পবিত্র হজ্জ উনার মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।

যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-

ان الـمفتى به جواز الاخذ على القرائة.

অর্থ: “নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

{দলীলসমূহঃ-  (১) বাহরুর রায়িক, (২) আলমগীরী, (৩) তাতারখানিয়া, (৪) ফতওয়ায়ে আযীযী, (৫) দুররুল মুখতার, (৬) আশবাহু ওয়ান্ নাজায়ির, (৭) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (৮) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, (৯) কাশফুল গুম্মাহ, (১০) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (১১) তাফসীরে আযীযী, (১২) তাফসীরে ইক্লীল ইত্যাদি।}

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

হাফিয মুহম্মদ পারভেজ, চট্টগ্রাম

সুওয়াল:  পবিত্র তারাবীহ উনার নামায কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে থাকে, ১২ রাকায়াত। কোন মতটি ছহীহ?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।

যারা পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”

মূলত, এটি হচ্ছে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায উনার বর্ণনা, পবিত্র তারাবীহ নামায উনার বর্ণনা নয়। কারণ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায শুধু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে পবিত্র তারাবীহ উনার নামায নেই। আর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।

{দলীলসমূহ:  (১) আবু দাউদ শরীফ, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা শরীফ, (২) সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী শরীফ, (৩) আল কবীর লিত্ তিবরানী শরীফ, (৪) আল জাওহারুন্নাকী শরীফ, (৫) নাইনুল আওতার, (৬) ইরশাদুস্ সারী, (৭) মিরকাত শরীফ, আওজাজুল মাসালিক, (৮) মা’আরিফে মাদানীয়া, (৯) ফতহুল বারী, (১০) উমদাতুল ক্বারী, (১১) বজলুল মাযহুদ, (১২) ফিক্হুস্ সুনান ওয়াল আছার, (১৩) নছবুর রাইয়াহ, (১৪) আইনী শরহে বুখারী, (১৫) আত্ তা’লীকুল হাছানাহ, (১৬) মুজাহিরে হক্ব, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) ইলাউস্ সুনান, (১৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২০) খুলাছাতুল ফতওয়া, (২১) মজমুয়াতুল ফতওয়া, (২২) বাহ্রুর রায়িক, (২৩) মারাকিউল ফালাহ্, (২৪) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (২৫) গুন্ইয়াতুত্ ত্বালিবীন ইত্যাদি}

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।

মুহম্মদ আবুল হায়াত, কক্সবাজার

সুওয়াল: কেউ কেউ প্রচার করে থাকে যে, “পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয় না।” তাদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত?

জাওয়াব: যারা বলে থাকে যে, “পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয় না” তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না। পক্ষান্তরে পবিত্র রোযা অবস্থায় যে কোনো ইনজেকশন নিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য। কারণ এর স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।

যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل

অর্থ: “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج

অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن .. افطر

অর্থ: “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।”

অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।

{দলীলসমূহ: (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) মিশকাত শরীফ, (৪) ফতহুল বারী শরীফ, (৫) উমদাতুল ক্বারী শরীফ, (৬) ইরশাদুছ্ সারী শরীফ, (৭) শরহে নববী শরীফ, (৮) ফতহুল মুলহিম, (৯) মুফহিম, (১০) মিরকাত শরীফ, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিক্বুছ্ ছবীহ্, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) মাবছুত, (১৭) মাবছুত্ লি সারাখসী, (১৮) ফতহুল ক্বাদীর, (১৯) আলমগীরী, (২০) বাহরুর রায়িক্ব, (২১) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২২) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (২৩) শামী, (২৪) বাদায়িউছ্ ছানায়ে, (২৫) খুলাছুতল ফতওয়া ইত্যাদি।

{বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}

মুহম্মদ আব্দুর রহমান, নূরানীবাদ (নরসিংদী)

সুওয়াল:  অনেকে বলে থাকে ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: ‘যারা বলে, ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের সে বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ, খত্মে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলে প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে তা পড়তে হবে। অন্যথায় পবিত্র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের গুনাহে গুনাহ্গার হবে।

আর খত্মে তারাবীহ পড়তে হলে প্রত্যেককে হাফিযে কুরআন হতে হবে। চাই জামায়াতে পড়ুক অথবা একা পড়ুক। অথচ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে হাফিয হওয়া ফরযে কিফায়া।

আর পবিত্র তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া যেহেতু সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া সেহেতু কিছু লোক একাও তারাবীহ পড়তে পারে। এছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একা পড়ার হুকুমই রয়েছে।

আর মহিলাদের জন্য তো পবিত্র তারাবীহ্সহ সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াতে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহ্রীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।

কাজেই, যারা একা নামায পড়বে, তারা যদি হাফিযে কুরআন না হয়, তবে তারা খত্মে তারাবীহ কি করে পড়বে?

যে ব্যক্তি হাফিয নয়, সে খত্মে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া শুরু করলো হঠাৎ কোনো কারণবশতঃ সে ২ বা ৪ রাকায়াত বা তার চেয়ে কম-বেশি রাকায়াত পড়তে পারলো না। এখন সে যে কয় রাকায়াত পড়তে পারলো না, তা কিভাবে পড়বে?

খত্মে তারাবীহ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে তারাবীহ্ নামাযে অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতে হবে। অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান, গ্রাম-গঞ্জ রয়েছে, যেখানে মুছল্লীদের কারণে খতমে তারাবীহ পড়ানো এবং পড়া সম্ভব হয় না, তাহলে সেখানে কি করে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করা হবে?

সঙ্গতকারণে বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, খত্মে তারাবীহ ও সূরা তারাবীহ কোনটিই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়। বরং উভয়টিই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া।

অএতব, কেউ ইচ্ছা করলে খতম তারাবীহ পড়তে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ পড়তে পারে। {দলীলসমূহ:  (১) বাহরুর রায়িক, (২) হিদায়া, (৩) আলমগীরী, (৪) ফতহুল ক্বাদীর, (৫) ইনায়া  ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০০তম সংখ্যা পাঠ করুন।)

মুহম্মদ বেলায়েত হুসাইন, বকশীবাজার, ঢাকা

সুওয়াল: রোযা রাখা অবস্থায় বমি করলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি ছূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।

কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।

উপরোল্লিখিত কোনো কারণে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হলে সেটার ক্বাযা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফাফারা আদায় করতে হবে না।  (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

আহমদ মনোয়ারা বেগম, পলাশ, নূরানীবাদ

সুওয়াল: পবিত্র রোযা অবস্থায় তরকারী পাক করার সময় লবণ হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব:  সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিত। তবে কারো স্বামী যদি এমন যালিম হয় যে, তরকারীতে লবণ কম বা বেশি হলে মারধর, যুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে যালিমের যুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবে না।

লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোনো ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্ কিতাব)

আবূ আহমদ মা’রূফা, কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল:  অনেকে দেখা যায়, পবিত্র রোযা রেখে বারবার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  পবিত্র রোযা রেখে মুখের থুথু বারবার না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)

ছালিমা আহমদ,দাড়িদহ, শিবগঞ্জ, বগুড়া

সুওয়াল:  রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না, এমন কি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)

মুহম্মদ শাফায়াত হুসাইন, দিনাজপুর

সুওয়াল:  রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)

মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, আমানবাড়িয়া।

সুওয়াল: কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)

মুহম্মদ তৈমুর রহমান,পঞ্চগড়

সুওয়াল: পবিত্র ই’তিকাফ উনার হুকুম কি?

জাওয়াব: পবিত্র ই’তিকাফ উনার আভিধানিক অর্থ হলো গুনাহ হতে বেঁচে থাকা, অবস্থান করা, নিজেকে কোনো স্থানে আবদ্ধ রাখা, কোণায় অবস্থান করা।

আর সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশ দিন দুনিয়াবী যাবতীয় কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন হতে ভিন্ন হয়ে, আলাদাভাবে পুরুষের জন্য জামে মসজিদে ও মহিলাদের জন্য ঘরে ইবাদতকার্যে মশগুল থাকাকে পবিত্র ই’তিকাফ বলে।

পবিত্র ই’তিকাফ তিন প্রকার- (১) ওয়াজিব, (২) সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, (৩) নফল। যিনি পবিত্র ই’তিকাফ

করেন, তাকে বলে মু’তাকিফ। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশ দিন পবিত্র ই’তিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। প্রতি মসজিদে এলাকার তরফ হতে কমপক্ষে একজন মু’তাকিফ হলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে, আর যদি কেউই পবিত্র ই’তিকাফ না করে, তাহলে সকলেরই পবিত্র সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে।

পবিত্র ই’তিকাফ উনার শর্ত তিনটি- (১) পুরুষের জন্য মসজিদে, মহিলাদের জন্য ঘরের মধ্যে। (২) ই’তিকাফের জন্য নিয়ত করা, হদছে আকবর হতে পাক হওয়া। (৩) পবিত্র রোযা রাখা। তবে সাধারণভাবে পবিত্র ই’তিকাফ উনার জন্য বালিগ হওয়া শর্ত নয়। ই’তিকাফ অবস্থায় জাগতিক ফায়দাদায়ক কাজ করা অবস্থাভেদে হারাম ও মাকরূহ্ তাহরীমী। মু’তাকিফ ব্যক্তি মসজিদে এসে কোনো বেহুদা কথা বা কাজ করবে না বা চুপ করে বসে থাকবে না। বরং ঘুম ব্যতীত বাকি সময় ইবাদতকার্যে মশগুল থাকতে হবে। যেমন- নফল নামায, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, পবিত্র যিকির, সম্মানিত ইলম অর্জন ইত্যাদি। পবিত্র ই’তিকাফকারী বাইরে বের হওয়ার দুটি জরুরত হতে পারে- (১) শরয়ী, (২) তবয়ী।

শরয়ী জরুরত হলো- যে মসজিদে পবিত্র ই’তিকাফ করছে, সেখানে পবিত্র জুমুয়া হয় না, অন্য কোনো মসজিদে যেখানে পবিত্র জুমুয়া হয়, সেখানে  পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়তে যাওয়া এবং পবিত্র নামায পড়ে চলে আসা। মু’তাকিফ যদি অহেতুক এক সেকেন্ডের জন্য মসজিদের বাইরে অবস্থান করে, তাহলে পবিত্র ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

তবয়ী জরুরত হলো- পায়খানা-প্রস্রাব ইত্যাদির জন্য বের হওয়া এবং কাজ সেরে চলে আসা।

(দলীলসমূহ: ফতওয়ায়ে আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, শামী ইত্যাদি সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

মুহম্মদ জামাল হুসাইন, কুমিল্লা

সুওয়াল:   পবিত্র যাকাত কখন দেয়া উত্তম?

জাওয়াব: পবিত্র যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বিশেষ রহমত মুবারক উনার কারণে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে সত্তরগুণ বেশি নেকী দান করেন সুবহানাল্লাহ!

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যেই পবিত্র যাকাত প্রদান করতেন। যেমন- এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت السائب بن يزيد رضى الله تعالى عنه ان حضرت عثمان بن عفان عليه السلام كان يقول هذا شهر (رمضان) زكاتكم فمن كان عليه دين فليؤد دينه حتى تـحصل اموالكم فتئدون منه الزكاة.

অর্থ: “হযরত সাইব ইবনে ইয়াযিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বলতেন, এ মাস আপনাদের পবিত্র যাকাত আদায়ের মাস। অতএব, কারো ঋণ থাকলে তিনি যেন উনার ঋণ পরিশোধ করেন, যেন সম্পদ সঠিকভাবে নির্ণীত হয় এবং আপনারা তা থেকে (সঠিকভাবে) পবিত্র যাকাত প্রদান করতে পারেন।” (মুয়াত্তা শরীফ) উক্ত হাদীছ শরীফখানা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন।

 মুহম্মদ মুনীর হুসাইন,আমানবাড়িয়া

সুওয়াল: পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান কি?

জাওয়াব: এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عن حضرت الـحسن البصرى رحمة الله عليه قال اذا حضر الوقت الذى يودى فيه الرجل زكاته ادى عن كل مال و عن كل دين الا ما كان ضمارا لا يرجوه.

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা বা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবাইদ কাসিম ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সঙ্কলন করেছেন)

হাফিয মুহম্মদ বশীর উদ্দীন, রানীবাদ (নরসিংদী)

সুওয়াল: পূর্বের অনাদায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে কি না? হলে কিভাবে প্রদান করতে হবে?

জাওয়াব: অনাদায়ী যাকাত ঋণ স্বরূপ। পবিত্র যাকাত, ফিতরা, ওশর হচ্ছে ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর ফরযের ক্বাযা আদায় করাও ফরয এবং ওয়াজিবের ক্বাযা আদায় করাও ওয়াজিব। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী যাকাত, ফিতরা, ওশর আদায় করতে হবে। তবে কারো পক্ষে যদি সম্ভব না হয় তবে চলতি বছরেরটা আদায় করবে আর পিছনেরটা অল্প অল্প করে আদায় করে দিবে (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)।

বিগত বছরগুলিতে তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিলো তা হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, যদি কারো অতীত যাকাত, ফিতরা, ওশর অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। যার কোন কাফফারা নেই। নির্ধারিত যাকাত পরিশোধের পূর্বেই সম্পদের মালিক মারা গেলে এই ঋণ তার ওয়ারিছদের উপর বর্তাবে এবং তা ওয়ারিছদের আদায় করতে হবে। যদি পূর্ববর্তী বৎসরগুলিতে যাকাত কত হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা না হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান বাজার দরে আদায় করতে হবে।

মুহম্মদ আব্দুর রহমান বিন মুনীর, শিবগঞ্জ, বগুড়া

সুওয়াল: যাদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ নয় এমন গরীব মিসকীনদেরকে যাকাত দেয়া যাবে কি?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

تَعَاوَنُواْ عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الإِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: “তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সহযোগিতা করো; পাপ ও নাফরমানীর মধ্যে সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন কোথায় আমাদের যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। অর্থাৎ ১. আদেশ: যারা নেককার, পরহেযগার তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। আর ২. নিষেধ: পাপে, বদীতে, সীমালঙ্ঘনে, শত্রুতায় কোন সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ মানা ফরয। কোন কারণে তা লঙ্ঘণ করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

১. যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়: যাদের ঈমান নাই,আক্বীদা নষ্ট তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। অনুরূপ যারা নেককার-পরহেযগার নয়। যারা পাপী; মহাপাপী। তাদেরকেও যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না।

হযরত ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- বিরাট পর্বতমালা যার অস্তিত্ব শত শত মাইল দূর হতে দেখা যায়। কিন্তু ঈমান অত্যন্ত সূক্ষ, যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। কিভাবে যে একজন ঈমানদার ব্যক্তি বেঈমান হয়ে যায় তা বোঝা কঠিন।  যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানীরা। তারা সব মানে কিন্তু  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘খ¦াতামুন নাবিয়্যীন’ অর্থাৎ শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করে না। নাঊযুবিল্লাহ! ১ টা শব্দ ‘শেষ’ না মানার কারণে তারা মির্জা গোলাম কাদিয়ানী (যে কিনা বাথরুমে পড়ে মারা গিয়েছে) তাকে তারা নবী বলে দাবী করে। নাঊযুবিল্লাহ! এরা যত আমলই করুক না কেন এদের কোন আমলই কবুল হবে না। এরা কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামী।

এরকম যারা বলে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাত-পা আছে, নাঊযুবিল্লাহ যারা বলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই, নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দোষ করেছেন, নাঊযুবিল্লাহ!  যারা বলে থাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ত্রুটি আছে, নাঊযুবিল্লাহ! যারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মান নিয়ে নানা কথা বলে, নাঊযুবিল্লাহ! এই সমস্ত লোকদের ঈমান নেই। তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।

এ রকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন-আশরাফ আলী থানবী, যে ‘হিফযুল ঈমান’ (তার মোটা মোটা আরও অনেক বই আছে) নামে একটি বইয়ের মধ্যে লিখেছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব হাইওয়ান, বাচপান, মজনুন অর্থাৎ উনার ইলমে গইব একটা পশুর মতো নাঊযুবিল্লাহ! একটা শিশুর মতো নাঊযূবিল্লাহ! এবং একটা পাগলের মতো নাঊযূবিল্লাহ! সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যে এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ দিতে পারে শরীয়তের ফতওয়া মতে তার ঈমান থাকতে পারে না।

ক্বওমী, দেওবন্দী তাদের সিলেবাসে এগুলো শিখানো হয়। নাঊযুবিল্লাহ!  কওমী, দেওবন্দীরা আরো বলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নাকি মিথ্যা কথা বলতে পারেন। নাঊযূবিল্লাহ! তারা বলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

تفترق امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله صلى الله عليه وسلـم قال ما انا عليه واصحابى.

অর্থ : “আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত মুবারক ও পথ মুবারক উনাদের উপর যারা কায়িম থাকবেন (উনারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ)

সুতরাং বোঝা যায়, এরা মূলত বাতিল ৭২ ফেরকার অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর কিছুই দেয়া যাবে না। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিলে তা কবুল হবে না।

এছাড়া আরো যাদেরকে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না তারা হচ্ছে:

১। উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানা অথবা তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। যেমন পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে তথা ধর্মব্যবসায় ও পবিত্র দ্বীন-ইসলাম বিরোধী কাজেই ব্যয়িত হয়। কাজেই এদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের যাকাত আদায় হবে না।

২। ঠিক একইভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের জন্য ফায়দা লাভের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। যেমন ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে-

ক) পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

গ) আরেক দিক থেকে যাকাতদাতাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাত দাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাতদাতাদের কোন যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে পবিত্র যাকাত উনার টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

৩। অনুরূপভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমান উনাদের জন্য শিক্ষা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমান উনাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে মুসলমান উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকা-ে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।

৪। নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। এদেরকে পবিত্র যাকাত দিলে আবার তা নতুন করে আদায় করতে হবে।

৫। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মতে কুরাইশ গোত্রের বনু হাশিম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আক্বীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের বংশধরের জন্য পবিত্র যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মতে বৈধ।

৬। অমুসলিম ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৭। দরিদ্র পিতা-মাতাকে এবং উর্ধ্বতন পুরুষ অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানীকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৮। আপন সন্তানকে এবং অধঃস্তন সন্তান অর্থাৎ নাতি-নাতনীদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৯। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে পবিত্র যাকাত দিতে পারবে না।

১০। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য পবিত্র যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১১। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে পবিত্র নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে পবিত্র যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।

১২। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের হুকুম অনুযায়ী যারা আমল করেনা অর্থাৎ যারা পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ আমল ও আক্বীদায় অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৩। যারা পবিত্র যাকাত গ্রহণ করে উক্ত যাকাতের টাকা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীমূলক কাজে মশগুল হয় তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৪। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধিনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে পবিত্র যাকাত উনার টাকা দেয়া যাবে না।

১৫। যাদের আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বহির্ভুত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যারা হারাম কাজে অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৬। জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন : আমভাবে লাশ বহন ও দাফন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ, বৃক্ষরোপন, পানির ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

মুহম্মদ রমজান আলী, খুলনা।

সুওয়াল: যাকাত, ফিতরা ও উশর সম্পর্কে জানতে চাই এবং তা সহজে কিভাবে হিসাব রেখে প্রদান করা যায়?

জাওয়াব: “যাকাত” অর্থ বরকত বা বৃদ্ধি, পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। অর্থাৎ যারা যাকাত আদায় করবে, প্রদান করবে তাদের মালী, জিসমানী, রূহানী, সবদিকে বরকত ও বৃদ্ধি হবে এবং পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি হাছিল হবে।

‘মালী’ তথা মাল-সম্পদে বরকত হবে, বৃদ্ধি হবে, পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে।

জিসমানী হচ্ছে তার দৈহিকভাবে বৃদ্ধি হবে, সে সুস্থ থাকবে, সব ধরনের পবিত্রতা হাছিল হবে। কোন বর্ধন তার হারাম দ্বারা হবে না। বরং হালাল দ্বারা হবে।

‘রূহানী’ বৃদ্ধি হচ্ছে তার তাযকিয়া অর্জন হবে, রূহানী যে বাধাসমূহ থাকে তা কেটে যাবে। আর রূহানী পবিত্রতা মানেই হচ্ছে সে কামালিয়াত অর্জন করে আল্লাহওয়ালা হয়ে যাবে। সুবাহানাল্লাহ!

যদি কারও নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্থাৎ ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরী সোনা অথবা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরী রূপা অথবা তার সমতুল্য পরিমাণ অর্থ কারও কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী বাদ দিয়ে এক বছর ধরে অতিরিক্ত থাকে তখন তার উপর যাকাত ফরয।

কতটুকু দিবে? ৪০ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ শতকরায় ২.৫%।  কখন দিবে? প্রত্যেক হিজরী বছরে ১ বার। মালে তেজারতের নিছাব পূর্ণ হলেও যাকাত দিতে হবে।

ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদকাতুল ফিতরা’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতী দেওয়া। আমরা ঈদের দিন রোযা বিরতী করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সবাইকে ফিতরা দিতে হবে।

কে দিবে? যিনি পরিবারের কর্তা তিনি ফিতরা দিবেন। কতটুকু দিবে? ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য। কখন দিবে? রোযা শেষ হলে ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত ছিল রমযান মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ রমযানের মধ্যেই ফিতরা আদায় করা। তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে সে কারণে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তা পৌছে না বা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, এ বছর অর্থাৎ ১৪৩৯ হিজরীতে ঢাকা শহরে ৩৫.০০ টাকা কেজি হিসাবে অর্ধ সা’ অর্থাৎ এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৫৮.০০ টাকা (প্রায়)।

যেমন, ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম আটার মূল্য ৩৫.০০ টাকা।

প্রতি গ্রাম আটার মূল্য ৩৫.০০÷১০০০= ০.০৩৫ টাকা।

১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য ১৬৫৭Í০.০৩৫=৫৭.৯৯৫ টাকা অর্থাৎ ৫৮ টাকা (প্রায়)। এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশি দিতে পারবে।

যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য, যা বর্তমানে ১০৪৯ টাকা তোলা হিসেবে ৫৫,০৭৩ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লিখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।

উশর: উশর শব্দটি এসেছে ‘আশরাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ১০ ভাগের ১ ভাগ। উশর হচ্ছে ফল-ফসলাদির যাকাত।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি আম গাছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই বছরের পর বছর আম হয়। এক্ষেত্রে, ১০০ টি আম হলে উশর দিতে হবে ১০টি আম বা তার মূল্য। আর পরিশ্রম করে ফল-ফসলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: ধান, গম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। যদি কোন জমিতে ১০০ মণ ধান হয় তবে উশর দিতে হবে ৫ মণ বা তার মূল্য।

কে দিবে? যিনি ফল-ফসলাদির মালিক হবেন বা পাবেন তিনি উশর দিবেন। কতটুকু দিবে? বিনা পরিশ্রমে হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ। আর পরিশ্রম করে হলে ২০ ভাগের ১ ভাগ। কখন দিবে? যখন ফল-ফসলাদি তোলা হবে তখনই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে। এবং যতবার ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاٰتُوْا حَقَّه‘ يَوْمَ حَصَادِه

অর্থ: তোমরা ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)

ফসল কাটার সময় উশর আদায় করতে হবে। যাকাতের মতই উশর ফরয।

পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ:

যখনই কোন ফল-ফসল উৎপন্ন হবে তখনই নীচের ছকে লিখে রাখতে হবে।

নং জমির বর্ণনা ফল/ফসল উৎপাদনের সময় (মাস/তারিখ ফল/ফসলের নাম উৎপন্ন ফল/ফসলের পরিমাণ উশর বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (১০ ভাগের ১ ভাগ নিছফে-উশর পরিশ্রম করে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (২০ ভাগের ১ ভাগ ফল/ ফসলের বাজার দর (টাকা) উশর-নিছফে উশর বাবদ বিক্রকৃত অর্থ (টাকা)
বাড়ির আঙ্গিনা   আম ৫০০ টি ৫০ টি X ১০ ৫০০
অমুক জমি-১ বিঘা   ধান ১০০ মন X ৫ মন 800 4000

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।, ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : (পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৪১)

‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:

‘সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম’ উনার মধ্যে প্রবেশ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছেন ‘সম্মানিত ঈমান’। সুবহানাল্লাহ! যখন কেউ সম্মানিত ঈমান আনেন, তখন তিনি সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ করেন। আর সম্মানিত ঈমান সুসংঘঠিত হয়ে থাকেন সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক উনার মাধ্যমে। সুবহানাল্লাহ!

এ কারণে যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

یٰۤاَیُّها الَّذِينَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِى السِّلْمِ كَافَّةً. وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِ اِنَّه لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণরূপে দাখিল হও (প্রবেশ করো)। তোমরা কখনও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮)

এখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ঈমানদার উনাদেরকে সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।

অর্থাৎ তিনি সম্মানিত ঈমানদার উনাদেরকে উনাদের সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক ও সম্মানিত আমল মুবারক পরিশুদ্ধ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দুইটি দিক রয়েছে। এক. সম্মানিত আক্বীদাগত দিক এবং দুই. সম্মানিত আমলগত দিক। আর এ উভয়ের মধ্যে সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক উনার গুরুত্ব অনেক অনেক গুণ বেশি। কেননা, কারো যদি সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক শুদ্ধ থাকে কিন্তু তার আমলে ত্রুটি থাকে, তারপরও সে ঈমানদার থাকবে। অর্থাৎ সে মু’মিনে ফাসিক্ব থাকবে। সে যদি এ অবস্থায় ইন্তেকাল করে, তাহলে সে কোনো এক সময় চিরস্থায়ী সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু কারো যদি সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক অশুদ্ধ হয়, তাহলে তার সম্মানিত ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায়, সে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার থেকে খারিজ হয়ে যায়। তার কোনো আমলই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবূল হয় না। তার সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে, সে কাট্টা কাফির হয়ে মারা যাবে এবং চির জাহান্নামী হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! যেমন- ইবলীস, বাল‘আম ইবনে বা‘ঊরা, কারূন, বণী ইসরাঈলের আবুল হারেছা মালানা।

ইবলীস ছয় লক্ষ বছর ইবাদত করার পরও তার আক্বীদায় ত্রুটি থাকার কারণে সে কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী হয়ে গেছে। বাল‘আম ইবনে বা‘ঊরা ৩০০ বছর ইবাদত-বন্দেগী করার পরও তার আক্বীদায় ত্রুটি থাকার কারনে সে কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী হয়ে গেছে। কারূন সে জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আপনা চাচাতো ভাই ছিলো। সম্মানিত তাওরাত শরীফ নাযিল হওয়ার সময় যে ৪০ জন ব্যক্তি তূর পাহাড়ে যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, সে উনাদের মধ্যে অন্যতম ছিলো। এমনকি সে সম্মানিত তাওরাত শরীফ উনার হাফিয ছিলো এবং হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আপন বোনকে বিবাহ করেছিলো, তারপরেও তার আক্বীদায় ত্রুটি থাকার কারনে, সে কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী হয়ে গেছে। অনুরূপভাবে আবুল হারিছাহ মালানা সেও দীর্ঘ বছর ইবাদত-বন্দেগী, দরস-তাদরীস করেছিলো, তথাপি তার আক্বীদা অশুদ্ধ থাকার কারণে সেও কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী হয়ে গেছে। একই কারণে বাতিল ৭২ ফিরক্বার লোকেরা যদিও সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে থাকে এবং নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতসহ আরো অন্যান্য ইবাদাত বন্দেগীও করে থাকে, তারপরও তারা কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী। কেননা তাদের আক্বীদায় ত্রুটি রয়েছে। অন্যদিকে বণী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি দুই শত বছর মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমাণী করার পরও তার সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক বিশুদ্ধ থাকার কারণে সে সর্বোচ্চ জান্নাতী হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক উনার গুরুত্ব কতো বেশি তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

এ জন্য যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِىْ خُسْرٍ. اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ

অর্থ: “নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে রয়েছে, একমাত্র যারা ঈমান এনেছেন এবং আমলে ছালেহ করেছেন উনারা ব্যতীত।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ‘আছর শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২-৩)

তাই, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসান সকলের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে নিজের সম্মানিত ঈমান, সম্মানিত আক্বীদাহ ও সম্মানিত আমল পরিশুদ্ধ করা, হাকীক্বী হুসনে যন হাছিল করা। এ জন্য আবশ্যক সম্মানিত ইলমে তাছাউফ অর্জন করা। কেননা, সম্মানিত ইলমে তাছাউফ অর্জন করা ব্যতীত কেউ কস্মিনকালেও তার সম্মানিত ঈমান, সম্মানিত আক্বীদাহ ও সম্মানিত আমল পরিশুদ্ধ করতে পারবে না এবং হাক্বীক্বী হুসনে যনও হাছিল করতে পারবে না। তাই সকলের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে, একজন হক্কানী-রব্বানী শায়েখ উনার হাতে বায়াত গ্রহণ করে ছবক নিয়ে ক্বলবী যিকির করার সাথে সাথে মহাসম্মানিত শায়েখ উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার মাধ্যমে সম্মানিত ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করা। আর নিজের সম্মানিত ঈমান, সম্মানিত আক্বীদাহ ও সম্মানিত আমল পরিশুদ্ধ করা এবং হাক্বীক্বী হুসনে যন হাছিল করা।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত, ছহিবু ইলমিল আউওওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে উনার সম্মানিত ও পবিত্র হাত মুবারক-এ বায়াত গ্রহণ করে ক্বলবী যিকির করার সাথে সাথে উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার মাধ্যমে হাক্বীক্বী ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করার, আর সম্মানিত ঈমান, সম্মানিত আক্বীদাহ ও সম্মানিত আমল পরিশুদ্ধ করার এবং হাক্বীক্বী হুসনে যন হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ