সুওয়াল-জাওয়াব:

সংখ্যা: ২৯১তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মাহবূব পঞ্চগড়

সুওয়াল: পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে পবিত্র আযান উনার পূর্বে পবিত্র আযান উনার মতই উচ্চ আওয়াজে পবিত্র দুরূদ শরীফ বা ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পাঠ করার বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা কি?

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সঠিক জবাব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।

জাওয়াব: সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পবিত্র আযান উনার পূর্বে পবিত্র দুরূদ শরীফ বা পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা অবশ্যই জায়িয বরং মুস্তাহাব-সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। তবে পবিত্র আযান উনার মতই উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা সুন্নত মুবারক নয় বরং সুন্নত মুবারক উনার খেলাফ। কেননা পবিত্র আযানের পূর্বে আযানের মতই উচ্চ আওয়াজে পবিত্র দুরূদ শরীফ বা পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করার বিষয়টি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের কারো থেকেই প্রমাণিত নেই।

সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে পবিত্র আযানের পূর্বে দু‘আ পড়ার যে বিষয়টি উল্লেখ আছে তা নিঃসন্দেহে  আযানের মতই উচ্চ আওয়াজে ছিলনা। কারণ আযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে নামাযের জন্য আহবান করা। তাই আযান উচ্চ আওয়াজে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে দু‘আ বা পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ উনার উদ্দেশ্য মানুষকে নামাযের জন্য আহবান করা নয় বরং রহমত, বরকত হাছিল করা। তাই আযানের পূর্বে দু‘আ বা পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ উচ্চ আওয়াজে না হওয়াটাই বাঞ্চনীয়।

মূলতঃ পবিত্র আযান উনার পূর্বে দু‘আ বা পবিত্র ছলাত শরীফ- পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা অবশ্যই জায়িয বরং মুস্তাহাব-সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত, তবে কখনই আযানের মত উচ্চ আওয়াজে নয়। অর্থাৎ দু‘আ বা পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ স্বাভাবিকভাবে পাঠ করে তারপর উচ্চ আওয়াজে আযান দিবে।

নিম্নে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু দলীল-আদিল্লাহ তুলে ধরা হলো-

যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৫৬ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ  يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُـوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সদা-সর্বদা মহাসম্মানিত ছলাত শরীফ বা দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তোমরাও মহাসম্মানিত ছলাত শরীফ পেশ করো এবং অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীমের সাথে বা আদবের সাথে মহাসম্মানিত সালাম শরীফ পেশ করো। ” সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, অত্র পবিত্র আয়াতে কারীমা উনার মধ্যে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করাকে কোন নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংযুক্ত করা হয়নি বিধায় নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত যে কোন সময়ে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ বা সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করা প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য বৈধ ও কর্তব্য।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় ছাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৫৬ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন-

اَﺛْـﻨُـﻮْﺍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻰْ ﺻَﻼَﺗِﻜُﻢْ وَفِىْ ﻣَﺴَﺎﺟِﺪِﻛُﻢْ وَﻓِﻰْ ﻛُﻞِّ ﻣَﻮْﻃِﻦٍ

 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তোমরা তোমাদের নামাযে, মসজিদে এমনকি সকল স্থানে মহাপবিত্র ছলাত শরীফ, মহাপবিত্র সালাম শরীফ বা সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে প্রশংসা করো!” সুবহানাল্লাহ! (জালাউল আফহাম-১/৪২২, দারূল উরুবাত-কুয়েত)

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার অন্যতম ফক্বীহ, হযরত ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

اِنَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺗَـﻌَﺎﻟٰﻰ ﻟَـﻢْ ﻳُـﻮْﻗِﺖْ ذَﺍﻟِﻚَ ﻟِﻴُﺸَﻤِّﻞَ ﺳَﺎﺋِﺮَ ﺍلْاَوْقَاتِ

অর্থ: “ মহান আল্লাহ পাক তিনি এখানে কোন নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি। বরং সকল সময় মহাসম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুশ শিফাঃ ২/১০৭, দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ – বৈরুত)

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

ﺗُﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮةُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ وَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻰْ ﺳَﺒْـﻌَﺔِ ﻣَﻮَﺍضِعٍ اَﻟْﺠِﻤَﺎعِ، وَﺣَﺎﺟَﺔِ ﺍلْاِﻧْﺴَﺎنِ، وَﺷَﻬْﺮَةِ ﺍﻟْـﻤَﺒِﻴْﻊِ وَالْعُثْـرَةِ، وَﺍﻟﺘَّـﻌَﺠُّﺐِ، وَﺍﻟﺬَّﺑْﺢِ، وَﺍﻟْﻌَﻄَﺎسِ

অর্থ: “সাত অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। ১. একান্তবাসের সময়, ২. ইস্তিনজার সময় ৩. ব্যবসার মাল চালু করার সময় ৪. হোঁচট খাওয়ার সময় ৫. আশ্চর্যজনক সংবাদ শ্রবনের সময় ৬. যবেহ করার সময় ৭. হাঁচি দেয়ার সময়। (ফতোয়ায়ে শামী, ১/৩৮৩ পৃষ্ঠা)

সুতরাং আযানের পূর্বে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করা মাকরূহ বা কোন অপছন্দনীয় কাজ নয়। কেননা পবিত্র ছলাত-সালাম মুবারক বা দুরূদ শরীফ পাঠ করার ক্ষেত্রে সাতটি মাকরূহ স্থানের মধ্যে আযানের কথা উল্লেখ নেই।  বরং উল্লেখিত সাতটি স্থান ব্যতীত সর্বস্থানে যেখানে পবিত্র ছলাত শরীফ, পবিত্র  সালাম শরীফ অর্থাৎ পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মান মুবারক প্রদর্শন হয় সেখানে মহাসম্মানিত ছলাত শরীফ, মহাসম্মানিত সালাম শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করা মুস্তাহাব-সুন্নত। সুবহানাল্লাহ!

বনি নাজ্জার গোত্রের জনৈক মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বাড়ী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার পাশে ছিলো। তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রত্যেক ফজরের আযানের পূর্বে এই দোয়া মুবারক পড়তেন-

اَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ اِﻧِّﻲْ اَﺣْﻤَﺪُﻙَ وَﺍﺳْﺘَﻌِﻴْـﻨُﻚَ ﻋَﻠٰﻲ ﻗُـﺮَﻳْﺶٍ اَنْ يُّقِيْمُوْا دِيْـنَكَ

অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমি আপনার সম্মানিত প্রশংসা মুবারক করছি এবং কুরাইশদের ব্যাপারে আপনার নিকট সাহায্য মুবারক চাচ্ছি, যেন উনারা আপনার সম্মানিত দ্বীন উনাকে ক্বায়েম করেন।

উক্ত হযরত ছাহাবীয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আরো বলেন, আমি কখনো দেখি নাই যে, তিনি এই দোয়া মুবারক পাঠ করা ছাড়া কখনো আযান শুরু করেছেন। (আবূ দাউদ শরীফ ১ম খণ্ড, বযলুল মাযহুদ (আবূ দাউদ শরীফ উনার শরাহ) ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ২৯৮, বায়হাক্বী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৫)

আল্লামা হযরত ইমাম ক্বাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত শরীফ ও সম্মানিত সালাম শরীফ পাঠ করার মুস্তাহাব স্থান সমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمِنْ مَوَاطِنِ الصَّلَاةِ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ ذِكْرِهٖ وَسِمَاعِ اِسْمِهٖ اَوْ كِتَابَتِهٖ اَوْعِنْدَ الْاَذَانِ

অর্থাৎ সম্মানিত ছলাত শরীফ ও সম্মানিত সালাম শরীফ পাঠ করার মুস্তাহাব ওয়াক্ত সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক কালে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নাম মুবারক শ্রবণকালে, লিখার সময় এবং আযানের পূর্বে।  সুবহানাল্লাহ! (শিফা শরীফ)

“আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ” নামক কিতাবের প্রথম খণ্ডের ৩২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে-

بَابُ صَلٰوةٍ عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَـبْلَ الْاَذَانِ وَالتَّسَابِيْحِ قَـبْـلَهٗ بِاللَّيْلِ

উচ্চারণ: “বাবু ছলাতি আলান নাবিইয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ববলাল আযানি ওয়াত তাসাবীহি ক্ববলাহূ বিল লাইলি”

অর্থ: রাতের বেলা আযানের পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মহাসম্মানিত ছলাত মুবারক এবং মহাসম্মানিত তাসবীহ মুবারক পাঠ করা সংক্রান্ত অধ্যায়।

উক্ত শিরোনাম দ্বারা সম্মানিত ফক্বীহ নিজেই আযানের পূর্বে সম্মানিত ছলাত শরীফ ও সম্মানিত সালাম শরীফ অর্থাৎ দুরূদ শরীফ পাঠ করাকে বৈধ বা জায়েয বলে ফতওয়া প্রদান করেছেন।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ﻋَﻦْ حَضْرَتْ اَﺑِﻰْ ﻫُﺮَﻳْـﺮَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ ﻗَﺎلَ: ﻛَﺎنَ بِلَالٌ اِذَﺍ اَرَﺍدَ اَنْ ﻳُّـﻘِﻴْﻢَ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮةَ ﻗَﺎلَ: اَﻟﺴَّﻼَمُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ اَيُّـهَا ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ وَرَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ وَبَـرَكَاتُهٗ اَﻟﺼَّﻠٰﻮةُ رَﺣِﻤَﻚَ ﺍﻟﻠﻪُ

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত বিলাল রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (নামাযের ইক্বামাত দিতে চাইতেন, তখন) এভাবে সালাম মুবারক দিয়ে বলতেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি মহাসম্মানিত সালাম মুবারক, আপনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক ও বরকত মুবারক, আপনার প্রতি মহাসম্মানিত ছলাত মুবারক। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে রহমত মুবারক করুন।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২/৭৫-হাদীছ শরীফ নং ২৩৮৯)

পবিত্র আযান ও পবিত্র ইক্বামতের পূর্বে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা মুস্থাহাব-সুন্নত। বিখ্যাত ফিক্বহের কিতাব ইয়ানাতুত ত্বালিবীনে (যা মহাসম্মানিত মক্কা শরীফ উনার ফাতাওয়ার কিতাব) উল্লেখ আছে-

قَالَ الشَّيْخُ الْكَبِيْـرُ الْبِكْرِىُّ اِنَّـهَا تَسُنُّ قَـبْلَهُمَا اَىِ الصَّلٰوةُ عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَـبْلَ الْاَذَانِ وَالْاِقَامَةِ

অর্থাৎ : বিখ্যাত ফক্বীহ শায়েখ কবীর বিকরী মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, পবিত্র আযান ও পবিত্র ইক্বামতের পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা মসনুন বা সুন্নত মুবারক। (ইয়ানাতুত ত্বালিবীন ১ম খণ্ড ২৩১ পৃষ্ঠা)

অর্থাৎ পবিত্র আযান এবং পবিত্র ইক্বামাত উভয়ের পূর্বেই সম্মানিত ছলাত শরীফ ও সম্মানিত সালাম শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত দুরূদ শরীফ পাঠ করা মুস্তাহাব।

ইমাম আবূ সাঈদ বিকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اَىْ اَﻟﺼَّﻠٰﻮةُ وَﺍﻟﺴَّﻼَمُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ وَسَلَّمَ قَـبْلَ ﺍلْاَذَانِ وَﺍلْاِﻗَﺎﻣَﺔِ

অর্থাৎ- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র আযান ও পবিত্র ইক্বামত উভয়ের পূর্বে মহাসম্মানিত ছলাত শরীফ ও মহাসম্মানিত সালাম শরীফ পেশ করা জায়িয। (ফতহুল মুয়ীনঃ ১/২২৩ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র আযান ও পবিত্র ইক্বামত উনাদের পূর্বে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা শুধু জায়িযই নয়; বরং মুস্তাহাব সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।  তবে অবশ্যই পবিত্র আযানের মত উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা সুন্নত মুবারক উনার খেলাফ। কারণ পবিত্র আযানের মত উচ্চ আওয়াজে বা স্বরে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

অতএব, পবিত্র আযানের মত উচ্চ আওয়াজে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা সুন্নত নয়। তাই, পবিত্র ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ সাধারণভাবে (মাইক ছাড়া) পাঠ করে তারপর মাইকে আযান দিতে হবে।  এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার সঠিক ফায়ছালা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পূর্ববর্তী যামানায় যেহেতু মাইক ছিলনা, তাই উনারা স্বাভাবিক আওয়াজে বা স্বাভাবিক স্বরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছলাত শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সালাম মুবারক অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করতেন। অতঃপর উচ্চ আওয়াজে সম্মানিত আযান দিতেন। এবং এটাই সুন্নত মুবারক। আর বর্তমানে যেহেতু উচ্চ আওয়াজে পবিত্র আযান দেয়ার বিষয়টি মাইকের সাহায্যে দেয়া হয়, তাই সুন্নত মুবারক হচ্ছে, স্বাভাবিক আওয়াজে বা স্বরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দুরূদ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছলাত মুবারক ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সালাম মুবারক পাঠ করতে হবে তারপর মাইকে আযান দিতে হবে। ইহাই হচ্ছে শরঈ তরতীব। দলীলসমূহ: (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাযহূদ আবূ দাউদ শরীফ উনার শরাহ, বায়হাক্বী শরীফ, জালাউল আফহাম, দারুল উরুবাত-কুয়েত, শরহুশ শিফা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ – বৈরুত, ফতোয়ায়ে শামী, শিফা শরীফ, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ, ইয়ানাতুত ত্বালেবীন, ফতহুল মুয়ীন ইত্যাদী)।

 

মুহম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন, থানা ও জেলা: নাটোর।

 

সুওয়াল: পবিত্র সূরা আত তাহরীম শরীফ উনার ৬ নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

يَاۤ أَيُّـهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُـوْا قُـوْا أَنْـفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে পরিবার বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে وَاَهْلِيْكُمْ “তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও বা রক্ষা করো।” এর ব্যাখ্যা অনেক তবে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা হলো পিতা-মাতা, আহলিয়া-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও গোলাম-বাঁদী অর্থাৎ সকলপ্রকার অধিনস্তদের বুঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য, যিনি মূল বা প্রধান ব্যক্তি উনার যারা অধিনস্ত তাদের সকলকেই বুঝানো হয়েছে।

পরিবার হতে পারে, সমাজ হতে পারে, কোন প্রতিষ্ঠান হতে পারে, বাড়ী হতে পারে, মহল্লা বা গ্রাম হতে পারে, শহর বা উপশহর হতে পারে, ইউনিয়ন, থানা, জেলা, বিভাগ, দেশ ইত্যাদির যিনি প্রধান বা পরিচালক হবেন বা থাকবেন প্রত্যেকেই উনার অধীনস্তদের ক্ষেত্রে পরিবার সাদৃশ্য অথার্ৎ পরিবারভুক্ত। আর প্রত্যেকেই তার অধিনস্তদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।

মূল কথা হচ্ছে, প্রত্যেক দায়িত্বশীল বা অনুসরণীয় ব্যক্তি তিনি উনার অধীনস্থদের জন্য অভিভাবকতুল্য।  কাজেই, প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।

যেমন এ সম্পর্কে ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ يَـقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ ‏”‏ كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُـوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ، اَلْإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْئُـوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِيْ أَهْلِهٖ وَهُوَ مَسْئُـوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِيْ بَـيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْئُـوْلَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالْخَادِمُ رَاعٍ فِيْ مَالِ سَيِّدِهٖ وَمَسْئُـوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهٖ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম (নামায পড়ানেওয়ালা ব্যক্তি, দেশের মূল বা প্রধান, সমাজের বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপক) একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, উনাকে উনার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ (আহাল বা স্বামী) তিনি উনার পরিবারবর্গের অভিভাবক বা দায়িত্বশীল, উনাকে উনার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মহিলা (আহলিয়া বা স্ত্রী) তার আহাল বা স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীলা উনাকে উনার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। খাদিম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

হযরত ইবনু উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা সকলেই রক্ষক এবং সকলকেই তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, আমান বাড়িয়া

সুওয়াল: পুরুষ সালিকের জন্য মহিলাদের সাথে মোবাইল ফোনে যাকাত আদায়ের লক্ষ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করা ঠিক হবে কি?

জাওয়াব: পুরুষদের জন্য যাকাত আদায়ের লক্ষ্যে মহিলাদের সাথে মোবাইল ফোনে সম্পর্ক উন্নয়ন করা ঠিক হবে না। করলে পর্দার খেলাফ হবে এবং ফেৎনার কারণ হবে। তাই পুরুষরা পুরুষদের সাথে যোগাযোগ করবে, মহিলারা মহিলাদের সাথে যোগাযোগ করবে। সম্পর্ক উন্নয়ন যাকাতের জন্যেই করা হোক অথবা অন্য যে কোন বিষয়েই করা হোক পুরুষরা পুরুষদের সাথে করবে,  মহিলারা মহিলাদের সাথে করবে। বিপরীত করাটা কখনই ঠিক হবে না। অর্থাৎ পুরুষরা মহিলাদের সাথে যোগাযোগ করবে না আর মহিলারা পুরুষদের সাথে যোগাযোগ করবে না। এতে ফিতনা পয়দা হওয়ার যেমন সম্ভাবনা রয়েছে তেমন ঈমান ও আমল উভয়ের ত্রুটি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

মুহম্মদ আইয়ুব আলী, রংপুর

সুওয়াল:  জনৈক ব্যক্তি সে দোকানে থাকে। কিছু হিজড়া এসে তার কাছে মাসে টাকা নিয়ে যায়।  না দিতে চাইলে খারাপ কিছু করে । তাই সে দিয়ে দেয়। তাদেরকে টাকা দেয়াটা কতটুকু ঠিক হবে?

জাওয়াব: এদেরকে টাকা দেয়া জায়িয নেই। হিজড়ারা জোর করে টাকা নেয়, এদেরকে টাকা দেয়া ঠিক হবে না । এগুলি আসলে তাদের ব্যবসা। হিজড়া যেই হোক এদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এরা টাকা নিয়ে অবৈধ কাজ করে, হারাম কাজ করে। পেপার- পত্রিকায় এসেছিল, এরা কতগুলো হিজড়া সাজে আবার কতগুলোকে জোর করে নিয়ে হিজড়া বানায়। এদের একটা বিরাট চক্র আছে। এদেরকে টাকা-পয়সা দেয়া ঠিক হবে না। এরা যাতে ফিতনা করতে না পারে সেজন্য পুলিশকে জানাতে হবে এবং পুলিশের সাহায্য নিতে হবে।

 

মুহম্মদ ফুরকান আহমদ, বরিশাল

 

সুওয়াল: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিতে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা দোকান পাটে সকাল-সন্ধ্যা ঝাড়ু দেয়, পানি ছিটায়, আগর বাতি জ্বালায়। এ সময় তারা সাধারণতঃ নগদ বিক্রি না করা ব্যতীত কোন প্রকার বাকি দেয় না। শুরুতে বাকি দেয়াটা ক্ষতির কারণ মনে করে থাকে। এ ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম কি?

জাওয়াব: দোকানপাট অবশ্যই পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে, ঝাড়ু দিতে হবে, ধুলা বালি যাতে না লাগে সেজন্য পানি ছিটাতে পারে, আগর বাতি জ্বালাতে পারে, ধূপ দিতে পারলে খুব ভালো। কিন্তু নগদ কোনকিছু বিক্রি না করা পর্যন্ত বাকি দেয়া যাবে না  এটা সম্মনিত শরীয়ত উনার কোন হুকুম না। এটা তাদের বানানো প্রথা বা নিয়ম। ইচ্ছে করলে বাকিতেও বিক্রি করতে পারে আবার বাকি ছাড়াও বিক্রি করতে পারে।  এতে সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে কোন নিষেধ নেই।

 

মুহম্মদ বাহাউদ্দীন,  কুমিল্লা

সুওয়াল: একজন লোক সুদ খায়না। এখন অনেক বড় একটা অংক সে সুদ হিসেবে ব্যাংক থেকে পেয়েছে। সে যদি উক্ত সুদ দিয়ে তার দেনা বা ঋণ শোধ করে তা কি জায়িয হবে? যদি জায়িয না হয়, তাহলে উক্ত সুদ কি খাতে ব্যয় করা যাবে?

জাওয়াব: উক্ত সুদের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা যাবে না। হালাল টাকা দিয়েই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর ব্যাংক থেকে পাওয়া সুদের টাকা এমন লোককে দান করতে হবে যার জন্য হারাম গ্রহণ করাটা মুবাহ। উল্লেখ্য, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং-এ একটা খাত রয়েছে যেখানে এ ধরনের টাকা গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং ব্যয় করা হয়ে থাকে।

মুহম্মদ শাফায়াত হুসাইন, দিনাজপুর

সুওয়াল: পবিত্র হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, কাছীদা শরীফ পাঠ কালে দফ বাজানো যাবে কি?

জাওয়াব: দফ বাজানো হারাম।  হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, কাছীদা শরীফ পাঠ করার সময় দফ বাজানোও হারাম। কোন বাদ্য যন্ত্র বাজানো যাবে না। খালি মুখে পাঠ করতে হবে। যেটাকে সামা শরীফ বলা হয়। যেটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় পাঠ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে চিশতীয়া  খান্দান উনারা সেটা করেছেন। হযরত সুলত্বানুল হিন্দ খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের যে সিলসিলা তাতে উনারা খালি মুখে পাঠ করেছেন, সেখানে কোন বাদ্যযন্ত্র ছিল না।  কাজেই দফ বা বাদ্য-যন্ত্র বা অনেকে কাঠি দিয়ে আওয়াজ করে এগুলি প্রত্যেকটাই নাজায়িয, হারাম। শুধু মুখে পাঠ করতে হবে। আলাদা কোন আওয়াজ করে সেটা পাঠ করা নাজায়িয হবে।

আহমদ আফরোজা, দিনাজপুর

সুওয়াল: নও মুসলিম সন্তান তার অমুসলিম বাবা-মার হিদায়েতের জন্য দোয়া করতে পারবে কি-না? কোন নও মুসলিম সন্তান তার মৃত বাবা-মার রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে পারবে কি-না?

জাওয়াব: নও মুসলিম সন্তান তার বাবা-মা জিন্দা থাকলে তাদের হিদায়েতের জন্য দোয়া করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোন  অসুবিধা নেই। অবশ্যই তাদের হিদায়েতের জন্য দোয়া করতে পারবে এবং দোয়া করা উচিত। এটা তার জন্য ফরয। তবে যদি কুফরী অবস্থায় তারা মারা গিয়ে থাকে তাহলে তাদের জন্য দোয়া করা জায়িয নেই। কেননা কাফিরদের জন্য দোয়া করা জায়িয নেই। যারা ঈমানের সাথে ইন্তেকাল করবে তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। আর বিধর্মী বাবা মা জিন্দা থাকলে, তারা ঈমান না এনে থাকলে তখন তাদের ঈমান আনার জন্য দোয়া করতে হবে। ঈমানদার সন্তানের জন্য এটা ফরয।

 

মুহম্মদ খাইরুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি

 

সুওয়াল: চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন মুশরিক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেয়া যাবে কি-না?

জাওয়াব: আমভাবে কোন মুশরিকের কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়া যাবে না। মুসলমান চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি কোন ক্ষেত্রে মুসলমান না পাওয়া যায়, অপারগতায় তখন মুশরিকের কাছে যাওয়া যেতে পারে। অন্যথায় মুসলমান দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। এখন মুসলমান চিকিৎসক যথেষ্ট আছে। মুশরিকের কাছে যাওয়ার কোনই প্রয়োজন নেই।

 

মুহম্মদ আব্দুর রহমান, নূরানীবাদ

 সুওয়াল: সুলত্বানুল আযকার কি? কিভাবে জারি করতে হবে বা ধাপ কি কি? ছবকের বিষয়গুলো কি? সর্বনিম্ন মাক্বাম ও সর্বোচ্চ মাক্বাম কি? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সুলত্বানুল আযকার হচ্ছে যিকিরের বাদশাহ। এটা হচ্ছে ক্বলব, রূহ, সির, খফি, আখফা, নফস্, আব, আতেশ, খাক, বাদ এই দশটা লতিফায় যিকির জারি করতে হবে। জারি হয়ে গেলে তখন মাথার তালু থেকে পায়ের তলা সমস্ত শরীরের মধ্যে,  প্রত্যেক পশমের গোড়ায় গোড়ায়, রগ-রেশায়, খুনের কাতরায়, অস্থি-মজ্জার ভিতরে একদম মাথার তালু  থেকে পায়ের তলা পূর্ণাঙ্গ শরীরে যিকির জারি করা হচ্ছে সুলত্বানুল আযকার। এটা প্রথম স্তর।

সুলত্বানুল আযকার উনার তিনটি স্তর। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে, সালিক যখন যিকির করবে তার সম্পূর্ণ শরীরটা যিকির করবে এবং সে আরো দেখবে তার আশে পাশে সবকিছু তার সাথে যিকির করছে। সুবহানাল্লাহ! আর তৃতীয় স্তর হচ্ছে, সালিক দেখতে পাবে তাহ্তাসসারা থেকে ছিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত অর্থাৎ সে দেখতে পাবে, সমস্ত মাখলুকাত তার সাথে যিকির করছে। এটা হচ্ছে সুলত্বানুল আযকার উনার তৃতীয় স্তর।

সুলত্বানুল আযকার জারি করতে হলে কামিল শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে, সবক্ব নিতে হবে, যিকির-ফিকির করতে হবে, ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে। ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে ফয়েয হাছিল করতে হবে। ফয়েয হাছিল করার মাধ্যম দিয়ে এই যিকির জারি করতে হবে। বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে, সবক্ব নিতে হবে, বাদ ইশা ও বাদ ফজর দুরূদ শরীফ পড়তে হবে, পাস আনফাস যিকির জারি করতে হবে, এরপর পর্যায়ক্রমে লতিফার সবক্ব করতে হবে। তারপর দশ লতিফার সবক্ব বা যিকির করতে হবে তখন সুলত্বানুল আযকার জারি হবে।

সবক্বের বিষয় আমাদের অযীফা শরীফ উনার কিতাবের মধ্যে রয়ে গেছে। এটা অনেক লম্বা। আর মাক্বামের বিষয় বলতে গেলে, মু’মিন হচ্ছে সর্বনিম্ন মাক্বাম। আর সর্বোচ্চ মাক্বাম হচ্ছে বান্দার তরফ থেকে আবদিয়াতের মাক্বাম। আবদিয়াতের মাক্বাম হচ্ছে সর্বোচ্চ মাক্বাম। আর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সর্বোচ্চ মাক্বাম হচ্ছে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাক্বাম।   সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ খলীলুর রহমান মুরাদনগর, কুমিল্লা

 

সুওয়াল: নেশা করা, জুয়া খেলা এটা কি কোনো শয়তান জিনের কাজ। এর জন্য কি বলা যায় যে, তাকে জিনে ধরেছে?

জাওয়াব: নেশা করা, জুয়া খেলা এবং যত হারাম কাজ আছে এগুলো শয়তানী কর্মকাণ্ড। এসব হারাম কাজ যারা করে তারা শয়তানের অনুসারী। অথার্ৎ শয়তান মানুষকে হারাম কাজে ওয়াছ ওয়াছা দিয়ে থাকে এবং হারাম কাজ করিয়ে থাকে। মানুষের মধ্যে যারা হারাম কাজ করে থাকে তারা হচ্ছে মানুষরূপী শয়তান। আর জিনদের মধ্যে যারা হারাম কাজ করে তারা হচ্ছে জিন শয়তান। কেউ হারাম কাজ করলে তাকে জিনে ধরেছে বলাটা শুদ্ধ নয়। বরং এটা বলা যেতে পারে যে, তার উপর ইবলিস শয়তান সাওয়ার হয়েছে।

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সদর, নাটোর

সুওয়াল: কেউ যদি কাচা পেঁয়াজ খায় তাহলে নাকি ৪০ দিন তার সাথে ফেরেশেতা থাকে না।

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হচ্ছে, কাচা পেঁয়াজ খাওয়ার কারণে যতক্ষণ মুখ দূর্গন্ধ থাকে ততক্ষণ সম্মানিত রহমত মুবারক উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তার সাথে থাকেন না। কেননা দূর্গন্ধের কারণে উনাদের কষ্ট হয়ে থাকে।

 

মুহম্মদ আকিব হুসাইন, মাধবদী, নূরানীবাদ।

 

সুওয়াল: পবিত্র আশুরা শরীফ উপলক্ষে আমাদের এলাকার জামে মসজিদে মীলাদ শরীফ মাহফিল করে তবারুকের ব্যবস্থা করা যাবে কি-না? একজন পীর ভাই মতামত পেশ করলেন, ঐ দিন দরবার শরীফে মাহফিল হবে। তাই একই সাথে আশুরা শরীফ উপলক্ষে আমাদের এখানে মাহফিল করা ঠিক না। সঠিক ফায়সালা দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: উক্ত কথা শুদ্ধ হয়নি। পবিত্র দরবার শরীফে মাহফিল হবে সেজন্য অন্য কোথাও আশুরা শরীফ উপলক্ষে মীলাদ শরীফ মাহফিল করা যাবে না এবং তবারুকের ব্যবস্থা করা যাবে না, এমন ঘোষণা দরবার শরীফ উনার পক্ষ থেকে কেউই দেননি। বরং দরবার শরীফ উনার ঘোষণা হচ্ছেন, সবখানেই পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাহফিল জারি করা এবং সামর্থ অনুযায়ী তবারুকেরও ব্যবস্থা করা।

 

মুহম্মদ তারিক মাহমুদ, মতিহার, রাজশাহী।

 

সুওয়াল: নিজের অজান্তে নাপাক কাপড় পরে আমল-ইবাদত করলে কি শুদ্ধ হবে?

জাওয়াব: হ্যাঁ, কেউ যদি নিজের অজান্তে নাপাক কাপড় পরে ইবাদত করে তবে তা ছুরতান হয়ে যাবে। কিন্তু ইবাদত যদি নামায হয় এবং পরে যদি জানতে পারে যে, নাপাক কাপড় পরে তা আদায় করা হয়েছে তাহলে যত ওয়াক্ত নামায পড়েছে তা পাক কাপড় পরে ক্বাযা আদায় করে নিতে হবে।

মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ছাতক, সুনামগঞ্জ

সুওয়াল: উত্তেজনা বশতঃ ছোট ইস্তেঞ্জার রাস্তা দিয়ে যে পানি বের হয় সেটা কতটুকু নাপাক। আর সেটা পাক করার নিয়ম কি?

জাওয়াব: উত্তেজনা বশতঃ ছোট ইস্তেঞ্জার রাস্তা দিয়ে দুই ধরণের পানি বের হয়ে থাকে। এক. মজি দুই. মনি। মজি বের হলে গোছল ফরয হয় না। তবে অজু করতে হয়। কিন্তু মনি বের হলে গোছল ফরয হয়। তবে উভয় নাপাকি পাক করার নিয়ম একই।

মুহম্মদ রিয়াজুল ইসলাম, সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: মাকরূহ ওয়াক্ত বলতে কি বুঝায়? কোন কোন সময় নামায, ছলাতুল জানাযা নিষেধ? দলীলসহ বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মাকরূহ ওয়াক্ত বলতে নিষিদ্ধ ওয়াক্তকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ যে ওয়াক্ত বা সময়ে নামায পড়া ও ছলাতুল জানাযা পড়া নিষেধ। যেমন- সূর্য উদয়কালে, দ্বি প্রহরের সময় এবং সূর্যাস্তের সময়। উল্লেখিত তিন সময় সর্বপ্রকার নামায আদায় করা এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াতে সিজদাহ তিলাওয়াত করা মাকরূহ তাহরীমী।

এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَـتَحَرَّى أَحَدُكُمْ فَـيُصَلِّيَ عِنْدَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَلَا عِنْدَ غُرُوْبِهَا وَفِيْ رِوَايَةٍ قَالَ: إِذَا طَلَعَ حَاجِبُ الشَّمْسِ فَدَعُوا الصَّلَاةَ حَتّٰى تَـبْـرُزَ. فَإِذَا غَابَ حَاجِبُ الشَّمْسِ فَدَعُوا الصَّلَاةَ حَتّٰى تَغِيْبَ وَلَا تَحَيَّـنُـوْا بِصَلَاتِكُمْ طُلُوْعَ الشَّمْسِ وَلَا غُرُوْبَـهَا فَإِنَّـهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَـرْنَيِ الشَّيْطَانِ

অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ যেন সূর্য উদয়ের ও অস্ত যাওয়ার সময় ছলাত (নামায) আদায়ের জন্য চেষ্টা না করে।

একটি বর্ণনার ভাষ্য এরকম যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যখন সূর্য গোলক উদিত হয় তখন নামায ত্যাগ করবে, যে পর্যন্ত সূর্য বেশ স্পষ্ট হয়ে না উঠবে। ঠিক এভাবে আবার যখন সূর্য গোলক ডুবতে থাকে তখন নামায আদায় করা থেকে বিরত থাকবে, যে পর্যন্ত সূর্য সম্পূর্ণভাবে ডুবে না যায়। আর সূর্য উঠার ও অস্ত যাওয়ার সময় নামায পড়ার ইচ্ছা করবে না। কারণ সূর্য শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যখান দিয়ে উদয় হয়। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

অথার্ৎ “সূর্য শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যখান দিয়ে উদয় হয়” এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, কাফির-মুশরিক বা সূর্যপূজকরা ঐ সময় সূর্যের পূজা করে এবং শয়তান এসে সূর্যকে পিছনে রেখে এবং উপাসককে সম্মুখে করে উহা গ্রহণ করতে দাঁড়ায়।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ: ثَلَاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـنْـهَانَا أَنْ نُّصَلِّيَ فِيْهِنَّ أَوْ نَـقْبُـرَ فِيْهِنَّ مَوْتَانَا: حِيْنَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتّٰى تَـرْتَفِعَ وَحِيْنَ يَـقُوْمُ قَائِمُ الظَّهِيْـرَةِ حَتّٰى تَمِيْلَ الشَّمْسُ وَحِيْنَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوْبِ حَتّٰى تَـغْرُبَ

অর্থ: হযরত উকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায আদায় করতে ও মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। প্রথম হলো সূর্য উদয়ের সময়, যে পর্যন্ত না তা সম্পূর্ণ উদিত হয়। দ্বিতীয় হলো দুপুরে একবারে সূর্য ঠিক স্থির হওয়ার সময় থেকে সূর্য ঢলার আগ পর্যন্ত। আর তৃতীয় হলো সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় যে পর্যন্ত না তা ডুবে যায়। (মুসলিম শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা দ্বারা মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ানোকে বুঝাানো হয়েছে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَمْرِو بْنِ عَبَسَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِيْـنَةَ فَـقَدِمْتُ الْمَدِيْـنَةَ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ فَـقُلْتُ: أَخْبِرْنِيْ عَنِ الصَّلَاةِ فَـقَالَ صَلِّ صَلَاةَ الصُّبْحِ ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَتّٰى تَـرْتَفِعَ فَإِنَّـهَا تَطْلُعُ حِيْنَ تَطْلُعُ بَـيْنَ قَـرْنَيْ شَيْطَانٍ وَحِيْـنَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ ثُمَّ صَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُوْدَةٌ مَحْضُوْرَةٌ حَتّٰى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بِالرُّمْحِ ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ فَإِنَّ حِيْـنَئِذٍ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ فَإِذَا أَقْـبَلَ الْفَيْءُ فَصَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُوْدَةٌ مَحْضُوْرَةٌ حَتّٰى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتّٰى تَـغْرُبَ الشَّمْسُ فَإِنَّـهَا تَـغْرُبُ بَـيْنَ قَـرْنَيْ شَيْطَانٍ وَحِيْـنَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ

অর্থ: হযরত আমর ইবনে আবাসাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফে মুবারক তাশরীফ আনলে আমিও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফে চলে আসলাম। এবং উনার নিকট উপস্থিত হলাম অতঃপর আমি বললাম, আমাকে নামায সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ফজরের নামায আদায় করুন। এরপর নামায হতে বিরত থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উঠে উপরে না আসে। কেননা, সূর্য উদয় হয় শয়তানের দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে। আর এ সময় কাফিররা (সূর্য পূজারীরা) একে সিজদা করে। অতঃপর (কিছু নফল) নামায পড়–ন। কেননা এ সময়ে (মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বান্দার) নামাযের উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া বর্শার উপর উঠে না আসে ও যমীনের উপর না পড়ে (অর্থাৎ ঠিক দুপুরের সময়)। এ সময়ও নামায হতে বিরত থাকুন। এজন্য যে, এ সময় জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। তারপর ছায়া যখন সামান্য ঢলে যাবে তখন নামায আদায় করুন। নামাযের সময়টা ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপস্থিতি ও সাক্ষ্য দেয়ার সময় যে পর্যন্ত আপনি আছরের নামায আদায় না করবেন। তারপর আবার নামায হতে বিরত থাকবেন সূর্য অস্তমিত যাওয়া পর্যন্ত। কারণ সূর্য শয়তানের দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায়। এ মুহূর্তে সূর্যপূজক কাফিররা সূর্যকে সিজদা করে। (মুসলিম শরীফ)

উপরে উল্লেখিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহের বর্ণনার আলোকে প্রতিভাত যে, সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত।

অনুরূপ যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত।

একইভাবে সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পূর্বে ২৩ মিনিট মাকরূহ ওয়াক্ত।

উক্ত তিন সময়ে সূর্যপূজারীরা সূর্যকে পূজা করে থাকে। যার কারণে উক্ত তিন সময়ে নামায পড়া, ছলাতুল জানাযা পড়া, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াতে সিজদাহ তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ তথা মাকরূহ তাহরীমী।

উল্লেখ্য, যে যে কারণে নামায ভঙ্গ হয়, সে সে কারণে তিলাওয়াতে সিজদাও ভঙ্গ হয়।

মাকরূহ ওয়াক্তে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত নিষেধ হওয়ার ক্ষেত্রে মূল যে কারণ তা হচ্ছে তিলাওয়াতে সিজদাহ। অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্তে তিলাওয়াতে সিজদাহ সম্বলিত আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করা মাকরূহ তাহরীমী। যেমন এ প্রসঙ্গে ‘তুহফাতুল ফিক্হ’্ কিতাবের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

لَوْ تَلَا اٰيَةَ السَّجْدَةِ فِيْ وَقْتِ غَيْرِ مَكْرُوْهٍ وَسَجَدَهَا فِيْ وَقْتٍ مَكْرُوْهٍ لَا يَجُوْزُ لِأَنَّـهَا وَجَبَتْ كَامِلَةً فَلَا تُـؤَدِّىْ نَاقِصَةً وَلَا تَلَا فِيْ وَقْتٍ مَكْرُوْهٍ وَسَجَدَهَا فِيْهِ جَازَ مِنْ غَيْرِ كَرَاهَةٍ

অর্থ: যদি কেউ সম্মানিত আয়াতে সিজদা তিলাওয়াত করে মাকরূহ ওয়াক্ত ছাড়া এবং সিজদা করে মাকরূহ ওয়াক্তে, সেটা জায়িয হবে না। কেননা উক্ত তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়েছে কামেল বা পূর্ণ (মাকরূহবিহীন) ওয়াক্তে, তাই সেটা নাক্বিছ বা অপূর্ণ (মাকরূহ) ওয়াক্তে আদায় হবে না। আর কেউ মাকরূহ ওয়াক্তে তিলাওয়াত করেনি এবং মাকরূহ ওয়াক্তে সিজদাও করেনি সেটা মাকরূহ ছাড়াই বৈধ বা শুদ্ধ হয়ে যাবে।

অতএব, পবিত্র নামায, পবিত্র জানাযা ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াতে সিজদাহ কামেল বা পূর্ণ ওয়াক্তে পড়তে হবে। মাকরূহ ওয়াক্তে পড়া যাবে না। (দলীলসমূহ: বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ, মেরকাত শরীফ, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, ফতহুল ক্বাদীর, ফতওয়ায়ে শামী, তুহফাতুল ফিক্হ্, শরহে হিন্দি-জাযরী, মুফীদুল ক্বারী, ওয়াসীলাতুল ক্বারী, ক্বারীউল-কুরআন ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ মাছুম বিল্লাহ, মুন্সিগঞ্জ

 

সুওয়াল: যাদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ নয় এমন গরীব মিসকীনদেরকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে কি?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

تَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْبِـرِّ وَالتَّـقْوٰى وَلَاتَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْإِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّـقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: “তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সহযোগিতা করো; পাপ ও নাফরমানীর মধ্যে সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন কোথায় আমাদের সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। অর্থাৎ ১. আদেশ: যারা নেককার, পরহেযগার তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। আর ২. নিষেধ: পাপে, বদীতে, সীমালঙ্ঘনে, শত্রুতায় কোন সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ মানা ফরয। কোন কারণে তা লঙ্ঘণ করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

স্মরনীয় যে, যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়: যাদের ঈমান নাই,আক্বীদা নষ্ট তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। অনুরূপ যারা নেককার-পরহেযগার নয়। যারা পাপী; মহাপাপী। তাদেরকেও সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না।

হযরত ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- বিরাট পর্বতমালা যার অস্তিত্ব শত শত মাইল দূর হতে দেখা যায়। কিন্তু সম্মানিত ঈমান অত্যন্ত সূক্ষ্ম, যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। কিভাবে যে একজন ঈমানদার ব্যক্তি বেঈমান হয়ে যায় তা বোঝা কঠিন। যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানীরা। তারা সমস্ত আক্বীদাই মানে কিন্তু শুধুমাত্র একটি ব্যতীত। তা হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘খ¦াতামুন নাবিয়্যীন’ অর্থাৎ আখিরী বা শেষ নবী স্বীকার করে না। নাঊযুবিল্লাহ! এ কারণে তারা মির্জা গোলাম কাদিয়ানী (যে কিনা বাথরুমে পড়ে মারা গিয়েছে) তাকে নবী বলে দাবী করে। নাঊযুবিল্লাহ! এরা যত আমলই করুক না কেন এদের কোন আমলই কবূল হবে না। এরা কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামী।

এরকম যারা বলে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাত-পা আছে। নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই। নাঊযুবিল্লাহ! যারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ কুফরীমূলক কথা বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ কুফরীমূলক কথা বলে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দোষ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!  যারা বলে থাকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ত্রুটি আছে, নাঊযুবিল্লাহ! এই সমস্ত লোকদের ঈমান নেই। তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।

এ রকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন-আশরাফ আলী থানবী, যে ‘হিফযুল ঈমান’ (তার মোটা মোটা আরও অনেক বই আছে) নামে একটি বইয়ের মধ্যে লিখেছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব হাইওয়ান, বাচপান, মজনুন অর্থাৎ উনার ইলমে গইব পশুর মতো নাঊযুবিল্লাহ! শিশুর মতো নাঊযুবিল্লাহ! এবং পাগলের মতো নাঊযুবিল্লাহ! সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যে এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ দিতে পারে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া মতে তার ঈমান থাকতে পারে না।

ক্বওমী, দেওবন্দী তাদের সিলেবাসে এগুলো শিখানো হয়। নাঊযুবিল্লাহ!  কওমী, দেওবন্দীরা আরো বলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নাকি মিথ্যা কথা বলতে পারেন। নাঊযুবিল্লাহ! তারা বলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত মুবারক ও পথ মুবারক উনাদের উপর যারা কায়িম থাকবেন (উনারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)

সুতরাং বোঝা যায়, এরা মূলত বাতিল ৭২ ফিরকার অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর কিছুই দেয়া যাবে না। এদেরকে সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর দিলে তা কবুল হবে না।

এছাড়া আরো যাদেরকে সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না তারা হচ্ছে:

১। উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানা অথবা তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে সম্মানিত যাকাত প্রদান করলে সম্মানিত যাকাত আদায় হবে না। যেমন পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর অনেক টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এবং ধর্মব্যবসায় ও সম্মানিত দ্বীন-ইসলাম উনার বিরোধী কাজেই ব্যয় হয়। কাজেই এদেরকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে সম্মানিত যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের সম্মানিত যাকাত আদায় হবে না।

২। ঠিক একইভাবে সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের জন্য ফায়দা লাভের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। যেমন ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে-

(ক) সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

(খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

গ) আরেক দিক থেকে সম্মানিত যাকাত দাতাদের সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাত দাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাত দাতাদের কোন সম্মানিত যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে সম্মানিত যাকাত উনার টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

৩। অনুরূপভাবে সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমান উনাদের জন্য শিক্ষা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমান উনাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে মুসলমান উনাদের সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে সম্মানিত যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।

৪। নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না। এদেরকে সম্মানিত যাকাত দিলে আবার তা নতুন করে আদায় করতে হবে।

৫। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মতে কুরাইশ গোত্রের বনু হাশিম উনাদের অন্তভুর্ক্ত বংশধরের জন্য সম্মানিত যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মতে বৈধ।

৬। অমুসলিম ব্যক্তিকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।

৭। দরিদ্র পিতা-মাতাকে এবং উর্ধ্বতন পুরুষ অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানীকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।

৮। আপন সন্তানকে এবং অধঃস্তন সন্তান অর্থাৎ নাতি-নাতনীদেরকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।

৯। আহাল-আহলিয়া পরস্পর পরস্পরকে সম্মানিত যাকাত দিতে পারবে না।

১০। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য সম্মানিত যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।

১১। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে সম্মানিত নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে সম্মানিত যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে।

১২। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের হুকুম অনুযায়ী যারা আমল করেনা অর্থাৎ যারা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ আমল ও আক্বীদায় অভ্যস্ত তাদেরকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।

১৩। যারা সম্মানিত যাকাত গ্রহণ করে উক্ত যাকাতের টাকা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীমূলক কাজে মশগুল হয় তাদেরকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।

১৪। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধিনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে সম্মানিত যাকাত উনার টাকা দেয়া যাবে না।

১৫। যাদের আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বহিভুর্ত তাদেরকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না। যারা হারাম কাজে অভ্যস্ত তাদেরকে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।

১৬। জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন : আমভাবে লাশ বহন ও দাফন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ, বৃক্ষরোপন, পানির ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।

 

হাদিউল ইসলাম , মানিকঞ্জ

সুওয়াল: পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের সম্মানিত যাকাত উনার বিধান কি?

জাওয়াব: এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتِ الْـحَسَنِ الْبَصْرِىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اِذَا حَضَرَ الْوَقْتُ الَّذِىْ يُـوَدِّىْ فِيْهِ الرَّجُلُ زَكَاتَهٗ اَدّٰى عَنْ كُلِّ مَالٍ وَّعَنْ كُلِّ دَيْنٍ اِلَّا مَا كَانَ ضِمَارًا لَا يَـرْجُوْهُ

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন সম্মানিত যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন সম্মানিত যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর সম্মানিত যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা বা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের সম্মানিত যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার সম্মানিত যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবাইদ কাসিম ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সঙ্কলন করেছেন)

মুহম্মদ মুনীরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

সুওয়াল: কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)

 

আহমাদ মালিহা, চাপাইনবাবগঞ্জ

 

সুওয়াল: পবিত্র রোযা রেখে করোনার টিকা নেয়া যাবে কি- না?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা অবস্থায় করোনা টিকাসহ কোন ধরনের টিকা, ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন ইত্যাদি গ্রহণ করা যাবে না। গ্রহণ করলে অবশ্যই পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُـؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ قَالَتْ اِنَّـمَا الْاِفْطَارُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ

অর্থ : “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। কিছু বের হলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ ইয়া’লা শরীফ ৪/৩২৮: হাদীছ শরীফ ৪৬০২)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ مِنْ قَـوْلِهٖ اِنَّـمَا الْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ وَلَيْسَ مِـمَّا دَخَلَ وَالْفَطْرُ فِى الصَّوْمِ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে- ওযূর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না। আর রোযার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়।” (বায়হাক্বী শরীফ ১/১১৬: হাদীছ ৫৬৬, ত্ববারানী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَالْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে, বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ শায়বা শরীফ ৩/৩৯: হাদীছ ৯২৯৩, ত্ববারানী শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, শরীরের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ। যা ফিক্বাহ’র বিশ্বখ্যাত কিতাব- ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদীর, হিদায়া, আইনুল হিদায়া, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে ‘রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়ার আহকাম’ কিতাবখানা এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২১, ২২ এবং ২৮২তম সংখ্যা পাঠ করুন।

আহমাদ আফরোজা, দিনাজপুর

সুওয়াল: মহিলারা মসজিদে গিয়ে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়তে পারবে কি না?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও  কাট্টা কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

মুহম্মদ আহসান হাবীব,রংপুর

সুওয়াল: কেউ কেউ বলে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াতও পড়া যায়। তাদের বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য মোটেও সঠিক নয়। সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার কারণে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করা হয়েছে যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।)

 

মুহম্মদ আব্দুর রহমান, ঢাকা

 

সুওয়াল: যাকাত, ফিতরা ও উশর সম্পর্কে জানতে চাই এবং তা সহজে কিভাবে হিসাব রেখে প্রদান করা যায়?

জাওয়াব: যাকাত শব্দের অনেক অর্থ তবে মূল অর্থ ২টা। ১টা অর্থ হলো বরকত বা বৃদ্ধি। আর দ্বিতীয় অর্থ হলো পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। অর্থাৎ যারা যাকাত আদায় করবে, প্রদান করবে তাদের মালী, জিসমানী, রূহানী, সবদিকে বরকত ও বৃদ্ধি হবে এবং পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি হাছিল হবে। সুবহানাল্লাহ!

যদি কারও কাছে নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্থাৎ ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরী সোনা অথবা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরী রূপা অথবা তার সমতুল্য পরিমাণ অর্থ (যা বর্তমানে ৫৫,০৭৩ টাকা) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী বাদ দিয়ে এক বছর ধরে অতিরিক্ত থাকে তখন তার উপর যাকাত ফরয।

কতটুকু দিবে? ৪০ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ শতকরায় ২.৫%। কখন দিবে? প্রত্যেক হিজরী বছরে ১ বার। মালে তেজারতের নিছাব পূর্ণ হলেও যাকাত দিতে হবে।

ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদকাতুল ফিতরা’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতি দেওয়া। আমরা ঈদের দিন রোযা বিরতি করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সবাইকে ফিতরা দিতে হবে।

কে দিবে? যিনি পরিবারের কর্তা তিনি ফিতরা দিবেন। কতটুকু দিবে? ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য। কখন দিবে? রোযা শেষ হলে ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত ছিল রমদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দিকে অর্থাৎ রমাদ্বান শরীফ মাসের মধ্যেই ফিতরা আদায় করা। তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে সে কারণে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তা পেঁৗছে না বা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, এ বছর অর্থাৎ ১৪৪৪ হিজরী সনে ঢাকা শহরে ভালো লাল আটা ৬৮.০০ টাকা কেজি। সে হিসাবে অর্ধ সা’ অর্থাৎ এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ১১৩.০০ টাকা (প্রায়)।

কাজেই, একজনের ফিতরার পরিমাণ হচ্ছে ১১৩ টাকা। এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশি দিতে পারবে।

যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য, যা বর্তমানে ১০৪৯ টাকা তোলা হিসেবে ৫৫,০৭৩ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লেখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।

উশর: উশর শব্দটি এসেছে ‘আশরাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ১০ ভাগের ১ ভাগ। উশর হচ্ছে ফল-ফসলাদির যাকাত।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি আম গাছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই বছরের পর বছর আম হয়। এক্ষেত্রে, ১০০ টি আম হলে উশর দিতে হবে ১০টি আম বা তার মূল্য। আর পরিশ্রম করে ফল-ফসলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: ধান, গম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। যদি কোন জমিতে ১০০ মণ ধান হয় তবে উশর দিতে হবে ৫ মণ বা তার মূল্য।

কে দিবে? যিনি ফল-ফসলাদির মালিক হবেন বা পাবেন তিনি উশর দিবেন। কতটুকু দিবে? বিনা পরিশ্রমে হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ। আর পরিশ্রম করে হলে ২০ ভাগের ১ ভাগ। কখন দিবে? যখন ফল-ফসলাদি তোলা হবে তখনই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে। এবং যতবার ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاٰتُـوْا حَقَّهٗ يَـوْمَ حَصَادِهٖ

অর্থ: তোমরা ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)

ফসল কাটার সময় উশর আদায় করতে হবে। যাকাতের মতই উশর ফরয।

পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ: যখনই কোন ফল-ফসল উৎপন্ন হবে তখনই নীচের ছকে লিখে রাখতে হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ