সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৭৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আছগর হুসাইন, খাগড়াছড়ি

 

সুওয়াল: সম্প্রতি অনলাইনে বাতিল ফিরক্বাভুক্ত এক বক্তা বলেছে যে, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাওয়াত দেন। সেখানে উনারা মদ পান করেন। নাউযুবিল্লাহ! ছলাতুল মাগরিব উনার সময় হলে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নামাযের ইমামতিতে এগিয়ে দেয়া হয়। এবং নামাযে তিনি সূরা কাফিরূন ব্যতিক্রম পড়েন। নাউযুবিল্লাহ! তখন পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৩৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়। যার অর্থ: হচ্ছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পবিত্র নমাায উনার নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যা বলছো তা বুঝতে না পারো। এ বর্ণনাটি নাকি তিরমিযী শরীফ ও আবূ দাউদ শরীফ কিতাবদ্বয়ের মধ্যেও বর্ণিত আছে। আর এটা মাদরাসা সিলেবাসের মধ্যেও পড়ানো ও শেখানো হয়। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা প্রদান করে ঈমান আক্বীদা হিফাযত করবেন।

জাওয়াব: হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের যামানাতেই তৈরী এক বাতিল ফিরক্বার নাম হচ্ছে খারিজী ফিরক্বা। এরা যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ফায়ছালা মুবারক মেনে নিতে পারেনি। পরবর্তীতে উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতিও করেছে বিভিন্ন অপপ্রচার। এমনকি তারা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রথম ইমাম আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদও করেছে। এমনকি উনার বিরোধিতায় হাদীছ শরীফের নামে বিভিন্ন জাল ও বানোয়াট বিষয় ছড়িয়ে দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! সুওয়ালে উল্লেখিত বিষয়টি তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য একটি বিষয়। নাঊযুবিল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّـمَا الْـخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.

অর্থ : “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)

অর্থাৎ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ হতে জানা যায় যে, মদ হচ্ছে رِجْسٌ বা অপবিত্র জিনিস।

পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান শান মুবারকে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا.

অর্থ : হে মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ইরাদা মুবারক হলো যে, আপনাদেরকে সকল অপবিত্রতা থেকে হিফাযত করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করা।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

অর্থাৎ হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। যেমন পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে

لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ

দ্বারা সকল অপবিত্রতা থেকে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা মুক্ত এবং উনারা পূত-পবিত্র সে ঘোষণাই মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.

অর্থ : “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি এবং আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই সকল গুনাহ বা অপবিত্রতা থেকে পূতপবিত্র।” সুবহানাল্লাহ (কিতাবু আমালি ১/১৯৮, দুররুল মানছূর ১২/৪৩, রূহুল মায়ানী ১১/১৯৪, ফাতহুল কাদীর লি শাওকানী ২/৪১৩, মা’য়রিফাত ওয়াত তারিখ ১/৪১০)

স্মরণীয় যে, পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৯০ নং আয়াত শরীফ হতে জানা যায় যে, মদ হচ্ছে رِجْسٌ বা অপবিত্র জিনিস। আর পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ ৩৩ নং আয়াত শরীফ থেকে জানা যায়, لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ দ্বারা মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সকল অপবিত্রতা থেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দূরে রেখেছেন এবং পূত-পবিত্র ও পবিত্রতা দানকারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।

তাহলে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কি করে অপবিত্র মদ স্পর্শ করতে পারেন? এ ধরণের আক্বীদা তো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের প্রকাশ্য হুকুম উনার খিলাফ যা সুস্পষ্ট কুফরী। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁদেরকে পবিত্র রেখেছেন, উনাদের প্রতি অপবিত্র কাজের অপবাদ দিলে কখনোই ঈমান থাকবে না।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সর্বপ্রথম নামায আদায়কারী ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। যখন নামায ফরযই হয়নি তারও আগে থেকে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায আদায় করতেন। আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন আয়াত শরীফ উনার কি হুকুম, কখন নাযিল হয়েছে, কোন প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে ভালো জানতেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي الطُّفَيْلِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَالَ حَضْرَتْ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَلُوْنِـىْ عَنْ كِتَابِ اللهِ فَاِنَّهٗ لَيْسَ مِنْ اٰيَةٍ اِلَّا وَقَدْ عَرَفْتُ بِلَيْلٍ نَزَلَتْ اَمْ بِنَهَارٍ فِىْ سَهْلٍ اَمْ فِىْ جَبَلٍ.

অর্থ : “হযরত আবূ তুফাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে মানুষেরা! মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব সম্পর্কে আমার কাছে তোমরা যা জানতে চাও জিজ্ঞাসা করো। কেননা এমন কোন আয়াত শরীফ নেই যা আমি জানি না। যেটা রাতেই নাযিল হোক বা দিনেই নাযিল হোক, সমতল ভূমিতে নাযিল হোক কিংবা পাহাড়-পর্বতে নাযিল হোক না কেন।” (তাবাকাতে কুবরা ইবনে সা’দ ২/৩৩৮ : হাদীছ শরীফ নং ২৫১৯)

উল্লেখ্য যে, মদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে প্রথম যে আয়াত শরীফ নাযিল হয় তা হচ্ছে পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ উনার ২১৯ নং আয়াত শরীফ-

يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْـخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيْهِمَا اِثْـمٌ كَبِيْرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْـمُهُمَا اَكْبَرُ مِنْ نَّفْعِهِمَا.

অর্থ : “(সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। আপনি বলুন, উভয়ের মধ্যে বড় গুনাহ রয়েছে, যদিও এতে লোকদের জন্য বাহ্যিক কিছু উপকারিতাও আছে। কিন্তু উভয়ের মধ্যে পাপ ও গুনাহর পরিমাণ উপকারিতার চেয়ে অনেক বেশি।”

অর্থাৎ মদ্যপান পাপ ও অকল্যাণের কাজ এটা পূর্বেই নাযিল হয়েছে। এর বেশকিছু পরে সূরা নিসা শরীফ উনার ৪৩ নং আয়াত শরীফ নাযিল হয়। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আহকাম, জাহিরী-বাতিনী সব অর্থ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মত ব্যক্তিত্ব মদ্যপান গুনাহ ও অকাল্যাণের কাজ জানার পরও তা পান করে নামায আদায় করতে যাওয়া উনার পক্ষে কি করে সম্ভব হতে পারে? নাঊযুবিল্লাহ! তাছাড়া সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কোন্ আয়াত নাযিল হয়ে কি হুকুম হবে এ অপেক্ষায় থেকে কাজ করার মত ব্যক্তিত্ব নন। বরং তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শুরু থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি অনুসরণ করে জীবন-যাপন করতেন। সুবহানাল্লাহ!

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতার ঘোষণা সম্বলিত আয়াত শরীফ- পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৩৩ নং আয়াত শরীফখানা, মদ্যপান করে নামাযের কাছে যেতে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত সূরা নিসা শরীফ উনার ৪৩ নং আয়াত শরীফ উনার আগে নাযিল হয়। এক্ষেত্রে জানা আবশ্যক, যিনি পবিত্র হিসেবে ঘোষিত হয়েছেন পরবর্তীকালে উনার পক্ষে অপবিত্র শরাব পান করে নামায আদায় করা কি করে সম্ভব হতে পারে। এরপরও যদি উনার নামে সেটা বলা হয়, তাতো স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়ছালা মুবারকের সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। নাঊযুবিল্লাহ! ফলে তা প্রকাশ্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকল অপবিত্রতা থেকে কতখানি পবিত্র তা নিম্নের ঘটনা থেকে সহজে বোঝা যায়। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَوْ وَقَعَتْ قَطْرَةٌ مِّنْهَا فِىْ بِئْرٍ فَبُنِيَتْ فِىْ مَكَانِـهَا مَنَارَةٌ لَـمْ اُؤَذِّنْ عَلَيْهَا وَلَوْ وَقَعَتْ فِـىْ بَـحْرٍ ثُـمَّ جَفَّ فَنَبَتَ فِيْهِ الْكَلَأُ لَـمْ اَرْعَهٗ

অর্থ : “যদি মদের এক ফোঁটা কোনো কূপে পড়ে যায়, অতঃপর সেই জায়গায় (কূপের উপরে) মিনার নির্মাণ করা হয়, তবে সেই মিনারে দাঁড়িয়ে আমি আযান দিব না, আর যদি নদীতে মদের একফোঁটা পড়ে, অতঃপর সমুদ্র শুকিয়ে গিয়ে সেখানে ঘাস জন্মায়, তবে সে ঘাস আমার পশুদেরও খাওয়াব না।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১/৫০৬, তাফসীরে কাশশাফ, তাফসীরে আবি সাউদ ১/২৭৫)

প্রতিভাত হলো, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে মদ্যপানের মত অপবিত্র একটা বিষয়কে সম্পৃক্ত করা চরম মূর্খতা, গুমরাহী এবং কাট্টা কুফরী।

বাতিল ফিরক্বার লোকেরা পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৪৩ নং আয়াত শরীফ উনার শানে নুযূল হিসেবে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার শরাব পান করে (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক) পবিত্র সূরা কাফিরূন ব্যতিক্রম পাঠ করার বিষয়ে তিরমিযী শরীফ ও আবূ দাঊদ শরীফ থেকে যে বর্ণনা উল্লেখ করেছে, তাতে সনদ ও মতনে ভয়াবহ ইখতিলাফ বা বিরোধ রয়েছে। যা দলীল হিসেবে কোনভাবেই উপস্থাপনযোগ্য নয়।

মতনগতভাবে বর্ণনাটির ইখতিলাফ

তিরমিযী শরীফ উনার ৩০২৬ নং বর্ণনায় এসেছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ اَبِىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ صَنَعَ لَنَا حَضْرَتْ عَبْدُ الرَّحْـمٰنِ بْنُ عَوْفٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ طَعَامًا فَدَعَانَا وَسَقَانَا مِنَ الْـخَمْرِ فَاَخَذَتِ الْـخَمْرُ مِنَّا وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَقَدَّمُوْنِـىْ فَقَرَأْتُ ‏‏(قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ‏‏ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ) وَنَـحْنُ نَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ‏.‏ قَالَ فَاَنْزَلَ اللهُ تَعَالٰى ‏‏(‏يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلٰوةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ‏)

অর্থ : “হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দাওয়াত দেন। সেখানে শরাব পান করানো হয়। সেখানে উনাকে ইমামতিতে এগিয়ে দেয়া হয় এবং তিনি পবিত্র সূরা কাফিরূনে ব্যতিক্রম পড়েন। তখন পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৪৩ নং আয়াত শরীফ নাযিল হয়। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক।

অপরদিকে আবূ দাঊদ শরীফ উনার ৩৬৭১ নং হাদীছ শরীফে এসেছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ اَبِىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّ رَجُلًا مِّنَ الْاَنْصَارِ دَعَاهُ وَحَضْرَتْ عَبْدَ الرَّحْـمٰنِ بْنَ عَوْفٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ …….

অর্থ : “আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম ও হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে জনৈক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাওয়াত দেন….”

উপরোক্ত বর্ণনাদ্বয়ে ভালোভাবে লক্ষ্যণীয় যে, এক বর্ণনায় (তিরমিযী শরীফ উনার বর্ণনায়) দেখা যাচ্ছে, হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার ঘরে খাবারের দাওয়াত করলেন। অন্য বর্ণনায় (আবূ দাঊদ শরীফ উনার বর্ণনায়) দেখা যাচ্ছে, জনৈক হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার ঘরে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম ও হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে দাওয়াত দেন। অর্থাৎ দাওয়াতকারী ও দাওয়াতের স্থান পরিবর্তন হয়ে গেছে।

তাছাড়া তিরমিযী শরীফ উনার বর্ণনায় হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাওয়াত দানকারী হলেও আবূ দাঊদ শরীফ উনার বর্ণনায় তিনিই আবার দাওয়াত গ্রহণকারী। সুতরাং বোঝা গেলো, মতনগতভাবে এ বর্ণনা পরস্পর বিরোধী ও সাংঘর্ষিক। (এছাড়া এ ঘটনাটি একাধিক ছহীহ সনদে অন্য কারো বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

এরপর হযরত ইমাম আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানের ৩৬৭১ নং হাদীছ শরীফে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন সেখানে আশ্চর্য ধরণের ভুল লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَـحْيٰى، عَنْ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا عَطَاءُ بْنُ السَّائِبِ، عَنْ اَبِـىْ عَبْدِ الرَّحْـمٰنِ السُّلَمِيِّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّ رَجُلًا مِّنَ الْاَنْصَارِ دَعَاهُ وَعَبْدَ الرَّحْـمٰنِ بْنَ عَوْفٍ فَسَقَاهُـمَا قَبْلَ اَنْ تُـحَرَّمَ الْـخَمْرُ فَاَمَّهُمْ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِى الْمَغْرِبِ فَقَرَأَ ‏{قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ‏

বর্ণনাটির মূল বর্ণনাকারী হচ্ছেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। তিনি যদি উক্ত মাগরিব নামায পড়ান তাহলে তিনি বলবেন, আমি ইমামতি করলাম বা আমাকে ইমামতি করতে বলা হলো ইত্যাদি। যেমনটা তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় উল্লেখ আছে। অথচ আবূ দাঊদ শরীফের এ বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে তিনি বর্ণনা করছেন فَاَمَّهُمْ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي الْمَغْرِبِ যার অর্থ অতঃপর মাগরিবের নামাযে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাদের ইমামতি করলেন। যা সম্পূর্ণ বেমানান।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, “আব্দুর রহমান বললেন, আব্দুর রহমান ভাত খেয়েছেন”। বাক্যটা কি মানানসই হয়েছে? হয়নি। বাক্যটা হওয়া উচিত ছিলো- “আব্দুর রহমান বললেন, আমি ভাত খেয়েছি”। এ থেকে যেটা বোঝা যায়, উক্ত ঘটনা মূলতঃ আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। বরং উনার পূর্বের যিনি রাবী বা বর্ণনাকারী তিনিই ঘটনাটি বর্ণনা করে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার দিকে নিছবত করে দিয়েছে। পূর্বের রাবী আবু আব্দুর রহমান সুলামী তিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাৎ পেয়েছেন এটাও প্রমাণিত নয়।

তিরমিযী শরীফের সনদখানা লক্ষ্যণীয়-

عَنْ عَطَآءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ اَبِىْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ السُّلَمِيِّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ

হযরত আতা ইবনে সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আবূ আব্দুর রহমান সুলামী থেকে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে……

এবার আবূ দাঊদ শরীফের সনদখানা লক্ষ্যণীয়-

حَدَّثَنَا عَطَاءُ بْنُ السَّائِبِ، عَنْ اَبِىْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ السُّلَمِيِّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ

হযরত আতা ইবনে সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আবূ আব্দুর রহমান সুলামী থেকে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে……

দু’খানা কিতাবেই প্রথম তিন রাবী একই। এরপরও মতনে ইদ্বতিরাব, বিক্ষিপ্ত বা সংঘর্ষিক। দুই কিতাবের বর্ণনার মধ্যে স্থান এবং দাওয়াতকারী পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাহলে স্থান এবং দাওয়াতকারীর মত নামাযের ইমামও যে পরিবর্তন হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নাম  ঢুকে গেছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।

অতএব প্রমাণিত হলো, আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফের বর্ণনা পরস্পর বিরোধী বা মুদ্বতারিব বর্ণনা। এ ধরণের বর্ণনা উছূলে হাদীছ শরীফ উনার মানদণ্ডে দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

সনদগতভাবে বর্ণনাটির অগ্রহণযোগ্যতা

আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফ উনার বর্ণনার মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আগের বর্ণনাকারীই হচ্ছেন আবূ আব্দুর রহমান সুলামী। যদিও আবূ আব্দুর রহমান সুলামী থেকে অনেক বর্ণনা ছিহাহ সিত্তার কিতাবে এসেছে। কিন্তু এই বর্ণনার ক্ষেত্রে আবূ আব্দুর রহমান সুলামীর বর্ণনা গ্রহণ করা যায় না। কারণ এ বর্ণনাকারী সম্পর্কে বিখ্যাত হাদীছ শরীফ বিশারদ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-

ثُـمَّ صَارَ عُثْمَانِيًّا

সে উছমানিয়ান ছিলো। (তাহযীবুত তাহযীব ৫/১৬১)

হযরত ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে বলেছেন-

اَبُوْ عَبْدُ الرَّحْـمٰنِ السُّلَمِيُّ وَكَانَ عُثْمَانِيًّا

আবূ আব্দুর রহমান সুলামী উছমানিয়ান ছিলো। (আহকামুল কুরআন ৭/২৯৪)

উল্লেখ্য, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদ হওয়ার পর এক দল বের হয় যারা খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার প্রতি লোক দেখানো মুহব্বত প্রকাশ করে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতো এদেরকে উছমানিয়ান বলা হয়।

এমন একজন উছমানিয়ান রাবীর আক্বীদা সম্পর্কে ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

كَانَ عُثْمَانِيًّا يَبْغَضُ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامُ

সে ছিলো উছমানিয়ান যে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতো। (তাহযীবুত তাহযীব ৫/২২৪)

আবূ আব্দুর রহমান সুলামী উছমানিয়ান ছিলো। সুতরাং উছূলে হাদীছ শরীফ অনুযায়ী এ রাবী থেকে অন্য যে কোন বিষয়ে রেওয়ায়েত নেয়া গেলেও যখন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার শানের খিলাফ কোন বর্ণনা যদি দেখা যায় কখনোই সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সর্বোপরি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে আবূ আব্দুর রহমান সুলামীর সাক্ষাতই প্রমাণিত নয়।

জারাহ ওয়াত তা’দীলের ইমাম হযরত আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

لَيْسَ تَثْبُتُ رِوَايَتُهٗ عَنْ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে আবূ আব্দুর রহমান সুলামীর রেওয়ায়েত প্রমাণিত নয়। (তাহযীবুত তাহযীব ৫/১৬১)

মূলতঃ আব্দুর রহমান সুলামী উছমানিয়ান হওয়ার কারণে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঘটনাটি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি আরোপ করেছে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো, প্রথমত আব্দুর রহমান সুলামী উছমানিয়ান অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বিরোধী ছিলো। দ্বিতীয়ত সাইয়্যিদুনা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে আব্দুর রহমান সুলামীর সাক্ষাতই হয়নি।

সুতরাং এ রাবীর বর্ণনা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? অর্থাৎ এ বর্ণনাকারীর বর্ণিত বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

এ বর্ণনার আরেক রাবী হযরত আতা ইবনে সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। যত কিতাবেই এ বর্ণনা এসেছে সব সনদে হযরত আতা ইবনে সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে এ রাবী আছেন।

এ রাবী শেষ বয়সে বছরা চলে যান এবং উনার ভয়াবহ স্মৃতিবিভ্রাট ঘটে। কোন কিছুই উনার মনে থাকতো না। যে কারণে উনার সর্ম্পকে ইমামগণের রায় হচ্ছে-

حَدَّثَنَا اَحْـمَدُ بْنُ زُهَيْرٍ قَالَ سَـمِعْتُ يَـحْيَى بْنَ مَعِيْنٍ يَقُوْلُ كُلُّ شَيْءٍ مِّنْ حَدِيْثِ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ ضَعِيْفٌ اِلَّا مَا كَانَ مِنْ حَدِيْثِ شُعْبَةَ وَسُفْيَانَ وَحَـمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ.

অর্থ : “হযরত আহমদ বিন যুহাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি শুনেছি, হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে মাঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আতা ইবনে সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সকল বর্ণনা দ্বয়ীফ শুধুমাত্র যে সকল হাদীছ শরীফ ইমাম হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেছেন সেগুলো ব্যতিত।” (মুসনাদে ইবনে জা’দ ১/১৩২: বর্ণনা নং ৮৩৭)

ইমাম হযরত আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

ثُـمَّ بِاٰخِرِهٖ تَغَيَّرَ حِفْظُهٗ، فِىْ حَدِيْـثِه تَـخَالِيْطٌ كَثِيْرَةٌ

অর্থ : “শেষ বয়সে উনার স্মরণশক্তি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো। যে কারণে উনার বর্ণনায় অনেক সংমিশ্রণ দেখা যায়।” (জারহু ওয়াত তা’দীল ৬/৩৩৪, তাহযিবুল কামাল ২০/৯২)

আরো বর্ণিত রয়েছে-

مَنْ سَـمِعَ مِنْهُ قَدِيْـمًا كَانَ صَحِيْحًا، وَمَنْ سَـمِعَ مِنْهُ حَدِيْثًا لَـمْ يَكُنْ بِشَيْءٍ.

অর্থ : “উনার থেকে পূর্বে যারা শ্রবণ করেছেন সেগুলো ছহীহ। পরবর্তীতে যারা শ্রবণ করেছে সেগুলোর কোন ভিত্তিই নেই।” (তাহযীবুত তাহযীব ৩/১০৪)

আলোচ্য বর্ণনার মতন ও সনদ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে যেটা প্রমাণিত হয়েছে-

      কোন বর্ণনায় হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দাওয়াতকারী বলা হয়েছে।

      কোন বর্ণনায় এসেছে হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে কেউ একজন দাওয়াত দিয়েছেন।

      কোন বর্ণনায় এসেছে হযরত মুহাজির ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে কেউ একজন দাওয়াত দিয়েছেন।

      কোন বর্ণনায় এসেছে জনৈক এক ব্যক্তি দাওয়াত দিয়েছেন।

      কোন বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামাযে ইমামতি করেছেন।

      কোন বর্ণনায় এসেছে হযরত মুহাজির ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে কেউ একজন ইমামতি করেছেন।

      কোন বর্ণনায় এসেছে কোন ব্যক্তিকে নামাযে এগিয়ে দেয়া হলো।

      কোন বর্ণনায় হযরত আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

      আবার কোন বর্ণনায় উনার নাম পর্যন্ত উল্লেখ নেই।

      কোন বর্ণনায় এসেছে নামাযে ইমামতিকারীর নাম আবূ জাউনা।

অর্থাৎ মতনে বা বর্ণনাটির মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। সুতরাং উপরোক্ত বিচার বিশ্লেষণ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার শান মুবারকে মদ্যপান করে নামাযে ব্যতিক্রম করে ফেলার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, মওদ্বু বা খারেজীদের দ্বারা জাল করা একটি মিথ্যা বর্ণনা যা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ কুফরী বর্ণনা থেকে বেচে থাকা সকলের জন্য ফরয।

বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের প্রকাশিত কিতাব “আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের জবাব কিতাবখানা পড়ুন।

 

মুহম্মদ হারুনুর রশীদ, রংপুর

 

সুওয়াল: উলামায়ে সূ’রা করোনার অজুহাতে “মানুষের ব্যাপক মৃত্যুঝুঁকি থেকে সুরক্ষার জরুরী পদক্ষেপ হিসেবে সর্বপ্রকার জমায়েত বন্ধের পাশাপাশি মসজিদসমূহে জুমুয়া’ ও জামায়াতে সম্মানিত মুছল্লীগণের উপস্থিতি সীমিত পরিসরে রাখার জন্য সুপারিশ করেছে।” তাদের এ সুপারিশ করাটা কতটুকু শরীয়তসম্মত হয়েছে?

জাওয়াব: কাফির মুশরিকদের দোসর উলামায়ে সূ, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক, মৌলভীদের উল্লিখিত সুপারিশটি কয়েকদিক থেকে কাট্টা কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ প্রথমত: তারা পবিত্র মসজিদে জামায়াতে না যাওয়াকে ব্যাপক মৃত্যুঝুঁকি থেকে সুরক্ষার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ তাদের আক্বীদা বিশ্বাস হচ্ছে মসজিদে জামায়াতে নামায আদায় করলে ব্যাপক মৃত্যু ঘটবে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

অথচ সম্মানিত মসজিদ হচ্ছেন, খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ঘর মুরারক। যেখানে ২৪ ঘন্টাই রহমত, বরকত, সাকিনা নাযিল হয়, যেখানে আমান বা নিরাপত্তা লাভ করা যায়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ اٰمِنًا

অর্থ: যে ব্যক্তি পবিত্র মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা  আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৭)

পবিত্র মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করলে ব্যাপক মৃত্যু ঘটবে। তাদের এ কথার পিছনে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ থেকে দলীল কোথায় ?

অথচ খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ

অর্থ: “তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ কর।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)

কাজেই যে সমস্ত তথাকথিত বিজ্ঞ নামধারী অনভিজ্ঞ আলিমরা তথা উলামায়ে সূ’রা জমায়েত বন্ধের সুপারিশ করেছে এবং মসজিদে যেতে বাধা দিয়েছে অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায় করতে, জুমুয়া আদায় করতে, ইবাদত বন্দেগী করতে বাধা দিয়েছে বা মুসল্লীদের উপস্থিতি ৫ জন-১০ জনে সীমিত রাখতে বলেছে। তারা সকলেই কুফরী করে কাট্টা মুরতাদ হয়েছে।

আর এদের সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَساجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.

অর্থ: যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করতে, ইবাদত-বন্দেগী করতে পবিত্র মসজিদসমূহে আসতে বাধা প্রদান করে তথা নিষেধ করে এবং সেই পবিত্রতম মসজিদ সমূহকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালিম তথা বড় কাফির আর কে আছে? এদের (পবিত্র মসজিদে আসতে বাধা প্রদানকারীদের) জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থা ব্যতিত পবিত্র মসজিদসমূহে প্রবেশ করার অধিকার নেই। ওদের জন্য রয়েছে দুনিয়াবী কঠিন লাঞ্ছনা তথা মহাগযব এবং পরকালে কঠিন আযাব বা শাস্তি। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)

এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

لَا اَحَدَ اَظْـلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَساجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ

অর্থ: ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কেউ নেই যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ উনার মসজিদ সমূহে উনার যিকির অর্থাৎ যিকির-ফিকির, ইবাদত-বন্দেগী করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয়।” (অর্থাৎ পবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, তা’যীম তাকরীম করে না) (তাফসীরে জালালাইন ১/২৪, তাফসীরে মাযহারী ১/১১৬)

‘তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ’ উনাদের মধ্যে وَمَنْ اَظْـلَمُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে, وَمَنْ اَكْفَرُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে?

অর্থাৎ ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র মসজিদ সমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ পবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না) না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭)

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللهُ أَن تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঘোষণা মুবারক দিয়েছেন যে, উনার পবিত্রতম ঘর তথা পবিত্র মসজিদসমূহ নির্মাণ করার জন্য এবং উত্তমভাবে সকাল সন্ধ্যা তথা সবসময় ঐ সকল পবিত্র মসজিদ সমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার স্মরণ বা যিকির ফিকির, ইবাদত বন্দেগী এবং তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করার জন্য।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

পবিত্র মসজিদ উনার অসম্মান এবং বিরানভূমিতে পরিণত করাকে প্রকাশ্য ধ্বংস বলে। আর পরোক্ষভাবে ধ্বংস বলেন লোকদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত, যিকির-আযকার এবং সম্মানিত নামায আদায় করা থেকে নিষেধ করা। (মা’আরিফুল কুরআন : ১/২০৩)

তাফসীর গ্রন্থ মা’আরিফুল কুরআনে উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যার ধারাবাহিকতায়- “তিন নং মাসআলা হল এই যে, পবিত্র মসজিদ বিনষ্ট করার যতগুলো পদ্ধতি রয়েছে, সবগুলোই হারাম ও কুফরী। বাহ্যিকভাবে পবিত্র মসজিদ ধ্বংস করা ও বিরানভূমিতে পরিণত করা যেভাবে হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত, ঠিক তেমনিভাবে এমন কিছু পন্থা অবলম্বন করাও হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত যার কারণে পবিত্র মসজিদ ধ্বংস হয়ে যায় বা বিরানভূমিতে পরিণত হয়। পবিত্র মসজিদ ধ্বংস করা বলতে বুঝায়- মানুষকে নামায পড়তে পবিত্র মসজিদে আসতে বাধা দেয়া অথবা এমন পন্থা অবলম্বন করা, যাতে মুসল্লী কমে যায়। কেননা, পবিত্র মসজিদ আবাদ রাখা মূলতঃ দরজা-জানালা এবং সেগুলোকে সজ্জিত করার নাম নয়; বরং সেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত এবং পবিত্র নামায আদায়ের মাধ্যমেই পবিত্র মসজিদ আবাদ রাখা আসল উদ্দেশ্য।” সেজন্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন

 إِنَّـمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَـخْشَ إِلَّا اللهَ فَعَسٰى أُولٰـئِكَ أَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ

অর্থ: “প্রকৃত অর্থে পবিত্র মসজিদ আবাদ তারাই করেন, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ঈমান রাখেন, আখিরাতের দিবসের উপর ঈমান রাখেন, সম্মানিত নামায কায়েম করেন, পবিত্র যাকাত আদায় করেন এবং মহান আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করেন না। (পবিত্র সূরা তাওবাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

সেজন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে বাহ্যিকভাবে পবিত্র মসজিদগুলো অনেক সজ্জিত হবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা আবাদ থাকবে না। সেখানে নামাযীদের উপস্থিতি কমে যাবে অথবা বিভিন্ন পন্থা সৃষ্টি করা হবে, যাতে পবিত্র মসজিদ উনার মধ্যে মুছল্লীর সংখ্যা কমে যায়।

হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মর্যাদাবান মানুষের কাজ হল ছয়টি। তার মধ্য থেকে ১টি হল- পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা, ২. পবিত্র মসজিদ আবাদ করা, ৩. এমন বন্ধু-বান্ধবদের সংগঠিত করা, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে। (তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন : ১/২৭২)

উপরে যে কথাগুলো বলা হল, তার সারমর্ম এই-

১. পবিত্র মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর, তার উদ্দেশ্য হল- সেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করা হবে অন্তরে, মুখে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে। যেমন, নামায, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ইত্যাদি। ২. মসজিদে মুছল্লীদের বেশি বেশি যাতায়াত করা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির ও তিলাওয়াত করা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাজ। ৩. পবিত্র মসজিদ আবাদ এবং নির্মাণ করা মর্যাদাশীল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত চাহিদার প্রতিফলন। ৪. পক্ষান্তরে মানুষদেরকে পবিত্র মসজিদে আসা থেকে বিরত রাখা বা বাধা দেয়া এবং পবিত্র মসজিদে নামায পড়তে না দেয়া, এগুলোও একধরণের পবিত্র মসজিদ ধ্বংস করার নামান্তর। ৫. পবিত্র মসজিদ থেকে মানুষকে বিরত রাখার দ্বারা যেভাবে পবিত্র মসজিদ ধ্বংস করা বুঝায়, তেমনিভাবে কিছু সংখ্যক অথবা মুছল্লীর সংখ্যা সীমিত বা নির্দিষ্ট করে দেয়া, এটাও পবিত্র মসজিদ ধ্বংস করার অন্তর্ভুক্ত। আর এটা একধরণের যুলুম, অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি অর্থাৎ কুফরী।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ করেন,

وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ إِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلٰىۤ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ

অর্থ : আমি বাইতুল্লাহ শরীফ উনাকে নির্ধারণ করেছি মানুষের সমাগমের জায়গা এবং পরিপূর্ণ নিরাপত্তার স্থানস্বরূপ। তোমরা মাক্বামে ইবরাহীম উনাকে নামাযের স্থান বানিয়ে নাও এবং আমি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম উনাদেরকে ওয়াহী মুবারক করেছি যে, আপনারা আমার সম্মানিত ঘর উনাকে সেই সকল লোকের জন্য পবিত্র করুন, যারা এখানে তাওয়াফ করবে এবং রুকূ-সিজদা আদায় করবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৫)

তাফসীরে উছমানীতে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর এভাবে এসেছে, “যখন আমি নির্ধারণ করলাম পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ উনাকে মানুষদের মিলনায়তন এবং নিরাপত্তার জায়গা হিসেবে। কেননা, প্রতি বছর লোকজন পবিত্র হজ্ব- পবিত্র উমরার জন্য সমবেত হয় এবং সেখানে পবিত্র তাওয়াফ করেন, পবিত্র নামায পড়েন। অনেক লোকজনের সমাগম হয়। যারা পবিত্র হজ্ব- পবিত্র উমরাহ করেন, তারা আযাব এবং মানুষের অত্যাচার থেকে নিরাপদে থাকেন। পবিত্র হজ্ব-উমরায় তোমরা মাক্বামে ইবরাহীমে নামায পড়। আমি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাদেরকে ওয়াহী মুবারক করেছি, পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ উনাকে তাওয়াফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করুন।” (তাফসীরে উছমানী : ২২)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ থেকে জানা যায় যে, বাইতুল্লাহ শরীফ এবং পৃথিবীর সমস্ত পবিত্র মসজিদসমূহ সমবেত হওয়ার জায়গা। বাইতুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ, নামায ও যিকির আযকার ইত্যাদি করা হয় এবং অন্যান্য মসজিদে জামায়াত সহকারে নামায আদায় ও পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ, তালীম তালকীন ইত্যাদি করা হয়।

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি যেই জায়গাগুলোকে মানুষের সমাগমের ও ইবাদতের স্থান বানিয়েছেন, সেগুলোকে কোন্ অত্যাচারী ধ্বংস করে দিবে? বন্ধ করে দিবে? সম্মানিত নামায থেকে বাধা দিবে? যদি কেউ করে থাকে, তাহলে সে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অত্যাচারী। তার চেয়ে বড় নাফারমান, জালিম বা উলামায়ে সূ’ আর কেউ হতে পারে না।

কাজেই ইহুদী-খৃস্টান এবং অমুসলিম জালিম বা উলামায়ে সূ’দের কথায় পবিত্র মসজিদগুলোকে ইবাদত করা থেকে বন্ধ রাখা জায়িয তো নয়ই; বরং কুফরী আর তা সমস্ত মুসলমানদের জন্য উন্মুক্ত রাখা ফরয।

দ্বিতীয়ত: শরয়ী ওজর ব্যতীত জামায়াত তরক করা ও জুমুয়া না পড়ে যোহর আদায় করা এবং জামায়াতে না আসতে এবং জুমুয়ায় না এসে ঘরে বসে যোহর আদায় করতে বলা হারাম, কবীরা গোণাহ ও কুফরী।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ করেন,

حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى

অর্থ : (হে ঈমানদাররা!) তোমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের হেফাজত কর। বিশেষ করে মধ্যবর্তী সময়ের নামাযের। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩৮)

পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

مَنْ سَمِعَ النِّدَآءَ فَلَمْ يَأْتِ فَلَا صَلاَةَ لَهٗ إِلَّا مِنْ عُذْرٍ وَفِيْ رِوَايَةٍ عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ اٰمُرَ فِتْيَتِىْ أَنْ يَّـجْمَعُوْا حُزَمَ الْـحَطَبِ ثُمَّ اٰمُرَ بِالصَّلاَةِ فَتُقَامَ ثُمَّ أُحَرِّقَ عَلٰى أَقْوَامٍ لَا يَشْهَدُوْنَ الصَّلَاةَ

অর্থ: “যারা আযান শুনল, কিন্তু উত্তর দিল না, তাদের নামায হবে না। তবে শরয়ী ওযর থাকলে ভিন্ন কথা।” হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ইচ্ছা হয়, আমার যুবক শ্রেণীদেরকে আদেশ দেই, যেন তারা আগুন জ্বালানোর কাঠ সংগ্রহ করে এবং নামায আদায় করার নির্দেশ দেই, আর জামাত শুরু হয়ে গেলে যারা মসজিদে জামায়াত সহকারে নামায পড়তে উপস্থিত হবে না, তাদের ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেই।” (তিরমিযীর হাশিয়া আরফুশ শযী : ১/৫২, হাদীস নং ২১৭)

ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদীছ শরীফখানা হাসান এবং ছহীহ বলেছেন। তিনি আরও বলেন, “অগণিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে এই বর্ণনাও রয়েছে যে, যারা ওযর ব্যতীত আযানের পরে জামায়াতে শরীক হবে না, তাদের নামায হবে না।”

সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে প্রত্যেক আক্বেল, বালেগ, সুস্থ পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা জামায়াত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা ওয়াজিবের নিকটবর্তি। এ প্রসঙ্গে “জাওহারাতুন নাইয়ারাহ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লখে আছে-

اَلْـجَمَاعَةُ سُنَّةٌ مُّؤَكَّدَةٌ اَىْ قَرِيْبَةٌ مِّنَ الْوَاجِبِ.

অর্থ: “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। র্অথাৎ ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”

“মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَالصَّلَوةُ بِالْـجَمَاعَةِ سُنَّةٌ فِى الْاَصَحِّ مُّؤَكَّدَةٌ شَبِيْهَةٌ بِالْوَاجِبِ فِى الْقُوَّةِ.

অর্থ: “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নত। অধিক ছহীহ্ মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”

“নূরুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০০ পৃষ্ঠায় উল্লখে আছে-

جماعت سنت مؤکدہ ھے قریب واجب کے.

অর্থ: “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”

আর সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে পবিত্র জুমুয়ার নামায আদায় করা হচ্ছে ফরযে আইন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ করেন-

يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلٰى ذِكْرِ اللهِ

অর্থ: “হে ঈমানদাররা! যখন জুমুয়ার দিনে তোমাদেরকে নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের দিকে ধাবিত হও।” (পবিত্র সূরা জুমুয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

সমস্ত ফক্বীহগণ এ আয়াতে কারীমা দ্বারা পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়া ফরযে আইন প্রমাণ করেছেন।

নিম্নে তাফসীর শরীফ, হাদীছ শরীফ ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে জুমুয়ার নামায পড়া ফরযে আইন ও তার দলীল পেশ করা হলো।

اِعْلَمْ أَنَّ صَلٰوةَ الْـجُمُعَةِ مِنْ فُرُوْضِ الْأَعْيَانِ فَيَجِبُ عَلٰى مَنْ جَمَعَ الْعَقْلَ وَالْبُلُوْغَ وَالْـحُرِّيَّةَ وَالذُّكْرَانَ وَالْإِقَامَةَ إِذَا لَـمْ يَكُنْ لَهٗ عُذْرٌ فَمَنْ تَرَكَهَا اِسْتَحَقَّ الْوَعِيْدَ

অর্থ: জেনে রাখ যে, পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। সুতরাং বুদ্ধিমান, বয়ঃপ্রাপ্ত, স্বাধীন, পুরুষ, মুকীম এবং যাদের শরীয়তসম্মত কোন ওজর নেই তাদের প্রতি পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। যে এটা তরক করবে সে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। (তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে বাগবী)

صَلَوةُ الْجُمُعَةِ فَرِيْضَةٌ مُحْكَمَةٌ جَاحِدُهَا كَافِرٌ بِالْاِجْمَاعِ

অর্থ: “পবিত্র জুমুয়া উনার নামায পড়া ফরজে আইন। এটার অস্বীকারকারী বা বাধাপ্রদানকারী কাফির, এতে সকলেই একমত। (আইনী ফী শরহে বুখারী)

اِعْلَمْ أَنَّ الْجُمُعَةَ فَرِيضَةٌ مَـحْكَمَةٌ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَالْإِجْمَاعِ ويَكْفُرُ جَاحِدُهَا

অর্থ: স্মরণ রাখ যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ও ফিক্বাহর বর্ণনা দ্বারা জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন প্রমাণিত হয়েছে। যে এটা অস্বীকার করবে বা বাধা দিবে, সে কাফির হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

اِعْلَمْ أَنَّ الْجُمُعَةَ فَرِيضَةٌ مَحْكَمَةٌ لَا يَسَعُ تَرْكُهَا وَيَكْفُرُ جَاحِدُهَا تَثْبُتُ فَرْضِيَّتُهَا بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَإِجْمَاعِ الْأُمَّةِ

অর্থ: অবগত হও যে, জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। এটা ত্যাগ করার সাধ্য নেই। এটা অস্বীকারকারী বা বাধাদানকারী কাফির হবে। এটা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ও পবিত্র ইজমা শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রামণিত। (কিফায়া, দুররুল মোন্তাকা)

هِيَ فَرْضٌ عَيْنٌ يَكْفُرُ جَاحِدُهَا لِثُبُوْتِـهَا بِالدَّلِيْلِ الْقَطْعِيِّ.

অর্থ: পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। এটাকে অস্বীকার করলে বা বাধা দিলে কাফির হবে। যেহেতু এটা দলীলে কেতয়ী বা অকাট্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত। (দুররুল মুখতার)

তাই সম্মানিত শরীয়ত জুমুয়ার নামায তরককারীর ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُوْنَنَّ مِنَ الْغَافِلِيْنَ.

অর্থ: “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই অবজ্ঞা করে বা বিনা ওজরে যে সম্প্রদায় জুমুয়ার নামায থেকে ফিরে থাকে, তাদের ক্বলবে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিশ্চয়ই মহর মেরে দেবেন। অতঃপর তারা অবশ্যই গাফিলদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে।” নাউযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ ও বজলুল মজহুদ পৃষ্ঠা ১৫৩)

عَنْ حَضْرَتْ أَبِى الْجَعْدِ الضَّمْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَتْ لَهٗ صُحْبَةٌ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  قَالَ مَنْ تَرَكَ ثَلاَثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا طَبَعَ اللهُ عَلٰى قَلْبِهٖ

অর্থ: হযরত আবু জাদি জুমরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একজন ছাহাবী ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি এনকার বা অবজ্ঞা করে বা বিনা ওজরে পরপর তিন জুমুয়া ছেড়ে দেয় অর্থাৎ না পড়ে তবে মহান আল্লাহ পাক তার ক্বলবের উপর মহর মেরে দিবেন। (আবু দাউদ ১ম জিঃ ১৫৮ পৃষ্ঠা)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

مَنْ تَرَكَ الْـجُمُعَةَ مِنْ غَيْرِ ضَرُورَةٍ كُتِبَ مُنَافِقًا فِيْ كِتَابٍ لَا يُـمْحٰى وَلَا يُبَدَّلُ

অর্থ: যে ব্যক্তি বিনা ওজরে পবিত্র জুমুয়ার নামায তরক করে, তার নাম মুনাফিকের তালিকায় লিখিত হবে। এটা অপরিবর্তনীয়। নাউযুবিল্লাহ! (মসনদে শাফেয়ী)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বলা হয়েছে, কেউ বিনা কারণে তিন জুমুয়া পরিত্যাগ করলে সে মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, যে ব্যক্তি দিনে রোযা রাখে ও রাত্রিতে তাহাজ্জুদ পড়ে কিন্তু জামায়াত ও পবিত্র জুমুয়ায় উপস্থিত হয় না। তার উত্তরে তিনি বলেছেন যে, উক্ত ব্যক্তি দোযখে তথা জাহান্নামে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। এটা অস্বীকার করলে বা বাধা দিলে কাফির হবে এবং বিনা ওজরে আলস্যবশতঃ ত্যাগ করলে কবীরা গুণাহ হবে।

উল্লেখ্য যে, যাদের ক্ষেত্রে শরয়ী কোন ওযর নেই, শুধুমাত্র ভ্রান্ত বা কুফরী বিশ্বাসের বশঃবর্তী হয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামায়াতে বা জুমুয়াতে উপস্থিত হয় না, তারা দুই কারণে কঠিন গুনাহগার হবে। এক. ভ্রান্ত বা কুফরী বিশ্বাস। দুই. জামায়াত ও জুমুয়া ছেড়ে দেওয়া। প্রকাশ থাকে যে, ভ্রান্ত বা কুফরী বিশ্বাসের অর্থ হল এই যে, করোনাকে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক মনে করা। নাউযুবিল্লাহ!

অর্থাৎ একজনের রোগ অন্যজনের দিকে সংক্রমিত হওয়ার বিশ্বাসকে ইসলাম সমর্থন করে না। কেননা, রোগব্যাধি সবগুলোই মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশের অধীন। চাই মানুষের রোগব্যাধি হোক, অথবা কোন প্রাণীর। মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ম হলÑ যেখানে এবং যার উপর রোগব্যাধি যাওয়ার নির্দেশ করবেন, সেখানেই যাবে। অন্য কোথাও নয়। যদি রোগব্যাধি স্বাধীনভাবে যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যেতে পারত, তাহলে তো প্রতিটি মানুষের কাছেই যেতো। অথচ এমনটা হয় না। ‘করোনা গযব’ যেই সমস্ত এলাকায় ছড়িয়েছে, যদি সবার কাছেই যায়, তাহলে তো সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, কেউ আক্রান্ত হচ্ছে, কেউ আক্রান্ত হচ্ছে না; বরং মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যাকে আক্রান্ত করার আদেশ হয়, তাকেই আক্রান্ত করছে।

অতএব, এই ধরণের রোগব্যাধির আশংকায় বা ভ্রান্ত বিশ্বাসে মসজিদে জুমুয়া এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামায়াতে উপস্থিত না হওয়া বা উপস্থিত হতে না দেয়া শরয়ী কোন ওযর নয়। এবং শরীয়তসম্মত নয়।

বিশেষ করে, পৃথিবীর সমস্ত পবিত্র মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর। সেটা তো রহমত, বরকত, শান্তি, নিরাপত্তা এবং অধিক পরিমাণে ছওয়াব লাভ করার স্থান। মসজিদে নামায আদায় করার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট হন। আর মসজিদে না যাওয়া, জামাতবদ্ধভাবে নামায না পড়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি অসন্তুষ্ট হন। আর যদি মহান আল্লাহ পাক উনার ঘরে এই গযব আসে, তা তো মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশেই আসবে। নাকি মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ ছাড়া? যেখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদেরকে জামায়াত সহকারে নামায পড়ার আদেশ দিয়ে রহমত, বরকত এবং অধিক পরিমাণে ছওয়াব লাভ করার জন্য আহ্বান করেন, সেখানে রোগব্যাধির মাধ্যমে আযাব দিবেন কেন? অর্থাৎ মসজিদে আযাব-গযব আসতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে রোগব্যাধি নাফরমান মুশরিকদের জন্য আযাব হিসেবেই আসে। যদি ঈমানদার রোগাক্রান্ত হয়, তাহলে সেটা রহমত হিসেবেই গণ্য হবে। এই কথাও মনে রাখতে হবে, রোগব্যাধি স্বাধীনভাবে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যদি যেতে পারে, তাহলে তো সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি এবং উনার অধীনে থাকল না। অথচ, এটার কোন প্রমাণ নেই; বরং প্রমাণ তার বিপরীতমুখী। কেননা, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, সমস্ত রোগব্যাধি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি এবং উনার হুকুমের অধীন। যদি কারও কাছে যায়, আর কেউ যদি তাতে আক্রান্ত হয়, তাহলে সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমেই হবে। পবিত্র মসজিদে রোগব্যাধি আসার কোন দলিল পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের উদ্ধৃতিতে নেই। যদি কারও সন্দেহ বা আশংকা হয়, সেটা নিশ্চিত বিষয়ের বিপরীতেই হল। কেননা, ফিকহে ইসলামীর একটি মৌলিক উছূল হল-

اَلْيَقِيْنُ لَايَزُوْلُ بِالشَّكِّ

অর্থাৎ, নিশ্চিত বিষয় সন্দেহের কারণে রহিত হবে না। (আশবাহ ওয়ান নাযায়ির)

আর এই ব্যাপারে ডাক্তারদের গবেষণা সরকারী নির্দেশনা তখনই গ্রহণ করা যাবে, যখন তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ পরিপন্থী না হয়। যদি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ পরিপন্থী হয়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে। অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামায পবিত্র জামায়াতে আদায় করা, পবিত্র জুমুয়া আদায় করা এটা হচ্ছে ঈয়াক্বীনী তথা নিশ্চিত অর্থাৎ ফরয ওয়াজিব। আর মসজিদে গেলে অসুস্থ হবে এটা হচ্ছে সন্দেহযুক্ত ও ভ্রান্ত ধারণা। কাজেই সন্দেহযুক্ত বা ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে ইয়াক্বীনী বিষয় জামায়াত ও পবিত্র জুমুয়া তরক করা বা করতে বাধ্য করা কষ্মিনকালেও জায়িয হবে না বরং হারাম ও কুফরী।

উল্লেখ্য শরয়ী ওজর ব্যতিত পবিত্র মসজিদ থেকে বিরত থাকা তথা পবিত্র মসজিদে না আসা যদি কাট্টা কুফরী হয়, তাহলে পবিত্র মসজিদে যেতে বাধা দিলে, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, নিরুৎসাহিত করলে, তা কাট্টা কুফরী হবে না কেন? অবশ্যই তা কুফরী হবে।

যেমন এ প্রসঙ্গে ‘আবূ দাউদ শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَافِظُوْا عَلٰى هٰؤُلاَءِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ حَيْثُ يُنَادٰى بِهِنَّ فَإِنَّهُنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدٰى وَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُنَنَ الْهُدٰى وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلَّا مُنَافِقٌ بَيِّنُ النِّفَاقِ وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتّٰى يُقَامَ فِى الصَّفِّ وَمَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا وَلَهٗ مَسْجِدٌ فِىْ بَيْتِه وَلَوْ صَلَّيْتُمْ فِىْ بُيُوْتِكُمْ وَتَرَكْتُمْ مَسَاجِدَكُمْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَكَفَرْتُمْ.وَفِيْ رِوَايَةِ مُسْلِمٍ لَضَلَلْتُمْ.

অর্থ: ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সঠিকভাবে পবিত্র আযানের সাথে পবিত্রতম পাঁচ ওয়াক্ত ছলাতের প্রতি সবিশেষ নযর রাখবে। কেননা এই পবিত্রতম পাঁচ ওয়াক্ত ছলাতই হচ্ছে হিদায়াতের পথ। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য হিদায়াতের এ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের (সাধারণ) ধারণা, স্পষ্ট মুনাফিক্ব ব্যতীত কেউ জামা’আত থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। আমরা তো আমাদের মধ্যে এমন লোকও দেখেছি, যারা (দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে) দু’জনের উপর ভর করে (পবিত্র মসজিদে) যেতেন এবং উনাকে (সম্মানিত ছলাত উনার) কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার ঘরে তার পবিত্র মসজিদ (সম্মানিত ছলাত উনার স্থান) নেই। এতদসত্ত্বেও তোমরা যদি পবিত্র মসজিদে আসা বন্ধ করে দিয়ে তোমাদের ঘরেই (পবিত্র ফরয) ছলাত আদায় কর, তাহলে তোমরা তোমাদের মহাসম্মানিত নবী যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নাত মুবারক উনাকেই বর্জন করলে। আর যদি তোমরা তোমাদের মহাসম্মানিত নবী যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নাত মুবারক পরিত্যাগ করো, তথা তোমরা যদি মহাপবিত্রতম মসজিদে আসা বন্ধ করো- তাহলে অবশ্যই অবশ্যই তোমরা সুস্পষ্ট কুফরী করলে, তথা তোমরা কাফির/মুরতাদ হয়ে গেলে। নাউযুবিল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ)

‘ছহীহ মুসলিম শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, মসজিদে আসা বন্ধ করলে ‘তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে’ গোমরাহ হবে, ধ্বংস হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

কাজেই যারা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মসজিদণ্ডমাদরাসা বন্ধ করে, তাতে আসতে বাধা দেয়, বন্ধের পায়তারা করে, নিরুৎসাহিত করে, আসতে নিষেধ করে, কূটুক্তি করে, জামায়াত নিষিদ্ধ করে, পবিত্র আযান উনার শব্দ পরিবর্তন করে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার পবিত্রতম কালামুল্লাহ শরীফ উনাদের বিরোধিতা করে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার পবিত্রতম হাদীছ শরীফ উনাদের বিরোধিতা করার কারণেই তারা কাট্টা কাফির, মুরতাদ।

 

মুহম্মদ মেহেদী হাসান, বংশাল, ঢাকা।

সুওয়াল: উলামায়ে সূ’রা প্রচার করছে যে, বাংলাদেশে “করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে”। তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব:  “করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে, উলামায়ে ছূ’দের উক্ত বক্তব্য ডাহামিথ্যা ও চরম বিভ্রান্তিকর হয়েছে। কারন করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে মহামারী আকার ধারণ করেনি। শুধু তাই নয় “করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে মহামারী আকার ধারণ করার প্রশ্নই আসে না। কেননা মহামারী বলা হয়, যে রোগে ব্যাপকহারে মানুষ মারা যায়। অথচ বাংলাদেশে কথিত করোনা ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়নি এবং মারাও যায়নি।

মহামারী শব্দের আরবী শব্দ হলো اَلطَّاعُونُ (আত্ ত্বাঊন) যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত, প্রকাশকাল, পবিত্র শাওয়াল মাস ১৪১১ হিজরী, বুখারী শরীফের বাংলা অনুবাদের ৩য় খন্ডের ৩০০ পৃষ্ঠার ১৭৫৪ নং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّهٗ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى أَنْقَابِ الْمَدِينَةِ مَلَائِكَةٌ لَا يَدْخُلُهَا الطَّاعُوْنُ وَلَا الدَّجَّالُ

অর্থ:“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সমস্ত রাস্তায় হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা পাহারায় মোতায়েন রয়েছেন তথা নিয়োজিত রয়েছেন। তাই পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে কখনই মহামারী প্রবেশ করবে না তথা দেখা দিবে না এবং দাজ্জালও প্রবেশ করতে পারবে না।” সুবহানাল্লাহ!

মহামারী শব্দের আরবী শব্দ اَلطَّاعُوْنُ (আত্ ত্বাঊন) এর ব্যাখ্যা “ফতহুল বারী শরহে বুখারী” কিতাবের ১০ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেÑ

وَالطَّاعُوْنُ …….. وَوَضَعُوْهُ دَالًّا عَلَى الْمَوْتِ الْعَامِّ

অর্থ: “ اَلطَّاعُونُ(আত্ ত্বাঊন) তথা মহামারী… উহাকেই বলে যা ব্যাপকহারে মৃত্যুকে বুঝায়। অর্থাৎ কোন এলাকায় যদি ব্যাপকহারে মানুষ মারা যায় তাকে মহামারী বলে।

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে

وَقَالَ صَاحِبُ النِّهَايَةِ اَلطَّاعُوْنُ الْمَرَضُ الْعَامُّ الَّذِيْ يَفْسُدُ لَهُ الْـهَوَاءُ وَتَفْسُدُ بِهِ الْأَمْزِجَةُ وَالْأَبْدَانُ وَقَالَ أَبُوْ بَكْرِ بْنُ الْعَرَبِيِّ اَلطَّاعُوْنُ الْوَجَعُ الْغَالِبُ الَّذِيْ يُطْفِئُ الرُّوْحَ كَالذَّبْحَةِ سُمِّيَ بِذٰلِكَ لِعُمُوْمِ مُصَابِه وَسُرْعَةِ قَتْلِه

অর্থ: “নেহায়া” কিতাবের মুছান্নিফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, اَلطَّاعُوْنُ (আত্ ত্বাঊন) তথা মহামারী হলো, এমন সার্বজনীন রোগ- যার মাধ্যমে বাতাস দুষিত হয়ে পড়ে ও মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি, মন-মানুষিকতা নষ্ট হয় এবং যার দ্বারা শরীরের গঠনে বিকৃতি ঘটে, অকেজো করে, নষ্ট করে। আর ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যবেহ করার দ্বারা যেভাবে কোন প্রাণীর প্রাণ দ্রুত বের হয়, ঠিক অনুরূপভাবে কোন কঠিন রোগে ব্যাপক আক্রান্ত হয়ে দ্রুত প্রাণ চলে যাওয়াকে তথা মরে যাওয়াকে اَلطَّاعُوْنُ (আত্ ত্বাঊন) তথা মহামারী বলে।

আর এই মহামারীতে ব্যাপক লোক মারা যাবে তার পরিমাণ ও সংখ্যা প্রসঙ্গে “ফতহুল বারী” কিতাবের ১০ম খন্ডের ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلطَّاعُوْنُ رِجْزٌ أُرْسِلَ عَلٰى طَائِفَةٍ مِّنْ بَنِي إِسْرَائِيْلَ … مَاتَ مِنْهُمْ فِيْ سَاعَةٍ وَّاحِدَةٍ عِشْرُوْنَ أَلْفًا وَقِيْلَ سَبْعُوْنَ أَلْفًا

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহামারী হলো এমন এক শাস্তি যা বনী ইসরাইলের একটি সম্প্রদায়ের উপর প্রেরণ করা হয়েছিল।…আর এই মহামারীতে প্রতি ঘন্টায় উক্ত সম্প্রদায়ের ২০ হাজার লোক মারা যায়। তবে কেউ কেউ বলেছেন, উক্ত মহামারীতে প্রতি ঘন্টায় ঐ সম্প্রদায়ের ৭০ হাজার লোক মারা যায়।

অতএব উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, “করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে-” কাফির-মুশরিকের দোসর উলামায়ে সূ- চরম মিথ্যাবাদী, মুনাফিক, মৌলভীদের উক্ত বক্তব্য ডাহামিথ্যা বলেই প্রমাণিত হলো। আর মিথ্যাবাদীদের উপর স্বয়ং খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।

এ প্রসঙ্গে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ

অর্থ: “মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

আর মিথ্যাবাদিরাই মুনাফিক এ প্রসঙ্গে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وَاللهُ يَشْهَدُ اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَكَاذِبُوْنَ

অর্থ: “খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।” (পবিত্র সূরা আল মুনাফিকুন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)

আর মুনাফিকরা কাফির-মুশরিকদের চেয়েও সর্ব নিকৃষ্ট। যার কারণে মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনি¤œ স্তরে অবস্থান করবে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! এ সম্পর্কে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ

অর্থ: “নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১৪৫)

কাজেই এই সমস্ত ডাহা মিথ্যাবাদী এবং পেশাদার মিথ্যাবাদীরা যদি কোন গুজব রটিয়ে দেয়, অর্থাৎ আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ডাহা মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দেয়, তাহলে তাদের প্রচারিত গুজব যাচাই-বাছাই করতে হবে। যেমন, এ সম্পর্কে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا إِنْ جَآءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوْا أَنْ تُصِيْبُوْا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلٰى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِيْنَ

অর্থ: “হে ঈমানদাররা! যদি কোন ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তথা গুজব ছড়িয়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সম্প্রদায়ের উপর ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৬)

খোদায়ী আযাব-গজব ও মহামারীর মধ্যে পার্থক্য:

আযাব-গযব হলো, যিনি খলিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টির কারণে কাফিরদের উপর আপতিত অত্যন্ত কঠিন শাস্তি। যা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে বে-আদবী করার কারণে, উনার জাত পাক উনাদের বিরোধিতা করার কারণে, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতম শেয়ার উনাদের মান শান বিনষ্ট করার কারণে কাফির মুশরিকদের উপর নাযিল হয়।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস নামক মহাগযব কাফির-মুশরিকদের উপর যে কারণে আপতিত হয়েছে তা হলো:

** তারা প্রায়সময়ই নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছে, প্রদর্শনী করেছে এবং প্রায়ই করতো। নাউযুবিল্লাহ! প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে এবং করতো। নাউযুবিল্লাহ!

** সাথে সাথে পবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার খিলাফ নানা অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য প্রকাশ করেছে, করছে, বলেছে, লিখেছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

** ওরা পবিত্র মসজিদণ্ডমাদরাসা নির্মাণে বাধা দিয়েছে,

** পবিত্র মসজিদণ্ডমাদরাসা ভেঙ্গে ফেলেছে এবং মুসলমানদেরকে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে,

** পবিত্র নামায-রোযা, পর্দাসহ ইসলামী বিধি-বিধান পালনে বাধা দিয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফ পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

তাই এই কাফির-মুশরিকগুলো এখন করোনা ভাইরাস নামক মহা গযবে পড়ে রোগী ডাক্তারসহ সবগুলো মারা যাচ্ছে, অর্থাৎ জাহান্নামী হচ্ছে এবং হতেই থাকবে। ইনশাআল্লাহ! করোনা ভাইরাস হলো পবিত্র দ্বীন ইসলামবিদ্বেষী ও মুসলিমবিদ্বেষী চীন থেকে শুরু করে বিশ্বের সকল কাফিরগোষ্ঠির উপর নাযিল হওয়া অত্যন্ত কঠিন এক মহাগযব। এই মহাগযবে পড়ে বিশ্বের সকল কুফরী শক্তিগুলো আজ পরিপূর্ণ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবীর কোন শক্তিই তাদেরকে বাচাঁতে পারবে না।

তাদের ৩০০ বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বশেষ তারিখ আগামী ১৪৪৫ হিজরীর মধ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এবং সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে সারা পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দেয়ার কারণে করোনা ভাইরাস নামক মহাগযবসহ আরো অসংখ্য-অগণিত আযাব-গযব কাফিরগোষ্ঠির উপর একটার পর একটা আপতিত হতেই থাকবে। তারা নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত এই খোদায়ী গযব চলতেই থাকবে। ইনশাআল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ. مَا لَهٗ مِنْ دَافِعٍ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আপনার যিনি খলিক্ব মালিক রব উনার আযাব-গযব (যে কাওমের উপর পতিত) অবশ্যম্ভাবী তা প্রতিহত করার বা মুকাবিলা করার সাধ্য কারো নাই।” (পবিত্র সূরা তূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭- ৮)

অতএব, করোনা কস্মিনকালেও মহামারী নয়। বরং কাফিরদের উপর আপতিত খোদায়ী মহাগযব ও অত্যন্ত কঠিন আযাব।

 

আহমদ আরিফা, বরিশাল, বাকেরগঞ্জ

 

সুওয়াল: কিছু উলামায়ে সূ’ মিডিয়ায় প্রচার করেছে যে, “নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে”। তাদের এ মন্তব্য কতটুকু সত্য?

জাওয়াব: কাফির মুশরিকদের দোসর উলামায়ে সূ, পেশাদার মিথ্যাবাদী, মুনাফিক মৌলভীদের একথাটিও সম্পূর্ণ ডাহামিথ্যা, বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত। কারণ কোন্ কোন্ চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে বাংলাদেশের বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, তারা তাদের নাম ঠিকানা উল্লেখ করে নাই। বরং কাফির মুশরিকদের দোসর উলামায়ে সূ, পেশাদার মিথ্যাবাদী, মুনাফিক মৌলভীরা মহাসম্মানিত ও পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম উনার পরিপূর্ণ বিধি-বিধান উপেক্ষা করে তথাকথিত নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকদের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষদেরকে ধোকা দেয়ার, আতঙ্কিত করার, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার, সম্মানিত মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার মোক্ষম ক্ষেত্র সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। এই অজুহাতে গুযব ছড়িয়ে জনসাধারণকে আতঙ্কিত করেছে এবং মুসলমানদের ঈমান ও আক্বীদা নষ্ট করেছে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

তাছাড়া সম্মানিত শরীয়তে কোন্ কোন্ চিকিৎসক ও গবেষকদের কথা গ্রহণযোগ্য, আর কোন্ কোন্ চিকিৎসক ও গবেষকদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়, এ ইলিমটুকুও কাফির মুশরিকদের দোসর, উলামায়ে সূ, পেশাদার মিথ্যাবাদী, মুনাফিক মৌলভীদের নেই। কাজেই কাফির মুশরিকদের দোসর উলামায়ে সূ, পেশাদার মিথ্যাবাদী, মুনাফিক মৌলভীরা মহাসম্মানিত ও পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম উনার পরিপূর্ণ বিধি-বিধান উপেক্ষা করে তথাকথিত নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকদের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষদেরকে ধোকা দেয়ার, আতঙ্কিত করার, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার, সম্মানিত মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার মোক্ষম ক্ষেত্র সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, চিকিৎসক ও গবেষকদের পাঠ্যসূচিতে সম্মানিত দ্বীন-ইসলাম উনার আক্বীদাহ ও আমল সংক্রান্ত সঠিক ইলম অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে রোগকে ছোঁয়াচে বলে শিরক সম্বলিত একটি ভ্রান্ত আক্বীদাকে মানুষের মধ্যে প্রচার করে যাচ্ছে। অথচ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মতে, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোন প্রকার রোগ নেই। কিন্তু মুসলমান নামধারী অজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকরা কাফিরদের দেয়া পাঠ্যসূচি থেকে পড়াশুনা করে, কাফিরদের এই ভ্রান্ত আক্বীদাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে মুসলমানাদের ঈমান ও আক্বীদা নষ্ট করে যাচ্ছে। অতএব, মুসলমান নামধারী অজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকদের মাধ্যমে কাফিরদের এই ভ্রান্ত আক্বীদাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে মুসলমানাদের ঈমান ও আক্বীদা নষ্ট করাই হচ্ছে কাফিরদের সবচেয়ে বড় কুট কৌশল। কিন্তু আফ্সোস মুসলমান নামধারী অজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকদের জন্য যে, তারা আজ পর্যন্ত কাফিরদের এই কুট কৌশল উপলব্ধি করতে পারল না।

কাজেই “করোনা ভাইরাস” কাফিরদের প্রতি আপতিত খোদায়ী অত্যন্ত কঠিন আযাব-গজব। তাই মুসলমানদের জন্য এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অর্থাৎ “করোনা” মুসলমানদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ

মুহম্মদ বায়েজীদ, বরিশাল, বাকেরগঞ্জ

সুওয়াল: করোনার অজুহাতে উলামায়ে সূ’রা “যেভাবে সৌদি আরবের মক্কা মদিনায় নামায চলেছে সেভাবে আমাদের দেশেও জামাতে নামায আদায় করতে বলেছে।” তাদের এ বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াব: কাফির- মুশরিকদের দোসর উলামায়ে সূ, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক মৌলভীদের উল্লিখিত বক্তব্যটিও চরম জিহালতপুর্ণ ও গোমরাহীমূলক। কারণ সউদী আরব সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল নয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি, দেশ ও স্থান সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল নয়। বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল বা সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে অনুসরণীয় হচ্ছেন, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।

এ প্রসঙ্গে সর্বজনমান্য, বিশ্ববিখ্যাত উছূলে ফিক্বাহ উনার কিতাব থেকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো। যেমন কিতাবে উল্লেখ আছে-

اِعْلَمْ اَنَّ اُصُوْلَ الشَّرْعِ ثَلٰثَةٌ اَلْكِتَابُ وَالسُّنَّةُ وَاِجْمَاعُ الْاُمَّةِ وَالْاَصْلُ الرَّابِعُ الْقِيَاسُ

অর্থ: “জেনে রাখুন, নিশ্চয়ই সম্মানিত শরীয়ত উনার ভিত্তি হলো ৩টি (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, (৩) উম্মত উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ এবং (৪) চতুর্থটি হলো পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।” (আল মানার, নূরল আনওয়ার ফী শারহিল মানার) অনূরূপ উছূলে বাযদূবী ও উছুলশ শাশীতে উল্লেখ আছে।

“উছূলে ফিকাহ” নামক কিতাবের ৩নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَالْاَدِلَّةُ الشَّرْعِيَّةُ اَرْبَعَةٌ اَلْكِتَابُ وَالسُّنَّةُ وَالْاِجْمَاعُ وَالْقِيَاسُ

অর্থ: “ সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হলো ৪টি (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ অর্থাৎ ইখতিলাফ পূর্ণ মাসয়ালায় সম্মানিত মুজতাহিদ উনাদের একমত এবং (৪) চতুর্থটি হলো পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।”

উপরোক্ত সর্বজনমান্য, বিশ্ববিখ্যাত উছূলে ফিক্বাহ উনাদের কিতাব থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছেন ৪টি যথাঃ (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র হাদীছ শরীফ, (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ (৪) পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।

অতএব, কাফির মুশরিকদের দোসর উলামায়ে সূ, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছে যে সউদী আরব সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল! তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল বানোয়াট ও ডাহা মিথ্যা বলেই প্রমাণিত হলো। আর এটাই স্বভাবিক যে, মুসলমান নামধারী মুনাফিক ইহুদীর চরেরা চাকচিক্য ও ডাহা মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করবে। এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, কাট্টা কাফির ইহুদীর চর মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে সউদী আরবকে সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সউদী আরব কেন পৃথিবীর যেকোন দেশ বা ব্যক্তি তখনই দলীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে, যখন তাদের আমলগুলি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ সম্মত হবে। আর যে সকল বিষয় সমূহ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের খিলাফ হবে তা দলীল হিসেবে কখনোই গ্রহনযোগ্য হবে না বরং অবশ্যই প্রত্যাখ্যাত হবে।

উল্লেখ্য যে, সৌদি আরবে শরাবখানা, মদের বার, পতিতালয়, সিনেমা হল, সুদী লেন-দেনসহ অসংখ্য সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী কাজ জারী রয়েছে, তাই বলে কি তারা সেগুলোকেও জায়িয বলবে? এবং মুসলমানদেরকে অনুসরন করতে বলবে? নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই সউদী আরবে বা পৃথিবীর কোথাও জারি থাকলেই তা অনুসরণ করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে জায়িয প্রমাণিত না হবে। সুতরাং সৌদি আরবসহ পৃথিবীর সব সম্মানিত মসজিদে করোনা ভাইরাসের অজুহাতে জন সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কঠিন কুফরী করেছে। তাই এই ক্ষেত্রে সউদী আরবকে অনুসরণ করা কশ্মিনকালেও জায়িয হবে না। বরং অনুসরণ করাটা কাট্টা কুফরী ও হারাম হয়েছে। আর যারা কুফরী ও শেরেকী আমল করেছে তারা মুরতাদ হয়েছে। এখন তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে।

 

মুহম্মদ আবূ মূসা, নূরানীবাদ

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বিভিন্ন প্রকার চু-চেরা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল সহকারে জাওয়াব প্রদান করলে ঈমান-আক্বীদা হিফাযতে সহায়ক হবে।

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অবশ্যই ইলমে গইব উনার অধিকারী। এমনকি উনার যারা উম্মত উনার অন্তর্ভুক্ত অন্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং মনোনীত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও ইলমে গইব উনার অধিকারী।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের দ্বারাই প্রমাণিত যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ইলমে গইব উনার অধিকারী।

এ প্রসঙ্গে যিনি খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা জিন শরীফ উনার ২৬ ও ২৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

عَالِـمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ اَحَدًا اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ

অর্থ: তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আলিমুল গইব, তিনি উনার ইলমে গইব উনার মনোনীত রসূল ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ করেন না।

অর্থাৎ হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তিনি ইলমে গইব হাদিয়া করেছেন।

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন ও তাফসীরে বাগবী শরীফ” উনাদের মধ্যে উল্লেখ আছে যে-

يَعْنِىْ اِلَّا مَنْ يَّصْطَفِيْهِ لِرِسَالَتِه وَنَبُوَّتِه فَيُظْهِرُهٗ عَلَى مَا يَشَاءُ مِنَ الْغَيْبِ حَتّٰـى يَسْتَدِلَّ عَلٰى نُبُوَّتِه مِمَّا يُـخْبِرُ بِه مِنَ الْـمُغِيْبَاتِ

অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত ও সম্মানিত রিসালত উনার জন্য মনোনীত করেন, উনাকে যতখানি ইচ্ছা ইলমে গইব হাদিয়া করেন। উনার ইলমে গইব উনার সম্মানিত নুবুওওয়াতের প্রমাণ স্বরূপ এবং উনার সম্মানিত মু’জিযাও বটে। শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ অনুরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে সাবী ও তাফসীরে আযীযীতেও উল্লেখ আছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ১৭৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَـجْتَبِىْ مِنْ رُّسُلِه مَنْ يَّشَآءُ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার দায়িত্ব নয় যে, গইব সম্পর্কে তোমাদের (সাধারণ লোকদের) অবহিত করবেন। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল হিসেবে যাদেরকে মনোনীত করেছেন উনাদেরকে ইলমে গইব হাদিয়া করেন।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও মশহূর তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

وَلٰكِنَّ اللهَ يَجْتَبِىْ وَيَخْتَارُ مَنْ يَّشَاءُ فَيُطْلِعُ عَلٰى غَيْبِه كَذَا اَطْلَعَ النَّبِىَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى حَالِ الْمُنَافِقِيْنَ.

অর্থ: তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে (রসূল হিসেবে) মনোনীত করেন, উনাকে ইলমে গইব হাদিয়া করেন। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উক্তরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে বাইযাবী, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে জুমাল, তাফসীরে সাবীসহ আরো বহু নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ আছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আর-রহমান শরীফ উনার ১-৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

الرَّحْمٰنُ. عَلَّمَ الْقُرْانَ. خَلَقَ الْإِنْسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

অর্থ: দয়াময় মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে খাযিনে উল্লেখ আছে-

قِيْلَ الْـمُرَادُ بِالْاِنْسَانِ مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. اَلْبَيَانَ يَعْنِىْ بَيَانَ مَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ لِاَنَّهٗ يُنْبِئُ عَنْ خَبْرِ  الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّيْنِ

অর্থ: বলা হয়েছে যে, ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অর্থাৎ এখানে ইনসান অর্থ শুধু ইনসান নয় বরং অর্থ হচ্ছে ইনসানে কামিল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, সাহিবে ঈমান, সাহিবে পবিত্র কালিমা শরীফ তিনি। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইলিম মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। কেননা উনাকে পূর্ববর্তী-পরবর্তী এবং পরকাল সম্পর্কে সকল গইবি বিষয়ে ইলিম মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে। অর্থাৎ উনাকে সর্বপ্রকার ইলম কালাম ও নিয়ামত মুবারক হাদিয়া মুবারক করেই পাঠিয়েছেন।

স্মর্তব্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অবশ্যই এমনকি অন্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই যে ইলমে গইব উনার অধিকারী ছিলেন তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। যেমন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَأُنَبِّئُكُمْ بِـمَا تَأْكُلُوْنَ وَمَا تَدَّخِرُوْنَ فِيْ بُيُوْتِكُمْ

অর্থ: তোমরা কি খেয়েছ আর কি ঘরে রেখে এসেছ সবই আমি (হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) বলে দিতে পারি। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯)

হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার স্বপ্নের কথা শ্রবণ করার পর উনার অন্যান্য আওলাদ উনাদের কৌশলের কথা আগেই বলে দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلٰىۤ اِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُوْا لَكَ كَيْدًا

অর্থ: হে আমার আওলাদ! আপনার ভাইদের কাছে আপনার স্বপ্ন মুবারক বর্ণনা করবেন না। তাহলে উনারা (আপনার ব্যাপারে) কৌশল করবেন। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য-

قَالَ اَلَـمْ اَقُلْ لَكُمْ اِنِـّيۤ اَعْلَمُ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ

অর্থ: আমি কি তোমাদের বলিনি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমি এমন বিষয় জানি, যা তোমরা জান না? অর্থাৎ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তিনি জীবিত আছেন এবং তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনার সাথে মিলিত হবেন। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৬)

এখানে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার ইলমে গইব উনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব উনার বিষয়টি অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।

যেমন বুখারী শরীফ উনার بَدْءُ الْخَلْقِ  নামক অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتّٰـى دَخَلَ أَهْلُ الْـجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ، وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ، حَفِظَ ذٰلِكَ مَنْ حَفِظَ، وَنَسِيَهٗ مَنْ نَسِيَهٗ

অর্থ: হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান মুবারক করছিলেন। সেখানে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন। এমনকি বেহেশতবাসী ও দোযখবাসীদেরকে নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর বর্ণনা প্রদান করেন। যিনি ওইসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তো স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী শরীফ ১৫তম খন্ডের ১১০ নং পৃষ্ঠায় বলেন-

دَلَالَةُ عَلٰى اَنَّهٗ اَخْبَرَ فِىْ الْـمَجْلِسِ الْوَاحِدِ بِجَمِيْعِ اَحْوَالِ الْـمَخْلُوْقَاتِ مِنْ اِبْتِدَائِهَا اِلَى اِنْتَائِهَا

অর্থাৎ- এ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে বুঝা গেলো, একই অবস্থানে থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টিকুলের আদ্যোপান্ত যাবতীয় অবস্থার খবর দিয়েছিলেন।

মিশকাত শরীফ উনার معجزاة  অধ্যায়ে মুসলিম শরীফ উনার উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আমর ইবনে আখতাব আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে-

فَاَخْبَرَنَا بِـمَا هُوَ كَائِنٌ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَاَعْلَمُنَا اَحْفَظُنَا.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে সেই সমস্ত ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেন যেগুলো ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঘটতে থাকবে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলিম হলেন তিনি যিনি এসব বিষয়াদী সর্বাধিক স্মরণ রাখতে পেরেছেন।

মিশকাত শরীফেالفتن  অধ্যায়ে হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে-

مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُوْنُ فِىْ مَقَامِهﹺ اِلٰى قِيَامِ السَّاعَةِ اِلَّا حَدَّثَ بِه حَفِظَهٗ مَنْ حَفِظَهٗ وَنَسِيَهٗ مَنْ نَسِيَهٗ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সবকিছুর খবর দিয়েছেন। কোনো কিছুই বাদ দেননি। যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, যারা ভুলে যাওয়ার ভুলে গেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِي ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ لَقَدْ تَرَكَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  وَمَا يَـحْرِكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ فِى السَّمَاءِ اِلَّا ذَكَرَنَا مِنْهُ عِلْمًا

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের নিকট থেকে এ অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন যে, কোনো পাখি তার ডানা হেলানোর বর্ণনাও তিনি আমাদের নিকট বাকি রাখেননি।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيْبًا بَعْدَ الْعَصْرِ فَلَمْ يَدَعْ شَيْئًا يَكُوْنُ اِلٰى قِيَامِ السَّاعَةِ اِلَّا ذَكَرَهٗ حَفِظَهٗ مَنْ حَفِظَهٗ وَنَسِيَهٗ مَنْ نَسِيَه

অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত আছরের নামাযের পর দাঁড়ালেন আর খুতবা দিতে গিয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তা তিনি বর্ণনা করেন। যিনি ওইসব বিষয়ে স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণে রেখেছেন, আর যিনি স্মরণে রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।

এ বিষয়ে আরও অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১২৯তম সংখ্যা পাঠ করুন।

মুহম্মদ মশিউয যামান, বরিশাল

সুওয়াল: বাতিল ফিরক্বার লোকদের কারো কারো বক্তব্য হচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লিখতে ও পড়তে জানতেন না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

এ বিষয়ে দলীলসহ জাওয়াব দিয়ে ঈমান-আক্বীদা হিফাযত করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّـمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللهِ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছেই সমস্ত ইলিম মুবারক রয়েছে। (পবিত্র সূরা আহক্বাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩ এবং পবিত্র সূরা মূলক শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬)

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اُعْطِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ

অর্থ: আমাকে সমস্ত ইলিম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বয়ং খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত ইলিমই হাদিয়া মুবারক করেছেন। কোন ইলিমই উনাকে হাদিয়া মুবারক করতে বাকী রাখেননি। আর লিখতে ও পড়তে পারা এ দুটি বিষয়ই সম্মানিত ইলিম মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ উনার মধ্যে যিনি খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করে ইরশাদ মুবারক করেন-

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِىْ خَلَقَ. خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ. اِقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ. الَّذِىْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ. عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَـمْ يَعْلَمْ .

অর্থ: আপনার রব তায়ালা উনার নাম মুবারকে পাঠ করুন যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক্ব থেকে। পাঠ করুন (আপনার রব উনার নাম মুবারকে) কারণ আপনার রব সম্মানিত, দাতা, দয়ালু অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম বা লিখনি দ্বারা। মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তারা জানতো না। (পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৫)

উক্ত ১নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِىْ خَلَقَ.

উনার মধ্যে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আর ৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

اَلَّذِىْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ

উনার মধ্যে লেখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক অর্থাৎ আমার অজুদ মুবারক সৃষ্টি করেন। উনার থেকে সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করা হয়। অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনি তখনও নবী ছিলেন যখন হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটি ও পানিতে এবং রূহে ও জিসিম মুবারকে অবস্থান করছিলেন। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও সেই অজুদ মুবারক অর্থাৎ নূর মুবারক উনার এক অংশ মুবারক দিয়ে সৃষ্টি করা হয়। নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী আলাইহিমুস উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবেই যমীনে আগমন করেন। তবে উনার নুবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক উনার কথা প্রকাশ করা হয় যখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে দুনিয়ায় আগমনের বয়স মুবারক চল্লিশ হয়। নুবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক প্রকাশের পূর্বে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিছু ঘটনা ঘটান যা বান্দা ও উম্মতের জন্য ইবরত, নছীহত ও শিক্ষণীয়।

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক যখন তেত্রিশ থেকে চৌত্রিশ তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে হেরা গুহা বা জাবালে নূরে যেয়ে মুরাকাবা-মুশাহাদা করতেন। সেখানে একাধারা কয়েকদিন পর্যন্ত অবস্থান মুবারক করতেন। কখনও কখনও সাথে খাদ্য মুবারকও নিয়ে যেতেন। আবার কখনও খাদ্য মুবারক শেষ হয়ে গেলে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম স্বয়ং তিনি নিজেই খাদ্য মুবারক সেখানে পৌঁছে দিতেন। অতঃপর যখন দুনিয়াবী বয়স মুবারক চল্লিশ হলো তখন মহান  আল্লাহ পাক তিনি নুবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক উনার কথা প্রকাশার্থে ‘পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ’ উনার প্রথম পাঁচখানা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।

এই পবিত্র সূরা শরীফ নাযিলের তারতীব সম্পর্কে বলা হয়, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে একখানা জান্নাতি কাপড় মুবারকে পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ উনার প্রথম পাঁচখানা পবিত্র আয়াত শরীফ লিখিত আকারে এনে পেশ করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আরজ করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘ইক্বরা’ অর্থাৎ দয়া করে পাঠ করুন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জবাবে বললেন, ‘ওয়ামা আনা বিক্বারিয়িন’ অর্থাৎ (মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীত আপনার কথায়) আমি পাঠ করতে পারি না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে এসেছেন সেটা প্রমাণ করার জন্য মুয়ানাকা করলেন। অতঃপর আবারো বললেন, আপনি দয়া করে পাঠ করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবারও জবাবে বললেন, অর্থাৎ (মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীত আপনার কথায়) আমি পাঠ করতে পারি না। এভাবে তিনবার মুয়ানাকা করে তিনবারই বললেন। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠ করতে বলা হলে তখন তিনি পাঠ করলেন একাধারা পাঁচখানা পবিত্র আয়াত শরীফ।

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার ওহী মুবারক ব্যতীত কারো কথা অনুযায়ী কোন কাজ করেন না, এমনকি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কথা অনুযায়ীও নয়।

অনেকে বলে থাকে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ওহী মুবারক নাযিলের শুরুতে মুয়ানাকার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নাকি ফায়িয দিয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! আসলে এ কথাটা এভাবে বলা শুদ্ধ হবে না। এর সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলিম মুবারক দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।

কাজেই, নতুন করে কোন ইলিম মুবারক দেয়ার প্রশ্নই আসতে পারে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলেন, আমি আপনাকে কিতাবহীন পেয়েছি অতঃপর কিতাব দিয়েছি। তাই কিতাব দেয়ার জন্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে ওহী মুবারক নাযিল করা হয়েছে। আর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত এবং খাদিমের অন্তর্ভুক্ত। উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীম-তাকরীম মুবারক করার কারণেই অর্থাৎ ওসীলাতেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِنَّـمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি মুআল্লিম হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ: সমস্ত ইলিম উনার যিনি মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কায়িনাতবাসীর প্রতি শিক্ষা দানের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুআল্লিম তথা শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত জিন-ইনসান এবং সমস্ত সৃষ্টি সকলের সম্মানিত নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর সকলেই উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত এবং ছাত্রের অন্তর্ভুক্ত।

এখন যারা উম্মত ও ছাত্র তারা লেখা পড়া জানে আর তাদের যিনি সম্মানিত নবী ও রসূল এবং সম্মানিত শিক্ষক তিনি লেখা-পড়া জানেন না। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! এ ধরণের বক্তব্য নিরেট পাগল, চরম জাহিল, গুমরাহ ও কাফির ছাড়া আর কেউ প্রদান করতে পারে না।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ وَهَبِ بْنِ مُنَبَّهٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَرَاتُ اِحْدَى وَّسَبْعِيْنَ كِتَابًا فَوَجَدْتُّ فِىْ جَمِيْعِهَا اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يُعْطِ جَمِيْعَ النَّاسِ مِنْ بَدَءِ الدُّنْيَا اِلٰى اِنْقَضَائِهَا مِنَ الْعَقْلِ فِىْ جَنْبِ عَمَلِ مُـحَمّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَّا كَحَبَّةِ رَمْلٍ مِنْ بَيْنِ رِمَالٍ جَمِيْعَ الدُّنْيَا وَاِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  اَرْجَحُ النَّاسِ عَقْلًا وَاَفْضَلَهُمْ رَأْيًا

অর্থ:  হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমি (আসমানী) ৭১ টি কিতাব পাঠ করেছি। সবগুলো পাঠ করে বুঝতে পেরেছি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে সমাপ্তিকাল পর্যন্ত সকল মানুষকে যে জ্ঞান-বুদ্ধি দান করা হয়েছে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলিম মুবারক উনার তুলনায় এমন যেমন বিশ্বের সমস্ত বালুকণা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলিম মুবারক আর বালুকণাসমূহের মধ্যে একটি বালুকণা হচ্ছে সবার ইলিম। নিঃসন্দেহে নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী-বুদ্ধিমান ও সর্বাধিক বিচার-বিবেচনাশীল। (খছায়িছুল কুবরা: ১/১১৯ পৃষ্ঠা, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৪/২৬ পৃষ্ঠা, তারিখে দামেস্ক ৩/২৪২ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাবিয়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইলিম মুবারক সম্পর্কে কিছুটা মত প্রকাশ করেছেন মাত্র। প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও সম্মানিত ইলম মুবারক হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টিজগতের সকলের কল্পনাতীত পরিমাণ অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও সম্মানিত ইলিম মুবারক উনার পরিমাপ করার ক্ষমতা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যতীত আর কারোই নেই।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও সম্মানিত ইলম মুবারক উনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র

হাদীছ শরীফ থেকে

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الرَّحْمٰنُ. عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ. خَلَقَ الْاِنْسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

অর্থ: দয়াময় মহান আল্লাহ পাক তিনি (উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে) পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং (উনাকে) বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন। (পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৪)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে মা‘আলিমুত তানযীল ও তাফসীরে হুসাইনীতে বলা হয়েছে-

خَلَقَ الْاِنْسَانَ اَىْ سَيِّدَنَا مُـحَمَّدًا صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ يَعْنِىْ بَيَانَ مَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি ইনসান তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান তথা পূর্বে যা হয়েছে এবং পরে যা হবে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

তাফসীরে খাযিনে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে-

قِيْلَ اَرَادَ بِالْاِنْسَانِ سَيِّدَنَا مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ يَعْنِىْ بَيَانَ مَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ لِاَنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِىٌّ عَنْ اَخْبَرِ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّيْنِ

অর্থ: বর্ণিত হয়েছে যে, (উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে) ইনসান বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। উনাকে পুর্ববর্তী ও পরবর্তী যা হবে সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এবং ক্বিয়ামতের দিন হওয়া পর্যন্ত সবকিছু অবহিত করেছেন।

আল্লামা ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘তাফসীরে রূহুল বায়ানে’ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করেন-

وَعَلَّمَ نَبِيَّنَا صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْقُرْاَنُ وَاِسْرَارُ الْاُلُوْهِيَّةِ كَمَا قَالَ وَعَلَّمَكَ مَا لَـمْ تَكُنْ تَعْلَمْ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেই পবিত্র কুরআন শরীফ ও স্বীয় রব তায়ালা উনার রহস্যাবলী সম্বলিত ইলিম মুবারক হাদিয়া করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনার রব তায়ালা তিনি যাবতীয় অজানা বিষয় আপনাকে জানিয়েছেন।

অনুরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে মাদারিক ও তাফসীরে সাবীতেও উল্লেখ আছে।

ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

عَنْ حَضْرَتْ اِبنِ عَبَّاسِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَاِبْنِ كَيْسَانَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَلْاِنْسَانُ هٰهُنَا يُرَادُ بِه سَيِّدُنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْبَيَانُ الْحَلَالُ مِنَ الْحَرَامِ وَالْـهُدٰى مِنَ الضَّلَالِ وَقِيْلَ مَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ لِاَنَّهٗ بَيَّنَ  عَنِ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ وَيَوْمِ الدِّيْنِ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও ইমাম কায়সান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেন, ইনসান শব্দ মুবারক দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। আর বয়ান দ্বারা হারাম থেকে হালাল এবং পথভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতকে এবং এখানে এটাও বর্ণনায় এসেছে, যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে। সৃষ্টির শুরু থেকে বিচার দিবস হাশর পর্যন্ত এমনকি অনন্তকাল পর্যন্ত সবকিছুরই বর্ণনা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে।

আল্লামা ইমাম খরপুস্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শরহে কাছীদায়ে বুরদায় উল্লেখ করেন-

وَوَاقِعُوْنَ لَدَيْهِ عِنْدَ حَدِّهِمْ وَفِىْ حَدِيْثٍ يَرْوِىْ عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّهٗ كَانَ يَكْتُبُ بَيْنَ يَدَىِ النَّبِىِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهٗ اَلْقِ الدَّوَاةَ، وَحَرِّفِ الْقَلَمَ، وَاَقِمِ الْبَاءَ، وَفَرِّقِ السِّيْنَ، وَلَا تُعَوِّرِ الْمِيْمَ، مَعَ اَنَّهٗ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكْتُبْ وَلَمْ يَقْرَءْ مِنْ كِتَابِ الْاَوَّلِيْنَ

অর্থ: হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনেই লিখার কাজ করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বলেছিলেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলমকে ঘুরাও, বা অক্ষরকে সোজা করো, সীন অক্ষরটিকে পৃথক করো এবং মীম অক্ষরকে বাঁকা করো। অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লিখার পদ্ধতি সৃষ্টির কারো কাছ থেকে কোনো দিন শিক্ষা করেননি। এবং পূর্ববর্তীদের কোনো কিতাবও তিনি পাঠ করেননি। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সমস্ত ইলম মুবারকসহ যাবতীয় বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন।

বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাফসীরে রূহুল  বায়ানে পবিত্র সূরা আনকাবূত শরীফ উনার ৪৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন-

وَكَانَ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُ الْـخُطُوْطَ وَيُـخْبِرُ عَنْهَا

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লিখার পদ্ধতি তা’লীম দিতেন তথা লিখার তারতীব শিক্ষা দিতেন এবং সে বিষয়েও জানিয়ে দিতেন।

মিশকাতুল মাছাবীহ শরীফ বাবুল ওফাতুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধ্যায়ে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের বরাতে একখানা দীর্ঘ হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى  عَنْهُ قَالَ لَـمَّا حَضَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِىْ الْبَيْتِ رِجَالٌ فَيْهِمْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ‌ ‌وَسَلَّمَ هَلُمُّوْا أَكْتُبُ لَكُمْ كِتَاباً  لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدَهٗ  فَقَالَ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَدْ غَلَبَ عَلَيْهِ الْوَجْعُ، وَعِنْدَكُمُ الْقُرْاٰنُ حَسْبُكُمْ كِتَابُ اللهِ، فَاَخْتَلَفَ أَهْلُ الْبَيْتِ وَاَخْتَصَمُوْا فَمِنْهُمْ مَنْ يَّقُوْلُ قَرِّبُوْا يَكْتُبُ لَكُمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمِنْهُمْ مَنْ يَّقُوْلُ مَا قَالَ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় নিকটবর্তী হওয়ায় উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উপস্থিত ছিলেন। উনাদের মধ্যে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনিও ছিলেন। এক সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আসুন, আমি আপনাদের জন্য একটি কিতাব লিখে দিয়ে যাই, যেন আপনারা এরপর কখনো হিদায়েত থেকে বিচ্যুত না হন। তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশের সময় কষ্ট দেয়া ঠিক নয়। আর আপনাদের নিকট পবিত্র কুরআন শরীফ রয়েছে। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ-ই আপনাদের জন্য যথেষ্ট। বিষয়টি নিয়ে হুজরা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে ইখতিলাফ হলো ফলে উনাদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন যে, কাগজ-কলম আনুন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেনো আপনাদের জন্য কিছু লিখে যান। আবার কেউ কেউ সে কথাই বললেন, যা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন।

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, আপনারা খাতা-কলম নিয়ে আসুন, আমি আপনাদের লিখে দিয়ে যাই। আর এটা বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ উনাদের বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেননি যে, আমি বলি তোমরা লিখ। বরং তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কাগজ-কলম নিয়ে আসুন, আমি লিখে দিয়ে যাই।

এখন উক্ত বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীলসহ অন্যান্য ক্বিতয়ী বা অকাট্ট দলীলসমূহ উপেক্ষা করে যারা মনগড়া কথা বলবে, নিঃসন্দেহে তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত।

মুহম্মদ আব্দুল হাই, ফরিদপুর

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাত মাঝে হাযির-নাযির; এ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের কি আক্বীদা?

জাওয়াব: আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জিসিম ও ছূরত-এ দুটির কোনো একটি হিসেবে হাযির ও নাযির নন। বরং তিনি ছিফত অর্থাৎ ইলম ও কুদরত মুবারক উনাদের দ্বারা কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত অর্থাৎ ইলম ও মু’জিযা শরীফ দ্বারা এবং ছিফত অর্থাৎ সম্মানিত নূর মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর এ বিষয়ে নক্বলী এবং আক্বলী অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ১০৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَاۤ أَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ

অর্থ: ‘আমি (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনাকে  সারা কায়িনাতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ১৫৬ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ

অর্থ: আমার সম্মানিত রহমত মুবারক সমস্ত কিছুকে বেষ্টন করে আছেন।

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পুরো সৃষ্টি জগতের জন্য সম্মানিত মুবারক রহমত। (সুবহানাল্লাহ) আর সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে সারা কায়িনাতকে বেষ্টন করে আছেন। কায়িনাত মাঝে রহমত শূন্য কোন স্থান নেই। তাই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাযিরী ও নাযিরী ব্যতিত কোন স্থান, কাল, পাত্র, ব্যক্তিও নেই। তাছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ উনার ৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّا ۤاَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا

 অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।’

জানা আবশ্যক, যিনি সাক্ষ্য দিবেন উনার জন্য যেরূপ হাযির বা উপস্থিত থাকা শর্ত, তদ্রƒপ নাযির বা দেখাও শর্ত। এ ছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قِيْلَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَلَاةَ الْـمُصَلِّيْنَ  عَلَيْكَ مِـمَّنْ غَابَ عَنْكَ وَمنْ يَّاْتِىْ بَعْدَكَ مَا حَالُـهُمَا عِنْدَكَ فَقَالَ اَسْمعُ صَلَاةَ اَهْلِ مُـحَبَّتِىْ وَ اَعْرِفُهُمْ تُعْرَضُ عَلَىَّ صَلَاةَ غَيْرِهِمْ عَرَضًا.

অর্থ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আরজু করা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যারা বাহ্যিকভাবে সরাসরি ছোহবত মুবারক হতে অনুপস্থিত এবং যারা আপনি দুনিয়া হতে পর্দা মুবারক করার পর দুনিয়াতে আসবে এবং তাদের পবিত্র ছলাত শরীফ এবং পবিত্র সালাম শরীফ শরীফ পাঠের বিষয়টি আপনার নিকট কিরুপ? তিনি  ইরশাদ মুবারক করেন, খালিছ মুহব্বতের সাথে পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠকারীগণ উনাদের পবিত্র ছলাত শরীফ আমি সরাসরি শুনি এবং উনাদেরকে আমি খুব ভাল ভাবে চিনে থাকি। আর গাফিলতির সাথে ছলাত পাঠকারীদের বিষয়টিও আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়। (দালায়িলুল খইরাত)

অর্থাৎ, যে বা যারা যখন, যেখান থেকে, যেভাবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে দরুদ শরীফ পাঠ করুক না কেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম তিনি সবই শুনেন এবং দেখেন। এ ছাড়া ‘বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ’ উনাদের মধ্যে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّـمَا اَنَا قَاسِمٌ وَاللهُ يُعْطِىْ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম বণ্টনকারী।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল-মাখলূক্বাতের যাকে যতটুকু ইচ্ছা তাকে ততটুকু নিয়ামত বণ্টন করেন। সুবহানাল্লাহ! উল্লেখ্য, যিনি কুল-মাখলুক্বাতের জন্য নিয়ামত  বণ্টনকারী; তিনি যদি কুল-মাখলূক্বাতের কাছে হাযির বা উপস্থিত না থাকেন এবং তাদেরকে নাযির বা দেখে না থাকেন, তাহলে তিনি তাদের মাঝে কিভাবে নিয়ামত বণ্টন করবেন? কাজেই কায়িনাতের সমস্ত সৃষ্টির জন্য তিনি যেহেতু নিয়ামত বণ্টনকারী, সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখে না- সবকিছুই উনার নিকট হাযির ও নাযির।

হযরত ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত নঈম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ قَدْ رَفَعَ لِىَ الدُّنْيَا فَاَنَا اَنْظُرُ اِلَيْهَا وَاِلٰى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَاَنَّـمَا اَنْظُرُ اِلٰى كَفِّىْ هٰذِه

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি, যেরূপ আমার হাত মুবারক উনার তালু মুবারক দেখে থাকি।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা কায়িনাতে সম্মানিত রহমত মুবারক, সম্মানিত স্বাক্ষী এবং সম্মানিত বন্টনকারী হিসেবে সারা মাখলুকাতে হাযির ও নাযির। আর এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারীরা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যেহেতু পবিত্র জিসিম ও পবিত্র ছূরত মুবারক রয়েছে, সেহেতু তিনি যে জিসিম মুবারকে পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করছেন উনার ইখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেই জিসিম মুবারক নিয়ে কোথাও হাযির হবেন না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ওই জিসিম মুবারক নিয়ে রওযা শরীফ থেকে উঠলে ক্বিয়ামত হয়ে যাবে। তাই তিনি উক্ত জিসিম মুবারক উনার অনুরূপ জিসিম মুবারক ও ছূরত মুবারক অর্থাৎ মিছালী ছূরত মুবারক-এ কায়িনাত মাঝে হাযির ও নাযির থাকেন, যে কারণে উনার আশিকগণ উনাকে স্বপ্নে, মুরাক্বাবা-মুশাহাদার হালতে, এমনকি জাগ্রত অবস্থার মধ্যেও দেখে থাকেন এবং কথোপকথনও করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৯৪তম সংখ্যা পাঠ করুন।

মুহম্মদ ফয়জুর রহমান খান রাসেখ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: করোনাভাইরাস সহ ধ্বংসযজ্ঞ রোগ ও আযাব গযব কেন নাযিল হয়?

জাওয়াব: আযাব গযব বলতে সাধারণভাবে বুঝায় মানুষের উপর আপতিত মহা দুর্যোগ, দুর্গতি, কঠিন রোগবালাই, ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদী। তবে এসব মানুষের অপকর্ম ও পাপাচারের কারণেই মূলত নাযিল হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ

অর্থ: স্থলে ও পানিতে যত বিপর্যয় বালা মুছিবত ছড়িয়ে পড়ে তা কেবল মানুষের কৃতকর্মেরই ফল। মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (পবিত্র সূরা রুম শরীফ পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)

অর্থাৎ মানুষের অন্যায় আচরণের কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার অবাধ্যতা এবং নাফরমানির দরুণই আজ পৃথিবীর সর্বত্র অশান্তি, আযাব-গযব বিরাজ করছে এবং চতুর্দিকে বিপদের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ﻋَﻦْ حَضْرَتْ اِﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ رَﺿِﻲَ اللهُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ عَنْهُ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ رَﺳُﻮْﻝُ اللهِ ﺻَﻠَّﻰ اللهُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ وَﺳَﻠَّﻢَ ﺧَﻤْﺲٌ ﺑِﺨَﻤْﺲٍ، ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ  ﻳَﺎ رَﺳُﻮْﻝَ اللهِ وَﻣَﺎ ﺧَﻤْﺲٌ ﺑِﺨَﻤْﺲٍ؟ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﻧَﻘَﺾَ ﻗَﻮْمٌ ﺍﻟْﻌَﻬْﺪَ اِﻻَّ ﺳُﻠِّﻂَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻋَﺪُوُّﻫُﻢْ .وَﻣَﺎ ﺣَﻜَﻤُﻮْﺍ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻣَﺎ اَﻧْﺰَﻝَ اللهُ ﺇﻻَّ ﻓَﺸَﺎ ﻓِﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﻔَﻘْﺮُ وَﻻَ ﻇَﻬَﺮَتْ ﻓِﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺣِﺸَﺔُ اِﻻَّ ﻓَﺸَﺎ ﻓِﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﻤَﻮْتُ وَﻻَ ﻃَﻔَّﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤِﻜْﻴَﺎﻝَ اِلَّا ﻣُﻨِﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻨَّﺒَﺎتَ واُﺧِﺬُوْﺍ ﺑِﺎﻟﺴِّﻨِﻴْﻦَ وَﻻَ ﻣَﻨَﻌُﻮْﺍ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ اِلَّا ﺣُﺒِﺲَ ﻋَﻨْﻬُﻢُ ﺍﻟْﻘَﻄْﺮُ

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পাঁচটি বস্তু পাঁচটি বস্তুর কারণে হয়ে থাকে’। কোনো জাতি ওয়াদা ভঙ্গ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের উপরে তাদের শত্রুকে প্রবল করে দেন। মহান আল্লাহ পাক উনার নাজিলকৃত বিধানের বাইরে বিধান দিলে তাদের মধ্যে অভাব অনটন বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে বেপর্দা-বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। কেউ মাপে বা ওজনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কোন সম্প্রদায় যাকাত দেয়া বন্ধ করলে তাদের প্রতি বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয় অর্থাৎ অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি দেখা দেয়।’ (দায়লামী শরীফ, মু’জামুল কবীর)।

উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফে আজাব গযব নাযিলের কারণ হিসেবে পাঁচটি বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। তবে বিস্তারিতভাবে বললে বলতে হয় সমাজে আজাব, গযব ও মহামারী আসার কারণ হচ্ছে-

      পাপের সীমা ছাড়িয়ে গেলে।

      বেদ্বীনি কার্যকলাপের ফলে।

      ব্যভিচার বৃদ্ধি পেলে।

      অন্যায় কাজে বাধা না দেয়ার ফলে।

      অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে।

      দুনিয়াপ্রীতি বৃদ্ধি পেলে।

      ধনীরা কৃপণ হলে।

      যখন কোনো জাতির মধ্যে মাপ-জোপে কারচুপি করা হয়।

      হালাল রিযিক তালাশ বাদ দিয়ে হারাম রিযি তালাশ করলে। অন্যের ধন-সম্পত্তির দিকে বদ নজর, ন্যায়বিচার না করে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে, যুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, মিথ্যাচার, যিনা-ব্যভিচার, মুনাফিকী, দম্ভ প্রদর্শন ও ছল-চাতুরী করলে, অন্যের ধন-সম্পত্তি ও অধিকার হরণ করলে অর্থাৎ ইত্যাদি কুকর্ম থেকে থেকে বিরত না থাকলে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে শাস্তি প্রদান করেন। তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, দ্রব্য সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পায়, কষ্ট-পরিশ্রম বেড়ে যায় এবং কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অত্যাচার উৎপীড়ন চাপিয়ে দেয়া হয়।

আরো যেসব কারণে বর্তমান করোনার মত ভয়ারহ আযাব গযব আসছে, তার কতিপয় কারণ উল্লেখ না করলেই নয়। যথা:-

      বিভিন্ন কাফির রাষ্ট্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান মুবারক নিয়ে চূ-চেরা করা। নাঊযুবিল্লাহ!

      কাফিরদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা ও টানিয়ে রাখা। নাঊযুবিল্লাহ!

      নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিয়ে সিনেমা নির্মাণ, অশ্লীল মন্তব্য করা, শান-মান নিয়ে চূ-চেরা করা ইত্যাদী। নাউযুবিল্লাহ!

      ছলে বলে কৌশলে চীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা। নাঊযুবিল্লাহ!

      চীনে সংখ্যালঘু উইঘূর মুসলমানদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো। নাঊযুবিল্লাহ!

      চীনে পবিত্র কুরআন শরীফ পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

      বিভিন্ন দেশে পবিত্র কুরআন শরীফ পোড়ানো ও দিবস পালন। নাঊযুবিল্লাহ!

      কাফিরদের দেশে পবিত্র দ্বীন ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দেয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

      বিভিন্ন কাফির মুশরিকদের দেশে মুসলমানদের শালীনতার আবশ্যকতামূলক পোশাক, বোরকা, হিজাব নিষিদ্ধ করা এবং বোরকা-হিজাব পড়তে বাধা দেয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

      মুসলামানদেরকে নামাজ, রোযা, হজ্জ তথা দ্বীনী বিধানাবলী পালন করতে বাধা দেয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

      বিভিন্ন দেশে আযান নিষিদ্ধ, মসজিদ বন্ধ করা, জামায়াতে নামায বন্ধ করা। নাঊযুবিল্লাহ!

      বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর বর্বর পৈশাচিকতার পর গুলি করে শহীদ করে দেয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

      ভারতের মোদি সরকার কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের পথ বেছে নেয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

      কাশ্মীর ভূখন্ডে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানকার মুসলমানদের উপর নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, গুম-সহ অসহনীয় নির্যাতন চালানো। নাঊযুবিল্লাহ!

      ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নাগরিক তালিকা প্রণয়নের নামে মুসলিম নিধনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

      ভারতসহ বিভিন্ন মুশরিকদেশে গরু যবাইকে কেন্দ্র করে মুসলমানদেরকে দিয়ে শহীদ করা। নাঊযুবিল্লাহ!

      নিউজিলেন্ডের মসজিদে আল-নূর ও লিনউড মসজিদে নামাজরত ৫০ জন মুসল্লিকে শহীদ করা। নাঊযুবিল্লাহ!

      অস্ট্রেলীয়ার রাজপথে পবিত্র কুরআন শরীফে আগুন ধরিয়ে দেয়া এবং এ চরম কুফরী কাজের প্রতিবাদকারীদের নির্যাতন করা। নাউযুবিল্লাহ।

      বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু, মুশরিক ও বেদ্বীনরা ফেইসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কটুক্তি করা। নাঊযুবিল্লাহ!

এখানে মাত্র কতিপয় সীমালঙ্ঘনের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও হাজারো কোটি সীমালঙ্ঘনের বিষয় রয়েছে, যেগুলো সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শান মানের পরিপন্থী বিষয়। যার কারণেই দুর্ভিক্ষ, শীলাবৃষ্টি, মহামারী, পানিতে নিমজ্জন, অগ্নিকান্ড, বন্যা, এডিস মশা, ডেঙ্গু, পঙ্গপাল, করোনাভাইরাস এসব গযব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছে। নাউযুবিল্লাহ!

এসব অবাধ্যরা ধৃষ্টতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে বলেই নেমে এসেছে খোদায়ী আযাব ও গযব। শক্তি-সামর্থে দুর্বল মযলুম মুসলমানরা চরম নির্যাতনের মাঝেও মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভুলে যাননি। নিজেদের ঈমান নিয়ে অবিচল থাকেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। জালিমের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে ফরিয়াদ করতে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা মজলুমের ফরিয়াদ প্রত্যাখ্যান করেন না। তিনি যালিমদের উপর পাঠিয়ে দিলেন মরণব্যাধি করোনাভাইরাস। সুবহানাল্লাহ!

খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيْدٌ

অর্থাৎ নিশ্চয়ই আপনার রব তায়ালা উনার পাকড়াও বড়ই কঠিন। (পবিত্র সূরা বুরুজ শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَكَذٰلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرٰى وَهِيَ ظٰلِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهٗۤ أَلِيْمٌ شَدِيْدٌ.

অর্থাৎ “আর এরূপই উনার পাকড়াও; যখন তিনি কোন যালিম জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন। নিঃসন্দেহে উনার পাকড়াও অত্যন্ত যাতনাদায়ক কঠিন। (পবিত্র সূরা হূদ শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ১০২)

কাজেই আযাব, গযব, মহামারি এসব আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসব কারো জন্য গযব, কারো জন্য পরীক্ষা, আর কারো জন্য লা’নত ও ধ্বংসের কারণ। নাউযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আযাব গযব, করোনাভাইরাস সহ যাবতীয় মহামারি, দুর্যোগ থেকে ঈমানদার ও মুসলমানদের হিফাযত করুন। আমীন!

 

মুহম্মদ আব্দুর রহমান মাছূম, বগুড়া

 

সুওয়াল: করোনাভাইরাস নামক গযব ও যেকোন মহামারি দেখা দিলে মুসলমানদের করণীয় কি?

জওয়াব: মহামারী দেখা দিলে করণীয়: যখন কোনো জনপদে অপরিচিত মহামারী দেখা দেয় তখন মানুষের জন্য সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দিক-নিদের্শনা হলো- সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক তাকদীরের উপর খুশী থাকা। ছওয়াবের আশা নিয়ে ধৈর্য ধারণ করা। মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে মহামারি বা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উছীলা করে দুআ করা এবং সাহায্য চাওয়া ইত্যাদী। বর্তমানে করোনা ভাইরাস বা যেকোন মহামারি নিয়ে অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে এটা নিয়ে নানা ধরণের তথ্য প্রচার করছে। যা নিয়ে দেশে অনেকেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে মুজাদ্দিদে আযম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বিশেষ নির্দেশনা মুবারক দান করেছেন । সুবহানাল্লাহ!

করোনাভাইরাস একটা গযব। এই গযব থেকে মুক্তি দান ও বাঁচার জন্য এবং সঙ্কটসঙ্কুল অবস্থা বিদূরিত করার জন্য তিনি শাহী ফরমান জারি করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠীই মুসলমান। মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ রহমত মুবারক মূলত মুসলমানদের জন্যই। তাই মুসলমানদের উচিত-

১. বেশি বেশি পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা। ২. নিয়মিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ গ্রহণ করা। যেমন- সিরকা, মধু, খেজুর, কালোজিরা, নাবীয, তালবীনা ইত্যাদি। ৩. বেশী বেশী দান ছদকা করা। ৪. সিরকা নামক অর্থাৎ সর্বপ্রকার সুন্নতী খাবার খাওয়া।

সাথে সাথে সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করতে হবে। হারাম কাজ ছেড়ে দিতে হবে। গান-বাজনা সম্পূর্ণ পরিহার করে হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, কাছীদা শরীফ শুনতে হবে। অযথা খেল-তামাশা পরিহার করে নেক আমল করতে হবে। সবাইকে ওলীআল্লাহ উনাদের মূখী হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকারীর প্রতি এবং যে স্থানে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, সেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ রহমত মুবারক নাযিল হয়ে থাকে। আর যেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক নাযিল হয় সেখানে কোন ধরণের আযাব-গযব আসতে পারে না।’

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ. اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ.

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্য এবং ছলাত দ্বারা। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ  )

মুফাসসিরগণ বলেন, এ পবিত্র আয়াত শরীফে ছবর বা ধৈর্য দ্বারা সম্মানিত দ্বীন ইসলামে ইস্তিক্বামত থাকার কথা বলা হয়েছে। আর ছলাত দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ, উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ এবং পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ বিপদণ্ডআপদ, বালা-মুছীবত, রোগ-ব্যাধি, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অভাব-অনটন, ইত্যাদিসহ সর্বপ্রকার সমস্যা হতে মুক্তি পেতে হলে প্রথমত, সম্মানিত দ্বীন ইসলামে ইস্তিক্বামত হতে হবে। আর দ্বীন ইসলামে দৃঢ়চিত্ত হতে হলে পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনের কোন বিকল্প নেই। বিধর্মী ও বিদয়াতীদের অনুসরণ তরক করে পবিত্র সুন্নত মুবারকে পুরোপুরি সুসজ্জিত করাই হলো দ্বীন ইসলামে ইস্তিক্বামত হওয়া। দ্বিতীয়ত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি প্রকাশ করার মাধ্যমে দায়িমীভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার মাধ্যমে খালিছ মু’মিন মুত্তাক্বী হতে হবে। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য ও গাইবী মদদ নাযিল হবে। এছাড়া অন্য কোন উপায় বা অবলম্বন নেই।

মূলত মুসলমানকে মহান আল্লাহ পাক উনার আযাব ও গযব ও মহামারি থেকে বাচতে হলে প্রকৃত তাওবা -ইস্তিগফারের বিকল্প নেই।

এক্ষেত্রে সরকারী ব্যাবস্থাপনায় সকল মসজিদণ্ড মাদরাসার উদ্যোগে সারা বাংলাদেশের মুসলমান তওবার দিকে এগিয়ে আসলে সম্ভাব্য সকল আযাব ও গযব সম্পূর্ণরূপে সরে যাবে। ইনশাআল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার আযাব গযব মহামারি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সবাইকে ফিরে আসতে হবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দিকে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার দিকে; আসতে হবে সত্যের দিকে। সমস্ত অপকর্ম ছেড়ে আমাদেরকে হাক্বীক্বী মু’মিন হতে হবে।

উল্লেখ্য যে, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি কাফিরদের প্রতি নাযিলকৃত আযাব-গযবকে কেন্দ্র করে তিনটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন যে, কাফিরদের জন্য তিনটি ফায়সালা রয়েছে। এই তিনটি ফায়সালার একটি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।

১.    খালিছ মুসলমান হতে হবে।

২.    মুসলমান উনাদের গোলাম হতে হবে; জিজিয়া কর দিতে হবে।

৩.    জিহাদ করতে হবে।

কাফেররা যেহেতু প্রথম দুইটি গ্রহণ করছে না তাই কাফেরদের সাথে জিহাদ ব্যাতিত আর কোনো ফায়সালা নেই। যিনি খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ  شَانِئَكَ  هُوَ الْأَبْتَرُ

অর্থাৎ নিশ্চয়ই আপনার শত্রুরা নির্বংশ। (পবিত্র সূরা কাউছার শরীফ)

মূলত কথা হচ্ছে, করোনা একটা মহাগযব। এটা কাফিরদের জন্য। এ থেকে কাফিররা মুক্তি পাবে না। আর মুসলমানরা যদি মহামারী এ বিপদণ্ডআপদ থেকে সুরক্ষিত থাকতে চায়, তাহলে তাদেরকে সুন্নত মুবারক পালন করত বেশি বেশি সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে হবে। তাহলেই কামিয়াবী, মুক্তি ও নাজাত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মুসলমান পুরুষ মহিলা উনাদেরকে উপরোক্ত আমলসমূহ করে সমস্ত আযাব গযব ও মহামারি থেকে হিফাযত থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব