সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৭২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ জাকির হুসাইন, সউদী আরব

সুওয়াল:  আমরা আগে থেকেই জেনে আসছি যে, রজব মাসের ২৭ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রাত। কিন্তু বর্তমানে কেউ কেউ টিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে প্রচার করছে যে, মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আরো প্রচার করছে যে, ২৭শে রজবের রাতেই মি’রাজ শরীফ হয়েছে এ কথা সঠিক নয়। নাউযুবিল্লাহ!

অতএব, এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য অনুরোধ করছি।

জাওয়াব: মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) রাতেই হয়েছে। এটাই মশহূর বা প্রসিদ্ধ, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত। এর বিপরীত মতগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

মি’রাজ শরীফ উনার মশহূর, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। তাদের কোন কথাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, মুসলমানগণের ঈমান-আমল ধ্বংস করার ক্ষেত্রে মুসলমানদের যারা চিহ্নিত শত্রু- ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী ইত্যাদি তাবৎ কাফির-মুশরিক তারা পরোক্ষভাবে কাজ করে আর তাদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। এই উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরা কাফির-মুশরিকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলামনগণের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব ধ্বংস করার লক্ষ্যে হরাম টিভি চ্যানেলসহ নানা চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, জায়িযকে নাজায়িয,সুন্নতকে বিদয়াত, বিদয়াতকে সুন্নত বলে প্রচার করে থাকে। অনুরূপভাবে তারা মুসলমানদের ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিনসমূহের তারিখ নিয়েও সমাজে বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টি করছে; উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানগণ যেনো ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিনসমূহের ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-মুনাজাত করা থেকে বিরত থাকে এবং সেই রাত ও দিনসমূহের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়।

যেমন তারা রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস আসলেই প্রচার করে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। নাউযুবিল্লাহ!

তদ্রƒপ এখন তারা প্রচার করছে, মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। নাঊযুবিল্লাহ!

অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরা বোঝাতে চাচ্ছে যে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়। নাঊযুবিল্লাহ!

কিন্তু সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো, যে কোন বিষয়ে মতভেদ হতে পারে বা থাকতে পারে। কারণ হক্ব তালাশীগণ যে বিষয়টিকে হক হিসেবে গ্রহণ করেন, যারা নাহক্ব বা বাতিলপন্থী তারা কি সে বিষয়টিকে হক্ব হিসেবে গ্রহণ করবে? কখনই না। তাহলে তো এমনিতেই মতভেদ সৃষ্টি হয়ে গেল এবং তাই হচ্ছে।

এছাড়া হক্বের জন্য হক্ব তালাশীগণও বিভিন্ন বিষয়ে ইখতিলাফ করেছেন, ইখতিলাফ করেছেন বলে সেসব বিষয় বাদ দিতে হবে তা নয়। বরং এক্ষেত্রে শরীয়তের সুস্পষ্ট সামাধান রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِـي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ۖ فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِـيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰـهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ ۚ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّأَحْسَنُ تَأْوِيْلًا

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছেন উনাদের আনুগত্য বা অনুসরণ করো। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে (উলিল আমরগণের মধ্যে) মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যেই উলিল আমর মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বেশি অনুগত বা যার মতের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল-আদিল্লাহ বেশি রয়েছে উনাকে বা উনার মতকে অনুসরণ করবে। যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। এটাই কল্যাণকর এবং তা’বীল বা ব্যাখ্যার দিক দিয়ে উত্তম।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫৯)

কাজেই, কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাঔাইলাতুল তখন যে মতটি অত্যধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবে, সেটিই আমল করতে হবে। মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে; এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলদের উক্তি ব্যতীত কিছু নয়। যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ বিপরীত ও কুফরীর শামিল।

স্মরণীয় যে, পবিত্র মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) রাতে হয়েছে এটাই মশহূর, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক মত। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে রূহুল বয়ান ৫ম জিলদ্ ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَهِيَ لَيْلَةُ سَبْعٍ وَّعِشْرِيْنَ مِنْ رَّجَبَ لَيْلَةُ الْاِثْنَيْنِ وَعَلَيْهِ عَمَلُ النَّاسِ قَالُوْا اِنَّه  عَلَيْهِ السَّلَامُ وُلِدَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ بُعِثَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَاُسْرِيَ بِهٖ لَيْلَةَ الْاِثْنَيْنِ وَخَرَجَ مِنْ مَّكَّةَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَدَخَلَ الْـمَدِيْنَةَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَمَاتَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ

অর্থ: “রাতটি ছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ, সোমবার শরীফ।” এর উপরই বিশ্বের সকল ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের আমল। উনারা বলেন, “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার), উনার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রকাশ পেয়েছে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার), ইসরা ও মি’রাজ শরীফ হয়েছে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার), হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ থেকে বের হয়েছেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার), পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেছেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) এবং তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।”

পাক ভারত উপমহাদেশে পবিত্র হাদীছ শরীফের প্রচার-প্রসারকারী হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ’ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-

اِعْلَمْ أَنَّه  قَدْ اِشْتَهَرَ فِيْمَا بَيْنَ النَّاسِ بِدِيَارِ الْعَرَبِ أَنَّ مِعْرَاجَه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لِسَبْعٍ وَّعِشْرِيْنَ مِنْ رَّجَبَ

অর্থ: “জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশসমূহের লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই।” সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার’ কিতাবুছ ছলাত অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে-

وَجَزَمَ الْـحَافِظُ عَبْدُ الغَنِيِّ الْـمَقْدِسِيُّ فِيْ سِيْرَتِهٖ بِأَنَّه لَيْلَةُ السَّابِعِ وَالْعِشْرِيْنَ مِنْ رَّجَبَ وَعَلَيْهِ عَمَلُ اَهْلِ الْاَمْصَارِ.

অর্থ: হযরত ইমাম হাফিয আব্দুল গণী মাক্বদিসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সীরাতগ্রন্থে চূড়ান্ত মতামত প্রকাশ করেন যে, মি’রাজ শরীফ হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ এবং এর উপরই সমগ্র দেশবাসী উনাদের আমল। এছাড়াও আরো নির্ভরযোগ্য অনেক কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, মি’রাজ শরীফ রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে হয়েছে।

কাজেই, যারা টিভিসহ নানা চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায় ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে মি’রাজ শরীফ উনার তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী।

সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীদের ওয়াজ শোনা, তাদের ফতওয়া মানা, তাদেরকে অনুসরণ করা হারাম আর তাদের ছোহবত থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে হলে ২৫১ ও ২৬০তম সংখ্যা পাঠ করুন।

মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার দিনটিতে রোযা রাখার ব্যাপারে কোন বর্ণনা আছে কি?

জাওয়াব: হ্যাঁ, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার দিনে রোযা রাখার বিষয়ে সরাসরি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার থেকে বর্ণনা বা দলীল রয়েছে। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, ফক্বীহ ও যুগশ্রেষ্ঠ আলিম, যিনি এই উপমহাদেশে পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসারকারী, যিনি শতাধিক কিতাবের সম্মানিত মুছান্নিফ বা প্রণেতা, যিনি প্রত্যহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভে ধন্য হতেন এবং যিনি সুপ্রসিদ্ধ ক্বদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সুপ্রসিদ্ধ “মা-ছাবাতা বিস সুন্নাহ” নামক কিতাবে বর্ণনা করেন-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَامَ يَوْمَ سَبْعِ وَّعِشْرِيْنَ مِنْ رَّجَبَ كَتَبَ اللهُ لَه صِيَامَ سِتِّيْنَ شَهْرًا

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মরফূ’ সূত্রে বর্ণনা করেন, সাইয়িদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র রজব মাস উনার ২৭ তারিখ দিনে রোযা রাখবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার আমলনামায় ৬০ মাস রোযার ছওয়াব লিপিবদ্ধ করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

এছাড়া উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা আরো অনেক কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ফাওয়ায়িদু ইবনে আখি মীমিদ দাক্কাক, তাখরীজু আহাদীছু ইহইয়া, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, সীরাতুল হালবিয়াহ, তানযীহুশ শারীয়াতিল মরফূআহ, আততুবছিরাতু লি ইবনিল জাওযী, তারীখুল খমীস, তারীখু দিমাস্ক ইত্যাদি।

মুহম্মদ সোহেল, দুবাই

সুওয়াল: লাইলাতুল বরাতকে কেন্দ্র করে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষেরা আতশবাজি করে থাকে। সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এটা জায়িয আছে কি-না?

জাওয়াব: লাইলাতুল বরাতে আতশবাজি করা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়। প্রকৃতপক্ষে আতশবাজি হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথার অন্তর্ভুক্ত।

আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)

এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্তানের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। “হিন্দুস্তানে একজন জবরদস্ত ওলীআল্লাহ ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কেমন আছেন? তখন সেই ওলীআল্লাহ তিনি জাওয়াবে বললেন, আপাতত আমি ভালোই আছি; কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন স্বপ্নদ্রষ্টা ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাকে আপনার সেই কঠিন অবস্থা সম্পর্কে বলবেন? তিনি জবাব দিলেন, অবশ্যই বলবো। কারণ এতে যমীনবাসীদের জন্য শক্ত ইবরত ও নছীহত রয়েছে। এরপর বলা শুরু করলেন, আমার ইন্তিকালের পর আমাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে পেশ করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বললেন, হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ! তোমরা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছো? হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা বললেন, আয় আল্লাহ পাক!  আমরা উনাকে আপনার খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য নিয়ে এসেছি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তার হাশর-নশর তো হিন্দুদের সাথে হওয়ার কথা। বিছালপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ তিনি বলেন, একথা শুনে আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললাম, আয় বারে ইলাহী! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো মুসলমান ছিলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, যেহেতু আপনি পূজা করেছেন তাই আপনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথেই হবে। আমি বললাম, আয় আল্লাহ পাক, আপনার কসম! পূজা করা তো দূরের কথা আমি জীবনে কোনো দিন মন্দিরের আশপাশ দিয়েও হাঁটিনি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনি সেদিনের কথা স্মরণ করুন, যেদিন হিন্দুস্তানে হোলি পূজা হচ্ছিলো। আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। আপনার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নিচে, আশে-পাশে সমস্ত গাছপালা, পশুপাখি, কীট-পতঙ্গ, বাড়ি-ঘর, সবকিছুতেই রঙ দেয়া হয়েছিলো। এমতাবস্থায় আপনার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিলো যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন আপনি পান চিবাচ্ছিলেন, আপনি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙিন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলেন, হে গর্দভ! তোমাকে তো এই হোলি পূজার দিনে কেউ রঙ দেয়নি তাই আমি তোমাকে রঙ দিয়ে দিলাম। (নাউযুবিল্লাহ) এতে কি আপনার পূজা করা হয়নি? আপনি কি জানেন না যে, আমার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন-

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.

“যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” সুতরাং আপনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়ারই কথা। এটা শুনে বিছালপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অনেক কান্না-কাটি, রোনাজারি করে বললেন, বারে ইলাহী! আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। কেউ আমাকে বিষয়টি বুঝিয়েও দেয়নি। আর এ বিষয়ে আমার অন্তরও সাড়া দেয়নি। তাই আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি বারে ইলাহী। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনার অন্যান্য আমলের কারণে আপনাকে ক্ষমা করা  হলো।”

কাজেই, মুসলমানদের জন্য শুধু লাইলাতুল বরাতকেই কেন্দ্র করে নয় বরং কোন অবস্থাতেই আতশবাজি কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন বদদ্বীনদের কোন আমলের অনুসরণ করা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়।

{দলীলসমূহ  (১) আহমদ শরীফ (২) আবূ দাউদ শরীফ (৩) বযলুল মাজহুদ শরীফ (৪) আউনুল মা’বূদ শরীফ (৫) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ শরীফ (৬) গ্রীক জাতির ইতিহাস (৭) হিন্দু ধর্মের ইতিহাস ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আলী আজগর, খাগড়াছড়ি

সুওয়াল: লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতে কি আমল করতে হবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: লাইলাতুল বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ‏اِنَّ اللهَ لَيَطَّلِعُ فِيْ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِـجَمِيْعِ خَلْقِهٖ اِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ

অর্থ: “হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলূকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এ ব্যতিত বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍّ كَرَّمَ  اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُوْمُوْا لَيْلَهَا وَصُوْمُوْا يَوْمَهَا‏ فَاِنَّ اللهَ يَنْزِلُ فِيْهَا لِغُرُوْبِ الشَّمْسِ اِلَـى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُوْلُ اَلَا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَلَه اَلاَ مُسْتَرْزِقٌ فَاَرْزُقَه  أَلاَ مُبْتَلًى فَاُعَافِيَه  أَلاَ كَذَا أَلاَ كَذَا حَتّٰى يَطْلُعَ الْفَجْرُ

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দে                        গী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি দান করবেন।

বরাতের রাত্রিতে যদিও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মাধ্যমে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে যেসব ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-

বরাতের নামায

লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।

ছলাতুত তাসবীহ নামায

অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।

তাহাজ্জুদ নামায

অতঃপর তাহাজ্জুদ নামায পড়বে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য হাছিল হয়।

পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত

পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।

পবিত্র মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ

পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

যিকির-আযকার

যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।

কবর যিয়ারত

কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে।

দান-ছদকা

গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়।

হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো

উল্লেখ্য, লাইলাতুল বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা শরীয়তে নাজায়িয নয়। লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের  দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।

ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলোনা তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন উনারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

বিশেষ করে মুসাফিরগণ লাইলাতুল বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন উনাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যাবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়।

আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু উনারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন।

এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই।

এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে রছম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَعَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ! أَفْشُوا السَّلَامَ وَصِلُوا الْأَرْحَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْـجَنَّةَ بِسَلَامٍ

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ)

তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো লাইলাতুল বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো সতর্ক থাকতে হবে যে, খাদ্য বিতরণ যেনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।

দোয়া-ইস্তিগফার

মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করবে, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দাহর সমস্ত গুণাহ-খতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অর্থাৎ লাইলাতুল বরাত উনার বারাকাত, ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।

স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলতঃ মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, হাদীছ শরীফে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-

حَتّٰى يَطْلُعَ الْفَجْرُ

অর্থ: “ফজর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি দোয়া কবুল করেন।”

অতএব, সকলের উচিৎ হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা।

{দলীলসমূহ: (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) মাযহারী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তিরমিযী, (৮) ইবনে মাজাহ, (৯) আহমদ, (১০) রযীন, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) লুময়াত, (১৫) ত্বীবী, (১৬) ত্বালীক,  (১৭) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}

হাফিয মুহম্মদ মুশাররফ হুসাইন, নরসিংদী

সুওয়াল:  “ছলাতুত্ তাসবীহ” নামাযের ফযীলত ও নিয়ম জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: “ছলাতুত্ তাসবীহ” নামাযের বহু ফযীলত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِلْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ‏ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ يَا عَبَّاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ! يَا عَمَّاهُ! أَلاَ أُعْطِيْكَ اَلَا أَمْنَحُكَ أَلَا اُخْبِرُكَ أَلَا أَفْعَلُ بِكَ عَشْرَ خِصَالٍ إِذَا أَنْتَ فَعَلْتَ ذٰلِكَ غَفَرَ اللهُ لَكَ ذَنْبَكَ أَوَّلَه  وَاٰخِرَه  وَقَدِيْـمَه  وَحَدِيْثَه وَخَطَأَه وَعَمَدَه وَصَغِيْرَه  وَكَبِيْرَه  وَسِرَّه وَعَلاَنِيَتَه  اَنْ تُصَلِّىَ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ … اِنِ اسْتَطَعْتَ اَنْ تُصَلِّيْهَا فِـىْ كُلِّ يَوْمٍ مَرَّةً فَافْعَلْ فَإِنْ لَّـمْ تَفْعَلْ فَفِيْ كُلِّ جُـمُعَةٍ مَرَّةً فَإِنْ لَّـمْ تَفْعَلْ فَفِىْ كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً فَإِنْ لَّـمْ تَفْعَلْ فَفِيْ عُمُرِكَ مَرَّةً .

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (আমার পিতা) হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেন, ‘হে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবোনা, আমি কি আপনাকে দান করবোনা, আমি কি আপনাকে বলবোনা, আমি কি আপনার সাথে করবোনা দশটি কাজ? (অর্থাৎ শিক্ষা দিবোনা দশটি তাস্বীহ) যখন আপনি তা আমল করবেন মহান আল্লাহ পাক আপনার প্রথম গুণাহ, শেষ গুণাহ, পুরাতন গুণাহ, নতুন গুণাহ, অনিচ্ছাকৃত গুণাহ, ইচ্ছাকৃত গুণাহ, ছোট গুণাহ, বড় গুণাহ, গোপন গুণাহ, প্রকাশ্য গুণাহ ইত্যাদি সকল গুণাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি (ছলাতুত তাসবীহ উনার) চার রাকায়াত নামায পড়বেন। …. যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে বৎসরে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে অন্ততঃ একবার এ নামায আপনি পড়বেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, বায়হাকী ফী দাওয়াতিল কবীর শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

আর ‘ছলাতুত্ তাসবীহ’ নামায উনার নিয়ম সম্পর্কে কিতাবে দু’টি মত উল্লেখ আছে। একটি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী এবং অপরটি শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী।

এখানে আমাদের হানাফী মাযহাব উনার নিয়মটিই উল্লেখ করা হলো-

প্রথমতঃ এই বলে নিয়ত করবে যে, “আমি ছলাতুত তাসবীহ উনার চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।”

অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে ছানা পাঠ করবে, ছানা পাঠ করে সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বেই ১৫বার নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করবে-

سُبْحَانَ اللهِ وَالْـحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ

উচ্চারণ: “সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”

অতঃপর সূরা- ক্বিরায়াত পাঠ করে রুকূতে যাওয়ার পূর্বে ১০বার, রুকূতে গিয়ে রুকূর তাসবীহ পাঠ করার পর ১০বার, রুকূ থেকে উঠে (ক্বওমায়) সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১০বার, অতঃপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০বার, সিজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে (জলসায়) বসে ১০বার, অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার অর্থাৎ এরূপভাবে প্রতি রাকায়াতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ  পাঠ করবে।

অতঃপর পরবর্তী রাকায়াতের জন্য দাঁড়াবে। দাঁড়িয়ে প্রথমেই ১৫বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তারপর প্রথম রাকায়াতের মতোই উক্ত তাসবীহগুলো আদায় করবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।

উল্লেখ্য, ছলাতুত তাসবীহ নামায একা একা আদায় করতে হবে। জামায়াতে আদায় করা যাবে না। এ নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

জরুরী মাসয়ালা

উল্লেখ্য, ছলাতুত তাসবীহ নামায আদায়কালীন হাতে তাসবীহ নিয়ে গণনা করা মাকরূহ। অঙ্গুল টিপে টিপে তাসবীহগুলো গণনা করতে হবে। কোন স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ক্বওমায় ও জলসায় ১০ বারের বেশী তাসবীহ আদায় করা যাবেনা। যেমন, সূরা-ক্বিরায়াত পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরায়াতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকূতে আদায় করতে হবে। রুকূতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে নির্ধারিত তাসবীহ আদায় করার পর আদায় করতে হবে।

{দলীলসমূহ – (১) আবূ দাউদ শরীফ, (২) ইবনে মাজাহ শরীফ্, (৩) বায়হাক্বী শরীফ, (৪) তিরমিযী শরীফ, (৫) মিশকাত শরীফ, (৬) বযলুল মাজহুদ শরীফ, (৭) আওনুল মা’বুদ শরীফ, (৮) তুহ্ফাতুল আহওয়াযী শরীফ, (৯) মা’য়ারিফুস্ সুনান শরীফ, (১০) মিরকাত শরীফ, (১১) লুময়াত শরীফ, (১২) আশয়াতুল লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী শরীফ, (১৪) তা’লীকুছ ছবীহ্ শরীফ, (১৫) মুজাহিরে হক্ব শরীফ, (১৬) ফতহুল ক্বাদীর শরীফ, (১৭) বাহরুর রায়েক শরীফ, (১৮) মারাকিউল ফালাহ্ শরীফ, (১৯) আলমগীরী, (২০) শরহে বিক্বায়া শরীফ, (২১) হিদায়া শরীফ, (২২) আইনুল হিদায়া শরীফ ইত্যাদি}

মুহম্মদ সুমন আলী, ফতুল্লা, নূরাণীগঞ্জ

সুওয়াল: সম্প্রতি এক বক্তার বক্তব্য হচ্ছে, ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন লক্বব ব্যবহার করা শিরক। আর রহমতুল্লিল আলামীন লক্বব ব্যবহার করা কুফর। তার উক্ত বক্তব্য কতটুকু শরীয়ত সম্মত? জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: উক্ত বক্তার বক্তব্য মোটেও শরীয়ত সম্মত নয়। বরং তার বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। সে তার বক্তব্যের স্বপক্ষে আরবায়ে আদিল্লাহ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার চারখানা দলীল পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা’ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্য থেকে কোন একখানা দলীলও পেশ করতে পারেনি। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِيْنَ

অর্থ: তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ করো। অর্থাৎ তোমাদের বক্তব্য, লিখনী, আক্বীদা, আমল ইত্যাদি যে কোন বিষয় সঠিক বলে প্রমান করার জন্য দলীল পেশ করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১, পবিত্র সূরা নমল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)

কাজেই, সুওয়ালে উল্লেখিত ব্যক্তি লক্বব মুবারক দুখানা ব্যবহার করার বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীলসমূহ থেকে কোন দলীলই পেশ করেনি বা পেশ করতে পারেনি, তাই তার বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

উপরন্তু উক্ত ব্যক্তি তার বক্তব্য দ্বারা নিজের মূর্খতা ও জিহালতীই প্রকাশ করেছে। নাউযুবিল্লাহ!

বিশ্ববিখ্যাত ওলী ও ফার্সী কবি হযরত শায়েখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি যথার্থই বলেছেন-

تا مرد سخن نہ گوفتہ باشد  +عیب وہنرش نہ ہوفتہ باشد

অর্থ: কোন ব্যক্তি কথা না বলা পর্যন্ত তার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ পায় না।

মূলতঃ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিষয়সমূহ কেবল যুক্তি দিয়ে বুঝা ও বুঝানো যাবে না। তা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দলীলসমূহ দ্বারা বুঝতে হবে। অন্যথায় ইবলীসের মতো পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে হবে। ইবলীস সাধারণ আলিম, আবিদ ও ওয়ায়িজ ছিল না। বরং সে মুয়াল্লিমুল মালাকূত ছিল। কিন্তু সে যখন মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক উনার বিপরীতে ব্যক্তিগত যুক্তি প্রদর্শন করতঃ যমীনে প্রেরিত প্রথম নবী ও রসূল হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করতে অস্বীকার করে তখন সে বিভ্রান্ত ও চির লা’নতগ্রস্ত হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ! তার যুক্তি ছিল সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন মাটির দ্বারা সৃষ্টি, আর সে হচ্ছে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি। আগুন মাটির উপরে থাকে। তাই সে কি করে উনাকে সিজদা করতে পারে। নাউযুবিল্লাহ! আসলে সুওয়ালে উল্লেখিত ব্যক্তির প্রথম উদাহরণ হচ্ছে ইবলীসের মতো। আর দ্বিতীয় উদাহরণ হচ্ছে আবূ জেহেলের মতো। আবূ জেহেল হক জানার পর, বুঝার পর ও দেখার পরেও তা সে গ্রহণ করেনি। বরং আজীবন বিরোধিতা করেছে। ফলশ্রুতিতে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার নাম আবুল হাকাম (জ্ঞানীর পিতা) পরিবর্তন করে আবূ জাহল্ তথা আবূ জেহেল (মূর্খের পিতা)  বলে সম্বোধন করেন। তখন থেকেই এ নামেই সে পরিচিত হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!

অতএব, না জেনে এবং দলীল প্রমাণ ব্যতিরেকে কোন কথা বলা, ফতওয়া দেয়া, আমল করা, আক্বীদা পোষণ করা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তো সুযোগ রেখেছেন যে, কেউ কোন বিষয় না জানলে সে যেন যারা জানেন এবং বিশেষ করে যারা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালা উনাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاسْأَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ

অর্থ: যদি তোমরা না জান, তাহলে আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালা উনাদের জিজ্ঞাসা করো। (পবিত্র সূরা নহল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩, পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের ভিত্তিতে যিনি যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে উনার সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক, মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলীউল্লাহ, যামানার মুজতাহিদ ও  ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলে বাইতে রসূল, আওলাদে রসূল, নূরে মুকাররম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম  ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সার্বিক বিষয়ে ইলিম শিক্ষা দানের লক্ষ্যে মাসয়ালা ও ফতওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

সেই ধারাবাহিকতায় সুওয়ালে উল্লেখিত ব্যক্তির দু’টি বক্তব্য বা বিষয়ের মধ্যে একটির জাওয়াব ইতোপূর্বেই যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৫৮তম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন সংক্রান্ত বিষয়। আর যে বিষয়টির জাওয়াব প্রকাশিত হয়নি তা হচ্ছে রহমাতুল্লিল আলামীন লক্বব মুবারক সংক্রান্ত বিষয়। উক্ত লক্বব মুবারক দুখানা ব্যবহারের স্বপক্ষে দলীল পেশ করার আগে অতীব পরিচিতি প্রসিদ্ধ ও ব্যবহৃত একখানা লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হচ্ছে যা জানলে ও বুঝলে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে সুওয়ালে উল্লিখিত লক্বব মুবারক দুখানাসহ অন্য সকল লক্বব মুবারক ব্যবহারের বিষয়টি জানা ও বুঝা সহজ ও সম্ভব হবে। উক্ত লক্বব মুবারকখানা হচ্ছে মাওলানা। অত্র সম্মানিত লক্বব মুবারকখানা যিনি খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই নিজের শান মুবারকে ব্যবহার করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদার বান্দাদেরকে বলেছেন যে, তোমরা এ বলে দোয়া করো-

رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهٖ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَـمْنَا ۚ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

অর্থ: আমাদের মহান রব! আমাদের দ্বারা এমন বোঝা বহন করাবেন না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি রহম করুন। আপনিই আমাদের মাওলা। সুতরাং কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮৬)

অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক উনার গুণবাচক নাম মুবারক সমূহের মধ্যে একটি অন্যতম নাম মুবারক মাওলানা। অনুরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও ছিফত বা গুণবাচক নাম মুবারক তথা লক্বব মুবারক হচ্ছেন মাওলানা। যেমন পবিত্র দুরূদ শরীফ উনার মধ্যে আমরা পড়ে থাকি-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি খাছ রহমত মুবারক বর্ষণ করুন আমাদের যিনি সাইয়্যিদ, মাওলা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি।

একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম সদস্য এবং স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি,  আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকেও মাওলানা লক্বব মুবারক হাদিয়া করেছেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ زَيْدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَوْلَاهُ

অর্থ: হযরত যায়িদ বিন আরক্বাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি যার মাওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিও তার মাওলা! (তিরমিযী শরীফ, আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)

অতঃপর ওয়ারিছে নবী, উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী উনারাও মাওলানা লক্বব বা উপাধি মুবারক ব্যবহার করেন। যেমন মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ।

অতএব, মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত মাওলানা ছিফত মুবারক এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত মাওলানা ছিফত তথা লক্বব বা উপাধি মুবারক আবার মাওলানা রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ অনেকেরই শানে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ উনাদের প্রতি কেউই কখনো শিরক ও কুফরের ফতওয়া প্রদান করেনি।

সুতরাং প্রতিভাত হলো, বান্দাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফত মুবারক ধারণ, গ্রহণ বা ব্যবহার করা শিরক নয়, অনুরূপ উম্মতের জন্য তাদের যিনি সম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও ছিফত তথা লক্বব মুবারক ধারণ করা, গ্রহণ করা বা ব্যবহার করাও কুফর নয়। বরং জায়িয রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

صِبْغَةَ اللهِ ۖ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللهِ صِبْغَةً

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার রঙে রঞ্জিত হও। মহান আল্লাহ পাক উনার চেয়ে উত্তম রঞ্জনকারী আর কে রয়েছেন? (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৮)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

تَـخَلَّقُوْا بِاَخْلَاقِ اللهِ

অর্থ : “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার চরিত্রে চরিত্রবান হও।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, তাফসীরে রাযী, রূহুল মাআনী ইত্যাদি)

অর্থাৎ ওলীআল্লাহগণ উনারা উনাদের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত। উনারা যা চান মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটাই দেন। উনারা যেটা হতে বলেন, সেটাই হয়। আর তখনই উক্ত ওলীআল্লাহ উনাকে “ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন” লক্বব মুবারকে সম্বোধন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, একবার হযরত বাহলুল দানা রহমতুল্লাহি আলাইহি নামক একজন মজ্জুব ওলীউল্লাহ। তিনি উনার সম্মানিত পীর ছাহিব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! আপনি কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বললেন, খুব ভাল। এরূপ ভাল যে, আমি যা চাই সেটাই হয়। আর আমি যেটা চাই না সেটা হয়না।” সুবহানাল্লাহ!

মুরীদ সবিনয়ে আরজ করলেন। হুযূর! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। এটা কেমন হাল? আপনি যা চান তাই হয়, আর যা চান না, তা হয় না? দয়া করে এর হাক্বীক্বত বর্ণনা করবেন কি?

তখন পীর ছাহিব ক্বিবলা তিনি বললেন, মূলতঃ আমি আমার মতকে মহান আল্লাহ পাক উনার মত মুবারক উনার সাথে মিলিয়ে দিয়েছি অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান আমি সেটাই চাই। আর সেটাই হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যেটা চাননা, আমিও সেটা চাইনা। কাজেই সেটা হয় না। সুবহানাল্লাহ!

মূলত: ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’ صَاحِبُ (ছাহিব) অর্থ সঙ্গী, বন্ধু, মালিক, কর্তা, ওয়ালা ইত্যাদি। আর كُنْ (কুন) অর্থ হও এবং فَيَكُوْنُ অর্থ অতঃপর হয়ে যায়। যেমন পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ উনার ৮২নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَّقُوْلَ لَه  كُنْ فَيَكُوْنُ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা মুবারক করেন তখন সেটাকে বলেন كُنْ হও فَيَكُوْنُ অতঃপর সেটা হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

এ আয়াত শরীফ উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক বা ক্ষমতা বুঝানো হয়েছে। একইভাবে সমস্ত মাখলূক্বাত যে উনার অনুগত সে বিষয়টিও ফুটে উঠেছে। (তাফসীরে বায়যাবী, কুরতুবী, তাবারী, লুবাব, মাযহারী)

পারিভাষিক অর্থে ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’ লক্বব মুবারক দ্বারা ঐ সকল হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সম্বোধন  করা হয়, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের চরম-পরম নৈকট্যপ্রাপ্ত। যাঁদের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার كُنْ فَيَكُوْنُ (কুন ফাইয়াকূন) ছিফত বা গুণ মুবারক উনার বিকাশ ঘটে। উনারা যা চান মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সেটাই দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ تَعَالٰى قَالَ لَا يَزَالُ عَبْدِيْ يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتّٰى أُحِبَّه، فَإِذَا أَحْبَبْتُه، كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِيْ يَسْمَعُ بِهٖ وَبَصَرَهُ الَّذِيْ يُبْصِرُ بِهٖ وَيَدَهُ الَّتِيْ يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِيْ يَـمْشِيْ بِـهَا، وَإِنْ سَأَلَنِيْ لَأُعْطِيَنَّه وَلَئِنْ اِسْتَعَاذَنِيْ لَأُعِيْذَنَّه

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে আমার এত নৈকট্য মুবারক লাভ করেন যে, আমি উনাকে মুহব্বত করি। আর আমি যখন উনাকে মুহব্বত করি, তখন আমি উনার কান হই, তিনি আমার কুদরতী কান মুবারক-এ শ্রবণ করেন। আমি উনার চক্ষু হই, তিনি আমার কুদরতী চোখ মুবারক-এ দেখেন। আমি উনার যবান হই, তিনি আমার কুদরতী যবান মুবারক-এ কথা বলেন। আমি উনার হাত হই, তিনি আমার কুদরতী হাত মুবারক-এ ধরেন। আমি উনার পা হই, তিনি আমার কুদরতী পা মুবারক-এ চলেন। যদি তিনি আমার কাছে কিছু চান, আমি উনাকে তা সাথে সাথে দিয়ে দেই। আর যদি তিনি আমার কাছে কোনো সাহায্য তলব করেন, আমি উনাকে তা পুরা করে দেই।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরাতগ্রন্থসমূহে বর্ণিত রয়েছে, একদিন একজন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আরজ করলেন, ইয়া রসূল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার সম্মানিত আহল (স্বামী) জিহাদে গেছেন। আর আমি গত রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্ন দেখার পর থেকে কোনক্রমেই ইত্মিনান পাচ্ছি না।

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আপনার সেই স্বপ্নটা কি?  মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, স্বপ্নে দেখলাম, একটা বড় আকারের মৌমাছি কোথা থেকে যেন উড়ে এসে আমার ঘরে প্রবেশ করলো।” আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলা ছাহাবী উনাকে কিছু নছীহত মুবারক করলেন, অতঃপর বললেন, আপনার সেই স্বপ্নের তা’বীর (ব্যাখ্যা) হচ্ছে, আপনার স্বামী জিহাদে শহীদ হয়েছেন।

মহিলা ছাহাবী উক্ত তা’বীর শুনে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে ধৈর্য্য ধারণ করে নানা চিন্তা ফিকির করতে করতে বাড়ীতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে দেখা হলো। তিনি উনার এলো-মেলো চুল, উসকু-খুসকু চেহারা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে মহিলা ছাহাবী! আপনার কি হয়েছে?” তিনি উনার সেই স্বপ্নের কথা বললেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে তা’বীর করেছেন তা বললেন না। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “আপনি উত্তম স্বপ্ন দেখেছেন। চিন্তা করবেন না। আজ রাতেই আপনার সম্মানিত আহল বাড়ীতে ফিরে আসবেন।” সুবহানাল্লাহ!

এ তা’বীর শুনে মহিলা ছাহাবী তিনি আশ্চর্য হলেন। কিছু না বলে বাড়ীতে চলে গেলেন। দেখা গেল, সেই রাতেই উনার সম্মানিত আহল বাড়ীতে ফিরে আসলেন। পরের দিন সকালে তিনি উনার সম্মানিত আহল উনাকে সাথে নিয়ে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাজির হলেন।

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে দেখে বললেন, “হে মহিলা ছাহাবী! আপনি কি আপনার সম্মানিত আহল ফিরে আসার সংবাদ নিয়ে এসেছেন?” গতকাল আমার এখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় রাস্তায় কারো সাথে দেখা হয়েছিল কি? মহিলা ছাহাবী বললেন, হ্যাঁ, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে দেখা হয়েছিল। আপনি উনাকে স্বপ্নের কথা বলেছিলেন কি? জি, বলেছিলাম। তিনি কি তা’বীর করেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, আপনি কোন চিন্তা করবেন না, আপনার সম্মানিত আহল আজ রাতেই বাড়ী ফিরে আসবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে মহিলা ছাহাবী! আমি আপনার স্বপ্নের যে তা’বীর করেছিলাম সেটাই সঠিক ছিল অর্থাৎ আপনার সম্মানিত আহল শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি আপনার অবস্থা দেখে দয়াদ্র হয়েছিলেন এবং আপনার আহল ফিরে আসার সংবাদ দিয়ে আপনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ দিলেন যে, সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জীবিত করে উনার বাড়ীতে পৌঁছিয়ে দিন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যা বলেছেন তাই হবে। কারণ আমি যাঁকে ‘ছিদ্দীক্ব’ লক্বব মুবারক হাদিয়া করেছি উনার কথা তো ভুল হতে পারে না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি তাই করলেন। সুবহানাল্লাহ!

মূলত: ছিদ্দীক্ব স্তরের ওলীআল্লাহগণ উনারা যা বলেন তা বাস্তবায়িত হওয়ার বিষয়টি উনাদের কারামত শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

‘ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘কারামত’ শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে মাহাত্ম্য, অসাধারণ শক্তি। কিন্তু তাছাওউফের পরিভাষায় রূহানীশক্তি, যা রূহানী জজবায় বা মুহব্বতে মশগুল বীর সালিকের প্রাপ্ত পুরস্কার। যাকে মা’রিফাতের পরিভাষায়-

قُوَّةُ الْكُنِ

(কুউওয়াতুল কুন) বলা হয়। অর্থাৎ কুন শক্তির অধিকার পাওয়া। মূলতঃ এ কুন শক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিজস্ব ব্যাপার। যাদ্বারা তিনি সমস্ত সৃষ্টি জগত ও তন্মধ্যস্থিত সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন। আসলে এটা ইচ্ছা ও আদেশের বহিঃপ্রকাশ।

সালিক বা মুরীদ যখন ফানাফিল্লাহ উনার মাক্বাম হতে বাক্বাবিল্লাহ উনার মাক্বামে উপনীত হন তখন উনাকে বিলায়েত (আধ্যাত্মিক রাজত্বের শাসনভার) দান করা হয়। আর রাজত্ব পরিচালনার জন্য উনাকে দেয়া হয় কুউওয়াতুল কুন শক্তি। ‘কুন’ শব্দের অর্থ হও। এ শক্তি দ্বারা কোন বিষয়, বস্তু ও প্রাণীকে আদেশ করা মাত্র তা কার্যকর হয়।

গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দীর্ঘ বারো বছর পূর্বে বরযাত্রীসহ যে ডুবে যাওয়া নৌকাটি  উদ্ধার করেছিলেন তা কিংবদন্তির মত সবার মুখে মুখে। তিনিও ছিলেন

قُوَّةُ الْكُنِ

তথা কুন শক্তি মুবারক উনার অধিকারী অর্থাৎ ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন মাক্বামপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

একদিন এক খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মর্যাদা সবার ঊর্ধ্বে। তিনি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেন। গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে ব্যক্তি! আমাদের যিনি রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেনই। এমনকি উনার উম্মতগণও তা পারেন। মনে রেখো, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি কিন্তু قُمْ بِاِذْنِ اللهِ (মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারকে জীবিত হও) বলে জীবিত করতেন।

আর আমি قُمْ بِاِذْنِـىْ (আমার আদেশে জীবিত হও) বললেও জীবিত হয়। যদি প্রমাণ দেখতে চাও তাহলে বলো। তখন উক্ত খ্রিস্টান ব্যক্তি একটি কবরের প্রতি নির্দেশ করে বললো “এ কবরে শায়িত ব্যক্তিকে জীবিত করুন।”  তখন গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই কবরের দিকে লক্ষ্য করে বললেন

قُمْ بِاِذْنِـىْ

(আমার আদেশে জীবিত হও)। আর সাথে সাথে জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! (ফতহুল গইব, রওজাতুল ক্বাইয়ুমিয়াহ)

সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও ছিলেন ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’ মাক্বামপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ। এ বিষয়ে উনার সর্বজন বিদিত একটা কারামত উল্লেখ করা যায়। তিনি আনা সাগরের সম্পূর্ণ পানি একটা ছোট পাত্রের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

আরো উল্লেখ্য, বাদশাহ জাহাঙ্গীরের উজিরে আ’যম ছিল আসফ খাঁ। সে ছিল শিয়া। সে সবসময় বাদশাহকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতো।

অপর দিকে বাদশাহর দরবারে একজন মুফতী ছিলেন। উনার নাম হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ছিলেন আফদ্বালুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ। তিনি বাদশাহকে সবসময় হক্বের উপর ইস্তিক্বামত থাকতে পরামর্শ দিতেন। একবার উজিরে আ’যম আসফ খাঁর নেতৃত্বে শিয়ারা ইউরোপ থেকে চৌদ্দ জন পাদ্রীকে নিয়ে আসলো। বাদশা যাতে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে রাজী হয়। পাদ্রীরা এসে বাদশাহর দরবারে বীজ লাগালো, তাতে সাথে সাথে গাছ হয়ে ফল হলো। আগুন ব্যতীত ভাত পাকালো। বাদশাহ সেটা বুঝতে না পেরে তাদের অনুরক্ত হয়ে গেল। খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করবে বলে এক প্রকার সিদ্ধান্ত নিলো। মুফতী হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিষয়টি আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে অবহিত করলেন। আফদ্বালুল আউলিয়া ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তাদেরকে থাকতে বলো, আমি আসতেছি। তিনি বাদশাহর দরবারে এসে পাদ্রীদেরকে বললেন, “তোমরা তোমাদের কথিত কারামত দেখাও দেখি। তারা তাদের কথিত কোন কারামত দেখাতে পারলো না। ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো।  আর আকুতি-মিনতি করে বার বার ক্ষমা চাইতে লাগলো। তখন তিনি তাদেরকে দু’ভাগ হতে বললেন। তারা দু’ভাগ হলো। তিনি তাদের একভাগকে বললেন-

مُوْتُوْا بِاِذْنِ اللهِ

(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে মরে যাও) সাথে সাথে তারা মারা গেল। অপর ভাগকে বললেন, দেখতো তারা জীবিত না মৃত। তারা ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললো, “তারা মৃত”। তিনি বললেন, “তোমরা তাদেরকে জীবিত করো।” তারা জীবিত করতে পারলো না। তাই তারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারক ধরে তাদের সঙ্গীদেরকে জীবিত করে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করলো। তখন আফদ্বালুল আউলিয়া ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদের (মৃতদের) প্রতি লক্ষ্য করে বললেন-

قُوْمُوْا بِـاِذْنِ اللهِ

(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক আদেশে জীবিত হও)। সাথে সাথে তারা জীবিত হলো। এবার অপর ভাগের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি বললেন-

مُوْتُوْا بِـاِذْنِ اللهِ

(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে মরে যাও) সাথে সাথে তারাও মারা গেল। জীবিতদেরকে বললেন, তাদেরকে জীবিত করো। তারা তাদেরকে জীবিত করতে পারলো না। তাই তারা আফদ্বালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারক ধরে তাদের সঙ্গীদেরকে জীবিত করে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করলো। তখন তিনি তাদেরকেও জীবিত করলেন। ইহা দেখে বাদশাহ জাহাঙ্গীরসহ সবাই তওবা করলো এবং বাইয়াত গ্রহণ করলো। ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সেদিন আমার ক্বইয়ূমিয়াতের হাল এমনভাবে গালিব (প্রবল) হয়েছিল যে, আমি যদি আসমানকে যমীন এবং যমীনকে আসমান হতে বলতাম তাহলে তাই হতো।” সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গতঃ বলতে হয়, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ্, মুহ্ইউস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সম্মানিত আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বেমেছালভাবে ‘কুউওয়াতুল কুন’ শক্তির অধিকারী।

উনার মধ্যে শৈশবকাল থেকে এগুণের বিকাশ ঘটেছিল। তিনি যখন যা বলতেন তাই হতো। তখন অনেকেই উনার ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে ভাবতেন। সম্মান-ইজ্জত করতেন। মুহব্বতে, আবেগে আপ্লুত হতেন। সঙ্গী-সাথীরা অনেক সময় হতভম্ব হয়ে যেতেন। কারণ তিনি যার পক্ষে কথা বলতেন তিনি কামিয়াব হতেন। যার বিপক্ষে বলতেন তার পরাজয় অনিবার্য হয়ে পড়তো। এরূপ হাজার-হাজার ঘটনা রয়েছে। স্বল্প পরিসরে যার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। তবে এক/দুটির উল্লেখ না করাটাও আমানতের খিয়ানতে পর্যবসিত হবে। যার কারণে এক/দুটি ঘটনা পাঠকগণের খিদমতে পেশ করা হলো।

ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতুবুজ্জামান, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামাত, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার একজন খাদিম ছিলেন। উনার সাথে একদিন আলোচনা হলো। তিনি বললেন, শৈশবকাল থেকে আমরা হযরত মুজাদ্দিদ আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে এইসব গুণাবলী দেখে আসছি। উনাদের কয়েকটা বাস ছিল। যা গুলিস্থান-মীরপুর  রোডে চলতো। একদিন রাস্তায় বাসে সমস্যা দেখা দিল। আমি মেরামত করতে লাগলাম। প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত বেড়ে যাওয়ার কারণে দোকান-পাটও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে অনেক রাত পর্যন্ত আমাকে বাসায় ফিরতে না দেখে উনার সম্মানিত পিতা হযরত মুজাদ্দিদ আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি এসে আমাকে মেরামত করতে দেখে বললেন, “কি আগামী কাল সকাল থেকে চালানো যাবে না?” আমি একটু গোস্বার স্বরে বললাম, যাবে। আপনারা মালিকের ছেলে, যা বলবেন সেটা কি আর না হয়। আমি জানতাম দু’ তিন দিনের আগে এটা চলানোর উপযুক্ত হবে না। তিনি বললেন, চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ আগামী কাল সকাল থেকে যথারীতি এটা চালানো যাবে। একথা শুনে আমার গোস্বা আরো বেড়ে গেল। কারণ আমি সবসময় বাসের সাথে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িত। অথচ উনার সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই। বললাম, হ্যাঁ, আপনারা তো আসমান-যমীন এক করে দিতে পারেন। তিনি কিন্তু  কোন রাগ করলেন না। বরং মধুমাখা স্বরে বললেন, “আপনি কাজ করতে থাকুন। দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে।” আর সত্যি অল্প সময়ের মধ্যে সেটা ভাল হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! এতো অল্প সময়ে বাসটি ভাল হওয়ার কারণে আমি উনার চেহারা মুবারক উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ফিকির করতে লাগলাম, কি ব্যাপার! কি ঘটলো!! ইত্যবসরে তিনি আবারো আমাকে সম্বোধন করে বললেন, “কি ভাবছেন? চলুন। বাড়ী চলুন। রাত অনেক হয়েছে।”

তিনি একদিন এক মুরীদকে বললেন, তোমাদের রিয়াজত-মাশাক্কাত, যিকির-ফিকিরের সময় তো এখনই।  এই বয়সে যদি তা করতে না পারো তাহলে আর কখন করবে? এক/দুই ঘণ্টা ঘুমালেই তো যথেষ্ট। সেই মুরীদ বললো- সেই দিন হতে আমার এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি ঘুম হতো না। সুবহানাল্লাহ!

আরেকবার উনার কাছে অন্য একজন মুরীদ আসলেন। তিনি হজ্জে যাবেন সেজন্য দোয়া প্রার্থনা করলেন। তিনি তাকে দোয়া করলেন এবং বললেন, যাও, তুমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে যা চাবে তাই পাবে। সেই মুরীদ মদীনা শরীফে গেলেন। রওজা শরীফ উনার নিকটে দাঁড়িয়ে সবিনয়ে জানালেন, ইয়া রসূল্লাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার “সুলত্বানুল আযকার” যিকির জারী করে দিন। প্রার্থনা শেষ হতে না হতেই উনার “সুলত্বানুল আযকার” যিকির জারী হলো। সারা শরীরে “আল্লাহ” আল্লাহ” যিকির শুরু হলো। তিনি বলেন, “আমি চলে আসলাম অবস্থান স্থলে। সারা রাত কেটে গেল। ঘুম হলোনা।  পরের দিন আবারও রওজা শরীফ উনার নিকটে গিয়ে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার যিকির বন্ধ করে দিন। আর সাথে সাথে তা বন্ধ হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! এরূপ অসংখ্য-অগনিত ঘটনা রয়েছে।

মূলতঃ যারা বলে, কোন মানুষ কুন ফাইয়াকূনের মালিক বা অধিকারী হতে পারে না তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, অশুদ্ধ, অজ্ঞতা ও মূর্খতাসূচক। সাথে সাথে তা কুফরীও বটে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার দেখা মুবারক, শুনা মুবারক, জানা মুবারক ইত্যাদি কোনটিই মানুষের মত নয়। সেটা সম্পূর্ণরূপে কুদরত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। যারা বলবে মানুষের মত তারা কাফির, মুশাবিহা ফিরক্বা, বাতিল বাহাত্তর দলের একদল। যাদের আক্বীদা মহান আল্লাহ পাক উনারও মানুষের মত হাত, পা, কান, চোখ ইত্যাদি রয়েছে। তিনিও মানুষের মত দেখেন, শুনেন, জানেন। নাউযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে যেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার হাত মুবারক, পা মুবারক, চোখ মুবারক ইত্যাদি সম্পর্কে বলা হয়েছে সেখানে উনার কুদরত মুবারক বুঝানো হয়েছে। কাজেই “ওলীআল্লাহগণ উনাদের আদেশের মত মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক”, মনে করা যাবেনা। বরং “মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক উনার অনুসরণে ওলীআল্লাহগণ উনাদের আদেশ” বলা যেতে পারে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি কারো মুহতাজ নন।

এমনকি তিনি বরকতময় اَللهُ (আল্লাহ) লফ্জ মুবারক উনার মুহতাজও নন। তিনি উক্ত লফজ মুবারক হতেও পবিত্র। (মুকাশাফাতে আইনীয়া, মাকতুবাত শরীফ)

আর ওলীআল্লাহগণ মহান আল্লাহ পাক উনার মুহতাজ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতাজ। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গুণে গুণান্বিত।

মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত হলে যদি মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবি করা বুঝায় তাহলে সুওয়ালে উল্লেখিত লক্বব মুবারক উনার সুওয়ালকারীরাসহ সবাই মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবীকারী। সবাইতো দেখে, শুনে, বুঝে। তাহলে তারাও মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবী করলো। সুতরাং তারা সকলেই কাফির। নাউযুবিল্লাহ! কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি তো দেখেন, শুনেন। তাছাড়া “হাকিম” বিচারক, সেও মহান আল্লাহ হওয়ার দাবিদার। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন হাকিম। মানুষ হাকিম হয় কিভাবে? আবার অনেক বৈজ্ঞানিক আছেন যারা অনেক নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করেন। ওলীআল্লাহ বিদ্বেষীদের ফতওয়া মুতাবিক তারাও মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবীদার, কাফির। আর যদি তা না হয়, তাহলে ওলীআল্লাহগণ উনাদের ইশারায় বা ওসীলায় আবিষ্কৃত হলে উনারা মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবিকারী হবেন কেন?

আমরা ইতোমধ্যেই এই লেখায় উল্লেখ করেছি যে, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, মুজাদ্দিদে যামান, সুলত্বানুল হিন্দ হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ক্বইয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ অনেক আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ছিলেন “ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন” লক্বব মুবারক উনার অধিকারী। উনারা যদি মহান আল্লাহ হওয়ার দাবীকারী না হন তাহলে পঞ্চদশ শতকের মুজাদ্দিদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলত্বানুল আরিফীন, হাকিমুল হাদীছ, আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবীকারী হবেন কেন? উনার শানে এই তোহমত কেন? মুলতঃ ইহা জাহিলদের জিহালতী আর হিংসুকদের হিংসার প্রতিফলন। জাহিলরা হিংসার বশবর্তী হয়ে উনার শানে এরূপ মিথ্যা তোহমত (অপবাদ) দিয়ে তারা যে আসলেই মালউন ইবলীসের যোগ্য উত্তরসূরি তা প্রমাণ করে থাকে।

রহমতুল্লিল আলামীন, লক্বব বা উপাধি মুবারক ব্যবহার সম্পর্কে বলতে হয় যে, উক্ত লক্বব মুবারকসহ নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে ব্যবহৃত সমস্ত লক্বব মুবারকই ক্বায়িম মাক্বাম হিসেবে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে। আর এ হিসেবেই মূলত যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয্যিনাত শরীফ উনার ২৭১টি  প্রকাশিত সংখ্যার মধ্যে মাত্র   একটি সংখ্যার মধ্যে এক বিজ্ঞাপনদাতা তার দেয়া বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেছেন। উক্ত বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কোথাও উক্ত লক্বব মুবারকখানা উল্লেখ নেই।

এর দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার সুমহান শান মুবারকে ব্যবহৃত লক্বব মুবারকসমুহ উনার ওয়ারিছদের শানে ব্যবহার করা জায়িয থাকা সত্বেও যামানার মহান মুজাদ্দিদ ও ইমাম আখাছচ্ছুল খাছ ওয়ারিছে রসূল, আহলে বাইতে রসূল, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নিজে উক্ত লক্বব মুবারকখানা ব্যবহার করেন না।

স্মরণীয় যে, আমভাবে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম এবং খাছভাবে যামানার হযরত মুজাদ্দিদ বা ইমাম উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি। উনাদের শানে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَـهُمُ الْبُشْرٰى فِـي الْـحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِـي الْاٰخِرَةِ

অর্থ: উনাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় যিন্দিগীতে সুসংবাদ রয়েছে। (পবিত্র সূরা ইউনূস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)

এখন দুনিয়াবী যিন্দিগীতে সুসংবাদ তার অর্থই হচ্ছে উনাদের সম্মানিত লক্বব মুবারক সমূহ। যা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া মুবারক করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদিয়া মুবারক করেন এবং হাদিয়া মুবারক করেন হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। সুবহানাল্লাহ! উক্ত হাদিয়াকৃত লক্বব মুবারক সমূহ কম সংখ্যক লোকই বুঝতে ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। যেমন গউছুল আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাতী নাম মুবারক গ্রহণ বা ব্যবহার করার ব্যাপারে অনুমোদন রয়েছে, সেখানে উনার ছিফতী নাম মুবারক তথা লক্বব বা উপাধি মুবারক গ্রহণ ও ব্যবহারের বিষয়টি নাজায়িয হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তথাপি বাতিল ফিরক্বার মিথ্যা, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের জাওয়াব দানের লক্ষ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের থেকে দলীল পেশ করা হচ্ছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ رَحْمَتَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক মুহসিনীন বান্দা তথা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকটে। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

এখন মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক কতখানি সীমানার মধ্যে বিস্তৃত সে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য এক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَرَحْـمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ

অর্থ: আমার রহমত মুবারক সমস্ত বস্তু বা সৃষ্টির মধ্যে পরিব্যাপ্ত। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৬)

অর্থাৎ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও সারা আলম বা সৃষ্টির জন্যেই রহমত স্বরূপ।

এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ১০৭নং যেই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে মর্মে আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে অন্য সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানেও রহমাতুল্লিল আলামীন লক্বব মুবারক ব্যবহার করা জায়িয হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

যেমন এ সম্পর্কে সম্মানিত হানাফী মাযহাবের আক্বাইদের ইমাম, ৪র্থ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, ইমামু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ্, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত ইমাম আবূ মানছূর মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৩৩৩ হিজরী শরীফ) তিনি উনার সর্বজনমান্য ও গ্রহণযোগ্য বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাতুরীদী শরীফ উনার ৭ম খন্ডের ৩৮৩ পৃষ্ঠায়’ অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন,

وَقَوْلُهٗ عَزَّ وَجَلَّ وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِيْنَ جَائِزٌ اَنْ يَّكُوْنَ كُلُّ رُسُلِ اللهِ رَحْمَةً مِّنَ اللهِ لِلْعَالَـمِيْنَ وَكَذٰلِكَ كُلُّ كُتُبِ اللهِ رَحْمَةٌ لِلْعَالَـمِيْنَ عَلـٰى مَا ذُكِرَ فِـىْ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةً مِّنَّا

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কালাম মুবারক- ‘আর (আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ সুবহানাল্লাহ! হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ বলা জায়িয রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত কিতাব তথা আসমানী কিতাবসমূহ ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ স্বরূপ। আর তা এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার শান মুবারক-এ সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি আমার পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ।” সুবহানাল্লাহ!

এখানে হযরত ইমাম আবূ মানছূর মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ বলা জায়িয রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাও ‘রহমতুল্লিল আলামীন’। সুবহানাল্লাহ!

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عُلَمَاءُ اُمَّتِىْ كَاَنْبِيَاءِ بَنِىْ اِسْرَائِيْلَ

অর্থ: “আমার উম্মতের আলিম-উলামা তথা ওলীআল্লাহগণ উনারা বনী ইসরায়ীলের নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অনুরূপ।” সুবহানাল্লাহ! (জুহূদু উলামায়িল হানাফিয়্যাহ: ২য় খ- ৭৯৫ পৃষ্ঠা, কিতাবুল ই’তিছাম, আল ইত্তিহাফ, মাফাতীহুল গইব, তাফসীরুল লুবাব, তাফসীরু সিরাজিম মুনীর, তাফসীরে হাক্কী, মাওসূআতুর রদ আলাছ ছূফিয়্যাহ ইত্যাদি)

কাজেই, হযরত ইমাম, মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম, মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যেহেতু হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্বায়িম মাক্বাম, তাই উনাদেরকেও ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ বলা জায়িয রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

এ বিষয়ে একাদশ হিজরী শতকের সর্বজনমান্য বিশ্বখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ আল্লামা হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ বারজান্যী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ- ১০৪০ হিজরী শরীফ, বিছাল শরীফ- ১১০৩ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল ইশা‘আহ্ লিআশরাতিস সা‘আহ্ শরীফ উনার ২১৪ নং পৃষ্ঠায়’ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন-

فَالْـمَهْدِىُّ رَحْمَةُ اللهِ كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحْمَةً قَالَ تَعَالـٰى وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِيْنَ

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেরূপ রহমত স্বরূপ, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِيْنَ

‘আর আমি আপনাকে ‘রহমতুল্লিল আলামীন হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনিও তদ্রূপ মহান আল্লাহ উনার তরফ হতে রহমত স্বরূপ।

অর্থাৎ হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ হিসেবে উল্লেখ করার দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা সত্যিকার ওয়ারিছ উনাদের শানেও রহমাতুল্লিল আলামীন লক্বব বা উপাধি মুবারক ব্যবহার করা জায়িয। এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ বা ক্বীল-ক্বাল করার অবকাশ নেই।।” সুবহানাল্লাহ!

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব