সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৭১তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আব্দুল কুদ্দুস, লালবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল: শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত এক ব্যক্তি আল মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন কিতাবে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উদ্ধৃতি উল্লেখ করে লিখেছে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার ও কিতাবের দুশমন বলে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ও কিতাবের দুশমন নই।

উক্ত ব্যক্তির জিজ্ঞাসা হচ্ছে, হযরত আমীরুল মু’মিনীন ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্বোধন ছহীহ, না হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দাবী ছহীহ? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া মতে, শিয়ারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা মুসলমান না হওয়ার ব্যাপারে অনেক কারণের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যতীত বাকী সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্ধেষ পোষণ করা, দোষারোপ করা ও উনাদেরকে কাফির মনে করা। নাউযুবিল্লাহ!

এমনকি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রথম তিনজন মহান খলীফা আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতিও তারা চরম বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যা সম্পূর্ণরূপে কুফরী ও কাফির হওয়ার কারণ এবং জাহান্নামী হওয়ারও কারণ। নাউযুবিল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لِيَغِيْظَبِهِمُ الْكُفَّارَ

অর্থ: অবশ্য কাফিরেরাই উনাদের প্রতি অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

حُبُّ اَبِـىْ بَكْرٍ وَّعُمَرَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ اِيْـمَانٌ وَبُغْضُهُمَا كُفْرٌ.

অর্থ: খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদের মুহব্বত ঈমান। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কুফরী। (জামিউছ ছগীর, মিরকাতুল মাফাতীহ, মাহদ্বুছ ছওয়াব, তারিখুল খুলাফা, ফাদ্বায়িলুছ ছাহাবা, ফাইদ্বুল ক্বাদীর ইত্যাদি)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

حُبُّ الصَّحَابَةِ اِيـْمَانٌ وَبُغْضُهُمْ كُفْرٌ.

অর্থ: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, উনাদের বিরোধিতা বা সমালোচনা করা কুফরী। (মাওসূআতু খুতাবিল মিম্বার)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

مَنْ غَاظَه اَصْحَابَ مُـحَمَّدٍ (حَبِيْبِ اللهِ) صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ كَافِرٌ.

অর্থ : “যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه لَعَنَهُمُ اللهُ فِـى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَـهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا.

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার  শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَللهَ اَللهَ فِـىْ اَصْحَابِـىْ لَاتَتَّخِذُوْهُمْ غَرَضًا مِّنْ بَعْدِىْ فَمَنْ اَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّـىْ اَحَبَّهُمْ وَمَنْ اَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِىْ اَبْغَضَهُمْ وَمَنْ اٰذَاهُمْ فَقَدْ اٰذَانِـىْ وَمَنْ اٰذَانِـىْ فَقَدْ اٰذَى اللهَ  وَمَنْ اٰذَى اللهَ فَيُوْشِكُ اَنْ يَّأْخُذَه

অর্থ : “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর, আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর। আমার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার পরে উনাদেরকে তোমরা তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করোনা। যে ব্যক্তি উনাদেরকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করার কারণেই মুহব্বত করলো। আর যে ব্যক্তি উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো। যে ব্যক্তি উনাদেরকে কষ্ট দিল, সে মুলতঃ আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে আমাকে কষ্ট দিল, সে মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিল, আর যে মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে কষ্ট দিল, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তাকে শীঘ্রই পাকড়াও করবেন।” (তিরমিযী শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুধারনা ও সঠিক আক্বীদা পোষণ করা ঈমান আর উনাদের প্রতি সঠিক আক্বীদা ও সুধারনা পোষণ না করা তথা বিদ্বেষ পোষণ ও বিরোধিতা করা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

কাজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ব্যাপারে প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমান, পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসানকে সাবধান ও সর্তক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই মুহব্বত ও সম্মানের উপযুক্ত এবং প্রত্যেকেই অনুসরণীয়। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরস্পর-পরস্পরের ইখতিলাফ বা মতবিরোধের সমাধান স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ كُلٌّ يَّعْمَلُ عَلٰى شَاكِلَتِهٖ فَرَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِـمَنْ هُوَ اَهْدٰى سَبِيْلًا.

অর্থ: আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, প্রত্যেকেই তার স্বভাব বা রীতি অনুযায়ী আমল করে। তবে তোমাদের যিনি রব সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনিই সর্বাধিক অবগত কে অধিক সুপথে রয়েছে। (পবিত্র সূরা বাণী ইসরাইল: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৮৪)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ভিত্তিতে হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা দু’টি পথ নির্ধারণ করেছেন- একটি হচ্ছে সুপথ, অপরটি হচ্ছে অধিক সুপথ।

সুতরাং, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একে অপরের মধ্যে যে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ হয়েছে, তাতে কেউ সুপথে ছিলেন আর কেউ অধিক সুপথে ছিলেন। অর্থাৎ প্রত্যেকেই হক্ব বা সঠিক মত ও পথের মধ্যে ছিলেন। কেউই নাহক্ব মত ও পথের মধ্যে ছিলেন না।

যেমন এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلْتُ رَبِّـىْ عَنْ اِخْتِلَافِ اَصْحَابِـىْ مِنْ بَعْدِىْ فَاَوْحٰى اِلَـىَّ يَا مُـحَمَّدُ (حَبِيْبَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) اِنَّ اَصْحَابَكَ عِنْدِىْ بِـمَنْزِلَةِ النُّجُوْمِ بَعْضُهَا اَقْوٰى مِنْ بَعْضٍ لِكُلِّ نُوْرٌ فَمَنْ اَخَذَ بِشَيْئٍ مِّـمَّاهُمْ عَلَيْهِ مِنْ اِخْتِلَافِهِمْ فَهُوَ عِنْدِىْ عَلٰى هُدًى فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَصْحَابِـىْ كَالنُّجُوْمِ بِاَيِّهِمْ اِقْتَدَيْتُمْ اِهْتَدَيْتُمْ.

অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার পরে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে জিজ্ঞাসা মুবারক করেছি।” মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বললেন, “আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমার নিকট তারকা সমতুল্য। কারো থেকে কারো নূর মুবারক বেশী, তবে প্রত্যেকেরই নূর মুবারক রয়েছেন। সুতরাং, উনাদের যে কোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়ে ধরবে, তারা হিদায়েত পেয়ে যাবে। কারণ উনাদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য।” অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা (প্রত্যেকেই) তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে। অর্থাৎ উনাদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি সে বিষয়েই হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েত উপর থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরস্পর পরস্পরের মতবিরোধ যেখানে হিদায়েত স্বরূপ সেখানে উনাদের ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি, কোনো প্রশ্ন, কোন বক্তব্য, কোন মন্তব্য থাকতে পারে না। বিনা দ্বিধায়  উনাদের বিষয়গুলো মেনে নিতে হবে বা গ্রহণ করতে হবে।

প্রসঙ্গতঃ সুওয়ালে উল্লেখিত আল মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করা হলো-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ لِـىْ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عَدُوَّ اللهِ وَعَدُوَّ الْاِسْلَامِ خُنْتَ مَالَ اللهِ قَالَ قُلْتُ لَسْتُ عَدُوَّ اللهِ وَلَا عَدُوَّ الْاِسْلَامِ وَلٰكِنّىْ عَدُوٌّ مَّنْ عَادَا هُمَا وَلَـمْ أَخُنْ مَالَ اللهِ وَلٰكِنَّهَا إِثْـمَانُ اِبِلِيْ وَسِهَامٍ اِجْتَمَعْتُ. قَالَ فَأَعَادَهَا عَلَىَّ وَاَعَدْتُّ عَلَيْهِ هَذَا الْكَلَامَ قَالَ فَغَرَمَنِيْ اِثْنَىْ عَشَرَ أَلْفًا قَالَ فَقُمْتُ فِيْ صَلَاةِ الْغَدَاةِ فَقُلْتُ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِـىْ لِأَمِيْرِ الْـمُؤْمِنِيْنَ فَلَمَّا كَانَ بَعْدَ ذٰلِكَ أَرَادَنِيْ عَلَى الْعَمَلِ فَأَبَيْتُ عَلَيْهِ.

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শত্রু! আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার মাল খিয়ানত করেছেন, আমি বললাম, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু নই এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনারও শত্রু নই। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সাথে যারা শত্রুতা রাখে, তাদের আমি শত্রু। মহান আল্লাহ পাক উনার মাল আমি খিয়ানত করিনি। আমার উট ও তীর বিক্রি করে আমি মাল-সম্পদ করেছি বা জমিয়েছি। তিনি (আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম) আমার প্রতি উনার বক্তব্য পূনরায় বললে, আমিও আমার বক্তব্য উনাকে পূনরায় বললাম। অতঃপর তিনি আমার থেকে ১২ হাজার দিরহাম জরিমানা করলেন। তারপর ফজর নামায আদায় করে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জন্য আমি মাগফিরাত কামনা করলাম। এরপর তিনি আমাকে পূনরায় দায়িত্বে নিয়োগ করতে চাইলে আমি উক্ত দায়িত্ব নিতে অসম্মতি জানালাম।

অর্থাৎ হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বাইতুল মাল উনার তত্ত্বাবধানকারী অর্থাৎ কোষাধক্ষ ছিলেন। যার কারণে উনার কাছে জমাকৃত অর্থ-সম্পদ দেখে তা বাইতুল মাল থেকে নিয়ে তিনি জমা করেছেন কিনা সেজন্য খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শত্রু বলে সম্বোধন করেছেন। কেননা  যদি কেউ বাইতুল মাল উনার অর্থ-সম্পদ খিয়ানত করে, সে তো মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শত্রু। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ বাইতুল মাল উনার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং বাইতুল মাল উনার সম্পদ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যেই ব্যয় করা হয়।

যার কারণে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বাইতুল মাল উনার দায়িত্বে নিযুক্ত ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে জমাকৃত অতিরিক্ত দিরহাম, অর্থ-সম্পদ দেখতে পেয়ে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করেছেন এবং তিনি উনার থেকে জরিমানাও নিয়েছেন। আর এটা সম্মানিত খলীফা উনার জন্য জায়িযও বটে।

খিলাফতের দায়িত্বে থাকা যে কোন দায়িত্বশীল উনার থেকে সম্মানিত খলীফা তিনি জবাবদিহি বা কৈফিয়ত নিতে পারেন আর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল তিনিও জবাব দিতে বাধ্য। শুধু তাই নয়, সম্মানিত খিলাফত পরিচালনার স্বার্থে সম্মানিত খলীফা তিনি কোন কারণ ব্যতীতই যে কোন ব্যক্তির নিকট থেকে তার অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সম্পদ গ্রহণ করতে পারেন। আর সেটাই হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে করা হয়েছে। তাই আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যা বলেছেন ও করেছেন তা সঠিকই করেছেন।

অপরদিকে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা  আনহু তিনি যা বলেছেন তা সঠিকই বলেছেন। উনার জমাকৃত টাকা তা তিনি উনার উট ও তীর বিক্রি করেই জমা করেছেন। বাইতুল মাল থেকে তিনি টাকা জমা করেননি। অর্থাৎ তিনি নিজের স্বচ্ছতার প্রমাণ দিয়েছেন। যার কারণে হযরত আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম তিনি পূনরায় উনাকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তাব পেশ করেন।

কাজেই, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনার মধ্যে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের পরস্পরের মধ্যে কোনরূপ ইখতিলাফ বা মতবিরোধের কোন অবকাশ নেই।

মুহম্মদ জাকির হুসাইন, ইসলামপুর, নওগাঁ।

সুওয়াল: জনৈক ওহাবী মালানার বক্তব্য হচ্ছে, দিবস পালন করা জায়িয নেই। এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

জাওয়াব: তার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, মিথ্যা, দলীলবিহীন ও সম্মানিত শরীয়ত তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ বা বিরোধী। যার কারণে তা হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি দিবস পালন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ

অর্থ: (সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার!) আপনি উম্মতদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিন বা দিবসসমূহ স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই উক্ত দিনসমূহ স্মরণ বা পালন করার মধ্যে ছবরকারী ও শোকরকারী সকল বান্দা-বান্দীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

স্মরণীয় যে, খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সমস্ত দিনে খাছ রহমত ও নিয়ামত মুবারক নাযিল করেন এবং যে সমস্ত দিনে ছাহিবে নিয়ামত ও রহমত উনারা বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, নিসবতে আযীমাহ শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং অন্য কোন বিশেষ শান মুবারক প্রকাশ করেন উক্ত দিনসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার দিন তথা আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেই মহান দিনে রহমাতুল্লিল আলামীন, নিয়ামতে উযমা, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক আনেন উক্ত মহান দিন হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া উনার রগায়িবী শান মুবারক প্রকাশ দিবস, আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াতী ও রিসালতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস, মি’রাজী শান মুবারক প্রকাশ দিবস, নিসবতে আযীমী শান মুবারক প্রকাশ দিবস, হিজরতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস, বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস ইত্যাদি শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার মহান দিনসমূহ সর্বশ্রেষ্ঠ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর উনার পুতঃপবিত্র ও সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যেসব মহান দিনে তাশরীফ মুবারক আনেন এবং বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং উনাদের নিসবতে আযীমাহ মুবারক সংঘটিত হয় এবং উনাদের অন্য বিশেষ শান মুবারক প্রকাশিত হয় উক্ত দিনসমূহও আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর পর্যায়ক্রমে হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিলাদতী শান মুবারক, বিছালী শান মুবারক, নিসবতে আযীমাহ শান মুবারক এবং অন্যান্য বিশেষ শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার দিনসমূহ সম্মানিত আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম, ইয়াওমু আশূরা, ইয়াওমুল জুমুয়াহ, ইয়াওমু আরাফাহ, আইয়্যামু তাশরীক্ব, ইয়াওমুল ফিতর, ইয়াওমুল আদ্বহা ইত্যাদি দিনসমূহ বিশেষ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ আউওয়ালু লাইলাতিম মির রজব, লাইলাতুর রগায়িব, লাইলাতুল মি’রাজ, লাইলাতুন নিছফি মিং শা’বান, লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতাল ঈদাইন, লাইলাতুল জুমুআ ইত্যাদি রাতসমূহও আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত।

মোটকথা, মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত বান্দা-বান্দী উনাদের সৃষ্টি মুবারক, বিলাদতী শান মুবারক, বিছালী শান মুবারক, নিসবতে আযীমাহ মুবারকসহ অন্যান্য বিশেষ শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার দিন ও রাতসমূহ সম্মানিত আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত দিনসমূহ স্মরণ তথা পালন করার মধ্যে বান্দা-বান্দী উম্মতের জন্য রহমত, বরকত, নিয়ামত, নাজাত, সাকীনা, সালাম, রেযামন্দী ও কামিয়াবী হাছিলের বিষয় নিহিত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

যেমন রহমাতুল্লিল আলামীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন করার ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ উনার ৫৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يـَجْمَعُوْنَ

অর্থ: জিন-ইনসান তথা কায়িনাতবাসীর সমস্ত ইবাদত অপেক্ষা তা শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.

অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশী মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাজাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدِّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারী উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) খুশী মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত মুবারক ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউয়ীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনার দ্বারা প্রতিভাত হয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিবস উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মাহফিলের ইন্তেজাম করেছেন এবং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত মাহফিলে তাশরীফ মুবারক নিয়ে খুশী মুবারক প্রকাশ করে সুসংবাদ প্রদান করে ইরশাদ মুবারক করেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের জন্য সমস্ত রহমত মুবারকের দরজা খুলে দিয়েছেন, সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। শুধু তাই নয়, আপনাদের মতো (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) যারাই এরকম মাহফিলের ইন্তেজাম করবেন তিনিও আপনাদের ন্যায় ফযীলত ও নাজাত লাভ করবেন। আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে খুশী মুবারক প্রকাশ করে এই বলে সুসংবাদ প্রদান করেন যে, আপনাদের জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব বা অপরিহার্য করে দেয়া হলো। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَوْسِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ مِنْ اَفْضَلِ اَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فِيْهِ خُلِقَ حَضْرَتْ سَيّدُنَا اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ قُبِضَ.‏

অর্থ : “হযরত আউস ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছেন পবিত্র জুমুআ উনার দিন। এ দিনে আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” (নাসায়ী শরীফ শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া : হাদীছ শরীফ নং ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া, হাদীছ শরীফ নং ৮৫৫, তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৯১, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮৯৫৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৭০৫, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছলাত, হাদীছ শরীফ নং ১০৪৭, ইবনে খুজায়মা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩২)

অন্য এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ فَمَنْ جَاءَ اِلَى الْـجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَاِنْ كَانَ طِيْبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ‏.‏

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনকে মুসলমান উনাদের জন্য পবিত্র ঈদ উনার দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি পবিত্র জুমুআ উনার নামায আদায় করতে আসবে, তিনি যেন গোসল করেন এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগান। আর মিসওয়াক করাও কর্তব্য।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৯৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৭৩৫৫)

উক্ত পাবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে পবিত্র জুমুআ উনার দিবসকে সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই উক্ত দিন উনার সম্মানার্থে বা পালনার্থে মিসওয়াক করার জন্য, গোসল করার জন্য ও সুগন্ধি ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِيْنَةَ فَرَاَى الْيَهُوْدَ تَصُوْمُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ مَا هٰذَا‏‏.‏ قَالُوْا هٰذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هٰذَا يَوْمٌ نَـجَّى اللهُ بَنِـيْ اِسْرَائِيْلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهٗ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ‏.‏ قَالَ‏ فَاَنَا اَحَقُّ بِـمُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ‏ مِنْكُمْ (نَـحْنُ اَحَقُّ بِـمُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ‏ مِنْكُمْ.) فَصَامَهٗ وَاَمَرَ بِصِيَامِهٖ.‏

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীরা পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন রোযা রেখে থাকে। তিনি উম্মতকে তা’লীম প্রদানের জন্য তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন ইয়াহুদীরা বললো, এই দিন হচ্ছে একটি নেক কাজের দিন। এই দিনে (ফির‘আঊন ও তার সৈন্যবাহিনী পানিতে ডুবে ধবংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো। আর) হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সঙ্গী-সাথিরা উনাদের শত্রুদের যুল্ম-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এজন্য আমরা মহান আলাহ পাক উনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে রোযা পালন করি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমিই বেশি হক্বদার। (ইবনে মাজাহ শরীফ উনার রেওয়াতে- তোমাদের চেয়ে আমরাই বেশি হক্বদার।) অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন রোযা রাখলেন এবং এই মুবারক দিনে সবাইকে রোযা রাখার হুকুম মুবারক দিয়েছেন।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুছ্ ছওম : বাবু ছিয়ামি ইয়াউমি আশূরা : হাদীছ শরীফ নং ২০০৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুছ্ ছওম : বাবু ছিয়ামি ইয়াওমি আশূরা : হাদীছ শরীফ নং ১৭৩৪)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আশূরা শরীফ দিবসকে পূণ্যের দিন, মহান দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং উক্ত দিবস পালনার্থে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোযা রেখেছেন এবং উনার উম্মত আমাদেরকেও রোযা রাখার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّاِلثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُـجَاوِرُ فِي الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَّمَضَانَ وَيَقُوْلُ‏ تَـحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَّمَضَانَ‏‏.‏

অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ তালাশ করো।” (বুখারী শরীফ : কিতাবু ফাদ্বলিল লাইলাতুল ক্বদরি : বাবু তার্হারী লাইলাতিল ক্বদরি ফিল উইতরি মিনাল আশরি আওয়াখিরি : হাদীছ শরীফ নং ২০২০)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশকের দিনসমূহে ই’তিকাফ করতেন এবং বিজোড় রাত্রিসমূহে সজাগ থেকে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করতেন এবং উম্মতওে তালাশ করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ ছাড়াও আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে যা দ্বারা প্রতিভাত হয়েছে যে, দিবস পালন করা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্মত তথা ফরয ওয়াজিব উনার অন্তর্ভুক্ত এবং রহমত, নিয়ামত, মাগফিরাত, শাফায়াত, নাজাত ও কামিয়াবী হাছিলের কারণ। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।, ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: (পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৪৪)

‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:

মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যে অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী তা বুঝার জন্য- তিনি যে সমস্ত কায়িনাতবাসীকে মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত শান মুবারক সম্পর্কে সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম সম্মানিত বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক:

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব হাবীব এবং মাহবুব রসূল। সুবহানাল্লাহ! তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ ও ইমাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাহবুব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন, সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই আশিক্ব হয়ে উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক সংযুক্ত করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ হচ্ছেন-

لَاۤ  اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

এ বিষয়ে সমস্ত উম্মতের ইজমা’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যদি কেউ শুধু

لَاۤ  اِلٰهَ اِلَّا اللهُ

বলে তাহলেও সে কস্মিনকালে ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত

مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

না বলবে। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই আশিক্ব হয়ে উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার সাথে উনার মাহবুব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার প্রতিটি দরজায় দরজায়, প্রতিটি কামরায় কামরায়, গাছের ডালে ডালে, পাতায় পাতায়, ফলে ফলে, হুর-গিলমানের কপালে কপালে, চোখে চোখে, বুকে বুকে, গলায় গলায়, প্রতিটি নহরে নহরে, সমস্ত সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ, সম্মানিত আরশ মুবারক উনার স্তম্ভ মুবারক-এ, সম্মানিত তূবা বৃক্ষের পাতায় পাতায়, সিদ্রাতুল মুন্তাহার পাতায় পাতায়, সম্মানিত হিজাব মুবারক উনার কিনারে কিনারে, সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের চোখে চোখে এবং সাত আসমানের সমস্ত জায়গায় লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

কোনো হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক দেয়া হয়নি, কোনো হযরত রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত রিসালাত মুবারক দেয়া হয়নি; যতক্ষণ পর্যন্ত উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক না এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক আনার পরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও সম্মানিত রিসালাত মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া, সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা এবং দায়িমীভাবে উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করা সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের উপর ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا

অর্থ: “তোমরা উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দাও, উনার সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করো এবং উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা তথা অনন্তকাল দায়িমীভাবে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

মুহম্মদ সাইফুল হাবীব, বগুড়া

সুওয়াল: বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত জনৈক মালানার বক্তব্য হচ্ছে, রোযা রেখে ঈদ পালন করা নিষেধ। আবার ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ।

জাওয়াব: বাতিল ফিরক্বাভুক্ত উক্ত মালানার বক্তব্য চরম জিহালতপূর্ণ, মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ বা বিরোধী।

প্রথমেই স্মরণ রাখতে হবে যে, সকল ঈদের হুকুম এক রকম নয়।  আর পবিত্র ঈদ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْـمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ.

অর্থ: “হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন মহান নছীহতকারী, অন্তরের মহান আরোগ্য দানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য মহান রহমত দানকারী। (অতএব, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ফদ্বল ও সম্মানিত রহমতস¦রূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের প্রতি কর্তব্য তথা ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের ইবাদত হবে তাদের সমস্ত ইবাদত বা আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭, ৫৮)

অর্থাৎ রহমাতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনয়ন তথা পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ খুশি মুবারক প্রকাশের দিন অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি যেই পবিত্র দিন যমীনে তাশরীফ আনেন উক্ত পবিত্র দিনটি হচ্ছেন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لِكُلِّ مُؤْمِنٍ فِيْ كُلِّ شَهْرٍ اَرْبَعَةُ اَعْيَادٍ اَوْ خَـمْسَةُ اَعْيَادٍ

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন মুসলমান উনাদের প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারদিন অথবা পাঁচদিন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়ে থাকে।” (কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খ- : বাবু ছলাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া)

আবার অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ فَمَنْ جَاءَ اِلَى الْـجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَاِنْ كَانَ طِيْبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ‏.‏

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনকে মুসলমান উনাদের জন্য পবিত্র ঈদ উনার দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি পবিত্র জুমুআ উনার নামায আদায় করতে আসবে, তিনি যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও কর্তব্য।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৯৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৭৩৫৫)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ سَيِّدُ الْاَيَّامِ وَاَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ وَهُوَ اَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ الْاَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيْهِ خَـمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلَى الْاَرْضِ وَفِيْهِ تَوَفَّى اللهُ حَضْرْتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ سَاعَةٌ لَا يَسْاَلُ اللهَ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا اِلَّا اَعْطَاهُ مَا لَـمْ يَسْاَلْ حَرَامًا وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُّقَرَّبٍ وَلَا سَـمَاءٍ وَلَا اَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَـحْرٍ اِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ‏.

অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমুআ শরীফ উনার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এদিনটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৭, আল মু’জামুল কবীর লিত ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫১১, বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭৩)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَ وَيَوْمَ النَّحْرِ وَاَيَّامَ التَّشْرِيْقِ عِيْدُنَا اَهْلَ الْاِسْلَامِ

অর্থ : “হযরত উক্ববা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র আরাফা শরীফ উনার দিন (অর্থাৎ পবিত্র ৯ যিলহজ্জ শরীফ), পবিত্র নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিন (অর্থাৎ পবিত্র ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ শরীফ) এবং পবিত্র আইয়্যামে তাশরীক (অর্থাৎ পবিত্র ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্জ শরীফ) আমাদের মুসলমানদের জন্য পবিত্র ঈদ উনার দিন।” (নাসাঈ শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : হাদীছ শরীফ নং ৩০০৪, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম, হাদীছ শরীফ নং ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : হাদীছ শরীফ নং ৭৭৩)

উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য খুশি প্রকাশের দিন তথা পবিত্র ঈদের দিনসমূহ হচ্ছেন- (১) ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (২) ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফ (৩) ইয়াওমুল আরাফাহ শরীফ (৪) আইয়্যামুত তাশরীক্ব অর্থাৎ ৯, ১০, ১১, ১২, ও ১৩ যিলহজ্জ শরীফ।

উক্ত পবিত্র ঈদের দিনসমূহের মধ্যে শুধুমাত্র ৫ দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতর, ঈদুল আদ্বহা এবং ঈদুল আদ্বহা উনার পরের ৩ দিন রোযা রাখা নিষেধ। আর অন্য ঈদের দিনসমূহে রোযা রাখা নিষেধ নয়। যেমন ইয়াওমুল ইছনাইন শরীফ, ইয়াওমুল জুমুআহ ও ইয়ামু আরাফাহ দিনসমূহে রোযা রাখা নিষেধ তো নয়ই, বরং আদেশ মুবারক করা হয়েছে এবং অশেষ ফযীলত ও ছওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الْاِثْنَيْنِ فَقَالَ‏ فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ

অর্থ: হযরত আবূ ক্বাতদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লাম উনাকে ইওয়ামুল ইছনাইন শরীফ উনার দিন রোযা রাখতে দেখে উক্ত মহান দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিনি জবাবে ইরশাদ মুবারক করেন, এদিন আমি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এদিনেই আমার প্রতি সম্মানিত কুরআন শরীফ নাযিল (শুরু) হয়েছে। (মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ)

পবিত্র আরাফা উনার দিবসে রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبـِى قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهٗ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهٗ.

অর্থ : “হযরত আবূ ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র আরাফাহ দিবসে রোযা রাখবে তার পিছনের এক বছরের এবং সামনের এক বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : হাদীছ শরীফ নং ১১৬২; আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছাওম : বাবু ফী ছাওমিদ্ দাহ্রি তাত্বওউ‘য়া : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৫; তিরমিযী শরীফ : কিতাবুছ ছাওম : বাবু মা জায়া ফী ফাদ্বলি ইয়াওমি আরাফাহ : হাদীছ শরীফ নং ৭৪৯; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : হাদীছ শরীফ নং ১৭৩০)

অতএব, উপরোক্ত দলীলসমৃদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত  হয় যে, সম্মানিত শরীয়তে কতিপয় ঈদ রয়েছে, যেদিন রোযা রাখা নিষেধ। রোযা না রেখে সেদিন ঈদ পালন করতে হয়। আবার অনেক ঈদ রয়েছে, যেদিনসমূহে রোযা রেখেই ঈদ পালন করতে হয়। সেদিনসমূহে রোযা রাখাই ঈদ বা খুশি প্রকাশের তারতীব।

কাজেই, সুওয়ালে উল্লেখিত উক্ত মালানার বক্তব্য মিথ্যা, বানোয়াট, গোমরাহীমূলক এবং সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী। এ ব্যাপারে সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ নেই।

 

সাইয়্যিদ আহমদ আবূ সাফওয়ান, পূর্ব গোড়ান, ঢাকা।

 

সুওয়াল: যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৭০তম (বিশেষ সংখ্যা) সংখ্যায় প্রকাশিত প্রথম সুওয়াল-জাওয়াব উনার মধ্যে ২৭ নং পৃষ্ঠার দ্বিতীয় কলামে উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা সনদসহ এবং তবারানী শরীফ ছাড়া আরো কোন কিতাবে উল্লেখ থাকলে তা সহ পুনরায় প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করছি।

জাওয়াব: উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা তবারানী শরীফ সহ আরো অনেক কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উক্ত কিতাবসমূহের নাম উল্লেখপূর্বক পবিত্র হাদীছ শরীফখানা সনদ সহকারে পেশ করা হলো।

যেমন- তবারানী শরীফ, জামিউল আহাদীছ, কানযুল উম্মাল, হিলইয়াতুল আউলিয়া, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, জামউল জাওয়ামি’, খাছায়িছুল কুবরা ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

حَضْرَتْ أَبُوْ نَعِيْمٍ أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْاِسْبَهَانِـىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ أَحْمَدَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَنَا بِكْرُ بْنُ سَهْلٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَنَا نَعِيْمُ بْنُ حَمَّادٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ سَعِيْدٍ بْنِ سِنَانَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَنَا أَبُوْ الزَّاهَرِيَّةِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ كَثِيْرِ بْنِ مُرَّةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰي عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِـىَ الدُّنْيَا فَأَنَا اَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلٰـى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلٰـى يَوْمِ القِيَامَةِ كَاَنَّـمَا اَنْظُرُ اِلٰـى كَفِّىْ هٰذِهٖ

অর্থ: হযরত আবূ নায়ীম আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইস্পাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের নিকট পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত সুলাইমান ইবনে আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি হযরত আবূ বিকির ইবনে সাহল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত নায়ীম ইবনে হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত বাক্বিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত সায়ীদ ইবনে সিনান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আবূ যাহারিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত কাছীর ইবনে মুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহূ তিনি পৃথিবীকে আমার সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি যেরূপ আমার হাত মুবারক উনার তালু মুবারক দেখে থাকি।” সুবহানাল্লাহ!

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন,ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খণ্ডন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, আমরা প্রথমত: প্রমাণ করেছি যে, মসজিদের ভিতরে, নামায পড়ার উদ্দেশ্যে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানোই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

দ্বিতীয়ত: প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায পড়াও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা হারাম। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতে কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। তাই চেয়ারে বসে নামায পড়া সুস্পষ্ট বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

তৃতীয়ত: আমরা প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ ক্বিয়াম করার সামর্থ থাকা সত্বেও চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে ফরয ক্বিয়াম তরক হয়। আর নামাযে ফরয তরক করলে নামায বাতিল  হয়।

চতুর্থত: আমরা প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে অনেক সময় চেয়ারে টেক লাগানো হয়। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে নামায অবস্থায় কোন কিছুর মধ্যে টেক দিয়ে, হেলান দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে দোহরানো ওয়াজিব।

পঞ্চমত: আমরা প্রমাণ করবো যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করা নামাযের কোন ছুরত নয়। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কারো যুগেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে নামায পড়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। বিধায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করা নামাযের কোন ছুরত নয়।

বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে নামায পড়ার তিন ছুরত।  অর্থাৎ (১) সাধারণভাবে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে হবে। (২) দাঁড়াতে না পারলে যমীনে বসে নামায আদায় করতে হবে। (৩) যমীনে বসে আদায় করতে না পারলে শুয়ে নামায আদায় করতে হবে।

স্মরণীয় যে, নামাযে দাঁড়ানো বলতে কোন কিছুর মধ্যে ঠেস বা হেলান না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানোকে বুঝানো হয়েছে। বসা বলতে নামাযে যেভাবে বসার নিয়ম; যমীনে বসা, অপরাগবশত চার জানু হয়েও বসতে পারে। একইভাবে শোয়া বলতে সাধারণভাবে শোয়াকে বুঝনো হয়েছে।

উল্লেখ্য, নামাযে দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া এ তিন অবস্থা দ্বারা সরাসরি যমীনের উপর দাঁড়িয়ে যমীনের উপর বসে এবং যমীনের উপর শুয়ে নামায আদায় করতে হবে। আর যমীন বলতে সরাসরি যমীন অথবা ঘরের মেঝে অথবা বিছানা হতে পারে। যেখানে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে নামায আদায় করা যায়।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِكُمْ

অর্থ: খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করো দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ

অর্থ: “যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলি ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

বলার অপেক্ষা রাখে না, পবিত্র নামায হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকিরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِىْ

অর্থ: পবিত্র নামায আদায় করো আমার যিকিরের উদ্দেশ্যে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

কাজেই, নামায পড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানো, যমীনে বসা ও শোয়ার যে তরতীব বা নিয়ম পবিত্র কুরআন শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে সেভাবে দাঁড়িয়ে, যমীনে বসে ও শুয়ে নামায আদায় করতে হবে।।

নিম্নে উল্লেখযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে কিছু আলোচনা করা হলো-

قَوْلُه تَعَالٰى: {اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ} قَالَ حَضْرَتْ عَلِىُّ بْنُ اَبِـيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ اَلنَّخْعِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْرَتْ قَتَادَةُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ: هَذَا فِـي الصَّلَاةِ يُصَلِّيْ قَائِمًا فَإِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبٍ.

অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে  সাইয়্যিদুনা হযরত র্ক্রাামাল্লাহু ওয়াজহাহু ইবনে আবী ত্বালিব আলাইহিস সালাম, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা, হযরত ইমাম নাখয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ক্বাদাদা রহমাতুল্লাাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেন; এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ফরয নামাযকে বুঝানো হয়েছে। কাজেই ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করবে। অতঃপর কেউ যদি ফরয নামায দাঁড়িয়ে  পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যমীনে বসে নামায আদায় করবে। আর যদি যমীনে বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে শুয়ে নামায পড়বে।” (কাজেই উক্ত আয়াত শরীফ উনার উদ্দেশ্য খোদ নামায । কেননা পবিত্র নামাযই মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির।)

(তাফসীরে আল্ বাগবী,  মুহইস সুন্নাহ, আবূ মুহম্মদ আল হুসাইন ইবনে মাসঊদ আল-বাগবী, ওফাত ৫১০ হিজরী। ২য় খ- ১৫২ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারুত ত্বাইয়্যিবাহ)

عَنْ حَضْرَتِ الضَّحَّاكِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِيْ قَوْلِهِ {اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ} قَالَ: إِنَّمَا هٰذَا فِي الصَّلَاةِ إِذَا لَمْ يَسْتَطِعْ قَائِمًا فَقَاعِدًا وَإِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ قَاعِدًا فَعَلٰى جَنْبِهٖ.

অর্থ: “ হযরত দ্বহ্হাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন; হযরত আব্দুল্লাহ্্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা  তিনি বলেন যে-

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যে, ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ফরয নামাযকে বুঝানো হয়েছে। (কাজেই ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করবে।) অতঃপর কেউ যদি ফরয নামায দাঁড়িয়ে  পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যমীনে বসে নামায আদায় করবে। আর যদি যমীনে বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যমীনে শুয়ে নামায পড়বে।” (তাফসীরে  আদ্দুরুল মানছূর ফীত তাফসীরি বিল মা’ছূর লিস্্সুয়ূত্বী, আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর আস্্সুয়ূত্বী, ওফাত ৯১১ হিজরী। ৪র্থ খ- ১৮০ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারুল হাজার, মিছর)

عَنْ حَضْرَتِ الضَّحَّاكِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اِبْنٍ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِيْ قَوْلِهِ {اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ} اَلْاٰيَةُ قَالَ: إِنَّمَا هَذَا فِي الصَّلَاةِ إِذَا لَّـمْ يَسْتَطِعْ قَائِمًا فَقَاعِدًا وَإِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ قَاعِدًا فَعَلٰى جَنْبِهٖ. وَقَدْ ثَبَتَ فِي الْبُخَارِيِّ مِنْ حَدِيْثِ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: كَانَتْ بِيْ بَوَاسِيْرُ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلَاةِ فَقَالَ: صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبٍ.

অর্থ: “ হযরত দ্বহ্হাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন; হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু  তিনি বলেন যে-

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যে, ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ফরয নামাযকে বুঝানো হয়েছে। (কাজেই ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করবে।) অতঃপর কেউ যদি ফরয নামায দাঁড়িয়ে  পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে বসে নামায আদায় করবে। আর যদি যমীনে বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যমীনে শুয়ে নামায পড়বে।” (কাজেই উক্ত আয়াত শরীফ উনার উদ্দেশ্য খোদ নামায। কেননা পবিত্র নামাযই মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির।)

আর উক্ত আয়াত শরীফকে ছাবিত করে “বুখারী শরীফে” উল্লেখ আছে-

“হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি অশ্ব রোগে আক্রান্ত ছিলাম। এজন্য আমি নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নামায আদায় করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, “আপনি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন, যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে না পারেন তাহলে যমীনে বসে আদায় করবেন। যদি তাও না পারেন, তাহলে শুয়ে আদায় করবেন।” (তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ আশ্শাওকানী, ওফাত ১২৫০ হিজরী, ২য় খ- ৬৮ পৃষ্ঠা)

قَوْلُه تَعَالٰى: (اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ) رُوِىَ حَضْرَتْ اِبْنُ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبِكَ تُوْمِىْ اِيْـمَاءً فَهَذَا مَعْنَى الْاٰيَةِ.

অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে  হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এবং হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  উনারা বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আপনি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন, যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে না পারেন তাহলে যমীনে বসে আদায় করবেন। যদি তাও না পারেন, তাহলে শুয়ে  ইশারা করে নামায আদায় করবেন । উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার এটাই অর্থ। অর্থাৎ আমাদেরকে ফরয নামায পড়তে হলে  (১) দাঁড়িয়ে (২) যমীনে বসে (৩) ও শুয়ে উক্ত তিন ছূরতের যে-কোন একটি ছূরতে নামায পড়তে হবে। (তাফসীরুস সাময়ানীআবূল মুযাফ্ফার মানছূর  ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল জাব্বার আস্-সাময়ানী, বিলাদাত ৪২৬ হিজরী, ওফাত ৪৮৯ হিজরী, ১ম খ- ৩৮৮ পৃষ্ঠাপ্রকাশনা: দারুল ওয়াতন, রিয়াদ)

اَمَّا قَالَ اللهُ تَعَالٰى : (يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا) ….. مَعْنَاهُ يُصَلُّوْنَ فِيْ هٰذِهِ الْأَحْوَالِ عَلٰى حَسْبِ اِسْتِطَاعَتِهِمْ. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعِمْرَانَ بْنِ الْـحُصَيْنِ صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبٍ تُوْمِىْ اِيْـمَاءً… وَهٰذِهِ حُجَّةٌ لِلشَّافِعِيْ رَحِمَهُ اللهُ فِيْ إِضْجَاعِ الْـمَرِيْضِ عَلٰى جَنْبِهٖ كَمَا فِي اللَّحَدِ. وَعِنْدَ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ رَحِمَهُ اللهُ أَنَّه يَسْتَلْقٰي حَتّٰى إِذَا وَجَدَ خُفَّةً قَعَدَ.

অর্থ : “অত:পর খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِـهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

উক্ত আয়াত শরীফ উনার অর্থ হলো এই অবস্থাগুলোতে অর্থাৎ দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া এই অবস্থাগুলোতে তাদের যথাসাধ্য অনুযায়ী তারা নামায পড়বে। কেননা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  উনাকে বলেছেন, “আপনি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন, যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে না পারেন;  তাহলে যমীনে বসে নামায আদায় করবেন। যদি তাও না পারেন, তাহলে শুয়ে  ইশারা করে নামায আদায় করবেন। ….. আর এটাই হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দলীল এই যে, অসুস্থ ব্যক্তি  তার পার্শ্বের উপর শুয়ে নামায পড়বে যেভাবে কবরে শুয়ানো হয়।

আর আমাদের সম্মানিত ইমাম, ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে নিশ্চয়ই অসুস্থ ব্যক্তি  চিত হয়ে যমীনে শুয়ে নামায পড়বেন। এমনকি তিনি যখন হালকা সুস্থতাবোধ করবেন, তখন যমীনে বসে নামায আদায় করবেন।” (তাফসীরুল কাশ্্শাফ আল্লামা জারুল্লাহি আবূল ক্বাসিম মাহমূদ ইবনে উমর আয-যামাখশারী, বিলাদাত ৪৬৭ হিজরী, ওফাত ৫৩৮ হিজরী, ১ম খণ্ড ৪৫৩ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারুল কিতাব আরবী বৈরুত)

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে নামায পড়ার তিন ছুরত।  অর্থাৎ (১) সাধারণভাবে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে হবে। (২) দাঁড়াতে না পারলে বসে নামায আদায় করতে হবে। (৩) বসে আদায় করতে না পারলে শুয়ে নামায আদায় করতে হবে। উক্ত তিন ছূরত ব্যতীত নামাযের চতুর্থ কোন ছূরত নেই। সুতরাং চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করা নামাযের কোন ছুরত নয়।

অতএব আমাদেরকে নামায পড়তে হলে উক্ত তিন  ছূরতের যে-কোন একটি ছূরতে নামায পড়তে হবে। এই তিন ছূরতই সম্মানিত শরীয়ত তথা সম্মানিত ইসলাম উনার ছূরত। এই তিন ছূরতের বাইরে  অন্য কোন ছূরতে যেমন, চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে নামায পড়া জায়িয হবে না। এই তিন ছূরতের বাইরে অন্য কোন ছূরত বা নিয়মনীতি তালাশ করা যাবে না। কেননা খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِـي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْـخَاسِرِيْنَ

অর্থ: “সম¥ানিত ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহন করতে চাইলে তা কখনও কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।”

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ