সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৮০তম সংখ্যা | বিভাগ:

খুবাইব আহমদ সাফওয়ান, পূর্বগোড়ান, ঢাকা।

সুওয়াল: আপনারা সম্মানিত মীলাদ শরীফ পাঠকালে ছলাত শরীফ বলার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক না বলে লক্বব মুবারক যথা রসূলিল্লাহ ও হাবীবিল্লাহ বলে থাকেন। আর অন্য যারা মীলাদ শরীফ পড়েন উনারা সরাসরি নাম মুবারক বলেন। আবার সালাম পেশ করার সময় আপনারা আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ইয়া হাবীবাল্লাহ বলেন। আর অন্যরা ইয়া নাবী সালামু আলাইকা, ইয়া রসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা বলে থাকেন।

সম্মানিত মীলাদ শরীফ পাঠের উক্ত দুই নিয়মের মধ্যে কোন নিয়মটি উত্তম? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: রাজারবাগ শরীফ উনার যিনি সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম- মাক্বামে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সর্বোপরি তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! কাজেই উনার প্রদত্ব ফতওয়া, মাসয়ালা ও আমল মুবারকই সম্মানিত সুন্নত মুয়াফিক, দলীলসমৃদ্ধ, সর্বাধিক আদবপূর্ণ ও উত্তম। কাজেই, তিনি যেসব আমল করেন এবং যেভাবে করেন সেটাকেই অনুসরণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন আখিরী নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার আনুষ্ঠানিক সম্মানিত নুবুওওয়াতী ও সম্মানিত রিসালাতী শান মুবারক প্রকাশের পর অতীতের সম্মানিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত দ্বীনসমূহেরও হুকুম রহিত হয়ে গেছে। ফলে, আখিরী উম্মতের জন্য উক্ত দ্বীনসমূহের হুকুম অনুসরণ করা বা মান্য করা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তবে অতীতের সম্মানিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বীনসমূহের যেসমস্ত হুকুম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যেও বলবৎ রয়েছে বা একই রকম রয়েছে তা যথার্থভাবেই অনুসরণ ও পালন করতে হবে। আর তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করেই পালন করতে হবে। তিনি যেভাবে পালন করেছেন বা যেভাবে পালন করতে বলেছেন, তিনি যা করতে বলেছেন এবং যা করতে নিষেধ করেছেন, হুবহু অনুসরণ করতে হবে।

অতঃপর উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্থলাভিষিক্ত খলীফা বা প্রতিনিধি হচ্ছেন খাছভাবে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা। উনাদেরকে অনুসরণ করার ব্যাপারে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِـىْ وَسُنَّةِ الْـخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْـمَهْدِيِّيـْنَ تَـمَسَّكُوْا بِـهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ.

অর্থ: আমার সুন্নত এবং সর্বাধিক সঠিকপথপ্রাপ্ত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত পালন করা তোমাদের জন্য ফরয ওয়াজিব। উক্ত সুন্নতসমূহ তোমরা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরার মতো শক্ত করে আঁকড়ে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

আর আমভাবে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা। উনাদেরকে অনুসরণ করার ব্যাপারে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

أَصْحَابـِىْ كُلُّهُمْ كَالنُّجُوْمِ فَبِاَيِّهِمْ اِقْتَدَيْتُمْ اِهْتَدَيْتُمْ.

অর্থ: আমার সম্মানিত ছাহাবীগণ উনারা প্রত্যেকে আসমানের নক্ষত্রসমূহের মতো। উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)

অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ খলীফা বা প্রতিনিধি হচ্ছেন যামানার সুমহান মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। আর আম প্রতিনিধি হচ্ছেন সকল উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। যেমন খাছ খলীফা বা প্রতিনিধি উনাদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْعَثُ لِـهٰذِهِ الْاُمَّةِ عَلٰى رَأْسِ كُلِّ مِأَةِ سَنَةٍ مَنْ يُّـجَدِّدُ لَـهَا دِيْنَهَا

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই উম্মতের (হিদায়েতের) জন্য প্রত্যেক হিজরী শতকের মাথায় এমন একজন সুমহান ব্যক্তি উনাকে প্রেরণ করবেন যিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তাজদীদ করবেন। অর্থাৎ তিনিই হচ্ছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-

مَنْ لَّـمْ يَعْرِفْ اِمَامَ زَمَانِهٖ فَقَدْ مَاتَ مَيْتَةَ الْـجَاهِلِيَّةِ

অর্থ: যে ব্যক্তি তার যামানার যিনি সম্মানিত ইমাম উনাকে চিনলো না, সে জাহিলী যুগের মৃতদের ন্যয় মৃত্যুবরণ করবে। অর্থাৎ তার মৃত্যু হিদায়েতের উপর হবে না। নাউযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)

আর আম প্রতিনিধি উনাদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ

অর্থ: নিশ্চয়ই আলিমগণ (হক্কানী-রব্বানী) হচ্ছেন হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী। (মিশকাত শরীফ)

কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নিজে পড়ে পড়ে আমল করলে, তা কখনই শুদ্ধ হবে না। যদি হতো তাহলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের প্রয়োজন ছিল না। মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি কিতাব নাযিল করে দিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। বরং কিতাব বা হুকুম-আহকাম নাযিল করার আগেই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পাঠিয়েছেন। তাই আখিরী নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অতঃপর উনাদের পর পর্যায়ক্রমে হযরত তাবিয়ীনে কিরাম, হযরত তাবে তাবিয়ীনে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে।

স্মরণীয় যে, হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম  উনাদের যামানা বা যুগ থেকেই হযরত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের ধারা শুরু হয়েছে। যিনি প্রথম মুজাদ্দিদ তিনি হচ্ছেন হানাফী মাযহাবের যিনি সম্মানিত ইমাম, যিনি ইমামে আ’যম হিসেবে সারাবিশ্বে মশহূর। তিনি সম্মানিত তাবিয়ী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সময়কাল হচ্ছে দ্বিতীয় শতাব্দী। আর বর্তমান সময়কাল হচ্ছে পঞ্চদশ শতাব্দী। এ শতাব্দীকালে সুমহান ইমাম এবং মহান মুজাদ্দিদে আ’যম তথা মুজাদ্দিদকুল শিরমণি হচ্ছেন পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। যিনি মহাসম্মানিত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, যিনি সম্মানিত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বিগত সম্মানিত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিলায়েত ও মুজাদ্দিদিয়াত উনার সত্যায়নকারী এবং তিনি সমসাময়িক সকল হক্কানী-রব্বানী আলিম এবং আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাদানকারী।

উল্লেখ্য, সাধারণত মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কোন ফতওয়া, কোন মাসয়ালা, কোন তাজদীদ, কোন আমল মুবারক অতীতের কোন সম্মানিত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফতওয়া, মাসয়ালা, আমল বা তাজদীদ মুবারক উনার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তবে সম্মানিত মাযহাব ভেদে ব্যতিক্রম হতে পারে। কিন্তু একই মাযহাব হওয়া সত্ত্বে ব্যতিক্রম হলে বুঝতে হবে অতীতের সম্মানিত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফতওয়া, মাসয়ালা, আমল ও তাজদীদ মুবারকসমূহের চূড়ান্ত বা পূর্ণাঙ্গরূপ হচ্ছে সম্মানিত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ফতওয়া, মাসয়ালা, তাজদীদ ও আমল মুবারকসমূহ। সুবহানাল্লাহ!

উদাহরণস্বরূপ হানাফী মাযহাবের অতীতের অনেক সম্মানিত ইমাম ও মুজতাহিদ উনারা ফতওয়া দিয়েছেন যে, মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।

কিন্তু মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ফতওয়ার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করে ফতওয়া প্রকাশ করেছেন যে, মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী; এটা হচ্ছে আম ফতওয়া। কিন্তু খাছ বা মূল ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া কুফরী। কেননা, মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার  দ্বারা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত মতকে অমান্য করা হয়। অমান্য করা হয় হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আদেশ মুবারককে এবং অনুসরণীয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমায়ে আযীমতকে, যা প্রকাশ্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

আলোচ্য পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়ার মাসয়ালার ক্ষেত্রেও তাই।

প্রকাশ থাকে যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান-শুয়ূনাত মুবারক বর্ণনা করা, ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করা, খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেয়া ইত্যাদির উদ্দেশ্যে।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন-

وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান মুবারক করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তথা সদাসর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করো। (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৯)

কাজেই, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনার উদ্দেশ্যে বসা অবস্থায় ছলাত শরীফ পাঠ করা হয়। উক্ত ছলাত শরীফ স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে অনবরত পাঠ করেন। সুবহানাল্লাহ! এবং তিনি আমাদেরকেও পাঠ করার জন্য আদেশ মুবারক করেন। অতঃপর উক্ত ছলাত শরীফ পাঠ করার পাশাপাশি তিনি আমাদেরকে যথাযথ সম্মানে সালাম মুবারক পেশ করার জন্যও আদেশ মুবারক করেন। যার কারণে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া হয় বা পেশ করা হয়। সুবাহনাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করেন। হে ঈমানদারগণ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আপনারাও ছলাত শরীফ পেশ করুন এবং উনার প্রতি যথাযথ সম্মানে সালাম মুবারক পেশ করুন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫৬)

স্মরণীয় যে, কুল-মাখলূক্বাতের যিনি সম্মানিত নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে আদব ও সম্মান বজায় রাখা উম্মতের জন্য ফরয। এটা মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَا تَجْعَلُوْا دُعَآءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا

অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে সম্বোধন করে থাকো সেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করো না। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৩)

অর্থাৎ মানুষেরা একজন আরেকজনকে যেভাবে সম্বোধন করে থাকে বা ডেকে থাকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সর্বোপরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেভাবে সম্বোধন করা জায়িয নেই।

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক লেখা, বলা বা উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে আদব ও সম্মান রক্ষা করার বিষয় রয়েছে। যদি উনার সম্মানিত নাম মুবারক লেখা, বলা বা উচ্চারণের ক্ষেত্রে আদব ও সম্মানের ত্রুটি হয়ে যায় তাহলে সেটা কুফরী হবে এবং ঈমান নষ্টের কারণ হবে। নাউযুবিল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক লেখা, বলা বা উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে আদব হলো, যেখানে উনার সম্মানিত নাম মুবারক না লিখে, না বলে বা উচ্চারণ না করে কেবল উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক লেখা, বলা বা উচ্চারণ করাই যথেষ্ট হয় সেক্ষেত্রে উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক লেখা, বলা বা উচ্চারণ করাই আদব।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যেই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা সম্মানিত ছলাত শরীফ পাঠের আদেশ মুবারক দেয়া হয়েছে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক উল্লেখ না করে সম্মানিত লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

যার কারণে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অনুসরণে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকালে ছলাত শরীফ পড়ার সময় নাম মুবারক না বলে লক্বব মুবারক উচ্চারণ করার অনবদ্য তাজদীদ মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

উনার প্রকাশিত তাজদীদ মুবারক হচ্ছেন-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مَوْلَانَا رَسُوْلِ اللهِ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ).

وَعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا حَبِيْبِ اللهِ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

“আল্লাহুম্মা ছল্লি ‘আলা সাইয়্যিদিনা মাওলানা রসূলিল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। ওয়া ‘আলা আলি সাইয়্যিদিনা মাওলানা হাবীবিল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)”

অর্থাৎ সম্মানিত নাম মুবারক উনার স্থানে প্রথমে ‘রসূলিল্লাহ’ এবং পরে ‘হাবীবিল্লাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক দুখানা উল্লেখ করেছেন।

আরো উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ হচ্ছেন ওহীয়ে মাতলূ’ অর্থাৎ হুবহু তিলাওয়াত করতে হয়, আর পবিত্র হাদীছ শরীফ যদিও ওহী কিন্তু তা ওহীয়ে গইরে মাতলূ’ হওয়ার কারণে হুবহু তিলাওয়াত বা পাঠ করতে হয় না। কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক উল্লেখ রয়েছে সেখানে নাম মুবারক বলা বা উচ্চারণ করা সম্মানিত শরীয়ত উনার মুবারক নির্দেশ। এছাড়া সম্মানিত আযান, ইক্বামত ও নামায উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে হয় এবং পবিত্র কালিমা শরীফ, পবিত্র খুতবাহ শরীফ এরূপ কতক নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত বাকী অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে সম্মানিত লক্বব মুবারক উচ্চারণ করাটাই সম্মান ও আদবের অন্তর্ভুক্ত।

এক্ষেত্রে একটা উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কায়িনাতের সবকিছুই দৃশ্যমান অর্থাৎ তিনি দেখে থাকেন। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّا اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাক্ষ্যদানকারী বা প্রত্যক্ষকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ قَدْ رَفَعَ لِـىَ الدُّنْيَا فَأَنَا اَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلٰـى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلٰـى يَوْمِ القِيَامَةِ كَاَنَّـمَا اَنْظُرُ اِلٰـى كَفِّىْ هٰذِهٖ

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীকে আমার সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি যেরূপ আমার হাত মুবারকের তালু মুবারক দেখে থাকি।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোনকিছু দেখার জন্য, জানার জন্য বা শোনার জন্য কোথাও যাওয়ার মোটেও প্রয়োজন নেই। পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করেই সারা কায়িনাতের সমস্ত সংবাদ নিতে পারেন ও নিয়েও থাকেন। এটা উনার সম্মানিত ইলিম ও সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। যেরূপ খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ইলিম ও সম্মানিত কুদরত মুবারকের মাধ্যমে সারা কায়িনাতের সমস্ত সংবাদ জেনে থাকেন ও নিয়ে থাকেন।

তাহলে আমরা যা করছি, যা পড়ছি তা যদি উপস্থিত ব্যক্তির মতো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখেন তাহলে উনার নাম মুবারক কি করে উচ্চারণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উনার লক্বব মুবারক উচ্চারণ করা ব্যতীত কোন উপায় আছে কি? পিতার উপস্থিতিতে কোন সন্তান পিতার নাম উচ্চারণ করে না। যদি তাই হয় তাহলে যিনি সমস্ত পিতারও সম্মানিত পিতা, সমস্ত কায়িনাতের যিনি সম্মানিত পিতা উনার উপস্থিতিতে কিভাবে উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা যাবে? উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করলে আদব হবে কি, না চরম বেয়াদবী হবে? আর উনার সুমহান শানে বেয়াদবী হলে ঈমান থাকবে কি? কখনই ঈমান থাকবে না।

মোটকথা, যেসব স্থানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করেছেন কেবল সেসব স্থানেই উনার পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করা যাবে আর অন্যসব স্থানে উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক উচ্চারণ করতে হবে। এমনকি সম্মানিত নাম মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সম্মানিত নাম মুবারক লেখা বা বলার কোনই প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে লক্বব মুবারক লেখা বা বলাই যথেষ্ট এবং সম্মান ও আদবের অন্তর্ভুক্ত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পরিচয় মুবারক এবং বুলন্দ শান মুবারক প্রকাশের জন্য যথাক্রমে

اَلنَّبِـىُّ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

বা

نَبـِىُّ اللهِ

(صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

رَسُوْلُ اللهِ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

حَبِيْبُ اللهِ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

উক্ত সম্মানিত লক্বব মুবারকত্রয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যার কারণে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে উক্ত সম্মানিত তিনখানা লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্মানিত نَبِـىُّ اللهِ ‘নাবিয়্যুল্লাহ’ লক্বব মুবারক হতে অতি খাছ লক্বব মুবারক হচ্ছেন সম্মানিত رَسُوْلُ اللهِ ‘রসূলুল্লাহ’ লক্বব মুবারক। আর حَبِيْبُ اللهِ ‘হাবীবুল্লাহ’ লক্বব মুবারক হচ্ছেন সর্বাধিক খাছ লক্বব মুবারক। উক্ত সম্মানিত ‘হাবীবুল্লাহ’ লক্বব মুবারকখানি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

আর তাই পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করার সময় ‘আলা শব্দ মুবারক উনার পর যথাক্রমে রসূলিল্লাহ এবং হাবীবিল্লাহ লক্বব মুবারকদ্বয় উল্লেখ করা হয়েছে। আর পবিত্র সালাম মুবারক পেশ করার সময় ইয়া শব্দ মুবারক উনার পর যথাক্রমে রসূলাল্লাহ, নাবিয়্যাল্লাহ ও হাবীবাল্লাহ লক্বব মুবারকত্রয় উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি “রসূলুল্লাহ” লক্বব মুবারক উনার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ও ব্যাপক হওয়ায় ছলাত শরীফ ও সালাম মুবারক উভয় স্থানে প্রথমেই উক্ত রসূলুল্লাহ লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে।

আর সালাম মুবারক পেশ করার যে নিয়ম ও আদব তা হচ্ছে, প্রথমেই اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আসসালামু ‘আলাইকুম) বাক্য মুবারক বলতে হবে। তারপর সম্বোধনসূচক বাক্য মুবারক উল্লেখ করতে হবে। সেটাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রতিভাত। এমন বর্ণনা বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুয়াত্তা মালিক শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবসমূহে উল্লেখ রয়েছে।

বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের একটি দলের নিকট গিয়ে সালাম দেয়ার জন্য বললেন এবং আরো বলে পাঠালেন যে, আপনার সালামের জাওয়াবে উনারা কি বলেন তা শ্রবণ করুন। কেননা সেটাই হবে আপনার এবং আপনার সন্তানদের সালাম। তখন তিনি গিয়ে “আসসালামু আলাইকুম” বলে সালাম প্রদান করলেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ,  মিশকাত শরীফ)

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম পেশ করার ক্ষেত্রেও অবশ্যই সর্বোচ্চ আদব বজায়ে পেশ করতে হবে।

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ না বলে  اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ বলে সালাম পেশ করা হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও সালাম পেশ করা হয়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি একক হওয়া সত্বে উনার জন্য বহুবচন ক্রিয়া বা সর্বনাম ব্যবহার করা হয় সুমহান সম্মান-মর্যাদা প্রকাশের জন্য। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, নিম্নোক্ত তরতীবে সালাম মুবারক পেশ করতে হবে। যথা-

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا نَبِـىَّ اللهِ

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا حَبِيْبَ اللهِ

صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْكُمْ

স্মরণীয় যে, শুরুতেই সম্বোধন করে কাউকে সালাম দেয়া কখনোই সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আদব মুবারক উনারও অন্তর্ভুক্ত নয়।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلسَّلَامُ قَبْلَ الْكَلَامِ কথার আগেই সালাম পেশ করবে। (তিরমিযী শরীফ)

যার কারণে মহান মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকালে সালাম পেশ করার পূর্বের নিয়ম পরিবর্তন করে বর্তমানে পঠিত নিয়ম মুবারক প্রবর্তন ও প্রচলন করেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, মহান মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করার ক্ষেত্রে যে তাজদীদ মুবারক করেছেন সেটাই উত্তম এবং সেটাই সকলের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে উক্ত সম্মানিত তাজদীদ মুবারক অনুযায়ী পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

আহমদ মাহমুদা মিতু, শেরপুর, বগুড়া

 

সুওয়াল: কিছু কিছু কিতাবে দেখা যায়, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি জীবনে একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করা ফরয, মজলিসের মধ্যে একবার পাঠ করা ওয়াজিব আর একের অধিকবার পাঠ করা মুস্তাহাব। উক্ত মাসয়ালাটি কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: উক্ত মাসয়ালাটি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ হওয়ার কারণে তা মোটেও সঠিক হয়নি বা সঠিক নয়। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِنَّ اللهَ وَمَلآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

র্অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করেন। হে ঈমানদাররা! উনার প্রতি তোমরাও ছলাত শরীফ বা দুরূদ শরীফ পেশ করো এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সালাম মুবারক পেশ করো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আলোকে প্রতিভাত যে, স্বয়ং যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সদাসর্বদা ছলাত শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করে যাচ্ছেন। এবং সাথে সাথে উনার সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও ছলাত শরীফ পেশ করে যাচ্ছেন। একইভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করার জন্য এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তথা দাঁড়িয়ে সালাম মুবারক পেশ করার জন্য ঈমানদারদেরকে আদেশ মুবারক করেছেন।

পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত صَلُّوْا (ছল্লূ) এবং سَلِّمُوْا (ছাল্লিমূ) শব্দদ্বয় আমর তথা আদেশসূচক ক্রিয়া যা সাধারণভাবে ফরয-ওয়াজিবের অর্থ প্রদান করে। কাজেই উম্মতের জন্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দায়িমীভাবে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করা বা উনার ছানা-ছিফত করা হচ্ছে ফরয-ওয়াজিব। যিনি যতবেশী ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করবেন বা ছানা-ছিফত করবেন তিনি ততবেশী ফযীলত, রহমত, নিয়ামত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أُبَىّ ِ بْنِ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّـِىْ أُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِىْ؟ فَقَالَ: مَا شِئْتَ قُلْتُ اَلرُّبُعَ؟ قَالَ: مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكَ . قُلْتُ: اَلنّـِصْفَ؟ قَالَ: مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكَ قُلْتُ: فَالثُّلُثَيْنِ؟ قَالَ: مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكَ قُلْتُ: اَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِىْ كُلَّهَا؟ قَالَ: قَالَ إِذًا تُكْفٰى هَمُّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ.

অর্থ: “হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি ছলাত শরীফ পেশ করতে চাই, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করতে চাই। তাহলে আমি কী পরিমাণ সময় আপনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো? অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি কত ঘণ্টা আপনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করবো বা আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা। আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ সময় তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টা আপনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো? নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি অর্ধেক সময় তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা আপনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো? নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি দুই তৃতীয়াংশ সময় তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা আপনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো? নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে। তখন আমি বললাম, তাহলে আমি আমার সম্পূর্ণ সময় তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৪ ঘণ্টাই আপনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো। তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যদি আপনি তা করেন, তখন আপনার সমস্ত নেক মাক্বছূদগুলো পূর্ণ করে দেয়া হবে এবং আপনার সমস্ত গুনাহখতাগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (তিরমিযী শরীফ, মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৪২১, শুয়াবুল ঈমান ৩/১৩৮, মিশকাত শরীফ, জামিউল আহাদীছ ৩২/৩৭৩, জামিউল উছূল ১১/৮৪৬৭, রিয়াদুছ ছালিহীন ১/৩৪৭ ইত্যাদি)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ২৪ ঘন্টা তথা জিন্দেগীর পুরো সময়ব্যাপী ছলাত শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করা বা উনার ছানা-ছিফত করার জন্য বলা হয়েছে এবং সাথে সাথে উক্ত সম্মানিত আমল বা ইবাদত উনার বেমেছাল প্রতিদানের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। তা হচ্ছে- উম্মতের কেউ যদি স্বীয় হায়াতে জিন্দেগীর পুরো সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করে, সালাম শরীফ পেশ করে, উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেন, উনাকে পরিপূর্ণ ইত্তেবা বা অনুসরণ করে, উনার যিকিরে-ফিকিরে, ধ্যানে-খেয়ালে ও মুহব্বতে অতিবাহিত করে, তাহলে তার জীবনের সমস্ত  গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তার সমস্ত নেক মাকছূদ বা সমস্ত নেক চাহিদা পূরণ করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

বর্ণিত হয়েছে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে রসূল হিসেবে মনোনিত হওয়ার পেছনে বিশেষ দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। (এক) তিনি সৃষ্টি হওয়ার পর একাধারে (১০,০০০) দশ হাজার বছর দাঁড়ানো অবস্থায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করেছিলেন। (দুই) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত-রিছালাত মুবারক প্রকাশের ২৩ বছরে ২৪ হাজার বার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইসম বা নাম মুবারক যতবার বলা হবে, শ্রবণ করা হবে, লেখা হবে ততবারই উনার প্রতি ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করাটা ফরয-ওয়াজিব। এটাই সম্মানতি দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক বা বিশুদ্ধ ফতওয়া ও মাসয়ালা। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهٗ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَىَّ

অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধুসরিত হোক অর্থাৎ সে অপমানিত হোক যার নিকট আমার নাম মুবারক উচ্চারিত হলো অথচ সে আমার প্রতি ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করলো না। (তিরমিযী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏اَلْبَخِيْلُ الَّذِيْ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهٗ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَىَّ

অর্থ: হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বখিল ঐ ব্যক্তি যার নিকট আমার নাম মুবারক উচ্চারণ করা হয় অথচ সে আমার প্রতি ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করে না। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اُحْضُرُوا الْمِنْبَرَ فَحَضَرْنَا فَلَمَّا ارْتَقٰى دَرَجَةً قَالَ اٰمِيْنَ فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ الثَّانِيَةَ قَالَ اٰمِيْنَ فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ الثَّالِثَةَ قَالَ اٰمِيْنَ فَلَمَّا فَرَغَ نَزَلَ مِنَ الْمِنْبَرِ قَالَ: فَقُلْنَا لَهٗ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ سَمِعْنَا الْيَوْمَ مِنْكَ شَيْئًا لَمْ نَكُنْ نَسْمَعُهٗ قَالَ إِنَّ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَرَضَ لِيْ فَقَالَ بَعُدَ مَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهٗ فَقُلْتُ اٰمِيْنَ فَلَمَّا رَقَيْتُ الثَّانِيَةَ قَالَ بَعُدَ مَنْ ذُكِرْتَ عِنْدَهٗ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ فَقُلْتُ اٰمِيْنَ فَلَمَّا رَقَيْتُ الثَّالِثَةَ قَالَ بَعُدَ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ الْكِبَرَ عِنْدَهٗ أَوْ أَحَدَهُـمَا فلَمْ يُدْخِلَاهُ الْـجَنَّةَ فَقُلْتُ اٰمِيْنَ

অর্থ: “হযরত কা’ব ইবনে উজরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, (একদিন) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (হে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম!) আপনারা মিম্বর শরীফ উনার নিকটবর্তী হোন। আমরা সকলেই মিম্বর শরীফ উনার নিকটবর্তী হলাম। অতঃপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার প্রথম সিঁড়ি মুবারক-এ পবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক বা পা মুবারক রাখলেন তখন তিনি বললেন, ‘আমীন’! যখন দ্বিতীয় সিঁড়ি মুবারক-এ পবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক বা পা মুবারক রাখলেন তখন তিনি বললেন, ‘আমীন’! যখন তৃতীয় সিঁড়ি মুবারক-এ পবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক পা মুবারক রাখলেন তখন তিনি বললেন, ‘আমীন’! অতঃপর নছীহত মুবারক শেষে যখন পবিত্র মিম্বর শরীফ থেকে অবতরণ করলেন, তখন আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আজকে আমরা আপনার নূরুস সালাম (যবান মুবারক) থেকে এমন কিছু কথা মুবারক শুনলাম যা এর পূর্বে কখনো শুনিনি। তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (আমি যখন প্রথম সিঁড়ি মুবারক-এ নূরুদ দারাজাত মুবারক বা পা মুবারক রাখলাম তখন) হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তি হালাক, জাহান্নামী; যে ব্যক্তি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মাস পাওয়ার পরও নিজের গুনাহখতা ক্ষমা করাতে পারেনি। আমি বললাম- ‘আমীন’। (অতঃপর যখন আমি দ্বিতীয় সিঁড়ি মুবারক-এ পবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক বা পা মুবারক রাখলাম তখন) হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেন, যার সম্মুখে আপনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা হয় অথচ সে আপনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করে না; সে ধ্বংস, জাহান্নামী। আমি বললাম- ‘আমীন’। অর্থাৎ সে নিশ্চিত ধ্বংসপ্রাপ্ত ও জাহান্নামী। (অতঃপর যখন তৃতীয় সিঁড়ি মুবারক-এ পবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক বা পা মুবারক রাখলাম তখন) হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তি হালাক, জাহান্নামী; যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতা দুজনকে অথবা একজনকে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা অবস্থায় পাওয়ার পরও খিদমত দ্বারা তাদেরকে সন্তুষ্ট করে জান্নাত লাভ করতে পারলো না। আমি বললাম- ‘আমীন’।” (শুয়াবুল ঈমান, মুসতাদরাক লিল হাকিম)

উপরোল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে স্পষ্টভাবে সাব্যস্ত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ইসম বা নাম মুবারক বলা বা লেখা বা শ্রবণ করার পর যারা ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করবেনা তারা বখিলের অন্তর্ভুক্ত। এবং তারা পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত তথা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। নাউযুবিল্লাহ!

সুতরাং, বখিলী ও জাহান্নাম হতে বেঁচে থাকা যেহেতু ফরয সেহেতু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র ইসম বা নাম মুবারক যখনই এবং যতবারই বলা হবে, শোনা হবে ও লেখা হবে তখনই ও ততবারই সম্মানিত ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ তথা দুরূদ শরীফ পেশ করাটা সম্মানিত ফরয-ওয়াজিব উনার অন্তর্ভুক্ত হবে।

 

মুহম্মদ ইবনে মুনীরুজ্জামান, বগুড়া

 

সুওয়াল: মীলাদ শরীফ বিরোধীদের বক্তব্য হচ্ছে হাদীছ শরীফে শুধুমাত্র দুরূদে ইবরাহীম শরীফ পাঠ করার জন্য বলা হয়েছে। অথচ মীলাদ শরীফ পাঠকারীগণ উক্ত দুরূদ শরীফ বাদ দিয়ে অন্য দুরূদ শরীফ বানিয়ে পাঠ করে থাকেন। এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়তে হলে শুধুমাত্র দুরূদে ইবরাহীম শরীফই পড়তে হবে, অন্য কোন দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না; এ বক্তব্য মীলাদ শরীফ বিরোধীদের সম্পূর্ণই মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও গোমরাহীমূলক।  কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের কোথাও বলা হয়নি যে, দুরূদে ইবরাহীম শরীফ ব্যতীত অন্য কোন দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না। বরং মীলাদ শরীফ বিরোধীরা বুখারী শরীফ থেকে দুরূদে ইবরাহীম শরীফ সংক্রান্ত যে হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে পেশ করেছে সেই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার মধ্যেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উনার পর

صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

দুরূদ শরীফখানা লিখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বুখারী শরীফ কিতাবে উক্ত দুরূদ শরীফখানা হাজার হাজার বার লিখেছেন। সুতরাং মীলাদ শরীফ বিরোধীরা যার কিতাবের হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল পেশ করেছে তিনিই তাদের বিরোধী। নাউযুবিল্লাহ!

তাছাড়া মীলাদ শরীফ বিরোধীরাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকের পর দুরূদে ইবরাহীম পাঠ করে না। বরং তারাও নাম মুবারকের পর ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ দুরূদ শরীফখানা পাঠ করে থাকে। কাজেই তাদের বক্তব্য স্ববিরোধী, বাতিল ও পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হলো।

মূল কথা হলো, পবিত্র দুরূদ শরীফ উনার কালাম বা বাক্যসমূহ নির্দিষ্ট নয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দুরূদ শরীফ উনার কালাম বা বাক্যসমূহ বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ زَيْدِ بْنِ خَارِجَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ أَنَا سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ‏ صَلُّوْا عَلَىَّ وَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَاءِ وَقُوْلُوْا اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَّعَلٰى اٰلِ (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ‏ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

অর্থ: হযরত যায়িদ বিন খারিজা  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে (দুরূদ শরীফ পাঠ করার বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করলাম, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পড়–ন এবং চেষ্টা করে দোয়া করুন। এভাবে বলুন, ‘আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদিওঁ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়া আলা আলি (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদ’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

অন্যত্র হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র দুরূদ শরীফ কিভাবে পড়তে হবে তা জিজ্ঞাসা করলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُوْلُوْا اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَّأَزْوَاجِهٖ وَذُرِّيَّتِهٖ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ (سَيِّدِنَا)  إِبْرَاهِيمَ (عَلَيْهِ السَّلَامُ) وَبَارِكْ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَّأَزْوَاجِهٖ وَذُرِّيَّتِهٖ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ (سَيِّدِنَا) إِبْرَاهِيْمَ (عَلَيْهِ السَّلَامُ) إِنَّكَ حَـمِيْدٌ مَـجِيْدٌ

অর্থ: বলুন, “আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদিওঁ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়া আঝওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা ছল্লাইতা আলা আলি ইবরাহীমা ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আঝয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা বারকতা আলা আলি (সাইয়্যিদিনা) ইবরাহীমা (আলাইহিস সালাম) ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। (বুখারী শরীফ)

অপর একটি বর্ণনায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُوْلُوْا اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى (سَيِّدِنَا) إِبْرَاهِيْمَ (عَلَيْهِ السَّلَامُ) وَبَارِكْ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَعَلٰى اٰلِ (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى (سَيِّدِنَا) إِبْرَاهِيْمَ (عَلَيْهِ السَّلَامُ)

অর্থ: বলুন, “আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা (সাইয়্যিদিনা)  মুহাম্মাদিন (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  আব্দিকা ওয়া রসূলিকা কামা ছল্লাইতা আলা (সাইয়্যিদিনা) ইবরাহীমা (আলাইহিস সালাম) ওয়া বারিক আলা (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদিওঁ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়া আলা আলি (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদিং (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কামা বারকতা আলা (সাইয়্যিদিনা) ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)।

মসজিদে প্রবেশের সময় ও বের হওয়ার সময় দুরূদ শরীফ পড়ার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَ دَخَلَ الْـمَسْجِدَ قَالَ بِسْمِ اللهِ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُـحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَّاِذَا خَرَجَ قَالَ بِسْمِ اللهِ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُـحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন, বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আর যখন বের হতেন তখন বলতেন, বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি উনার এক ছাত্র যায়িদ বিন ওয়াহাবকে নছীহত করেছেন-

يَا زَيْدُ بْنُ وَهَبٍ لَا تَدْعُ اِذَا كَانَ يَوْمُ الْـجُمُعَةِ اَنْ تُصَلِّىَ عَلَى النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْفَ مَرَّةٍ تَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى )سَيِّدِنَا) مُـحَمَّدٍ النَّبِـىِّ الْاُمِّىِّ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ(

অর্থ: হে যায়িদ বিন ওয়াহাব! জুমুয়ার দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এক হাজার বার দুরূদ শরীফ পড়তে ভুল করবেন না। এভাবে বলবেন-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُـحَمَّدٍ النَّبِـىِّ الْاُمِّىِّ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত যে, দুরূদ শরীফ উনার বাক্যসমূহ একই রকম নয়। অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার দুরূদ শরীফের কথা উল্লেখ রয়েছে।

স্মরণীয় যে, পবিত্র দুরূদ শরীফ হচ্ছে দোয়া বিশেষ। দোয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন বাক্য ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে শুধু বাক্যসমূহ শরীয়তসম্মত ও প্রার্থনাবাচক হলেই যথেষ্ট। যেমন আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে মুনাজাত করার সময় শরীয়তসম্মত যেকোন বাক্য ব্যবহার করে থাকি। এতে নির্দিষ্ট কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অনুরূপ দুরূদ শরীফ পাঠের জন্যও নামায ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শব্দ বাধ্যতামূলক নয়।

যার কারণে দেখা যায় ইসলামী লেখকগণ উনাদের লিখিত কিতাবের শুরুতেই একেকজন একেক রকম দুরূদ শরীফ লিখে থাকেন। যেমন-

اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَـمِيْنَ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِ الْاَنْبِيَاءِ وَالْـمُرْسَلِيْنَ وَعَلٰى اٰلِه وَاَصْحَابِه اَجْمَعِيْنَ

(আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন, ওয়াল আক্বিবাতু লিল মুত্তাক্বীন, ওয়াছ্ছলাতু ওয়াসসালামু আলা সাইয়্যিদিল আম্বিয়ায়ি ওয়াল মুরসালীন ওয়া আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী আজমাঈন)

এরকম ইসলামী শরীয়তের সকল কিতাবের শুরুতে সম্মানিত মুফতী, মুহাদ্দিছ ও মুফাসসিরগণ নিজ নিজ পছন্দের শব্দ দিয়ে একেকভাবে দুরূদ শরীফ লিখেছেন। সুতরাং এ থেকে বুঝা গেল দুরূদ শরীফের জন্য নির্দিষ্ট শব্দ নেই, বরং যত সুন্দরভাবে পাঠ করা যায় ততই উত্তম।

অনুরূপ বক্তব্য দেয়ার শুরুতে সবাই পাঠ করেন-

نَـحْمَدُهٗ وَنُصَلِّىْ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْـمِ

(নাহমাদুহূ ওয়া নুছল্লী আলা রসূলিহিল কারীম)

এ পবিত্র দুরূদ শরীফখানা বর্ণিত দুরূদে ইবরাহীম শরীফ নয়, সময় সংক্ষেপের জন্য অনির্দিষ্ট শব্দাবলী ব্যবহার করে দুরূদ শরীফখানা সকলেই পড়ে থাকেন। এরপরও যারা বলবে দুরূদে ইবরাহীম ছাড়া অন্য দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না বা দুরূদ শরীফ উনার শব্দসমূহ নির্দিষ্ট, তাহলে তা তাদের স্ববিরোধী বক্তব্য ও চরম জিহালতী ছাড়া আর কিছু নয়।

অনুরূপভাবে জুমুআর নামাযের খুৎবা পাঠের সময় কয়েকটি দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। তন্মধ্যে একটি হলো-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَيْهِ

‘আল্লাহুম্মা ছল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আলাইহি’ এ পবিত্র দুরূদ শরীফখানা দুরূদে ইবরাহীম শরীফ নয়। বরং ছাহিবে খুতবাহ কর্তৃক লিখিত দুরূদ শরীফ। অথচ মীলাদ শরীফ বিরোধীরাও তা জুমুআর খুতবায় ক্বিয়াম সহকারে পাঠ করে থাকে।

সুতরাং, মীলাদ শরীফ বিরোধীদের আমল দ্বারাই প্রমাণিত যে, তারা নিজেরাই তাদের আপত্তির বিরোধিতা করে। নাউযুবিল্লাহ!

মূলত পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে দুরূদে ইবরাহীম শরীফ না পড়ে অন্য দুরূদ শরীফ পড়ার মূল যে কারণ তা হচ্ছে-

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করেন। হে ঈমানদারগণ! আপনারাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করুন এবং সালাম পেশ করুন পেশ করার মতো অর্থাৎ আদব সহকারে সালাম মুবারক পেশ করুন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ উনার পাশাপাশি সালাম মুবারকও পেশ করার কথা বলেছেন। অর্থাৎ শুধু দুরূদ শরীফ নয়, আবার শুধুমাত্র সালাম মুবারকও নয়। উভয়টি পড়ার নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে।

যেমন অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اِذَا صَلّٰى عَلَى النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلْيَجْمَعْ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالتَّسْلِيْمِ فَلَا يَقْتَصِرْ عَلٰى اَحَدِهِـمَا يَقُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ فَقَطْ وَلَا عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَطْ

অর্থ: যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তখন ছলাত শরীফ (দুরূদ শরীফ) এবং সালাম শরীফ অবশ্যই যেন একসাথে পড়া হয়। ছলাত শরীফ (দুরূদ শরীফ) ও সালাম শরীফ উভয়ের একটিও যেন বাদ না পড়ে। শুধুমাত্র ছল্লাল্লাহু আলাইহি পড়বে না। অথবা শুধুমাত্র আলাইহিস সালাম পড়বে না। বরং একসাথেই পড়বে।

অনুরুপ ইমাম ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

فَقَطْ وَهٰذَا الَّذِىْ قَالَهٗ مُنْتَزَعٌ مِّنْ هٰذِهِ الْاٰيَةِ الْكَرِيْـمَةِ وَهِىَ قَوْلُهٗ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا فَالْاَوْلٰى اَنْ يُّقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: শুধুমাত্র ছল্লাল্লাহু আলাইহি বলা, অথবা শুধুমাত্র আলাইহিস সালাম বলা এটা অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাথে সাংঘর্ষিক। আর তা হল মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম (হে ঈমানদারগণ! তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পাঠ করো এবং সালাম মুবারকও পেশ করো পেশ করার মতো) সুতরাং ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এভাবেই বলা উত্তম।

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি শুধু দুরূদ শরীফ নয় আবার শুধু সালাম শরীফও নয়। বরং দুরূদ শরীফ ও সালাম শরীফ উভয়টিই একসাথে পাঠ করতে হবে।

অথচ দুরূদে ইবরাহীম শরীফ উনার মধ্যে শুধুমাত্র ছলাত শরীফই রয়েছে, এতে সালাম শরীফ পেশ করার শব্দাবলী নেই। এ কারণেই সাধারণত নামাযের বাইরে দুরূদ শরীফ পাঠের সময় এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে এমন দুরূদ শরীফ পড়া হয়ে থাকে যেখানে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ উভয়টিই উল্লেখ রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

তাছাড়া দুরূদে ইবরাহীম শরীফ বিশেষ করে নামাযে পাঠ করা সুন্নত করা হয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে:

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ مَسْعُوْدٍ الْبَدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّـهُمْ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّا السَّلاَمُ عَلَيْكَ فَقَدْ عَرَفْنَاهُ فَكَيْفَ نُصَلِّىْ عَلَيْكَ اِذَا نَـحْنُ صَلَّيْنَا فِـىْ صَلَاتِنَا؟ فَقَالَ‏‏ قُوْلُوْا اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَّعَلٰى اٰلِ (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ (سَيِّدِنَا) إِبْرَاهِيْمَ (عَلَيْهِ السَّلَامُ) إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ، اللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَّعَلٰى اٰلِ (سَيِّدِنَا) مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)  كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ (سَيِّدِنَا) إِبْرَاهِيْمَ (عَلَيْهِ السَّلَامُ) إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ.‏

অর্থ: হযরত আবূ মাসউদ আল বদরি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হবে তা আমাদেরকে শেখানো হয়েছে, কিন্তু আমরা যখন নামাযের মধ্যে দুরূদ শরীফ পড়বো সেখানে কিভাবে আপনার প্রদি দুরূদ শরীফ পড়বো? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা এভাবে বলবেন, আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদিওঁ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়া আলা আলি (সাইয়্যিদিনা) মুহম্মাদিং (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কামা ছল্লাইতা আলা (সাইয়্যিদিনা) ইবরাহীমা (আলাইহিস সালাম) ওয়া আলা আলি (সাইয়্যিদিনা) ইবরাহীমা (আলাইহিস সালাম) ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা (সাইয়্যিদিনা) মুহাম্মাদিওঁ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়া আলা আলি (সাইয়্যিদিনা) মুহম্মাদিং (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কামা বারকতা আলা (সাইয়্যিদিনা) ইবরাহীমা (আলাইহিস সালাম) ওয়া আলা আলি (সাইয়্যিদিনা) ইবরাহীমা (আলাইহিস সালাম)  ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বর্ণিত হয়েছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নামাযে কোন দুরূদ শরীফখানা পড়তে হবে তাই জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আর  উনাদের জিজ্ঞাসার জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুরূদে ইবরাহীম শরীফখানা পাঠ করতে বলেছিলেন। সুতরাং দুরূদে ইবরাহীম শরীফ নামাযের জন্যেই বিশেষ দুরূদ শরীফ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নামাযের  বাইরে নয়।

আবূ আব্দুল্লাহ মুবাশশির, মুহব্বতপুর, বগুড়া

সুওয়াল: মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ কি এবং তা পালনের তরতীব কী? জানতে চাই।

জাওয়াব: মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ হলো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, বুযূর্গী-সম্মান আলোচনা করা, ছানা-ছিফত বর্ণনা করা। যার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেন পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ। অর্থাৎ সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম শরীফ এবং উনার মধ্যে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ। যেদিন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন।

‘সাইয়্যিদ’ অর্থ শ্রেষ্ঠ, এবং আ’ইয়াদ হচ্ছে ঈদ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ: খুশি প্রকাশ করা, বারবার ফিরে আসা। আর ‘শরীফ’ অর্থ সম্মানিত বা মর্যাদাবান। সুতরাং সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অর্থ সকল ঈদের সাইয়্যিদ বা সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ যা প্রতিবছর, প্রতিমাসে বার বার ফিরে আসে খুশির আমেজ, রহমত, বরকত, মাগফিরাতের নিয়ামত নিয়ে। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ দুনিয়াতে আগমন মুবারক উপলক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ পালন বা খুশি মুবারক প্রকাশ করাই হচ্ছে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’। যা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে পরিচিত।

শুধু কি ১ দিন, ১২দিন, ৬৩দিন পালন করাই ফরয? নাকি সবসময় সারা বছরই পালন করা ফরয? অবশ্যই সারা বছর পালন করা ফরয। মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আলোচনা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুলন্দ থেকেও বুলন্দতর করেছেন। তবে কতটুকু করেছেন? এটা জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসীর জানা নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ.

অর্থ: “(আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমি আপনার সম্মানিত যিকির মুবারক তথা সম্মানিত আলোচনা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছি।” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (পবিত্র সূরা আলাম নাশরহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৪)

যার কারণেই মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম শরীফ এবং উনার মধ্যে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ উনাকে মূল কেন্দ্রবিন্দু ধরে পবিত্র রাজারবাগ শরীফে সারা বছরব্যাপী তথা অনন্তকালের জন্য মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল জারি করা হয়েছে এবং সেই লক্ষ্যেই মাহফিল করা হচ্ছে। তাছাড়া সমস্ত পবিত্র আইয়্যামুল্লাহ শরীফ সহ প্রতি মাসে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ ১২ই শরীফ এবং প্রতিদিন পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও প্রতিবছর বিশেষ এন্তেজামে ৬৩ দিন ব্যাপী মাহফিল উনারও আয়োজন করা হয়। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনে খুশি প্রকাশ করা, ছানা-ছিফত করা, শান-মান প্রকাশ করা, আলোচনা করা অবশ্যই ফরয তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা ফরয। এটা পালন করা মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক এবং তিনিই কুল মাখলুকাতের সকলের প্রতি ফরয করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْـمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ

অর্থ: হে মানবজাতি, তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নছীহতকারী, অন্তরের শিফা দানকারী ও হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত দানকারী আগমন করেছেন। (অর্থাৎ আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাশরীফ নিয়েছেন!) সুতরাং তাদেরকে বলে দিন তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ফযল ও মহাসম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে লাভ করেছ। এ কারণে তারা যেন অবশ্যই খুশি প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত নেক আমল থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হবে। (পবিত্র সূরা ইউনূস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)

মূলত বর্তমানে বিষয়টা আরো সুষ্পষ্ট হয়েছে যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ দ্বারা মূলত কি বুঝানো হয়?

যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে খুশি? এই প্রশ্নের জবাবে কেউ বলবে না সে খুশি নয় (অন্তত যার মধ্যে চুল পরিমাণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক আছে)। অর্থাৎ এক কথায় সবাই খুশি। যদি খুশি হনই তবে সেটা প্রকাশ করতে অসুবিধা কোথায়?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে খুশি প্রকাশ করবো? পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবো? এ ফায়সালাও মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا. لِّتُؤْمِنُوْا بِاللّٰـهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا.

অর্থ: (আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রত্যক্ষদর্শী বা সাক্ষ্যদাতা অর্থাৎ হাযির-নাযির, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীস্বরূপ পাঠিয়েছি; যেন (হে মানুষ!) তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো এবং তোমরা উনার খিদমত করো ও তা’যীম-তাকরীম করো এবং ছানা-ছিফত বা প্রসংশা করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা সর্বদা। (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ৮ ও ৯)

অর্থাৎ মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার তিনটা অবস্থা দেখা যাচ্ছে। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

১) উনার খিদমত মুবারক করা।

২) উনার তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান মুবারক করা।

৩) উনার ছানা-ছিফাত বা প্রশংসা মুবারক করা।

কেউ কি এই বিষয়গুলোর সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারবে? কষ্মিনকালেও নয়, যদি ঈমানদার হয়ে থাকে।

১ম বিষয়টা হচ্ছে খিদমত মুবারক করা, প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে খিদমত করবে? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেতো সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা সময় ছিলো হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা সরাসরি উনার খিদমত মুবারক করে নিজেরা ধন্য হয়েছেন। উনারা আর্থিকভাবে হোক কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে হোক খিদমতে অংশগ্রহন করেছেন। আমাদের জন্য কি ব্যবস্থা? আমাদেরও খিদমত মুবারক করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সর্ম্পক স্থাপন করতে হবে। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশিষ্ট সকল বিষয়ে আমাদেরকে আর্থিকভাবে খরচ করতে হবে, লিখনীর মাধ্যমে লিখতে হবে, বক্তব্যের মাধ্যমে বলতে হবে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিদ্বেষী কোন বক্তব্যের জবাব দেয়া সেটা কলমী হোক বা শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে হোক সেটাও এর আওতাভুক্ত একজন মানুষকে হিদায়েতের ব্যবস্থার মাধ্যমেও তা করা যায়।

২য় বিষয় হচ্ছে তা’যীম-তাকরীম করা। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, সম্মান মুবারক কতটা উঁচু ? তার কি কোন সীমা পরিধি মানুষের জানা আছে? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে স্পর্শযুক্ত মুবারক ধুলো-বালির মর্যাদাও আরশ কুরসির চাইতেও শ্রেষ্ঠ। ফিক্বাহ শাস্ত্রের সুবিখ্যাত কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

مَا ضَمَّ أَعْضَاءَهٗ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ فَاِنَّهٗ اَفْضَلُ مُطْلَقًا حَتّٰى مِنَ الْكَعْبَةِ وَالْعَرْشِ وَالْكُرْسِىِّ

অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র জিসিম মুবারক উনার স্পর্শ/পরশ মুবারক লাভে ধন্য সবকিছু পবিত্র কা’বা শরীফ, পবিত্র আরশে আ’যীম শরীফ ও পবিত্র কুরসী শরীফ হতেও শ্রেষ্ঠ।” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (দুররুল মুখতার-২/৬২৬)

তাহলে উনার সম্মান মুবারক কত উচ্চ? সে কারণে সর্বাবস্থায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম করা, সম্মান করা ঈমানের দাবি রাখে।

৩য় বিষয় হচ্ছে, ছানা-ছিফত বা প্রশংসা করা। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে দায়েমীভাবে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পাঠ করেন। উনার প্রশংসা মুবারক বর্ণনা করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِنَّ اللهَ وَمَلآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

র্অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করেন। হে ঈমানদাররা! উনার প্রতি তোমরাও ছলাত শরীফ বা দুরূদ শরীফ পেশ করো এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সালাম মুবারক পেশ করো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বাবস্থায় উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসা ও ছানা-ছিফত করেন। আর আমাদেরকেও সর্বাবস্থায় উনার ছানা-ছিফত ও প্রশংসায় মশগুল থাকতে আদেশ করেছেন। কাজে কর্মে তা প্রকাশও করতে বলেছেন। তাছাড়া ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার জন্যই সমস্ত জিন-ইনসান তথা কায়িনাতবাসী সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ

অর্থ: “আমি জিন এবং ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ اَىْ لِيُحْسِنُوْنِ اَىْ لِيَقْرَبُوْنِ اَىْ لِيَعْرِفُوْنِ اَىْ لِيُحِبُّوْنِ اَىْ لِيَشْرَحُوْنِ اَىْ لِيَفْرَحُوْنِ اَىْ لِيُصَلُّوْنِ

অর্থ: একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য অর্থাৎ আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার মুবারক লাভ করার জন্য অর্থাৎ উনার কুরবত বা নৈকট্য মুবারক লাভ করার জন্য অর্থাৎ উনার মা’রিফাত মুবারক লাভ করার জন্য অর্থাৎ উনার মুহব্বত মুবারক লাভ করার জন্য অর্থাৎ উনার মুবারক উছীলায় শরহে ছুদূরের হিস্যা লাভ করার জন্য অর্থাৎ উনার জন্য খুশি  মুবারক প্রকাশ করার  জন্য অর্থাৎ উনার প্রতি ছলাত মুবারক পেশ করার জন্য সৃষ্টি করেছি। এক কথায় মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার  জন্যেই সৃষ্টি করেছি। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

আর সেই লক্ষ্যেই আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি রাজারবাগ শরীফ উনার মাঝে জারী করেছেন অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

যেখানে সদাসর্বদা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কোশেষ করা হয়। সদাসর্বদা এই খুশি মুবারক প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়। আর এটাই মূলত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ।

অনেকে বলতে পারে, আপনারা যদি বছরে সবসময়ই সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন তবে বছরে একটা দিন নির্দিষ্ট করে বিশেষ অনুষ্ঠান করেন কেন?

উল্লেখ্য স্বয়ং যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক মহান রব তা’য়ালা তিনিই একটা দিন নির্দিষ্ট করেই তিনি উনার মাহবূব এবং হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন। কাজেই এ বিষয়টি মহান রব তা’য়ালা উনারই পবিত্র সুন্নত মুবারক। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ ۚ إِنَّ فِـيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ

অর্থ: আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতকে তথা কায়িনাতবাসীকে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিনসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ছবরকারী এবং শোকরগোযার ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

অর্থাৎ সবচেয়ে বড় আইয়্যামুল্লাহ শরীফ হলেন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اِنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِيْ لَيْلَةُ مَوْلِدِهٖ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيْدِ

অর্থ: “রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার রাত, অতপর পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ উনার উনার রাত, অতপর পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাত, অতপর পবিত্র আরাফা উনার রাত, অতপর পবিত্র জুমুয়ার রাত, অতপর ১৫ শা’বান উনার রাত, অতপর ঈদের রাত।” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার-হজ্জ ৩/৫৪৮-৫৪৯)

আর এ কারণেই ১২ই শরীফ রাত্রি মুবারককে বিশেষভাবে মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে খুশি প্রকাশ করে মাহফিলের ইন্তেজাম করা হয়। কায়িনাতের যে কেউ উক্ত রাত্রি মুবারকে খুশি প্রকাশ করতে পারেন, ছলাত ছালাম, মীলাদ শরীফ, ওয়াজ শরীফ বা যে কোন ইবাদত করার মাধ্যমে। তাহলে এই খুশি প্রকাশ করাটা জিন্দেগীর সমস্ত নেক আমল এমনকি সমস্ত ইবাদত বন্দেগী থেকেও শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ইবাদত হিসেবে ক্ববুল হবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন এবং মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

আব্দুর রহমান মাছূম বিন মুনীর, শান্তিবাগ, ঢাকা

সুওয়াল: মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধিতাকারীদের পরিচয় কি? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্পর্কে বলতে হয় যে, কে চায় না যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা বেশী বেশী করতে? উনার ছানা-ছিফত প্রকাশ করতে? উনার শান-মান বর্ণনা করতে? উনার আগমনে খুশি প্রকাশ করতে? মুমিন, মুসলমান সকলেই অবশ্যই সেটা চায়। আর সেটাই মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ।

তাই মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধিতাকারীদের সাবধান হওয়া উচিত। কারণ এই বিরোধিতা সরাসরি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতার সামিল। যা কখনোই কোন মুসলমান করতে পারে না। যারা করবে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির, মালউন ও চির জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনে ইবলিস বেজায় নারাজ হয়েছিলো। সে খুশি হয়নি। সে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, কষ্টে রীতিমত কান্না করেছে। নাউযূবিল্লাহ! যেমন কিতাবে বর্ণিত আছে-

اِنَّ إِبْلِيْسَ رَنَّ أَرْبَعَ رَﻧَّﺎتٍ حِيْنَ لُعِنَ وَحِيْنَ أُهْبِطَ وَحِيْنَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحِيْنَ أُنْزِلَتِ ﺍﻟْﻔَﺎﺗـِﺤَﺔُ

অর্থ: ইবলিস শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল, প্রথমবার যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন; দ্বিতীয়বার যখন তাকে বেহেশত থেকে বের করে দেয়া হয়। তৃতীয়বার, যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এবং চতুর্থবার যখন পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ নাযিল হয়। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/১৬৬)

কাজেই, শয়তান ইবলিস এবং ইবলিস শয়তানের যারা শাগরিদ বা অনুসারী, যেমন: আবু জেহেল, আবূ লাহাব, উতবা, শায়বা, উবাই বিন ছুলূল তাবৎ কাফির-মুশরিক এবং তাদের যারা ক্বায়িম মাক্বাম মুসলমান নামধারী মুনাফিক, উলামায়ে সূ এসব লোকেরাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মান, আলোচনা, ছানা-ছিফত করতে পছন্দ করেনা। উপরন্ত, মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার তারা বিরোধিতা করে থাকে। যার কারণে এদের মধ্যে শরীয়তবিরোধি বহু বদআমল পরিলক্ষিত হয়। যার কিছু নমূনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:-

  • তারা অহরহ ছবি তুলে ও অহরহ ভিডিও করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা বেগানা মহিলাদের সাথে উঠাবসা করে, সাক্ষাত করে ও কথাবার্তা বলে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা সহশিক্ষা গ্রহণ করে তথা ছেলে মেয়েদের একসাথে বসে শিক্ষা দেয়। একসাথে চাকরী-ব্যবসা করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা সুন্নতী পোশাক পরিধান করে না। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা শার্ট, প্যান্ট, কোর্ট, টাই ইত্যাদি বিধর্মীদের পোশাক পরিধান করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা কাফির মুশরিক, ফাসিক ফুজ্জারদের সাথে মিলেমিশে চলে। এবং নিজেরাও ফাসিকী কাজ করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা সুন্নত, মুস্তাহাব আমল করে না। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা অশালীন ভাষায় গালমন্দ করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা টেলিভিশন দেখে ও টেলিভিশনে প্রোগাম করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা খেলাধুলা করে ও দেখে এবং খেলাধুলাকে হারাম মনে করে না বরং সমর্থন করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধাচারণ করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা ফেইসবুক সহ অনেকভাবে প্রাণীর ছবি ও ভিডিও আপলোড করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা না জেনে না শুনে মিথ্যা মন্তব্য করে। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা পিতামাতার অবাধ্য হয়। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা সুদের সাথে জড়িত। সুদী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করাকে হারাম মনে করেনা। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় এবং নেয়ার চেষ্টা করে।
  • তারা নিজেরা শরয়ী পর্দা করেনা ও তাদের অধিনস্ত মহিলাদেরও শরয়ী পর্দা করায় না। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা হিংসুক, অহংকারী, পরনিন্দাকারী, অপবাদকারী, পরস্পর সমালোচনাকারী। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা নামায ঠিকমত পড়েনা। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা অন্যের হক নষ্টকারী। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা মিথ্যাবাদী, আমানতের খিয়ানত কারী, ওয়াদা খিলাফকারী। নাউযূবিল্লাহ!
  • তাদের তাক্বওয়া-পরহেযগারিতা নেই। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা তাদের ওয়াজ মাহফিল ভিডিও করে ও দেখে এবং প্রজেক্টরে ভিডিও করে মহিলাদেরও দেখায়। নাউযূবিল্লাহ!
  • তারা হালাল হারাম যাচাই-বাছাই করে চলে না।

উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও আরো অনেক শরীয়তবিরোধি বা হারাম কাজ করে থাকে। যার কারণে তাদের অন্তরে মোহর পড়ে যায়। ফলে তারা আর হক্ব বিষয়টা বুঝতে পারে না। আর না বুঝার কারণে হক্বের বিরোধিতা করে থাকে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِيْ قَلْبِهٖ فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ صُقِلَ قَلْبُهٗ فَإِنْ زَادَ زَادَتْ فَذٰلِكَ الرَّانُ الَّذِيْ ذَكَرَهُ اللهُ فِـيْ كِتَابِهٖ ‏كَلَّا بَلْ رَانَ عَلٰى قُلُوْبـِهِمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ

অর্থ: মু’মিন যখন কোন পাপ করে বসে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। তারপর যখন সে তওবা করে পাপ থেকে ফিরে আসে, তখন তার অন্তর আগের মত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। কিন্তু সে যদি তওবা করার পরিবর্তে গুনাহের পর গুনাহ করতে থাকে, তাহলে সেই কালো দাগ ছড়িয়ে গিয়ে তার পুরো অন্তরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। যা মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কিতাব উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-

كَلَّا بَلْ رَانَ عَلٰى قُلُوبـِهِمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ

কখনোও না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে। (পবিত্র সূরা মুত্বাফফিফীন শরীফ:১৪) (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)

সুতরাং গুনাহের কাজ ও পাপের কারণে যাদের অন্তরে মোহর পড়েছে এরাই মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধিতা করে। নাউযুবিল্লাহ!

মূলত মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার যারা বিরোধিতা করবে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির, মালউন ও চির জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

আহমদ ছিদ্দীক্বা মেহরিন, মুহব্বতপুর, দাড়িদহ, বগুড়া

সুওয়াল: সম্মানিত বাইয়াত উনার প্রকার এবং খাছ সুন্নতী তরতীবে পুরুষ ও মহিলাদের বাইয়াত হওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।

জাওয়াব: হিজরী দ্বাদশ শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাসসিরীন, ফখরুল ফুক্বাহা হযরত মাওলানা শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আল কাওলুল জামীল’ কিতাবে পাঁচ ধরণের বাইয়াতের কথা উল্লেখ করেন,

مِنْهَا بَيْعَةُ الْـخِلَافَةِ وَمِنْهَا بَيْعَةُ الْاِسْلَامِ وَمِنْهَا بَيْعَةُ التَّمَسُّكِ بِـحَبْلِ التَّقْوٰى وَمِنْهَا بَيْعَةُ الْـهِجْرَةِ وَالْـجِهَادِ وَمِنْهَا بَيْعَةُ التَّوَثُّقِ فِـى الْـجِهَادِ

১. খিলাফতের বাইয়াত। ২. বাইয়াতে ইসলাম। ৩. বাইয়াতে তাকওয়া: তাক্বওয়া অবলম্বনে দৃঢ় থাকার বাইয়াত। যাকে বাইয়াতে তাছাওউফও বলা হয়। ৪. বাইয়াতে হিজরত ও জিহাদ। ৫. জিহাদের ময়দানে অটল থাকার বাইয়াত।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে যে বাইয়াত ছিল তা হচ্ছে বাইয়াতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। খিলাফাতের যুগে ছিল বাইয়াতে খিলাফত। খিলাফতের পর যে বাইয়াত চলমান তা হচ্ছে বাইয়াতে তাক্বওয়াহ।

প্রত্যেক প্রকার বাইয়াত গ্রহণই ফরয। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা বাইয়াত করিয়েছেন এবং পরবর্তিতে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বাইয়াত করিয়ে যাচ্ছেন। লোকজন কম হলে সরাসরি হাতে হাত রেখে বাইয়াত করানো সহজ ও সম্ভব হয়। কিন্তু লোকজন বেশি হলে সেক্ষেত্রে পাগড়ী বা রুমাল ধরিয়ে এবং পেছনের লোকজনকে গায়ে গায়ে হাত রেখে বাইয়াত করানো হয়ে থাকে। এ পদ্ধতির বাইয়াতও হাতে হাত রেখে বাইয়াত হওয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া দূর থেকে শুনে শুনেও বাইয়াত হওয়া যায়।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلشَّيْخُ فِـى اَهْلِهٖ كَالنَّبِىِّ فِـىْ اُمَّتِهٖ وَفِـى رِوَايَةٍ اَلشَّيْخُ لِقَوْمِهٖ  كَالنَّبِىِّ فِـىْ اُمَّتِهٖ

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহাসম্মানিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উম্মতের নিকট যেরূপ মহাসম্মানিত ও অনুসরণীয়, সম্মানিত শায়েখ বা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনিও উনার (সম্প্রদায়ের লোকজন বা মুরীদদের) অধীনস্তদের নিকট তদ্রুপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়।” (দায়লামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ, জামিউল জাওয়ামি’, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ, তানযীহুশ শরীয়াহ, আল মীযান, আল জামিউছ ছগীর, আদ দুরারুল মুনতাশিরাহ ইত্যাদি)

বাইয়াত হওয়ার সুন্নতী তরতীব:

পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে দেখা যায় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং পরবর্তী তাবেয়ীন, সালফে ছালেহীন, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা তিন পদ্ধতিতে বাইয়াত করাতেন। (১) হাতের উপর হাত রেখে (২) শুধুমাত্র কথার মাধ্যমে, (৩) চিঠি পত্রের মাধ্যমে।

প্রথম পদ্ধতি: হাতে হাত রেখে বা পাগড়ী ধরিয়ে বাইয়াত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুরুল মাগফিরাহ মুবারক তথা পবিত্র হাত মুবারকে হাত রেখে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বাইয়াত হতেন।

কামিল শায়েখ বা মুর্শিদগণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণে এবং উনার তরফ থেকে খিলাফতপ্রাপ্ত হয়েই একই পদ্ধতিতে বাইয়াত করে থাকেন। এ বিষয়ে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ الَّذِيْنَ يُبَايِعُوْنَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَ يَدُ اللهِ فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ ۚ فَمَنْ نَّكَثَ فَإِنَّـمَا يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖ ۖ وَمَنْ أَوْفٰى بِـمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيْهِ أَجْرًا عَظِيْمًا

অর্থ: আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যারা আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করছে, তারা তো মহান আল্লাহ পাক উনার কাছেই বাইয়াত গ্রহণ করছে। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতময় হাত মুবারক তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে বাইয়াত (উনার শর্ত) ভঙ্গ করে অবশ্যই সে তার নিজের ক্ষতিই করে এবং যে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি অতিসত্ত্বর উনাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।” (পবিত্র সুরা ফাতহ শরীফ- ১০)

দ্বিতীয় পদ্ধতি: শুধুমাত্র কথার মাধ্যমে বাইয়াত: শুধুমাত্র কথার মাধ্যমে বাইয়াত করানো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে এবং মহিলাদেরকে এ নিয়মে বাইয়াত করাতেন।

বর্তমান সময়ে শরীয়তসম্মত ডিজিটাল মাধ্যম তথা ফেইসবুক পেইজ, ভয়েস রেকর্ড, ভয়েস আল-হিকমাহ, মাইক, সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে শুধুমাত্র কথার মাধ্যমে বাইয়াতের এই সুন্নত মুবারক আদায় করা সহজ ও সম্ভব।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদেরকে পর্দার আড়াল থেকে শুধুমাত্র কথার মাধ্যমে বাইয়াত করিয়ে নিতেন। এজন্য মহিলাদের বাইয়াত করানোর ক্ষেত্রে মৌখিকভাবে বা পাগড়ি ধরিয়ে বাইয়াত করাতে হবে। মহিলাদের হাতে হাত রেখে বাইয়াত করানো হারাম।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلاَمُ أَخْبَرَتْهُ عَنْ بَيْعَةِ النِّسَاءِ قَالَتْ مَا مَسَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ امْرَأَةً قَطُّ إِلَّا أَنْ يَّأْخُذَ عَلَيْهَا فَإِذَا أَخَذَ عَلَيْهَا فَأَعْطَتْهُ قَالَ اِذْهَبِيْ فَقَدْ بَايَعْتُكِ

অর্থ: মহিলাদের বাইয়াত বিষয়ে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনোই বেগানা মহিলাদের হাত স্পর্শ করেননি। বরং তিনি মুখে মুখে বাইয়াত করিয়ে নিতেন। বাইয়াত হয়ে গেলে বলতেন, যাও! আমি তোমাকে বাইয়াত করিয়ে নিয়েছি। (মুসলিম শরীফ)

হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন,

مَنْ أَقَرَّ بِـهٰذَا الشَّرْطِ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ قَالَ لَـهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ بَايَعْتُكِ كَلَامًا وَّلَا وَاللهِ مَا مَسَّتْ يَدُهٗ يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ فِـي الْمُبَايَعَةِ مَا يُبَايِعُهُنَّ إِلَّا بِقَوْلِهٖ قَدْ بَايَعْتُكِ عَلٰى ذٰلِكَ تَابَعَهٗ

অর্থ: কোন মু’মিন মহিলা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাইয়াতের সব শর্ত মেনে নিলে তিনি তাকে বলতেন, আমি কথার মাধ্যমে তোমাকে বাইয়াত করিয়ে নিলাম। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! বাইয়াত কালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাহ মুবারক বা পবিত্র হাত মুবারক কোন বেগানা মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। মহিলাদেরকে তিনি শুধু এ কথার দ্বারাই বাইয়াত করতেন যে আমি তোমাকে এ কথার উপর বাইয়াত করলাম। (বুখারী শরীফ ৪৮৯১, ২৭১৩)

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে মহিলাদেরকে বাইয়াত করানোর সময় মাঝে কাপড় রেখে অর্থাৎ খাছভাবে পর্দা করে বাইয়াত করাতেন। (খায়রুল মাজালিস)

তৃতীয় পদ্ধতি: চিঠিপত্রের মাধ্যমে বাইয়াত:

চিঠিপত্রের মাধ্যমে বাইয়াত করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কখনো কখনো দূরে অবস্থানরত লোকদেরকে চিঠি পত্রের মাধ্যমে বাইয়াত করে নিতেন।

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মাধ্যম, আল ইহসান শরীফ পত্রিকা, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ, ফেইসবুক পেইজ, ভয়েস রেকর্ড, ভয়েস আল-হিকমাহ ইত্যাদির মাধ্যমেও সেই সুন্নত মুবারক আদায় করা সহজ ও সম্ভব।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ ও তরতীব:

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাছছুল খাছ মহাপবিত্র মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণে অনেক বছর যাবত বাইয়াত মুবারক করেন। তবে ১৪৪১ হিজরী শরীফ উনার পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ তথা পবিত্র ১২ই শরীফ থেকে বাংলা ভাষার পরিবর্তে আরবী ভাষায় মহাপবিত্র বাইয়াত মুবারক করানো শুরু করেন। একইভাবে ঠিক পূর্ণ একবছর পর ১৪৪২ হিজরী শরীফ উনার পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ তথা ১২ই শরীফ থেকে খাছ সুন্নতী তরতীবে সম্মানিত বাইয়াতে আক্বাবা শরীফ অনুসরনে মহাসম্মানিত বাইয়াত মুবারক করানো শুরু করেন। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত বাইয়াত মুবারকখানা হলো-

بِسْمِ اللهِ الرَّحْـمٰنِ الرَّحِـيْمْ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْ اَتُوْبُ اِلَيْهِ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ اَلْـكَبَائِرْ وَالصَّغَائِرْ وَالْـكُفْرْ وَالشِّرْكْ وَالْبِدْعَةْ وَالظَّاهِرِىْ وَالْـبَاطِنِـىْ وَالْاِخْتِيَارِىْ وَبِغَيْـرِ الْاِخْتِيَارِىْ اَسْتَغْفِرُ اللهَ رَبِّ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ وَّاَتُوْبُ اِلَيْهِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ الْـعَلِىِّ الْـعَظِيْـمْ لَآ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهْ اَشْهَدُ اَنْ لَّآ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُـحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهْ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْ اُبَايِـــعُ عَلـٰى يَدِ سَيِّدِنَا مَـمْدُوْحْ حَضْرَتْ مُرْشِدْ قِبْلَةْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (شَيْخْ عَلَيْهِ السَّلَامُ) كَمَا بَايَعَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَصْحَابَهٗ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِـى النَّشَاطِ وَالْكَسَلِ وَالنَّفَقَةِ فِـى الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَعَلَى الْاَمْرِ بِالْمَعْرُوْفْ وَالنَّهْـىِ عَنِ الْمُنْكَرْ وَعَلـٰى اَنْ نَّقُوْلَ فِـى اللهِ لَا تَاْخُذُنَا فِيْهِ لَوْمَةُ لَائِمٍ اَلَّذِىْ هُوَ مُسْتَفِيْضٌ فِـىْ كُلِّ طَرِيْقَاتٍ اَلْقَادِرِيَّةْ وَالْچِيْشْتِـيَّةْ وَالنَّقْشَبَـنْدِيَّةْ وَالْـمُـجَدِّدِ الْعَالِيَةْ وَالْـمُحَـمَّدِيَّةْ.

বাংলা উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। আল্লাহুম্মা ইন্নী আতূবু ইলাইহি মিন কুল্লি যাম্বেন আল কাবাইর ওয়াছ ছগ¦াইর ওয়াল কুফ্র ওয়াশ্ র্শিক ওয়াল বিদ্য়াত্ ওয়ায্ যাহিরী ওয়াল বাত্বিনী ওয়াল ইখতিয়ারী ওয়া বিগ¦ইরিল ইখতিয়ারী আস্তাগফিরুল্লাহা রব্বি মিন কুল্লি যাম্বেও ওয়া আতূবু ইলাইহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহম্মদান ‘আব্দুহূ ওয়া রসূলুহ্ আল্লাহুম্মা ইন্নী উবায়ি‘উ ‘আলা ইয়াদে সাইয়্যিদিনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (শায়েখ আলাইহিস সালাম) কামা বাইয়া‘আ রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছ্হাবাহূ ‘আলাস সাম্‘ই ওয়াত্ ত্ব‘আতে ফিন নাশাত্বে ওয়াল কাসালে ওয়ান নাফাক্বতে ফিল ‘উস্রে ওয়াল ইউস্রে ওয়া ‘আলাল আমরে বিল মা’রূফ্ ওয়ান নাহ্য়ি ‘আনিল মুনর্কা ওয়া ‘আলা আন নাক্বূলা ফিল্লাহি লা তা’খুযুনা ফীহি লাওমাতু লায়িমিন আল্লাযী হুওয়া মুস্তাফীদ্বুন ফী কুল্লি ত্বরীক্বাতে আল ক্বদিরিয়্যাহ ওয়াল চীশতিয়্যাহ ওয়ান নাক্বশাবান্দিয়্যাহ ওয়াল মুজাদ্দিদিল ‘আলিয়াহ্ ওয়াল মুহম্মদিয়্যাহ্।”

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নাম মুবারক-এ শুরু করছি যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। আয় আল্লাহ পাক আমি সমস্ত গুনাহে কবীরা, ছগীরা, কুফর, শিরক, বিদয়াত, যাহেরী, বাতেনী, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সর্ব প্রকার গুনাহ থেকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার করতেছি।

আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক আমি আপনার কাছে সমস্ত গোনহখতা থেকে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তওবা করতেছি। আপনি ব্যতিত কোন শক্তিধর, ক্ষমতাবাণ ও উপায় নেই, আর আপনিই সুউচ্চ সুমহান। আপনি ব্যতিত কোন ইলাহ নেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আখাছছুল খাছ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতিত কোন ঈলাহ নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আখাছছুল খাছ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া।

আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক আমি বাইয়াত হইতেছি, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম) উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাহ্ মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপত্রি হাত মুবারক-এ) যেমনভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে বাইয়াত করিয়েছিলেন। এ কথার উপর যে- ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক উনার প্রত্যেকটি আদেশ-নিষেধ অবশ্যই শুনব এবং অবশ্যই মানব। স্বচ্ছল হই বা অস্বচ্ছল হই অবশ্যই প্রত্যেকটি নেক কাজে আর্থিকভাবে শরীক থাকবো। প্রত্যেক সৎকাজে আদেশ করব, অসৎ কাজে নিষেধ করব। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টির জন্য এই কাজগুলি করতে গিয়ে আমরা কোন নিন্দাকারীর নিন্দাকে পরওয়া করবো না। এবং যিনি মুস্তাফিজ হয়েছেন ক্বদরিয়া, চীশতিয়া, নকশবন্দিয়া মুজাদ্দিদিল আলিয়া এবং মুহম্মদিয়াসহ সমস্ত ত্বরীক্বার।”

সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিদিন সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাহফিলে ছওয়াব রেছানী করার পর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাহ্ মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপত্রি হাত মুবারক-এ) পাগড়ী ধরিয়ে সকলকে তওবা ইস্তেগফার ও বাইয়াত মুবারক করিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

মুহম্মদ বিন মুনীরুজ্জামান- বগুড়া

সুওয়াল: হাক্বীক্বী ইছলাহ অর্জন করতে হলে কি ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ হাছিল করা জরূরী? সেই ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ বিষয়ে জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: ইছলাহ হাছিল করতে হলে এবং হক্বের উপর ইস্তিকামত থাকতে হলে অবশ্যই ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতে হবে। ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ছাড়া ইছলাহ হাছিল যেমন সম্ভব নয়, তেমনি হক্বের উপর ইস্তিক্বামত থাকাও সম্ভব নয়। মূলত একজন কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহন করে সবক্ব নিয়ে যিকির-আযকার করার সাথে সাথে পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে এবং উনার আদেশ-নিষেধসমূহ যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে উনার ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করতে হবে। তাহলে ইছলাহ হাছিল করা সহজ সম্ভব হবে।

‘ফাইদ্ব’ ও ‘তাওয়াজ্জুহ’ শব্দ মুবারকদ্বয় আরবী। ‘ফাইদ্ব’ শব্দটি আরবী ‘ফাইদ্বহ’ শব্দ মুবারক থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ- কল্যাণ, ভালো ফলাফল, সুফল, নিয়ামত, বরকত, মর্যাদা ইত্যাদি। আর ‘তাওয়াজ্জুহ’ শব্দটি বাবে তাফা‘উল থেকে ইসমে মাছদার বা ক্রিয়ামূল। যার আভিধানিক অর্থ- দৃষ্টি নিক্ষেপ, নেক নজর, নেক করম, সন্তুষ্টির দৃষ্টি, রুজু হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং ‘ফাইদ্ব-তাওয়াজ্জুহ’ উনাদের সামগ্রিক অর্থ হলো নিয়ামত দানের জন্য নেক দৃষ্টি, বরকতময় নেক নযর। (সমূহ অভিধান গ্রন্থ)

সম্মানিত তরীক্বত উনার পরিভাষায়, ফয়েজ হচ্ছে এক প্রকার নূর বা আলো বিশেষ। যা সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার তরফ থেকে মুরীদের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়। যা মুরীদের হিদায়েত, ইছলাহ অর্জন এবং হক্বের উপর ইস্তিক্বামত থাকার কারণ হয়।

সমস্ত ওলীআল্লাহ উনারা উনার মুরীদণ্ডমু’তাকিদদেরকে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দান করেন। আর সমস্ত সালিক বা মুরীদ উনাদের সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট থেকে ফায়িজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করে পূর্ণতায় পৌঁছে থাকেন এবং খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী রেযামন্দী-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করে থাকেন।

ফয়েজের প্রকারভেদ: ফয়েজ অনেক প্রকার। তবে তাছাউফের কিতাবসমূহে সাধারনভাবে ৪ প্রকার উল্লেখ করা হয়, যথা:

১. ফয়েজে ইনয়িকাসী । ২. ফয়েজে ইলক্বায়ী। ৩. ফয়েজে ইছলাহী। ৪. ফয়েজে ইত্তেহাদী।

প্রথম “ফয়েজে ইনয়িকাসী।” যেমন, কোন ব্যক্তি আতর শরীরে মেখে কোন মজলিসে উপস্থিত হলে তার সুঘ্রাণে মজলিসের সমস্ত লোক মোহিত হয়। এটা সাধারণ ও প্রাথমিক পর্যায়ের ফয়েজের উদাহরণ। কেননা, সেই ব্যক্তি মজলিস হতে প্রস্থান করলে উক্ত সৌরভ বা সুঘ্রাণ স্থায়ী থাকেনা। অনুরূপ কোন ওলীউল্লাহ্ কোনস্থানে উপস্থিত হলে উনার রূহানী ফয়েজ বা জ্যোতির প্রভাবে সাধারণ লোক বিমোহিত হতে থাকে। আর এর কারণেই উক্ত এলাকার মৃত ব্যক্তিরা পর্যন্ত ফায়দা হাছিল করে থাকে। সুবহানাল্লাহ!

দ্বিতীয় “ফয়েজে ইল্ক্বায়ী।” যেমন, কোন ব্যক্তি তার প্রদীপকে অন্য ব্যক্তির প্রদীপের আগুন দ্বারা প্রজ্জ্বলিত করে নেয়। এই প্রকার ফয়েজ প্রথম প্রকার ফয়েজ অপেক্ষা অধিক প্রভাবযুক্ত হয়ে থাকে। কেননা, কিছুকাল এর প্রভাব স্থায়ী থাকে কিন্তু প্রবল বাতাস প্রবাহিত হলে এটা নির্বাপিত হয়ে যায়। এতে নফ্ছ ও লতিফাসমূহ সম্পূর্ণরূপে পরিশুদ্ধ হয়না।

তৃতীয় “ফয়েজে ইছলাহী।” যেমন, কোন ড্রেন বা নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। উক্ত ড্রেন বা নালাতে যদি কোন ময়লা, তৃণ, ঘাস বা দুব্বা ইত্যাদি পড়ে তৎক্ষনাৎ তা দূরীভূত হয়ে উক্ত ড্রেন বা নালা পরিস্কার হয়ে যায়। তবে যদি কোন বড় আকারের পাথর বা বড় মাটির টুকরা উক্ত ড্রেন বা নালায় পড়ে তবে তা বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রকার ফয়েজের প্রভাব অনেককাল স্থায়ী হয়ে থাকে।

চতুর্থ “ফয়েজে ইত্তেহাদী।” কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা নিজ আত্মাকে (রূহকে) দৃঢ়তার সাথে মুরীদের আত্মার সাথে সংযোগ করেন। এতে কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আত্মার প্রভাব মুরীদের আত্মায় প্রবেশ করে, এটা সর্বাপেক্ষা প্রবল ফয়েজ।

ফয়েজে ইত্তেহাদী ব্যতিত মূল নিয়ামত হাছিল করা কখনোই সম্ভব নয়।

হাফিজুল হাদীছ, আল্লামা মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘মুর্শিদে মুকাম্মিল ব্যক্তিগণ তাওয়াজ্জুহ দানে নিজের আত্মাকে সজোরে মুরীদের আত্মার সাথে সংযোগ করত: স্বীয় আত্মিক নূর বা জ্যোতি তার আত্মার উপর নিক্ষেপ করেন।’ তিনি আরো বলেন, ফয়েজে ইত্তিহাদী-এর তাছীর বা প্রভাব অন্যান্য ফয়েজ অপেক্ষা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রবল। যেহেতু তাতে ‘মুর্শিদে মুকাম্মিল’ উনার সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক ক্রিয়া বা ফয়েজ মুরীদের হৃদয়ে সঞ্চালিত হয়ে থাকে।’ (তাফসীরে আব্দুল হাই সিদ্দীকি)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَتَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى

অর্থ:- ‘তোমরা পাথেয় সঞ্চয় কর। নিশ্চয়ই তাক্বওয়া বা পরহেযগারীতা সর্বোত্তম পাথেয়।’ (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ-১৯৭)

হযরত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ব্যতীত হাক্বীক্বী তাক্বওয়া হাছিল করা সম্ভব নয়। হক্ব মত ও হক্ব পথের উপর ইস্তিকামত (অটল) থাকাও সম্ভব নয়। কাজেই সেই ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভের জন্য সবসময় তৎপর থাকা আবশ্যক।

শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি গভীর মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম বিশুদ্ধ নিয়ত এবং সুধারণা, চেষ্টা, সাধনা যদি যথার্থ হয় তাহলে পৃথিবীর যে কোন স্থানে অবস্থান করলেও ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভ করা যায়। কিন্তু ছোহবত মুবারকের বরকত ও ফায়দা ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা ব্যতীত লাভ করা সম্ভব নয়। সম্মানিত শায়েখ উনার দু’চোখের ভ্রু’দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থান থেকে যে ফয়েজের ¯্রােতধারা বিচ্ছুরিত হয় তাও ছোহবত মুবারক ব্যতিত হাছিল করা যায় না।

শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনিই ফয়েজ হাছিলের উৎস। উনার কথা মুবারক, আচার-আচরণ মুবারক এমনকি উনার নাম মুবারক থেকেও সেই নূর মুবারক প্রবাহিত হয়। সালিক বা মুরীদ আদব ও শ্রদ্ধার সাথে উনার ছানা-ছিফত করলে ও নছীহত মুবারক শুনলে এবং তাছাওউর (ছূরত মুবারকের ধ্যান) করলে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল হয়।

তাছাওউফের কিতাবে উল্লেখ আছে, দুচোখের ভ্রু’দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থান থেকে বিশেষ এবং অধিক পরিমাণে ফয়েজ বিচ্ছুরিত হয়। কাজেই সালিক বা মুরীদের সেদিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা উচিত।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَّالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ مِّنْ مَّالِهٖ وَنَفْسِهٖ

অর্থ: তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনে কামিল হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ এমনকি নিজের জান-মাল থেকেও আমাকে অধিক মুহব্বত না করবে।

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সবকিছু থেকে বেশি মুহব্বত করি। তবে আমার মনে হয়, আমি এখনো আপনাকে আমার জান থেকে বেশি মুহব্বত করতে পারিনি। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে আপনি এখনো হাক্বীক্বী ঈমানদার হতে পারেননি। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ছোট বাচ্চার ন্যায় কান্নাকাটি করতে লাগলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে কাছে ডাকলেন এবং উনার সিনা মুবারকে স্বীয় নূরুল মাগফিরাহ মুবারক তথা পবিত্র হাত মুবারক রাখলেন এবং ফায়িযে ইত্তেহাদী মুবারক দান করলেন। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,  ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এখন আমার এমন অবস্থা হয়েছে যে, এখন আমি একজন উমর কেন আমার মতো শত-সহস্র উমর আপনার জন্য জান কুরবান করতে প্রস্তুত রয়েছি।’ সুবহানাল্লাহ!

মূলত একজন কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহন করে সবক্ব নিয়ে যিকির-আযকার করার সাথে সাথে পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে এবং উনার আদেশ-নিষেধসমূহ যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে উনার ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করতে হবে। তাহলে ইছলাহ হাছিল করা সহজ সম্ভব হবে।

অন্যথায় যত আমলই করা হোক না কেন ফয়েজে ইত্তেহাদী ব্যতিত মূল নিয়ামত হাছিল করা তথা হাক্বীক্বী মু’মিন মুসলমান হওয়া কখনোই সম্ভব নয়।

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।, ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: (পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৪৬)

‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:

মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী তা বুঝার জন্য- তিনি যে সমস্ত কায়িনাতবাসীকে মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত শান মুবারক সম্পর্কে সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম সম্মানিত বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক থেকে নেয়া এক কাতরা সম্মানিত নূর মুবারক থেকেই সমগ্র সৃষ্টি জগতের বিকাশ

যিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক থেকে নেয়া এক কাতরা সম্মানিত নূর মুবারক থেকে সম্মানিত আরশে আযীম শরীফ, সম্মানিত কুরসী শরীফ, সম্মানিত জান্নাত মুবারক, জাহান্নাম, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস, মাটি-পানি, গাছপালা-তরুলতা, জামাদাত, শাজারাত, হাজারাত, জিন-ইনসান, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত সৃষ্টি জগত, তামাম মাখলূকাত সৃষ্টি করেন। সুবহানাল্লাহ! এ প্রসঙ্গে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-

اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْئٍ مِّنْ نُّوْرِىْ.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সৃষ্টি মুবারক করেন এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক থেকে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাকতূবাত শরীফ, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسْوُلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاَبِـىْ اَنْتَ وَاُمِّىْ اَخْبِرْنِـىْ عَنْ اَوَّلِ شَىْءٍ خَلَقَهُ اللهُ تَعَالـٰى قَبْلَ الْاَشْيَاءِ قَالَ يَا حَضْرَتْ جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اِنَّ اللهَ تَعَالـٰى قَدْ خَلَقَ قَبْلَ الْاَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُّوْرِهٖ فَجَعَلَ ذٰلِكَ النُّوْرُ يَدُوْرُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللهُ تَعَالـٰى وَلَـمْ يَكُنْ فِـىْ ذٰلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلَا قَلَمٌ وَلَا جَنَّةٌ وَلَا نَارٌ وَلَا مَلَكٌ وَلَا سَـمَاءٌ وَلَا اَرْضٌ وَلَا شَـمْسٌ وَلَا قَمَرٌ وَلَا جِنِّـىٌ وَلَا اِنْسِىٌّ فَلَمَّا اَرَادَ اللهُ تَعَالـٰى اَنْ يـَّخْلُقَ الْـخَلْقَ قَسَّمَ ذٰلِكَ النُّوْرَ اَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْـجُزْءِ الْاَوَّلِ الْقَلَمَ وَمِنَ الثَّانِـىْ اللَّوْحَ وَمِنَ الثَّالِثِ الْعَرْشَ ثُـمَّ قَسَّمَ الْـجُزْءَ الرَّابِعَ اَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْـجُزْءِ الْاَوَّلِ حَمَلَةَ الْعَرْشِ وَمِنَ الثَّانِـىْ الْكُرْسِىَّ وَمِنَ الثَّالِثِ بَاقِىَ الْـمَلَائِكَةِ ثُـمَّ قَسَّمَ الْـجُزْءَ الرَّابِعَ اَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْاَوَّلِ السَّمَاوَاتِ وَمِنَ الثَّانِـى الْاَرْضِيْنَ وَمِنَ الثَّالِثِ الْـجَنَّةَ وَالنَّارَ ثُـمَّ قَسَّمَ الرَّابِعَ اَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْاَوَّلِ نُوْرَ اَبْصَارِ الْـمُؤْمِنِيْنَ وَمِنَ الثَّانِـىْ نُوْرَ قُلُوْبِـهِمْ وَهِىَ الْـمَعْرِفَةُ بِاللهِ وَمِنَ الثَّالِثِ نُوْرَ اُنْسِهِمْ وَهُوَ التَّوْحِيْدُ لَاۤاِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্র্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, দয়া করে আমাকে এ বিষয়ে সংবাদ মুবারক দান করুন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন্ জিনিস সৃষ্টি করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কিছুর পূর্বে সর্বপ্রথম আপনার যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী এবং রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনাকে অত্যান্ত মুহব্বত উনার সাথে সম্মানিত সৃষ্টি মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী উনার মহাসম্মানিত কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ঘূর্ণায়মান ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর ঐ সময় লওহো-কলম, বেহেশ্ত-দোযখ, হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম, আসমান-যমীন, সূর্য-চন্দ্র, জিন-ইনসান কোনো কিছুই ছিলো না। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন মাখলূকাত সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক করেন, তখন তিনি সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনাকে চার ভাগ করেন। উনার প্রথম ভাগ দ্বারা সম্মানিত ক্বলম, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা সম্মানিত লাওহে মাহফূজ এবং তৃতীয় ভাগ দ্বারা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করেন। উনার প্রথম ভাগ দ্বারা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক বহনকারী হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা সম্মানিত কুরসী এবং তৃতীয় ভাগ দ্বারা অন্যান্য হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করেন। উনার প্রথম ভাগ দ্বারা আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা যমীন এবং তৃতীয় ভাগ দ্বারা সম্মানিত বেহেশত ও দোযখ সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করেন। উনার প্রথম ভাগ দ্বারা মু’মিন বান্দা উনাদের চোখের জ্যোতি, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা উনাদের ক্বলবের জ্যোতি, এটিই মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত মা’রিফাত মুবারক এবং তৃতীয় ভাগ দ্বারা মু’মিন উনাদের উন্স অর্থাৎ মুহব্বত উনার নূর মুবারক সৃষ্টি মুবারক করেন। আর তা হচ্ছেন সম্মানিত তাওহীদ  মুবারক

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

(এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালিমা শরীফ) উনার সম্মানিত নূর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ, শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাদারেজুন নুবুওওয়াত, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ লি ইবনে হাজার হাইতামী ১/৪৪ ইত্যাদি)

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ