হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৪২) رِضَاء (রিদ্বা) উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা পদ্ধতি আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৮৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

رِضَاء (রিদ্বা) অর্থ: রাজী বা সন্তুষ্টি থাকা। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে হালে রাখেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকাকে রিদ্বা বলা হয়।

মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা বা বিধানের  উপর চু-চেরা, কিল-কাল না করা- রিদ্বার মাক্বাম হাছিলের প্রাথমিক হাল বা অবস্থা। রিদ্বার মাক্বাম পরিপূর্ণ হাছিল হলে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়সালার উপর সর্বদা সন্তুষ্ট থাকা যায়। কখনো সন্তুষ্টির ব্যতিক্রম কোন ঘটনা ঘটে না। একইভাবে উলিল আমর তথা স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফায়সালাও সর্বান্তকরণে, সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়ে, ইস্তিক্বামত থাকা যায়।

রিদ্বা উনার মাক্বাম হাছিলের জন্য ফানা বা বিলীন হওয়া আবশ্যক। তবেই বাক্বা লাভ হবে। আর তখনই রিদ্বার মাক্বাম হাছিলে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হওয়া সহজ ও সম্ভব হবে। উল্লেখ্য যে, ফানা বা বিলীন হওয়া ব্যতীত কখনও বাক্বা লাভ হয় না। আর ফানা যে পরিমাণ হয় বাক্বাও সেই পরিমাণই হয়ে থাকে। অর্থাৎ রিয়াদ্বত-মাশাক্কাত (চেষ্টা কোশেশ) যেমন হয় প্রাপ্তিও সেই পরিমাণই হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَأَنْ لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعٰى

অর্থ: মানুষ যেরূপ কোশেশ করে সেরূপই প্রতিদান পেয়ে থাকে। (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

لَا يَـجِدُوْنَ إِلَّا جُهْدَهُمْ

অর্থ: আর তাদের কোশেশ বা কৃতকর্মের প্রতিদান ব্যতীত কিছুই পায় না। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৯)

রিদ্বার মাক্বাম হাছিলের উপায়

কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার হাতে  বাইয়াত হয়ে উনার নির্দেশমত ‘খাক লতিফার’ যিকির করলে রিদ্বার মাক্বাম হাছিল হয়। তবে যিকির-ফিকির করার সাথে সাথে আজিজী-ইনকেসারী (অনুনয়-বিনয়) সহকারে দোয়া- প্রার্থনা করতে হবে। সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি কামনা করতে হবে। সন্তুষ্টি-রেযামন্দির খিলাফ বা বিপরীত কোন কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, আচার-ব্যবহার করা যাবে না।

অল্প-সল্প যিকির করার দ্বারা এ মাক্বাম হাছিল হওয়া খুবই কঠিন। কেননা, একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, ফানা (বিলীন) ছাড়া বাক্বা (স্থায়িত্ব) লাভ হয় না। আর আর যিকিরের ফানা বা বিলীন হওয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اُذْكُرُوا اللهَ كَثِيْـرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

অর্থ: তোমরা অধিক পরিমাণে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করো। তাহলে অবশ্যই তোমরা কামিয়াব বা সফলকাম হবে। (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র সূরা আয়াত শরীফ ৪৫)

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَكْثِرُوْا ذِكْرَ اللهِ حَتّٰى يَقُوْلُوْا مَـجْنُوْنٌ

অর্থ: তোমরা এতো অধিক পরিমাণে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করো যেন, লোকেরা তোমাদেরকে পাগল আখ্যায়িত করে।

“খাক লতিফার” সবক অধিক পরিমাণে করলে দুনিয়াবী সকল আকর্ষণ হতে অন্তর মুক্ত হবে। তখন স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ নেক দৃষ্টি তার উপর পতিত হয়। আর তখনই মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত দ্বারা অন্তর পরিপূর্ণ হবে। আর তখনই মহান আল্লাহ পাক উনার সকল ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার যোগ্যতা পয়দা হবে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফায়সালা মুবারকে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। অর্থাৎ যে বা যারা স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার রায় কিংবা ফায়সালা সর্বান্তকরণে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেন এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে কেবল তখন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ফায়সালা বা বিধান সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতে পারেন। কাজেই, যারা স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফায়সালা মুবারকে সন্তুষ্ট নয় তারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার  হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ফায়সালা মুবারকে সন্তুষ্ট থাকার দাবী বাতুলতার নামান্তর।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)