হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৪১) তাসলীম-এর মাক্বাম হাছিল করা ব্যতীত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর ইস্তিক্বামত থাকা সম্ভব নয় (৫) আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৮২তম সংখ্যা | বিভাগ:

তাসলীম উনার মাক্বাম হাছিল না হলে আমল বরবাদ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে (৩)

 

বালয়াম বিন বাঊরা বললো, আরে নাদানের দল! সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার জলীলুল ক্বদর রসূল আলাইহিস সালাম। আর উনার সাথে আছেন ঈমানদার  বান্দাগণ। আরো আছেন, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা। আমি কিভাবে উনাদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করবো? তোমাদের আবদার শুনলে আমার দ্বীন-দুনিয়া উভয়টাই বরবাদ হয়ে যাবে।

তার মুখে এরূপ কথা-বার্তা শুনে লোকেরা অনেক পীড়া পীড়ি শুরু করলো। তখন সে উপায়ন্ত না পেয়ে ইস্তিখারা কিংবা অনুরূপ আমল করলো। স্বপ্নে তাকে জানানো হলো যে, সে যেন এমন কাজ কখনোই না করে। আর সেও লোকদেরকে নিষেধের বিষয়টি জানিয়ে দিল।

লোকজন অন্যপথ গ্রহণ করলো। তারা মোটা অংকের ও লোভনীয় অনেক হাদিয়া-উপঢৌকন নিয়ে তার স্ত্রীর নিকট গেল। তার স্ত্রী তা গ্রহণ করে তাদেরকে কাজটি করে দেয়ার জন্য বালয়াম বিন বাঊরাকে পরামর্শ দিলো। স্ত্রীর সন্তুষ্টি কামনা ও সম্পদের মোহ তাকে অন্ধ করে দিলো। সে মহান আল্লাহ পাক উনার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করলো। নাউযুবিল্লাহ! সে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং বনি ইসরাইলগণের বিরুদ্ধে বদদোয়া শুরু করলো। নাউযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক  জাহির হলো। সে বদদোয়া করতে গিয়ে যেসব কথা বলতে চেয়েছিল সেসবই নিজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়ে যাচ্ছিল। তখন সবাই চিৎকার করে বললো, আরে! তুমি তো আমাদের বিরুদ্ধেই বদদোয়া করছো। বালয়াম বললো, এটা আমার ইচ্ছাকৃত নয়। ইহা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

ফল দাঁড়ালো এই যে, সে সম্প্রদায়ের উপর লা’নত বর্ষিত হলো। তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হলো। আর বালয়ামের জিহ্বা বেরিয়ে এসে বুকের উপর লটকে গেল। সে তার সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বললো, আমার দুনিয়া-আখিরাত সবই বরবাদ হয়ে গেল। নাউযুবিল্লাহ!

তবে আমি তোমাদেরকে একটা কৌশল বলে দিচ্ছি, যার দ্বারা তোমরা সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে। নাউযুবিল্লাহ! “তোমরা তোমাদের খুব ছূরত নারীদেরকে সাজিয়ে বণি ইসরাঈল সৈন্যদের মাঝে পাঠিয়ে দাও। পাঠানোর সময় তাদেরকে একথা বলে দিও যে, বণি ইসরাঈলগণ তোমাদেরকে যা প্রস্তাব দিবে সবই মেনে নিবে। কোন প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করবে না। কোন দ্বিমত পোষণ করবে না। তারা যখন ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে তখন তাদের উপর থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত সরে যাবে। তখন তাদের উপর নাযিল হবে গযব। তারা পরাজিত হবে। নাউযুবিল্লাহ! কেননা, ব্যাভিচার হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে এমনই একটি জঘন্যতম ঘৃণিত অপরাধ, যে জাতির মাঝে তা অনুপ্রবেশ করবে সে জাতি কখনো বিজয় ও কৃতকার্যতা অর্জন করত পারবে না।

বালয়ামের এই পৈশাচিক চালটি তাদের পছন্দ হলো। তারা সে মতে কাজ করলো। বণি ইসরাঈলের জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এ ষড়যন্ত্রের শিকার হলো। ফলে বণি ইসরাঈলের মাঝে কঠিন প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লো। তাতে একই দিনে সত্তর হাজার বণি ইসরাঈল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। নাউযুবিল্লাহ!

যে লোক এই অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিল তাকে এবং যার সাথে লিপ্ত হয়েছিল তাকে বণি ইসরাঈলরা হত্যা  করে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখলো। ফলে অন্যান্য লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে সবাই তওবা-ইস্তিগফার করলো। মহান আল্লাহ পাক তাদের তওবা কবুল করলেন। প্লেগ রোগ দূর হলো। বণি ইসরাঈলগণ বিজয় লাভ করলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে এ ঘটনা থেকে ইবরত-নছীহত গ্রহণ  করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِيْ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِيْنَ. وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بـِهَا وَلٰكِنَّهٗ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ ۚ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِنْ تَـحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْ ۚ ذٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا ۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ

অর্থ: আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাদেরকে সে লোকের অবস্থা বর্ণনা করুন, যাকে আমি আমার নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম। সে তা থেকে বিমুখ হয়েছিল। আর তখন তার পিছনে শয়তান লেগে গেল। অতঃপর সে গোমরাহ বা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হলো। আমি ইচ্ছা করলে সে সকল নিদর্শনরাজীর বদৌলতে অবশ্যই  তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিতে পারতাম। কিন্তু সে দুনিয়ার দিকে (ঝুঁকে) রুজু হলো। আর নফসের  (প্রবৃত্তির) অনুগামী হলো। তার অবস্থা  হলো কুকুরের মত। যাকে তাড়া করলেও হাঁপায় আর ছেড়ে দিলেও হাঁপায়। এটা সে সকল লোকের উদাহরণ যারা আমার নিদর্শন রাজীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।

কাজেই, আপনি তাদেরকে এসকল বিবরণ বর্ণনা করে শুনান যাতে তারা চিন্তা-ফিকির করে। (সে পথে পা না বাড়ায়) (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত ১৭৫-১৭৬)

কাজেই, তাসলীম-এর মাক্বামে ফানা অতঃপর বাক্বা লাভ করতে না পারলে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিলের পথে ইস্তিক্বামত থাকা কখনোই সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তাসলীমের মাক্বামে ফানা অতঃপর বাক্বা হাছিলের তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

 

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)