হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২২১) তাওয়াক্কুল উনার মাক্বাম হাছিলের পথে কতিপয় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম

সংখ্যা: ২৬২তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি হযরত হাবীব আজমী রহমতুল্লাহি আলাইহি

উনার তাওয়াক্কুল (২)

এদিকে সন্ধ্যার পর সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ মাহবূবে ইলাহী হযরত হাবীব আজমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাড়িতে ফিরলেন। ঘরে প্রবেশ করা মাত্র আহলিয়ার দিকে তাকিয়ে উনাকে প্রফুল্ল, হাসি-খুশি মনে হলো। আর সমস্ত বাড়ি থেকে উৎকৃষ্টমানের মধু, খাঁটি ঘি ও গোশতের ঘ্রাণ পেতে লাগলেন। অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়ে আহলিয়াকে (স্ত্রী) জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার, বলোতো শুনি! আহলিয়া (স্ত্রী) বললেন, আপনার মুনিব অত্যন্ত ভালো লোক। এই বলে তিনি উনার নিকট সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। আর ব্যাগটি হাতে নিয়ে বলতে লাগলেন, আপনি এতো সুন্দর আটা কোথায় পেলেন? সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, মাহবূবে ইলাহী হযরত হাবীব আজমী রহমতুল্লাহি আলাইহি কৌতুহল হয়ে তাকালেন, দেখলেন সত্যি ব্যাগ ভরানো ধুলা-বালিগুলো সুন্দর আটায় পরিণত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

এটা দেখে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করতঃ আহলিয়াকে বললেন, দেখো তো একটু কষ্ট স্বীকার করে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল করায় মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে কত নিয়ামত দান করলেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, মাহবূবে ইলাহী হযরত হাবীব আজমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আজীবন কোনো রোযগারে মনোনিবেশ করেননি। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াযত, মাশাক্কাত, মুরাকাবা-মুশাহাদা এবং তা’লীম তালক্বীনে নিমগ্ন ছিলেন। প্রতি দশদিন পরপর এরূপ কুদরতীভাবে রিযিক আসতো। উনি সেই কুদরতী রিযিক দ্বারাই দিনাতিপাত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া-১/৫০)

 

সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন হযরত আবু হামযাহ খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি

উনার তাওয়াক্কুল:

সাইয়্যিদুল মুতাওয়াককিলীন, ফখরুল আউলিয়ায়িল কামিলীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হামযাহ খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন মনে মনে ইরাদা (ইচ্ছা) করলেন, কারো কাছে কিছু চাইবেন না। কারো কাছে কোনো কিছু  চাওয়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পছন্দনীয় নয়।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ ثَوْبَان رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  مَنْ يَكْفُلُ لِي أَنْ لَا يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا فَاَتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ  فَقَالَ ثَوْبَانُ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ اَنَا

অর্থ: হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি আমার নিকট এই মর্মে ওয়াদাবদ্ধ হবে যে, সে মানুষের নিকট কিছু চাইবে না, আমি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত দানের ওয়াদাবদ্ধ হতে পারি। হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু তিনি তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ওয়াদাবদ্ধ হলাম।” (আবু দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ ذَرٍّ قَالَ دَعَانِىْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَشْتَرِطُ عَليَّ أَنْ لَا تَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا قُلْتُ نَعَمْ قَالَ وَلَا سَوْطَكَ إِنْ سَقَطَ مِنْكَ حَتىّ تَنْزِلَ إِلَيْهِ فَتَأْخُذُه

অর্থ: “হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ডেকে এই অঙ্গীকার করালেন যে, আপনি মানুষের কাছে কোনো কিছু চাইবেন না। আমি সম্মতি জ্ঞাপন করলাম, ওয়াদাবদ্ধ হলাম। এমনকি তিনি ইহাও ইরশাদ মুবারক করেন যে, আপনার চাবুকটিও না। যদি উহা পড়ে যায়, তাহলে নিজে বাহন থেকে নেমে গিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসবেন।” (আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ) (চলবে)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)