হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১২) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

সংখ্যা: ২৫৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

পবিত্র শোকর উনার মাক্বাম

হাছিলের উপায়

পূর্ব প্রকাশিতের পর

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

لئن شكرتـم لازيدنكم

অর্থ : “যদি তোমরা শোকর কর, তবে নিশ্চয়ই আমি (নিয়ামত) আরো বাড়িয়ে দেব।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইব্রাহীম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

পবিত্র মুরাক্বাবা হালতে পবিত্র আল্লাহ আল্লাহ যিকির করতে থাকবে। আর উনার দরবার শরীফেই উনার অসংখ্য, অগণিত নিয়ামত ও ইহ্সান উনার শোকরগুজারীর ক্ষমতা চাইবে এবং এ আরজু করবে- হে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার নিয়ামত মুবারক অসীম ও অপার, তা কেউ গণনা করে শেষ করতে পারবে না। আমি আপনার একটা আদনা নিয়ামত উনারও শোকর আদায় করতে পারিনি। আপনি এ অক্ষম অপরাগ ও অজ্ঞান বান্দাকে খালিছভাবে শোকর করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

উল্লেখ্য যে, এই সবক অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মুহব্বত সহকারে আদায় করতে হবে। কেননা গুরুত্বহীনভাবে করা আমল দ্বারা কাঙ্খিত মাক্বামে পৌছা যায় না। দুনিয়াবী সকল কাজের উপর সবককেই প্রাধান্য দিতে হবে। কোন দিন যেন অনাদায়ী না থাকে তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাহলে অতিসহজে অল্প সময়ে শোকর উনার মাক্বাম হাছিল হবে ইনশাআল্লাহ।

শোকর এবং সবর উনাদের মাক্বামই

শ্রেষ্ঠতম মাক্বাম

শোকর এবং সবর উনাদের মাক্বামই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ মাক্বাম। নিয়ামতরাজী লাভ হলে শুকরিয়া আদায় করা আর নিয়ামতরাজী লাভ না হলে সবর করা বা ধৈর্য্যধারণ করা বান্দা ও উম্মতের দায়িত্ব কর্তব্য। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় উম্মতকে হাতে কলমে সেটাই শিক্ষা দিয়েছেন।

হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। আমি একদিন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মাহাতুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হলাম। আরয করলাম, আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনী মুবারক উনার যে আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তা দয়া করে বলুন।

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি কান্না মুবারক শুরু করলেন। পরে ইরশাদ মুবারক করলেন, উনার সমস্ত কাজ মুবারকই আশ্চর্যজনক, অলৌকিক। এক রাতে তিনি আমার হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিয়েছিলেন। আমার বিছানা মুবারকে শয়ন করলেন। এমনকি উনার নূরানী জিসিম মুবারক আমার জিসিম মুবারকের সাথে মিলে গিয়েছিল। এমনি এক পর্যায়ে তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আমার মহান রব তায়ালা উনার ইবাদত করবো। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীববাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার মুবারক ছোহবতে থাকতে ইচ্ছা করি। কিন্তু আপনার ইচ্ছা মুবারককেই আমি মুহব্বত করি, তা’যীম-তাকরীম করি।

আমার অনুমতি পেয়ে তিনি পানির পাত্র মুবারক উনার দিকে গেলেন। অযু মুবারক করলেন। কিন্তু অতিরিক্ত পানি ব্যয় করলেন না। তারপর তিনি পবিত্র নামায আাদায়ের জন্য দাঁড়ালেন। সম্মানিত নামায উনার মধ্যে তিনি এতো অধিক কাঁদলেন যে, তাতে উনার সীনাহ মুবারক ভিজে গেল। তারপর রুকুতে গিয়েও কান্না মুবারক করলেন। তারপর সিজদা মুবারকে গিয়েও কান্না মুবারক করতে লাগলেন। তারপর তিনি মাথা মুবারক উত্তোলন করেও কান্না মুবারক করলেন। এভাবে উনার কান্না মুবারক করা অবস্থায় সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্মানিত নামায আদায় করার জন্য আওয়াজ দিলেন। আমি তখন উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এতো অধিক পরিমানে কান্না মুবারক করেন কেন? মহান আল্লাহ পাক তিনি তো আপনাকে মা’ছূম-নিষ্পাপ ঘোষণা করেছেন?

তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি কি মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর গোজার বান্দা হবো না? অর্থাৎ ইহা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শোকর গোজারী। সুবহানাল্লাহ! (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন-৪/৭৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)