হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১১) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

সংখ্যা: ২৫২তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

হুসনুল খুলক্ব বা সচ্চরিত্রবান হওয়ার জন্য সালিক বা মুরীদকে শোকর উনার মাকাম ত্বয় করা বা হাছিল করা উচিত। শোকার উনার মাক্বাম ত্বয় করতে পারলে বা হাছিল করতে পারলে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মুবারক খিদমতে হাক্বীক্বীভাবে আঞ্জাম দেয়া সহজ ও সম্ভব হয়। আর তখন শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার সাথে তায়াল্লুক মুবারক, নিছবত মুবারক দৃঢ় হয়। মুহব্বত মুবারক, কুরবত বা নৈকট্য মুবারক গভীর হয়।

পবিত্র শোকর উনার মাক্বাম

شكر (শোকর) শব্দের অর্থ: কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত মুবারক ও ইহসান মুবারকের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাকে শোকর বলে। এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ যবান দ্বারাও হতে পারে। হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা হতে পারে। মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত রাজী ও ইহসান মুবারক পেয়ে উনার পরিপূর্ণ অনুগত হওয়াই বান্দার দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা খুবই কম। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قليل من عبادى الشكور

অর্থ: “আমার শোকর গোজার বান্দার সংখ্যা অল্প।” (পবিত্র সূরা সাবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

শোকর আদায়কারীর চেয়ে অকৃতজ্ঞ বা নাফরমান বান্দাদের সংখ্যাই বেশী। নিয়ামতরাজী ও ইহসান মুবারক পেয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর আদায়ের পরিবর্তে নাফরমানীতে লিপ্ত হয় এমন বান্দার সংখ্যাই বেশী। নাউযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুরবত বা নৈকট্য, নিছবত মুবারক, তায়াল্লুক মুবারক লাভ করলে বিনয়ী হওয়ার পরিবর্তে অহঙ্কারী হয়। ফখর করে সৃষ্টিকুলের প্রতি জুলুম করে। তার পূর্ব পরিচয় পর্যন্ত ভুলে যায়। নাউযুবিল্লাহ! ফলে অধঃপতন দেখা দেয়।

শোকর ও সবর উনাদের মাক্বামই হচ্ছে সকল মাক্বামের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব মাক্বাম। হক্কানী রব্বানী আলিম তথা কামিল ওলীআল্লাহগণ উনাদের তা’লীম-তরবিয়ত বা তত্বাবধান ব্যতীত এই মাক্বাম ত্বয় করা বা হাছিল করা সম্ভব নয়।

কাজেই, কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবত ইখতিয়ার করতঃ তা’লীম, তরবিয়ত গ্রহণ করে তথা নির্দেশ মত যিকির-ফিকির করলে, সাধ্যানুযায়ী উনার খিদমত মুবারকে আঞ্জাম দিলে উনার খাছ ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক লাভ হবে। আর তখনই শোকরের মাক্বাম হাছিল করা বা ত্বয় করা সহজ ও সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য যে, লতীফায়ে আখফা হচ্ছে শোকর উনার মাক্বাম। লতীফায়ে আখফা হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক উনার নীচে। অর্থাৎ উনার মুবারক উসীলায় ফায়িয মুবারক প্রাপ্ত হয়। আখফা লতীফা উনার নূর ছবজ বা সবুজ।

পবিত্র শোকর উনার মাক্বাম

হাছিলের উপায়

পবিত্র আখ্ফা লতিফা- পবিত্র শোক্র (شكر)  উনার মাক্বাম: সালিক বা মুরীদকে শোকর উনার মাক্বাম হাছিল করতে হলে আখফা লতীফা উনার সবক আদায় করতে হবে। সাথে সাথে শোকর উনার খিলাফ কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে। তাহলে শোকর উনার মাক্বাম হাছিল হবে।

পবিত্র ছওয়াব রেসানী করে, (ছওয়াব রেসানীর নিয়ম পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) পবিত্র ক্বিবলামুখী হয়ে, পবিত্র নামাযে বসার ন্যায় বসে, চক্ষু বন্ধ করে, আখফা লতিফা উনার দিকে খেয়াল করে এভাবে নিয়ত করবে-

পবিত্র নিয়ত : আমি আমার আখ্ফা লতিফা উনার দিকে মুতাওয়াজ্জেহ্ আছি। আমার আখ্ফা লতিফা মুজাদ্দিদ আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র আখ্ফা লতিফা মুবারক উনার উছীলায় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিকে মুতাওয়াজ্জেহ্ আছে। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক তরফ হতে পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা উনার নিসবত মুবারক অনুযায়ী পবিত্র আল্লাহ আল্লাহ যিকির, মুহব্বত ও শোক্র উনাদের ফয়েয মুবারক আমার আখ্ফা লতিফায় আসুক এবং আমার আখ্ফা লতিফা পবিত্র আল্লাহ আল্লাহ বলুক।

পবিত্র আখফা লতিফায়ও বিনা আওয়াজে পবিত্র আল্লাহ আল্লাহ যিকির করতে থাকবে।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৬)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৭)

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৮)

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৬৭)

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৬৮)