আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংক বর্তমান যামানায় ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির যথাযথ উত্তরসূরি মুসলমানগণের চরম শত্রু ইহুদী লবিং নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হওয়া ফরয-ওয়াজিব। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর বিরুদ্ধে দেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের জন্য জিহাদ করা ফরয (৪)

সংখ্যা: ২১১তম সংখ্যা | বিভাগ:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের ব্রেটন উডসে ইউনাইটেড নেশন মনিটারি অ্যান্ড ফিনানসিয়াল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় যেখানে দুটি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকন্সট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি বা বিশ্বব্যাংক) করবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মূল লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয় যে আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনা এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা। আর ১৯৬৬ সালে এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যকে ঘোষণা করে এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পূর্ব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে এই তিনটি সংগঠন ‘উন্নয়ন সাহায্যে’র নামে বিভিন্ন সময় ‘দাতা’, ‘ত্রাতা’র ভূমিকা নিয়েছে এবং নিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহুদেশের প্রাণ-প্রকৃতি-অর্থনীতি, কৃষি-শিল্প-অবকাঠামো-শিক্ষা-পরিবেশসহ সকল খাতকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মানুষের জীবন ও জীবিকাকে মুনাফার যন্ত্রে পরিণত করেছে এবং করছে। এই দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ হয়েছে এবং হচ্ছে।

বিশ্বের অধিকার সচেতন, বিবেকবান মানুষেরা বেকারত্ব, দারিদ্র্য, কৃষি, শিল্প ও পরিবেশ ধ্বংস করে বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফা স্ফীতি বাড়াতে আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানগুলো যে নয়া ঔপনিবেশিক ধারা তৈরি করছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এই বিষয়ে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালও গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশেও এই উদ্দেশ্যে একটি গণআদালতের আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে বাংলাদেশের গণমানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন। জনগণের পক্ষে এই ট্রাইব্যুনালে সাতটি খাতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তথ্যবহুল আলোচনা উপস্থাপন করা হয়।

অভিযোগের ক্ষেত্র হিসেবে ‘বাংলাদেশে কৃষিখাত’ এর উল্লেখ করা যায়। বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কৃষি, ভূমি. পানি ও সামগ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয়, অপ্রয়োজনীয় ঋণের বোঝা ও সুদ পরিশোধের জন্য বিপুল অর্থ পাচার, জাতীয় সক্ষমতা ধ্বংস, স্থানীয় জ্ঞান ও কর্তৃত্ব থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করে কর্পোরেট পুঁজির আধিপত্য কায়েমের অভিযোগ উত্থাপন হয়েছে। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর দশকে সেচ, উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, বিতরণ, বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন কৌশলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কী করে কৃষি ও কৃষকের বিপর্যয় ঘটিয়েছে তা এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল :

“বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও তাদের সহযোগী গংদের বিভিন্ন সময়ের পরামর্শ, নীতি, প্রকল্প, সংস্কার কর্মসূচি, ঋণ, বাংলাদেশের কৃষি, মাটি, পানিসহ সামগ্রিক পরিবেশকে বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। বিপুল সংখ্যক জনগণ এর সরাসরি ভুক্তভোগী এবং সারা দেশের জনগণই এই ক্ষতির শিকার। পরিহাসের বিষয় হলো, এই সব বিপর্যয় ও ক্ষতিই আবার সাধিত হয়েছে ‘উন্নয়নের’ নামে।”

‘বাংলাদেশের শিল্পখাত’ নিয়ে জনগণের পক্ষে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম.এম.আকাশ। তিনি বলেছেন, “বিশ্বব্যাংক ও তার সহযোগী চক্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পখাতকে সচেতনভাবে ধ্বংস করেছে এবং তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারকে তথাকথিত সাহায্যের প্রলোভন অথবা সাহায্য প্রত্যাহারের হুমকি প্রদান করেছে। তাছাড়া শর্ত-যুক্ত সাহায্যের অস্ত্রটি ব্যবহার করেছে। প্রত্যক্ষ আদেশ নির্দেশ দিয়েছে। সার্বভৌমত্ব লংঘন করে ব্ল্যাকমেইল করে ভুল ও ক্ষতিকর এই নীতি আমাদের দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দিয়েছে। ”

তিনি এ প্রসঙ্গে কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি (স্যাপ), সোনালি করমর্দন (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক), বিরাষ্ট্রীয়করণ ইত্যাদির মাধ্যমে কী করে শ্রমিকদের শক্তিকে পদদলিত করে শিল্পখাত ধ্বংসের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে এই প্রসঙ্গগুলো আলোচনা করেছেন। সেই সাথে বিভিন্ন ভুল তথ্য দিয়ে প্রচারণা (যেমন, ভর্তুকি তুলে দিলে সেই টাকা দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ সম্ভব) করেছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। এভাবে জাতীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে অবাধ আমদানি নীতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অভিযোগ উত্থাপনকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোসহ দেশীয় যে কর্তাব্যক্তিরা এখানে অংশ নিয়েছেন তাদেরও বিচার দাবি করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড.মঈনুল ইসলাম বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের অপতৎপরতা প্রসঙ্গে অভিযোগ এনেছেন। আর্থিক খাত সংস্কার, বাণিজ্যিক ব্যাংক পুনর্গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার প্রকল্পের নামে যে বিপুল অর্থের অপচয় এবং সম্পদের ক্ষতি হয়েছে সেই বিষয়গুলো তিনি তার অভিযোগনামায় তুলে ধরেছেন। এই সংস্থাগুলোর পরামর্শে (বা নির্দেশে) ব্যাংকগুলোর যে প্রাইভেটাইজেশন (বিরাষ্ট্রীয়করণ, ব্যক্তিমালিকানা) করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,

“তারা (প্রাইভেট ব্যাংক) মূলত বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের মাঝখানে সঞ্চয়ের পরিবহণের প্রশ্নে শহরমুখী প্রবাহের একটি পরিবাহীর ভূমিকায়, বিনষ্ট রাজনীতিতে সুবিধাপ্রাপ্ত বাণিজ্যসৃষ্ট (বৈধ বাণিজ্য এবং চোরাকারবারী) ক্ষুদ্র, একটা ভোগীশ্রেণীর অনুকূলে এবং রাজনৈতিক দলসমূহের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেন।… তারা মানি লন্ডারিং এবং পুঁজি স্থানান্তরও সম্পন্ন করে থাকেন।”

বাংলাদেশের পাটখাত ধ্বংসের পিছনে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের পক্ষে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন সেন্টার ফর ল’ রিসার্চ অ্যান্ড সাপোর্ট এর আহ্বায়ক শাহ আলম। পাট খাত, পাটের শ্রমিকদের জীবনের নানা বঞ্চনার সাথে দীর্ঘসময় থেকেই সা¤্রজ্যবাদী শক্তি ও আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক জড়িত।

পাটের ন্যায্য দাম হতে বঞ্চিত হতো বলেও পাটশিল্প শ্রমিক-কর্মচারী স্বীয় দুর্ভোগ হতে মুক্তিলাভে এবং ব্যাপক জনগণের স্বার্থের প্রতিবন্ধক মর্মে আই.এম.এফ.-বিশ্বব্যাংকের শর্তাধীন ক্লায়েন্ট ও আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক মিত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করা সহ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অংশ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু, বিশ্বব্যাংকের ঋণের বাজার সংরক্ষণ ও পুঁজিবাদী স্বার্থের কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও পাকিস্তানী খুনী বাহিনীকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন-সাহায্য ও সহযোগিতাকারী বিশ্ব পুঁজিবাদের মোড়ল আমেরিকা স্বীয় পুঁজিবাদী স্বার্থে এবং ১৯৭১ সালের পরাজয়ের বদলা নিতে বাংলাদেশের সাংবিধানিক সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমূলে ধ্বংস ও নির্মূলীকরণে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অনুঘটক এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মেরুদ- ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধানতম পণ্য- পাট ও পাটশিল্পকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে নানাবিধ চক্রান্ত অব্যাহত রাখে। (ইনশাআল্লাহ চলবে)

-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৪

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৩

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস