চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৫৭

সংখ্যা: ২১৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল

 

বর্তমান সংখ্যার আলোচনা

ইহুদীদের মদদপুষ্ট হয়ে এবং সউদী ওহাবী শাসকগোষ্ঠীর অর্থে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে সারাবিশ্বে একটি

হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরণের অলীক স্বপ্ন নিয়ে একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠন সারা দেশে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

 

ÔReal Hizri Calendar Implementation Council নামে এই সংগঠনটি সারা বিশ্বে একটি হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরণের পক্ষে অর্থাৎ সারা বিশ্বে একদিনে ঈদ পালন করার পক্ষে নানা প্রচারণা চালাচ্ছে এবং এ সম্পর্কে ৯০টি খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের বর্ণিত শরীয়তের খিলাফ এই মনগড়া যুক্তির শরীয়তসম্মত এবং সঠিক মতামত প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ। যেন সাধারণ মুসলমানগণ চাঁদের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তিতে না পড়ে। তারা লিখেছে-

৫০ নম্বর মত: বর্তমান সৌর ক্যালেন্ডারের (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার) দিন এবং মাসের নামকরণসমূহ ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু দিনের সময় গণনার বিষয়টি উভয়ক্ষেত্রেই এক ও অভিন্ন।

৫০ নম্বর মতে জাওয়াব: বর্তমান সৌর ক্যালেন্ডারের (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার) দিন এবং মাসের নমকরণসমূহ ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয় বিষয়টি সঠিক। আমরা আরও বাড়িয়ে বলতে চাই যে শুধু গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের দিন ও মাসের নামসমূহ নয় বরং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সৃষ্টির ইতিহাসও আপত্তিকর বলে এর ব্যবহার মুসলমানগণের জন্য সর্বোতভাবে পরিহারযোগ্য। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হচ্ছে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সংশোধনী রুপ আর জুলিয়ান ক্যালেন্ডার এসেছে রোমান ক্যালেন্ডার থেকে। রোমানরা ছিল কুসংস্কারে বিশ্বাসী। তাদের অনেক দেব-দেবীর নাম নিয়ে হয়েছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের দিন ও মাসের নাম।

এছাড়াও অনেক শাসকদের নাম অনুসারেও হয়েছে মাসের নাম। যেমন জুলিয়ান অগাস্টাস থেকে হয়েছে আগস্ট মাসের নাম। ইত্যাদি।

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ত্রুটি ধারা সহজ। কিন্তু তার বিকল্প ক্যালেন্ডার কোথায়? মুসলমানগণের জন্য চাঁদের ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি প্রয়োজন ছিল একটি সৌর ক্যালেন্ডারের। কারণ নামাযের ওয়াক্ত, সাহরী, ইফতার এসব বিষয়গুলো সূর্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে একটি সৌর ক্যালেন্ডার রচনা করে সেই দিন অনুযায়ী ওয়াক্ত নির্ণয় করা গেলে মুসলমানগণের ইবাদত-বন্দেগী পালনে সহজ হতো কিন্তু মুসলমানগণের রচিত তেমন কোন সৌর ক্যালেন্ডার ইতিহাসে নেই। বর্তমানে সউদী ওহাবী সরকারও ঘোষণা দিয়েছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার না করার জন্য কিন্তু তারাও তার কোন বিকল্প পদ্ধতি বিশ্বের মুসলমানগণকে উপহার দিতে পারেনি। তবে বিশ্বের মুসলমানগণের ঈমান-আক্বীদা নবায়নের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শুরুতে মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন মুজাদ্দিদ পাঠান। বর্তমান হিজরী শতকের যিনি মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সবার পূর্বেই এ বিষয় নিয়ে ভেবেছেন আর শুধু ভাবনা নয় উনার তাওয়াজ্জুহ, ফায়েজের বরকতে উনার সুমহান আওলাদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ছানী, খলীফাতুল উমাম হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম বিশ্ববাসীকে এর প্রতিকার হিসেবে উপহার দিয়েছেন নতুন একটি সৌর ক্যালেন্ডার আত-তাক্বউইমুশ শামসী। যার সৃষ্টির উৎস, নামকরণ, উদ্দেশ্য সবকিছুই বেমেছাল। নিচে আত তাক্বউইমুশ শামসীর বৈশিষ্ট্যসমূহ দেয়া হলো।

১. উদ্দেশ্য:

এই ক্যালেন্ডার রচনার মূল উদ্দেশ্য মুসলমানগণ যেন কাফিরদের গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ না করে, বরং এই মুবারক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ-এর পূর্ণ অনুসরণ করতে পারেন।

২. প্রবর্তন এবং নামকরণ :

এই সৌর বছর গণনা পদ্ধতি প্রবর্তন এবং নামকরণ করেছেন খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আল মানছুর, খলীফাতুল উমাম হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।

৩. উৎস:

এই সৌর বছর গণনা পদ্ধতি পৃথিবীর কোনো ক্যালেন্ডারের অনুকরণে তৈরি না করে বরং খাছ খোদায়ী মদদে ইলহাম-ইলকার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে

৪. শুরুর সময়কাল:

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বিছাল শরীফ-এর বছর ১১ হিজরী এবং সে বছরের পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ। উক্ত মাসের ১ম দিন থেকে এই আত-তাক্বউইমুশ শামসি-এর ০ বছর ১ম মাস ১ম দিন শুরু হয়েছে। (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ই জুন ৬৩২ ঈসায়ী।)

৫. শুরুর সময়কালের তাৎপর্য:

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ই শরীফ, সোমবার শরীফ বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। ফলে শামসি তাক্বউইম শুরু করা হয়েছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর বৎসর মুবারক থেকে এবং এই তাক্বউইম-এর ১ম বৎসরের ১২ তারিখ হচ্ছে মুবারক ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ, সোমবার।

৬. বৎসরের মাসের নামকরণ:

এই তাক্বউইম-এর মাসের নামকরণ করা হয়েছে আরবী পদ্ধতি অনুযায়ী। যেমন, আরবীতে প্রথমকে বলা হয় আউয়াল। এভাবে ১ম মাস থেকে ১২তম মাস পর্যন্ত নামকরণ করা হয়েছে- “আউয়াল, ছানী, ছালিছ, রবি’, খামিছ, সাদিছ, সাবি’, সামিন, তাসি, আ’শির, হাদি আ’শার এবং ছানী আ’শার” এভাবে।

৭. দিনের নামকরণ:

আরবী মাসের প্রতিটি দিনের নামানুসারেই নামকরণ হয়েছে। যথা: ইছনাইনিল আযীমি (সোমবার), ছুলাছায়ি (মঙ্গলবার), আরবিয়ায়ি (বুধবার), খামীসি (বৃহস্পতিবার), জুমুয়াতি (শুক্রবার), সাবতি (শনিবার), আহাদি (রোববার)

৮. মাস গণনা পদ্ধতি:

প্রতিটি বিজোড়তম মাস ৩০ দিনে এবং জোড়তম মাসগুলো ৩১ দিনে শুধু ব্যতিক্রম হবে ১২তম মাস। কিন্তু ৪ দ্বারা বিভাজ্য সালগুলোতে ৩১ দিনে হবে। তবে ১২৮ দ্বারা বিভাজ্য সালগুলো ব্যতীত।

৯. বাৎসরিক বিচ্যুতি:

পৃথিবীর অসম ঘূর্ণনের ফলে বছর শেষে সময়ের যে বিচ্যুতি দেখা যায় তা ০.২ সেকেন্ডেরও কম।

১০. লিপইয়ার পদ্ধতি:

অতিরিক্ত একদিন বছরে শেষে যোগ হওয়ায় পরিবর্তন লক্ষণীয় নয় (যা চার বছর পর পর করা হয়)। কেননা নতুন বছর শুরু হয়ে যায়।

১১. অনুসরণের ফল:

এই তাক্বউইম-এ কাফিরদের অনুসরণ হয় না, বরং মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের স্মরণ হয়। ফলে মুসলমানগণ রহমত, বরকত, সাকীনা লাভ করবে।

১২. মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব:

কাফিররা সব ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনুসরণ করবে। কারণ কাফিরদের সৃষ্টি হয়েছে মুসলমানদের খিদমতের জন্য। এই শামসি তাক্বউইম তৈরির ফলে এর ব্যাপক প্রচার-প্রসার হলে ধীরে ধীরে কাফিররা এর অনুসরণ করবে এবং মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব ও আভিজাত্য বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।

মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আমাদেরকে এই আত-তাক্বউইমুশ শামসি অনুসরণ-অনুকরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

বাংলাদেশের জন্য ১৪৩৩ হিজরীর পবিত্র

রমাদ্বান শরীফ মাসের চাঁদের রিপোর্ট

বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী জিরো মুন (অমাবস্যা) সংঘটিত হবে, ইয়াওমুল খমীসি, ২১ শে ছানী, ১৩৮০, শামসী, ১৯ শে জুলাই ২০১২, বৃহস্পতিবার, সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে।

বাংলাদেশে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে, ইয়াওমুল জুমুয়াতি, ২২ ছানী, ১৩৮০ শামসী। ২০শে জুলাই, ২০১২, শুক্রবার সন্ধ্যায়। সেদিন ঢাকায় সূর্যাস্ত ৬টা ৪৭ মিনিটে এবং চন্দ্রাস্ত ৭টা ২৮ মিনিটে। অর্থাৎ সূর্যাস্ত এবং চন্দ্রাস্তের সময়ের পার্থক্য ৪১ মিনিট। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার প্রায় ৮.৪৬ ডিগ্রি উপরে অবস্থান করবে। কৌণিক দূরত্ব হবে ১৬.৪৬ ডিগ্রি। সূর্য থাকবে ২৯২ ডিগ্রি আজিমাতে। আর চাঁদ খুঁজতে হবে ২৭৯ ডিগ্রি আজিমাতে। সেদিন চাঁদ দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

 

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৪

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৩

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস