পাকিস্তানি বুলেট যে জাতিকে পরাস্ত করতে পারেনি; সে জাতি আজ অবলীলাক্রমে হিন্দি সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছে! বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যে জাতি রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা’ অর্জন করেছে; সে জাতি আজ অবলীলাক্রমে হিন্দি আওড়ায়। এসব কিছুর পেছনে রয়েছে হিন্দু সংস্কৃতি ও চ্যানেলের আগ্রাসন এবং ভারতের চাপ প্রয়োগ। এর প্রতিরোধ হওয়া আবশ্যক; এবং প্রতিহত করা অনিবার্য- ৭

সংখ্যা: ২১৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

ভারতীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার কৌশল হিসেবেই এদেশের বইয়ের তুলনায় ভারতীয়দের বইয়ের দামও কম রাখা হচ্ছে। আর অধিকাংশ ভারতীয় বই যৌন সুড়সুড়িমূলক বলে ওইসব বই পড়ে এদেশের তরুণ প্রজন্ম পর্নো সংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে উঠছে। অপরদিকে এক হিসাব মতে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরামে বাংলাভাষী আছেন প্রায় ১৫ কোটি। তাদের কাছে বাংলাদেশের বইয়ের চাহিদা থাকলেও ভারত সরকার এবং দেশটির প্রকাশকদের বিরোধিতায় সেখানে বই পৌঁছানো যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রকাশিত ইশতেহারের ২.১ অনুচ্ছেদে (সংস্কৃতি ও ক্রীড়া) উল্লেখ করে, ‘সৃজনশীল প্রকাশনাসহ সুকুমার শিল্পের সব শাখার উৎকর্ষ সাধনে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে।’ অথচ বাংলাদেশের প্রকাশকদের স্পষ্ট অভিযোগ, সরকার সহযোগিতা করছে না। গত দু’বছরের মধ্যে সরকারের সহায়তার কোনো উদাহরণ নেই। বরং ভারতীয়দেরই বাজার দখলে নানাভাবে সহায়তা করছে সরকার।

তথ্য মতে, ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের নীতিতে বিভিন্ন দেশের বইয়ের বাজার দখল করার কৌশল দীর্ঘ দিন ধরে চলছে। এ লক্ষ্যে দেশটির সরকার এগুচ্ছে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা নিয়ে। দেশটির শীর্ষ প্রকাশকদের প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব বুক পাবলিশিং’র স্থপতি চেয়ারম্যান ও পি ঘাইসহ অনেকে একাধিকবার বলেছেন, ‘বই রফতানি মানে ভারতের সংস্কৃতি রফতানি। সংস্কৃতির বিকাশে ভারত সরকারের উচিত বাইরের বাজার যে কোনো উপায়ে দখল করা।’

দেশটির বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ভারতীয়দের প্রবন্ধ-প্রতিবেদন থেকে এসব জানা যায়। ভারতীয় সরকার এ লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেয়। আর এভাবে দেশটির প্রকাশনা শিল্প এখন প্রতিষ্ঠিত।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিগত ২০১০ সালের মে’তে প্রকাশিত ‘ভারত প্রসঙ্গ’ পত্রিকার এক প্রবন্ধে বলা হয়, ‘বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত প্রায় ২০৩ কোটি ডলারের বই ভারত থেকে প্রতি বছর রফতানি হয়।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ভারতীয় বইয়ের বড় বাজার বাংলাদেশে।

অন্যদিকে এদেশের প্রকাশনা শিল্পে বিরাজ করছে নানা সঙ্কট। নীতিমালা বাস্তবায়ন না হওয়া, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক-সাংগঠনিক দুর্বল কাঠামো, সরকারি কালাকানুন, কপিরাইট আইনের প্রায়োগিক জটিলতা, আইন অকার্যকর থাকা, পুঁজির স্বল্পতা, পাঠকসমাজ গড়ে না ওঠা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করার মতো গবেষণার অভাব, প্রকাশকদের যুগোপযোগী চিন্তার অভাব। উপরন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কর ও শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতার ফলে প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এ অবস্থায় ভারতীয় প্রকাশনার আগ্রাসন এদেশের প্রকাশনাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

এদেশের নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে ভারতীয় কবি-লেখকদের বই প্রকাশিত হচ্ছে। কেবল তাই নয়, বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশে বইমেলায় ভারতীয় প্রকাশকদের স্টল এবং তাদের বই বিক্রি করার অনুমতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ মেলাকে আন্তর্জাতিক করার নামে এ পরিকল্পনা-প্রক্রিয়া চলছে। ভারতীয়দের সুযোগ করে দিতেই এদেশের ভারতপন্থী কবি-লেখকরাও এ দাবি জানাচ্ছেন। অথচ বাংলা একাডেমীর নীতিমালা অনুযায়ী এ মেলায় বিদেশিদের বই বিক্রি নিষিদ্ধ।

এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশ্যে ভারতীয়দের নকল চটি বই বিক্রি হয়। এর বিরুদ্ধে মেলার ১৯তম দিনে লোকদেখানো অভিযান চালায় টাস্কফোর্স। এ অভিযানে ২৯ স্টল মালিককে সতর্ক, ভারতীয় লেখকদের পাঁচটি বই মেলায় বিক্রি নিষিদ্ধ করে টাস্কফোর্স। এরপর যথারীতি ভারতীয়দের বই মেলায় বিক্রি হয়।

ভারতীয় বই এ দেশে প্রতিবছর কত বিক্রি হয়, কত বই আসে, নোট বইয়ের কারণে এদেশের প্রকাশকদের সব মিলিয়ে বছরে কত টাকা ক্ষতি হয়, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই। এতে অনেক প্রকাশক অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হচ্ছেন। অনেক প্রকাশনা অস্তিত্ব সঙ্কটে। অনেকে প্রকাশনা ব্যবসা থেকে সরেও যাচ্ছেন। এদেশ থেকে হাতেগোনা কয়েকটি বই ভারতে যায়। ভারত থেকে বেশি বই আসছে। বাজার ভারত একতরফা ভোগ করছে।

ভারতীয় জনপ্রিয় যে কোনো লেখকের বই পাইরেসি আকারে প্রথমে দশ থেকে বিশ হাজার কপি ছাপানো হচ্ছে। এসব বই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা প্রকাশনা শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কলকাতার প্রকাশক-বিক্রেতারা বাংলাদেশের বই রাখতে আগ্রহী নন। কলকাতায় নয়া উদ্যোগ নামে মাত্র একটা দোকানে বাংলাদেশের বই পাওয়া যায়। ঢাকাসহ সারাদেশের অনেক দোকানে কলকাতার বই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মানসম্পন্ন অসংখ্য বই আছে। তবু দেশের বাংলা বইয়ের বাজার ভারতীয়দের দখলে।

এ দেশের প্রকাশনার বিশ্বায়নে সম্ভাবনার সবচেয়ে বড় জায়গা সার্কভুক্ত দেশগুলো। সেসব দেশের বাজারও ভারতীয় বাংলা প্রকাশনার দখলে। বাংলাদেশের বই বিশ্বায়নের অনেক সম্ভাবনা থাকলেও একে কাজে লাগাতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কয়েক প্রকাশক ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলা প্রকাশনাকে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য তারা নানা সময় উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তারা কোনো সহযোগিতা পাননি।

জানা যায়, ভারতীয় বইয়ের তুলনায় এখনও এদেশে বইয়ের দাম বেশ চড়া। দাম দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজ ও মুদ্রণসামগ্রীর দাম বাড়ায় এটা ঘটছে। বিদেশের বাজারে দাম বেশি হওয়ায় শুল্ক কমিয়ে প্রকাশনাকে মজবুত করার দাবি প্রকাশকরা জানালেও সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে প্রকাশকরা বইয়ের দাম বাড়াচ্ছেন। এতে পাঠকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বইয়ের দাম। তারা কম দামে ভারতীয় বই পেয়ে কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে অনেকে মুসলিম তাহযীব তামাদ্দুন-এর বদলে ভারতীয় সংস্কৃতি আত্মস্থ করছেন।

নব্বইয়ের দশকের পর থেকে এদেশে ভারতীয় লেখকদের গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধসহ অন্যান্য বিষয়ের বই নকল হতে শুরু করে। এটা শুরু করে বিশেষ চক্র। এক পর্যায়ে বই নকল করার ওই চক্র শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সারাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।

রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজার, ফকিরাপুলে এ চক্রের আছে শতাধিক ছাপাখানা। বাংলাবাজার, শাহবাগ, নীলক্ষেতসহ নগরের বই বিক্রির দোকানগুলো ভারতীয়দের বইয়ে সয়লাব। অন্যদিকে ছাপাখানায় ভারতীয় বইয়ের নকল হচ্ছে প্রকাশ্যে। এসব বই চলে যাচ্ছে সারাদেশের পাঠকের কাছে।

ভারতীয় লেখকের চটি বিশেষ করে যৌন সুড়সুড়ি জাগানিয়া বই বেশি ছাপা হচ্ছে। বিষয়টি অনেক দিন ধরে প্রকাশ্যে চললেও ভারত তোষণনীতির এদেশীয় সরকার যথারীতি নীরব। (ইনশাআল্লাহ চলবে)

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৪

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৩

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস