পাকিস্তানি বুলেট যে জাতিকে পরাস্ত করতে পারেনি; সে জাতি আজ অবলীলাক্রমে হিন্দি সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছে! বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যে জাতি রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা’ অর্জন করেছে; সে জাতি আজ অবলীলাক্রমে হিন্দি আওড়ায়। এসব কিছুর পেছনে রয়েছে হিন্দু সংস্কৃতি ও চ্যানেলের আগ্রাসন এবং ভারতের চাপ প্রয়োগ। এর প্রতিরোধ হওয়া আবশ্যক; এবং প্রতিহত করা অনিবার্য- ৭

সংখ্যা: ২১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক দখলদারিত্বের পথ নির্মাণে ভারতীয়দের তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের থাবায় বিপন্ন এদেশের সার্বভৌমত্ব। একটি দেশকে পদানত করতে হলে সে দেশের সংস্কৃতি- ঐতিহ্যকে চূরমার করার রেওয়াজ অতি প্রাচীন। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের লোলুপ থাবা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে।

ভারত সরকারের চাপে এদেশের সরকার, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অসহায়। তথাকথিত শিল্প, সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশ বিষয়ক অধিকাংশ প্রকল্প সরকার নিচ্ছে ভারতীয়দের চাপে। বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ভারতীয় সংস্কৃতি চর্চার ‘উর্বর ক্ষেত্র’, শিল্পীদের রমরমা বাজার। তারা বাংলাদেশকে ‘বাণিজ্যিক ক্ষেত্র’ হিসেবে বেছে নিচ্ছে।

এ দেশের বিদ্যমান আইন না মেনে তারা চালাচ্ছে তাদের দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা। এতে সংস্কৃতি ধ্বংসের পাশাপাশি ভারতে চলে যাচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকা।

এ দেশে এখন সরকারি, বেসরকারি অনেক অনুষ্ঠান শুরু হয় ভারতীয়দের অনুকরণে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে, ঢোল বাদ্য বাজিয়ে। মন্ত্রী, সচিব, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, আওয়ামীপন্থী, বাম সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা এটা করছেন।

এক গবেষণা মতে, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি গণমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, সঙ্গীত শিক্ষালয়, নাট্যবিদ্যালয়, নাট্যশালা, আর্ট স্কুল, ফ্যাশন শো, সঙ্গীত-অভিনয়-সুন্দরী প্রতিযোগিতা, পাঠ্যপুস্তক, সাহিত্য, সেমিনার, এনজিও, হাসপাতাল, রূপচর্চা কেন্দ্র, শিক্ষাবৃত্তি, ক্লাব-সমিতি, সাংস্কৃতিক সফর, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতি এদেশে ঢুকছে।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, এক রাষ্ট্রের আইন না মানাটা ওই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমাননা। অবমাননার বিষয়টা যেভাবে চলে আসছে তাতে সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দিন দিন বিস্তৃত হয়ে উঠছে।

শুধু তাই নয়, ভারতীয় সংস্কৃতির আড়ালে আমরা দেশটির অশ্লীল সংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, মিডিয়া ব্যবসায়ীরা ওই অশ্লীল সংস্কৃতি উপভোগ করছে।

সংস্কৃতি চর্চার নামে এ দেশের আইন না মেনে যারা ভারতীয় শিল্পীদের আনছে, তাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। ফলে তারা একের পর এক শিল্পীকে আনছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত দুই বছর পাঁচ মাসে শতাধিক ভারতীয় সঙ্গীত, অভিনয়শিল্পী এ দেশে কনসার্ট করে। এ সময়ের মধ্যে কতজন এসেছে, এর ঠিক পরিসংখ্যান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েও নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে অভিজাত ক্লাবগুলো ভারতীয় শিল্পীকে আনলেও তা গোপন রাখে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লুকোচুরি করে শিল্পীদের আনা হয়। ট্যাক্স ফাঁকি দিতে আয়োজকরা এ লুকোচুরি করে। অভিজাত ক্লাবগুলো ভারতীয় আইটেম গার্ল, ডিজিটাল জকিদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে।

অর্ধশত অশ্লীল সাইট নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত নতুন প্রজন্মকে ইসলামী মূল্যবোধের বলয় থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় বিশেষ করে হিন্দি সংস্কৃতি। এ আগ্রাসনের কবলে পড়ে পারিবারিক-নৈতিক-সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্কটে পড়ছে দেশ। ভাষা হিসেবে বাংলা এবং তাহযীব- তামাদ্দুন হিসেবে আমাদের নিজস্ব বলতে কিছু আর অবশিষ্ট থাকছে না।

বিনোদনের নামে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোনের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, এফএম রেডিও এবং দেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে নানা আয়োজন চলছেই।

সূত্র মতে, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে এ রকম ৮৪টি সাইটের তালিকা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেগুলো বন্ধের অনুরোধ করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেটে বাংলাদেশ, বাঙালি, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা-কেন্দ্রিক যেসব অশ্লীল সাইট রয়েছে তার প্রায় সবই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে ভারত থেকে।

হিন্দির কাছে বাংলা ভাষা বিপন্ন। এখন পর্যন্ত এ থেকে সুরক্ষার কোনো ভাবনা সরকারের নেই। ভারতীয় ৪০টির মতো চ্যানেল দেখানো হয় এ দেশে; তার মধ্যে ৩০টিই হিন্দি ভাষায়। শিশুরা যেসব কার্টুন দেখে তাও হিন্দিতে অনুবাদ করা।

স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে সিরিয়াল ও সিনেমার নামে যা দেখানো হচ্ছে এর একটা প্রভাব পড়ছে পরিবারে তরুণী বধূদের উপর। তরুণেরাও এর প্রভাব থেকে দূরে নন। পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা, ভ-ামি, অবৈধ যৌনজীবন, পরকীয়াসহ বিভিন্ন বিষয়কে উসকে দিচ্ছে এ মাধ্যম এ মন্তব্য সংস্কৃতি পর্যবেক্ষকদের।

মূলত: হিন্দির মাধ্যমে এদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে ভোগবাদিতার দিকে উসকে দেয়া হচ্ছে। তরুণসমাজকে বোধহীন, ভোগবাদী করে তুলছে।

স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের উপর ভর করে বিশ্বে সৌন্দর্যশিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটছে। স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং হিন্দি ও ইংরেজি সিনেমার নায়িকার মতো ফিগারের প্রতি এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি হয়েছে সমাজে।

এরই প্রেক্ষিতে আজ বাংলাদেশে পাড়া-মহল্লায় গজে উঠছে একের পর এক বিউটি পার্লার। ব্র্যান্ড বিউটি পার্লারের সংখ্যাও বাড়ছে।

উল্লেখ্য, নারীর দেহসৌন্দর্যকে ঘিরে পৃথিবীজুড়ে বিশাল বাণিজ্য চলছে। বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে ‘ওজন কমানো ইন্ডাস্ট্রি’ প্রতি বছর এবং এই বাণিজ্য টিকেই আছে নিজের দেহের উপর নারীর ঘৃণা তৈরি করে। এসব সৌন্দর্য ইন্ডাস্ট্রি লাখো নারীকে বুঝিয়ে দিচ্ছে তাদের মুখের উপর কেমিক্যাল আবর্জনা, তোলা চিকন ভ্রু যা কিনা আবার এঁকে ভরাট করতে হবে, এগুলোই হচ্ছে তথাকথিত সৌন্দর্যচর্চা। মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি যেমনটি বলেছে, স্পোর্টস সুইমসুট এডিশন, কসমো, কভার গার্লের সাবেক কভার মডেল আন সিমনটন, আয়ত্তে আনা সম্ভব নয় এমন এক অলীক সৌন্দর্যের পক্ষে প্রচারণা চালায়।

স্লিম হওয়ার জন্য মেয়েরা না খেয়ে থাকে, বমি করে, স্টমাক স্টাপল করে রাখে, চোয়ালকে তার দিয়ে বেঁধে রাখে ও মেদ বের করে ফেলে। নারীরা মোটা শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত নয় সৌন্দর্যশিল্প। নারীদের বলা হয়, তাদের শরীরের সব কিছুরই উন্নয়ন দরকার। তাদের দাঁত যথেষ্ট সাদা নয়, সাদা নয় যথেষ্ট তাদের ত্বক, তাদের চোখ যথেষ্ট নীল নয়, চুল নয় যথেষ্ট উজ্জ্বল তাদের শরীরের কিছুই ঠিক নয়।

আমেরিকান সোসাইটি ফর এসথেটিক প্লাস্টিক সার্জনসের হিসাব মতে, ২০০১ সালে ৮৫ লাখ কসমেটিক সার্জারি হয়েছে। ২০০০ সালের তুলনায় তা এক বছরের বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। ২০১৫ সাল নাগাদ কসমেটিক সার্জারির সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এ বৃদ্ধি এশিয়াতে বছরে ঘটছে ২০ শতাংশ হারে।

ঢাকায় নামিদামি হাসপাতাল ছাড়াও আলাদাভাবে প্লাস্টিক সার্জারির প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখানে এখন এ জন্য লম্বা লাইন পড়ছে। (ইনশাআল্লাহ চলবে)

-মুহম্মদ আরিফুর রহমান

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৪

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৩

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস