যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৯৬

সংখ্যা: ২২৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

মূলত যুগে যুগে মিথ্যাবাদী আর মুনাফিকরাই হক্বের বিরোধিতা করেছে, হক্বের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। তাই খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ মুনাফিকদেরকে ‘কাযযাব’ বা মিথ্যাবাদী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরাই মিথ্যাবাদী।” (পবিত্র সূরা মুনাফিকুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যারা মুনাফিক তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আবার যারা মিথ্যাবাদী তারাই মুনাফিক। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুনাফিকের যে আলামত বা লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে তন্মধ্যে একটি হল মিথ্যা কথা বলা।

মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যারা বিরোধিতাকারী তারা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই পূর্ণ মিছদাক। অর্থাৎ তারা একই সাথে মুনাফিক ও কাট্টা মিথ্যাবাদী। তাই তারা মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে স্মরনিকা-বার্ষিকী, পত্র-পত্রিকা এবং বক্তৃতার মাধ্যমে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

ধারাবাহিক

পরিশিষ্ট

এ পত্রখানা পেশ করার দরুন বাদশাহ জাহাঙ্গীর দুঃখিত হলেন এবং হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শাহী দরবারে ডেকে এনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উত্তরে বললেন, “আহলে সুন্নাতগণ উনাদের নিকট যেমন ওই ব্যক্তি সুন্নী নহেন, যিনি হযরত আলী কররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন; অনুরূপভাবে ছূফীগণের নিকটও ওই ব্যক্তি ছূফী নহেন, যিনি নিজকে সৃষ্টি জীবের মধ্যে নিকৃষ্ট কুকুর হতে ভালো মনে করেন। অতএব আমি নিজকে কিরূপে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করতে পারি। পীর বা শায়েখ উনার তাওয়াজ্জুহ উনার দরুন সালিকগণ কিরূপে এক মাক্বাম হতে অন্য মাক্বামে ভ্রমণ করে ও উন্নীত হয় তার বর্ণনা এই মকতূবে উল্লেখ করা হয়েছে। সালিকগণের উরুজ বা উত্থান এরূপ মাক্বামে অল্প সময়ের জন্য হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, শাহী দরবারে আমীরগণ রাত দিবস হাজির থাকেন। যদি কোন সময় প্রয়োজনবশত বা অন্য কোন অজুহাতের দরুন বাদশাহ কোন সপিাহীকে তলব করে তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তাকে সম্মানিত করেন, তাহলে তা একটি অস্থায়ী ব্যাপার। ক্ষণিক পরেই সিপাহী নিজ স্থানে প্রত্যাবর্তন করে এবং দরবারী স্বীয় বুলন্দ মাক্বামেই অবস্থান করেন। এ অস্থায়ী নৈকট্যের দরুন সিপাহীর মর্যাদা বাদশাহের অমাত্যগণ হতে উচ্চ মনে করা যেতে পারে না।

এভাবে আমাদের উরুজ বা উত্থান একটি সাময়িক অবস্থাণ এই অবস্থা শেষ হওয়ার পর আমি পুনঃ সিরহিন্দে পুরাতন পর্ণ কুটিরেই ফিরে আসি। এ হাক্বীক্বতটি উপলব্ধি করার পর এ উচ্চ মাক্বামে ছিদ্দীক্বি অর্থাৎ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে নিজকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার ধারণা করাও অসম্ভব।

এটা ব্যতীত এ পত্রে এটাও লিখিত আছে যে, “এ মাক্বামের প্রতিবিম্বের দরুন আমি নিজকে স্বয়ং রঙিন পেলাম। সূর্যের আলো এবং তা হতে আলোকপ্রাপ্ত হওয়াকে উদাহরণ স্বরূপ পেশ করা যেতে পরে। সূর্য সূর্যই থাকে যমীনের উপর তার আলোক পতিত হলে যমীন আলোকিত হয়। কিন্তু যমীন কি এর কারণে সূর্যের সমকক্ষতার দাবি করতে পারে?

এরূপ দলীল ও প্রমাণের দ্বারা হযরত মুজাদ্দিদ রমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাদশাহকে বুঝাবার পর বাদশাহ শান্ত হলেন এবং শাস্তি দান করার পরিবর্তে উনাকে সসম্মানে বিদায় দান করলেন। বিরোধীদলের জন্য এ পরাজয় বরদাশতযোগ্য ছিল না। তারা তখন অন্য ব্যবস্থা অবলম্বন করলো।

বাদশাহর উজীর আছফজাহের সাথে হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মনোমালিন্য হওয়ায় উক্ত উজীর বাদশাহকে পরামর্শ দান করলো, “হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তরফ থেকে আপনার সাবধান থাকা উচিত। কেননা উনার প্রভাব কেবল হিন্দুস্থানে সীমাবদ্ধ নয় বরং ইরান, তুরান, বদখশান প্রভৃতি স্থানেও বিদ্যমান। তিনি হাজার হাজার জীবন উৎসর্গকারী মুরীদ নিজের চতুর্দিকে একত্র করেছেন। ভয় হয় পাচ্ছে সারা রাজ্যের মধ্যে উনারা কোন ফিতনার সৃষ্টি করেন। তিনি একজন অহঙ্কারী ব্যক্তি। নাউযুবিল্লাহ! শাহ ইছমাইল ছফবী কেবল মুরীদগণের সহায়তায় ইরানের রাজত্ব আয়ত্তে আনয়ন করেছিলেন। এমতাবস্থায় আপনার উচিত হবে উনার খলীফা শায়েখ বদীউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট সৈন্যদের গমনাগমন বন্ধ করে দেয়া এবং হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিষয়ে বাধা সৃষ্টি করলে উনাকে কয়েদ করা। এর পর শায়েখ বদিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট সৈন্যদের গমনাগমনের শাহী নিষেধাজ্ঞা জারি করা। হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শাহী সন্দেহের নেত্রে পতিত হলেন। হযরত শায়েখ বদিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সৈন্যদের হতে পৃথক হতে চাইলে হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এজাযত দান করলেন না। শেষ পর্যন্ত বাদশাহর তরফ হতে গুপ্তচর নিয়োগ করা হলো এবং শেখ বদিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি উনাদের মধ্যে পত্রালাপ বন্ধ হলো। হযরত শায়েখ বদিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পেরেশান হয়ে হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে হাজির হলেন বটে কিন্তু তিনি এতে নারাজ হলেন। কাজেই শায়েখ ছাহেব পুনঃস্বস্থানে প্রত্যাবর্তন করলেন। এতে বিরোধীদল সুযোগ লাভ করলো এবং বাদশাহকে বুঝিয়ে দিলো যে, শায়েখ ছাহেব হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট লশকরের পয়গাম নিয়ে গমন করেছিলেন। ফলকথা, উজীর নিপুনভাবে বাদশাহর কানে বিষবাণী ঢালতে লাগলো এবং শাহী দরবারে হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হত্যা, জ্বালা-যন্ত্রণা, দেশান্তরিতকরণ অথবা কয়েদকরণের পরামর্শ হতে লাগলো।

এ পক্ষ বাদশাহকে আরো বুঝিয়ে দিলেন যে, হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিয়ত যে খারাপ তার প্রমাণ এই যে, বাদশাহ সালামতের জন্য জায়িয বলে মান্যকৃত সিজদায়ে তাযীমি পালন করতে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি পূর্বেও বাদশাহকে সম্মান প্রদর্শন করেননি। আপনি পরীক্ষা করলে দেখতে পাবেন যে, তিনি শাহী দরবারে হাজির হয়েও সিজদা বা মস্তক অবনত করবেন না।

ধর্মীয় বিপদ অপেক্ষা রাজত্ব সম্পর্কীয় বিপদ বাদশাহের নিকট অধিকতর চিন্তার কারণস্বরপ হয়েছিলো। বিরোধীদল এটার সাথে তাদের নিকট দুর্বোধ্য বলে বিবেচিত কতিপয় মকতুবের অনুচ্ছেদ হেরফের করে বাদশাহের নিকট পেশ করলো এবং কতিপয় উলামার ফতওয়াও বাদশাহর নজরে পড়লো। যার মধ্যে হযরত মাওলানা আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারও কতিপয় পাল্টা আক্রমণাত্বক প্রবন্ধ ছিলো।

যা হোক, উল্লিখিত অবস্থাবলির প্রেক্ষিতে বাদশাহ জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরোধীগণের চক্রান্তে পড়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত উনাকে কয়েদ করার ইচ্ছা করেন। বাদশাহ তদীয় মতলব হাছিল করার নিরাপত্তা নিবন্ধন হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হালকাভুক্ত সমুদয় উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে রাজধানী হতে সরিয়ে দেন। বাদশাহ খান খানানকে দাক্ষিণাত্যে, সৈয়দ সদরে জাহানকে পূর্বদিকে, খান জাহান লোদীকে মালব দেশে, খান আযমকে গুজরাটে এবং মহাব্বত খানকে কাবুলের গভর্নর নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন। এরপর পত্র মারফত দ্বিতীয়বার হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সিরহিন্দ হতে শাহী দরবারে তলব করা হয়, উদ্দেশ্য ছিলো সিজদা করান- তথা শাহী আনুগত্যের যাচাই করা। কেননা, ধর্মীয় বিপদ অপেক্ষা রাজত্ব সম্পর্কীয় বিপদ বাদশাহর নিকট অধিকতর চিন্তার কারণ হয়েছিলো।

হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি যথারীতি শাহী দরবারে উপস্থিত হলেন। উজিরের কথায় আকায়েদ সম্পর্কীয় যে ভ্রান্ত ধারণা বাদশাহর অন্তঃকরণে স্থান লাভ করেছিলো তিনি তৎসমূদয় বিদুরিত করেন। কিন্তু তিনি সিজদায়ে তাযীমি পালন করতে বিশেষ দৃঢ়তা সহকারে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। এমনকি বাদশাহর সম্মুখ্যে সামান্য অবনত হয়ে শাহী আদব রক্ষা করতেও তিনি পছন্দ করলেন না। কাজেই সমস্ত (দুনিয়াদার) আলিম, বাদশাহ ও দরবারী উমরাহগণের সন্তোষ বিধানে হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হত্যা করবার ফতওয়া দেন।

-মুফতী মুহম্মদ আবু ইসহাক, বাসাবো।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৪

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৩

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস